বোলিঙ ক্লাবের ঘুঁটির মতো বারান্দার রেলিং ঘেঁষে বীয়ারের সারি। শেষ দুটো বীয়ার নামিয়ে রেখে খালি বোতলগুলি তুলতে গেলে সোহাগ বলে,
- থাক ওগুলি সকাল পর্যন্ত। ভালো একটা ডেকোরেশান লাগতাছে।
- হ...এই দুইটা খালি হইলে ছবি তুইলা রাখতে হইবো।
কেইসের শেষ দুই বোতলের ঢাকনা খুলে সোজা চোখের দিকে তাকিয়ে "প্রৌস্ট" (চিয়ার্স!) করলো দুই বন্ধু।
দশটা বাজতে তিন মিনিট বাকি। এতক্ষণে আকাশে একরকম প্রাক-গোধুলীর আভাস। লোয়ভেনবেয়ার্গ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বাড-ভিলহেল্মসহোয়ের উপর হনুমানের সমুদ্রমন্থনের মতো একফালি রোদ। সূর্যের আলোর আয়ূ আজকের মতো আর মিনিট চল্লিশ।
- পর্বগুলি কেমন জানি ডেইলী নোটবুক হইয়া যাইতাছে না? ড্রামা কৈ?
- কোয়ালিটি জাজমেন্ট কৈরা তো আর ডেইলী সোপ হয় না।
- আরে কোয়ালিটির কথা কই না। ড্রামার কথা কই। দিনে তো অনেক ঘটনাই ঘটে। সব কিছু যেমন মনে কর বাথরূমে বা টয়লেটে যা ঘটে তাতো আর সবসময় নাটকীয় না। যদিও খাবারে ঝামেলা থাকলে টয়লেটে ক্রিটিক্যাল ফেনোমেনা জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, এবং নাটক হিসাবে সেইটা কোনমতেই নিয়মিত প্যাকেটধারাবাহিকের চাইতে কম রোমাঞ্চকর না, তবুও এখনো পর্যন্ত এই নাটকীয়তাগুলি কেউ ধারণ করে নাই। বাথরূম দেখানো হয় শুধুমাত্র খুনখারাবী দেখাইতে গেলে।
- পয়েন্ট ছিল ড্রামা। তুই আবার টয়লেট টান দিলি ক্যান?
- খালি হৈয়া আইতাছি। কিছু বীয়ার রাইখা আসি।
- আইচ্ছা আয়। একটু ভাবি। নাটকের খোঁজ করি। তুই আইলে আমারো যাওয়া লাগবো।
সোয়া পাঁচ মিনিট পরে দুই বন্ধু আবারো বসে। রেলিঙে হেলান দিয়ে ম্যাট্রেসে পা ছড়িয়ে সোহাগ শুরু করে.....
(চতুর্থ পর্ব)
প্রথম দৃশ্য
জসীমের বাসা ক্যাম্পাসের একেবারে মাঝখানে। নোরা-প্লাটিয়েল স্ট্রাসে ৭। একটানা অনেকগুলি সিঙ্গেল রুম পার হয়ে তিনতলার কোনায় একটা পাঁচ জনের অ্যাপার্টমেন্ট। জসীমের প্রতিবশীরা আজকে নেই। সব কয়টা জার্মান। বেশীর ভাগ উইকেন্ডেই বাড়ি যায়। রান্নাঘরটা বেশ বড়। বাসা খালি থাকলে পার্টি করার জন্য চোস্ত জায়গা।
- এইটা বাসা? একতলার সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কুতুব জিজ্ঞাসা করে।
- তো কী মনে হয় তোমার?
- না মানে দেইখা মনে হয় কোন ডিপার্টমেন্ট।
- এই ক্যাম্পাসে লাল রঙের দালানগুলি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট আর সবুজগুলি ডর্ম।
-ও।
কুতুবের বেঢপ সুটকেস তিনতলায় তুলতে বেশ কসরৎ করতে হলো।
- কী আছে এর মধ্যে? এতো ভারী ক্যান?
- এই অল্প কিছু বই.....
- কী এতো বই আনছো? ঢাকায় কি আইজকাইল জার্মান সাহিত্যের বইও পাওয়া যায় নাকি?
- আরে না। গোটা সাতেক ডিকশনারি।
- সাআআত টা?
- হ্যা...সলজ্জ্ব হাসি দেয় কুতুব।
জসীমের রূম নাম্বার ১১৫। লম্বা প্যাসেজের একেবারে শেষে বাম কোনায়। স্যুটকেস কোনমতে ঘরের এককোনায় ঠেসে দিয়ে সবাই এসে বসে রান্নাঘরে। একটা মাঝারি ডেগচি বের করে জসীম জিজ্ঞাসা করে,
- আমরা কয়জন টোটাল?
- গাবি আর শারমিনরে ধইরা বারোজন...
- হুম... তাইলে দেড় কেজি...না আরেক্টু বেশীই নেই...
