ব্যাথাটা এবার ডান খাঁচার নিচে বেশ খানিকটা গভীর থেকে আসছে। আর ছোট ছোট একেকটা চুমুকে দেওয়াল থেকে বহুদূরে থাকা ড্রিল মেশিনের ঝিম্ প্রতিধ্বনি। কী-বোর্ডে আরো খানিক খুট খুট। তারপর আবার ব্যাকস্পেসে চাপ। রুশ দোকানে ভদকার ওফার ছিল। আধা লিটারের বোতল তিন ইউরো নিরানব্বই সেন্ট। এবার শীতের একেবারে শুরু থেকেই চলছে। স্টক শেষ হওয়া পর্যন্ত চলবে। নাতাশা, ইরিনা, গালিয়েভা, স্তানেভা, পুদোভকীনাদেরও এরকম অফার থাকলে হতো। ভদকার বিক্রি বাড়তো আরো খানিক। শুয়োরের বিক্রিও বাড়তো। বিশেষ করে কিমার। চমৎকার একটা মেশিন আছে ঐ দোকানে। এদিক থেকে থোকা থোকা মাংস ভরে দাও ওদিকে বড়ো একগাছা সুতলীর মতো কিমা বেরিয়ে আসবে। সোভিয়েত আমলের যন্ত্রটা অন্যরকম ছিল। একধারে হাতল ঘুরিয়ে পেষাই করতে হতো। বেশ শক্তির ব্যাপার। আবার চিলিক দিয়ে উঠলো বুকের মধ্যে। বারান্দায় গিয়ে গোটা চার/পাঁচ টান দিয়েই সোজা টয়লেটে গিয়ে বসে পড়তে হলো। সস্তা তামাকে অন্তত হাগাটা ভালো হয়। মাঝে নেশাটা একটু জমে উঠে কেমন ঘাম দিতে থাকে। হাত ধুয়ে মুখে পানিটানি দিয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে মিলিয়ে আসা ফ্ল্যাশের শব্দের সাথে শরিরটা ঝরঝরে লাগতে থাকে। ব্যাথাটাও নাই। দুটো সিগারেট বানিয়ে আবার বারান্দায়। ঘরে হিটার অন করা আছে। শীতের সময়টা পিসির সামনে বসে ফোঁকা হয়ে ওঠে না। পরশু বাসাটা ছেড়ে দিতে হবে। তিনমাসের ভাড়া বাকি। ঠাণ্ডা বাড়ছে। একটু আগেও মাইনাসের বাতাস বসন্তের মতো লাগছিলো। গলা শুকিয়ে আসছে। আধা লিটার বীয়ারের গ্লাসভরে ঢক ঢক করে লিটারখানেক পানি খাওয়া গেলো। এইচটুও। হাঁটুর নিচ থেকে পা কেমন ভারি লাগছে। পিসির স্ক্রীনে প্রচুর ধূলা। সিপিইউ’র খাঁজেও। য়ূথা বলেছিল একদিন পুরো ঘরটা কোনাকাঞ্চি মেরে সাফ করতে হবে। পুরো সাফসুতরো হলে একদিন ফ্লোরেই হবে। হয়েছিলো। ফ্লোরে ধূলাবালি আজকের থেকে খানিকটা কম ছিলো। শেষদিকে য়ূথাও কেমন গিধ্বর হয়ে উঠছিলো। সপ্তাহে দেড় সপ্তাহে একবার গোসল করতো। সাদা বা রূপালী ব্রায়ের ফিতায় গায়ের ছাতা স্পষ্ট দেখা যেতো। মাঝে মাঝে খিল খিল করে হেসে বলতো নিজদের দুর্গন্ধগুলি চিনে নিতে না পারলে মহব্বত থাকে না। ওয়ার্ডরোবে নিচের ড্রয়ারের মুখে মা কালীর মতো জিভ বের করে আছে যূথার প্যান্টি। কালো নেটের এই সেটটা গত জুনে ওর জন্মদিনের উপহার ছিলো। কালো অন্তর্বাসের আলাদা ইয়ে আছে। বিশেষ করে বক্ষবন্ধনীর। জার্মান ভাষায় বলে বুযেনহাণ্টার। আক্ষরিক অনুবাদ দাঁড়ায় বক্ষধারক। দর্শনেই পার্থক্য। ধরে রাখা আর বেঁধে ফেলা। নতুন বাসার কশান জোগাড় হয় নাই। এই বাসার বাকি ভাড়াটাও না। যূথার বর্তমান বন্ধু মালদার শুনেছে। কিন্তু কেউই ফোন ধরছে না কাল সন্ধ্যা থেকে। হয়তো অনেক দূরের কোন গ্রামে কোন ডুপ্লেক্স ভিলায় রাসোৎসব চলছে। কিংবা নেট ওয়ার্ক নেই। কিংবা ইচ্ছা করেই। য়ূথার পায়ে প্রায়ই ক্র্যাম্প হতো। বিশেষ করে ম্যারাখন ইনিংসগুলির শেষে। অনেক্ষণ মাসাজের পরে ঠিক হতো। কোঁৎ করে একটা ডাবল পেগ মেরে আরো দুইটা সিগারেট নিয়ে আবারো বারান্দায়। এবার কানটুপি মাথায়। তাপমাত্রা কম করে মাইনাস দুই তো হবেই। কোনটা কুয়াশা কোনটা তামাক পোড়া ধোঁয়া বোঝা মুস্কিল। রিং বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা করা গেলো বার দুয়েক। সেই কিশোর বয়স থেকেই চেষ্টা চলছে। হচ্ছে না। ১৯৯০ সালে তানিয়া বলেছিল বিড়ি খাওয়া পোলাগো লগে কথা কই না। তানিয়ার জামাই ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোতে চাকরি করে। ওদের সবমোট চারটা ইস্যু। তারমধ্যে একজোড়া জমজ। তানিয়ার বুক এখন কতো বড়ো হয়েছে? একাদশ শ্রেণীতেই একজোড়া ডাবের মতো ছিল। কোকোনাট উওম্যান। অনেকদিনপরে গলায় একটু সুর ভাঁজে। কোকোনাট উওম্যান ইজ কলিং আউট অ্যান্ড এভরি ডে য়ূ ক্যান হিয়ার হার শাউট। ছিপি খুলে বাকিটা গলায় ঢালা গেলো। হ্যারী বেলাফন্টের সাথে রাম হলে জমতো। বোতলে কতটা ছিল বোঝা যাচ্ছে না। আধা বোতল পার করার পরে পরিমাণটা ঠিক বোঝা যায় না। তিনমাসের ভাড়া বাকি। য়ুথা কোকোনাট উওম্যান হলে বেশ হতো। তাওয়ার তেল থেকে গোটা গোটা লার্ড তুলে খেতে খুব ভালো। গ্লাসের আর বোতলের তলানি মিলিয়ে আরো আধাপেগমতো হবে। পাশের ফ্ল্যাটে মিসেস ক্নাপের বুকটাও বেশ। এখন আর ঠাণ্ডা লাগছে না। কেমন মনে হচ্ছে বুক থাকলেই হেব্বি একটা ব্যাপার। ভালো লাগছে। একটু চেষ্টা করতেই সবাইকে বিকিনিতে দেখা যাচ্ছে। মিসেস ক্নাপ জার্মান সংসদে ব্রেস্ট ফিডিঙের উপর দুঘন্টা ধরে কী যেন বলছেন। সাংসদরা কোরাস ধরেছেন। মামা লুক আ বু বু দে শাউট দেয়ার মাদার টেল দেম শাট আপ ইওর মাউথ দ্যাট ইজ ইওর ড্যাডি ও নো মাই ড্যাডি ক্যান্ট বি আগলী সো। দশতলার বারান্দা থেকে শনিবার রাতের ব্যস্ততা ভালো লাগছে। আলোগুলি ছোট ছোট সরল রেখায় পিথাগোরাস থেকে ভাস্করাচার্যের চৌদ্দগুষ্টির মামাসীকে খুব করে ভালোবাসছে। পিথাগোরাসের উপপাদ্যের মাথায় বিছানা পেতে কোন মুণ্ডহীনা বিষন্ন বসে আছে। ক্লাস সিক্সে থাকতে পাকনা মাসুম বলেছিল মাই দেখে মাগী চেনা যায়। কিন্তু মুণ্ডহীনা ঘটোধ্নীর বিষন্নতা কাটাতেই হবে। তিনমাসের ভাড়াও জোগাড় হয়ে যাবে। বারান্দার কার্নিশ থেকে আর এই কিছুটা সামনে ........
মন্তব্য
'নাউজুবিল্লাহ'-টাইপ অণুগল্পের শেষে এসে একী দেখলুম! দশতলার বারান্দার কার্নিশ থেকে কিছুটা সামনে তিন মাসের ভাড়া খুঁজতে পাঠিয়ে দিলেন নায়ক বাবাজিকে!
রব
ডিটেলিং সেইরাম। অনেক দিন পর লেখা পড়লাম। ভালো লাগলো।
এহেন পাকনা বন্ধু আমারো ছিল। তবে সিক্সে না, কলেজ ফার্স্ট ইয়ারে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সারছে...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
খাইছে! ১০+ কই?
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
পইড়া ম্যান্দা মাইরা গ্লাম!
তয় আপ্নে বাঁইচা আছেন দেইখা ভাল্লাগ্লো!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
--------------------------------------------------------------------------------
দারুণ! অনেকদিন পর
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
পুরাই তব্দা।
লেখা ভালো লেগেছে।
...........................
Every Picture Tells a Story
চ-র-ম হইছে । কেমন যেন একটা অদ্ভুত সুর আছে।
দৃপ্র
প্যারা ছাড়া বর্ণনা দারুণ লাগলো!
আচ্ছা, শব্দটা 'গিধ্বর' না 'গিদর'? অনেকদিন পরে কালকে রাত থেকে আজকের মাঝে দুইবার শোনা হলো।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
সেই রকম কিছু...... গায়ে জালা ধরে...
গল্পকারের সাথে নায়কের চেহারাসুরত গুলিয়ে ফেলা আমার পুরাতন খাইসলত। সত্যজিত যতই সৌমিত্র সৌমিত্র করুক, আমার কল্পনার ফেলুদা কিন্তু একটু শক্তপোক্ত কেলেকুচ্ছিত। কিন্তু তারপরেও এই অভ্যাসটা বদ। তাই করোটির ভেতরে যখন এই গল্পের নায়কের চেহারায় গল্পকারের চুলদাড়ীজুল্পী গজাতে শুরু করল, তখন এক কাপ শক্ত এসপ্রেসোর শরণাপন্ন না হয়ে উপায় রইলনা।
প্রসংসা। শুভেচ্ছা।
---
ঝাল তেহারী শুধুই ডাকে। শুধুই ডাকে।
আপনে রেজ্জাক ভাইয়ের সিনামার একটা গান ধরতে পারেন, "ডাকে বারে বারে ক্যারা আমারে রে, ডাকে বারে বারে ক্যারা!"
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দেহ মনির, তেহারী কিন্তু আমারে একলা ডাকে নাই। এই ডাকে কিন্তু তোমারো নাম আছে। এহন কও, গান কি আমি একলা গামু, নাকি তুমিও গলা মিলাইবা।
ঘ্যাচাং
আচনার পিসি/ল্যাপি কি অসুস্থ?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
অনুগল্প হলেও সামাজিক অবস্থার দারুন ছবি তুলে ধরেছেন, মনে হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা পূর্ব ইউরোপ। ভোদকায় বুঁদ হয়ে স্বপ্নচারণ, কিন্তু পরশুদিন বাড়ি ছাড়তে হবে। এগুলোই কঠিন বাস্তবতা।
সস্তা বা দামী বুঝিনা, আমি তো তামাক ছাড়া হাগতেই পারিনা। বিড়ি না জ্বালিয়ে ছোটোঘরে ঢুকতেই পারিনা।
মাসুম সাহেব এইজন বোজর্গ, পাকনা বইলেন না তারে। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়েই ছোটো শামিম আমাদের আরএমজি দেখিয়েছিল। শিশুকাল হইতেই ডলি পার্টনরে ভালু পাই মনে হয় তার ঐদুইটার কারনে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
দারুণ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ভালো লাগলো।
আপনার তো সিরিয়াস রাইটার্স ব্লক যাচ্ছে মনে হয়, এমন কি জেনেসিসও বের হচ্ছে না!
দারুণ ভালো লাগলো..
আমি সচ্চরিত্র অনভিজ্ঞ বালক, অতএব এইসব লেখা লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে হয়। তাও ভালো লাগল।
হিজিবিজবিজ-মার্কা লাগলো, তবুও জীবন আছে, জীবনের তেতোকড়ামিঠে স্বাদ রহিয়াছে।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
জোশ!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
নতুন মন্তব্য করুন