নেগোসিয়্যাশন

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: বুধ, ২৭/০১/২০১০ - ৭:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘটনাটা ১৯১২ সালের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে থিওডোর রুজভেল্ট তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা প্রায় শেষ করে এনেছেন, এখন বের হয়েছেন নির্বাচনের আগের চুড়ান্ত সফরে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের জন্য তাঁর চমৎকার ছবি এবং নির্বাচনী ইশতেহার সম্বলিত একটা বুকলেট বিতরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ত্রিশ লক্ষের উপর বুকলেট ছাপানো হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন জায়গায়ও পাঠানোও হয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা আবিষ্কার করল বুকলে্টে রুজভেল্টের ছবির নীচে ছোট্ট একটা লাইন, ‘মোফেট স্টুডিও, শিকাগো’। আপাত নিরীহ ছোট্ট এই লাইনটার সম্ভাব্য পরিণাম বেশ জটিল। ছবির সত্ত্ব যেহেতু মোফেট সাহেবের এবং ছবি ছাপানোর আগে তাঁর অনুমতি যেহেতু নেয়া হয়নি, প্রতিটি ছবির পূনর্মুদ্রনের জন্য এখন কমপক্ষে ১ ডলার অথবা তারও বেশি দিতে হতে পারে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে কমপক্ষে ৩০ মিলিয়ন ডলারের একটা ধাক্কা (সময়টা খেয়াল করুন, ১৯১২ সাল)। একটা বিকল্প হতে পারে বুকলেট বিতরন না করা, কিন্তু তাতে নির্বাচনী প্রচারণায় ভীষণ বিরূপ প্রভাব পড়বে। আরেকটা বিকল্প হতে পারে ঘটনাটা চেপে রেখে বিতরন চালিয়ে যাওয়া। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে – শেষ মুহূর্তের স্ক্যান্ডেল, আদালত এবং যেকোন অশালীন অংকের জরিমানা।

নির্বাচনী কর্তাব্যাক্তিরা নিশ্চিত হল মোফেটের সাথে নেগোসিয়্যাশনই শেষ ভরসা। এরই মধ্যে তাদের শিকাগো অফিসের লোকজন আরও খারাপ খবর দিল। যদিও মোফেট তাঁর ফোটগ্রাফি-ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন, কিন্তু সারা জীবন মা-লক্ষ্মী তার প্রতি প্রসন্ন হননি, জীবনে আর্থিক সফলতা আসেনি। এখন তিনি রিটায়ারমেন্টের দ্বারপ্রান্তে এবং এখন তার ধ্যান-জ্ঞান একটাই – দ্রুত টাকা রোজগার। মাথায় হাত পড়ল কর্তাব্যাক্তিদের।

হতাশ কর্মকর্তারা ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জর্জ পার্কিন্সের শরণাপন্ন হলেন। জর্জ আবার জেপি মর্গ্যানের প্রাক্তন অংশীদার, এবং একজন ঝানু ব্যবসায়ী। ঠান্ডা মাথায় তিনি সব শুনলেন। সাথে সাথে তাঁর স্টেনোকে ডেকে মোফেটের কাছে একটা টেলেক্স করতে বললেন, ‘প্রিয় মোফেট, থিওডোর রুজভেল্টের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য আমরা কয়েক মিলিয়ন ব্রোসিয়্যার ছাপাবো। সেখানে ব্যাবহারের জন্য আমারা কয়েকজনের ছবি বিবেচনায় রেখেছি। তুমিও আছ এর মধ্যে। এটা যেকোন একজন ফোটগ্রাফারের জন্য একটা লাইফ-টাইম পাব্লিসিটির সুযোগ। আমরা তোমার ছবি ব্যবহার করলে তুমি সর্বোচ্চ কত ডলার দিতে পারবে তাড়াতাড়ি জানাও আমাদের। তুমি বলার পর আমি অন্যদের সাথে কথা বলব’।

