রাজনৈতিক সংস্কারের হুজুগটা চাপা পড়েই গেলো শেষ পর্যন্ত। বিষয়টা যারা তুলেছিলেন তাঁরা সম্ভবত এই চাপা পড়বার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই মুখ খুলেছিলেন। প্রসঙ্গটা একেবারেই অপ্রাসঙ্গীক ছিল না। যেমন নতুন ছিল না পরবর্তী রাজনৈতিক টানাপোড়েনে উবে যাবার ঘটনাও। তবু সেটা উঠেছিল। ইউটিলিটির কারণেই উঠেছিল। বাজারে ন্যুনতম চাহিদা ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। রাজনীতির বাজারে ইস্যু খুব চড়া দামের পণ্য। এই পণ্য সরবরাহ করার আগে সঞ্চালককে সেই বাজারের আগাপাশতলা ব্যবচ্ছেদ করে পণ্যের উপযোগীতা এবং অবশ্যই পুনরুৎপাদনে উপযোগীতা বৃদ্ধির সম্ভাবনার সতর্ক পাঠ নিতে হয়। সুতরাং দৃশ্যত: ব্যর্থ হওয়া বা চাপা পড়া ইস্যুতে, এর দৃশ্যমান সঞ্চালককে ক্ষতিগ্রস্থ হতেই হবে এমন না।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কার জরুরি। অত্যন্ত জরুরি। এটা সমাজ বিশ্লেষকের চাইতে অনেক বেশি অনুভব করেন সমাজে বসবাসকারী মানুষ, বিশেষভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রান্তিক মানুষ, রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ণে প্রকৃত আক্রান্ত মানুষ। তাঁদের এই অনুভব নির্বাচনী রাজনীতির পুঁথিগত সীমা পেরিয়ে আরো দীর্ঘদিনের। পরিভাষার কালোয়াতী দেখানো সংস্কারের ফাঁকও চট করে তাদেরই চোখে পড়ে। কার্ড শাফল করার মতো কিছুদিনের অভিনয় শেষে সংস্কার নাটকের অবসানের দৃশ্যেও তাঁরা ক্লান্ত। সেই লুহামানব আইয়ুব খানের আমল থেকে আজ পর্যন্ত এই বিরক্তিকর নাটকের পূনরাবৃত্তি দেখে মানুষ ক্লান্ত। এদিক থেকে তুলনা করলে দেখা যায় গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রশ্নে জনগণের ক্লান্তির পাল্লা খানিক কম ভারী। কারণ প্রতিটি উর্দিপরা ত্রাতার আগমণ গণপ্রতিনিধিত্বশীল অবকাঠামো নির্মাণকে একেকবারে কয়েক দশক করে পিছিয়ে দিয়েছে। প্রতিবারই ত্রাতারা তাঁদের শুভাগমনের দায় পূর্ববর্তী নির্বাচিত সরকার বা সরকারগুলির উপরে চাপিয়ে একেবারে স্টেরিও টাইপ কাজ করে যান। একেকবার তাঁরা একেকভাবে নানারকম সংস্কারের ধূয়া তোলেন। সেটা কখনো মৌলিক গণতন্ত্র, কখনো ১৯ দফা, কখনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ, কখনো রাজনৈতিক সংস্কার নামের কোন এক দুর্বোধ্য প্রপঞ্চ।
পৃথিবীর এই অঞ্চলে মোটাদাগে বলতে গেলে আধুনিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ শুরু ঔপনিবেশিক তত্ত্বাবধানে। বিষয়টি ভালো না মন্দ ছিল তার বিচার মুস্কিল। উপনিবেশ স্থাপনকারীরা উপনিবেশে যাই স্থাপন করেছেন তার সবটাই ঔপনিবেশিক লুঠপাট সহজতর করার উদ্দেশ্যে। সেসব ব্যবস্থার যা কিছু তর্কসাপেক্ষে জনগণের পক্ষে গেছে তার সবটাই ঐতিহাসিক দ্বান্দ্বিকতার নিয়মে। যেমন, রেলগাড়ী। লিভারপুল আর ম্যাঞ্চেস্টারে রেলগাড়ী চালু হবার বছর খানেকের মধ্যে সাহেবরা কলিকাতায় রেললাইন পাতেন লুঠের মাল