আমি প্রহর গুনি, বসে থাকি বিকেলের অপেক্ষায়। সে যখন আসে, কোন সাড়া পাওয়া যায়না তার। তবু আমি টের পাই। বাতাসের গন্ধ পালটে যায় তখন। কোলাহলের স্বরগ্রাম নীচে নেমে আসে। আকাশের এমাথা থেকে ওমাথায় এক বিচিত্র রঙ ছড়িয়ে পড়ে। মামুনকে আমি তাগাদা দেই। " চল, তাকে আবার দেখে আসি।" বেচারার হয়ত তখনই দুচোখ জুড়ে নেমে এসেছিল ঘুমপাহাড়ের পরীরা।
সান্ত্রীর চোখ এড়িয়ে আমরা উঠে পড়ি টিলাটার মাথায়। এখান থেকে চোখ মেলে দিলেই দেখি অপরূপ সে শুয়ে আছে, চোখ ফেরানো দায়। মামুনের অভ্যস্ত চোখে সে লোলচর্ম হয়তোবা, আমার কাছে সে চিরনবীনা, সে আমার অধরা মাধুরী।
তার নামটিও যেন কোন পারস্য প্রেমিকের হৃদয় থেকে বেরিয়ে আসা আবেগঘন এক শব্দ। আবিদজান। ভালবেসে কেউ কেউ ডাকে তাকে আবিদজঁ। তার শরীর পেঁচিয়ে রেখেছে সুন্দরী এক লেগুন, এব্রিয়ে তার নাম, যেন রূপালী একটা কাঁচুলি। এব্রিয়ে মানুষেরা তাদের নামেই দিয়েছে রুপসীর পরিচয়।
টিলার উপরে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আবিদজানের প্রাসাদোপম হোটেল সেব্রোকোর সামনের ঘাসে ছাওয়া লনে বসে আমি আর মামুন চুপচাপ সুন্দরী নগরী আর তার সখীটির মাধুর্য দেখি। ডানদিকে দেখা যায় প্লাতোর বড় বড় দালানগুলি, সূর্যাস্তের সময় তাদের মাথার উপরের আকাশে অপূর্ব এক রঙের খেলা শুরু হয়। আমি মুগ্ধতা নিয়ে দেখি। মনে হয় যেন কোন পুরান থেকে উঠে আসা কোন এক দেবতা এব্রিয়ের জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে মালভূমির উপর।
লেগুনের শান্ত বুকে ভেসে যায় ধীবরের আদুরে নৌকা। সারাটি বিকেল তারা জাল ফেলে, সন্ধ্যার দিকে সে জালে ধরা পড়ে প্রণয়াভিসারে আসা সিলুই, তঁ এসব প্রেমিক মাছেরা। ফেলে আসা শহর চট্টগ্রামের একটা শান্ত নদী কর্ণফুলির কথা মনে পড়ে তখন।
জেলেদের ছোট ছোট নৌকাগুলো এই উঁচু থেকে আরো ছোট দেখায়। জলে বৈঠা পড়ে, আমি মনে মনে তার সুর শুনি, তখন মনে হয় এব্রিয়ে কোন লেগুন নয়, ফসলের ক্ষেত হয়ে গেছে সে, আর কৃষকেরা তার বুকে চালাচ্ছে এলোপাথারি কোদাল।
দূরে আছে এক নির্জন নারিকেল গাছে ঘেরা দ্বীপ। তার নাম বুলি। লেগুনের বুক চিরে চলে যাওয়া এই নৌকাগুলোতে চড়েই একদিন আমি আর মামুন গিয়েছিলাম সেখানে। সেখানে আছে চোখে বিস্ময়মাখা বালকেরা, আর আছে নিঃসঙ্গ একটা ঘাট। সারাদিনে মাত্র একবার তার কাছে এব্রিয়ের খবর নিয়ে আসে ছোট এক খেয়া।
শহর থেকে বেরিয়ে অতলান্তিকের পাড়ে যেতে চাইলে পার হয়ে যেতে হয় দুটো সেতু। এই সেতু থেকে একদিন উলটে পড়ে গিয়েছিল যাত্রীবোঝাই এক বাস। এব্রিয়ে বুকে টেনে নিয়েছিল সেদিন অনেক অভিমানী প্রাণ।
অতলান্তিকের ঢেউ দেখতে মন চাইলে কখনও কখনও দুজন মিলে চলে যাই গ্রঁ-বাসাম। নারিকেল বীথিকার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় আটলান্টিকের ফেনিল জল। এই গ্রঁ-বাসামেই ফরাসীরা পত্তন করেছিল তাদের প্রথম রাজধানী। শহর থেকে একটু দূরে গ্রঁ-বাসাম। যাওয়ার পথে পড়ে লক্ষ লক্ষ নারকেল গাছ। নারকেলের পাতার বেত দিয়ে এরা সুন্দর ঝুড়ি, টুকরি এসব বানায়। আর বাসামে ঢোকার পথে পড়ে আফ্রিকার জীবন্ত যাদুঘর। শখানেক লোক-শিল্পের দোকান।
বিকেলের আলোয় স্নান সেরে নিয়ে এব্রিয়ে লেগুন যখন রুপের পসরা সাজিয়ে শোয়, তখন আমাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে উড়ে যায় অগনন বাদুর। লক্ষ-কোটি। কাছেই আছে বাংকো জাতীয় উদ্যান। ওখানেই তাদের রাত্রিকালীন আবাস। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে আবার তারা উড়ে যাবে এব্রিয়ের এধারে ওধারে। সন্ধ্যায় লেগুনের উপর এক অদ্ভুত মায়া নেমে আসে যেন। আর আরবীয় সুরের মূর্ছনা নিয়ে আসে মশার ঝাঁক। মামুন তাড়া দেয়। আমরা একটা পাহাড়ি পথ ধরে নেমে আসি। এব্রিয়েকে বলি, " Bonne Soiree, ma cherie!
[ছবিগুলো সব তোলা সুহৃদ আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক। এই লেখাটার মূল দাবীদার আসলে সেইই।]
মন্তব্য
মাঝের ছবিগুলো দারুণ লাগল।
facebook
আবিদজান সুন্দর শহরতো।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
#অভিনন্দন আপনাকে প্রিয় সুমাদ্রী অনেক দারুন ছবি পোষ্টের জন্য।
>প্রথম ছবিটার নীচের দেড় লাইনকে আমি ভেবেছি কোন দুর্দান্ত কবিতা।।।।খুব সুন্দর।
>আমার নিকট সবগুলো ছবিই ভাল লেগেছে, নমস্য।
#ভাল থাকুন, শুভ ব্লগিং
ধন্যবাদ আশরাফ।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
#আপনাকে অনেক ভালবাসা আবারো, আমরা যারা হাত পা ছুড়তে পারিনা তাদের জন্য আপনদের ছবি পোষ্ট বিশাল কপাটবিহীন দরজা জানালা।
>আপনারা দেখান আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখি, বিষ্ময়ে বিষ্মিত হই, ভাবি
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
#ভাললাগা সর্বক্ষণ
picture guli amar khub valo lagsa. -mehedi
ধন্যবাদ।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
দারুন ছবি, আর সাথের লেখা।
আফ্রিকা সকসময়েই আমাকে খুব টানে। কিন্তু আজকাল কেমন যেনো বাংলাদেশ ছেড়ে বেরোতে মন চায় না। তবুও তো বেরোতে হয়। তবে বর্তমান চলাফেরা এশিয়া কেন্দ্রীক। কিছুদিন আগে সেনেগাল থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ডেকেছিলো একটা নয় মাসের এ্যাসাইনমেন্টে, মালপানি ভালোই ছিলো। ওরা ইউনিসেফের রোস্টার থেকে আমাকে পেয়েছিলো। ইউএনে আমার এলার্জি এবং সাম্প্রতিক স্থায়ী চাকুরীর আমোদজনিত আলস্য, দুটো মিলিয়ে যাইনি এবং ইউনিসেফকে মেইল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি ওদের রোস্টার থেকে আমার নামটা কেটে দিতে। ওরা দিয়েছেও। আরেকবার ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার সাবেক বসের কথা তো বেশ মেনে চলেন দেখছি
ওটাও আপনার পড়া সারা। না মানলে কি আর চলে! তাদের কাছ থেকে কাজ শিখে দুটো করে খাচ্ছি। তবে সমস্যা হলো কি জানেন, আজকাল নিজে পিটিয়েও ঢোল থেকে আর বেশি আওয়াজ বের করতে পারছি না। বোধহয় ঢোলের চামড়াটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
শুভকামনা রইল।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
সুমাদ্রী দা
চমৎকার বর্ণনা। মনে হচ্ছে আমার এতদিনের পরিছিত লেগুনকে নতুন করে আবিস্কার করলাম।
ছবিগুলো জুড়ে দেবার জন্য অনেক এবং কৃতজ্ঞতা। এবং
সবগুলো ছবি দেওয়া সম্ভব হলনা মামুন, সেব্রোকোর উপর থেকে আকাশে বাদুরের ছবিগুলো দিতে পারলে ভাল হত।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ছবিগুলি অসম্ভব ভালো হয়েছে।
আর আপনার লেখাও খুব ভালো হয়েছে, এক কথায় দুর্ধষ:-)
ধন্যবাদ।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ছবিতে আপনাকে আপনার ফটোগফুর বন্ধুরে
আর লেখায় আপনাকে
চমৎকার জায়গা, যাইতে মঞ্চায় !!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আইসা পড়েন ভাইজান।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ভালো লাগলো অনেক।
বর্ণনা গুণে আবিদজান আর এব্রিয়ে-কে একেবারে রক্ত-মাংসের মানুষ বলে মনে হল।
লেখনী সচল থাকুক।
ভাল থাকিস।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
মাছ ধরার দুইটা ছবি বেশী ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
খুব ভাল লাগলো। আবিদজান আসলেই খুব চমৎকার যদিও একবার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আসাকরছি আবার যাব।
ঘুরে আসুন, ওদিয়েনে নিয়ে লিখুন।
লেখেটা ভালো লাগলো।
আর একেবারে ফাডাইয়ালাউন্তিস সব ফুডুক। প্রথম ছবিটা অনন্য।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ। অনেকদিন কোন লেখা নেই, ব্যস্ত নাকি?
কি চমৎকার একটা শহর
আসলেই সুন্দর।
যেমন ছবি তেমন লেখা ! মন-টোন ভরে গেল
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
টোনও ভরে গেল?
আপনার ভ্রমণন্থনে কবিতার সুরটুকু স্পষ্ট - বেশ অন্যরকম লাগে পড়তে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ।
মনে হল, যেন একটা পঙখতিমালা...শেষ হয়েও অতৃপ্তি রয়ে গেল। আরও পড়ার সাধ রইল
ধন্যবাদ বৌদি। ভাল থাকুন।
আমি জেনুলাতে থাকি,আবিদজান বার দুয়েক গেছি,দেখেছি যান্ত্রিক চোখে। এখানে শিল্পীর চোখে দেখতে দারুন লাগলো। ধন্যবাদ।
পেইজ ওপেন করার পর ছবিগুলো লোড হতে সময় নেয়। সেই ফাঁকে লেখা পড়ে ফেললাম। এতো কাব্যিক ঢঙে কোনো জায়গার বর্ণণা দেয়া যেতে পারে, জানা ছিলো না। মুগ্ধ হলাম।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
খুব সুন্দর আপনার বর্ণনাশৈলী, তবে লিখা কিন্তু ছোট হয়েছে এইবার। ছবিগুলা বেশ চমতকার।
নৌকা দেখলেই আমার কেন যেন দেশের কথা মনে পড়ে ।
ছবিগুলা বেশ চমতকার। লেখাও উপাদেয়
ছবি সুন্দর, লেখা পড়ে মনে হল কাব্য!
শহরটা বেশ সুন্দর।ছবিগুলো বেশ সুন্দর।
নতুন মন্তব্য করুন