বিজিএমইএর মতামত
গত বছরের জানুয়ারী মাসে এক সরকারী গেজেটের মাধ্যমে ‘সরকারী কর্মচারীদের’ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান শ্রম আইনের ৪৬ ধারা একজন ‘মহিলা শ্রমিকের’ ১৬ সপ্তাহের (প্রায় ৪ মাস) মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছে।
এই মুহূর্তে শ্রম আইন সংশোধনের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানোর একটা প্রস্তাব শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা আছে এবং এই বিষয়ে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে। এই প্রক্রিয়ায় বিজিএমইএ তাদের মতামত দিয়েছে। বিজিএমইএ বলেছে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ২৪ সপ্তাহ করা হলে তা জন্মনিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে জন্মহার বাড়ানোকে উৎসাহিত করা হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক ‘অসুবিধার’ যুক্তিতে বিজিএমইএ বলেছে, ‘এ সুবিধা পাওয়ার পর কর্মীদের চাকরিতে ফিরে না আসার প্রবণতাও বাড়বে। দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে শ্রমিকের দক্ষতা হ্রাস পাবে’। বিজিএমইএ আরও যুক্তি দিয়েছে, ‘অফিস-আদালতে কেউ ছয় মাস অনুপস্থিত থাকলে কাজে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু পোশাকশিল্পে ৮০ শতাংশ নারীশ্রমিক কর্মরত, যেখানে কোনো শ্রমিক কোনো পোশাক এককভাবে তৈরি করেন না। একটি শার্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে একটি লাইনের মধ্যে একজন মূল কাঠামো সেলাই, একজন কলার, একজন কাফ, একজন পকেট তৈরিসহ একেকটি কাজ করেন (যেটাকে সাধারনত প্রোডাকশন লাইন কিংবা মুভিং এসেম্বলি লাইন বলা হয়)। একটি লাইনের মধ্য থেকে একজন দক্ষ শ্রমিক অনুপস্থিত থাকলে উৎপাদনের মাত্রা অনেক কমে যাবে। এতে উৎপাদন কঠোরভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। শূন্য স্থানে শ্রমিক নিয়োগে প্রশাসনিক জটিলতা বাড়বে’।
শতবর্ষ আগের একটা পরীক্ষা
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে শুরু করে, বিশেষ করে গত এক-দেড়’শ বছরে কর্মী ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ধারণা এবং প্রয়োগে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপারগুলিকে যে এত ‘যান্ত্রিকভাবে’ দেখার যে সুযোগ নেই সেটা বুঝানোর জন্য ১৯২০ দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টার্ন ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে করা Hawthorne Studies এর একটা পরীক্ষার উদাহরণ দেয়া যায়। ইন্টারেস্টিং হল সেটাও ‘মুভিং এসেম্বলি লাইনের’ উপরই করা হয়েছিল।
যখনকার কথা বলা হচ্ছে, তখন ‘উৎপাদনশীলতা’ (productivity) বাড়ানো, মোশন স্টাডি এগুলি তুমুল গবেষণা চলছে। টেলর সাহেব ১৯১১ সালে যুগান্তকারী ‘সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন, মোশন নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যেহেতু এই পরীক্ষাটা ‘উৎপাদনশীলতা’ নিয়ে, ‘ধারণাটার’ ছোট্ট একটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন। ধরুন একজন কর্মী এক কর্মদিবসে ১০ ইউনিট উৎপাদন করতে পারে। সেই কর্মী যদি একই কর্মদিবসে ১১ ইউনিট উৎপাদন করতে পারে, তবে ধরা হবে ১০% উৎপাদনশীলতা বেড়েছে।
Hawthorne এর সেই পরীক্ষাতে উৎপাদনশীলতার উপর পারিপার্শিক অবস্থার প্রভাব বুঝার জন্য প্রোডাকশন লাইন থেকে দৈব-চয়নের মাধ্যমে (randomly selected) কিছু কর্মীকে আলাদা করা হল। তাঁদের নতুন কর্মস্থলে সাধারণ অবস্থার চেয়ে আলো বাড়িয়ে দেয়া হল। ফলাফলে কর্মকর্তারা আবেগে আপ্লুত। উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। ঠিক কতটা আলো বাড়লে শতকরা কতটুকু উৎপাদনশীলতা বাড়ে সেটা ‘সঠিকভাবে মাপার’ জন্য একদম প্রাথমিক অবস্থার থেকেও আলো কমিয়ে দেয়া হল। ফলাফল দেখে তাদের বিমূঢ় অবস্থা – কোথায় উৎপাদনশীলতা কমার কথা, দেখা গেল আরও বেড়ে গেছে।
আপাত ব্যাখ্যার অতীত এই ব্যাপারটা ব্যাখ্যার জন্য শিল্পসংক্রান্ত সাইকোলজিস্টদের ডাকা হল। বুঝা গেল এখানে আলো না, আরও কোন ‘বিষয়’ কাজ করছে। যদিও এই ‘কন্ট্রোল গ্রুপের’ কর্মীদের দৈব-চয়নে নেয়া হয়েছিল, উনারা সেটা জানতেন না, ভেবেছিলেন তারা কর্তৃপক্ষের ‘হ্যান্ড-পিকড’ ভাগ্যবান লোকজন। যে ‘ব্যাখ্যার অতীত’ ব্যাপারটা কাজ করেছিল সেটাকে এখন আমরা এখন বলি প্রেষণা বা মোটিভেশন।
পুরানো সেই দিনের কথা
মাতৃত্বকালীন ছুটি জন্মহার বৃদ্ধির সহায়ক এই সমীকরণের প্রথম মুখোমুখি হই যখন, তখন মাত্র কলেজে উঠেছি। কোন একটা পত্রিকাতে চা বাগানে মাতৃত্বকালীন ছুটি যে আসলে দেশের জন্মহার বৃদ্ধির সহায়ক এমন একটা রিপোর্ট আসল। তখন চা বাগানে ১২ সপ্তাহের ছুটি দেয়া হত। নতুন একটা পারস্পেক্টিভ পেয়ে উত্তেজিত। পিতার কাছে জানতে চাইলে তিনি ‘বায়োলজিক্যাল’ ব্যাপারগুলি এড়িয়ে ব্যাখ্যা করে বুঝান যে আসলে তাঁদের এই বারো সপ্তাহের ছুটি আসলে কমই, কারণ তাদের শারিরীক পরিশ্রম করতে হয়।
তারপরই বড় বোনের মাতৃত্বকালীন জটিলাতাগুলি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হল। সেই স্মৃতির প্রতিফলন আমার প্রথম চাকুরীজীবনে নিশ্চিতভাবেই পরেছিল।
আমার প্রথম চাকুরীর কিছু খুব ভাল স্মৃতি আছে। এর একটা কারণ ছিল নতুন নীতি/কর্মপন্থা বাস্তবায়নের অফুরন্ত সুযোগ। আমার মনে আছে চাকুরীর দ্বিতীয় বছরে মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় না বাড়িয়েই আমরা মাতৃকল্যাণের জন্য কিছু নতুন নীতি তৈরী করি। যেমন প্রাক-মাতৃত্বকালীন সুবিধাদি (মেডিক্যাল কেয়ারের জন্য সময়, অফিসে রেস্টের ব্যবস্থা) এবং মাতৃত্ব-পরবর্তী সুবিধাদি (ছুটির থেকে ফিরে আসার পর পরবর্তী একবছর বাচ্চাকে মাতৃদুগ্ধ পানের ব্যবস্থা, ভ্রমনকালীন সময়ে একজন ‘সাহায্যকারীর’ খরচ বহন ইত্যাদি ইত্যাদি)।
ম্যানেজমেন্টে কোন বিশেষ নীতি পাস করানোর একটা ‘টেকনিক’ হচ্ছে, বোর্ডের সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ‘প্রভাবশালীদের’ আগেই ‘অ্যালাইন’ করে নেয়া। এই ‘অ্যালাইন’ করতে গিয়ে বিরোধিতার মুখোমুখি হই। ম্যাচিওরিটির প্রশ্নও উঠে। যুক্তির মধ্যে ছিল – খরচ বাড়া, স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্থ হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি (এইটা কী অফিস না ক্লাব বানাইতে চান)।
ইন্টারেস্টিং হল, বোর্ডে মূল আলোচনায় গিয়ে নতুন একটা মাত্রা যোগ করা হল, এসব করে কি আমরা আসলে জন্মহার বৃদ্ধিতে সহায়তা করছি?
পরবর্তী চাকুরীতে আমার ব্যাক্তিগত খুব পছন্দের একটা নীতির উত্তরাধিকারী হয়েছিলাম। আমাদের কোন সহকর্মী মা কিংবা বাবা হলে, সেই বাচ্চার জন্মের দিন প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা একটা গিফট বক্স পাঠাতাম। সেটাতে সাধারণত একটা বাচ্চার প্রথম তিন/চার মাসের দরকারী জিনিসগুলি থাকত। চার/পাচ বছর আগে প্রতিটি বাচ্চার জন্য বাজেট থাকত প্রায় ৭,০০০ টাকা, বেশ ভালই। এই ছোট্ট গিফট বক্সটা যে সেই কর্মী কিংবা তাঁর পরিবারের উপর কি প্রভাব ফেলত তা বলার না।
ইন্টারেস্টিং হল, এটা নিয়েও আমার এক সহকর্মী প্রশ্ন তুলেছিল, এই নীতি দিয়ে কি আমরা জন্মহার বৃদ্ধিতে সহায়তা করছি না?
(ভদ্রলোকের বাচ্চারা বড় হয়ে গিয়েছিল, আমি হেসে প্রশ্ন করেছিলাম আপনার কি মনে হয়ে এই গিফট বক্সের জন্য আমাদের সহকর্মীরা নতুন বাচ্চার সিদ্ধান্ত নিবে? তাহলে ইনশাল্লাহ বলে ‘যুদ্ধে’ নেমে যান আরেকবার। কী আছে জীবনে।)
এখানে আমার চাকুরীজীবনে করা পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং এডোপ্টেসন ছুটিও প্রাসঙ্গিক, কিন্তু লেখার দৈর্ঘ্যের কথা চিন্তা করে বাদ দিলাম। উপরের উদাহরন গুলি দেয়া হল এই কারণে যে এর উদ্যেশ্যও কিন্তু ছিল উৎপাদনশীলতা বাড়ানো – মোশন স্টাডি দিয়ে নয়, প্রেষণা দিয়ে। কিন্তু এটা এখানে আলোচ্য না।
মহাজ্ঞানী মহাজন
আমার চাকুরীজীবনের মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন বেশ কিছু নীততে যুক্তরাজ্যের আইন বা নীতির কিছু প্রভাব ছিল সেটা স্বীকার করি। এই মুহূর্তের যুক্তরাজ্যে মাতৃকল্যাণের আইন বা নীতি বেশ সমৃদ্ধ। ওর্ডিন্যারি ম্যাটারনিটি লিভ (OML) সেখানে ২৬ সপ্তাহের। মাতৃত্বকালীন অন্যান্য ছুটি (AML,CL) মিলিয়ে একজন কর্মী প্রায় ৩৯ সপ্তাহের পেইড লিভ পেতে পারে। ইওরোপিয়্যান অন্যান্য দেশগুলোতেও মাতৃকল্যাণের বেশ সমৃদ্ধ আইন বা নীতি আছে (সবচেয়ে উদার নরওয়ে আর সবচেয়ে অনুদার সুইজারল্যান্ড)।
কিন্তু আটলান্টিকের ওপারে আবার ভয়াবহ অবস্থা (কানাডা বাদে)। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়ভাবে কোন মাতৃত্বকালীন ছুটি নেই। আবার বলি, যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়ভাবে কোন মাতৃত্বকালীন ছুটি নেই। তবে সেখানে জব-প্রটেক্টেড ১২ সপ্তাহের ছুটি আছে (আনপেইড)। যুক্তরাষ্ট্রের Family and Medical Leave Act of 1993 জটিল আবর্ত ঘুরে আপনি হয়ত ইন্সিওরেন্সের ‘টেম্পরারি ডিস্যাবেলিটির’ (টার্মটা খেয়াল করুন) কিছু টাকা পেতেও পারেন।
এ ব্যাপারে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকরা ‘পাজল’ ‘পাজল’ বলে ভাসা ভাসা কিছু উত্তর দিয়েছেন। এবং প্রথমটাই হল – জন্মহার সমীকরণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাকি ইওরোপে জন্মহার বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করতেই ইয়োরোপে এই মাতৃত্বকালীন ছুটি। আমেরিকা এই সমস্যার সমাধান ‘ইমিগ্রান্ট’ দিয়ে করেছে।
আরেকটা যুক্তির জাল বুনা হয়েছে। আমেরিকা এবং ইয়োরোপের ‘ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের’ উদ্যেশ্য নাকি ভিন্ন ছিল। আমেরিকানরা ‘ইকুয়্যাল রাইটের’ কথা বলেছে, অন্যদিকে ইয়োরোপিয়ানরা নাকি বলেছে ‘স্পেশাল ট্রিটমেন্টের’ কথা। যুক্তিগুলি আমার ভাষায় ভাসা ভাসা।