দ্রুত পাচারের উদ্দেশ্যে। তার অ্যান্টি-থিসিসে জনগণ পায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মতো বিষয়ে ব্যাপারটা অত সহজ নয়। সেটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে সিভিল সার্ভিস পেরিয়ে একসময় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পর্যন্ত আসে। সাহেবভক্তদের চাকফিব্র্যান্ডি খাবার ক্লাব থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হতে তাঁকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। এক স্বদেশী আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই তাকে কয়েক দফা ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক ভিত্তি পেকে উঠলে তার ফসল ঘরে তুলতে সাহেবরা মুসলীম লীগ নামে আরো একখানা দল তৈরী করেন। দুটোর কোনটাই তাঁর ঔপনিবেশিক দাস মনোবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আজকের বাংলাদেশে, বলতে গেলে শুধু বাংলাদেশে না সাবেক বৃটিশ ভারতের প্রায় সর্বত্রই যে রাজনৈতিক দলগুলি রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে সেগুলি কোন না কোনভাবে কংগ্রেস-মুসলীম লীগের বিভিন্ন রূপান্তর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মাউন্টব্যাটেন সাহেব ব্যাটন বগলে ফেরত গেলেও রেখে গিয়েছিলেন তাঁদের মরতে দম অনুগত প্রশাসন আর এই দুইখানা মৌলিক হাঁটুভাঙ্গা দল। বাকিসব উপনিবেশের মতো এখানেও প্রশাসনের আমলাতান্ত্রিক অবকাঠামো বিকশিত করা হয়েছে রাজনৈতিক অবকাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যহীনভাবে।
১৯৪৭ এর পরে ভাঙা টুকরো গুলির বিকাশ স্বতন্ত্র পথে চলে যায়। ভারতে নিজস্ব অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ন্যুনতম বিকাশ ঘটায় সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি নিজেকে একভাবে গড়ে নিয়েছে। পাকিস্তানে আর পরে স্বাধীন বাংলাদেশে এর প্রবণতা একতরফা নিম্নগামী। এখানে কাগজে কলমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অবসান হলেও বাস্তবে শিল্পায়ন, ভূমি সংস্কার কোনটাই হয়নি। একদিকে ভূমিহীন কৃষকরা জ্যামিতিক হারে সংখ্যায় বেড়েছে অন্যদিকে ইংরেজের তৈরী রাজনৈতিক শ্রেণী নানাভাবে খোলস বদলে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে। তাঁদের এই কর্তৃত্ব হাতে থাকার সাথে নির্বাচিত সরকার বা জলপাই সরকার থাকা না থাকার কোন সম্পর্ক নেই। বলা যায় এই কর্তৃত্বকে জোরদার করতে নির্বাচিত অনির্বাচিত দুই প্রকার সরকারই একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে গেছে। এই কাজ করতে তাঁদেরকে উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামের অভিজ্ঞতার যতটুকু ইতিবাচক উপাদান এই দলগুলি অর্জন করেছিল তাঁকে কখনো সরাসরি আক্রমণ কখনো স্লো-পয়জনিঙের মাধ্যমে নি:শেষিত করতে হয়েছে। আওয়ামী লিগের কথা বলা যায় এই প্রসঙ্গে। এই দলটির জন্ম ঔপনিবেশিক তত্বাবধানে না হলেও ঐতিহাসিকভাবে তা মুসলীম লীগের গর্ভ থেকে আগত। তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ১৯৬৮-৬৯ এ নিহত গরুচোরদের জাতভাইরা জৈবিক নিয়মেই এই দলটিতে বাস্তব রাজনৈতিক খুঁটি হিসেবে কাজ করেছে, যারা স্বাধীনতার পরে কার্যকর রাজনৈতিক শ্রেণী হিসেবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্টতর করেন। রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশ নেওয়া জনগণ আর তাঁর নেতৃত্বে থাকা রাজনৈতিক দলের গাঠনিক উপাদানের মধ্যকার দূরত্ব দৃশ্যত অনতিক্রম্যই থেকে গেছে। এর পরে যতবার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর হয়েছে তাতে প্রতিবারে আরো বেশী করে লুম্পেনাইজেশান ছাড়া আর কিছু ঘটেনি।
রাজনৈতিক সংস্কার বলতে বাস্তবে কোন কিছু করতে হলে শুধু দলের ভেতরে গণতন্ত্র আর নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতায় নানারকম ইচিং বিচিং পরিবর্তন করা অর্থহীন। খতিয়ে দেখতে হবে দলের ভেতরে গণতন্ত্রের যে অবকাঠামোওয়ালা গঠণতন্ত্র নিয়ে একেকটা দল যাত্রা শুরু করেছিল কী কারণে তা ক্রমশ অকার্যকর হয়ে লুম্পেনদের অলিগার্কিতে পরিণত হয়েছে।
সংস্কারের জন্য সবচাইতে জরুরি হচ্ছে রাজনৈতিক দলের মাইক্রোপলিটিক্যাল স্ট্রাকচার। সেখান থেকে কারা কিভাবে রাজনীতিতে রিক্রুট হচ্ছেন। এই রিক্রুটমেন্টের প্রক্রিয়াতে বাস্তব পরিবর্তন আনা সম্ভব না হলে বাকি সবকিছুই বাখোয়াজ থেকে যাবে।
রাজনৈতিক দলে রিক্রুটমেন্ট হয় ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক আর বিভিন্ন পেশাজীবিদের মধ্য থেকে। এর সব কয়টিরই অস্তিত্ব যখন বৃটিশ বিদায় হয়ে ভারত-পাকিস্থানের জন্ম হয় তখন ছিল। তারপর একটা একটা করে সেগুলিকে অকার্যকর করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ধ্বংশ করা হয়েছে ট্রেডইউনিয়নগুলি তারপর ছাত্র রাজনীতি তারপর সেই সূত্রে পেশাজীবি সংগঠণগুলি। রাজনৈতিক সংস্কার করতে গেলে এদের পুনরুদ্ধার নয়, নতুন করে এই প্রতিষ্ঠানগুলি নির্মান করতে হবে। অথচ রাজনৈতিক সংস্কারের মুখপাত্ররা সবাই ব্যতিক্রমহীনভাবে এদেরকে কিভাবে আরো বেশী করে অ্যাপলিটিকাইড করা যায় সেখানে মন দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন। মূখ্যত: ক্ষমতার দ্বন্দ্বে থাকা রাজনৈতিক দলগুলির ছাত্র সংগঠণের নৈতিক মৃত্যু, তথাকথিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে রাজনীতি সম্পর্কে খুব সাফল্যের সাথে উন্নাসিক করে তুলেছে। সর্বত্রই পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে মুখচেনা চোরছ্যাচ্চর না হলে কেউ আর রাজনীতিতে শাইন করতে পারে না। মাইক্রোপর্যায়ে এই রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে যে চেহারা দেখাবার তাই দেখাচ্ছে।
