১৯
সেনাবাহিনী ছেড়ে গোপন সশস্ত্র বিপ্লবে যোগ দেয়া লেঃ কর্নেল জিয়াউদ্দিনের সরকারি চাকুরিতে প্রত্যাবর্তন (অথবা প্রাইজ পোস্টিং) বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। বাহাত্তর থেকে চুয়াত্তরের কোন একসময় (পরস্পর বিরোধী তথ্য আছে) সেনাবাহিনী ছেড়ে জিয়াউদ্দিন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিতে যোগ দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে জেনারেল এরশাদের শাসন আমলে তিনি সাধারণ ক্ষমার সুযোগে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যানের মত গুরুত্বপূর্ন পদে নিযুক্তি পান (১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই পদে বহাল ছিলেন)। পরে তিনি চট্টগ্রাম প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল প্রতিষ্ঠা (পরস্পর বিরোধী তথ্য আছে) করে সেখানে প্রিন্সিপাল হিসাবে যোগ দেন। এখন চট্টগ্রামে সুখ-শান্তিতে বসবাস করছেন। একটি বিপ্লবী জীবনের মধুরেণ সমাপয়েৎ।
গণমাধ্যমের কল্যাণে তথাকথিত ‘ই-কমার্সের’ নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বড় মাত্রার প্রতারণার কথা ইতোমধ্যেই আমরা জানতে পেরেছি। স্বাধীনতার পর দেশি উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টায় অনেক সফল শিল্প প্রতিষ্ঠিত কিংবা বিকশিত হলেও, তথাকথিত ‘ই-কমার্স-শিল্পের উদ্যোক্তারা’ যাত্রার শুরুতেই এই মাত্রার গণ-প্রতারণার জন্য উদাহরণ হয়েই থাকবেন। মাসখানেক ধরে একটা অনলাইন পোর্টালে দুজন পলাতক ‘উদ্যোক্তা’, ইভ্যালির নিয়োজিত ‘সোস্যাল মিডিয়া সেলেব্রিটি’ এক ব্যারিস্টার, উপস্থাপক এবং কিছু কৈফিয়তদাতার ‘বয়ান’ শুনে এই সেক্টরের দুর্বৃত্তায়নের গভীরতা সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া গেল।
১৩
ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪। পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওআইসির (OIC) দ্বিতীয় সম্মেলন। অনুষ্ঠানে আগত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তুন আবদুল রাজাকের সাথে স্বাগতিক দেশ, অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর একান্তে বৈঠকের আয়োজন করা হল। সময়মত আবদুল রাজাক বৈঠকের নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হলেও জুলফিকার আলী ভুট্টোর দেখা নেই। পাগল-প্রায় প্রটোকল অফিসাররা ভুট্টোর অবস্থান নিশ্চিত করতে পারল না। অনেক চেষ্টা করেও ভুট্টোকে পাওয়া না গেলে আবদুল রাজাক ক্ষুব্ধ হন, এমনকি দেশে ফিরে যাবেন এমন কথাও বলেন।
সম্প্রতি ‘জিয়াউর রহমান ভারতকে গ্যাস বেচতেও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন, বলছেন একজন ভারতীয় কূটনীতিক’ শিরোনামে একটা খবর পড়লাম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে। গ্যাস সেক্টর নিয়ে জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে আরও কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল, সেদিকে কিছুটা আলোকপাত করা যাক।
৮
উনিশ’শ পঁচাত্তরের নভেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর একটি ছিল সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ক্ষমতায়ন। তাঁর দল গঠনের প্রাথমিক চিন্তাভাবনা নিয়ে তাঁরই শাসনকালের এক আমলা, প্রথমে নোয়াখালি এবং পরে চিটাগাঙের জেলাপ্রশাসক, সবেক সিএসপি অফিসার জিয়াউদ্দিন চৌধুরির পর্যবেক্ষণ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।
উর্দু ভাষায় প্রকাশিত পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘নওয়া-ঈ-ওয়াকতের’ ১৯৭৫ সালের ২রা ডিসেম্বর সংখ্যার শীর্ষ খবরে স্থান পায় বাংলাদেশের ‘বিপ্লব’। লিবিয়ায় আশ্রিত বঙ্গবন্ধুর খুনি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সাক্ষাতকারের বরাতে সেই খবরে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের দুই অংশকে আবার একত্রিকরণের’ উদ্দেশ্যে তারা (বিপ্লবীরা) একটা ‘বিপ্লব’ (১৫ই আগষ্ট) করেছে। সেই খবরে আরও বলা হয়, যদিও কিছু সংখ্যক ‘সাম্রাজ্যবাদি দালালের তৎপরতায়’ বিপ্লব আপাতত বিঘ্নিত হয়েছে (৩রা নভেম্বররের পাল্টা অভ্যুত্থান), কিন্তু ‘পাকিস্তানের দুই অংশের এক হওয়া’ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের পেছনের বেসামরিক কুশীলবদের নিয়ে বিশ্লেষণ তেমন চোখে পড়েনি। অবশ্য সামরিক কুশীলবদের কথা বললে শুধুমাত্র সরাসরি ঘাতকদের কথাই আসে, পেছনের বড় খেলোয়াড়দের কথা বিশ্লেষণে আসে না। দু’হাজার চৌদ্দ সালে অবমুক্ত করা মার্কিন গোপণীয় তারবার্তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফোরমেশন অভ ক্যু লিডারস’ শীর্ষক এক তারবার্তায় দু’জন বেসামরিক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। ঘাতক ফারুক-রশিদের ব্যাপারেও কিছু কৌতুহল-উদ্দীপক তথ্য পাওয়া যায়।
১
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পরপরই অন্য দুই বাহিনী প্রধানের সাথে তখনকার বিমান বাহিনীর প্রধান এ কে খন্দকার খুনিদের সামনে নতজানু হলেও বেশিদিন নিজের পদ ধরে রাখতে পারেননি।
ঢাকা থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার জানাচ্ছেন নভেম্বরের ৭ তারিখ দুপুর সোয়া বারোটায় মাহাবুব আলম চাষী তাকে ফোন করেন ‘নতুন স্টেটাস রিপোর্ট’ জানানোর জন্য। (তারবার্তা 1975DACCA05396_b )। অবশ্য পুরানো স্টেটাস রিপোর্ট ঠিক কোনটা সেটা বুঝা যায় না। তার পরেই দুপুর পৌনে একটায় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ডিএফআইয়ের (ডিফেন্স ফোর্সেস ইন্টালিজেন্স, বর্তমান ডিজিএফআই) তিন কর্মকর্তাকে তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে পাঠান।
১৭
কুলাউড়া-সিলেট রেলযাত্রায় অলৌকিক এক ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা পাই সাগোতোর ডায়েরিতে। ১৯২০ সালের জানুয়ারির এক শীতের রাত্রে সিলেট থেকে কুলাউড়া ফেরার পথে কোন এক স্টেশনে রেল থামে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে। ব্যাখ্যাতীত কোন কারণে তিনি নেমে আসেন নির্জন স্টেশনে।