ঠাণ্ডা লড়াই যূগের কথা ছেড়ে দিলাম। বুঝলাম তখন কেবলাই সবকিছুর নির্ধারক। নইলে আক্কেল দাঁতওয়ালা বুদ্ধিতে চীনপন্থীদের দুই কুকুরের লড়াইয়ের এবং সোভিয়েতপন্থীদের ১৯৭৩ সালের ত্রিদলীয় জোট আর বাকশালে যোগ দেবার কারণ বোঝা অসম্ভব। ১৯৮৯-'৯১এ প্রথমে পূর্ব ইউরোপ পরে সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্ট/সোশালিস্ট/ওয়ার্কার্স/লেবার পার্টিগুলির একদলীয় শাসনের অবসান হবার পরে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের মতো বাংলাদেশের বামপন্থীদলগুলিও কেবলা-বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। বিশেষ করে সোভিয়েতপন্থী সি.পি.বি.। সমাজতন্ত্র, সর্বহারার আন্তর্জাতিকতা ইত্যাদির উপর বীতশ্রুদ্ধ হয়ে সি.পি.বি. থেকে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সাবেক কমরেডরা রূপান্তরিত কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণফোরাম, আওয়ামী লীগ এমনকি বি.এন.পিতেও চলে গেলেন। তারপরেও পার্টি ধ্বংস হলো না। কিছু লোকে অন্তত চোখের সামনে পাঁচহাত না দেখাতেই হলো না। ১৯৯৪তে অবশেষে বামফ্রন্টের জন্ম হওয়ায় একধরণের ঐক্যের প্রবণতা দেখা দিল। সেইসময়ে তাঁরা সীমিত লোকবল নিয়েও ১৯৯৬ এর ১২ জুনের নির্বাচনে নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছিলেন। সেই ঘোরতর ডানপন্থী হাওয়ার যূগে বামফ্রন্টের টিকেটে নির্বাচনের মাঠে দাঁড়ানোর কঠিণ কাজটা তাঁরা করেছিলেন। এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রথম শাসনামলের মাঝামাঝি তাঁরা আবারো ঐক্যের প্রশ্নে বামের বদলে ডানে গিয়ে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের সাথে ১১ দলীয় জোট করলেন। বাম ঐক্যের সম্ভাবনা দীর্ঘ সময়ের জন্য পাতালে গেল। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এলে ১১ দল যখন আওয়ামী লীগ আর কার কার সাথে যেন মিলে ১৪ দলীয় জোট করলেন তখন সিপিবি সেই জোট থেকে বেরিয়ে এসে একলা চলার নীতিগ্রহণ করলে তাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবেই দেখেছিলাম। কারণ এর আগে একেবারে ১৯৫৬ থেকে কমিউনিস্ট রাজনীতিতে বর্জুয়াদলের লেজুড়বৃত্তির ধারাবাহিকতা চলছিল। এরপর বিএনপি আমল থেকে একেবারে এবারের আওয়ামী লীগ আমলের মাঝামঝি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে সিপিবি'র মধ্যে বামঐক্য সমুন্নত রেখে সক্রিয় থাকার ইতিবাচক প্রবণতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। গণতান্ত্রিক বামমোর্চা নামে একাট বামজোটও গড়ে উঠল। ভাবলাম ঐক্য ক্রমে আসিতেছে। ২০১১'র শেষার্ধে এসে তেলগ্যাস-প্রকৃতিক সম্পদরক্ষা আন্দোলনে কী যেন একটা হলো। দলগুলি ক্রমশ নিজেদের মধ্যে আমার দৃষ্টিতে বিনা প্রয়োজনে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করে দিলো। তারপর একময় সিপিবি-বাসদ, বামমোর্চা থেকে বেরিয়ে গেল। তেলগ্যাস আন্দোলন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে রহস্যজনকভাবে মুখ থুবড়ে পড়লো। অথচ বামঐক্য ছাড়া যে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় পথে নামবার দায় আর কারো নেই সেটা একটা ছাগুও বোঝে। একই ঘটনা লক্ষ্য করলাম একের পর এক পোশাক কারখানায় আগুন দিয়ে শ্রমিক হত্যার ইস্যুতেও। এই ইস্যুগুলি একতরফাভাবেই বামইস্যু। যদি বামদলগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে শ্রমিকদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে ইস্যুগুলি সাম্রাজ্যবাদের দালাল এন.জি.ও.গুলি খেয়ে ফেলবে এতো সহজ কথা সবকিছু সবাত্তে বেশি বোঝা বামপন্থীদের বিশেষত সিপিবি'র না বুঝবার কথা নয়। কিন্তু হলো না। তাজরীনে দেড়শ শ্রমিক পুড়ে মরলো, রাণা প্লাজা ধ্বসে দু হাজার শ্রমিক নিহত হলেন কিছুতেই শ্রমিক শ্রেণী ঐক্যবদ্ধভাবে বামপন্থীদের পাশে পেলেন না।
সিপিবি-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি-বাসদ-গণসংহতি-জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সবাই সবার থেকে বেশি বোঝেন। এতো বেশি বোঝেন যে দুয়েদুয়ে চার করার মতো সহজ গণিত থেকে অতি সতর্কতার সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন। আমি দুই দশক ধরে নির্বোধের মতো শুধু দেখেই যাচ্ছি। বামফ্রন্ট কেন ১৯৯৯ সালে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট, জাতীয় গণফ্রন্টের সাথে ঐক্যের দিকে না গিয়ে গণফোরামের দিকে গেল, কেনই বা গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট ২০০০ সালে অক্টোবরে ভেঙ্গে গেল, কেন ২০০১ সালে সিপিবি-ওয়ার্কার্স পার্টি জোড়া লাগতে গিয়েও লাগলো না, গণতান্ত্রিক বামোমোর্চা থেকে সিপিবি-বাসদ কেন ২০১২ সালে বেরিয়ে গেল, কেন সবচাইতে জরুরি মুহুর্তে এসে তেলগ্যাস আন্দোলন থমকে গেল এর কিছুই বুঝলাম না। জিজ্ঞাসা করলে কী কী যেন বলে তারপর হঠাৎ আওয়ামী লীগকে গালাগালি শুরু করে। অথচ অন্তত আমি কখনোই আওয়ামী লীগের সাথে বাম দলের ঐক্যের বা আওয়ামী লীগকে বাম দলগুলির সমর্থনের কথা বলি নাই। আমার সহজ সরল বুদ্ধিতে শুধু বামঐক্যের প্রয়োজনীয়তাটুকু বুঝি। ঠিক সেই প্রশ্নটার কোন সোজাসুজি উত্তর তারা ব্লগে-ফেইসবুকে কখনো দেন না।
এই সমস্ত না বোঝা প্রশ্নগুলিকে ছাপিয়ে গেল গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার প্রশ্ন। বিএনপি-জামাত কেন যাবে না আমরা জানি। তাঁদের আন্দোলন জমছে না কারণ ১৯৯৫-'৯৬তে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের হাতে জনগণকে নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজনীতা প্রমাণের জন্য মাগুরা উপনির্বাচনের দৃষ্টান্ত ছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অন্য অনেকগুলি সিরিয়াস ইস্যু থাকলেও ঐ রকম কারচুপির নির্বাচন করার কোন দৃষ্টান্ত বিএনপির সামনে নেই। কিন্তু তারপরেও নির্বাচনে যেতে তাদের অসুবিধা আছে, কারণ জামাতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে আর দলটা যেকোন মুহুর্তে নিষিদ্ধ হতে পারে। জামাত ছাড়া বিএনপির চলবে না বলে বিএনপির প্রাজ্ঞ নীতি নির্ধারকেরা মনে করেন। সুতরাং জামাতকে বাঁচাতে যে করেই হোক নির্বাচন ঠেকাতে হবে। তাই বিএনপির কথা থাক। বামপন্থীরা নির্বাচনে যাচ্ছেন না কেন? কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা কি তাঁরা দিয়েছেন? অথচ সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন ঠেকাতেই হোক, দ্বিদলীয় রাজনীতির বিষাক্ত বৃত্ত থেকে মুক্ত হতেই হোক আর ইনসাফ (?) প্রতিষ্ঠা করতেই হোক নির্বাচনের বিকল্প নাই। অন্তত এই মুহুর্তে নাই। সেকথা আবার বামদলগুলি স্বীকারও করেন। তাহলে নির্বাচনে যাচ্ছেন না কেন? আপনারা খুব ভালো করেই জানেন সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হলে স্যাম চাচার কোলে চড়ে মামারা এসে পড়বেন। তখন ইনসাফের গাঢ় ফেটে দরজা হয়ে যাবে। তাহলে কেন যাচ্ছেন না? আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী আসলে কী? কেন জনগণ সব ছেড়ে আপনাদের সমর্থন করবেন? আওয়ামীলীগটাওয়ামীলীগ জাহান্নামে যাক, সমর্থকের প্রশ্নের জবাব দিন! দ্বৈপায়ন হ্রদে কী মতলব ডুবিয়ে রেখেছেন কমরেড?
মন্তব্য
বহুদিন পর বদ্দার লেখা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হরেদরে বামপন্থীদের আসলে কোন দিকনিশানা নাই। আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের বিরোধীতা করা এদের এ্যাজেন্ডা। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে এদের গোস্বা আছে। কিন্তু পাকিস্তানী ও আরবীয় সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে এদের থিসিস নাই। কারণ এইসব থিসিস লিখলে নিজেদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মার্কিন পক্ষ হিসেবে নিজেদের আবিস্কার করার আতঙ্ক এদের ভর করে। এরা কেবলা ছেড়ে যদ্দিন না পর্যন্ত বাঙ্গালি পক্ষ হতে পারবে ততোদিন এদের আশা নাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কথা হইল কেবলাটাই বা কোথায় এখন?
অজ্ঞাতবাস
প্রশ্নগুলো আমারও। এত ইতিহাস জানি না বলে আরও তালগোল পাকায় যায়। আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে অনেকেই বাম অ্যাক্টিভিস্ট। অনেককেই জিজ্ঞেস করেছি বিভিন্ন সময়ে যে সারাক্ষণ "জনগণ, জনগণ, জনতা" বলে গলা ছিলে ফেলা বামদের জনসমর্থন এত কম কেন? রিয়্যাকশন সেই একই-
অদ্ভুদ!!!
লেখায়
আর আপনি "কারণ আমরা ব্লগিংটাই করতে চেয়েছি" বলে আবার কই উধাও হইছিলেন বড্ডা?
সুবোধ অবোধ
ছিলাম আশেপাশেই।
পরের লেখা ৮০তেছে।
অজ্ঞাতবাস
দারুণ!
কথায় বলে, বিধি বাম। বিধির লীলা বোঝা দায়। অর্থাৎ বামের লীলা বোঝাও দায়যুক্ত।
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
একদিন বাংলাব্লগের দুনিয়ার ছাগু-ইতিহাস জেনেছিলাম আপনার লেখায়।
আজ আর এক ইতিহাসের সামনা করালেন।
আপনার পরের লেখার সাগ্রহ অপেক্ষায় রইলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ নীতির বিরোধিতা করার জন্য হলেও তো এখন তাদের নির্বাচনে আসা উচিত।
আমেরিকা স্পষ্টতই একটা অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে। তাহলে তীব্র আমেরিকা-বিদ্বেষীদের কেন আমেরিকার বিপক্ষের অবস্থানে দেখতে পাই না?
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ঔপনিবেশিক আমল থেকেই তাঁরা কারো না কারো পেটে আছেন। কখনো কংগ্রেস, কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো ন্যাপ। আর তাঁদের অভিসন্দর্ভ কেন, লিফলেটের ভাষাই যা সেটা বুঝতে গেলে কান-মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হবে। ভাষা দিয়ে এরা মাকড়শার জাল বানায়, যে জালে নিজেরাই আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে পড়ে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- মস্কোওয়ালারা এক সময় খাল কাটতেও গিয়েছিলেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এইটা ১৯৭৮ না ১৯৮০ মনে পড়তেছে না। হাতের কাছে রেফারেন্স নাই। যতদূর মনে পড়ে কমরেড ফরহাদ, "আফগান স্টাইলে বিপ্লব করবো" আর "১৯ দফা কর্মসূচীতে কিছু কিছু প্রগতিশীলতা দেখতে পাচ্ছি" কথাগুলি অল্প সময়ের ব্যবধানে বলেছিলেন।
অজ্ঞাতবাস
১৯-দফার কথাটা বোধকরি আগে বলা। এবং আফগান স্টাইলে বিপ্লবের হুমকীর সালটা সম্ভবত ১৯৮০ বা তারও পর।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- চৌদ্দদলীয় জোটের শরিক চৌদ্দটি দল কারা সেটা বহু দিন চেষ্টা করে বা বহুজনকে জিজ্ঞেস করেও সদুত্তর পাইনি। চৌদ্দ দলে সিপিবি-বাসদ এরা কেউ ছিল না। চৌদ্দ দলের বাইরে বাম দলগুলোর ফ্রন্ট গঠন করা অবশ্যই ইতিবাচক ব্যাপার।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাসদের কথা জানিনা। তবে সিপিবি যে ১৪ দলে শুরু থেকেই ছিল না সেটা জানি।
আমার কাছে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ১৯৯৪-১৯৯৯ আর গণতান্ত্রিক বামমোর্চা ২০০৯-২০১২ দুইটাই ভালো উদ্যোগ মনে হয়েছে।
অজ্ঞাতবাস
১৯৯১-এর জাতীয় নির্বাচনের পর বামেরা ফ্রন্ট গঠনের যে উদ্যোগটা নিয়েছিল সেটা ধরে রাখতে পারলে এতদিনে তারা কার্যকর বিকল্পের কাছাকাছি যেতে পারতো। কিন্তু এক একটা জাতীয় নির্বাচন আসলে বামদের কী যেন হয়ে যায়। তারা একেক জন একেক রকম আচরণ শুরু করে দেয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- এই সময়টার বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ। দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির মেরুকরণ স্পষ্ট হচ্ছে তখন প্রগতিশীল আন্দোলনে কারা ভাংচি দিচ্ছে সেটা নির্ণয় করা দরকার আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই সময়টা আমার কাছে পুরাই ধাঁধাঁ। মূলত এই ধাঁধাঁ থেকেই মেজাজ বেশি খারাপ হতে শুরু করে। তারপর গত মাসে যখন বিএনপিজামাতের মুখ চেয়ে নির্বাচনে গেল না তখন আর মুখ বন্ধ রাখা গেল না। সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে নির্বাচনে বামজোট না থকলে আমার নিজের কোন দাঁড়াবার জায়গা থাকে না।
অজ্ঞাতবাস
২০১১ অনওয়ার্ড বামদের যে করুণ দশা হয়েছে সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো ঘটেনি। ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের চাপ নেই, নিরাপত্তা বাহিনীর দৌড়ানী নেই, অপারেশন স্পাইডার ওয়েবের মতো বিশেষ অভিযান নেই তারপরও তাদের দিশেহারা দশা। এটা নিয়ে কেউ ইচ্ছে করলে গবেষণা করতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় বহুদিন নতুন রিক্রুটমেন্ট না হওয়া, ক্রমাগত নিজেদের অবস্থান পাল্টানোর ফলে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব হারানো, সিনিয়র নেতাদের বড় অংশ কেবলাপন্থী হওয়ায় কেবলাহারা হবার পর অসহায় বোধকরা, ক্রমবর্ধমান জনবিচ্ছিন্নতা, দলের অভ্যন্তরে লোভী-সুবিধাবাজদের সংখ্যাবৃদ্ধি, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতাসম্পন্ন নেতৃত্বের ঘাটতি এমনসব বিষয়গুলোকে কারণ বলে মনে হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। অনেক খড়কুটোই সামনে ভেসে যাবে।
জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে গেলে প্রতিবারই বিপদে পড়ে যাই। সেটা বামজোট থাকলেও। আলোচনাটা অপ্রাসঙ্গিক বলে আর কথা বাড়ালাম না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- বামফ্রন্ট হচ্ছে নির্বাচনমূখী সংসদীয় বামদের জোট, আর গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট হচ্ছে নির্বাচনবিমূখী বৈপ্লবিক পরিবর্তনে বিশ্বাসীদের দল। তাই সংসদীয় বামদের আপাতদৃষ্টিতে মডারেট গণফোরামের দিকে ঝোঁকা ছাড়া উপায় ছিল না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গণফোরাম যে কতটা প্রতিক্রিয়াশীল সেটা তো সিপিবির থেকে আর কারো ভালো জানবার কথা নয়। আজকে গণফোরামের সাথে যখন বিকল্পধারা, গামছা লীগ আর রবজাসদের ঐক্য হয় তখন তাকে জৈবিক ঐক্য বলেই মনে হয়। ঐ সময় আমি গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের সমর্থক ছিলাম। এইটুকু বলতে পারি যে নির্বাচনী জোট বা ঐক্য না হলেও অন্তত ভোটের সময় গ.বি.জোটের কর্মী সমর্থকরা চুপচাপ নিজের সীলটা বামফ্রন্টেই মেরে আসতো। যেটা ভারতে সিপিআই(এম-এল) বা জার্মানীতে ডিকেপি করে থাকে। আমি নিজে ২০০১ সালে তাই করেছিলাম। তবে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট ততদিনে আর নাই।
অজ্ঞাতবাস
বাংলাদেশে নির্বাচনমুখী সংসদীয় বামেরা যদি শুরু থেকেই নিজেরা জোট বেঁধে থাকতে পারতো তাহলে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অন্য রকম হতে পারতো। সেক্ষেত্রে নির্বাচনবিমুখী বৈপ্লবিক পরিবর্তনে বিশ্বাসীদের ভোটও তারা পেতো। সেটা কেন হয়নি তা আমাদের আগের আলোচনাগুলো থেকে কিছুটা স্পষ্ট।
প্রতিক্রিয়াশীলদের সাথে কিছু বাম দলের খাতির সবসময়ই দেখা গেছে। এই ব্যাপারটার কারণ বিশ্লেষণ দরকার।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট তথা জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল তথা বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মা-লে) ততবারই ভেঙেছে যতবার এর একঘরে একাধিক পীরের আবির্ভাব হয়েছে বা পীরের বাণীর প্রায়োগিক যথার্থতা প্রশ্নের সন্মূখীন হয়েছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি অন্দরমহলে বসে বিবদমানদের বয়ান শুনেছিলাম। মাইরি বলছি কিছুই বুঝি নাই।
অজ্ঞাতবাস
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকের ভাঙনের কারণ শুনেছিলাম দলছুটদের কাছ থেকে। তখন তারা তত্ত্বের প্রায়োগিক যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। আমার কাছে দলছুটদের প্রশ্ন তোলাটা ঠিক মনে হয়েছিল, কিন্তু এই প্রশ্নে দল ভাঙার দরকার ছিল বলে মনে হয়নি। যাকগে, দলছুটেরা সেবার আর নতুন কিছু গড়ে তুলতে পারেনি। বেশিরভাগ পরে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিল।
২০০০ সালের দিকে ভাঙনের কারণ শুনেছি দুই পক্ষের চাঁইদের কাছ থেকে। তাত্ত্বিক কারণ তারা যা বলেছিল তা আমার মতো অজ্ঞানী লোকের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি। তবে আমি সাদা চোখে এক ঘরে দুই পীরের দ্বন্দ্ব দেখেছিলাম। এই দফা দলছুটেরা নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়াতে যেতে পেরেছে। এবং তাদের এই দল গঠনের প্রক্রিয়া বেশ sensational ও glamorous হয়েছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে
- এই প্রশ্নটি এবং
- এই প্রশ্নটি জড়িত। ২০০১-এ সিপিবি-ওয়ার্কার্স পার্টি জোড়া লাগেনি আওয়ামী লীগের নিকটবর্তী হওয়া না হওয়ার প্রশ্নে। কাছাকাছি কারণে ২০১২ সালে সিপিবি-বাসদ গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা থেকে বের হয়ে গেছে। আজকে তাদের নির্বাচনবিরোধী অবস্থান তাদের সেইদিনকার মুভকে স্পষ্ট করে। আর তেলগ্যাস আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অনেকের আজকের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট করে কেন তারা সেই দিন আন্দোলনের গতি মন্দীভূত করেছিল।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সিপিবি-ওয়ার্কার্স পার্টি জোড়া না লাগার পিছনে মনে হয় তেলগ্যাস ইস্যুও ছিল। সিপিবি-বাসদ বামমোর্চা থেকে বের হওয়ার পিছনের কোন তত্ত্বকথা জানিনা। ফেইসবুকে বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম। শাহবাগ থেকে শিশুপার্ক হয়ে সুপ্রীম কোর্ট দেখিয়ে দিলো। তারপর ২০১২র শেষে হঠাৎ ঠাডা পড়ার মতো দেখলাম গণসংহতি ভাসানীকে নিয়ে তসবিটেপা শুরু করেছে। শাহবাগে গিয়ে সোজা বাংলায় কসাই কাদেরের ফাঁসীর কথা না বলে ইনসাফটিনসাফ কী কী যেন গোল গোল কথা বলে। ওদিকে এশিয়া এনার্জি থাবা পেতে বসে আছে কখন নতুন সরকার গদীতে বসবে।
অজ্ঞাতবাস
তেল-গ্যাস-বন্দর ইস্যুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামায়াত খুব ঈমানদার। তারা কখনো নিজেদের অবস্থান থেকে নড়েনি। কিন্তু বামেদের একেকজন এই প্রশ্নে বার বার শাটলককের মতো আচরণ করেছে। বোঝা যায় ক্ষমতার অদলবদলের চাবিকাঠিটা কোথায় এবং এই খাতে ট্যাকাটুকার পরিমাণ কী বিশাল!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- আমি আরো কম বুঝি। আমি বুঝি না তত্ত্বের ব্যাখ্যায় পার্থক্য থাকলে বা কার্যকর কৌশল নির্ধারণে মতের ভিন্নতা থাকলে কেন ভিন্ন ভিন্ন পার্টি গড়ে তুলতে হবে। পার্টির অভ্যন্তরে আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক-দ্বন্দ্ব এসবের স্কোপই যদি না থাকে তাহলে ধর্মগুরুদের ভক্তগোষ্ঠী আর পার্টির মধ্যে তফাতটা কোথায়!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে সরল বুদ্ধিতে তাকিয়ে মনে হয়েছে ২০০৮ এর রিসেশান পরবর্তী বিশ্বের রাজনৈতিক অর্থব্যবস্থা ১৯৭০ থেকে আলাদা। এমন কি ২০০০ থেকেও। এখন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট, সোশালিস্ট আর কমিউনিস্ট পার্টিগুলিকে এককাট্টা হয়ে জোটবদ্ধ হয়ে বিদ্যমান রাষ্ট্রের কাঠামোতে ঢুকে পড়তে হবে যতদ্রুত সম্ভব। বৈশ্বিক মাতবরদের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং সেইসূত্রে দ্বন্দ্বের নতুন মেরুকরণ প্রান্তিক রাষ্ট্রগুলিতে প্রতিরোধের আলাদা জায়গা তৈরি করেছে। যে পরিস্থিতির সুযোগ আজকে দক্ষিণ আমেরিকা নিচ্ছে। বৈশ্বিক মোড়লদের পরবর্তী বড় খুনোখুনি শুরু হলে এই প্রতিরোধের অবস্থানগুলিই একেকটা বৈপ্লবিক পাটাতনের চেহারা নিবে। যেখানে এই অবস্থানগুলি থাকবে না সেখানে ফ্যাসীবাদ সব কিছু দখল করবে। আজকে যারা আওয়ামী লীগকে ফ্যাসীবাদী বলছেন তাঁরা নিকট ভবিষ্যতের সেই ফ্যাসীবাদীদের রাস্তা করে দিচ্ছেন।
অজ্ঞাতবাস
সহমত! তবে একটা ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। বিজেপি'র সাবেক মিত্র (হয়তো ভবিষ্যত মিত্রও) তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে এসইউসিআই'র মিত্রতার মতো দোস্তালীর দরকার নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দলের ভেতরে নেতা-কর্মীদের চাপ, আর দলের বাইরে সমর্থকদের চাপ থাকার পরও বিএনপি কেন নির্বাচনে যেতে পারলো না সেটা সবাই জানেন। তো পরিস্থিতি যখন এমনই হয়ে গেলো যে, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারছে না, তখন বাম দলগুলোর সামনে সুযোগ ছিল ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার। এতে অনেকগুলো বিষয় প্রতিষ্ঠিত করা যেতঃ
১। আওয়ামী লীগের ওপর সাধারণ মানুষ যদি সত্যি সত্যি বিরক্ত থাকে বা পর্যায়ক্রমিকভাবে দুই দলের শাসনে সাধারণ মানুষ যদি সত্যি সত্যি বিরক্ত হয়ে থাকে তাহলে দেশে প্রথম বারের মতো বামেরা তথা তৃতীয় একটা শক্তি নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করতে পারতো।
২। নির্বাচনে হারলেও বামেরা প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় চলে আসতে পারতো। এতে দুটো লাভ হতো। (ক) তাতে পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদকে সংসদে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দেখতে হতো না। (খ) ওয়াক আউট, সংসদ বর্জন, খিস্তিখেউড়ের সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যেত।
৩। নির্বাচনে থার্ড হলেও সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারতো এই ভেবে যে এরাও দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহনের যোগ্যতা রাখে।
৪। সংসদীয় কমিটিগুলোতে থেকে কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ে দেশের জন্য কল্যানকর বড় বড় কিছু কাজ করে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারতো।
কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। তাদের তাত্ত্বিক ও বিশ্লেষকরা ভবিষ্যতে এটাকে 'ঐতিহাসিক ভুল' হিসাবে চিহ্নিত করবে কিনা জানি না, তবে এটা সত্যি সত্যি ঐতিহাসিক ভুল হয়ে গেল।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
১৯২০ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ভারতবর্ষে কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসে সব থেকে সহজ আর সব থেকে জরুরি কাজটাই ছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে বিএনপিজামাতের অনুপস্থিতিতে খুব সিরিয়াসলি নির্বাচনে অংশ নেওয়া। রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে ঢুকে পড়ার এর থেকে সহজ সুযোগ কমিউনিস্টদের সামনে আর কখনো এসেছে বলে জানিনা।
এখন তারা আওয়ামী লীগকে যা গালাগালি করছে তার কিছুই তাঁদের কাজে লাগছে না। নির্বাচনে গেলে পুরোটাই কাজে লাগতো।
কথা হচ্ছে শুধুমাত্র বিএনপি জামাতের বেদনায় আপ্লুত তাঁরা হলেন কেন। আমি যতদুর বুঝি সিপিবিতে সেই "কিছু কিছু প্রগতিশীলতা" আমল থেকেই বিএনপি ঘেঁষা একটা পকেট গড়ে উঠেছে। এরা কোনভাবে নেতৃত্বে বা নেতৃত্বের কাছাকাছি এসে দলীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। আমার বামপন্থী বন্ধুরা এইসব কথার কোন জবাব দিবে না। কারণ তারা এখনো "এইসব" কথাকে গায়েবী মনে করে।
অজ্ঞাতবাস
ত্রিদলীয় জোট-বাকশাল থেকে বের হবার পর থেকেই সিপিবিতে বিএনপিঘেঁষা নেতারা আস্তে আস্তে জায়গা করে নিয়েছে। খালকাটাতে যাওয়া, ১৯-দফাতে প্রগতিশীলতা দেখা থেকে আজকে নির্বাচন বর্জন পর্যন্ত সব তারই ধারাবাহিকতা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি নিশ্চিত বামপন্থী ব্লগার কিংবা রাজনীতি করা মানুষেরা লেখাটা পড়েছেন, এই নিয়ে কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। এর আগে-ও সচলে বাম দলগুলো’কে নিয়ে কিছু বলা হলে সেখানে বামপন্থী রাজনীতি করা মানুষেরা মন্তব্য করেছেন কিংবা ফেসবুকে পাল্টা যে উত্তর দেয়া হয়েছে সেটাকে এখানে লিংক হিসেবে দেওয়ার প্রবণতা-ও দেখেছি। এখন কি সেটা করাও বন্ধ হয়ে যাবে? আর একটা বিষয়, সচলায়তন’কে আওয়ামী লীগ পন্থী হিসেবে ট্যাগিং করা শুরু হয়ে গেছে বেশ আগেই, যারা করছেন তাদের ভেতর পূর্ব পরিচিত বামপন্থী মানুষ’কে দেখেছি। আমার মত আরও যারা এইসব দলবাজি বুঝতে চায়-না তারা কি বুঝেছেন জানি না, আমি ট্যাগিং এর মানে বুঝি নাই।
যে ক্রান্তিকালীন সময়ে আমরা দাঁড়িযে আছি তাতে এই পোস্টের উত্তর দেয়ার জন্য কোন বামপন্থী ব্লগার এগিয়ে এলেন-না!!! সমালোচনা আছে, সচলে হুদামিছা গালাগালি করা হয়। গালাগালি আমরা সামনা-সামনি করি, আড়ালে-ও করি, প্রথম দিকে আমার কাছে খারাপ লেগেছে, তারপর একটা সময় টের পেয়েছি সচলে’র সবকিছু পারসোনালি নেয়ার নেই, সবাই সবার কথা একদম সরাসরি বলেন। ধরে নিলাম, কথা পছন্দ না হলে হুদামিছা গালি দেয়া হবে এই পোস্টে-ও, তারপর-ও এমন কেউ আছেন বাংলা ব্লগাবর্তে যারা মনে করেন তাঁরা নিজের কাছে স্পষ্ট, একটা উত্তর দিয়ে যাবেন?
তাহলে কেন যাচ্ছেন না? আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচী আসলে কী? কেন জনগণ সব ছেড়ে আপনাদের সমর্থন করবেন? আওয়ামীলীগটাওয়ামীলীগ জাহান্নামে যাক, সমর্থকের প্রশ্নের জবাব দিন! ধরে নিন আমি এমনকি সমর্থনকারী-ও নই, জানতে চাই। ছাত্রাবস্থায়-ও এই প্রশ্নগুলো করেছি, তখন শুনেছি বাংলাদেশের শ্রমিক-শ্রেণী এই জাগছে বলে, জাগাতে হলে আমাদের মত ছেলে-মেয়েদের দরকার, কেন দরকার জানতে চাইলে সবগুলো দলের সমালোচনা শুনতে হয়েছে, মনে হয়েছে একই কথা যুগ যুগ ধরে এইভাবেই বলে যাওয়া হয়েছে। আপনারা সবসময় নিজেদের ভেতর নিজেরা থেকেছেন, বাইরের সবাই তাত্বিকভাবে সাবজেক্ট কিন্তু বিষয়টা কিন্তু আদ্যোপান্ত সাবজেক্টিভ নয় ।
কেউ নেই যিনি একটা উত্তর দেবেন, একটু শুনতাম, নিজেকে-ও একটু বুঝ দেওয়া যেতো। রাজনীতি করে বেহায়া হওয়ার ইচ্ছে নেই, এখানে রাজনীতি করতে-ও আসে-না কেউ। তাহলে কেন যাচ্ছেন না? দ্বৈপায়ন হ্রদে কী মতলব ডুবিয়ে রেখেছেন কমরেড? মতলব যদি না থাকে তাহলে সেইটাও স্পষ্ট করে বলে যান। ‘দ্বৈপায়ন হ্রদ’ পছন্দ হয়েছে।
দারুণ ব্লগ!
ওরা আসলে ব্লগ বা ফেইসবুককে রাজনৈতিক জবাবদিহিতার কোন জায়গা বলেই মনে করে না। বাংলাব্লগাবর্তের জন্মের শুরুতে তথাকথিত "প্রতিষ্ঠিত" লেখকদের মধ্যে যেমন ব্লগ বিষে উন্নাসিকতা দেখা গেছে সেই একই প্রবণতা দেখতে পাই ফেইসবুকের "বামপন্থী"দের মধ্যে। এরা নির্বাচিত লোকজন ছাড়া কারো প্রশ্নের কোন জবাব দেন না আর কথা বলার সময় পাঠকদেরকে সাধারণভাবে মূর্খ মনে করেন। এতে তাঁদের নিজেদের মূর্খতা ছাড়া কিছুই প্রমাণ হয় না। অথচ তারা তা নন। এটা জানি বলেই বেশি খারাপ লাগে।
অজ্ঞাতবাস
নির্বাচিত লোকজন ছাড়া সর্বসাধারণের প্রশ্নের জবাব দেবার মানসিকতা ও সাহস শুধু বামপন্থী কেন কোন পন্থীদেরই নেই। কথা বলার সময় সর্বসাধারণকে মূর্খ ঠাওড়ানোর প্রবণতাকে আমাদের দেশে জ্ঞানীলোকের লক্ষণ বলে বিবেচনা করা হয়।
আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে সব সময় মিডিয়া, জনগণ, ভোটার, কর্মীদের তোপের মুখে থাকতে হয়। তাই তাদের মধ্যে এক প্রকার রাজনৈতিক জবাবদিহীতার ব্যাপার আছে। বামেদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক জবাবদিহীতার ব্যাপার কখনোই ছিল না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা দাবি করলে খতম, নির্বাসন, শ্রমশিবির, বহিষ্কার, পদাবনতি ইত্যাদি ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা সব সময়ই ছিল, আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখাটা ভালো লেগেছে। পড়তে দেরি হলো। এই প্রশ্নগুলো খুব জরুরী।
বাম-বিকল্প দুরাশাই হয়ে আছে। ২০১২ সালে মোর্চা থেকে প্রথমে সিপিবি বের হয়ে আসে অন্যান্য শরিকদের আপত্তির মুখে। আপত্তিটা কি নিয়ে ছিল? আপত্তি ছিল এই, যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে আওয়ামী লীগ-বামপন্থীদের যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সিপিবি নেতৃবৃন্দের আলোচনার কারণে। অথচ যুগপৎ বলতে শুধু এই একটা ইস্যুতে স্বধীনভাবে গণসংযোগ এবং সভা-সমাবেশকে বোঝানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ফোনের কারণে এই তাৎক্ষণিক আলোচনাতে নাকি সিপিবি আওয়ামী লীগের পেটে ঢুকে গেছে। এই অভিযোগ এবং তারই অনুগামীতায় সিপিবি থাকলে আমরা মোর্চায় থাকবো না এই অবস্থানে চলে আসে বাসদ ছাড়া অন্যান্য বাম সংগঠন। সিপিবি বের হয়ে আসে। তাকে অনুসরণ করে বাসদও বের হয়ে আসে। এবং মজার বিষয় হলো বাসদের পরবর্তী বিভাজনের একটা কারণ হিসেবে এই বিষয়টিই আবার সামনে আসে অন্যান্য বিষয়ের সাথে।
এ বিষয়ে একটা অফ দ্যা রেকর্ড কথা বেশ চালু আছে। তা হলো- সিপিবি-বাসদ-ওয়ার্কার্স পার্টি বড় সংগঠন, প্রাচীন নেতৃত্ব আছে িযাদের জনতার একটা অংশ চেনে। তাদের সাথে যুথবদ্ধ রাজনীতি করতে গেলে নেতা হয়ে ওঠাটা তুলনামূলক কষ্টের। অন্তত মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখার জন্যে একটা যুৎসই পরিচয় পাওয়া হয়ে ওঠে না। এটা একজনের উদ্ধৃতি। আমি তাকে কোট করছি না।
কিন্তু তেল-গ্যাস আন্দোলন বা সাম্প্রতিক লং-মার্চে মঞ্চ থেকে বক্তব্য দেয়ার যে সংস্কৃতি দেখেছি তাতে একে উড়িয়ে দেয়াটাও যায় না। এটা একেবারে ব্যাক্তিগত অভিমত। শত বিভক্ত বামদের দেখলে আমার এটাই মনে হয়। তত্ত্ব বা আর সবকিছুকে একটা অজুহাত হিসেবেই আনা হয় বলে আমার ধারনা। আপনার মতো আমিও একটু আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম।
বামপন্থিরা নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপির অনুসরণে নয় এটা নিয়ে ধন্দ থাকার কথা না। আজ নির্বাচন হয়েছে, আদতে কি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এটা কিছু না। আলোচনায় আসেন, আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। আওয়ামী লীগ নিজেও এর সংকট জানে। বিএনপিকে জামাত ছাড়তে বাধ্য করাটা ছিল সবচেয়ে বেশি জরুরী। সেক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃবৃন্দের তুলনায় জামাতের দিকে নজর দেয়াটা দরকার বেশি। এই দরকার এখনো রয়েছে।
বিভিন্ন জেলায় জামাত নেতাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে আমরা আওয়ামী নেতাদের দেখেছি। এই সমীকরণে আদতে ব্যাবসা বা অর্থনৈতিক বিষয়টিই জড়িত। ২০০৮ সালে নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় যখন লীগের বিপুল জয় নিশ্চিত প্রায় তখন এফ রহমান হলের ছাত্রদলের নেতার (আদতে যে শিবির বলে সর্বমহলে পরিচিত ছিল) লীগরে ভাবী নেতার কাছ থেকৈ টাকা ধার নিয়ে চলে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ে। যার অনুসারিদের একাংশ পরে লীগের রাজনীতিই করেছে। পরে তাই বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের পরে ‘এরা ছাত্রলীগ নয় শিবির’ শুনে আমার কাছে মনে হয়েছিল হতেও পারে। খুবই সম্ভব। কিন্তু সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ এটি এড়াতে পারে না। এখন জোমাত নেতার লীগে যোগদানের ঘটনায় বিষ্মিত হই না। আতঙ্কিত হই কেবল। এটা সম্ভবত জামাতের নতুন স্ট্র্যাটেজি যে, লীগের অভ্যন্তরে ঢুকে তারা রাজনীতি চালিয়ে যাবে। এতে করে দলের ভিতর বিভাজন এবং প্রতিক্রিয়া দুইই বাড়িয়ে দেয়া যাবে। এটা আমার নিজস্ব অনুমান। এটা যদি সত্য হয় তাহলে সামনে ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।
বামরা গণবিচ্ছিন্ন। এটা সত্য। এই সময়ে তার সরব হয়ে ওঠাটা খুবই জরুরী। বাংলাদেশের স্বার্থেই। মুশকিল হলো, কিছুদিন আগের উত্তপ্ত হয়ে ওঠা গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে বড় আঙ্গিকে কিছু করা সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়নি না বলে করতে পারেনি বলাটা ভালো। সেই আন্দোলনে পার্টি হিসেবে সর্বোতভাবে না থাকলেও কর্মীবাহিনী নিয়ে ছিল। পার্টি হিসেবে না থাকতে পারার একটা বড় কারণ, আন্দোলনকে বিএনপিকরণ করা হতে পারে। গার্মেন্টস শিল্পে যতটা যা আন্দোলন হয়েছে তা বামদের কল্যাণেই। কিন্তু যে মাত্রার গণ আন্দোলনের সম্ভাবনা এই ক্ষেত্রের ছিল তা বামরা কাজে লাগাতে পারেনি ব্যানার রাজনীতির কালচারের কারণেই। এটা একটা চরম ব্যার্থতা। তবুও এই অংশেই বামরা অতটা জনবিচ্ছিন্ন নয় যতটা অন্যান্য ক্ষেত্রে।
বিএনপি চরম প্রতিক্রিয়ার অংশ হয়ে উঠেছে, আওয়ামী লীগের যে তুলনামূলক উদারনৈতিক অবস্থান তাও ক্রমশ খসে পড়ছে। আদতে আমরা জাতি হিসেবেই ক্রমাগত যেন প্রতিক্রিয়ার দিকে যাচ্ছি। যে কথা আগে মোল্লাদের মুখে শুনতাম এখন তা এমন পার্শ্ববর্তীজনের কাছ থেকে শুনছি যে ভাবতে অবাক লাগে। আমাদের মানুষের গড়পড়তা প্রতিক্রিয়ার মান অনেক বেড়েছে। যা ভীষণভাবে আতঙ্কিত করছে। বামপন্থিরা এখানে একটা রোল প্লে করতে পারে হয়তো। কিন্তু তাদের সে শক্তি নেই। সবচেয়ে বড় কথা নিজেদের উপরেই আস্থা নেই। দেশ যদিআগমীএক বা দু বছরে চরম কিছুর দিকে যায়, সেখানে বামপন্থিদেরও কম দায় থাকবে না। বিশেষত এই সময়ে তারা কোনো কিছু বিশ্বাসযোগ্যভাবে সামনে হাজির করতে না পারায়।
গণজাগরণ মঞ্চ চলাকালীন সময়ে, একেবারে শুরুর দিকে সম্ভবত তৃতীয় দিনে প্রস্তাব করেছিলাম টিম নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পিক আপ বা এরকম কিছুতে করে সাংস্কৃতিক উইং এবং রাজনৈতিক উইং নিয়ে ঘুরতে, অনেকটা মুক্তির গানের দলের মতো করে। প্রতি দলে নূন্যতম ২০ জন করে। গান বা পথ নাটক এর সাথে জামাত ও যুদ্ধাপরাধী বিরোধী প্রচার, বক্তব্য, অনেকটা পথসভার মতো করে। কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি, কিছূটা আত্মবিশ্বাসের অভাব কিছুটা শাহবাগের চলমান বাস্তবতার কারণে আর কিছুটা উন্মত্ততার কারণে। দীর্ঘসূত্রি কোনো কিছুই আমাদের পছন্দ না। আমরা সবকিছুর ফল আশা করি সাত তাড়াতাড়ি।
ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। বামপন্থিরা নির্বাচন বর্জন করেছে। বর্জন করার কারণ তারা বিভিন্ন মিডিয়ায় বলেছে। কিন্তু তার পরবর্তী কোনো কর্মসূচি তারা দেয়নি। তারা আছে শাঁখের করাতে। বর্জন করায় বিএনপির গন্ধ খুঁজছে, গেলে আওয়ামী দালাল। এই বিষয়টাও দূরে না, অন্য সংগঠনের সহযাত্রীদেরর কাছ থেকেই শুনতে হয়। কিন্তু পথটা কি হওয়া উচিত তার কোনো উত্তর নেই। থাকে না সাধারণত। যেমন আমার কাছেও নেই।
উত্তর দিতে নয়, কিছু কথা শেয়ার করতেই বলা। সামনে কেবল চরম প্রতিক্রিয়ার বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি। আর সেই পরিণতির জন্য বামপন্থি মেরুদণ্ডহীনতা, জনবিচ্ছিন্নতাও কম দায়ী না। এটাই শুধু জানি। এতা দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
স্বয়ম
এখনো সুযোগ আছে। সামরিক শাসন না এলে একাদশ সংসদ নির্বাচন খুব নিকট ভবিষ্যতেই হবে। এখনো ঐক্যের প্রয়োজন যদি এরা না বুঝে তাহলে ইতিহাসের বাঁশটা তাঁদের গাঁঢ়েই ঢুকবে।
অজ্ঞাতবাস
একেবারে সহমত। সামনে যেদিন আসছে, বাস্তব ঐক্য আর কর্মপরিকল্পনা ছাড়া, বামদের নয় শুধু প্রগতিশীলদেরই চরম দুর্দিন আসছে।
স্বয়ম
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
দারুণ আলোচনা।
কড়িকাঠুরে
এই ধরনের প্রশ্ন বহুদিন ধরেই মনে ছিল কিন্তু উত্তর জানা ছিলনা।
লেখা পরবর্তী আলোচনা অনেক কিছুই সহজ করে দিয়েছে।
যারা সবসময় তত্ত্ব বা পরিস্থিতি বিশ্লেষনে ব্যস্ত থাকেন তারাই দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে (মুক্তিযুদ্ধ থেকে অদ্যাবধি) তা বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি ?! সহজ বিষয় জটিলভাবে চিন্তা করার মধ্যেই তাদের মুল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিহিত, তাই জনগনের কাছেতো দূরে থাক কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকেও তারা দূরে সরে গেছেন।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
নতুন মন্তব্য করুন