টুকরো টুকরো লেখা ২২

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: রবি, ০৪/০৪/২০১০ - ২:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শুক্রবার পর্যন্ত ভূতের মতো কাজ করেছি। টানা চারদিন ইস্টারের বন্ধ। গত সপ্তাহজুড়ে যেই বিশাল কর্মতালিকা বানিয়েছিলাম তাতে ধূপধুনো দিয়ে ঘুমের উপর আছি। পরিকল্পনা একটা ভ্রান্ত ধারণা। এই মহাসত্য জানা সত্ত্বেও একের পর এক ভ্রান্তির টানেলে ক্রলিং করছি। এর শেষ খুঁজতে যাওয়াও একটা ভ্রান্ত ধারণা।

১.

বঙ্গবীর ডিগবাজী মারছেন বেশ অনেক বছর আগেই। এখন আস্তে আস্তে পলিটিক্যাল ক্লাউনে পরিণত হইতেছেন। চারিদিকে পরিবর্তনের জোয়ার। সবাই চেঞ্জ হইতে চায় চেঞ্জ দেখতে চায়। দিনকাল অন্যরকম। এতোকাল পত্রিকা মারফত জানতাম তিনি মূলত ঢুশঢাশ লাইনের লোক। সেদিন বিডি নিউজে দেখলাম এখন তিনি বেশ পরহেজগার হইছেন। দেইখা কলিজাটা ঠাণ্ডা হইয়া গেলগা। ভালো থাকেন বঙ্গবীর। আমরা ধইরা নিলাম নিচের ছবিটা আপনার না।

ছবিটা যার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবীর বইলা আমরা তারেই চিনুম। আপনে থাকেন আপনার গামছা লইয়া।

২.

পটুয়াখালীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিঙে শুনলাম গরুর গোস্ত নিষিদ্ধ করা হইছে। আমি উপমহাদেশের সব থিকা বড় ছাত্রাবাসগুলির একটাতে সাড়ে চাইর বছর থাকছি। মিলপ্রতি আট টাকা কইরা দিতাম সেই সময়। তখনো গোমাংস বাংলাদেশে এমন কিছু সস্তা ছিলো না। আর আমাদের হলে কমপক্ষে পঞ্চাশজন সনাতন ধর্মাবলম্বী বাস করতেন। কোনদিন শুনি নাই যে তাঁদের জন্য গরুর বিকল্প কিছু রান্না করা হয় নাই। সুতরাং নির্মলবাবু দ্রব্যমূল্যের এবং সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্রদের যে দোহাই দিলেন সেইটা ধোপে না টিকার মতোই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুবুদ্ধি হউক। মেনুতে গোমাংস ফিরুক এই প্রত্যাশাই করি।

তবে দেশে গরুর মাংসের দাম যে গত এক দশকে অস্বাভাবিক রকম বাড়ছে এইটা ঘটনা। আমি যখন প্রথম বাজারে যাই সেই আশির দশকের শেষের দিকেও গরুর মাংসের কেজি ছিল পয়ত্রিশ থিকা চল্লিশ টাকা। সেইটা বাড়তে বাড়তে চুরানব্বই-পচানব্বই নাগাদ ষাইট টাকায় আসে। দুই হাজার সালের শুরু পর্যন্ত সেইটা সিজন অনুসারে ষাইট থিকা সত্তুর-পচাত্তুরের মধ্যে ওঠানামা করতো। এর পরে মিলেনিয়ামে আইসা সেইটা হাইজাম্প দিলো। কারণ হিসাবে পত্রিকা মারফত জানলাম ভারতীয় গরুর "অনুপ্রবেশ" রোধ করতে গিয়াই এই দশা। নব্বই দশকের প্রথমার্ধেও দেখতাম অনেক রিক্সাচালক-বেবি ট্যাক্সি চালক হোটেলে পরোটা-গরু দিয়া প্রাতরাশ সারে। মোড়ের হোটেলগুলিতে এক বাটি গরুর গোস্ত ছয় থিকা আট টাকা আর বাড়ি মারা খাস্তা পরোটা একটাকা। মোটামুটি বারো থিকা চৌদ্দটাকার মধ্যে তখন চা-বিড়ি সহ গ্র্যান্ড প্রাতরাশ সম্ভব ছিল। যেই অমানুষিক শারিরিক পরিশ্রম তাঁরা করেন তার জন্য সকাল বেলা ভারী নাস্তা খুব জরুরি। এখন যে দ্রব্যমূল্যের কথা শুনি তাতে তো ভাজি দিয়া বাজে পরোটা খাইতে গেলেও বিশটাকা বাইর হইয়া যাওয়ার কথা। চা-বিড়ি না হয় বাদই দিলাম। আমার প্রশ্ন হইলো আমাগো দেশে কি কোনভাবেই গরুর উৎপাদন বাড়ানো যায় না? দেশে এতো পয়সাওয়ালা লোকজন আছেন তারা কি এই খাতে কিছুটাকাও খাটাইতে পারেন না?

যা বুঝতাছি এর একটাই সমাধান আছে। সেইটা হইলো আমারে একটা জ্যাকপট পাইতে হইবো। তারপর অচ্ছুৎ বলাইয়ের বন্ধুরে সেইখান থিকা এককোটি টাকা দিমু। সে একটা বড় সাইজের জমিতে একটা ফার্ম বানাইবো। সেইখানে সারা দুনিয়া থিকা উত্তেজিত ষাড় আর লাস্যময়ী গাভী কিনা আইনা রাখা হবে। বাইরে থিকা তাগো খালি দরকার মতো খাওন দেওয়া হবে। ব্যস। ঐখানে তাগো একটাই কাম। পাঁচ বছরে তাগো সংখ্যা অন্তত পাঁচগুণ হইবো। তারপর পুলাপান লায়েক হইলে তারাও কর্তব্য বুইঝা যাইবো। এইভাবেই একদিন বর্তমান ওয়েজ লেভেল স্থির রাইখা গরুর গোস্ত কেজিপ্রতি পঞ্চাশ টাকায় নামবে। মাছেভাতে বাঙালী গরুভাতে শিফট করবে। বাংলাদেশ হবে এশিয়ার আর্জেন্টিনা। বাঁচুকমরুক যাই করুক গরু খাইয়াই করবো।

অপেক্ষা শুধু জ্যাকপটের .....

৩.

বরাহ শিবিরে স্মৃতিভ্রম শুরু হইছে। বাড়িতে সবাই তাওয়া কড়াই রেডি রাখেন। স্মৃতি ফিরাইতে থ্রীস্টুজেস মডেলের বিকল্প নাই।


মন্তব্য

গৌতম এর ছবি

জ্যাকপট পাইলে জানায়েন...

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নাশতারান এর ছবি

গরু সমস্যার আরেকটা সমাধান হলো নিরামিষাশী হয়ে যাওয়া। এমনিতেই গরুর বর্জ্যগ্যাস নাকি বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সবচেয়ে বড় কারণ। নির্মলবাবু বোধহয় এই পয়েন্টটা যোগ করতে ভুলে গেছেন।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রাসেল [অতিথি] এর ছবি

বঙ্গবীর টাইটেল টা দেওয়া সরকারের উচিত হয়নাই। অন্য যাকে কে আমরা বঙ্গবীর নামে জানি [জে: ওসমানি] তারও কিন্তু কিঞ্চিত মতিভ্রম হয়েছিল। মুজিব হত্যার পরে তার কর্মকান্ড যথেস্টই বিভ্রান্তকর। অবস্থাদৃস্টে মনে হয় বঙ্গবীররা বেশ পল্টিবাজ।

আর নির্মল বাবু বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটির হল পরিচালনাকে তো অন্য মাত্রা দিয়েছেন। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর ওনার এই কাজকে সাধুবাদ জানানোর ভাষা জানা নাই।

গোমাংসের মিলিনিয়াম জাম্পিংটাও কিন্তু রেকর্ড ব্রেকিং । এক্লাফে ৮০ টাকা থেকে ২০০ !!!!!!!

হাসিব এর ছবি

কাগু দেখলাম চরমোনাইয়ের পীরের সাথে এক মঞ্চে উইঠা কেমনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে সেই বিষয়ে উপদেশাইতেছে । দেশে থাকলে এইগুলান যাত্রাপালা দেখতে হেগো ঐখানে উপস্থিত হৈতাম শিউর ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এত এত জ্যাকপটওয়ালা দেশে আছে..

মুস্তাফিজ এর ছবি

এর আগেও এক মন্তব্যে বলেছি দেশ এখন স্পষ্টতই দুভাগ হচ্ছে পক্ষে আর বিপক্ষে, মাঝামাঝি বলে আর কিছু থাকবেনা। আর বিচার চাওয়া আওয়ামি লীগের দাবী না, গণদাবী।

...........................
Every Picture Tells a Story

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মোস্তফা নতুন দোকান দিছে, গোমাংসের দামও কমাইছে। মাছ ছয়েক পর তার নয়া দোকানের হদিস পাইয়া ঐখানে গিয়া জিগাই, কি মামা, এইবার ডিজেলের দাম কিমুন? দাঁত বাইর করা ভেটকি দিয়া কয়, ডিজেলের দাম দিয়া তুমি কী করবা? আমি তো ডিজেল বেচি না!

বঙ্গবীররে লৈয়া রীতিমতো হতাশ হৈছি। রাজনীতির কাছে সব শালাই বিকোইয়া যায়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর সব অবদান স্বীকার করেও লোকটাকে একটা স্ট্যান্টবাজ ছাড়া কিছুই মনে হয় না আমার

০২

যুদ্ধের পরে ব্যক্তিগত আক্রোশে অনেক লোকের হত্যাকারী এই লোক
টাঙ্গাইলে জমি দখলের এখন পর্যন্ত অগ্রণী এই লোক

০৩

৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশে রাজনীতি না করে ভারতে বসে তার কার্যক্রম কোনোভাবেই সমর্থন করি না আমি

০৪

এই লোকটাকে দেখলেই আমার হুমায়ূন আজাদের কথাটা মনে হয়
একবার যিনি মুক্তিযোদ্ধা তিনি সারাজীবন মুক্তিযোদ্ধা নন

FZ এর ছবি

৭৫ পরবর্তি সময়ে কাদের সিদ্দিকিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি মুজিব হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদ করেছিলেন। তৎকালিন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার ভারতে আশ্রয় নেয়াটা অপরিহার্য ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকির অবদানের সঠিক মূল্যায়ন মনে হ্য় আমরা করিনি। এম আর আখতার মুকুলের 'আমি বিজয় দেখেছি'র তথ্যমতে মিত্রবাহিনির এত দ্রততার সাথে ঢাকা পৌছানোর পেছ্নএ সব চাইতে গুরুত্ত্বপূর্ণ অবদান ছিল কাদেরিয়া বাহিনির। একদিকে ঢাকার দিকে পিছিয়ে আসা পাকিস্তানি বাহিনিকে অতর্কিত আক্রমনে শেষ করে এই বাহিনি, আবার মিত্রবাহিনির নদী পারাপারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে এই কাদেরিয়া বাহিনির যোদ্ধারাই। কাদের সিদ্দিকির পরবর্তি জীবনে স্খ্লন তাই দুঃখ্জন্ক।

পথেপথিক এর ছবি

আপনার বাক্য গুলি আমার ভালো লাগো ।
সচলায়তনে আপনার লেখা আমি খুব একটা
পড়ি নাই তবে যেগুলি পড়লাম তাতে মনে হচ্ছে
আপনি খুব ব্যস্ত । তারপরও ভালই লেখেন
এবং মনোযোগ আকর্ষণের একটা ব্যাপার আছে।

স্পর্শ এর ছবি

এই সিরিজ ভালো লাগে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী [অতিথি] এর ছবি

হুমম... ইন্টারেস্টিং!

আচ্ছা, আপনার প্রোফাইলে ক্লিক করলে পেজ নট ফাইন্ড দেখায় কেন ? ইয়ে, মানে...

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী [অতিথি] এর ছবি

মন্তব্যটা পথেপথিক ভাই/আপুকে করেছিলাম মন খারাপ

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী [অতিথি] এর ছবি

চলুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমিও কাদের সিদ্দিকীরে স্টান্টবাজই মনে করি। ছবিতে যারে খোঁচাচ্ছে, সে কি রাজাকার না পাওনাদার, সেটার উত্তর কই? বিচারের বাইরে এই হত্যাকান্ডটাই একটা ভ্রান্ত ধারমা। ভ্রান্ত-ধারমার লোকজন মুক্তিযুদ্ধ করলেও শেষে আসল চরিত্র বের হয়ে যায়। জয়নাল হাজারীও ডেয়ারিং মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তার বাড়িটা হইলো দখলকৃত হিন্দু সম্পত্তি।

পরিকল্পনাও আসলেই একটা ভ্রান্ত ধারণা। আপ্নে গরুর ফার্ম দিলে মাংস খালি আমার ভর্তুকি দেয়া হোটেলে সাপ্লাই দিবেন, প্রায় বিনা খরচে খাওয়ামো।

আপনার লিখা ভালো পাইলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।