তুষারভারাক্রান্ত মেঘের রঙ ঝিম ঝিম লাল। রাতভর তুষারের দিনকাল এলে সারারাত জানালা দিয়ে হিম গোধুলি দেখা যায়। এরকম চলছে সোয়া একুশ দিন হলো। সোয়া একুশ দিন ধরে টানা গোধুলি। দিনরাতের খবর নাই। রাস্তার ধারে তুষারের বপু হাঁটু ছুঁইছুঁই। তুষার জমে বরফ হয়েছে তারপর সেই বরফ ঢেকে আরো প্রায় বিঘৎখানেক তুষার। প্রতিটা ধাপ মেপে মেপে এগোতে হয়। লবণ আর কাঁকরের কৃপা শুধু বড় রাস্তাগুলিতেই। গলিঘুপচিতে বাড়ি থেকে বের হওয়া মানে পেলভিক বোনের আলাদা ইনসিওরেন্স গোনা।
প্রায় কাছাকাছি মুস্তাকীমের পথে শ্যামল হালকায়ে উষ্টা খায়। বাম পাশের অসমাপ্ত গ্রিল বাঁচিয়ে না দিলে একটানে আধামাইল চলে যেতো। ভোলফহাগারস্ট্রাসে থেকে রেল স্টেশনের দিকে সোজা খাড়াই উঠে গেছে হফমান-ফন-ফালারসলেবেন স্ট্রাসে। মাইনাস পনের'র কৃপায় সেখানে লবণ-কাঁকরসহ সবটাই বরফ। এই রাস্তার মাঝামাঝি হাতের ডানে শিলারস্ট্রাসে। সেখানে ৩৩ নম্বর বাড়ি শ্যামলের গন্তব্য। শিলারস্ট্রাসে ৩৩ এর তিনতলায় শ্যামলদের ক্লাসের তিনকণ্যার বাস। মাগডালেনা, ইয়োহানা আর আন্দ্রেয়া। মাগডালেনা ওরফে মাগী আর শ্যামলকে গত পৌনে আটমাস ধরে নাচতে দেখা যাচ্ছে। এই পৌনে আটমাসের বিচারে কে কাকে নাচাচ্ছে বলা মুস্কিল। তবে আজ সকালের নাচটা শ্যামলকেই নাচতে হচ্ছে।
সকাল সাতটা বেজে ঊনিশ মিনিটে মাগী'র এসএমএস। "এতই কি শীত যে আমাকে একবার চুমু খেতেও আসতে পারো না? এভাবে কি হয়?" জানুয়ারী মাসে আটটার আগে সূর্য ওঠে না। তার উপর রবিবার সাতটা ঊনিশে এসএমএসের শব্দে ঘুম ভাঙ্গা রীতিমতো মর্মান্তিক। শুক্রবার রাতের ঘটনা থেকে শ্যামলের মাথা এমনিতেই গরম হয়ে আছে। বিড়বিড় করে বলে, "এভাবে কি হয়? নাকি এভাবে কী হয়? মাগী কুনখানকার!"
মিনিট দশেক পরে দাঁত ব্রাশ করতে করতে মনে পড়ে মালতীর কথা। কলিকাতা থেকে ফুলদা'র পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ইন্টার্নি করতে আসা মালতী রায়। মাস চারেক আগে পরিচয়ের পর থেকে খুব ঘাঁটাচ্ছে। মাতৃভাষায় মহব্বতের স্বাদ পেতে শ্যামলও এই ঘাঁটাঘাটিতে তেমন আপত্তি করছে না। চলুক না এরকমই। একটা বৈদ্যুতিক নেটে আরেকটা সরাসরি চেটে। সাদা আর বাদামী পাউরটির কাবাব হতে শ্যামলের নিজেকে বেশ একটু মাচোও মনে হয়। ভাবতে ভালোই লাগে মানে লাগছিল আর কি।
বাদ সেধেছে সেনেগালের কুকুক মানে কুকুভিয়ান ওয়াসওয়া। শ্যামল ওকে আগে ওয়াসওয়া বলেই জানতো। গত শুক্রবার সেমিস্টার শেইক আউট পার্টিতে মাগী ওকে কুকুক বলে ডাকছিল। শ্যামলের সাথে নাচতে নাচতে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাবার মিনিট চল্লিশ পরে মাগীকে দেখে গেলো কুকুকের সাথে টোটাল সালসাবিভঙ্গে। শ্যামল এট্টু এদিক এদিক নেচে মুখ হাড়ি করে বারে গিয়ে বসেছিল। মাগী এক ফাঁকে কুকুকের ঘেটির ফাঁক দিয়ে শ্যামলকে চোখ মারলো। মুখে রহস্যময় হাসি। এরকম হাসি পরপর তিনটা ডাবল শট ভদকা মারার জন্য যথেষ্ট। চোখটোখ লাল করে একসময় সোজা গিয়ে কুকুকের মুখে একটা বাঙ্গালী মানের ঘুষি। তারপর কুকুকের অ্যাকশান। সবটা পরিস্কার মনে নেই তবে ট্যাক্সিতে করে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল এইটুকু মনে পড়ে। ভাগ্যিস মাল টেনেছিল। না হলে আফ্রিকান ধোলাইয়ের পরে বাড়ির পথ মনে থাকা অসম্ভব।
