মাঝে দুএকদিন আবহাওয়া আর ক্রিকেট বাদে গত দুই মাসের পুরোটাই একঘেয়ে বিরক্তিকর। মেঘলা আবহাওয়া, বিবৃতিভিত্তিক রাজনীতি, পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারা, বইমেলার পথে লেখক খুন, বিশ্বরাজনীতিতে গুমোট এই সবের কিছুই নতুন না। পরিবর্তনের কথা ভাবতেও ভুলে গেছি।
১.
বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আসতে নিমরাজি। নির্বাচন এপ্রিলে। নির্বাচন করতে গেলে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে। সেইক্ষেত্রে গত পৌনে তিনমাসের মানুষ পোড়ানো আন্দোলনের কী হবে? ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে হরতাল-অবরোধ অব্যাহত রেখে নির্বাচনের একটা সম্ভাবনার কথা অনেকের মাথায় আসছে। তাতে কি ভোট পাবার কোন সুবিধা হবে বিএনপি-জামাতের? হতেও পারে। ধরলাম ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ আর চট্টগ্রাম তিন সিটি কর্পোরেশনেই বিএনপি-জামাত প্রার্থী জিতে গেল। তাতে সাধারণ যুক্তিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপি-জামাতের আস্থা প্রমাণিত হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাই যদি থাকে তাহলে গত তিনমাস ধরে দেড়শ-দুশো মানুষ পুড়িয়ে মারার মানে কী?
২.
সচেতনভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট দেখছি আশির দশকের শেষার্ধ থেকে। সেই যখন জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা, গোলাম ফারুক সুরু, গোলাম নওশের প্রিন্স, গাজী আশরাফ লিপু, আসাদুজ্জামান মিশা, দীপু রায়চৌধুরীরা খেলতেন। তখন কোন আন্তর্জাতিক খেলায় দলীয় স্কোর একশো আর বিপক্ষের গোটা চারপাঁচ উইকেট নিতে পারলেই একধরণের সন্তুষ্টি পাওয়া যেতো। তারপর তিন দশক পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন টেস্ট খেলে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালও খেলে। পৃথিবীর কোন দলকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয় না। গত তিন দশকের ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমি আশাবাদী। এই ঘোরতর অন্ধকার সময়ে ক্রিকেটেই কিছুটা আলো দেখি।
৩.
দুই বছরও পার হয় নাই সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন বাথ পার্টি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ন্যাটোর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় আইএসকে গড়ে তোলা হয়েছে। তারা সিরিয়া-ইরাকের বিস্তৃত এলাকা দখল করে সেখানে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তার ভিডিও ইন্টারনেটে তুলে দিচ্ছে। ন্যাটোর মাতবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আইএসের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কুমিরের মতো কাঁদছে। এখন তারা আসাদের সাথে বসতে চায়। অথচ অতি নিকট অতীতেই এই বাশারকে সরাতে তারা বিমান হামলা পর্যন্ত করতে চেয়েছে। পারে নাই রাশিয়ার জন্য। তারপর শুরু হলো ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের হুমকি ধামকি। রাশিয়া বা চীন কারো সাথেই যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধ হবে না। অন্তত যতদিন স্ট্র্যাটেজিক মিসাইলগুলি আছে ততদিন। সেটা যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন খুব ভালোই বোঝে। সুতরাং জ্বালানীশক্তির উৎস আর বাজার দখলের যুদ্ধের পথই খোলা থাকে। এই অন্ধকারে মাঝে মধ্যে এক আধ ঝলক আলো দেখা যায় কুর্দিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধে। দেখা যায় বা দেখতে ভালো লাগে। কুর্দিস্তান স্বাধীন হোক। যুক্তরাষ্ট্র নিজের চরকায় তেল দিতে বাধ্য হোক। জোর করে হলেও এই প্রত্যাশাটুকু বাঁচিয়ে রাখি।
৪.
ডিপ পার্পলের চাইল্ড ইন টাইম জীবনে কতবার শুনেছি বলতে পারবো না। হাজারখানেকবার হলেও অবাক হবো না। ১৯৬৯ সালের অস্থির সময়ের গান। অস্থিরতা বেড়েছে। বিভৎসতা বেড়েছে। তাই গানটা আরো শুনি। শুনতে থাকি।
মন্তব্য
বিএনপি-জামাত জোটের কাছে তাদের আচরণের যৌক্তিক ব্যাখ্যা এবং ঠিক সদাচারণ আশা করাটা বোধহয় বোকামি হবে এখন।
শেষ পর্যন্ত হতাশাটাই স্থায়ী হতে দেখি দুনিয়াদারিতে। ছোট ছোট প্রেক্ষাপটের সামান্য আশাই যা মানুষকে বাঁচায় রাখতেছে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আপনার এই টুকরো টুকরো লেখা খুব ভালো লাগে সুমনদা। বলা ভালো অপেক্ষায় থাকি।
স্বয়ম
(০) পরিবর্তন আসবে কিনা জানি না। সবকিছু মনে হয় অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ মুখে পরিবর্তনের কথা বলে কিন্তু আসলে নিজেই চায় না। পরিবর্তনের স্বার্থে নিজেকে এক চুল বদলাতে আমরা রাজি না।
(১) বিএনপি এখন সম্ভবত নিজেও বুঝতেছে না ওদের কী করা উচিৎ। এতদিন হরতাল করে আসতেছে, প্রথম দিকে কেউ কেউ পাত্তা দিত দিত, ধীরে ধীরে লোকজন পাত্তা দেয়া কমাইল। এখন তো প্রায় ভুলেই গেছে, হরতালের দিল বরং রাস্তায় ভয়াবহ জ্যাম হয় (মানে প্রতিদিনই জ্যাম)। আবার তুলে যে নিবে হরতাল, কী যুক্তিতে তুলে নিবে? আবার হরতাল করার জন্য বা একটা আন্দোলনের যে আদর্শগত মোটিভেহশান লাগে সেটা ছিল একেবারেই নাই, এমনকি ভাড়াটে মিছিল করার লোকও দেখা যাচ্ছে না। শুধু রাতের অন্ধকারে পেট্রোল বোমা মারা সম্ভবত এই আন্দোলনের একমাত্র দৃশ্যমান কার্যক্রম।
(২) ক্রিকেট কেন, কোনো কিছু নিয়ে আশা করতেই এখন ভয় পাই। আশির দশকে ক্রিকেট ফলো করার মতো বোধশক্তি ছিল না। কিন্তু নিকট অতীতেও ক্রিকেটের গ্রাফ বেশ কয়েকবার গ্রাফ উর্ধ্বমুখি হয়েছে। কিন্ত কেন যেন সেইটা ঠিক রাখা যায় নাই। আশা করি এইবারের উর্ধ্বমুখি গ্রাফের গুরুমান এটাই হবে না।
(৩) লজ্জার সাথে স্বীকার করি, বিশ্ব রাজনীতির ব্যাপারে আমার ধারণা এবং পড়াশোনা বেশ কম। তারপরেও যতটুকু বুঝি এই ইস্লামিস্ট গ্রুপগুলোকে যে ভাবেই তৈরি হোক না কেন বা যার স্বার্থেই তৈরি করা হোক না কেন, এটা বিশ্বের জন্য খুব জন্য খুব ভালো কিছু হবে না।
(৪) গানের জন্যে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
১। নির্বাচনে আসার কারন বোধ হয় এইটা যে অবরোধ ও হরতাল নামক যে হাওয়াই বেলুনে বিএনপি চড়ে বসেছে, তা থেকে মোটামুটি সম্মানজনক ভাবে নেমে আসার এর চেয়ে ভাল কোন উপায় নেই। বিএনপি'র যারা সমর্থক, কিংবা আওয়ামী লীগের যারা অসমর্থক, তাদের মনে বোধ হয় এই প্রশ্নটার উদয় হবে না- "নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাই যদি থাকে তাহলে গত তিনমাস ধরে দেড়শ-দুশো মানুষ পুড়িয়ে মারার মানে কী?"
