ওলগা। ওলগা ফ্লাইশহাকার। অনেকদিন পরে নামটা মনে পড়লো। একসাথে পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন আর স্থাপত্যের ছাত্রী ছিল। মাথায় পৈতে বামুন টাইপ টাক। চান্দির আধা বিঘৎ নিচে ইঞ্চি খানেক চুলের আভাস। বামপন্থী গ্রীনের সমর্থক ছিল তখন। পরে কর্মী হয়েছিল। এক লিটারের বড় গ্লাসে জীবনে সেই প্রথম চুমুক। জার্মান ভাষায় যাকে বলে মাসেন ক্রুগ। গ্লাসের চুড়া ছেড়ে আড়াই ইঞ্চি পরিমান ফেনা ফুঁড়ে চুমুক দিতে হয় সেখানে। এক চুমুকে কতটা টানা যায় তার প্রতিযোগিতা। সোজা ওলগার চোখের দিকে তাকিয়ে গ্লাসের মাঝামাঝি আসতে আসতেই দুর্ঘটনা। আসলে একলিটারের গ্লাসে বীয়ার খেতে গিয়ে এরকম দুঘটনাই বিনোদন। বারটেন্ডারের পেছনের আয়নায় দেখা যাচ্ছিল মাকসুদের বিপর্যস্ত ফেনামাখা মুখ। সেদিন আড়াইটা বেজেছিল বাড়ি ফিরতে। ডর্মে না। শোয়েনফেল্ডার স্ট্রাসের যে চিলেকোঠায় ওলগা থাকতো সেখানে। কাসেলে পুরনো বাড়ি বলতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেকার এই রকম কিছু কাঠের বাড়িই টিকে আছে। পাথরের দেয়াল কাঠের মেঝে।
ওলগার পিতামহ এসএসের সদস্য ছিলেন। সাইবেরিয়ার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ফিরে দেড়দশক পঙ্গু দশা কাটিয়ে পটল তুলেছেন। ওর বাপ ফ্রাঙ্কফুর্ট আম মাইনের গোয়থে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক। এইসব পরিবারের লোকেরা চৈতন্যে জিঘাংসা পুষে রেখে পদে পদে নাৎসী বিরোধীতা প্রমাণের চেষ্টা করেন। ওলগাও সেরকম বলে মনে হয়। বেছে বেছে অজার্মান ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করে। মাথার টুপিতে কাঁধের ব্যাগে বিচিত্র নকশা করে লেখা থাকে "গেগেন নাৎসীজ" অর্থাৎ নাৎসীদের বিরুদ্ধে। ওলগার গলা থেকে নাভী পর্যন্ত, তারপর পিঠে, পাছায়, হাঁটুতে বিচিত্র ট্যাটু। দুই ভুরুতে আধ ডজন রূপার আংটি।
পরের সেমিস্টারের মাঝামাঝি ওলগা লাইপৎসিগে চলে যায়। এখনো শোয়েনফেল্ডার স্ট্রাসে দিয়ে হাঁটতে গেলে বাড়িটা চোখে পড়ে।
পৌনে চারবছর পরে বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেনার সূত্র ধরে ওলগাকে মনে পড়লো। মাকসুদের এখন এইসব বালছাল ভাবার সময় থাকা উচিৎ না। প্রবাসী ছাত্রদের জীবনে এরকম কয়েক বস্তা উপন্যাস আর কয়েক টন ছোট গল্প থাকে। সবারই থাকে। তবে প্রবাসীদের টুইস্ট বেশী।
শহরের দিকে হাঁটা দেয় মাকসুদ। স্টেয়ার্নের মোড়ে সোহাগের সাথে দেখা। হাতে বাজারের ব্যাগ।
- কী রে তোর কাম নাই আইজকা?
- কাম তো আছেই..হে হে....তয় কাজটা নাই।
- নাই মানে?
- নাই মানে নাই। দুইটার দিক গেলাম আর মালিক নিজে হাসিমুখে সুখবর দিলো। স্ট্যান্ড রিলিজ।
- এখন কী করবি?
- এখন আর কি? এখন তো কোথাও গিয়া কোন লাভ নাই। কাইলকা সকালে বাইর হমু আবার কামের ধান্দায়।
- পুওর গাই। তোর আসলে লটো জিতা দরকার।
- হ.....
- আমার বাসায় চল।
- গিয়া?
- রান্দাবাড়া করি। পোলাপান ডাকুম সন্ধ্যায়।
সোহাগের বাসা ক্যাম্পাসের উল্টাদিকে মার্সিডিজ টাওয়ারের নয় তলায়। আটত্রিশ স্কয়ার মিটারের সিঙ্গেল অ্যাপার্টমেন্ট। রান্নার জায়গাটা একটা পার্টিশন দিয়ে আলাদা করা। দুই বার্নারের চুলা। রান্না করতে বেশী সময় লাগায় এই বাসায় আড্ডাটা ভালো জমে। আরএশীপ আর পিএইচডি একসাথে পাওয়ার পর এই বাসাটা নিয়েছে।
মার্সিডিজ টাওয়ারের সামনে এসে মাকসুদ বলে, তুই যা, আমি বিড়ি নিয়া আসি।
- বিড়ি আছে। টুনি আসলো না গত সপ্তাহে! এক কার্টুন বাংলা বেনসন আনাইছি।
- টুনি আইছে না কি? জানতাম না। তাইলে আমিও আনাইতাম আরো কিছু।
- এক কার্টুনের বেশী থাকলে এখন সমস্যা করে এয়ারপোর্টে।
- আরে না। কেরু আনামু ভাবছিলাম। এই মিলেনিয়ামে আর খাওয়া হয় নাই।
- কেরু খাওন লাগবো না। বাসায় বীয়ার আছে।
- কয় টা?