চোয়ালে সেরকম ব্যাথা নিয়ে গতকাল দুপুরে মনস্থির করে মাগীকে একটা জ্বালাময়ী ইমেইল করে দিয়েছে। সেই মেইলের কোন জবাব আসেনি। রাতে মালতীকে কয়েকবার নক করেও সাড়া পাওয়া যায় নাই। মেজাজ খারাপ করে আরো মালটেনে ঘুম দিয়েছিলো। সেই ঘুম ভাঙ্গালো এই এসএমএস।
উস্টা খেতে খেতে বেঁচে যাবার পরে শ্যামল কার্টুনের মতো পা টিপে টিপে শিলারস্ট্রাসেতে ঢোকে। ৩৩ নম্বর বাড়ির সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একটা বিড়ি খায়। বিড়ি খেতে গ্লাভস খুলতে হয়। ধলাদের মতো করে গ্লাভস পড়ে বিড়িটানার কায়দা এখনো আয়ত্বে আসে নাই। পুরো সাড়ে চার মিনিট ধরে তাম্বাকু পুড়িয়েও মাগীকে কী বলা যায় খুঁজে পাওয়া গেলো না। শূণ্য মগজেই কলিং বেল টিপতে হলো। কোন সাড়া নাই। আবার টিপলো। তথৈবচ। মাগীর নম্বরে ফোন দিল। নো রিপ্লাই। অনেকগুলি প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে একটা এসএমএস টাইপ করলো দ্রুত। গ্লাভস ছাড়া আঙ্গুলগুলি ঠাণ্ডায় কেটে নিচ্ছে।
এরমধ্যে একতলার বাসিন্দা হের স্মীডট মর্নিং ওয়াক সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। শ্যামলকে দেখে কুশল জিজ্ঞাসা করে দরজা খুললেন। শ্যামলও ভদ্রতা সেরে সিড়ি দিয়ে দ্রুত তিনতলায় উঠে গেল। দরজার বাইরে কুকুকের গামবুট। ভিতর থেকে ছন্দোবদ্ধ খুনসুটির আওয়াজ আসছে। নারী কণ্ঠটা শ্যামলের পরিচিত।
ঢালু রাস্তা দিয়ে হন হন করে ফিরতে গিয়ে এবার সঠিক একটা আছাড় খায় শ্যামলচন্দ্র বণিক। পেলভিক বোনটা বাঁচলো কী না বোঝা যাচ্ছে না। একটু ফিকে রৌদ্র এসে পড়েছে বরফের উপর।
হিমাঙ্কের নীচে সবই অবিকৃত থাকে। বরফের আস্তরের ভিতর দিয়ে পাশের জমে থাকা ছোট্ট ঢিবিটার উজ্জ্বল কালচে হলুদ দেখা যাচ্ছে।
গুরফ!
হ্যা ব্যাপারটা সেরকমই।
মন্তব্য
আরো লিখলেন না কেন বদ্দা !
(অ:ট: ওরে জ্যোতি, তুই কি এ গল্প পড়েছিস! )
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কী লিখুম?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এততো মজা পাইলাম ভাই, সে আর বলতে!
এটা পড়ার পর আর কোনক্রমেই হাসি আটকানো গেল না! ভ্যাক ভ্যা্ক করে শুধু হাসতেই থাকলাম!
আমারো মনে হল, আরেকটু লিখলেই পারতেন! এত সুন্দর গল্প এত জলদি শেষ করতে ইচ্ছা করে না!
-----------------------------------------
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
গুরফ! হা হা .. বেচারার দিনটা এভাবে শুরু হলো!
- গ্লাভস পরে বিড়ি খাওয়া কঠিন না। তবে সমস্যা হইলো গ্লাভসে গন্ধ হয়া যায়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি একবার গ্লাভস পুড়াইছিলাম। তার্পর থিকা ...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
বদ্দা,
এই অংশ রেস্ট্রিক্টেড
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আমার ভালো ক্যামেরা নাই। হিমু কিছু তুলছে মনে হয় স্নো'র ছবি। বুড়াদের কাছে শুনলাম নর্থ-জার্মানীতে নাকি গত ৭০ বছরে এরকম স্নো পড়ে নাই।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
"গুরফ" মানে কী? ঠিক স্পষ্ট হলনা। আম-পাঠকের সাথে কমলকুমার মজুমদারের মত বেদরদী এক্সপেরিমেন্ট করা কি ঠিক?