২। ক্রিকেটে উন্নতি হয়েছে, হচ্ছে, সাথে সাথে আশঙ্কাজনক একটা ব্যাপারও ঘটছে। আমরা বড্ড ক্রিকেটময় হয়ে পড়ছি। এর জন্য এখন সাত খুন মাপ, কিংবা সাত খুন জায়েজ।
৩। মজার একটা ব্যাপার- ইরাকে গণতন্ত্র দরকার, সিরিয়ায় গণতন্ত্র দরকার, বাংলাদেশেও(?) গণতন্ত্র দরকার, কিন্তু সৌদি আরবে কোন দরকার নাই।
১। আমার মনে হয় অন্তত কিছু লোকের মনে এই প্রশ্ন আসবে। পুড়ে মরা মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। মাগুরায় পেট্রোলবোমায় এই পর্যন্ত তিনজন মারা গেছে। হরতাল চলতে থাকলে এই সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
২। সাতখুন মাফ ব্যাপারটা বুঝি নাই।
৩। হ
অজ্ঞাতবাস
রুবেল? ওটা মাফও হয়নি, জায়েজও হয়নি।
****************************************
গত বছর ঠিক এই সময়টাতে জার্মানি বাশাররে উৎখাত করার জন্য অস্ত্র দিতেছিলো। সেদিন মাৎসিয়েরে দেখলাম বলতেছে সাড়ে ৬ শত জার্মান নাকি সিরিয়ায় আইসিসের পক্ষে জিহাদে গেছে। আরেকটা খবরে জানা গেছে এদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের বাবা মাদের অন্তত একজন নাস্তিক। কেমনে যে কী হয় সেইটা বোঝা মুশকিল।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
রাজনীতি দিয়া কিছুটা সহজ হিসাব করা যায়। তাতে গল্প পুরাটা না হইলেও বেশ কিছুটা ক্লিয়ার হয়। ডানপন্থী নাস্তিকদের সাথে আইএস/আলকায়দাদের কোন বাস্তব বিরোধ নাই। এই যে পেগিডারা ইউরোপের ইসলামীকরণের ভয়ে গইড়াইয়া কান্তেছে ওরা কারা আসলে? হয় ভোট দেয় না আর দিলে সিডিইউ/সিএসইউ/এএফডি/এনপিডিরে দেয়। এদের ম্যাণ্ডেট পাওয়া সরকারই সিরিয়া থিকা আসাদের মাইর খাইয়া পলানো আইএস গুলিরে সপরিবারে আদর কইরা আহ্লাদ কইরা রাজনৈতিক আশ্রয় দিছে। গত মাস খানেকে কাসেল থিকা যে কয়জন আইএস ধরা পড়ছে তার সবাই গত দুইতিন বছরে সিরিয়া থিকা আসা। ওদের সাথে ধরা পড়ছে ওদেরই আরো কিছু জার্মান সাগরেদ। নর্থসাউথের নামাজ ঘরের মডেলে ওরা ধর্মীয় ঘেঁটো বানাইছে আরব আর আফগান মসজিদগুলিরে। তুর্কি মসজিদেও নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু খবরে আসছে আরব আর আফগান মসজিদের কথা। এদের সমর্থকদের মধ্যে কয়েকজন নাস্তিক আছে যারা বাইরে গ্রিন পার্টি করে কিন্তু বিবেকের তাড়নায় আসাদ বিরোধি জিহাদ সমর্থন করে। এরা উত্তরাধুনিক। বলতে চায় "পশ্চিমা গণতন্ত্র" যেইখানে কোন "রাস্তা" দেখাইতেছে না, সেইখানে খিলাফত একটা সমাধান হইতারে। একেবারেই সামুর শুরুর যূগের ভূত(সম্ভবত ওয়ামি) টাইপ কথা। আমি এগুলিরে ডানপন্থী নাস্তিক বলি। খালি আল্লা নাই কইলেই লাইনে থাকা যায় না।
অজ্ঞাতবাস
বিলাতে আসার পর রাস্তায় রাস্তায় সিরিয়ার জন্য ভিক্ষারতদের দেখতাম। এখন সেটা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু লাইন ধরে জেহাদী যাচ্ছে। জার্মানের মতো বিশাল সংখ্যায় ব্রিটিশ জেহাদী হয়তো নাই, কিন্তু যাচ্ছে। এই এক দুজনের জন্য সারা ইউরোপের বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠির বিপদ বাড়ছে বলে মনেহয় আমার। নিজেরা যদি এর থেকে বের হবার রাস্তা খুজে বের না করে, তাইলে ইহুদি নাসারাদের দোষ দিয়া লাভ হবে না, এইটা মুসলমানদের এখনই বুঝতে হবে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
লেখা ও মন্তব্য উভয়ই উপভোগ করলাম।
"পশ্চিমা গণতন্ত্র" যেইখানে কোন "রাস্তা" দেখাইতেছে না, সেইখানে খিলাফত একটা সমাধান হইতারে।
এরকম কথা আমাদের বামাতিরাও বলে। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এখানে একটা প্রোগ্রামে মাদ্রাসায় টাকা না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
আজ দেখলাম এক বিখ্যাত বামাতি মাদ্রাসা কীভাবে ইংরেজ শাসনের প্রতিবাদ হিসেবে দাঁড়িয়েছিল, কীভাবে মাদ্রাসা এন্টি-স্টাবলিশমেন্ট শিক্ষা ব্যবস্থা সেটা নিয়ে মাঠ গরম করছেন!
া
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন