শামসুর রাহমান চলে যাবার দুবছর হয়ে গেল। এরকম ভাবে একটা একটা করে বছর যেতে থাকবে। কী হারালাম কী হারিয়েছি ধূসরতর হবে হতে থাকবে। আবার উল্টোটাও হতে পারে নিরন্তর নাস্তির মুখে ছাই দিয়ে। আমি গত দুবছর অবিশ্বাস নিয়ে পড়ে আছি। আরো থাকবো।
১৯৭৪ সালের এপ্রিল-মে তে প্রকাশিত মাসিক সংস্কৃতির প্রথম সংখ্যার একটি কবিতায় বহুদিন থেকে চোখ আটকে আছে। শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতার যে সংস্করণ আমার হাতের কাছে আছে তাতে এটা নেই। পরবর্তীতে কোন কাব্যগ্রন্থভুক্ত হয়েছিল জানিনা। শামসুর রাহমান শারিরিকভাবে চলে যাবার দ্বিতীয় আবর্তনকে মনে রেখে সচলায়তনের পাঠকদের জন্য তুলে দিলাম।
কিছুই অচেনা নয়
কিছুই অচেনা নয়, এই ক্রোধ, ভাগ বাটোয়ারা
এই কুচকাওয়াজ, টিউনিক, এই প্রবল উত্থান
কিছুই অচেনা নয়। মুখের বদলে অন্য মুখ,
চোখের বদলে চোখ-এখনো তো সেই চেনা রীতি।
এতটুকু স্বস্তি নেই ; কনক চাঁপার দিকে চোখ
মেলে রাখলেও সাপ ফুঁসে ওঠে সর্বত্র কেবলি;
প্রাক্তন সন্ত্রাস পায় পরমায়ু নতুন সন্ত্রাসে।
নানান কংকাল আসে, বসে পাশে, কী করে বাঁচতে
হবে তারই পাঠ বার বার মুখস্থ করায় শুধু।
এই যে আপনি যান, আপনিও যান মিছিলের
পুরোভাগে, আমি ঠিক থাকবো পেছনে, বেগতিক
দেখলে চম্পট দেবো যথারীতি। আমারতো আছে
ঘরময় পুষ্যি আর শেষাবধি যে-কোন কসরৎ
করে ক্ষ্যাপা ঘোড়ার কেশর ধরে ঝুলে থাকলেই
বাঁচবে আপন মাথা। অতএব পলায়ন, শুধু
পলায়ন জিন্দাবাদ ব'লে দেবো ডুব সরোবরে?
কোথায় পালাবো? স্বপ্নে? নাকি মনোহারী নিসর্গের
সবুজ কেল্লায় শেষে খুঁজবো আশ্রয় নিরুপায়?
কিন্তু স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ক্ষণে ক্ষণে, নিসর্গ নিজেও
সর্বদা অহিংস নয়; উপরন্তু এই জীবনের
আড়ালে জীবন যাচঞা করাটাই শিল্পিত বিকার
বলে কেউ লেখেন থিসিস, কিন্তু প্রাণ ধারণের
স্বাদ বাসি খাবারের মতো অম্ল লেগে রয় জিভে।
অথচ কাটেনা ভয় কিছুতেই, প্রহরে প্রহরে
চমকে উঠি পদশব্দে, চতুর্দিকে কী ভীষণ শক্তি
অসুস্থ, উন্মত্ত, তোলে মাথা, যেন টিরানোসোরাস।
ছাড়ুক হুংকার যত; আচড়াক মাটি, তছনছ
করুক নিসর্গ স্বেচ্ছাচারে, জানেনা সে নিজে ক্ষয়
চিহ্ন বয় নিজেরই অসিথর খাঁজে খাঁজে অগোচরে।
(মাসিক সংস্কৃতি'র ২৫ বছর পূর্তি সংখ্যা থেকে)
ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা উইকিপিডিয়াকে।
মন্তব্য
মনের কথাঃ
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
পালাবো ???
আসলে পালাবারও জায়গা নেই !!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হ
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রিয় কবির প্রতি।
শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতায় কবিতাটি আমিও পড়িনি ।
নতুন কবিতা পড়ানোর ধন্যবাদ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
আমি ও পড়ি নাই আগে
-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
খুব ভালো লাগলো পড়ে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
কেউ কি একটা তথ্য জেনে বলতে পারবেন, এই কবিতাটি পরে কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল কী না, বা হয়ে থাকলে কোনটাতে?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন