খাওয়া বন্ধ না হওয়ায় রান্নাও বন্ধ হয় না। কারণ তৈরী খাবারে সময় বাঁচলেও পয়সা বাঁচে না। আবার ঘরেও মন মতো এইটা সেইটা করতে গেলে সবসময় পকেটের সাথে ঘড়ির সাথে ম্যাচ করে না। সুতরাং পয়সা আর সময় বাঁচে আবার জিবলাও খুশি থাকে এরকম কিছু রেসিপি আবিস্কার করা আমার মতো সর্বহারার জন্য বিপ্লবের মতো না হইলেও অন্তত লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসারের সদ্যকেনা মার্সিডিজে ইটা মারার মতো ফরজ। সেরকমই দুইএক্টা পোস্টাইলাম। আসলে খুব সিরিয়াস কিছু লিখতে চাইছিলাম। কিন্তু আঙ্গুল কী-বোর্ডে লাগাইতে পাইলো খিদা। রান্না নাই ঘরে। যা আছে সেগুলা রান্তে কমপক্ষে দেড়দুই ঘন্টা লাগবো। তারপর বানাইলাম এই পোস্টের প্রথম রেসিপিটা। পরের রেসিপিটাও এই ধরণের পরিস্থিতির জন্য। তবে দেশী বাস্তবতায় মনে হয় এগুলা সবসময় কামে লাগবো না। এইসব রেসিপি কামে আইবো নি:সঙ্গ প্রবাসীদের মধ্যে বিশেষভাবে তাঁদের যারা ইতোমধ্যেই নীতিগতভাবে যষ্মীন দেশে যদাচার মাইনা নিছেন।
১.
ডিমালুভর্তা দিয়া শুয়োরের গোস্তভাজা
এইটার জন্য বাড়িতে যেগুলা থাকা দরকার :
১. ম্যাশড পটেটো অর্থাৎ আলুভর্তার গুড়া
২. পিঁয়াইজের গুড়া
৩. কাঁচা মরিচ (অপশনাল)
৪. নুন
৫. সয়াবিন তেল (সূর্যমুখী হৈলে ভালো হয়)
৬. হাড্ডি ছাড়া শুয়োরের কান্ধের গোস্ত ( কিছুটা চর্বি থাকলে ভালো হয় )
৭. এট্টুসখানি ভিনেগার
আর বাড়ির বাইরে ঠান্ডা থাকাটাও জরুরি। মাইনাস পাঁচ থিকা শুরু কইরা যত নিচে যাইবো তত ভালো।
একমাত্র শুয়োরটাই আজকে বিকালে ছিলো না। বাইরে মাইনাস সাড়ে দশ। অ্যাস্ট্রোনট সাইজা বাইর হইলাম। অচ্ছুৎ বলাইয়ের আগের বাসার নিচতলার রুশ দোকানটা তাজা মাছ, শুয়োর আর ভদকার জন্য কাসেল বিখ্যাত। দোকানে ঢুইকাই দেখি হাড্ডি ছাড়া শুয়োরের কান্ধের গোস্তে আনগেবট অর্থাৎ অফার। দুইটাকা চৌত্রিশ পয়সা কেজি। হাফ কেজির মতো কিনলাম।
বাসায় আইসা প্রথমে শুয়োরের গোস্তরে স্টেকের সাইজে কাটলাম খুব খিয়াল কৈরা। পুরাপুরি না হইলেও মোটামুটি হইলো। তারপর একটা বাটির মধ্যে ৩/৪ চিমটি নুন আর ৫/৬ ফোঁটা ভিনেগার দিয়া মাখাইয়া থুইয়া দিলাম। এইবার একটা বাটিতে এক ঠোঙ্গা ম্যাশড পটেটো ঢাল্লাম। তাতে দেড় চাচামুচ নুন । এক চাচামুচ পিঁয়াইজের গুড়া । তিন্টা কাঁচামরিচরে আশ্রাফুল মনে কইরা কুঁচিকুঁচি কইরা ঐগুড়ার লগে মিশাইলাম। এইবার ১/৪ লিটার ফুটানো পানি দিয়া টেবিল চামুচ দিয়া খিয়াল কইরা লাড়া দিতে দিতে আড়াই মিনিটের মধ্যে আলুভর্তা ৯১% রেডি। এইবার একটা তাওয়ায় দুই টেবিল চামুচের মতো তেল দিয়া গজব তাপে গরম করেন তিন মিনিট। তারপর ৬০% এ মিনিট খানেক রাইখা তারুপর এক এক কইরা দুইটা স্টেক মতো দেখতে শুয়োর ছাড়লাম। এইবার একটু মুচরামুচরি কইরা আড়মোড়া ভাইঙ্গা ফ্রিজ কোঁৎ কোঁৎ কইরা পেগ দুয়েক আনগেবটের ভদকা মাইরা দিলাম। মাইনাস দশ তাপমাত্রায় ভদকা জিনিসটা কেমন যেন নিরাসক্ত নিস্পৃহ আচরন করে। মনে হয় বোতলটা হাই তুইলা কইতাছে, খা খা আরো খা। কোন লাভ নাই। ঠাণ্ডা যা লাগার লাগবোই।
মিনিট পাঁচ পরে স্টেক উল্টাইয়া দিলাম। দিয়া টের পাইলাম প্রকৃতি ইয়াদ করছে। ঠিক ঠাক মতো খালি হইয়া আইসা দেখি সূর্যমুখী তেলের রঙ শুয়োরের চর্বির সাথে মিশা সোনালী হইয়া গেছে। এইবার একটা থালে একটা একটা কইরা স্টেকগুলা নামাইয়া ঐ তেলেই আলুভর্তা ছাইড়া দিলাম। তারুপর দুইটা ডিম। এইবার গজব লাড়ালাড়ি। আড়াই থিকা পৌনে তিনমিনিটে ঘটনা শেষ।
প্লেটে উঠানোর সময় চেহারাটা হইলো এরকম :
যারা শুয়োর খান তারা টেরাই মার্তারেন। ভালো লাগার সম্ভাবনা ৯৬%। বাকি চাইর পার্সেন্ট ব্যাকাপ রাখলাম।
গুটেন আপেটিট !
২.
আটার রুটি দিয়া লণ্ডভণ্ড
তুর্কি দোকানে ৬৫% আমাগো আটার রুটির মতো দেখতে/খাইতে একরকম জিনিস পাওয়া যায়। আকারে অবশ্য অনেক বড়। ঐটা বাসায় থাকলে ধুমধাম গোটাদুই ডিম ভাইজা একবেলা পার কইরা দেওয়া যায়। কিন্তু শুধু ডিমে তো মন মানে না। তাই এট্টু কায়দা কইরা ডিমের উপর এট্টা অন্যকিছুর ক্যামোফ্লেজ চাপানো লাগে।
এই জিনিসটা অবশ্য জাহাঙ্গীরনগরে থাকতেও খাইছি। ডেইরি গেটে রাজ্জাকের হোটেলে আফজল নামে এক লোক কাজ করতো। চেহারায় এট্টুআট্টু ডিপজল ভাব ছিলো। আমরা ফোলাফোলা চোখমুখ নিয়া বেলা দশটার দিকে ডেইরিতে গেলে আফজল আমাদের জন্য পার হেড এক হাফ কইরা লণ্ডভণ্ড নিয়া আসতো। আমরা বাড়িমারা পরোটা দিয়া গপ্ গপ্ কইরা খাইতাম। এইটা হইলো ১৯৯৮-৯৯এর কথা। সেইসময় ডিপজলের হিট ছবি লণ্ডভণ্ড আর ধর।
যাই হোক। স্মৃতি খুব খাচ্চর জিনিস। একবার খাউজানি শুরু করলে খাউজাইতে খাউজাইতে নব্বই দশকের শুরুর দিকের বলাকার সামনের ফুটপাথে যায় গা। সেইটারে পোল্ভোল্ট মারাইয়া দুইহাজারদশে আন্তে এট্টুও ভাল্লাগে না। আন্তে বাধ্য তাই আন্তে হয়।
লণ্ডভণ্ডের জন্য লাগবো গোটা দুইতিন বা চাইরটা ডিম। টেনিস বল সাইজের একটা বা গল্ফের বল সাইজের দুইটা বেশ রসালো টমেটো। পিংপং বল সাইজের একটা পিঁয়াইজ আর রেগুলার সাইজের ৩/৪টা কাঁচামরিচ। পিয়াইজ আর মরিচ নৃশংসভাবে কুচি করেন। এইবার দেন দুইটাবাতিন্টাবাচাইরটা ডিম। তারুপরে টমোটোগুলারে নিঠুরদরদীর মতো চটকান। মনে রাখবেন এই অশ্লিলতার মাত্রার উপরই লণ্ডভণ্ডের সোয়াদ নির্ভর করে। এইবার চাচামুচের একচামুচের কাছাকাছি লবণ দিয়া রাবণঘুটা দেন। তারপর তাওয়ায় তেল দিয়া চুলার জ্বাল চ্যাতাইয়া দেন। মারাত্মক গরম তেলের মধ্যে এতোক্ষণ যা ফেটলেন সেইটা ছাইড়া দেন। তারপর অশ্লিলভাবে লাড়তে থাকেন। তিন মিনিটের মধ্যে রেডি লণ্ডভণ্ড।
এইবার চুপচাপ আটার রুটি দিয়া মাইরা দ্যান। একদেড়বেলা থাকবো প্যাটে।
এরকম ফকিরা রেসিপি আরো আছে তয় আইজকার মতো এইদুইটাই।
খাইতে খাইতে আরো এক্টা বহুপরিচিত গান শুনেন ....
মন্তব্য
রেসিপিতে এবং রন্ধনপদ্ধতিতে
ডাঙ্কে
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ফটো কই?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
প্রযুক্তিগত জটিলতায় আটকা পড়ছে
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ফটো বরফে আটকা পড়ে গেছে। যাক, কাসেলেও ঠান্ডা পড়েছে শুনে ভালো লাগলো। মাইনাস ১৫ না হোক, মাইনাস ১০ হলেও যথেষ্ট।
আমার মাইনাস ১০ পর্যন্ত ঠান্ডা মনে হয় না, ইভেন ইনার, গ্লাভস বা টুপিও লাগে না। কিন্তু তাপমাত্রা মনে হয় এপ্রিলের আগে আর -১০ এ পৌঁছাবে না। আজ বাইরে গিয়া বাসস্টপে দুই ধাক্কায় বিশ মিনিট অপেক্ষা করে পুরা আইস ফ্যাক্টরী হয়ে গেছি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
টুপি ছাড়া বাইর হইছিলাম সকালে। কান দুইটা রাডার হইয়া যাওয়ায় আবার বাসায় আইসা কান্টুপি নিছি।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
কাইলকা হৈছিলো এই কাহিনি। তুষার (ডাক্তার না) এর কারণে বালের ট্রেন ফ্রেন সব লেইট লতিফ। খাড়ায়া থাকতে থাকতে একসময় দেখি কানে কোনো অনুভূতি পাই না। বুঝলাম কান চিলে নেয়ার আগেই ঠাণ্ডায় লৈয়া গেছে গা। আইজকা আলমারির চিপা-চুপা থাইকা খুঁইজা কানটুপি বাইর করছি। নরমালি তো ডিসেম্বরে এইত্তা লাগে না। কিন্তু এইবার কী জানি হৈছে। খবরই আছে এইবার!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ডেকোটা রাজ্য ছিলাম দুই বছর - ঠাণ্ডা কী বস্তু টের পাইছি!!! আর না...
রেসিপি ভালো লাগলো। এক রাশান সহকর্মী ছিল ডেকোটাতে, দুইজন ঠাণ্ডার সময় অফিসের ল্যাবে বসে ভদকা খাইতাম। ঠাণ্ডায় এটা ভালো জিনিস...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
শেষেরটা জটিল। আমি অবশ্য অসভ্য নাড়াচাড়াটা করিনি কিন্তু ট্রাই করেছিলাম।
আপনাদের ওখানেও চরম ঠান্ডা পড়েছ জেনে খুশি হলাম।
পাগল মন
ফটু দেখতে মঞ্চায়
এই উইকেন্ডে এক টেরাই করুম।
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আপনারা খান। আমি দেখি।
অ.ট.: আপনার তেহারির যে পরিমাণ প্রশংসা শুনেছি তাতে করে সেই বিখ্যাত তেহারি না খেয়ে মারা গেলে আফসোস থেকে যাবে।
কাকস্য পরিবেদনা
হুম। চলেন তেহারির জন্য একসাথে হানা দিই বদ্দার বাসায়।
চইলা আসেন জশনেজুলুছে
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
দ্রোহীদা,
আমি সুমনদার তেহারীর রেসিপি ট্রাই মারছিলাম, খাইতে খারাপ হয় নাইকা মাগার এখনো কাউকে দাওয়াত দেয়ার মত হয় নাই তাই আপ্নেরে দাওয়াত দিলাম না।
পাগল মন
সিদ্দীকা সরে দাঁড়াও
এসে গেছে আমাদের সুমন চোধুরী।
রন্ধনপদ্ধতির বিবরণ মজার! অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে হয়তো, সেই ভয় নিয়েই বলি, আপনি কি আর গল্প, ধারাবাহিক লিখছেন না! আপনার কয়েকটা গল্প, একটা শেষ না হওয়া ধারাবাহিক পড়েছি, সেও বেশ আগের কথা। খুবই ভাল লেগেছে।
নতুন মন্তব্য করুন