দুবছর আগের কথা। পত্রিকায় অস্পষ্ট খবর আসতো। সাম্রাজ্যবাদী তেল কোম্পানীকর্তৃক তেল-গ্যাস লুঠের বিরুদ্ধে এক্কেবারে প্রথমদিককার মিছিলগুলিতে ছিলাম। তখন এই জাতীয় ইস্যুতে মিছিলে লোক হতো সবমিলিয়ে পনের থেকে কুড়ি। আস্তে আস্তে লোক বাড়তে থাকলো। মধ্যবিত্তের শ্রেণীস্বার্থে ছিটকে পড়লাম। কিন্তু কিছু অ্যান্টি থিসিস পারিপার্শ্বের প্রভাবে অতিদ্রুত বিকশিত হয়। পরিমাণগত থেকে গুণগত রূপান্তরের নিয়মেই হয়। কানসাটে, ফুলবাড়িতেও তাই ঘটেছে।
ইউটিউব থেকে যে ভিডিওটি আপলোড করছি, সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া থেকে, শোষিত মানুষ অগ্রসরতম বিশ্বদৃষ্টি ধারণ করে, এই থিসিসের সত্যতা মিলে।
এশিয়া এনার্জি হাল ছাড়েনি। তারা নানারকম পেজগী চালিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু ফুলবাড়ির প্রান্তিক জনতার সেদিনের সংগ্রাম অপশক্তিকে ফুলবাড়ি চুক্তিতে বাধ্য করেছিল।
ফুলবাড়ি ট্যাজেডি বলেন অনেকে। আমি বলি ফুলবাড়ির সংগ্রাম, ফুলবাড়ির চেতনা। এই সংগ্রামের চেতনা এই অঞ্চলের গণসংগ্রামের ইতিহাসে তেভাগা আন্দোলনের মতো একটি মৌলিক মাইল ফলক।
ফুলবাড়ি'র সৈনিকরা লাল সালাম।
আরো একটা ভিডিও পেলাম এইমাত্র। এখানে আনু মুহাম্মদ বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
মন্তব্য
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
চারপাশে এখন অনেক মৃত্যু। মৃত্যু এখানে সহজ। মানুষ মরে কেউ খেয়াল করে না। মানুষ মরে, বদলায় না কিছুই। কিন্তু কোনো মৃত্যু এমন ভয়ানক নাড়া দিয়ে যায় যে, কেউই তার দিকে না তাকিয়ে পারে না। অর্থহীনভাবে আড়ালে আবডালে মরারই যেখানে নিয়ম, সেখানে ফুলবাড়ির মানুষের মৃত্যু টকটকে উজ্জ্বল। মানুষ মরবে জেনেই সেখানে এসেছে। মৃত্যু তাদের কাছে প্রতিবাদের উৎসব। সেজন্য তারা উল্লাস করতে করতে এসেছে। তারা এসেছে সত্যপ্রকাশ করতে। এজন্যই তারা নাঙা।
অদ্ভুত যে আমাদের মিডিয়া মানুষের মৃত মুখকে খুব দেখতে ও দেখাতে পছন্দ করে। কিন্তু জীবন্ত মানুষের জীবন্ত প্রতিবাদকে শেষপর্যন্ত আড়াল করতে পারে না। ফুলবাড়ি বাংলাদেশে নতুন করে সাম্রাজ্যবাদী দাসত্ব নেমে আসার বিরুদ্ধে প্রথম সবল প্রতিবাদ। কানসাট এরই পটভূমি রচনা করে রেখেছিল। ফুলবাড়িতে পুলিশ-বিডিআর যেরকম খুনী চরিত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তা-ই তার আসল চরিত্র-চেহারা। ফুলবাড়ীর অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ মানুষ এমন এক মরিয়াপনা দেখেছে, যা তারা অনেকদিন দেখেনি।
ফুলবাড়ির ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্র-সরকার-বিরোধী দল সিভিল সোসাইটি জোটবেঁধে জনগণের জীবন ও জাতীয় সম্পদকে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর। সেকারণে গুলি করে পাখির মতো মানুষ মারায় তাদের অসুবিধা হয় না। কারণ গরিব কৃষক-শ্রমিকরা তাদের কাছে মানুষই নয়। মানুষ হচ্ছে তারা যারা ভদ্রলোকী পোশাকে জনগণের বিরুদ্ধে বিদেশী কোম্পানির দালালি, কনসালটেন্সি, সাংবাদিকতা ইত্যাদি করে। এদের এই গণবিরোধিতা ও নিজ নিজ আখের গোছানোর ফন্দিফিকিরি স্বভাবের কারণেই সরকারের খুনে বাহিনী গুলি চালাতে পরোয়া করে না।
ফুলবাড়ী একা গোটা বাংলাদেশের হয়ে দেশের সবচে বড় লড়াইটা লড়েছে। এশিয়া এনার্জি বিরোধী আন্দোলনের মুখ্য নেতা তেল-গ্যাস কমিটির সদস্য সচিব অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের কথায়, ‘ফুলবাড়ীর গরিব মানুষ গোটা বাংলাদেশকে শিক্ষা দিয়েছে, কিভাবে নিজেদের জীবন ও সম্পদকে লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হয়’। মেহনতি গরিব মানুষের আন্দোলনের এমন বিজয় দীর্ঘকাল আসেনি। সাচ্চা নের্তৃত্ব ও সংগঠন পেলে মেহনতি মানুষেরা এক হয়ে যে বিপ্লবী ক্ষমতা হয়ে উঠতে পারে, ফুলবাড়ীর পর তা অস্বীকার করা যে কারো পক্ষে কঠিন। খুন-জুলুম আর উচ্ছেদের বিরুদ্ধে শক্তির জবাবে শক্তি দিয়ে জয়ী হলো ফুলবাড়ী।
ফুলবাড়ীতে পরাজিত হয়েছে সরকার আর এশিয়া এনার্জি কিন্তু জয়ী হয়েছে গোটা বাংলাদেশ। ফুলবাড়ীর রক্তপতাকা তাই এখন মুক্তির নিশান।
ফুলবাড়ী এক মহাকাব্যসমান ঘটনা। এই বাক্যের প্রতিটি বিন্দু সত্য। দিনের পর দিন ওখানে থেকেছি, ওদের জেনেছি।
এই ১৩ মিনিটের নিউজরিলটা বানানো হয় ২৫-২৬ তারিখে ধারণকৃত ফুটেজে ২৮ তারিখ রাতে। তখনও ফুলবাড়ী জ্বলছে। লাখো-নারী-পুরুষ-শিশু-মধ্যবিত্ত-কৃষক-শৃমিক এমনকি পতিতাদেরও মিছিলে ৩০/৪০ বর্গমাইলের মুক্তাঞ্চল সেটি। এটার এডিটিংটা আমি করি। আর এর দুই নির্মাতা আমার বন্ধু জাঈদ আজিজ আর বউ ফারজানা ববি তখনো ফুলবাড়ীতে। আমি ঢাকায় এটা দেখানোর জন্য চলে আসি। ২৯-৩০ তারিখে ঢাবি, জাবি ও নারায়ণগঞ্জে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ওটা প্রদর্শিত হয়।
এই গুলির ফুটেজ বাংলাদেশে আর কারো কাছে ছিল না। ওখানে যে ফুটেজটা আছে সেটা আনকাট। দেখে মনে হবে আমরা বোধহয় জানতাম এখনই গুলি হবে। সত্যিই সেদিনের ইনটিউশন অলীক লাগে আজ। শেষ দৃশ্যের পরেই ব্যাটারি ফুরিয়ে যায় ক্যামেরার। শেষ দৃশ্যটা তুলেছে জাঈদ আর বাকিগুলো ববির। সেদিন ফুলবাড়ীতে রটে গিয়েছিল যে, ববি মারা গেছে। আসলেই আমরা যখন গুলির দৃশ্য ধারণ করছি, তখন ববি ভীড়-মারামারির মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের তখন সেদিকে তাকানোর অবস্থা ছিল না। পরে যখন ফুলবাড়ীর গ্রামে গ্রামে আমরা ঘুরি, অজস্র লোক ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে।
ছবিটার এক ঘন্টার একটা ভার্সন শেষ হয়েছে এই ২৬ তারিখ ভোরে। সঙ্গে সঙ্গে ওটা চলে যায় ফুলবাড়ীতে, আর আবারো আমি থেকে যাই ঢাকায়। সন্ধ্যায় ছাত্র ফেডারেশন ঢাবি টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছবিটা দেখায়। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকশ লোকের জমায়েত পরিণত হয় ৩/৪ হাজারের অটুট সভায়। ছবির প্রতিক্রিয়া হয় বিদ্যুত তরঙ্গের মতো। লোকজন যেন ছবি দেখছিল না, দেখছিল অমোঘ এক ট্র্যাজিক বিজয়। বাংলাদেশে এই প্রথম জনগণকে নায়ক করে কোনো ছবি হলো। এই সত্যও অতিরেক নয়। যারা জর্জ সোলানাসের আওয়ার অব ফার্নেসেস, কিংবা ব্যাটল অব আলজিয়ার্স দেখেছেন, কিংবা দেখেছেন হেমিংওয়ের স্ক্রিপ্টে দ্য স্প্যানিশ আর্থ, তারা এর মর্ম বুঝবেন।
ছবিটা শেষ হয় নাই। এর আরেকটা ইন ডেপথ ভার্সন দেখানো হবে ডিসেম্বরে। মোট একশটা সিডির ফুটেজ। অথচ টাকা নাই। বাজে ক্যামেরায় তোলা। অনেক দিন ভেবেছি, আমরা যেহেতু এনজিওর টাকা নেব না, সেহেতু মানুষের কাছে হাত পাতবো। অচিরেই সেই হাত পাতার কথা বুঝি বা তুলতেই হবে।
..................................................................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
মৃত্যুর এই সঞ্জীবনী গুণ উপলদ্ধির ব্যাপার। সাধারণ যুক্তিতর্ক দিয়ে তা হয়তো প্রমাণ করা কঠিন। কেবল মাঠফেরত কর্মীই জানেন এর অদ্ভুত ক্ষমতা। সিংগুর থেকে নন্দিগ্রাম থেকে ফুলবাড়ি সবাই যেন একই উৎসবে মেতেছে।
ধন্যবাদ, মন্তব্যটির জন্য।
===============================================
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (ICSF) || মুক্তাঙ্গন: নির্মাণ ব্লগ
দুঃখিত, আতিশয্যে বিরাট করে ফেললাম মন্তব্যটা।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ওয়াসিফ,
কোনো ঘরোয়া আসরে ছবিটা দেখার সুযোগ পেতে পারি না? আপনি সে-রকম একটা প্রস্তাব অবশ্য এরই মধ্যে দিয়েছেন। দিন-ক্ষণ ঠিক হলে ফোনে জানাবেন।
এনজিওর প্রশ্নই উঠেনা ।
উদ্যোগ নেয়া হোক । আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামর্থ্যকে সংহত করবো ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আছি।
নিজের পেট চালাইতে টানাটানি হইলেও আছি।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ফুলবাড়ি বেঁচে থাক গণযুদ্ধের চেতনা নিয়ে।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
সত্যি বলতে কি, আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে এই একমাত্র সেদিনের সভায় ফুলবাড়ীর কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। অনেক ধন্যবাদ হাসান-সুমন। সময় হলে জানাব।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
জুতা মার তালে তালে, দালালদের দুই গালে।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
প্রকল্পটা হাতে নিন।যদিও আমার হাতে এখন টাকা নেই,তবে ঈদের আগে আসতে পারে।কাগজঅলারা দেব।
আমি ঈদোত্সব করি না। ওই টাকাটা দিতে পারব।
আরো একটা ভিডিও যোগ করলাম ইউটিউব থেকে।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
হুমম। প্রান্তিক মানুষদের কথা আসলে কেউ কয়না। মধ্যবিত্ত হওনের দুর্ভোগ। তাও আপনি কইলেন। আমি 'কানসাট বিদ্রোহের' পর একটা পেইজ করছিলাম এখানে।
ফুওলাবড়ি, কানসাটের প্রান্তিক মানুষগুলো বারে বারেই আমার এই মধ্যবিত্ত জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কি আর করা!
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
আমাকে ঠিক প্রশ্নবিদ্ধ করে না, ধইরা চটকানা মারে...তখন নানান আবজাব দিয়া চিপায় ঢুকি...কয়দিন আগে মধ্যবিত্ত নিয়া ব্লগে অনেক আলাপ হইছিল..সরল ভাষায় এই চিপায় ঢুকার টেন্ডেন্সিটাই মধ্যবিত্ত টেন্ডেন্সি।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এই ভিডিও টাতে দেখেন এশিয়া এনার্জির শালার পো শালারা কী কয়.....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন