সচলায়তনের জন্মদিন গেল গতকাল। সারাটা দিন বসে ছিলাম মনিটরের সামনে। একসঙ্গে অনেককিছু লেখার ইচ্ছে হলেও শেষমেষ তেহারি রান্না করে হিমুকে ডাক দিলাম। অনেক ধুনফুনালাপের ফাঁকে ফাঁকে একটা কথাই খোঁচাচ্ছিল। কতকাল কিছু লিখি না! সেই জানুয়ারী থেকে দেশেবিদেশেব্লগাবর্তে কতকিছু ঘটে গেল। একটা সময় ইস্যু মাটিতে পড়তে দিতাম না। এখন সেইসব দিন পৌরাণিক। আমাদের সেদিনের সেই নবজাতক গতকাল চারবছর পুরো করে ফেলল। সে এখন সগৌরবে পরিমাণগত থেকে গুণগত রূপান্তরের স্তরে। শুধু অভিনন্দন দিয়ে কি আর মন ভরে?
১.
অবশেষে সংবিধান সংশোধন হলো। একে সঙশোধন বললে আবার সঙের মানসন্মান নিয়ে টানটানি পড়ে। সর্বোচ্চ আদালত ৫ম আর ৭ম সংশোধনী বাতিল করলে তাতে "বিসমিল্লাহ"/"রাষ্ট্রধর্ম" সবই বাতিল হয়েছিল। কিন্তু সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনধারী সরকারী দল লেগে পড়লো আদালতের সেই রায়কে "যূগোপযোগী " করতে। স্বৈরশাসক হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারী দলের মিত্র বিধায় তাঁকে খুশি না করার আর কোন রাস্তা দেখা গেল না। সেইসূত্রে সামরিক শাসন জারির দায় থেকে মুক্তি পেলেন লেজেহোমো। রক্ষা পেল ইসলামের সওগাত নিয়ে আসা রাষ্ট্রধর্মও। আবার প্রধান বিরোধী দলের সংযোজন করা "বিসমিল্লাহ" রেখে দিয়ে তাঁদেরও খানিকটা বাধিত করা হলো। থেকে গেল ধর্মভিত্তিক রাজনীতিও। স্পষ্ট মনে পড়ে নব্বই দশকে তর্জনি নেড়ে নেড়ে খালেদা জিয়া বলতো, " অ্যামর্যা স্যাংবিধানে বেসমেল্লা স্যাংজোজন করেছি..."। সেই সময় ক্ষমতাসীন দল আর তার সমর্থক বুদ্ধিঢেঁকিরা যা বলতেন সেগুলিও মনে পড়ে। মনে পড়ে ১৯৭২এর সংবিধান পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার দোহাই দিয়ে তাবৎ আওয়ামী অপরাধ হালাল করার নিরন্তর মকারি। এইসব বুদ্ধিঢেঁকিদের সকলেই যে আওয়ামী খাইসলতের হালুয়ারুটির ভাগ পেতেন তা না। বলবো বেশীরভাগই এগুলি বলতেন একধরণের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে। এই বিশ্বাস যে ছাগু বিশ্বাস তাও আমরা বহুদিন থেকে বুঝি। কিন্তু এই "বুঝ"টা "জানা"য় পরিণত হলো গতপরশু। আর সেই "জানা" থেকে প্রাপ্ত হলো বোধিস্বত্ব। আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেলে কতটা মোটা করে আঁটি বাঁধতে পারে ইতিহাসে তার একটা স্পষ্ট প্রমাণ থেকে গেলো। আওয়ামী লীগ পরিণত হলো খৎনা লীগে আর তাদের অ্যাপোলোজিস্টরা নৌকাছাগুতে। খৎনা লীগকে প্রগতিশীল প্রমাণে মেধাক্ষয়ও ছাগুকর্ম।
২.
কথা হচ্ছে যারা খৎনা ছাড়া সেকুলারিজমের সমর্থক, যারা স্পষ্টত:ই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে, যারা একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের বিপক্ষে অর্থাৎ যারা এইসব প্রবল মকারিঝঞ্ঝার মধ্যেও সত্যি সত্যি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে তাঁদের কর্তব্য কী? আমি বলবো অতীতের থেকে অনেক বেশি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে লড়াই করতে থাকা। এই লড়াই চলবে সর্বত্র। বারে বারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে রাষ্ট্রের পরস্পরবিরোধীতার জায়গাগুলি দেখিয়ে দিতে হবে। মাঠের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নির্মাণে এই চোখে আঙ্গুল দেওয়াগুলি একমাত্র না হলেও অতিঅবশ্য কর্তব্যগুলির একটি। প্রগতির পক্ষে মতাদর্শিক আধিপত্য সৃষ্টি পরিমাণগত থেকে গুণগত রূপান্তরে খুবই জরুরি।
এই লড়াই এর অনেকগুলি মাঠের মধ্যে একটা হচ্ছে ব্লগ। গণসংযোগে ব্লগের দানবিয় ক্ষমতাকে রাষ্ট্র একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছে। সুতরাং ব্লগে প্রচুর লাফালাফি অব্যহত থাকতেই হবে। সেই লাফালফিতে সচলায়তন তাঁর জন্মের শর্তানুসারেই অগ্রগামী। কিন্তু এতে আত্মতৃপ্ত হবার কোন সুযোগ নাই। সচলদের সক্রিয়তা আগের থেকে আরো অনেক অনেক বেশি বাড়তে হবে। মনে রাখতে হবে সচলায়তন আক্ষরিক অর্থে একটা সেকুলার প্লাটফর্ম যার স্বরূপ লিঙ্গবাদি না। সুতরাং তার খৎনা দেবারও কোন প্রশ্ন ওঠে না।
জন্মদিনে তাই আর কোন পাতলা অভিনন্দন না। সচলদের প্রতি আহ্বান থাকলো সচলোপযোগী গাদা গাদা আজাইরা লেখালেখি অব্যহত রাখতে।
আমাদের সচলায়তন লড়ে যাক বাতিলের পক্ষে। গায়েবের বিপক্ষে।
মন্তব্য
সহমত।
সমস্যা হচ্ছে পোস্ট থেকে কপি করা যায় না। আপনার কিছু কোটেশন চিহ্নিত করতাম তাহলে। তবুও একটা উদ্ধৃতি-
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
পরিমাণে বৃদ্ধি ছাড়া গুণে পরিবর্তনের আশা অবাস্তব।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
জায়গায় জায়গায়
জায়গায় জায়গায়
আর ওভারঅল
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
এক্কেবারে হক কথা!!!
আসলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধানের পরস্পরবিরোধিতার জায়গাগুলো নিয়ে লড়ে যেতে হবে.......আমিও আশাবাদী একদিন ঠিকই পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র আমরা পাবই!!!
অলস সময়
love the life you live. live the life you love.
ঠিকাছে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
হুম।
হেহে, দারুণ ল্যাখছেন বদ্দা।
আজাইরা লেখা জিন্দাবাদ
সঙবিধান = সং এর বিধান
লেখককে স্যালুট
উন্মাদ_নাঈম
ভালো লেগেছে।
আজাইরা লেখা জিন্দাবাদ...
অব্যাহত থাকুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গুরু,
লেখার শীরনাম কঠিন হইছে।
কোন অবস্থান নেবারমতো নেতা নেত্রী আমাদের নয় কেবল কোথাও নেই। কোন ইস্যুকে জনপ্রিয় করার মতো মুরুদ না থাকায়, আপাত দৃষ্টিতে পাবলিক খাবে এমন অবস্থানে সবাই থাকতে চায়।
কিন্তু আমাদের আজাইরা চেষ্টা জারি রাখতে হবে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
জটিল হইছে বদ্দা, তবে আমার তো মনে হইতাছে আপ্নে শুধু আমার (খোমাখাতার) রিকোয়েস্টের জইন্য এই পুস্ট দিছেন
অ.ট. - হিম্ভাই না মৎস্যভক্ষণ শুরু করসে? তাইলে আবার তেহারি খাইল ক্যান?!
অসাধারণ!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
সুমন ভাই অল্প কথায় মারাত্মক লেখা হয়েছে। ভালো লেগেছে।
ধরণীর তাবৎ ন্যায় সংগত অধিকার আদায়ে সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণী প্রধান নিয়ামক এবং প্রভাবক। কিন্তু অনাদীকাল থেকে এরাই আবার ধরাতলের অগ্রগামী আরাম ও নিরাপত্তা প্রিয় মনুষ্য সম্প্রদায়! সংবিধানের ক্রমাগত সঙে উচ্চবিত্তের সন্তুষ্টিবিধানের প্রয়াস ও নিম্নশ্রেণীর আউটসাইডার হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত দায়ভার এই মধ্যপদলোপী (বদ খেয়াল মাথায় আনা নিষেধ ) মধ্যবিত্তের ওপরেই বর্তায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই শ্রেণী ক্রমাগত বিভক্তির পথেই হাটছে। সমাজ এবং রাস্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে যেমন বিভন্ন মতপার্থক্য আছে তেমনি ইতিহাস বিষয়ে বিভ্রম এদের মজ্জাগত!
তবে আশার কথা হলো এই শ্রেণীর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যাই ঘটুক মাটি কামড়ে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এদের রক্তের মধ্যে প্রবাহমান। এখন সচলায়তন পরিবারের সদস্যগণ যেমন: সচল/অচল, হাচল, অতিথি, পাঠক (আমার মতো আকাইম্যাগো কথা হচ্ছে না) এদের দায়ভার আরেকটু বেশি বলে আমার মনে হয়। নিজেকে টিকিয়ে রাখলেই তো চলবে না সেই সাথে মুক্তিযদ্ধের মতো মৌলিক বিষয়ে বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচার রুখতে কলমে ও মগজে আরো শান দিতে হবে। সামনের দিন খুব বেশি সুবিধার হবে না র্যাশনাল মানুষ বা তাদের মুক্ত চিন্তার জন্যে তবে চেষ্টা করতে দোষ কি?
নতুন মন্তব্য করুন