সিরিজ খেলাপী, ই-বুক খেলাপী ইত্যাদি সুনাম আমার আছে। রিসেশানের যূগে খেলাপী হওয়াটা বিচিত্র কিছু না। ক্রেডিট ইন্সটিটিউটকে দেনাদার যা বলে এক্ষেত্রে সচলে আমার পাঠকদেরও সেরকম প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু দিতে পারছিনা। খালি এটুকুই বলতে পারি...সবটাই ক্রমে আসিতেছে...সাথে এই আরো একটা যোগ হলো। এই আর কি....
১.
একখাবলা সিগারেটের খোল মনিটর আর উফারের মাঝখানে ঢাকনা ভাঙা ক্যালকুলেটর আড়াল করে নির্লিপ্ত পড়ে আছে। ডানপাশে শরিরের আধখানা ঝুরঝুরে মানিব্যাগ আর বাকিটা মাল্টিপ্লাগে ঢেলে দিয়ে জিজ্ঞাসু শুয়ে আছে আধপাতা প্যারাসিটামল। টেবিলের বাকিটা জুড়ে ধোঁয়াচ্ছন্ন সিপিইউ, বর্তমান মোবাইল, দুইবছর আগের বাতিল মোবাইল, গোটা চার খালি তামাকের ঠোঙা, একটা আধাভরা তামাকের ঠোঙা, লাইটার, দেশলাই, বীয়ারের লাইনার, উপচে পড়া ছাইদান, ওয়াইন ওপেনার, হাবারমাসের থিউরি অফ কমিউনিকেটিভ অ্যাকশানের পেপারব্যাক প্রথম খণ্ড, বাদামের খোল, শুকনো দারুচিনি, মাস ছয় আগের টেলিফোন বিল, অনিয়মিত ছড়িয়ে থাকা বাতিল ট্রিপল-এ ব্যাটারি, একজোড়া সস্তা এয়ারফোন আর গোটাদুই নকিয়া-চিকন আর একটা নকিয়া-মোটা চার্জার সুপ্রচুর তামাকের গুড়া আর বিশুদ্ধ ধূলা মেখে মীমাংসার অযোগ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। টেবিল ল্যাম্পের স্ট্যান্ড থেকে সিপিইউ-মনিটর-সাউন্ডবক্স আর উফারকে একই নেটওয়ার্কে আনতে মাকড়সাগুলি কয়েকমাস ধরে খুব খাটছে। এই শ্রমকে পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে কখনো ছয়টি কখনো আটটি কখনো একসাথে দশটি আঙ্গুলের ডগা কী-বোর্ড থেকে নিয়মিত ধূলা মেখে চলেছে। আঙ্গুলের সরণ সাপেক্ষে মনিটরের স্ক্রীনে পরবর্তী পরিবর্তনগুলি কোনরকমে প্রতিফলন পাচ্ছে।
কোঁৎ করে চ্যাপ্টা বোতলের চারের এক সস্তা ভদকাটুকু মেরে দিয়ে আঙ্গুল গুলি আবার সেই কী-বোর্ডের ধূলিসাগরে ঝাঁপ দেয়। টাইপিঙের খুটখুট শব্দের সাথে পাল্লা দিচ্ছে উইন্যাম্পে চলমান সোয়া পাঁচঘন্টার ম্যারাথন প্লেলিস্ট। তার এই প্রান্তে রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লক ঐ প্রান্তে রক অ্যান্ড রোল ট্রেইন। খুব বেছে বেছে তৈরী করা ৫৭ বছরের একটা অ্যান্থোলজি।
কিছু একটা জন্ম নিচ্ছে। ৫৭ বছর সঙ্গমের অনুশীলন বা অভিনয় দাবী করে এমন একটা কিছু। কবিতা হতে পারে, গান হতে পারে, প্রবন্ধ হতে পারে, গল্প হতে পারে, উপন্যাস হতে পারে, নাটক হতে পারে, স্ক্রিপ্ট হতে পারে, বালছাল হতে পারে, ধুনফুন হতে পারে, এমনকি মেগাবাইট খানেক ওয়ার্ড ফাইলও হতে পারে। সময়টা খরচ হচ্ছে নির্দিষ্ট কোন সঞ্চালনে এটাই ঘটনা।
অ্যান্থোলজি সত্তর দশকের মাঝামাঝি। ডীপ পার্পল ভেঙে রেইনবো হবো হবো সময়। প্রথমে ডান হাতটা দুই খাঁচার মাঝখানটা চেপে ধরলো। তারপর দুই হতে বাম দিকে। ঠেলা দিতে চেয়ার উল্টে ধূলিমাখা মেঝেতে উপুর হলেন আঙ্গুলগুলির মালিক। উইন্যাম্পে লঙ লিভ রক অ্যান্ড রোল।
২.
- আমাগো ইমিডিয়েট আগের জেনারেশান পর্যন্ত মাইনসের পুরা সেরকম ঝোল আছিল বুঝছস! খাওন জুটে কৈ থিকা হিসাব নাই আটকালচার দিয়া ছ্যাড়াব্যাড়া। আমাগো টাইমটা ডিফরেন্ট। কাম আছে ট্যাকা আছে খরচো করার জাগা আছে, মাগার ঐ বালের আটকালচার করার টাইম নাইক্কা।
- ঠিকই কইছস মনে হয়। মাগার আটকালচার করা পাবলিকগুলা একসময় না একসময় বহুত নাম কামাইছে। কামাইয়া টাইম মতো ঠিকই কালচার-ট্রেড করা ধরছে ......
- কয়জন? পঁচিশ বছর আগের থিকাই ধর। উননিশো পাঁচাশি থিকা আইজকা এই দুই হাজার দশ। কয়টা মাল কামাইন্যা কালচারকাকু পাইছস এর মধ্যে? খুব বেশী হইলে পঞ্চাশ জন?
- এ্যাতো হইবো না ...
- পঁচিশ?
- তাও না.. টাইনা টুইনা পনেরষোল হৈতারে ...
- তাইলেই দ্যাখ... জাস্ট মোর দ্যান হাফ এ ইয়ার ....
- কিন্তু এর মধ্যে তো এইজগ্রুপের আলাদা হিসাব আছে। মানে তুই যাগো কালচারকাকু কইতাছোস তারা তো বেশীরভাগই ফিফটিজ-সিক্সটিজের আঁতেল। ঐ সময়টাতে মার্কেট এরকম ক্লামজি ছিল না। হ্যারা সেই সময় প্রিমিটিভ অ্যাকুমুলেশান যা করার কইরা নিছে ....
- এগজ্যাক্টলী! এর পরে যারাই বাজারে জাগা নিতে গেছে তাগো প্রায় সবাইরেই ঐ পঞ্চাশ-ষাইট দশকের পীরসাবগো মুরিদান হইতে বাধ্য হইতে হইছে। এই ট্রেন্ডই চলছে এক্কেরে পৌনে পনের বছর আগের আইটি-ব্যুম পন্ত। আমাগো আগের জেনারেশন মানে তো ঐ সময়ের পোলাপানই।
- তাইলে বটম লাইন কী খাড়াইলো?
- সহজ কথা। মাস্-পাঠকের মনোযোগের ভালোরকম আড়ালে থাকা কিছু প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতা বাদে মাঝের তিনসাড়েতিন দশকের অ্যাসথেটিক্স সামনে আইতারে নাই। পুরানা ঝোলে ভাত মাখাইতে মাখাইতে আইটি ব্যুমের টাইমে আইসা প্রথমে কাঁচা ভাত আরো কয়দিন পর পুরা চাইল। ইন দ্য মীন টাইম কাকুরা মরতে শুরু করছে। বাজারে ততদিনে নতুন ক্রয়ক্ষমতা পাওয়া নয়া কিছিমের কনজুমার আইসা পড়ছে .......
- এইভাবে দেখতে গেলে মার্কেট কিন্তু এখন আরো একটা ভ্যাকুয়ামের মধ্য দিয়া যাইতাছে। মাঝে মধ্যে দুই একটা ডিজে'র ছাও আর নয়াবামের ভ্যাক ধরা মোল্লা ঘেঁষা পাতি আঁতেল চ্যাওম্যাও কইরা নিজেরাই কনফিউজড হইতাছে ....
মোবাইল বাজে। মানে বেজে উঠে থেমে যায়। এসএমএস।
- কে রে?
- পালবাবু মাল জোগাড় করছে। কোন ঝামেলা হয় নাই। চৌরঙ্গী'র দিক যাইতে কয়।
- হলে আইলেই পারতো বাল। এখন উঠতে মন চাইতাছে না।
- চল ব্যাটা। পূর্ণিমা আছে। মনা ভাইও আইছে .....
- কছ কি! খাড়া মুটুম মাইরা আহি .....
মীর মশাররফ হোসেন হলের লাল ইটে গোধুলি একাকার হতে থাকে। দুই বন্ধু সোয়া তিন মিনিট রিক্সার অপেক্ষায় থেকে চৌরঙ্গীর দিকে হাঁটা দেয় হল অফিস ডানে ফেলে .....
(চলবে?)
মন্তব্য
না চললে খবর আছে, কইয়া দিলাম। বাইক্যা খাওয়া খেমা দিলাম।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
- শেষের লাইনের আগের লাইনে আইসা আমারে ব্যক্তি-আক্রমন করা হৈছে। আমি এর বিচার চাই।
আঙুলের মুহুর্মুহু এ্যাটাকের ফলে কী বোর্ডের কয়েকটা 'কী' যে শহীদ হয়ে এখন পুলসিরাতে ঝুলে আছে, সেইদিকে কিঞ্চিৎ নূরপাত করলেন না যে বদ্দা! কী বোর্ডে আঙুলে চালাইতে গিয়া অভ্যাস বশতঃ এক্স-ওয়াইতে গুল্লি মারতে গেলে আঙুল মিয়া যে গাতায় পড়ে কাতরাইতে থাকে, সেইটাও বাদ পড়ছে।
কোবলেনৎস ট্যুর নিয়া আলাপ চলতাছিলো। সারাদিন ঘুরাঘুরির পর রাইতে ডিজেল ইঞ্জিনের সারাউন্ড ডলবি ডিটিএসের ছন্দে ছন্দে আবশ্যক আরাম না হইবার আশঙ্কায় ঠিক করা হইছিলো ডিজেল ইঞ্জিনে ঘুমের বড়ি গুইলা দিলে কেমন হয়! পরক্ষণেই ভুল ভাঙলো, সমস্যা তো ডিজেল ইঞ্জিনের না। সমস্যা হইলো শ্রোতা মণ্ডলীর। ঘুমের বড়ি খাইতে হইলে আসলে শ্রোতা মণ্ডলীরই খাইতে হইবো। তাইলে ডিজেল ইঞ্জিন ক্যান, রকেট ইঞ্জিন কানের কাছে চালু হইলেও, "আর্থ কলিং পুলসিরাত, হ্যালো... হ্যালো..." বলে হাজার হার্জের চিল্লানিতেও কোনো ভাবান্তর হইবার কোনো সুযোগই নাই।
তবে, গঠনা হইলো। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসিবে কবে? কবে ফুটিবে ফুল কুসুম কাননে! যাই আপাতত, কিঞ্চিৎ হিসাব নিকাশ মিলাই গিয়া।
বাই দ্য ওয়ে, লেখা বলবৎ থাকুক। খেলাপি খোলাপি কোনো ব্যাপার না। লেখার বাইর হওয়াটাই মূখ্য ব্যাপার এইখানে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
চলতেই হবে।
"মীর মশাররফ হোসেন হলের লাল ইটে গোধুলি একাকার হতে থাকে। দুই বন্ধু সোয়া তিন মিনিট রিক্সার অপেক্ষায় থেকে চৌরঙ্গীর দিকে হাঁটা দেয় হল অফিস ডানে ফেলে"- আহা কতদিন জাবি যাইনা।
পপকর্ণ নিয়া বইলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ওরে..সেইরকম শুরু হইছে। আগে আপনার লেখা তেমন একটা বুঝতার্তামনা। এইডা পইড়া খুব ভাল লাগসে। পাঠক হিসেবে আমার উন্নতি দেইখা আমিই অবাক!
উপন্যাস চাই! উপন্যাস.. বুকের বাম পাশে হাত দিয়া পইড়া যাওনের আগে একখান উপন্যাস, বস্ আর কিছু না।
খুব চলবে বদ্দা। আপনে খেলাপী হইলেই হয়।
তবে কেমন জানি উপন্যাস লেখার টিউটোরিয়ালের মতো লাগতেছে
বিচিত্র খেয়ালের খেলাপি!
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
একপাতা পইড়া কিছু কওন যায়না
দুইপাতা, তিনপাতা পইড়াও না
চাইরপাতা পড়তে পারলে কউন যাইবো, তহন কমুনে
...........................
Every Picture Tells a Story
মামা, এম্পিথ্রি প্লেলিস্ট-টা এক্টু শেয়ার করো। গান শুন্তে মন্চায়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
বানাইতেছি ইস্নিপসে
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
চলুক, উপন্যাস বানায়ে ফেলতে পারেন কিন্তু । লেখার আবহ ওইরকমই লাগলো। ভালো লাগছে পড়তে।
নতুন মন্তব্য করুন