আচ্ছা, একটা প্রশ্ন আগেও করেছিলাম। টেরা-উপন্যাসটার কী হল? জার্মানীতে থাকা লোকজন কি খালি মুলার চাষ করে? নয়তো তাদের বেশিরভাগ কেবল মুলা ঝুলায় কেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভাবেন
বাকি প্রসঙ্গে শুধু বলবো ট্রেন এক্টু লেট আছে। তবে ৮০তেছে ...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
মিঠায় মুখ মাইরা আইল গো..
নঙ চা খাউ
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
হাহাহা- গুরফ !!! প্রথমে তো ধর্তারি নাই, যখন বুঝলুল...খ্যা খ্যা...
_________________________________________
সেরিওজা
হ
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আমি নামের মাহাত্ম্য শুরুতেই ধরছি কিন্তু গল্পের ভিত্রের মেসেজ এখনো ধরতারিনাই। গুরফের তলে আরও অনেক কিছুই লুকায়িত আছে মনে হয়...
বরফের তলে গুরফ, গুরফের তলে রাস্তা, রাস্তার তলে দুনিয়া, দুনিয়ার তলে ....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ঘ্যাচাং
কিছুমিছু মজা পাইলাম। আবার একটু হালকার ওপর ঝাপসা মত বেদ্নাও পাইলাম।
এই পুতুপুতু প্রেম প্রেম এর চক্করে শুনি আজকাল ঢাকার গরমেও পচুর লোক গুরফে উষ্টা খায়। ভাবতেসি 'সহয বাংলায় সালসা ভাজ' বইটা লিখেই ফেলি। কি বল?
নামাইয়া ফেলেন Rum নাম নিয়া ...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আমি বরফের ওপরে ঢালু পথে হাঁটা প্রায় আয়ত্ত করে ফেলেছি। পকেটে হাত না ঢুকিয়ে পা-কে শক্ত হতে না দিয়ে মোটামুটি কী আছে জীবনে ভাব করে এগোতে হবে এবং কোনোভাবেই থেমে পড়া বা তাড়াহুড়ো করা যাবে না, সাবলীল লয়ে চলতে হবে। শ্যামলের দোষ সে আকামে সময় নষ্ট করে আসল কামের খবর নিতে দেরি করে ফেলেছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- ঢালু পথে পায়ের তালে তালে কদম না বরং বরফের তালে তালে পা ফেলতে হবে। পিছলা খেয়ে গেলে গাড়ির হ্যাণ্ডব্রেক এর মতো পায়ের তালুর ব্রেক ধরে ফেলতে হবে। তারপর রামনাম জপতে জপতে পিছলা খেয়ে স্কেটিং করতে থাকবেন। এমতাবস্থায় হাত দুইটাকে আকাশে শান্তির নীড়ের ফকারের মতো করে দুই দিকে ছড়ায়ে রেখে বাতাসে শরীরের ব্যালেন্স রাখতে হবে। "ডরাইলেই ডর, হান্দাইয়া দিলে কীয়ের ডর" সূত্র ভালো করে অনুসরণ করতে হবে। মনে রাখবেন, এই সূত্র হতে বিশ্বাস সরে গেলে কিন্তু পড়ে গিয়ে কোমরের হাড্ডির বারোটা বাজাইতে পারেন।
জনস্বার্থে-
ধুগো
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ফ্রিজ ছাড়া আর কোথাও বরফ দেখছি বলে মন পড়ে না।
বরফের দেশের লোকজনের লেখা পড়তে সুখ পাই
খ্যাক খ্যাক
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
পথম বরফের দেশে গুরফ'র সামনে বসতে পারা বাঙালীদের অভিজ্ঞতা থাকলে শেয়ার করেন(হিমাঙ্কেরনীচেকারকীঅবস্থা?)
খ্যাক খ্যাক খ্যাক.........
_____________________________________________________
ইটের পরে ইট সাজিয়ে বানাই প্রাণের কবিতা ...
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
হে হে
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হে হে হে হে হে...
বুঝি নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমিও না
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
মিটু
...........................
Every Picture Tells a Story
বরফে একবার উষ্টা খায়াই সাবধান হয়ে গেছি। তাও উপায় নাই। কালকে না বুইঝা নরম বরফে বুক পর্যন্ত গেঁথে গেছিলাম। মাইনাস বাইশের মধ্যে দুই ঘন্টা হাঁটাহাঁটি করলাম। মুরুব্বীদের দোয়ায় আর কোন দুর্ঘটনা ঘটে নাই। দাদা, আপনে শ্যামলদারে সাবধানে হাঁটাহাঁটি করতে বইলেন। সবই কোমড়ের খেইল। কোমড় গেলো তো সব গেল
লেখা পইড়া মজা পাইলাম।
-ইকথিয়ান্ডার
ঝাম্লার মইদ্যে চোখ বুলাইছিলাম, বুঝি নাই।
এইবার মাথা বরফ করে পড়তে গিয়া গুরফ বুঝলাম।
নতুন মন্তব্য করুন