অথচ অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। অনেক বড় এলাকা নিয়ে ঘুরছে। এলাকাটা এতোই বড় যে, ঘুর্ণনের ফজিলত বরাবরের মতোই সীমানা পেরিয়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। এই যাওয়ার কাজে বর্তমান রিক্রুটমেন্টরা কখনো হাঁটুর উপর সাদা লুঙ্গী তুলে কখনো কোটপ্যান্ট পড়ে অনেক ইংরেজী বুকনি সহকারে মরতে দম সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। চাকা যেহেতু ঘুরছে সুতরাং ফজিলতপ্রাপ্তরা কর্মচারী পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন বোধ করছেন না, বরং কিভাবে আরো বেশী করে আরো অনুগত এবং দক্ষ তস্করদের রাজনীতির মঞ্চে আগমণ ঘটানো যায় তার ব্যবস্থাপত্রে উৎসাহিত হচ্ছেন।
রোগ নির্ণয় ছাড়া চিকিৎসা শুধুমাত্র কিছু কিছু মারফতি লাইনে সম্ভব। তাছাড়া রোগের বৃত্তান্ত না জানলে রোগের জটিলতাও বাড়তে থাকে। তখন উপশমের জন্য পুরনো মাদকদ্রব্যের ক্রেডিবিলিটিও কমতে কমতে তলানিতে চলে আসে। যাদুর জামা দেখানোকে উপশমের প্রকৃষ্টতম পথ বলে রবার্ট ম্যাকনামারা, শিকাগো বয়েজ, বুড়ি থ্যাচার, তাড়কা যোদ্ধা রিগ্যানচক্র বহু অর্থশক্তিব্যায়ে প্রচার করেছেন, করে চলেছেন। তাঁদের জন্য এক্ষেত্রে একটাই আপাত: দু:সংবাদ হচ্ছে অতিব্যবহারে সম্প্রতি এই মাদকের পিনিক ছুটে গেছে। সুতরাং এক্ষেত্রে তাঁদের সামনে রাস্তা দুটো। এক হচ্ছে অবিলম্বে নতুন মাদকের সন্ধান, দুই সমস্যার গোড়ায় অন্তত খানিকটা হলেও সংস্কার। এর বাইরে যারা চাকাটাকে জনগণের আওতায় ঘোরাতে চায়, তাঁদের দিকে কর্তব্য হচ্ছে যে করেই হোক প্রথমত গণপ্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা সচল রাখা আর দ্বিতীয়ত: এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে রাজনীতির মাইক্রো পর্যায়ে সংস্কারে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা। কাজটা জনগণকেই করতে হবে। জনগণ লড়তে লড়তে ক্লান্ত হলেও তাঁর সামনে থিতু হবার কোন পথ ইতিহাস রাখেনি।
মন্তব্য
অর্ধেক পইড়্যা খেই হারায় ফালাইলাম। সামারীটা যদি এট্টু দিতেন তাইলে আমাদের মত অভাগাদের এট্টু উপকার হইত।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হেহে...আসলে প্রথম দুই প্যারায় অতিকথন হইয়া গেছে। অনেকদিন প্যাচাল না পারার ফল।
সামারি হইল যারা কয়দিন আগে জেলে ঢুকছিল আর এখন ফাকেফুকে বাইরাইতাছে তার আর তাগো দলের আরো যারা বাকিরা আছে তাগো মধ্যে কার্ড শাফল করার মতো পারমুটেশন কম্বিনেশন করারে রাজনৈতিক সংস্কার কওয়া একরকম ফাইজলামী।পলিটিক্যাল রিক্রুটমেন্টের জায়গাটা সংস্কার না, পুরা নতুন কইরা বানাইতে হইবো, যাতে মাইক্রো পর্যায় থিকা রাজনৈতিক শিক্ষা পাওয়া মানুষরা পরবর্তী রাজনৈতিক শ্রেণী তৈরী করতে পারে।
এই ট্রেনিংটা কিন্তু পশ্চিম ইউরোপের বেশ কিছু পার্টি দেয় (ক্রিশচিয়ান ডেমোক্রোটিকরা বাদে....ধর্ম নিয়া রাজনীতির আবার ট্রেনিং কিয়ের?)। ইঞ্জিনিয়াররা যেমন কোম্পানিতে ইন্টার্নি করে সোশাল ডোমোক্র্যাটিক পার্টি, গ্রীন তারপর বেশ কিছু বামপন্থী দল সেরকম ভাবে রাজনীতি করতে আগ্রহীদের ট্রেনিং দেয়। তর্ক উঠতে পারে যে এই সব ট্রেনিং পাইয়া হয়তো ওরা আরো বড় শয়তান হইয়া উঠে। কথাটা ঠিকও। তবে কিনা বহুত কিছু জাইনা বুইঝা শয়তানি করতে গিয়া পরবর্তী ভোটে সাপোর্ট পাইতে পাবলিকরে অনেক কিছু দেয়ও। পিন্টু-হাজী সেলিমরা জনগণের সাথে বাটপারি ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
প্রেক্ষাপটে অত কথা বললাম যেই বাজারে যেই ভাও কথাটা বুঝাইতে। ঐটার গূঢ়ার্থ হইল বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্র আর তার বিদ্যমান রাজনৈতিক শ্রেণীতে রাজনৈতিক সংস্কারের আসলে কোন দরকার নাই। এইটা তারা মাঝে মাঝে কয় সংস্কারের সম্ভাবনাগুলারে আরো বেশী কইরা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এই নতুন নির্মান প্রক্রিয়াটি আবার বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল । যে খালেদা হাসিনাকে বেশি তেল দিতে পারবে , যার মেরুদন্ড যতো দুর্বল সেই ছাত্রদল আর ছাত্রলীগের সভাপতি হতে পারবে ।
এদের কাছ থেকে দক্ষতা আশা করা আর গাবতলীর গরুর কাছে অলিম্পিকের স্বর্ণ আশা করার তুলনা করলে , দ্বিতীয়টাতে আমি বেশি আশাবাদী ।
তাহলে আবার দেখা যাচ্ছে যে খালেদা হাসিনার একনায়কতন্ত্র থেকে আগে বেরিয়ে আসতে হবে ।
তাহলে সেই আবার চক্রের শুরুতেই গিয়ে দাড়ালাম ।
পেজগি!
আমি মনে হয় ঠিক খালেদা-হাসিনা পর্যায়ে কথা বলতেছি না। আমার বক্তব্যটা কিঞ্চিৎ অবরোহী পদ্ধতিতে গেছে। ব্যক্তি খালেদা বা ব্যক্তি হাসিনার চাইতেও তাদেরকে ঘিরা যেই এক ঝাঁক নেতারা আছে তাদের সবাইরে নিয়া বলতেছি। গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রক্রিয়াটা চালু থাকলে ক্যাওসের সাথে এই প্রশ্নগুলিও সামনে আসে, তখন পরিবর্তনগুলি হাসিনা খালেদার ইচ্ছার জায়গা থিকা অনেক খানি সইরা যায়। এই বার্গেনিং চালু রাখার জায়গা থিকা আমি নির্বাচিত সরকাররে গণপ্রতিনিধিত্বশীল কইতেছি। আর লেখার অনেকখানি ধইরাই দেখানোর চেষ্টা করছি রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে পারে এরকম কোন সংস্কারই বর্তমান আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামাত-জাপা করবে না, মানে করতে পারবে না, করতে গেলে নিজেদের অস্তিত্বে টান পড়বে। অথচ যখনই সংস্কারের কথা বলা হয় তখনই জনগণের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। তার মানে বিষয়টার প্রকৃত প্রয়োজনবোধের ব্যাপারটা শুধু সুশীলদের না জনগণেরও এবং সেইটা বর্তমানে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকা সুশীলদের থিকা মোটামুটি বিপরীত মডেলে।
আমার ধারণা বাংলাদেশের রাজনীতিও শেষ পর্যন্ত মনোপলিস্টিক থাকবে না যদি নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা চালু করে। জনগণের মধ্যকার বর্তমান ক্রিটিক্যাল বক্তব্যগুলি পুরা না পারলেও তাঁর আংশিক প্রতিনিধিত্ব নিয়া কোন না কোন দল সামনে আসবে।