মোফেট সাহেবের খুব বিনীত উত্তর আসল, ‘আমি আমার এই অবস্থার মধ্যেও ২৫০ ডলার দিতে পারব আপনাদেরকে। আমার ছবিটা দয়া করে ব্যবহার করলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব’। জর্জের মত লোক মোফেটকে পিষে ফেলে আরও বাড়াতে পারতেন। কিন্তু তিনি ২৫০ ডলারের রাজি হয়েছিলেন।

এথিক্সের মানদন্ডে এই ঘটনাটা হয়ত কখনই উত্তীর্ণ হতে পারবে না, কিন্তু এখানে আমরা দেখি একজন নির্মম নেগোসিয়্যাটর কীভাবে পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেয়।

১৯৯৬ তে এওএল (AOL) বনাম মাইক্রোসফট এবং নেটস্কেপের নেগোসিয়্যাশন থেকে শুরু করে অনেক উদাহরণই দেয়া যায়, কিন্তু আমি আমার সেই সিনিয়ার ব্যবসায়ী বন্ধুটির সাধারন একটা নেগোসিয়্যাশন ট্যাক্টিকের কথাই বলি। একবার তিনি এক কমার্সিয়্যাল বিল্ডিং এর প্রজেক্ট নিলেন যেখান থেকে ফ্ল্যাট/স্পেস বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে বিক্রী করা হবে। একটা প্রভাবশালী শিল্প সমিতির কাছে দু’টো ফ্লোরের প্রতি ইউনিট স্পেস বিক্রীর জন্য একটা মূল্য প্রস্তাব করলেন, যেটা আবার কিছুটা ভাল লোকেশনের আরেকটা কমার্শিয়্যাল বিল্ডিং এর ইউনিট প্রতি মূল্যের চাইতেও কিছুটা বেশি। শুনে বাঁকা হাসি দিলাম আমি, ‘ইভেন আপনারটা কন্সিডার কেন করবে বোঝান আমাকে’? হাসলেন তিনিও, ‘আমারটা তো প্যাকেজ অফার। তাঁরা যদি নেয়, তবে আমি এই বিশাল ভবনের এর নাম তাঁদের শিল্পের নামে দিয়ে দিব (যেমন ধরুন পাট শিল্প ভবন)। এই ব্র্যান্ডিং এর ব্যাপারটা তাদের জন্য অকল্পনীয়। ইট কস্টস মি নাথিং, কিন্তু তাদের তো মাথা খারাপ হয়ে গেছে’। তার কথায়, ‘ঝুলায়া দিসি’। আমি চমৎকৃত হলাম।

দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের বড় নেগোসিয়্যাশনের দৃষ্টান্তের মধ্যে সম্ভবত মিশর এবং ইসরায়েলের সেনাই নিয়ে অথবা তারও আগের মধ্যপ্রাচ্য পিস-ট্রিটি আমাকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এগুলি নিয়ে লিখতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে। তাছাড়া এগুলো নেগোসিয়্যাশনের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাল দৃষ্টান্ত হলেও এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, কিংবা এর আল্টিমেট সফলতা কখনই প্রশ্নাতীত নয়।

দুই দেশের মধ্যে নেগোসিয়্যাশনের আরেকটা মজার ব্যাপার বলি। ঘটনাটা শুনেছিলাম একজন সরকারী/করপোরেট নেগোসিয়েশন বিশেষজ্ঞের কাছে (২০০৬/৭ সালের দিকে তাঁর প্রতিদিনের ফি ছিল ৫,৫০০-৬,০০০ পাউন্ড স্টার্লিং)। রেফারেন্স দেয়া যাচ্ছে না, তাই গল্পের মতই বলি। স্নায়ু-যুদ্ধের সময়কার ঘটনা। ইউরোপের একটা দেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের আমলারা নিগোসিয়েশনের জন্য যেতেন রাশিয়ায় (তখনও ইউএসএসআর)। একসময় দেখা যাচ্ছিল নেগোসিয়্যাশন গেইম প্ল্যানের কিছু কিছু ইনফোরমেশন পেয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। কীভাবে ইনফোরমেশন লিক হচ্ছে বোঝার জন্য পুরো ব্যাপারটা রিভিউ করা হল।

দেখা গেল অতিথি হিসাবে মস্কোর এক্সক্লুসিভ ক্লাবে ইউরোপের আমলাদের আমন্ত্রণ থাকত। এক জুনিয়র আমলার স্বীকারোক্তি, ‘মস্কোর এক্সক্লুসিভ ক্লাব গুলি আসলেই এক্সক্লুসিভ। শুধু ভদকা না, বিশ্বের সব বিখ্যাত ব্র্যান্ডই আছে, ইউ নেম ইট।... আর মস্কোর হাই ক্লাসের মেয়েরা! ওহ!’
–‘আচ্ছা, আপনার পরিচয় হয়েছিল কারো সাথে?’
–‘হ্যাঁ। আই মেট সামওয়ান’।
-‘ছবিটবি আছে’।
-‘কাম অন। ছবির ব্যাপারে আমাদের দুজনেরই অনাগ্রহ ছিল। কেন বুঝতে পারছেন তো?’
-‘হ্যাঁ। তাতো বটেই। তাতো বটেই। আচ্ছা এই ছয়টা ছবি দেখুন তো, বাই এনি চান্স এদের মধ্যে কেউ কি?’
-‘মাই গড! ইনিই তো। আপনি ছবি পেলেন কোথায়’?
-‘ইন্টালিজেন্সের কাছ থেকে পাওয়া, তারা রিসেন্টলি এই ছবিগুলি কালেক্ট করেছে। ইনারা আবার সবাই কেজিবির কর্নেল লেভেলেরর অফিসার কিনা’।

সিংহ পূরুষরাও নাকি বিশেষ মুহূর্তে বাচ্চাদের মত হড়বড় করে কথা বলে। অবশ্য তারপর নাকি এসব জুনিয়র আমলাদের আচরণের উপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। যাক সেকথা।

নেগোসিয়্যাশনের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা, এবং প্রচুর হোম-ওয়ার্কের। তারপর আছে বিভিন্ন লেভেলের প্ল্যানিং।

খুবই সহজ একটা উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন জেমস ক্যামেরনের অ্যাভাটার (অথবা অবতার) সিনেমাটা যুক্তরাষ্ট্রে বক্স-অফিসের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে (দেখা হয়নি অবশ্য, অথবা আদৌ ভাল করছ কিনা জানিনা)। এর প্রধান চরিত্রের আদলে তৈরী প্লাস্টিকের একটা খেলনা (“ন্যাভি কিড”) যুক্তরাষ্ট্রের বাচ্চারা দেদারসে কিনছে এবং লাখে লাখে বিক্রী হচ্ছে, যার সত্ত্বও আবার ক্যামেরন সাহেবের নিজের। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটা খেলনা ১৫ ডলারে বিক্রী হচ্ছে।

সিনেমাটা আগামী মাসে যুক্তরাজ্যে রিলিজ হবে, ধারনা করা হচ্ছে ন্যাভি কিড সেখানেও প্রচুর পরিমানে বিক্রী হবে।

নৈষাদ টয়েস যুক্তরাজ্যে ন্যাভি কিডের সত্ত্ব কিনে নিয়েছে। নৈষাদ টয়েস আবার যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় টয় রিটেইলার হোশেন টয়েসের সাথে কথাবার্তা বলছে। এধরনের একটা প্রাথমিক বোঝাপড়া হয়েছে যে হোশেন টয়েস প্রায় ৩০০,০০০ ন্যাভি কিড কিনবে এবং সিনেমা রিলিজ করার পরবর্তী একমাস এক্সক্লুসিভ বিক্রীর অধিকার পাবে (তার মানে প্রথম মাসে আর কেউ বিক্রী করতে পারবে না)। একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে যুক্তরাজ্যের বাজারে ন্যাভি কিডের খুচরা মূল্য হবে ১০ পাউন্ড।

কাল নেগোসিয়েশনে বসবে দুই পক্ষের বিক্রয় ব্যবস্থাপক-দ্বয়।

এখন দেখি হোশেন টয়েস এ কী হচ্ছে? তারা সাধারনত ব্র্যান্ডেড ম্যাটেরিয়্যালের উপর ২৫% গ্রোস মার্জিন রাখে। সেভাবে দেখলে ন্যাভি কিডের ক্রয় মূল্য হওয়া উচিত ৭.৫ পাউন্ডের মত। হোশেন টয়েসের ধরনা লাইসেন্স ফি, বিজ্ঞাপন সব সহ নৈষাদ টয়েসের কস্ট ৫ পাউন্ড হবে হয়ত। এদিকে আবার হোশেন টয়েসের সিইও তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা চিন্তা করে এই ডিলটার জন্য বিশেষ ভাবে আগ্রহী। তাদের ধারনা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রানা টয়েস যদি ডিলটা পেয়ে যায়, সেটা তাদের জন্য হবে ভাল ফল বয়ে আনবে না। সিএফও সাহেব অনেক অঙ্ক কষে বলেছেন ২০% গ্রোস মার্জিন হলেও চলতে। (তার মানে কিছুটা প্রফিট মার্জিন থাকতে হলে ক্রয় মূল্য ৮ পাউন্ড হলে হবে।) এখন হোশেন টয়েসের নেগোসিয়েশনের সম্ভাব্য ওপেনিং প্রাইস এবং সবচেয়ে বেশি কতটা ছাড় দিতে পারবে তা যদি একটা স্কেলে বসাই তাহলে দাঁড়ায়ঃ

Hossain Toys

এখন দেখা যাক নৈষাদ টয়েসের অফিসে কী হচ্ছে। নৈষাদ টয়েসের সিইও বাংলাদেশ থেকে ছুটে এসেছেন, মাথা ভীষণ গরম। এমনিতে লাইসেন্স ফি বেশি দেয়া হয়েছে। তার উপর ওর্ডারের পরিমানও বেশি হয়ে গেছে। প্রথম তিন মাস গূরুত্বপূর্ণ – তারপর ক্রেজ কতটা থাকবে বলা যাচ্ছে না। এদিকে আরেক বড় ইউকে টয় রিটেইলার রানা টয়েসের সাথে কথা হয়েছে, তারা বলেছে দুই মাসের এক্সক্লুসিভিটি দিলে প্রতি ন্যাভি কিডের মূল্য ৪.৮০ পাউন্ড ধরে ৩০০,০০০ নেয়া যেতে পারে। এটাই তাদের শেষ কথা। কিন্তু নৈষাদ টয়েসের ব্রেক-ইভেন পইয়েন্টই হল ৪.৮৫ পাউন্ড। তার মানে হোশেন টয়েসের সাথে ডিলটা না হলে বেস্ট অল্টারনেটিভ অপশন হল রানা টয়েসের কাছে দুই মাসের এক্সক্লুসিভিটি দিয়ে ৪.৮৫ পাউন্ডে বিক্রী করা। এই দুই রিটেইলার ছাড়া এত বড় ডিল একক ভাবে করার কেউ নেই। এখন নৈষাদ টয়েসের নেগোসিয়েশনের সম্ভাব্য ওপেনিং প্রাইস এবং সবচেয়ে বেশি কতটা ছাড় দিতে পারবে তা যদি একটা স্কেলে বসাই তাহলে দাঁড়ায়ঃ

noishad Toys

আমি নিশ্চিত যে পাঠক, যিনি ধৈর্য ধরে এতটুকু পড়েছেন, ভাবছেন আরে এ কী প্রব্লেমে পড়লাম। আমি শুধু একটা সোজা উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করছি। স্কেল গুলির দিকে তাকান, গ্যাপ কিন্তু ৩ পাউন্ডের কাছাকাছি। দু’জনেই ছাড় দিতে প্রস্তুত। নেগোসিয়্যাশনের মাধ্যমে যে যার দিকে যতটা নিতে পারে, সেই লাভবান হবে। প্রতিটি খেলনাতে ০.৫ পাউন্ডও কিন্তু অনেক টাকা।

অন্যান্য আরও ব্যাপার আছে। এখানে আনলাম না। ধরুন, এদের সাথে ডিল না হলে নৈষাদ টয়েস ছোট ছোট রিটেইলারদের মাধ্যমে নন-এক্সক্লুসিভ ডিলের মাধ্যমে বিক্রী করতে পারে কিনা? পেমেন্ট টার্মস (অগ্রীম টাকা দিবে, নাকি প্রথমে ক্রেডিটে খেলনা দিবে), বিজ্ঞাপণ (নৈষাদ কী বিজ্ঞাপণে হোশেনের কথাও কিছু বলতে পার?), ভবিষ্যতের ওর্ডার কোয়ান্টিটি ইত্যাদি ইত্যাদি।

নেগোসিয়্যাশনের ব্যাপারটা মাথায় ঢুকে আছে হিমুর এই লেখা টা পড়ার পর থেকে। আমার জানা মতে দেশের বড় বড় এইসব ডিটেইলড লেভেলে নেগোসিয়্যাশন করেন আমাদের আমলারা। কতটা প্রস্তুতি নেন তাঁরা?

ছোট্ট একটা উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করি। সেখানে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতে গ্যাস রপ্তানীর জন্য একটা পাইপ লাইনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পরও চুক্তিটা হয়নি। খুব বেশি কিছু জানা যায় না নেগোসিয়্যাশনটা নিয়ে। শিমুল বলেছেন ডিল-ব্রেকিং ইস্যুটা ছিল বাংলাদেশ প্রয়োজনে মায়ানমার এই গ্যাস-পাইপ দিয়ে গ্যাস আমদানী করতে পারবে এই শর্ত ভারত মানতে চায়নি।

অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ব্যাপার আমি জানি না। এখানে রাজনৈতিক ব্যাপারটা যদি আমি পুরোপুরি বাদ দেই, স্রেফ শুধু অর্থনৈতিক দিকটা দেখি, একজন ঝানু নেগোসিয়্যাটর কিন্তু এই খেলাটা খেলবেই। বাংলাদেশকে কনসেশনে রাজি করানোর জন্য তাদের একটা গ্যাম্বিট দরকার। কিন্তু এই খেলাটা খেলার জন্য অনেক আমাদেরও অনেক প্রস্তুতি দরকার। যেমন একটা দল ট্যাকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করবে। ফাইন্যানশিয়্যাল বিভিন্ন বিকল্পের মূল্যায়ন করবে আরেকটা দল। আইনের ব্যাপারটা (১০০ পাতার কন্ট্রাক্টে এক্সক্লুসিভ নামের ছোট্ট একটা কথা সবকিছু বদলে দিতে পারে) দেখবে একদল। বিশেষ করে করপোরেটের সাথে আন্তর্জাতিক আইনী যুদ্ধে বাংলাদেশের জেতার ইতিহাস খুব ভাল না (শুধু তেল-গ্যাস সেক্টারে কথা যদি ধরি)। তারপর গেম-প্ল্যান তৈরী করা, কতটুকু ছাড় দেয়া যাবে? তার পরের অথরিটি কে? আরও অনেক অনেক ব্যাপার। (এমনকি একটা অফার দেয়ার পর কিভাবে আতকে উঠার অভিনয় করতে (ফ্লিঞ্চিং) হবে তারও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়)। সবশেষে দরকার ঝানু একজন নেগোসিয়্যাটরের।

কতটা প্রস্তুত আমাদের নেগোসিয়্যাটররা?

---------------------------
লেখাটা ইংরেজী নামে দেয়ার মোটেই ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু নেগোসিয়্যাশনের জুতসই কোন বাংলা পেলাম না। কোন পাঠক বললে এবং মডারেটররা দয়া করে পরিবর্তন করে দিলে বাধিত হব।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

১.
সচল পরিবারে স্বাগতম!

২.
ইন্টারেস্টিং।

নেগোসিয়েশনের বাংলাটা ভালো না, দর কষাকষি। এর নিশ্চয়ই আরো পোশাকি প্রতিশব্দ আছে, কিন্তু মাথায় খেলছে না।

মুলামুলি বিশেষজ্ঞ কোনো পরামর্শক কি আমাদের সরকারের ফ্লিটে নেই? প্রয়োজনে সরকার ফি দিয়ে নেগোসিয়েশন সার্ভিসও তো কিনতে পারে। কিন্তু এ কথা সর্বজনবিদিত যে আমাদের আমলারা দর কষাকষির টেবিলে বরাবর দুর্বল।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

হিমু এর ছবি

এই ডিলটা চাঙা করে আবারও কথা বলা উচিত ভারত বাংলাদেশের।

বার্মা থেকে একেবারে বিদ্যুৎ আমদানি করা গেলেও খারাপ হতো না। সীমান্তবর্তী কোনো এলাকায় যদি বার্মা গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়, তবে সেই গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে বার্মাতেই একটি প্ল্যান্ট বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পাইলন বসিয়ে সে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমি নিজেও গভীর ভাবে বিশ্বাস করি ডিলটা বাংলাদেশের জন্য খুব দরকার ছিল এবং বাংলাদেশ অনেক অ্যাডভান্টেজড পজিশনে ছিল। যদিও আমার জানামতে ভারত তাদের বিকল্পটাকে কাজে লাগাচ্ছে, তাই এখন হয়ত এই ডিলের ব্যাপারে তেমন ইন্টারেস্টেড হবে না।

তবে মায়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার স্যাপার|

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার স্যাপার|
-আতিউর
atiurrs from the gmail.com

নৈষাদ এর ছবি

আমি সচল হলাম আজ। একটা ব্যাক্তিগত ভূমিকা দেয়া দরকার।

কর্মস্থলে যখন থাকি, আমার অফিসিয়্যাল ইমেইল টেবিলের উপর সব সময়ের জন্য খোলা থাকে। যখন বাসায় থাকি, তখনও প্রায়ই খোলা থাকে। অতিরিক্ত সাবধানতা হিসাবে আবার মোবাইল ফোনে সিঙ্ক্রোনাইজ করা আছে, একটি কপি আমার মোবাইল ফোনে সব সময় চলে আসে। তারপরও কখনও কখনও সহকর্মীর কাছ থেকে টেলিফোনে ‘জেন্টল রিমাইন্ডার’ পাই। আমি লজ্জিত হলেও নিজেকে শোধরে নেই না, পালিয়ে থাকতে চাই। ক্যালাস শব্দটা দিয়ে এটা ব্যাখ্যা করা যাবে না, কারন ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত।

কিন্তু এটা ব্যাক্তিগত জীবনেও প্রভাব ফেলেছে মনেহয়। সচলায়তনে অতিথি সচল হওয়ার পরও শুধু অতিথি একাউন্টে লেখার পর রিমাইন্ডার পাই, ‘আপনিতো বোধহয় অতিথি সচল’। সচল প্রাপ্তিতেও খবর নেই। রিমাইন্ডার পাই, ‘মেইলটেইল চেক করেন তো?’

অফিসের রিমান্ডারে খুশি হই না। নিশ্চিত ভাবেই কোন ‘গিয়ানজ্যামে’ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় কেউ।

সচলের রিমাইন্ডারে যারপর নেই খুশি হই...। সবাই ভাল থাকুন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অভিনন্দন থাকলো।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অভিবাদন।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

অনন্ত [অতিথি] এর ছবি

আগ্রহ জাগানিয়া প্রবন্ধ। অনেক কিছুই জানলাম। আমাদের আমলারা এই বিষয়ে বেশ অপরিপক্ক। ধন্যবাদ এই প্রবন্ধের জন্য।

===অনন্ত===

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অভিনন্দন নৈষাদ! হাইবারনেশন থিয়োরী ভুল প্রমাণ করুন।

ন্যাভি কিডের মুলামুলিটাতে কী হলে কী হত (মানে কার কত লাভ হত) তার হিসেবটা দেখালে ভালো হত। মুলামুলিতে "উইন-উইন" নামে এখন যে মুলাটা বেশ প্রচলিত তার কথা থাকাটাও দরকার ছিল।

বার্মা থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে গ্যাস রপ্তানীতে আমার অবস্থান উলটা দিকে। ব্যক্তিগত কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় আমি এব্যাপারে পোস্টাবো না। আপনি এর সুফল নিয়ে পোস্ট দিলে আমার মতামত জানাবো।

মুলামুলি করে নিজের কোলে কীভাবে ঝোল টানা যায় তার দুইটা গল্প মনে পড়েছে। সময় করে পোস্টাবো।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
সেই পাইপ-লাইনের ব্যাপারে আমার যতটুক জানা আছে, এবং আমার দৃষ্টি-কোণ থেকে দরকারী মনে হয়েছে। কখনও সামনা-সামনি দেখা হলে এই ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলব। অপেক্ষায় রইলাম।

নিজে মুলামুলি অপছন্দ করি, কিন্তু মুলামুলির সাবজেক্টটা আমার ভীষণ পছন্দের। ভবিষ্যতে কিছু লিখব আশা রাখি।
ভাল থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে ।

ব্যবসার আসল মজা ন্যাগোসিয়েশনেই । যার কাছে যতো পরিমাণ তথ্য আছে -- আর টেবিলে বসে অভিনয় আর বাকচাতুর্যে অনেক ডিল মেক করা যায়।

--
বাংলাদেশের ন্যাগোসিয়েটররা বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের মতো হবার কথা -- শুরুর দিকে হালুম হুলুম । শেষে তাসের ঘরের মতো ঝরে পরে প্রতিরোধ।

--

ইমতিয়াজ মির্জা

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার সাথে একমত।

নিবিড় এর ছবি

হাতে সময় নেই দেখে খালি নীড়পাতা একবার স্ক্রল করে চলে যাব ভাবছিলাম কিন্তু হঠাৎ মনে হল আপনার নামটা বেজায় ছোট হয়ে গেছে তাই ছোট নামের জন্য অভিনন্দন রইল হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নৈষাদ এর ছবি

ছোট নামের অভিনন্দনের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ লেখা।
আর সচলত্বে অভিনন্দন। হাসি
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ জানবেন।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

দারুণ লাগলো লেখাটা। এ-নিয়ে আরও পড়তে চাই। সচলত্বে শুভেচ্ছা। হাসি

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মুলোমুলি কথাটা বোধ'য় আংরেজী 'বারগেইন' শব্দটা থেকে আসছে, নেগোসিয়েশন থেকে না। 'মৌখিক আলোচনা' একটা বিকল্প হতে পারে বটে, কিন্তু ঠিক মানানসই হচ্ছে না।

খুবই মারাত্মক এবং মজার বিষয় নিয়ে লিখেছেন। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মনের মত একটা বাংলা প্রতিশব্দ নিয়ে আমি এখনও চিন্তা করছি।
ভাল থাকুন।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অভিনন্দন, অনেক দেরি হয়ে গেল যদিও।

নেগোসিয়েটরদের অনেক ভয় পাই। লেখাটা পড়ে মজা লাগল। আরও লিখুন
এ বিষয়ে।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ, অনেক দেরি হয়ে গেল যদিও।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

বেশ লাগল। আর শুভেচ্ছা।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।