- প্রায় আধা কেইজ। আর একটা ব্যারেলও আছে। ভাবছিলাম এই উইকেন্ডে মাস্তি করুম। সেইটা আইজকাই হোক!
- হ, আমার বেকারত্ব উপলক্ষে ..........
(চলবে)
মন্তব্য
হোক তাইলে ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
হবে
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আমার কেরু আছে বিয়ার নাই...
বাড়ি পাল্টায়া যাইতেছি ইস্কাটন... বাড়ি থেকা বাইর হইলেই ওয়াইন ইম্পোরিয়াম... আর বাঁয়ে গেয়ে গোল্ডেন ড্রাগন, ডাইনে গেলে পিয়াসী...
স্বর্গে যাইতেছি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ফি আমানিল্লাহ্
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
হে হে সৈয়দ দেলগীর তাহলে পাণ্ডবের প্রতিবেশী হতে যাচ্ছেন। কোন বাসায় উঠছেন আওয়াজ দেবেন। মনে নেই সন্ন্যাসী বলেছেন, "জামাতে খেলে .........
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রাজকুমার কি বিজ্ঞান ভালো বাসে?
বিজ্ঞান কি কুনো কুমার ভালোবাসে?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
পরের পর্বে উপাদেয় কিছুর বিবরন পাবো এনশাল্লাহ!
অফটপিকঃ
নজুভাইয়ের স্বর্গ আমার জন্যে মক্কা ছিল আরকী। ২৭ বছর ওই এলাকায় থাইক্কা ৭বার ও ঐ পাকস্থানে ঢু মার্ছিলাম কীনা ইয়াদ আস্তেছে না।
খাসা হচ্ছে, চলতে থাকুক।
অজ্ঞতা মাফ হোক, কিন্তু এই কেরুটা কী বস্তু? ধেনো টাইপ কিছু? সেটা আনানো যায় নাকি, এয়ারপোর্টে আটকায় না? চমৎকার দেশ তো জার্মানি!
ধেনো বলতে পারেন। তবে সাহেবদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। হুইস্কি, ভদকা, রাম এইসব তৈরী করে।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
তা সাহেবি ধেনো বাংলাদেশ থেকে জার্মানী যাচ্ছে? বিশ্বায়নের চূড়ান্ত তো !
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
- যাওনের সময় টোকা দিয়েন বদ্দা, তিন বোতল ছাড়ান্তিসের টিপস দিয়া দিমু নে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আজকে পড়তে গিয়ে একটু একটু থামতে হইছে। হালকা পাতলা ব্রেক। তবে ওভারঅল, উপাদেয়।
----------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
শুক্রিয়া....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আরেকটু ঘন ঘন লেখা বেরোলে প্রাণে আরাম পাই। তবে কোয়ালিটিতে কম্প্রোমাইস না ক'রে।
ছোট্টো একটা কথা, প্রতিযোগী-তে দীর্ঘ ঈ-কার হলেও প্রতিযোগিতায় হ্রস্ব ই হবে, পঞ্চম লাইনে: "এক চুমুকে কতটা টানা যায় তার প্রতিযোগীতা"। আশা করি রাগ করবেন না, বানান ভুলের কথা বলি ভালো লেখা দেখলে, সর্বাঙ্গসুন্দর করার ইচ্ছে থেকে।
ঠিক্করা হৈল। অনেক ধন্যবাদ।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
বিয়ার আমার প্রিয় পানীয়। এক টানে হাফ লিটার গিলেছি বহুবার। প্রম শান্তি! আপনাদের বাভারিয়ার বিয়ার (বিবাহের নয়) ফেস্টিভালে একবার যাবোই যাবো।
লেখা জমে ওঠার পথে, মনে হচ্ছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আসার আগে আওয়াজ দিয়েন...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
পাঁচ তারা।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
শুক্রিয়া....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এই শব্দটা ভালো লাগলো- শুক্রিয়া। শুক্র (দিনের নাম না কিন্তু)+ ইয়াাাাাা
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
মজাই লাগে এরকম প্রবাসের কাহিনী। জার্মানীর ভ্রমন বৃত্তান্ত লেখেন না।
- ওলগার পাছাতে যে ট্যাটু আছে সেইটা লেখক জানলো ক্যামনে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লেখক জানেনাগো পাঠক! মাকসুদ মিয়া জানে...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ব্যাপক সাবলীল। তবে উত্তম পুরুষ আর অধম পুরুষে দুয়েক জায়গায় পেজগি লাগছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
তা লাগছে। কারণ আমি সাধারণত উত্তম পুরুষে লিখি। এইবার সম্ভবত দ্বিতীয়বারের মতো অধ:পাতে গেলাম।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
কঠিন এবং জটিল। তয় সমস্যা মিটছে?
সমস্যা কি আর মিটে?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
গতি আছে...। আরাম পাইতেছি।
কী আর কমু?
নতুন মন্তব্য করুন