দেশ ছেড়ে যাবার সময় বাবা-মা'র পর যাদের জন্য সবচেয়ে বেশী খারাপ লেগেছিল তারা হল আমার আলমারি ভরা বিচিত্র সব বই আর খাতা। তাদের সাথে সম্পর্কটা আমার অপার্থিব।অশেষ ঋণী আমি তাদের কাছে। ঠুলি পড়ে যাওয়া আমার চোখ দুটো তারা একদিন জলের ঝাপ্টা দিয়ে খুলে দিয়েছিল। পৃথিবীটাকে অন্যরকমভাবে ভালবাসতে শেখার প্রেরণা দিয়েছিল চিত্র-বিচিত্র বইগুলো। কত বই। কত সহস্র চিত্রকল্প। ইতিহাস। তাদের সেই আলমারির অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ফেলে রেখে যেতে তাই ভারী কষ্ট হয়েছিল। জানতাম, আমি ছাড়া আর কারো কাছে তাদের ফুটো কড়িটিরও মূল্য নেই। আমার মত আর কেউ মমতায় তাদের পিঠে বুলিয়ে দেবেনা হাত। তাই মনে হয়েছিল, আমার যাবার পরে হয়ত পোকামাকড়ের ঘরবসতিতে ভরে যাবে পুরোনো আলমারিটা। বই-খাতাগুলোর শরীরে বাসা বাঁধবে ক্যান্সার। ফিরে এসে হয়ত দেখব আমার কবিতা লেখার খাতায় পোকার বিষ্ঠা লেগে আছে। অনেকগুলো শব্দকে পছন্দ হয়নি বলে নিষ্ঠুর সম্পাদকেরা কামড়ে খেয়ে ফেলেছে। ছুটিতে দেশে এসে তাই আলমারিটা খুলতে গিয়ে ভয়ে হাত কেঁপে উঠেছিল। যাক, বইগুলো অক্ষত আছে। তবে পোকামাকড়েরা প্রকৃতির উদাত্ত ডাককে ফেরাতে পারেনি তীব্র ন্যাপথলিনের গন্ধের ভেতরেও। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে লেখা বেশ কিছু কবিতা( বা বক্তব্য)'র একটা খাতা খুঁজে পেলাম। আজ সকালে খাতাটা ওলটাতে গিয়ে কিছু লেখায় চোখ আটকে গেল। সেই সব চেহারা ভেসে উঠল চোখে যাদের একটু সঙ্গ পাবার জন্য কত পাগলামি, ছাগলামি, আঁতলামি করেছি এন্তার। যারা এখন দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে পড়ে আছে যোগাযোগহীন। একটা লেখা ওখান থেকে মনে হল দেয়া যায়। বিশোত্তীর্ণ যৌবনের অতি ঊচ্ছ্বাস, ভাবপ্রবণতা ভাল না লাগলে ঝাড়ি দিয়ে থামিয়ে দেবেন প্রিয় সচল পাঠক। নচেৎ উহারা বেরুতে থাকবে যতদিন দেশে আছি।
কাছাকাছি
দু'জনকে দুপাশে সরিয়ে দিয়ে
আজ মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেছে একটা পাহাড়,
লোকেরা তাকে ডাকে ' দূরত্ব '।
আমরা কি ভেবেছিলাম এমন কোন সম্ভাবনার কথা?
একটা ঠুনকো পাহাড়, ছুঁলেই হুড়মুড় করে ধসে যাবে
তবু আজ মনে হয় বিশাল তার পুরুত্ব,
যেন কয়েক'শ বছর লেগে যাবে
তার ভেতর দিয়ে ছোট একটা সুড়ঙ্গ বানাতে,
একটা বামন পাহাড়- লাফ দিলেই ওপারে পৌঁছে যাব
অথচ মনে হয় অসীমে রেখেছে সে তার শিখর
আর আমরা তার গায়ে সেঁটেছি ' অনতিক্রম্য '।
লোকেরা বলে আমাদের হৃদয় অন্য পথ খুঁজে নিচ্ছে
আর ক্রমাগত বেড়ে চলেছে পাহাড়ের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ;
অথচ তুমি জানো আমি কান পেতে আছি এপারে
ওপার থেকে আসা সুড়ঙ্গ খোঁড়ার শব্দের আশায়,
আর আমি জানি, ওপারে বসে তুমি ভাবছ
কবে ' অনতিক্রম্য ' শিখর টপকে তোমার কাছে নেমে আসব আমি।
এখন মনে হয়, মাঝখানে পাহাড় আছে বলেই
আমরা দুজন দুজনার আরো কাছে এসে পৌঁছুচ্ছি।।
৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ।
মন্তব্য
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
চলুক চলুক
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এভাবেই নোটবুকের পাতায় আমিও হারিয়ে যাওয়া 'আমি'কে খুঁজি।
চলুক স্মৃতিচারণ। দেশের মাটিতে ভাল থাকুন।
স্মৃতিচারণ মানুষকে বড্ডও এলোমেলো করে দেয়!
বড়ই ছেলেমানুষী লেখা।।।।
আপনি কি ইংরেজী বিভাগের ওই দাদাটা যার চোখটা একটু ট্যারা?
ভাই কি শরীরের বৈশিষ্ট্য দেখে মানুষ চেনেন নাকি? বলেন তো, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের মোটামত শুকনা করে টিচারটার নাম কি?
আপনি কি চবি'র ইংরেজী বিভাগের ওই দাদাটা যার চোখটা একটু ট্যারা?
আপনি কি নাম প্রকাশে ভীত সেই অতিথি যার চোখের চামড়া নাই?
..................................................................
#Banshibir.
সূচনা ভালো লেগেছে কিন্তু কবিতা মোটামুটি লাগলো সুমাদ্রী ভাই। অনেক আগের সেটা একটা কারণ হতে পারে।
_____________________
Give Her Freedom!
সুচনা সুন্দর হয়েছে।
আসমা খান
দুরত্ব ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দেয়। চোখের আড়ালই মনের আড়াল নয়। সুন্দর কবিতা।
তামান্না ঝুমু
দারুণ লাগলো দাদা। কেমন কাটছে আপনার ছুটি।
অমি_বন্যা
কবিতা ভালো বুঝি না। গদ্যাংশের প্রতি ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম। ঢাকায় কয়দিন সুখ করে নেন
ভালো লেগেছে । বন্ধ করবেন না প্লীজ।
পুরোনো লেখারা জেগে উঠুক, স্মৃতি হাতড়াতে থাকলে কেমন জানি একটা হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি আছড়ে পরে মনে-যেটাকে আমি মনের যোগব্যায়াম মনে করি।
দিবাকর
অসাধারণ একটা কবিতা।
অসম্ভব ভালো লেগেছে।
বাকিরা বেরুতে থাকুক একে একে। থামাবেন না যেন!
facebook
সুমাদ্রী, খুব ভাল লাগল । মনে পড়ে গেল দেশে ফেলে আসা বেতের বুক শেলফ ভর্তি বইগুলোর কথা । কত রাতজাগা প্রহর লেগে আছে সেইসব বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে ।
আপনার কবিতাও কিন্তু ভাল লেগেছে আমার । চলুক ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ভাল লেগেছে দাদা... তবে থামবে কেন?
বেশ ভালো লেগেছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন