আম কোয়নিগস্ প্লাৎস্ :::: ১

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ৩১/০৩/২০০৯ - ১০:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাঁচা শাকসব্জিতেও বিশ্বায়ন এসে গেছে, নর্ডপোল থেকে বের হয়ে গট্শ্লাকস্ট্রাসের মিনি চৌরাস্তা পর্যন্ত এসে সেরকমই মনে হয় মাকসুদের। নর্ডপোল থেকে চৌরাস্তার মোড়ে ৫৫ ডিগ্রি কোণে কামালের দোকান। তুর্কিরা বলে কেমাল। একেবারে ৪০৯ নম্বর সেমিনার রূমের গা ঘেঁষে। টমেটো, শসা, শ্রীচন্দন, ফুলকপি, বাঁধাকপি সব কিছুই সেখানে চিৎকাৎ হয়ে শোভা পাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আঁটি বাঁধা অ্যাসপারাগাস, জার্মান ভাষায় যাকে বলে স্পার্গেল, তাও দেখা যায়। অনেক কসরৎ করে অ্যাসপারাগাস গলিয়ে জার্মানরা একরকম স্যুপ বানায় অমৃতের মতো। প্রতীচ্যের সপ্তাহান্ত নৈশজীবনের মতো এটাও মাকসুদের আয়ত্ত্বে আসেনি।

নর্ডপোলের কাজটাও গেলো। কিচেনে আরেকজন কুক জুটেছে। এই লোক কুক হিসাবে ট্রেনিঙ করে এসেছে মাত্র। সুতরাং ফাঁকিবাজ ছাত্রদের তুলনায় পেঁয়াজ-রসুন-সালাদ কাটায় তাঁর দক্ষতা বেশী হবেই। গতরাতে তাঁর পরামর্শমতো শসা কাটতে গিয়ে তর্জনীর পুরোটাই যেত আরেকটু হলে। যেভাবে তাড়া দিচ্ছিল তাতে মোহাম্মদপুর বাজারের বিহারী কসাইও ক্ষ্যামা দিতো। আজ দুপুরে দোকানে ঢুকতে মালিকের তলব। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। কিন্তু তোমার চাকরি ছাড়া পাতে এই মুহুর্তে কোন অনিবার্য খাদ্য ছিল না। তুমি বেশী ব্যাথা পাও নাই তো?

শেষ প্রশ্নটার জবাব দেওয়া হয়নি। পকেটে সাকুল্যে ১২ ইউরো ৩৩ সেন্ট। এর মধ্যে ৩ ইউরো যাবে চালে (যদি মার্কিন দেশের সস্তা সিদ্ধ চাল কেনা হয় আর কি), দুই থেকে আড়াই ইউরো ডালে, নিরানব্বই সেন্টের ডিম, ৫ ইউরো মাছ বা মাংসে। এছাড়া কিচেন পেপার, টয়লেট টিস্যুও কিনতে হবে এই হপ্তায়। কাল দুপুরের মধ্যে মানিব্যাগে থাকবে সব মিলিয়ে খুব বেশী হলে দেড় থেকে দুই ইউরো। তারপর কী হবে? চোখ বুজতে গোটা চার ম্যারাকে দেখা গেলো ক্যাফেটেরিয়ার পাশে ভাস্কর্যের গায়ে শিং ঘষতে। একেকটা স্পার্কে মগজের অনেকখানি করে দেখা যায়। খুলির ভেতরটা দেখতে ভোল্কস্ ভাগেনের কারখানায় যেখানে গাড়ির ছাঁচ তৈরী হয় সেরকম। দেওয়াল জুড়ে কারা যেন নিয়মিত বিরতিতে ওয়েল্ডিঙ করে চলেছে।

আর দুটো পেপার শেষ করতে পারলেই থিসিস শুরু করা যাবে। কিন্তু ঐ দুটো পেপারই ভোগাচ্ছে গত দুই সেমিস্টার ধরে। থিসিস শুরু না করে চাকরিও খোঁজা যাচ্ছে না। তারমধ্যে যদি চালডালতেলনুনেও টান পড়ে তাহলে আর ইহজনমে পাশ করা হবে না।

হল্যান্ডিশার প্লাৎস থেকে বাঁয়ে ঘুরে সোজা কুর্ট ভল্টারর্স স্ট্রাসে ধরে হাঁটতে থাকে মাকসুদ। কাটৎসেন স্প্রুঙ ট্রাম স্টেশনের রূপালী ছাউনিতে রোদ পড়ে একটা বিস্ফোরক ইফেক্ট নিয়েছে। হাতের ডানে হেনশেল গ্রুন্ডশুলের সামনে কাঠের বেঞ্চে বসে পড়লো। বাম পায়ের তলা চুলকাচ্ছে। পা ভর্তি ধুলা। তার মধ্যেও না চুলকিয়ে উপায় নেই। ডান হাতের তালু চুলকালে অর্থযোগ ঘটে বলে শুনেছে। কিন্তু বাম পায়ের তালু চুলকালে কী হয় ?

(চলবে)


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

দুইখান প্রশ্ন আছিলো ।

শ্রীচন্দনটা কী জিনিস?

আর ঐ অ্যাসপারাগাসের স্যুপটার নাম কী?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শ্রীচন্দন হচ্ছে চিচিঙ্গার সুশীল নাম।

অ্যাসপারাগাসের সেই স্যুপটার জার্মান নাম স্পার্গেল ক্রেমে যূপে। আংরেজী নাম জানিনা।



অজ্ঞাতবাস

মূলত পাঠক এর ছবি

তাহলে যা এখানে ক্রিম অফ অ্যাসপারাগাস বলে চলে, সেটার কথাই বলেছেন।

চিচিঙ্গা তো জাতে উঠে গেলো, এমন ভাবগম্ভীর নাম। হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

থামলে খবরাছে কইলাম।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সুমন চৌধুরী এর ছবি
নজমুল আলবাব এর ছবি

লগে জ্যানেসিসও চাই কিন্তু।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সবুজ বাঘ এর ছবি

হুম।

রানা মেহের এর ছবি

চিচিঙ্গার এই আকিকাটা কি করে হলো?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

চিচিঙ্গার সুশীল নামখানা তো ভারী সোন্দর।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

অ্যাসপারাগাস্সুপ খাইতে মঞ্চায়!!!
***************
শাহেনশাহ সিমন

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঐরকমই কিছু এক্টা....



অজ্ঞাতবাস

কীর্তিনাশা এর ছবি

কয় স্তর বিশিষ্ট চা খাইতে গেলেন বদ্দা ?

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
বাউলিআনা [অতিথি] এর ছবি

মাকসুদকে বলি,
হাল ছেড়না বন্ধু, বরং কন্ঠ ছাড় জোরে..

তীরন্দাজ এর ছবি

চিচিঙ্গার সুশীল নামটা আমারও ভালো লাগলো।

আমাদের বাড়ীতে এখন স্পার্গেলের ছড়াছড়ি চলছে। "বিও স্পার্গেল", স্পেন থেকে আমদানী করা।

তবে একটি ইনফরমেশন! ইউরিনে ভীষন দূর্গন্ধ হয়! টের পেয়েছেন কি? শরীরের দূষিত পানি নাকি শোধন করে স্পার্গেল।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সুমন চৌধুরী এর ছবি

স্পার্গেল আমারো খুব প্রিয়।

ইনফরমেশন সঠিক। টের পেয়েছি আগেই। তবে বৃত্তান্ত জানতাম না।



অজ্ঞাতবাস

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

পড়তে জোশ পাইতেসি। কিন্তু লেখা একটু কম জার্মান শব্দ-কণ্টকিত করা যায় না?

তিনটি বাক্য দেখা যাক:
হল্যান্ডিশার প্লাৎস থেকে বাঁয়ে ঘুরে সোজা কুর্ট ভল্টারর্স স্ট্রাসে ধরে হাঁটতে থাকে মাকসুদ। কাটৎসেন স্প্রুঙ ট্রাম স্টেশনের রূপালী ছাউনিতে রোদ পড়ে একটা বিস্ফোরক ইফেক্ট নিয়েছে। হাতের ডানে হেনশেল গ্রুন্ডশুলের সামনে কাঠের বেঞ্চে বসে পড়লো।

কাহিনীতে হয়তো এসবের উল্লেখ অনিবার্য, তবে আমি কিন্তুক আমপাঠকের কথা কইলাম হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হে হে দেঁতো হাসি
এগুলি সবই জায়গার নাম। প্রপার নেম তো আর বদলান যায় না...তবে এর পর থিকা নামগুলি কায়দা কৈরা অনুবাদ করুম্নে....



অজ্ঞাতবাস

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বদ্দা, ঈমানে কই- এইবার যদি রইদের মইধ্যে বয়া বয়া স্পার্গেলের স্যুপ না খাওয়াইছেন, তাইলে হালায় আপনের বরযাত্রী-ই যামুনা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বিসমিল্লাহ করলাম...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।