ঃ আমাকে যদি বেছে নিতে বলা হয় রোজকার ব্যবহৃত শব্দগুলোর মধ্য থেকে একটিমাত্র শব্দ যার মর্মার্থ আমাকে আগামীকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগাবে সেটি হল ‘ সুন্দর ’।
ঃ কিন্তু কী সুন্দর? কিসে সৌন্দর্য্য আসে? এই অনুভূতিও কি আপেক্ষিক নয়, মানে আমার কাছে যেটা সুন্দর সেটা তোমার কাছে সুন্দর নাও হতে পারে?
ঃ উত্তরটা আসলে জটিল। সবকিছুই তো আপেক্ষিক বলে পার পাওয়া যায়। তবে আমি তোমাকে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কথা বলি।
ঃ হুম।
ঃ ‘বৈচিত্র্য’ই সুন্দর। বৈচিত্র্যে সুন্দর আসে। দৃশ্য, শব্দ, ভাবনা, ঘ্রাণ, স্বাদ, অনুভূতি এরা সুন্দর হয়ে ধরা দেয় যখন এদের ভেতরে বিচিত্রতা খেলা করে।
ঃ বুঝিয়ে বল।
ঃ চারিদিকে দেখ একবার। ঐশ্বর্যশালী, বৈচিত্র্যময় পৃথিবী। মহাবিশ্ব। শুধু একটিই জিনিসে ভরা নেই চারপাশ। হাজারো দৃশ্য, হাজারো শব্দ, হাজারো ঘ্রাণ, হাজারো স্বাদ। তাইতো সুন্দর। বিপরীত জিনিসগুলো একসাথে আছে বলেই সুন্দর। যেমনঃ আগুন আর জল। ফসলের মাঠ আর বালুকাময় মরুভূমি। রৌদ্রজ্জ্বল দিন আর অন্ধকার রাত। এরকম হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে।
ঃ কখন ‘সুন্দর’কে খুঁজে পাওয়া যাবেনা আর?
ঃ এটাও কি এককথায় উত্তর দেয়া যায়! আচ্ছা ধর, তোমাকে আমি একটা বেশ বড় ফুলের বাগানে নিয়ে গেলাম যেখানে কেবল একটাই ফুল ফোটে, একটাই কেবল রঙ, একটাই কেবল গন্ধ। কিংবা ধর বিশাল আকাশটায় কেবল একজাতেরই পাখি উড়ছে কিংবা একজাতেরই পশুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে জঙ্গলে জঙ্গলে, সমুদ্রে সাঁতরে বেড়াচ্ছে একই রকম দেখতে সব মাছ। মনে কর আমরা জলসায় গেছি গান শুনতে আর সেখানে শুধু একরকমের যন্ত্রই বাজছে আর একটাই কেবল সুর; খেতে গেছি তোমাকে নিয়ে কাকুর বাড়িতে আর দেখলাম থরে থরে সাজানো আছে কেবল একটাই খাবার; ভাল লাগবে? ‘সুন্দর’ খুঁজে পাবে তখন?
ঃ হুম। আরও বল।
ঃ বিচিত্র রঙের, নানান গন্ধের ফুল আছে বলেই ‘সুন্দর’ আছে। কতশত বাহারী পাখি, পশু, মাছেরা আছে বলেই তো আকাশ, বনানী, সমুদ্র সুন্দর। বিচিত্র সুরের মুর্চ্ছনা আছে বলেই তো সঙ্গীত আমাদের হৃদয়টাকে ভরিয়ে তোলে। আর স্বাদে ভিন্নতা আছে বলেই তো তোমার মুখে কিছু তুলে দেওয়া যায়।
ঃ হাহা। কিন্তু বিপরীতেদের একসাথে অবস্থান কি একেবারেই সম্ভব? মানুষের বিপরীত বিঃশ্বাসগুলোতো সাংঘর্ষিক।
ঃ আসলে আমরা তো প্রকৃতির বাইরের কিছু নই। প্রকৃতির দিকে তাকাই চল। মাংশাষী পশুদের আক্রমনে তৃণভোজী প্রাণিরা তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, তৃণভোজীদের কারণে ঘাসের প্রান্তর তো মরুভূমি হয়ে পড়েনি। তীব্র শীতে সমস্ত গাছের পাতা ঝরে গেলেও, নদী জমে বরফ হয়ে যাবার পরেও বসন্তে আবার গাছগুলো সবুজ পাতায় ভরে যায়, পুরু বরফের চাঁইয়ের নীচে পুরো শীত বেঁচে থাকে মাছেদের ঝাঁক। ঝড় যেমন আসে তেমনি আসে মৃদু হাওয়া, মিষ্টি রৌদ। প্রকৃতিতে দেখ কেউউ সর্বশ্রেষ্ঠ নয়। ওখানে বিরাজ করে এক চমৎকার ভারসাম্য। কিন্তু ধর যদি সিংহকূল যদি হঠাৎ ভেবে বসে দুনিয়া জুড়ে কেবল তারাই রাজত্ব করবে, তবে কী হবে?
ঃ কী হবে?
ঃ কী আর হবে। সিংহকূলের এই স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেবেনা প্রকৃতি। একদিন তাদেরকেই বিদায় নিতে হবে। কিন্তু ভাগ্যিস ওরা এখনও ওরকম বোকার মত ভাবেনা। মানুষ তো এখানেই গলদটা করে বসে মাঝে মাঝে। সে ভাবে সেই বুঝি সেরা, তারটাই বুঝি কেবল শুদ্ধ, সঠিক। অন্যরা সবাই হবে তার পদানত, মেনে নেবে তারটাই। তো এরকম হলে কী হত? ‘বৈচিত্র্য’ হারিয়ে যেত। ‘সুন্দর’ হারিয়ে যেত। ফুলের বাগানে একটা ফুলের মত। অবশ্য সবাই যে এমনটাই ভাবে তা নয়। তাহলে তুমি আমি এতদূর পর্যন্ত আসতে পারতাম না। যারাই নিজেদের ‘সেরা’ ভাবতে গিয়েছিল ইতিহাসের খাতায় খলনায়ক হিসাবে নাম উঠে গেছে তাদের। ‘বিঃশ্বাস’ কিন্তু স্বতসিঃদ্ধ প্রমানিত কিছু নয়, বিঃশ্বাসগুলো ‘যুক্তি’ কিংবা ‘প্রশ্নে’র পরীক্ষায় পাশ করতে না পারলে ওগুলোকে অন্ধের মত আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকার কোন মানে হয়না। ‘বিশ্বাস’ ক্ষতিকর এবং পরিতাজ্য তখনই হয়ে উঠে যখন এটি মানুষকে দুর্বিনীত, অসহিষ্ণু, স্বেচ্ছাচারী এবং অহংকারী হবার প্ররোচনা দেয়। মানুষের বিপরীত ‘বিঃশ্বাস’গুলো প্রায়শঃই সাংঘর্ষিক হলেও মানুষ বোধ হয় সবসময় এই ‘বিশ্বাস’গুলোকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে চলেনা। অন্ততঃ সব মানুষ নয়। মজার ব্যাপার হল, মানুষের ‘বিশ্বাস’ কিন্তু নিয়তই বদলায়, জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতে। অনেকে সেটা মেনে নেয়, অনেকে মানতে চায়না। এই ‘পরিবর্তন’কে মানতে না পারাটাই আসলে সমস্যার মূল কারণ।
ঃ কিন্তু ‘বিঃশ্বাস’ এর বৈচিত্র্যের কারণেও কি পৃথিবী সুন্দর নয়?
ঃ যদি ‘বিশ্বাস’গুলোর ভেতরে অতিমাত্রায় অহং, অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা আর ধ্বংসের বীজ লুকোনো থাকে তবে হয়ত নয়। কোন একটা বিশেষ ‘বিশ্বাস’ যখন নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করতে চাইবে তখন তো নয়ই। ‘বৈচিত্র্য’ কথাটার মানে অনেককিছুর সহাবস্থান, কোনটার চেয়ে কোনটা সেরা এমন নয় কিন্তু। তবে একটা কথা আসলে বলা দরকার, রোগে আক্রান্ত হওয়া যে উদ্ভিদ সমস্ত বৃক্ষকূলে মড়ক ডেকে আনবে তার চিকিৎসা দরকার নতুবা অন্যান্য প্রজাতি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তার সমূলে উৎপাটন জরুরী। এরকম ‘বীজাণুবাহী’দের সাথে সহাবস্থান করাটাই প্রকারান্তে ‘বৈচিত্র্যে’র বিনাশের কারণ হবে, ‘সৌন্দর্য্য’কেই ধ্বংস করে দেবে।
ঃ হুম। আচ্ছা তুমি কি এরকম কাউকে চেন যে কেবল বৈচিত্র্যের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়, যার চোখে ধরা পড়ে সুন্দর?
ঃ হুম। সেতো আমার বন্ধু। যদিও আমি এখনও দেখিনি তাকে।
ঃ এমা! কী নাম তার?
ঃ তার নাম? তার নাম তারেক অনু, যদিও অনেকে তাকে আরও বেশ কিছু নাম দিয়েছে। সামনের সচলাড্ডায় আমি তোমার সাথে ওর আলাপ করিয়ে দেব। উত্তর মেরু থেকে ও তোমার জন্য শ্বেতভল্লুকের মাফলার নিয়ে এসেছে।
মন্তব্য
সচলাড্ডা হবে নাকি? আচ্ছা আমাকেও পরিচয় করিয়ে দিও তো দাদা
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
বাহ্, দারুণ লিখেছেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনার গদ্য বেশ কবিত্বময়
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ামারো ভালো লাগে তারেক অনুর লেখাগুল। আমিও পরিচিত হতে চাই ওনার সাথে।
মানিক মনিরুল
হা,হা, মোবাইলে কথা হয়েছে, শীঘ্রই দেখা হবে তাঁর সাথে।
পদ্যময় গদ্য, ভালো লেগেছে।
চমৎকার লাগলো। চলুক।
-মনি শামিম
দারুণ
তবে সচলাড্ডার দরকার নাই মনে হয়
..................................................................
#Banshibir.
ভালো লাগলো।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
তারেকাণু ট্যাগ দেখে আর প্রথম কয়েক লাইন পড়ে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, পুরোটা পড়ে বুঝলাম।
লেখাটা সত্যিই দারুণ হয়েছে। কবে যে এমন লেখা লিখতে শিখবো !
যাহ, এই লেখা এতদিনের পড়লাম যে বড়!
facebook
বন্ধু সুমাদ্রীর কথোপকথন লিরিক্যাল।
এ যেন মৃদু হাওয়াতে সবুজ শান্ত হ্রদ এর বুকের স্বচ্ছ জলরাশিকে নাড়িয়ে দেওয়া।
নতুন মন্তব্য করুন