মকবুল আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলে,
- এই চাইলের হিসাবে আমার বরাবর ঝামেলা বাজে, প্রায় প্রতিটা পার্টির পরে দেখা যায় এ্যাত্তোগুলি কইরা ভাত বাঁইচা যায়..কম পড়লে আবার বেইজ্জতি..
এইবার কুতুব মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করে,
- পার হেড কত গ্রাম কইরা ধরেন?
- হুঁ...এই একশ পঁচিশের মতো...ক্যান?
- না ভাত বাঁচে কইলেন যে ঐটা ভাবতেছিলাম...
- তুমি যদি বেশী খাও অসুবিধা নাই...চাইল বেশী কইরাই নিছি..
- আমি কি আপনার ডুশে(বাথরূম) ব্যবহার করতে পারি?
- বুঝলাম না !
- গোসল করা যাবে এই বাসায়?
- তুমি মিয়া আইতে না আইতে জার্মান ছাড়া শুরু করছো
লাজুক হাসি দিয়ে কুতব বাথরূমে ঢোকে।
ক্যামেরা কুতুবের গায়ে শোয়ানটেক্সের স্যান্ডো গেঞ্জি থেকে বাথরুমের দেওয়াল বেয়ে চলমান শাওয়ারে পৌঁছায়।
দ্বিতীয় দৃশ্য
আমালিয়েন স্ট্রাসে ৪।
- ভাস ইস্ট ডাস ফুয়ার আইনে ফ্রেষহাইট? (এইটা কী ধরণের অভদ্রতা?)
- এন্টশুলডিগুঙ! ঈষ বীন আইগেন্টলীষ মুইডে দেসভেগেনস্ ...( মাফ করবেন আমি আসলে ক্লান্ত তাই...)
- ইয়ো... যী যিন্ড মুইডে...আলে যিন্ড ফেরদাম্ট মুইডে ... মাইন ফেরদাম্টার মান ভার আউখ মুইডে... যোগার বিস সুম টোড ...ভাস কাইন শোয়াইন ফেরস্টেট, দাস ঈষ আউখ মুইডে যাইন কান ... ( হ বুঝলাম আপনে ক্লান্ত...... দুনিয়ায় বাল সবাই ক্লান্ত...আমার বুইড়া হালায়ও ক্লান্ত থাকতো....এমন কি মরণ পন্তও ... কোনো শুয়ার বুঝেনা যে আমিও ক্লান্ত থাক্তারি ...)
- হালো! হিয়ার গেয়েন যী পার স্টুইক সু ভাইট! ঈষ হাব গেযাগ্ট ডাস এস বীসশেন লাউট ভার উন্ড ঈষ এন্টশুলডিগে মীষ দা ফুয়্যার... আবার হাবে ঈষ আবসলুট কাইন বক মিট ঈরার লেবেনস গেশিষ্টে মীষ সু লাঙভাইলেন ... গুটে নাখট্ ! ( হ্যালো ! এট্টু বেশী হইয়া যাইতেছে না? আমি কইলাম যে দরজা লাগানোর শব্দ একটু বেশি হইয়া গেছে আর আমি সেই জন্য দু:খিত ... কিন্তু আপনের জীবনের দাঁসতাঁয়ে শুইনা বোর হওনের টাইম নাই... গুড নাইট! )
তৃতীয় দৃশ্য
ক্যামেরা শাওয়ারের মুখে। পানি পড়তে শুরু করেছে। পুরোদমে। শারমিনের চুল ভিজে কাঁধ পর্যন্ত দেখা গেলো। বাথরূমের ছোট্ট জানালায় সূর্যাস্ত ....
(চলবে)
মন্তব্য
আরো একটু লম্বা হৈলে ভালো হৈতে । বিশেষ কৈরা জার্মান স্টাইলের কথা ধরলে তৃতীয় দৃশ্য এতো হুট কৈরা শেষ হৈতো না ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সবার জাগামতো মনোযোগ ...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
- হ। আমিও তৃতীয় দৃশ্যের সংক্ষিপ্তকরণের তীব্র প্রতিবাদ জানায়ে গেলাম। অন্তত জনগণের চাহিদার দিকে চাইয়া হলেও এই দৃশ্যের লেন্থ লম্বা করোনের দরকার আছিলো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধৈর্য ধরে থাকো সুনা ...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ক্যামেরা তো শুধু শাওয়ারের মুখে থাকলে চলবে না, ইহা জর্মন দেশী সোপ। আরো গভীরে যাও!
চলুক। মাঝে বন্ধ করিস না।
চলিবে ....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এই লেখা কি সেন্সর বোর্ডে দিছিলেন? শেষটুক কাইট্টা দিছে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বোর্ড এখনো শেষটুক দ্যাখে নাই
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ইয়ো... যী যিন্ড মুইডে...আলে যিন্ড ফেরদাম্ট মুইডে ... মাইন ফেরদাম্টার মান ভার আউখ মুইডে... যোগার বিস সুম টোড ...ভাস কাইন শোয়াইন ফেরস্টেট, দাস ঈষ আউখ মুইডে যাইন কান ,মনের কথাডা কইছেন গো ভাই!
নতুন মন্তব্য করুন