টানা সপ্তাহদুয়েক চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। আলো দেখার সামগ্রীক বাস্তবতা যে এসে গেছে এমন না। তবে সকালে ঘুম ভেঙেছে চোখে রোদ পড়ে। ব্যস্ততার সময়টুকু আবহাওয়া ছিল জঘন্য। কাঁচা রোদের সাথে ফুরফুরে বাতাসে মনে একরকম ফুরফুরা শরীফ এফেক্ট তৈরী হয়। গলা পর্যন্ত চিপায় থাকলেও মনে হয় ঠিকাছে।
অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম কি যেন লিখবো,কিন্তু লেখা হচ্ছে না। মনে হচ্ছে মগজে সর পরে গেছে। সাবধানে তুলে কোঁৎ করে গিলে ফেলতে হবে। কিন্তু তুলতে ভরসা পাচ্ছিলাম না। এদিক ওদিক হলেই সর্বনাশ। ফুরফুরে বাতাসে মনে পড়লো নিজের ফতোয়া প্রতিটি সাক্ষরই একেকজন লেখক তারপর কিছুক্ষণ এলোমোলো ঘুরলাম এই পোস্টে থেকে সেই পোস্টে, সামহোয়ারে একটা গান দিলাম,ঘন্টাখানেক ক্লাসিক্যাল শুইনা হঠাৎ রোলিং স্টোনস্ এ ফিরলাম। তারপর বিটলসে আইসা মনে হৈল ..তেজা ..আজা...
লেখার বিষয়বস্তু বা মান সম্পর্কে পূর্ব নির্ধারিত অবস্থান লেখককে খরায় ফেলতে পারে। এমনকি লেখক যখন ধুনফুন একটা কিছু নামাতে চান তখন এই ধুনফুন বিষয়টাই একটা প্রশ্ন হয়ে দাড়ায়। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে সুপার হিট পোস্টের তালিকায় প্রচলিত অর্থে ধুনফুন মোটামুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেক্ষেত্রে ধুনফুনের প্রচলিত সংজ্ঞার্থে ভরসা কমে আসে।
সেরকমই কি যেন ভাবছিলাম গত দুঘন্টা ধরে। এর মধ্যে বীয়ারের মগে দুই দফা কফি হয়ে গেল। বিড়ি খাওয়ার ইচ্ছাটা একবার মাথা চাড়া দিয়ে আবার চুপচাপ। ভালো লক্ষণ। বিড়ি এখন আক্ষরিক অর্থেই কমেছে। দু সপ্তাহে এক প্যাকেট।
...............................
গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে..কিংবা তারো আগের সপ্তাহে কামলা দিচ্ছিলাম গ্রাসাচ্ছাদনোপোলক্ষ্যে। একবারে মেইনস্ট্রিম প্রলেতারিয়েতের চেহারায়। মোবাইল রাখা ছিল টেবিলে। রিঙ্গার বন্ধ। হঠাৎ দেখি অচেনা নাম্বার থেকে ফোন। ধরলাম। বন থেকে মাসকাওয়াথ আহসান। একটা ২ মিনিটের সাক্ষাৎকার দিতে হবে। তখনই। একটু যে খুশী হবো তারও সময় নেই। ঘরে তখন কেউ নেই। অনেকেরই ঘন্টা শেষ। মাসের শেষে কাজও কম। একটু ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থান থেকেই বললাম ঠিকাছে। বিষয়বস্তু লেখাপড়া শেষে দেশে ফেরা।বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে দেশে ফেরার হার কম কেন..যেখানে ভারতীয় ছাত্রদের বৃহত্তর অংশটাই ফেরত যাচ্ছে ইত্যাদি। কি বলবো? চট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলে ফেললাম সত্য কথাই। অগোছালোভাবে। বললাম ভারতীয় বা চীনা ছাত্ররা ফিরতে ভরসা পাচ্ছে তাদের দেশে একটা কাঠামো তাদেরকে ধারণ করার জন্য তৈরী হয়ে আছে বলে। বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে কিছি করতে হলে আগে সেই ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করে নিতে হবে। বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং। মাসকাওয়াথ আহসানের পরবর্তী প্রশ্ন,[/i]আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বাংলাদেশী ছাত্ররা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ভয় পায়? খুব অসহায় বোধ করছিলাম। বললাম,বিষয়টা ঠিক ভয়ের না। সবাই এখানে এসেছে ক্যারিয়ার গড়তে। যে অপশনটা সহজ, যাতে নিশ্চয়তা বেশী, স্বাভাবিকভাবেই সেটা অগ্রাধিকার পায়। এই পর্যন্ত আসতে ধন্যবাদ দিয়ে সাক্ষাৎকার শেষ হলো। সময়টা ফুস্ করে উড়ে গেল আর কি।
পরের ঘন্টা তিনেক খুব মন খারাপ লাগছিল। কেন বলতে গেলাম এই কথা?একটু মসলা লাগিয়ে কৌশলি মিথ্যা বললেই তো হতো!ডয়েশে ভেলের শ্রোতারা আমারে বেকুব মনে করবো নিশ্চয়ই। পরে পাউজের সময় মনে মাথায় বহু পুরাতন একটা থিসিস চ্যাগা দিয়া উঠলো সত্যের ম্যানিপুলেশন ছাড়া সৌন্দর্য্য নির্মাণ সম্ভব না[i] ঠিক ঠিক...সৌন্দর্য জিনিসটা নির্মান করতে গেলেই ঝামেলা....
মন্তব্য
পরথম রিঅ্যাকশনে সত্য কথাটাই বের হয়। ভারত বা চীনের সংগে বাংলাদেশের তুলনা করাটা উচিত হবে বলে মনে হয় না।
পড়াশোনা শেষ করে সংগে সংগে দেশে ফেরা কি ঠিক ? ইভেন আপনি যদি অ্যাকাডেমিক লাইনেরও হয়ে থাকেন।আমি মনে করি অন্তত ৫ বছর ইন্ডাস্ট্রি লাইনে একটা অভিজ্ঞতা থাকা ভাল। দেশকে দেওয়ার অনেক কিছু পাওয়া যায়।
_____ ____________________
suspended animation...
বিষয়টা আসলে যেদিকে যায় সেটা হলো এই ...দেশকে কিছু দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবার বাস্তব ভিত্তি কার্যত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে যেই পয়েন্টে এসে আটকায় সেখানে। বিদেশে বহু অনিশ্চয়তার পরেও অনেক ধরণের সুবিধা এবং বেশি বেতনের বিষয়টা চৈতন্যকে প্রভাবিত করেই। যারা মাস্টার্স/ট্রেনিং/পিএইচডি শেষে ফিরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছেন তাদেরকে আমি স্যলুট করি। তবে অন্তত বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে তারা এখনো সংখ্যালঘিষ্ঠ।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
(টেস্ট কমেন্ট অ্যাজ অ্যা ভিজিটর)
ফিরতেই তো চাই।
ভয় করে।
--
সৌরভ
ভালো লাগল। বিড়ি কৈমা যাওনের সংবাদে ঈর্ষা উৎপন্ন হৈল মনে!
অফ টপিক প্রশ্ন, যে ইন্টারভ্যু দিলেন সেইটা কিসের জন্য নেয়া হৈছিল?
প্রথম লাইন পড়ে আঁতকে উঠেছিলাম, ভাবলাম চোখের সমস্যা নিয়ে না জানি বদ্দা আবার হসপিটালে গেলো! যাউক, বিড়ি কমছে ঐটা ভালো খবর।
আর যা কইছেন, ভালৈছে।
দোস্ত তো ভাবে আছে মনে লয়।
আইচ্ছা সুমন, কেউ যদি ফিরা না যায় তবে গ্রাউন্ড তৈরী হবে কি করে?কে তৈরী করবে? ভারতে কি সব সরকার করেছে?
যেই ভিত্তির উপর ভরসা কৈরা ভারতের পোলাপান দেশে ফিরে সেইটা কিন্তু নেহেরু-ইন্দিরার আমলে তৈরী করা..
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বিড়ি কমাইলেন মানে আপনি নষ্ট হওয়ার পথে। আমার বন্ধুবান্ধবরা যারা বিড়ি ছাইড়া দিলো, সেই কোটা এখন আমি খাইয়া পূরণ করি। না করলে কোটা তামাদি হওয়ার ভয়!
লেখাটা ভালো লাগলো। বাংলাদেশের ছাত্রদের দেশে ফেরায় অনাগ্রহের ব্যাপারে আমার পর্যবেক্ষণ ও মতামত আপনার অনুরূপ।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আপনার বড় পোস্টগুলা কিন্তু দারুন হয়। আর নিজের ইনিশিয়াল রিঅ্যাকশন বলেছেন যেটা সত্যিও বটে। টেনশনের কিছু নাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মাসকাওয়াথ আহসানের খপ্পড়ে পড়ার সুযোগ হয়েছিল ২০০৫ এ, মে মাসে, নিশ্চয়ই তিনি মনে রাখেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৬০ বছর পূর্তি নিয়ে অনুষ্ঠান ছিল, টপিক, তরুণ প্রজন্ম কী ভাবছে যুদ্ধ নিয়ে?
বন্ধু রিচি জানিয়েছিল সকালে, রাতে ভুলে গিয়েছি সাক্ষাৎকারের কথা। ফোনে চটজলদি কী বলবো, আমতা আমতা, গলা মিউমিউ, যদ্দূর মনে পড়ে, বলেছি, বিশ্বযুদ্ধ আবার হবে, নতুন মোড়কে। যুদ্ধের রূপ বদলে গেছে। হাতিয়ার এখন তথ্য-ভাষা-সংস্কৃতি।
ডিজিটাল ডিভাইড (মিডিয়া এমন অনেক শব্দ বানায় প্রচারস্বার্থে।) দূর করতে তথ্যপ্রযুক্তিটা কোনো জাদুর কাঠি না। এ দিয়ে উন্নতির যে ইমেজ দেখানো হয়, তেমনটা নয়। ইংরেজি কনটেন্টের আধিপত্যে ইন্টারনেটজুড়ে। লঘু গোষ্ঠীদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিতে শক্তিশালী গোষ্ঠীর ভাষাই হবে আন্তর্জাতিক ভাষা। অদূর ভবিষ্যতে ইংরেজির পাশাপাশি হয়তো চীনা ভাষাও রপ্ত করার চাপ অনুভব করবো আমরা, বৈশ্বিক যোগাযোগের বেলায়। ভাষা সংরক্ষণের এ যুদ্ধে টেকা যাবে তো?
কনটেন্ট তো বটেই, ইন্টারনেটের ওয়েব অ্যাড্রেস থেকে এর আইপি ব্যবস্থাপনার মূল কলকাঠি, সেই তো পশ্চিমাগীত, আমেরিকায়।
বিশ্বযুদ্ধের পর গড়া জাতিসংঘের বর্তমান ভূমিকা মোটেও নিরপেক্ষ নয়।(পিআইবিতে সংক্ষিপ্ত কর্মশালা করছিলাম তখন তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতা নিয়ে। সে সূত্রে স্ল্যান্টেড জার্নালিজম এসেছে দু ফোটা।) ইরাকে যুদ্ধরিপোর্ট করতে গিয়ে 'এমবেডেড' হয়ে যায় সাংবাদিক। মিডিয়া মোড়ল খেয়ে ফেলে চুনোপুটিদের সংবাদ-অ্যানালাইসিস। বিজ্ঞাপনগুলো খবরের মুখোশ পড়ে থাকে। যেহেতু সংবাদ, স্পষ্টতই, বাণিজ্যপণ্য। দর্শক-পাঠকদের সাথে সংবাদবণিকদের কৌশলী প্রতারণা; মুক্তির সঠিক উপায় জানা নেই, তবে সত্য হলো যুদ্ধ শেষ হয়নি, করতে হবে, এসবের বিরুদ্ধে।
আরও কী সব বলেছি। নার্ভাস লাগছিল। আসলে, তবে, মানে, পাচ্ছি, হচ্ছি, অ্যা জাতীয় ধ্বনি করেছি বিস্তর। সব কথা রাখেনি। অনেকটুকু বাদ গেছে। সাক্ষাৎকার শেষে ছিল জন লেননের আশা জাগানিয়া গান। ইমাজিন, দেয়ার ইজ নো হ্যাভেন...
_____________________________
জিকোবাজি | ফটো গ্যালারি | ইমেইল
শান্তি প্রসঙ্গে দ্য গল এর কথাই ঠিক...শান্তি হৈল দুইটা যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়...
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
হয়ত ঠিকই বলেছ খোকা।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ঐ কবেকার গল্প এইসব।
মাসকাওয়াথ কি এখনও জার্মানে?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
৩০ শে জুন
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন