দ্বিবর্ণ জাতক ২

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৫/২০১২ - ৬:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দ্বিবর্ণ জাতক ১

সাগোতো রাজদানের ডায়েরিটা আমার হাতে আসে ২০০৪ সালে, চাচা মারা যাওয়ার পর। ডায়েরিটা এমনিতেই কৌতূহলোদ্দীপক, আমার আকর্ষণ আরও বেড়ে যায় চাচার রেখে যাওয়া নোটটা পড়ে।

চাচা যখন মারা যান আমি তখন ঢাকায়। আমার জন্য তাঁর রেখে যাওয়া বাক্সটা আমার কাছে পৌঁছায় তার মাস খানেক পর। বেশ কিছু বই এবং এন্টিকসের সাথে এই ডায়েরিটা ছিল, সাথে ইংরেজিতে লেখা একটা নোট। চাচা তাঁর নোটে অন্যের ডায়েরি পড়া নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য না হওয়ার পরও কেন তিনি পড়েছেন এবং কীভাবে ডায়েরিটা তার হাতে আসে সে ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সবশেষে একটা লাইন লিখেছেন, যেটার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘আমি আমার মত করে “পাজলের” সমাধান করেছি। তোমার নিজস্ব ব্যাখ্যার জন্য রেখে গেলাম’। তাহলে কি এই ডায়েরিতে কোন ‘পাজল’ আছে?

ডায়েরি মানে A4 আর লিগ্যাল সাইজ পেপারের মাঝামাঝি সাইজের চামড়ায় মোড়া ঢাউস সাইজের একটা খাতা। অনেক বছর ধরে কখনো তারিখ দিয়ে, কখনো তারিখ ছাড়া ছোট ছোট নোট আকারের প্রচুর লেখা। লেখার বিষয়ও বিচিত্র। সবচেয়ে বেশি সাহিত্য নিয়ে বিশ্লেষণ, বিশেষ করে কবিতা।

ইংরেজি সাহিত্যের কবিতার ব্যাপারে আমার জ্ঞান একেবারেই সীমিত, নয়ত রাজদিনের ব্যাপারে কোন প্যাটার্ন বের করা সম্ভব হত। ডায়েরির শেষের দিকে ইন্টারেস্টিং কিছু আধ্যাত্মিক কথাবার্তা আছে, যেটা রাজদিনের অন্যান্য বিশ্লেষণ এবং তার চরিত্রে সাথে ঠিক মিলে না, সেটা দিয়েই শুরু করি বরং।

ডায়েরির বেশ কয়েকটা পাতা জুড়ে আধ্যাত্মিক ধরনের বর্ণনা এবং বিশ্লেষণ আছে। মনে হল তার এই চিন্তাভাবনার সাথে তার শিলং সফরের একটা যোগসূত্র আছে । শিলং সফরের আগে কোন আধ্যাত্মিক নোট নেই।

একটা নোট থেকে বোঝা গেল তিনি সিলেট হয়ে নিজে ‘উইলিস জিপ’ চালিয়ে শিলং গিয়েছিলেন। এই শিলং সফরকে তিনি ‘রিমার্কেবল’ বলে বর্ণনা করেছেন। অপ্রাসঙ্গিকভাবে এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, ‘ইন শিলং, ইন দিস ব্রিডিং গ্রাউন্ড অভ ব্রিটিশ-রাজ! হোয়াট অ্যা কোইন্সিডেন্ট!’ (আনাড়ি অনুবাদে মানে দাড়াচ্ছে, ‘এই শিলঙে, এই ব্রিটিশ-রাজের আদর্শ সন্তান উৎপাদনের স্থানে! কী আশ্চর্য আকস্মিক যোগাযোগ!) । ‘লোনলি প্ল্যানেটের’ পুরানো একটা বইতে দেখলাম শিলংকে একসময় ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড অভ ব্রিটিশ-রাজ’ বলা হত। ব্যাপারটা চিন্তা করে কেমন যেন অস্বস্তি হল।

সেখান থেকে সাগোতো গোহাটির ‘কামরূপ কামাক্ষ্যার এক মন্দিরে’ গিয়েছিলেন। তার বর্ণনায় ‘তন্ত্র’ সাধনা নিয়ে প্রচুর নোট পেলাম, যেগুলো আমাকে তেমন আকর্ষণ করেনি, কিংবা অনেক কিছু বুঝতেও পারিনি। তিনি তন্ত্র সাধানার ‘সিক্রেট রিচুয়্যাল’ নিয়ে খুব আগ্রহী বলে মনে হল। ‘পঞ্চ-ম’কার’ এর শেষ দুই ‘ম’, মুদ্রা, বিশেষ করে মিথুন (Maithuna) নিয়ে প্রচুর বিশ্লেষণ পেলাম। একজায়গায় তিনি লিখেছেন, সিক্রেট রিচুয়্যালের ব্যাপারগুলোতে তিনি খুব আগ্রহ পেয়েছেন।

কামাক্ষ্যার মন্দিরের সেই সফরে তার উপর ‘দেবী ভর’ করেন (‘the Goddess casts Her spell on me’)। দেবীর বর্ণনায় তিনি এক জায়গায় লিখেন, the invincible, the original illusion caster, casts Her ultimate illusion on me. She must redeem. She must redeem. অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারে আমার আকৃষ্ট হবার কথা না, কিন্তু শেষের বাক্যে কিছুটা বিভ্রান্ত হলাম। ধর্মে বিশ্বাসী এমন কারো পক্ষে এই কথা বলা সম্ভব না। She must redeem - বাক্যের অনুবাদ কী হবে? ‘তাঁকে অবশ্যই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে’। দেবতাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে? এখানে একটা খটকা থেকে গেল।

এই ‘দেবী-ভর’ করার সাথে তন্ত্র সাধনার কোন যোগ আছে কি? সম্ভাব্য একটা ব্যাখ্যার খোঁজে আর্কিওলজির পরিচিত এক অধ্যাপককে ফোন করলাম, যাঁর আবার ‘কম্পারেটিভ রিলিজিওনেও’ আগ্রহ আছে। তিনি ব্যাখ্যা দিলেন ‘সীমিত অর্থে’ কামাক্ষ্যা মন্দিরের ‘দেবী’ আসলে ‘কালীরই’ একটা রূপ। তিনি আরও কনফিউশন তৈরী করলেন, the original illusion caster কথাটা ‘আদি মায়ার’ সম্ভাব্য ইংরেজি অনুবাদ, যেটা দেবী দূর্গাকে বুঝাচ্ছে। the invincible ও দুর্গাকে ইঙ্গিত করে। কনফিউশন আরও বাড়ল।

১০

একটা সুযোগে বাগানে গিয়ে গ্র্যাহাম, দুর্গা এবং সাগোতোর সম্বন্ধে যতটুকু সম্ভব খবর বের করতে চেষ্টা করলাম। বাগানে সেই সময়ে কাজ করত এমন কেউ আর বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন, তার সেই সময় নিতান্তই শিশু বা কিশোর ছিলেন। তারপরও প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা জানা গেল।

ঝাকড়া কালো চুলের ‘সাগোতো সাহেব’ অত্যন্ত সুদর্শণ ছিলেন (বর্ণনায় বলা হল ‘রাজপূত্রের’ মত)। অন্যান্য ‘সাহেবদের’ মত শ্রমিকদের ব্যাপারে কঠোর হলেও তার বাংলোয় কাজ করত এমন শ্রমিকরা তার ব্যাপারে খুবই সন্তুষ্ট ছিল (যেটা সাধারনত হয়না)। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ধর্মের সাথে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। তিনি ক্লাব-গোয়ার টাইপ না। শুধু মাত্র অফিসিয়্যাল পার্টি ছাড়া ক্লাবে যেতেন না (যেটা তখনকার দিনে অভাবনীয় ছিল)। তারমানে তিনি নিঃসঙ্গতাকে উপভোগ করতেন। একলা থাকলেও কখনও চা বাগানের কোন নারী কিংবা পুরুষের সাথে কোন সম্পর্ক নিয়ে কেউ কোন দিন কিছু বলতে পারেনি।

গ্র্যাহামের কোন বিশেষত্ব নেই। অন্যান্য ব্রিটিশ প্ল্যান্টার্সের মতই বিশেষত্বহীন মাচো এবং মোচো টাইপ এক লোক। দুর্গা, দেবী দুর্গার মত সুন্দরী এবং ভাল ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন, এবং মাঝে মধ্যে মন্দিরে পুজো দিতেন।

এধরণের বর্ণনায় ব্যাক্তিগত পক্ষপাত এড়ানো প্রায় অসম্ভব। দুর্গা যেহেতু ধার্মিক ছিলেন এবং ইয়োরোপিয়্যান না, সে ক্ষেত্রে এক ধরণের পক্ষপাত কাজ করতে পারেই। সাগোতোর সাথে গ্র্যাহামের সম্পর্কের ব্যাপারে তেমন কিছু জানা গেল না। শুধু জানাগেল সাগোতো সাহেবকে অন্য সাহেবরা ‘ডরাইত’। কেন, তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া গেল না। দুর্গার সাথে সাগোতোর কোন বিশেষ সম্পর্কের ব্যাপারেও কিছু জানা গেল না।

১১

আগেই জানা ছিল সাগোতোর মা ভারতীয় এবং বাবা ইয়োরোপিয়ান ছিলেন। ডায়েরিতে অনেকবার ঘুরেফিরে সাগোতো রাজদান তার ‘বাইরেসিয়্যাল আইডেন্টিটি’ (biracial identity) কথা লিখেছেন। বেশ কয়টা নোটের হেডিং দিয়েছেন ‘লিভিং উইথ বাইরেসিয়্যাল আইডেন্টিটি’। স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট ভাবে বোঝা গেল তিনি তার এই বাইরেসিয়্যাল আইডেন্টিটি নিয়ে বেশ কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন অনেকবার। একটা নোটে বলেছেন, এটা কখনো কখনো ‘আনবিয়ারেবল’ হয়ে উঠত।

বাইরেসিয়্যাল আইডেন্টিটিতে তার ভারতীয় মায়ের কথা আসে বার বার, কিন্তু ব্রিটিশ বাবার ব্যাপারে তেমন কিছু জানা যায়না। আবার তিনি সবসময়ই ‘হার্ডকোর’ ব্রিটিশ ছিলেন, এশিয়ানদের সাথে কখনোই নিজেকে আইডেন্টিফাই করেননি। একধরণের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতেন কি তিনি? যেটা তার মধ্যে কোন জটিলতা তৈরি করেছিল?

চাচা বেঁচে থাকতে ভারতীয় নাম সত্ত্বেয় সাগোতো কি নিজেকে বৃটিশ হিসাবে আইডেন্টিফাই করে এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁর উত্তর ছিল, ‘হি ওয়াজ মোর বৃটিশ দ্যান দ্যা বৃটিশ, অ্যাপারেন্টলি’। জোর দিয়ে ‘অ্যাপারেন্টলি’ বলায় পুরো ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর হয়ে যায়।

একটা ত্রিভুজের মাধ্যমে সাংকেতিক ভাষায় একাধিক নোটে সাগোতো তিনি কিছু একটা বুঝাতে চেয়েছেন যেটা আমি বুঝতে পারিনি।

১২

নিজের মায়ের ব্যাপারে গভীর মমতা ছিল সাগোতোর। মা’কে নিয়ে শৈশব এবং কৈশোরের অনেক মধুর স্মৃতি উঠে এসেছে ডায়েরির বিভিন্ন নোটে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও সম্পর্কের কোন অবনতি ঘটেনি। বৃটেনে পড়াশোনা করার সময়ও মায়ের সাহচর্য বঞ্চিত হন সেটাও উঠে এসেছে।

মায়ের ‘আত্মহত্যা’ পরবর্তি অবস্থা তার জন্য গভীর বিষাদময় ছিল। তার ভাষায় মায়ের এই মৃত্যু ছিল অনিবার্য। কেন?

১৩

অসংখ্য সাহিত্য বিষয়ক বিশ্লেষণের মধ্যে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে (এবং বুঝতে পেরেছি) এমন দুটো উদাহরণ দেয়া যায়। প্রথমটা কিপলিঙের (Rudyard Kipling) ‘মান্দালয়’ (Mandalay) কবিতা নিয়ে। তিনি এই ছোট বিশ্লেষণ নোটে কিপলিঙকে সম্বোধন করেছেন ‘দিস বাগার’ বলে। তার কথা অনুযায়ী এই কবিতা লেখার সময়ে এই ‘বাগারের’ মান্দালয় (বার্মা) সম্পর্কে, বিশেষ করে সেখানের মেয়েদের, তাদের পরিধেয় কিংবা বার্মার সংস্কৃতি সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিল না। বার্মার মেয়েরা পেটিকোট, কিংবা হলুদ কাপড় পরেনা। বৌদ্ধকে প্রার্থনা করে কীভাবে সেটাও সে জানে না। কি পরিহাস! (what a joke!) কিপলিঙকে ‘দিস বাগার’ নামের অশালীন শব্দে সম্বোধন করায় বুঝা যায় তিনি কিপলিঙের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ছিলেন, অথবা তার কোন স্পর্শকাতর স্থানে কিপলিঙ আঘাত করেছেন। এও বুঝা যায়, তিনি বার্মার ব্যাপারে ভাল জানতেন।

আরেকজন কবি, যার নামই কখনো শুনিনাই, তার ব্যাপারে সাগোতোর মুগ্ধতা এবং বিশ্লেষণ দেখলাম। কবির নাম Valentine Ackland । তিনি তার ‘বদলে যাওয়া দর্শণ’ নিয়ে ভাল ভাল কথা লিখেছেন। তার চারিত্রিক এবং কবিতায় দ্বৈততা (Dualities) ধারণা নিয়ে নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। Valentine Ackland এর একটা কবিতা ‘The Lonely Woman’ নিয়ে তিনি লিখেছেন, at first she seems to endorse the stereotype of the unhappy spinster or widow, and then there is the subtle affirmation of women’s independence and of the quietude which can belong to unattached… দ্বৈততার ব্যাপারে মুগ্ধতা। Ackland এর লেসবিয়ান সম্পর্কের ব্যাপারটাকে প্রমোট করার ব্যাপারেও তিনি মুগ্ধ ছিলেন।

আরেকটা ছোট উদাহরণ দেয়া যাক। কোন একটা কাজ বিষয়ক একাধিক মিটিঙের পর তিনি তার নৈরাশ্য নিয়ে ছোট একটা নোটে তিন লাইনের একটা শ্লেষাত্মক কবিতার লাইন লিখেনঃ

A hundred indecisions,
And for a hundred visions and revisions
Before the taking of a toast and tea

একজন বৃটিশ কলিগকে লাইনটা বললে তিনি বলেন এটা T.S. Eliot এর ‘The Love Song of J. Alfred Prufrock’ নামের কবিতা থেকে নেয়া। কবিতাটা পড়ে দেখলাম। এলিয়টের প্রুফ্রকের নৈরাশ্যে যৌনতা-সংশ্লিষ্ট হতাশা, বুড়িয়ে যাওয়া এবং নিঃসঙ্গতার অংশীদারিত্ব আছে।

১৪

নিজস্ব কর্মপরিধির বাইরে চা শিল্পের বিভিন্ন বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান আমাকে অবাক করে। একাউন্টেন্ট হয়েও মাটির রাসায়নিক উপাদান কিংবা কীটনাশক (pesticides) বিষয়ে তার রাসায়নিক বিশ্লেষণের গভীরতা এই বিষয়ের যে কোন বিশেষজ্ঞের জন্য ঈর্ষণীয় হতে পারে। তার লেখায় দেখতে পাই আমার কৈশোরের অতি পরিচিত ‘ডায়ালড্রিন’ (Dieldrin) নামক কীটনাশক তখন মাত্র J. Hyman & Co, Denver কোম্পানি তৈরী করেছে। সেটার ব্যাপক রাসায়নিক বিশ্লেষণ দেখতে পাই। ডিডিটি কিংবা কার্বলিক এসিডেরও ব্যবহার নিয়ে নোট পাই।

রাসায়নিক সার নিয়ে আলোচনায় ছোট একটা খটকা লাগে। আমোনিয়াম সালফেট নামক রাসায়নিক সার দিয়ে যে হাতবোমা বানানো যায়, অন্যান্য কী উপাদান লাগে সে ব্যাপারেও একটা নোট পেলাম। কিংবা শটগানের গুলির (শটগান শেল) পেছনে বন্দুকের প্রাইমার আঘাত করলে উৎপন্ন গ্যাসের চাপ কত হয় তার বিশ্লেষণ, কিংবা ডাবল বি গুলি কতদূরে যাবার পর মধ্যাকর্ষণের টানে মাটির দিকে নেমে আসতে থাকে।

১৫

নিজের মা ছাড়া সাগোতোর জীবনে কোন নারীর কোন ভুমিকা আছে কিনা সেটাও বিশ্লেষণের চেষ্টা করলাম। তিনজন মেয়ের নাম ঘুরেফিরে এসেছে, এবং এদের সবাইকেই সাগোতো পছন্দ করত। এদের একজন মাইন (Myine - ধারণা করি এর উচ্চারণ মাইন), দ্বিতীয়জন সিবোন ফ্লিন (Siobhan Flinn) এবং শেষের জন জুলিয়েট (Juliet)।

মাইন, ধারনা করি বার্মার কোন মেয়ে। সিবোন ফ্লিন, নামে মনে হয় আইরিশ। জুলিয়েট ছিল চিটাগাঙে। জুলিয়েট আসলে যে কোন দেশি হতে পারে। এদের ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে যথাসময়ে।

এখানে একটা প্রাসঙ্গিক এবং অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে রাখি। প্রাসঙ্গিক তথ্যটা হল, এই তিনজন রমণীর মধ্যে দুজন ‘আত্মহত্যা’ করে। অপ্রাসঙ্গিক তথ্যটা হল, ডায়েরিতে বিভিন্ন নোটে দেখা যাচ্ছে সাগোতো মাঝে মাঝেই চিটাগাঙে ‘সিক্রেট এনকাউন্টারে’ যেতেন। কী সেই ‘সিক্রেট এনকাউন্টারে’ সে ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ তো দূরে থাক, সামান্য কোন তথ্যও নেই ডায়েরিতে।

১৬

আচ্ছা, সাগোতোর আশেপাশে রমণীরা মনে হচ্ছে না খুব বেশি আত্মহত্যা প্রবণ? আপাতত ডায়েরির বর্ণনা থাক, পরে ফিরে আসা যাবে। এইটুকুই তথ্যের ভিত্তিতেই একটা ব্যাখ্যা দাঁড়া করানোর চেষ্টা করা যাক। শুরু করি ‘বিভ্রান্তিকর’ ব্যাপারগুলো দিয়ে।

বৃটিশরাজের একজন সদস্য হয়ে সাগোতোর শিলং যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক আছে। ভারতের পাহাড়ী শহরগুলি বৃটিশরাজের কর্মকর্তাদের ‘সামার রিট্রিট’ ছিল। কিন্তু ধর্ম সম্বন্ধে কোন আগ্রহই নেই এমন একজন কেন প্রায় একশ কিলোমিটার দূরের কামাক্ষ্যা মন্দিরে যাবে? বেড়ানোর জন্য? যুক্তিসঙ্গত মনে হয়না।

একটা প্রাথমিক অনুমানের উপর ভিত্তি করে একটা সরল সমীকরণ দাঁড় করানো যায়। আর সেটা হল, সাগোতোর শিলং ট্রিপে গ্র্যাহামের স্ত্রী দুর্গাও ছিল (গ্র্যাহাম হয়ত ছিল, কিংবা হয়ত ছিলনা)।

ধার্মিক দুর্গার পীড়াপীড়িতে সাগোতো কামাক্ষ্যা মন্দিরে যেতে রাজি হয়। যে কোইন্সিডেন্টের কথা বলা হচ্ছে, ধারণা করি সেই সফরে দুর্গার সাথে সাগোতোর মন-দৈহিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড’ সেটার রূপকার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘রিমার্কেবল জার্নির’ ব্যাপারটাও এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

যে ‘দেবী ভর’ করার কথা বলা হচ্ছে সেটা আসলে হচ্ছে গ্র্যাহামের স্ত্রী দুর্গার সম্মোহন। কিন্তু সেক্ষেত্রে ‘তাঁকে অবশ্যই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে’ এই পাজলটার সমাধান হচ্ছে না।

সাগোতোর ‘পছন্দের’ মহিলাদের ভবিতব্য কেন আত্মহত্যা? এগুলি কী খুন? সাগোতো কি সিরিয়্যাল কিলার?

তার ভাষায় মায়ের এই মৃত্যু ছিল অনিবার্য, দুর্গাকে ‘প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে’ – কেন?

চিটাগাঙের সিক্রেট এনকাউন্টার গুলোই বা কী ছিল? সাগোতো কি বিকৃত যৌন আচরণে অভ্যস্ত কোন ব্যাক্তি ছিলেন? অনেক গুলো পাজল রয়ে যাচ্ছে।

(চলবে)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আগ্রহোদ্দীপক।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

কাজি মামুন এর ছবি

কৌতূহলোদ্দীপক! ধন্যবাদ লেখককে। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রথমপর্ব লিখেছিলেন গেলোবছর আগস্ট মাসে।
পরের পর্ব কবে হবে, বলুন তো?

দ্রুত, এবং দ্রুত চাই। প্লিজ হাসি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নৈষাদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

পরের পর্ব আগামী আগস্টের মধ্যেই, দেবীর ইচ্ছা হয় যদি চোখ টিপি

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পাঁচতারা

রাজদিন আর রাজদান দুই বানানই দেখা যাচ্ছে।

‘কন্টেম্পরারি রিলিজিওনেও’ হয়ত কম্পারেটিভ রিলিজিওন হবে। হয়ত।

'মাচো এবং মোচো টাইপ' এক্সপ্রেশনটায় মজা পাইলাম।

এলিয়টের প্রুফ্রকের নৈরাশ্যে যৌনতা-সংশ্লিষ্ট হতাশা, বুড়িয়ে যাওয়া এবং নিঃসঙ্গতার অংশীদারিত্ব আছে। সুতরাং পুরাপুরি অপ্রাসঙ্গিক বলা যাইতেছে না।

পরের পার্ট কুইকলি ছাড়েন। ভাল লেখা পড়তে পাই না আজকাল তেমন।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

রাজদিন বানান ঠিক করে দিচ্ছি।

কম্পারেটিভ রিলিজিওন – অবশ্যই। যখন লিখছিলাম, মাথায় যে অধ্যাপকের কথা ছিল, তার কন্টেম্পরারি আর কারা আছেন এই চিন্তা করতে করতে কম্পারেটিভ কন্টেম্পরারি হয়ে গেছে। এলিয়টের ব্যাপারে আপনার ব্যাখ্যা ঠিক আছে।

অনিন্দ্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আড্ডা মিস হয় মন খারাপ

বন্দনা এর ছবি

পরের পর্ব চাই যত দ্রুত সম্ভব।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ। দেখি।

Jui Mony Das এর ছবি

চিন্তার খোরাক আছে, পড়তে ভাল লাগছে..... ঝরঝরে লেখা.......

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

Chhanda  এর ছবি

ডায়রিটা আপনার চাচার হাতে আসল কি করে? ডায়রিটা কি আপনার কাছে আছে? দেখতে এবং পড়তে ইচ্ছে করছে

নৈষাদ এর ছবি

সমস্যা। দেখি কী করা যায়। মন খারাপ

শান্ত এর ছবি

প্রায় এক বছরের ব্যবধান। আরোও এক বছরের আগে পরের পর্ব চাই।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

নৈষাদ এর ছবি

এক বছরের আগেই চেষ্টা করব। মন খারাপ

স্যাম এর ছবি

চলুক

নৈষাদ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই লেখাটি বা উপন্যাসটি কি আমি শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারবো? নাকি এই ব্যাপারে আমার পুত্রকে 'ওসিয়ত' করে যেতে হবে!

পয়েন্টগুলো কেন যে ইলাবোরেট করা হলো না, বুঝলাম না। তাতে একটা উপন্যাস লেখা হলে কী ক্ষতি হতো?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

নামায় ফেলব।

পয়েন্ট গুলো এমনিতেই মনে হচ্ছিল বড় হয়ে যাচ্ছে। মন খারাপ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য লিংক আছে দেখে রাখতে হচ্ছিল।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

হাততালি

নৈষাদ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ব্রুনো এর ছবি

দারুণ।

প্রথম পর্ব আবার পড়তে হলো, ভুলে গিয়েছিলাম। আশা করি তৃতীয় পর্ব একটু তারাতারি আসবে, যাতে ঐটা পড়ার সময় প্রথম আর দ্বিতীয় পর্ব আবার পড়তে না হয়।

নৈষাদ এর ছবি

খাইছে হবে না। ধন্যবাদ।

দ্রোহী এর ছবি

আপনি দেখি আমার চেয়েও অলস! আশা করছি পরের পর্ব ২০১৩-র আগে আসবে না। দেঁতো হাসি

নৈষাদ এর ছবি

আরে কি যে বলেন। আপনাকে যে পরিমানে 'ইয়েরা' অনুপ্রেরণা দেয়, তার শতভাগের একভাগ অনুপ্রেরণা পেলে 'লেইখ্যা ফাডায়লাতাম'। দেঁতো হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ইন্টারেস্টিং। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আকর্ষক। চলুক

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

মজারু। অপ্রাসঙ্গিক কথা বলি। আপনাকে কি ফেসবুকে পেতে পারি? আর পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।