একটি পোমো গল্পের খসড়া

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ০৯/১২/২০০৯ - ৬:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বছর আড়াই-তিন আগে কোন একটা সেমিনারের শেষে ম্যাক্রো-সোশিওলজির প্রফেসার ড. হাইনৎস বুডে'কে আধুনিকতা আর উত্তরাধুনিকতার সহজ সংজ্ঞার্থ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বললেন, "এই ব্যাপারগুলির আসলে কোন ডেফিনেশান নাই। উদাহরণ দিয়ে কিংবা উদাহরণগুচ্ছ দিয়ে বুঝতে হয়। আমার মতে সরলতম উদাহরণ হতে পারে এরকম: আধুনিকতা হচ্ছে প্রফেসারের লেকচার পছন্দ না হলে বের হয়ে চলে যাওয়া আর উত্তরাধুনিকতা হচ্ছে অপছন্দের লেকচারের সময় বসে বসে ল্যাপটপে চ্যাট করা।" এর পরে এই বিষয়ে টুকটাক নানান কিছু পড়লেও কোথাও হের বুডে'র মতো চমৎকার উদাহরণ চোখে পড়ে নাই। এর কারণ আমার অজ্ঞানতা, গুরুভক্তি দুইটাই হতে পারে। যাই হোক এই সব জ্ঞানতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা সহকারেই আজ সকালে শুভাশীষ দাশের গল্প পড়ে মনে হলো করি একটা এক্সপেরিমেন্ট সেটার আধুনিকতা/ উত্তরাধুনিকতার বিচার পাঠকের আঙ্গুলে ছেড়ে দেই।

১.

কোন এক রবিবার সকালে মনির হোসেন বিঠোফেনপ্লাৎসে দাঁড়িয়ে মেসওয়াক করছিল। রবিবার সকাল সাড়ে আটটায় ক্যাটওয়াক দেখতে পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু মনির হোসেন পরিসংখ্যানের ফ্যাসীবাদ মানে না।

মর্মনদের দেখা যাচ্ছে। মাথা বাদে বাকি দেহে গাদাগাদা কাপড় চড়ানো এক ফর্সা তরুণী পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে। দেখার মতো বিভঙ্গগুলি অনেক ভেবে ভেবে জাগামতো ঝাপসা নেগেটিভ রেখে যায়।

- সুপ্রভাত!
মনির হোসেন নিচের পাটির ঠিক মাঝের দুটি দাঁতের ফাঁক দিয়ে চিড়িৎ করে সামনের ফোয়ারাতে থুতু ফেলে অস্পষ্ট উচ্চারণে বলে,
- সুপ্রভাত ......
মোহিনি হাসিতে তরুনী বলে,
- আপনি কি জানেন প্রভূ ফিরে আসছেন?
- প্রভূ ক্যাঠা?
বলে আবারো সেই দুই দাঁতের ফাঁক দিয়ে থুতু ফেলে। এবারের ডেলিভারি ইয়র্কার। একেবারে ফোয়ারার উৎসমুখে গেঁথে যায়।
তরুণী মুখে হাসি ধরে রাখলেও কপালে চুলের গোড়া থেকে আর্য নাসিকা পর্যন্ত বিষাদ নেমে আসে।
- আপনি বারে বারে এমন আনসিভিক হচ্ছেন কেন?
সাথে সাথে মর্মনরা কালো ব্লেজার ছুঁড়ে ফেলে মাওয়ালী ছবির জিতেন্দ্রর মতো কিশোর কুমারের কণ্ঠে কোরাস ধরে , রামা রামা রামা রামা রামা রামা রে ..এ এ এ....
তাঁদের প্রত্যেকের টি-শার্টে হাভানা ক্লাবের জলছাপ। নিচে সোনালী অক্ষরে লেখা, আজ সন্ধ্যায় কিউবা লিব্রে'তে বিরাট মূল্যহ্রাস। গ্লাসপ্রতি দুই ইউরো তেত্রিশ সেন্ট।

মনির হোসেন ফোয়ারার জলে কুলি করে।

স্ক্রিন চারভাগ হয়ে দ্বিমাত্রিক চারকোণে হারিয়ে যায়।

২.

কাসেল শহরের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের সামনে বিরাট লন। সেখানে কিছু স্থায়ী বেঞ্চি পাতা। তার ঠিক বামকোণে গম্ভীর মুখে সান্টাক্লজ। তিনি অতি ধীরে ডানপায়ের জুতা খোলেন। তারপর মোজা। সি এণ্ড এ থেকে কেনা উন্টার সকস্ । খ্যাশ খ্যাশ করে পায়ের পাতা চুলকান। চোখেমুখে অরগাজম্ !

এবার স্ক্রিন চারদিক থেকে অন্ধকার হয়ে আসতে আসতে কষ্টিপাথর হয়ে যায়।

৩.

তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে কাকডাকা ভোর। তরুণ রবীন্দ্রনাথ কালু পালোয়ানের কাছে নানচাক্কু শিখছেন। পাশে মাও সে তুং। গায়ে নামাবলী। মাঝে মাঝে ডানহাতে বামবগল চুলকান। কেউ কিচ্ছুটি জানতে পায় না। একটু দুরে মাটিতে বসে ব্রুসলী টিফিন ক্যারিয়ারের ঢাকনা খুলে নানরুটি আর বটিকাবাবে মন দেয়। তার থেকে কোনাকুনি লিও শাও চী হাভানার ধোঁয়া ছাড়ে।
স্ক্রিন ঝন ঝন করে ভেঙে পড়ে।

৪.

প্রায়ান্ধকার শুড়িখানায় হিমু। বারের ওপাশে হাসান মোরশেদ। তাঁর হাতে বাকির খাতা। হিমুর মুখে রহস্যজনক হাসি। আমি বললাম, আমি তো বাকি খাইনা আমারে দ্যান! মনির হোসেন বলে, আমিও তো! হাসান মোরশেদ কাষ্ঠ কণ্ঠে বলেন, আইজকা দোকান বন্ধ বাড়িজ্জাও। সবুজ বাঘ দরজা থেকেই ফিরে যাচ্ছিল। আমরা তিনজন বেরিয়ে আসতে চারজন হলাম। আমাদের পরনে হাওয়াই শার্ট আর শর্টস।

চারজনে কোরাস গাই,

আমরা ক'টি ভাই
টাল টক্কর হতে চাই
কেরুর দারু গলায় ঢেলে
শ্বশুরবাড়ি যাই .....

৫.

রবীন্দ্রনাথ হন্তদন্ত হয়ে মিউনিখ সেন্ট্রাল স্টেশনে রেলওয়ের অফিসে ঢুকে পড়ে। লাইন ভেঙে গিয়ে অফিসারকে পাকড়ে ধরে।

- মিউনিখ থিকা দর্শনার গাড়ি কয়টায়?
অফিসার বললেন, যাব্বাবা! যা বললেন একখানা! চা খেয়েছেন নাকি?


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

কড়ামিঠা। সান্তাক্লজের অর্গাজমটা জমজমাট হইসে।
----
ক্লাসে কি পড়াইতেছিল?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

দেঁতো হাসি

ঐটা ট্রান্সন্যাশনালিটির উপর একটা সেমিনার ছিল।



অজ্ঞাতবাস

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পরে আসবে।
চাখাইতে গেছে।



অজ্ঞাতবাস

রণদীপম বসু এর ছবি

দারুর গন্ধ পাইতেছি সুমন্দা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ব্যাপক হইছে...
দর্শনা জায়গাটা কিন্তু সুন্দর। আমি কেরুর গেস্ট হাউজে তিনদিন থাকছিলাম অনেক বছর আগের এক শীতকালে... সেই মধুর দিনগুলার কথা মনে পইড়া গেলো... আর সেই শোকে বা আনন্দে আজকে নাহয় কেরুর দারুই চলুক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুমন চৌধুরী এর ছবি

কেরুস্মৃতি শুন্তে চাই ....



অজ্ঞাতবাস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

খালি একটা ঘটনা কই...
আমরা গেছিলাম মঞ্চ নাটক করতে। তো শো'র দিন সকাল থেকে রিহার্সেল। কিন্তু আমি আর সুমন আনোয়ার (শুভাশীষদার আঙ্গুরলতা নাটকের পরিচালক) আগের রাত থেকা নিখোঁজ। হাজির হইলাম দুপুরবেলা। পরিচালক আরজু ভাই চেইতা ফায়ার ততক্ষণে। কইলো খাড়ায়া থাক দরজার কাছে, শাস্তি। আমগো মনে তখন ব্যাপকানন্দ। আমরা নিজেরাই নিজেগো শাস্তি বাড়ায়া নিলাম, দুইবন্ধু একজন আরেকজনের কানে ধইরা খাড়াইলাম। তা দেইখা শাস্তি মওকুফ...
আহা... কী দিন ছিলো সেইসব
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাফি এর ছবি

কঠিন দেঁতো হাসি

মনামী এর ছবি

আরো চাই ...

সাইফ তাহসিন এর ছবি

গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি
গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি
গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি
গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি

পুরাই পাংখা, গুরু গুরু
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আইজ্জা পাঁচতারা মার্তে মার্তে টায়ার্ড হয়া গেলাম...
বদ্দা ফাডাইয়ালাইসে। ৩ আর ৫ বেশি জুস...

_________________________________________

সেরিওজা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পাঁচ লম্বরডা জটিল।

তানবীরা এর ছবি

হাহাহাহাহাহা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

পুতুল এর ছবি

চা খেয়েছেন বস?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা, সবকয়টা জশিলা।

স্বপ্নদ্রোহ

মামুন হক এর ছবি

বদ্দা অন ফায়ার!

নৈষাদ এর ছবি

হুঁ। ভাল লাগল। উত্তরাধুনিকতা বুঝিনা - বুঝার চেষ্টা করলাম।

কয়েকটা কিন্তু গ্লোবালাইজেশন বোঝাতেও কাজে লাগতে পারে...।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা

জটিল জিনিস বদ্দা। পুরা কোপাইয়ালাইছেন।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

জুশ হইছে, পুরাই জুশ।

কুরবানির পরের দিন একটু হাল্কা-পাতলা কেরু পড়ছিলো গলায়। আবারো মঞ্চায়, খালি মঞ্চায়।

==========================================
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হা কেরু হা কুরবানি ....



অজ্ঞাতবাস

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনিও কি চা খাইলেন নি?!!

চোখেমুখে অরগাজম্ !
ফাটাফাটি লাগল!! হাসি

সুমন চৌধুরী এর ছবি
মারুফ বরকত এর ছবি

মিউনিখ থিকা দর্শনার ট্রেন আসলে কয়টায়?

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সবুজ বাঘ এর ছবি

শিখুয়া শিখুয়া জুয়াবই শিখুয়া

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইডা এট্টা বিড়ালের পুলা



অজ্ঞাতবাস

মূপা এর ছবি

আহাহা, দুর্দান্ত!

সুমন চৌধুরী এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

চারজনে কোরাস গাই,

আমরা ক'টি ভাই
টাল টক্কর হতে চাই
কেরুর দারু গলায় ঢেলে
শ্বশুরবাড়ি যাই .....

বাহ বাহ চমৎকার । পুরোনো দিনের কিছু স্মৃতি মনে পরে গেল ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।