এই মনে হওয়াটা হয়তো শুধু চাওয়াই। তারপরেও বিষয়টা বারে বারে আলোচিত হইতে হবে। তাতে অন্তত হওয়ার ন্যুনতম সম্ভাবনাটা টিকা থাকে।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আপনার বক্তব্যটা ঠিকই বুঝতে পারছি । কিন্তু আমরাটা বুঝাতে পারি নাই ।
"ব্যক্তি খালেদা বা ব্যক্তি হাসিনার চাইতেও তাদেরকে ঘিরা যেই এক ঝাঁক নেতারা আছে তাদের সবাইরে নিয়া বলতেছি। "
আমি এইখানে সন্দেহ প্রকাশ করতেছি যে এই এক ঝাঁক নেতার কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নাই । এরা আদতে শীর্ষ ব্যক্তিরই রাবারস্ট্যাম্প , এবং এদের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি শীর্ষ থেকেই আসে , নিচে থেকে উপরে যায় না ।
আপনি যতো ভালো কর্মী হোন না কেন , আপনার প্রজ্ঞা , রাজনৈতিক কৌশল ও বুঝ যতো ভালোই হোক না কেন , আপনি যদি সেইগুলান ব্যবহার কইরা হাসিনাকে কিছু একটা বলেন যেইটার সাথে উনার কিঞ্চিত দ্বিমত আছে , তাহলে আপনার রাজনৈতিক ভবিষ্যত আইন্ধাইর। বুদ্ধি থাকলে সেটা কেউ তাই করে না ।
এখন প্রতিষ্ঠান বিনির্মানের মাধ্যমে যে লোকগুলো তৈরী হয়ে আসবে , এদের আবির্ভাবের সুফল তাই রাজনীতি পায় না , সেইটা শীর্ষ নেতার উপরেই আটকে থাকে ।
তবে প্রতিষ্ঠান বিনির্মান তখনই সম্ভব হবে যখন ভোটাররা রিএক্ট করবে । অচির ভবিষ্যতে সেই সম্ভাবনা খুব ক্ষীন দেখি ।
তবু কোথাও না কোথাও থেকে এই আওয়াজ তুলতে হবে এবং জারি রাখতে হবে । সেই হিসেবে আপনার পোস্টটিকে পঞ্চতারকা দাগাইতেছি ।
যথার্থ বলছেন।
সম্ভাবনা ক্ষীণ তো বটেই, রীতিমত ন্যানোস্কোপিক। তারপরও প্রায়োগিক চিন্তার শেষ পর্যন্ত বিকল্প নাই। আর গোটাদুই খুব বড় গণআন্দোলনের অভিজ্ঞতায় শুধু জনগণের প্রাপ্তি লুঠ হইতেই দেখি নাই, আন্দোলনের চুড়ান্ত মুহুর্ত গুলিতে সৃষ্ট সম্ভাবনাগুলিকেও মনে রাখছি। কোন বড় পরিবর্তন যদি সম্ভব হয় তবে ঐ অভ্যুত্থানের মুহুর্তগুলিতেই হবে।
ধন্যবাদ।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
বার বার বলতে হবে......কথা ঠিক।
আপনার এই পোস্ট বিষয়ে আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া মাহবুব মুর্শেদের বিপরীতে। আমি এই লেখাটিকে ৩-৪ কিস্তির একটা সিরিজ হিসেবে পেলে খুশি হতাম। কারণ, অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনি শুধু ছুঁয়ে গেছেন, ব্যাখ্যা করার দিকে যাননি লেখা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার আশংকায়। এটা কিন্তু এখনো করা যায়। ভেবে দেখবেন?
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
এখানে আসলে মনোযোগ ছিল রাজনৈতিক সংস্কারের উপর। তাতে একসাথে কয়েকটা প্রসঙ্গ চলে এসেছে। সেগুলি প্রতিটাই আলাদা আলাদা আলোচনার বিষয়। আমার হতের কাছে এই মুহুর্তে রেফারেন্সের অভাব আছে। তবুও চেষ্টা করবো শিগগিরই কিছু লিখতে।
ধন্যবাদ।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন