যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: সোম, ২৯/১০/২০০৭ - ৬:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফারুক ওয়াসীফের লেখাটা রীতিমতো টনিকের কাজ করলো। বসে গেলাম লিখতে। কিন্তু কি বলবো? যুদ্ধাপরাধ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার,ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে নতুন করে বলার কথা খুঁজতে হাঁফিয়ে উঠতে হয়। কারণ সমস্যা একেবারেই গোড়ায়। মৌলউপাদানে। সামধান-উদ্যোগের প্রথম ধাক্কায় খরচের খাতায় যাবার সম্ভাবনার কথাই মাথায় আগে আসে। আলোচনাগুলো শেষ পর্যন্ত সুবিধাজনক বৃত্তের মধ্যে ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে আলোচক একসময় পিনিকে চলে আসেন। তখন পুরনো কথা নতুন বাক্যে বলেন। আরো কিছু পাতা খরচ হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই যথেষ্ট। এই কথাটাও খুব পুরনো। আমরা অনেকই বহুদিন থেকে এটা বুঝি। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ভোটিয়ালীরা মাঝে মধ্যে বিরোধীদলীয় অবস্থান থেকে সেটা দেখানও। কিন্তু এই সদিচ্ছাটা মসনদের কাছাকাছি গিয়ে উবে যাচ্ছে কেন? সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ (এবং আওয়ামী পন্থী লেখককূল) যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী তুলতে তুলতে অজ্ঞান হয়ে যান। তারপর পানির ছিটায় তিড়িং করে জ্ঞান ফিরলে আবার শুরু করেন হালকায়ে জিকির। জিকির শেষে তবারক। তারপর বহু কেঁদে কেটে ক্ষমতায় বসেন। বসে নতুন করে চড়াও হন জনগনের উপরে। যুদ্ধাপরাধীদের সাথে রাজনৈতিক ভাগ-বাটোয়ারা চলে। নিজামী-মুজাহিদী-কামরুজ্জামানরা আরো টাইট হয়ে বসেন। গণযুদ্ধের স্মৃতিকে রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলায় তাঁরা অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে থাকেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ১৯৭১ সালের গণহত্যার ঘটনাটি জনগন কার্যত বিস্মৃত হয় নি। হয় নি বলেই আওয়ামী লীগ, ইমোশোন মেমরিতে খোঁচা দিয়ে নির্বাচনী বানিজ্য করতে পারে। তারপর ভোটের হিসেব নিকেশ করে হুজুরের গলায় মালা দেবার প্রতিটি ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচনী বানিজ্যের ইস্যু হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ইউটিলিটি কমতে থাকে।

কেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিজ হাতে রাজাকার,আল বদর, আল শামস্ দের আরো শক্তিশালী হয়ে গেড়ে বসতে দিচ্ছে? দিচ্ছে কারণ ১৯৭১ সালের গণযুদ্ধের রাজনৈতিক ম্যানিপুলেশন গণশত্রুদেরকেই রাজনৈতিক ক্ষমতায় বসিয়েছে। ইংরেজের তৈরী রাষ্ট্রযন্ত্রটি ঔপনিবেশিক অবকাঠামো নিয়েই থেকে গেছে। অবকাঠামোতে কোন উপাদান যুক্ত হবে এটা রাজনৈতিক শ্রেণীর (পলিটিক্যাল হেজিমনি অর্থে) উপর নির্ভর করে। রাজনৈতিক ক্ষমতা লুম্পেনদের হাত চলে যাওয়ায় তারা করণ কারক তৈরী করে নিয়েছে সুবিধামতো। আওয়ামী লীগ,বি.এন.পি.,জাপা,জামাত সবাই একত্রে একই মৌল উপাদানরের কারণে এই লুম্পেন চক্রের প্রতিনিধি, যাদের ক্ষমতা প্রয়োগের ইকুইপমেন্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্র। সুতরাং উপরের দলগুলো কিংবা সরাসরি সামরিক-আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্বের ক্ষমতায় বসায় বস্তুত তেমন ইতর বিশেষ নেই। তারা বিভিন্ন মডেলের বিভিন্ন কায়দার ডাকাত। এই ডাকাতদলে একবার অন্তর্ভুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসবার কোন পথ থাকে না।সুতরাং নির্বাচনী রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে মাটিতে গড়িয়ে কাঁদলেও আওয়ামী লীগ কোন অবস্থাতেই দলীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে জামাত কিংবা অন্যকোন ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীকে খতম করার কাজে ব্যবহার করবে না। করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা তার রাজনৈতিক আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাড়াবে।

ঠিক এই পয়েন্টটাই পরিস্কার হতে হবে যারা সত্যি সত্যি ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে খতম করতে চান। জনগন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। একই সঙ্গে সকল প্রকার ফ্যাসীবাদেরও অবসান চায়। রাষ্ট্র স্বয়ং ফ্যাসিস্ট। রাষ্ট্রের কোন অংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের প্রতিনিধিত্ব করছে না। অন্যদিকে ফ্যাসিস্টদের আক্রমণে জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে। ঠিক এই জায়গা থেকে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক শক্তিকে সংগঠিত হতে হবে। জনগণ প্রতিরোধ করছেও। কিন্তু সেগুলো স্বত:স্ফুর্ত। এই প্রতিরোধগুলোকে রাজনৈতিকভাবে কারা ধারণ করতে পারে এবং কিভাবে পারে এই ধাঁধাঁর জবাব প্রয়োজন।


মন্তব্য

সবুজ বাঘ এর ছবি

হ, তুমি ঠিকই কইছ। কিন্তু ফারুগ উয়াজিব কি ঠিক কতা কইছিল?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ভাই,আমি উয়াজিব না,আমি নফল। না পড়লে পাপ হইব না। পড়লে সোয়াব আছে। আর ফরজ কাম যা তা তো সুমন কইছে। আর 'উয়া জিব' হইলেন আপনে।

''''''''''''''''''''''''''''''
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

দেঁতো হাসি



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

পাগলা, এতদিন পর চোখে চোখে খেপলা যে, তোমার আড়ভাষার পেষণ এখনও একইরকম আছে।
''''''''''''''''''''''''''''''''
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

আড্ডাবাজ এর ছবি

সুমন,
চলেন একটা বাজি ধরি। আসছে নতুন সরকার কি মুজাহিদ আর নিজামীরে তাগো মন্ত্রীসভায় জায়গা দিবো? একটু খেয়াল কইরা?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মনে হয় না। তবে সিকিউরিটি দিবো নানারকম। জামাতের কোন বীগশট গ্রেফতার হইবো না।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

সৌরভ এর ছবি

জনগন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। একই সঙ্গে সকল প্রকার ফ্যাসীবাদেরও অবসান চায়। রাষ্ট্র স্বয়ং ফ্যাসিস্ট। রাষ্ট্রের কোন অংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের প্রতিনিধিত্ব করছে না। অন্যদিকে ফ্যাসিস্টদের আক্রমণে জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে।

বদ্দা, এই কথাটায় একশ ভাগ সহমত। জনগণ এই রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করছে না। সেটা আজকের কথা নয়, রাষ্ট্র গোড়া থেকেই জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
আমরা কী চাইছি, আসলেই সেটাকে গুরুত্ব দেবার মতো কোন অবস্থা এই রাষ্ট্রে তৈরি হবে কি না সন্দেহের ব্যাপার।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

বদ্দা, ভাল ল্যাখছেন। তয় কথা হইল যুক্তিকথা, নীতিকথা শুনতে শুনতে এখন টায়ার্ড হইয়া গেছি। আমার কথা একটাই- বাংলাদেশে কোন দুপেয়ে কুত্তার জায়গা হইব না, এরজন্য যা করা লাগে করতে রাজী আছি, দরকার পরলে নিজে বিষ খাইয়া ওই কুত্তাগো নিজের মংস খাওয়াইতেও রাজী।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

দ্রোহী এর ছবি

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কদ্দিনে সম্ভবপর হবে তা কখনোই বুঝে উঠতে পারি না। শুধুই স্বপ্ন দেখে যাই, একদিন হবেই হবে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জায়গামতোন ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

বন্ধনহীন এর ছবি

খুবই ভালো লেখেছেন।
"রাষ্ট্র স্বয়ং ফ্যাসিস্ট। রাষ্ট্রের কোন অংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের প্রতিনিধিত্ব করছে না। "
এই কথাটা যদি আমাদের দেশের মানুষগুলোকে বোঝানো যেত, তাহলে তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে আরো সচেতন হতে পারতো। আরো বড় সমস্যা আমরা রাস্ট্র ও দেশকে একসাথে গুলিয়ে ফেলি।

লেখাটা সামহো্য্যারে পোস্ট করলে অনেক পাঠকের লাভ হতো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।