(আমার পূর্বের ‘functional supervisor’ যিনি আবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান CIPD র বেশকিছু প্যানেলের মেম্বার, মাঝে মাঝে ফিসফিস করে বলতেন আমেরিকার এমপ্লয়মেন্ট ল’ নাকি জংলি, অথবা ‘প্রায়’ ল’ই নাই, অবশ্য পানীয় পানের পরই শুধু একথা বলতেন।)
আমাদের দেশে মাতৃত্বকালীন ছুটির ইতিহাস
মজার ব্যাপার হল আমাদের দেশের কিন্তু মাতৃকল্যাণ আইনের ইতিহাস অনেক পুরানো। এবং এগুলির সাথে জন্মহার বৃদ্ধির সম্পর্ক ছিল না। এডভোকেট নির্মলেন্দু ধর তাঁর ‘বাংলাদেশ শ্রম ও শিল্প আইন’ বইতে লিখেছেন, ‘সন্তান প্রসবের আগে এবং পরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মহিলা শ্রমিকদের চাকরি নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের মাতৃকাল্যাণ সুবিধা দেয়া এবং মাতৃত্ব ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে চাকুরিচ্যুতি রোধ করে রয়েল কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বৃটিশ শাসনামলে ১৯৩৯ সনে বঙ্গীয় মাতৃকল্যাণ আইন (The Bengal Maternity Benefit Act 1939)জারি হয়’।
আমেরিকা ফ্যাক্টর এবং দর্শণজাতীয় জটিলতা
ইদানিং একটা মজার জিনিস দেখতে পাই, দেশে পাওয়া যায় এমন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বই সবই আমেরিকার। মাঝে মাঝে আমার কাছে মনে হয় আমাদের সামগ্রিক দর্শণের সাথে আমেরিকার ব্যবস্থাপনা তত্ত্বের দ্বন্দ্ব আছে, যেটা যুক্তরাজ্যের বইতে অনেক কম। (সরাসরি উদাহরণ দেই, আমেরিকার ‘কম্পেনসশন’ আর যুক্তরাজ্যের ‘রিওয়ার্ড’ থিওরী কিন্তু একই কথা না - দর্শণের দ্বন্দ্ব আছে।)
আমাদের সমাজব্যবস্থাটা এবং সরকারী চাকুরীবিধি গড়ে উঠার পেছনে একটা সামগ্রিক দর্শণ আছে (এবং এটা চমৎকার)। আমরা যদি ‘পিসমিল’ পরিবর্তনের চিন্তা করি তাহলে আম-ছালা দুই নিয়েই টান পড়তে পারে (যেটা মাঝে মাঝে দাতাগোষ্টি দেয়)। (ছোট্ট একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে – আমাদের যে ‘কোম্পানীর মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ’ আইন আছে, সেটা আমেরিকার ‘কম্পেনসেশন’ বিশেষজ্ঞের কাছে ‘যুক্তিহীন’ মনে হতে পারে, কিন্তু এর পেছনে যে সমাজতান্ত্রিক ধারণার মহৎ একটা দর্শণ কাজ করে সেটা তিনি মিস করে যাবেন। এই বিতর্ক কিন্তু ‘জীবন থেকে নেয়া’।)
এই দর্শণ কপচানোর মানে কী? মানে হল –‘ আরে ভাই, আমেরিকাতে তো মাতৃত্বকালীন ছুটিই নেই...। আর আপনে...’।
তাহলে মাতৃত্বকালীন ছুটি-জন্মহার বৃদ্ধির সমীকরণের কী হল
চা-বাগানে কোন সমীক্ষা হয়নি। কিন্তু আমার জমানো সীমিত ডেটাতে তখন দেখেছিলাম চা বাগান থেকে আশপাশের লোকায়লে জন্মহার বেশি, যেটা স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিজ্ঞতা রিইনফোর্স করেছিল।
উপরে দেখুন প্রত্যেকটা ঘটনাতে এই সমীকরণ অন্য ‘এজেন্ডার’ একটা ‘এক্সকিউজ’ হিসাবে দেখানো হয়েছিল।
আর লিবারেল মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রভাবে ইয়োরোপের ‘জন্মহারের’ কথা না হয় বাদই দিলাম। পাঠকরা বুঝে নিন।
মন্তব্য
বিজিএমইএর সদস্যদের পরিবারের আয়তন নিয়ে একটা সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন।
এই নিয়মের ভুক্তভোগী আমরা। সাধারণতঃ নারী কর্মী ডেলিভারী পেইন না ওঠা পর্যন্ত কাজ করে। যাতে করে বাচ্চা হবার পর ছুটিটাকে ব্যবহার করতে পারে। তিন-চার মাসের শিশুদের ডেকেয়ারে দিয়ে অফিস করতে যায়।
আমার স্ত্রী প্রাথমিক ছুটির পর, দু'মাসের মতো আনপেইড ছুটি নিয়েছিলো। আর এ কারণে তার বিশেষ অবস্থা বিবেচনা না করেই তার পার্ফমেন্স রেটিং কমিয়ে দেয়া হয়েছিলো। পরে অবশ্য অন্য একটি চাকরী নিতে বাধ্য হয় সে।
অনেক আগে কয়জন ভুক্তভোগীর কথা শোনা হয়েছিল।
ইউ এস এতে কিছু কিছু স্টেট-ল নাকি কিছু সুবিধাদি দেয়, তাই 'জাতীয়ভাবে' কথাটা ব্যবহার করেছি। এজন্য 'ডিসক্রিমিন্যাশনের' ঘটনাও শোনেছি।
ব্যাপারটা কিন্তু আমার জন্য 'পাজলই'।
১২ সপ্তাহের ছুটি, তাও আবার আনপেইড! এই বিষয়টা জানা ছিলো না আমার। আমেরিকায় নারী কর্মীরা এভাবে বঞ্চিত হচ্ছে!
চমৎকার লেখা, চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে। কিন্তু পরিশেষে মোটা দাগে কি বলা যায়? এই নিয়ে কি কোন গবেষণা হয়েছে?
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ধন্যবাদ।
এ ধরণের কোন গবেষণার ব্যাপারে কিছু শোনা যায়নি (অন্ততপক্ষে আমি চেষ্টা করে জানতে পারিনি)।
আমার একটা 'স্নিকি ফিলিং' আছে যে মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হয়ত আমাদের মত দেশে জন্মহ্রাসে ভুমিকা রাখতে পারে, কিন্তু এনিয়েও কোন গবেষণার রিপোর্ট বা এই জাতীয় কিছু পাইনি।
চমৎকার পোস্ট।
ফিনল্যান্ডে কমপক্ষে ১ বছর, আর মা চাইলে মাতৃকালীন ছুটিকে ৩ বছর পর্যন্ত বাড়াতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে ১ বছরের পূর্ণ বেতন ভোগের পর বাকী দুই বছরে বেতনের হার খানিকটা কমবে।
বিজিএমইএর সদস্যদের কষে মাইনাস, অর্থলোভী শোষকের দল।
facebook
অনেক ধন্যবাদ। ইউরোপের কিছু দেশের মাতৃকল্যাণের সুবিধাগুলি দেখে আমি মুগ্ধ।
সময়োপযোগী একটি লেখা। মাতৃত্ব কালীন ছুটি বাড়লে জন্মহার বাড়বে এই ধারণা যারা ধারণ করেন তাদের অর্থ লিপ্সার পরিমাণটা একটু জানা দরকার।
শুধু অর্থ উপার্জনই এদের কাছে মুখ্য । মানবিক মূল্যবোধ গুলো সব আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়েছে মনে হয়!!
অমি_বন্যা
ধন্যবাদ। মোটা দাগে বিজিএমইএর কনসার্নটা মনে হয়েছে মুনাফাই।
চমৎকার পোস্ট। শেষ পর্যন্ত সবকিছুর মাপকাঠি যদি 'অর্থ' হয় তাহলে আর কিছু বলার থাকে না।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসলেই নিজ থেকে জন্মনিয়ন্ত্রয় হয়ে যায় (ইউরোপের উদাহরন)। উন্নত বিশ্বে সবাই স্বাবলম্বী হতে চায়।
এই মাসেই এক কলিগকে বলেছিলাম পিতৃকালীন ছুটির বিস্তারিত জানার জন্য। শুধু একটি ফোনেই HR থেকে মেইল, ফোন, লিফলেট একটার পর একটা আসতেছে। ম্যানেজার বললো, Short-term notice এ ছুটি নেওয়া যাবে। চাকুরী ২ মাস থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত থাকবে with max. 1800 Euro payment. এতো কিছু করেও ওরা জন্মহার বাড়াতে পারছে না। সবাই মোটামুটি ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। বাচ্চা পালনের জন্য ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্হ করতে অনেকেই ইচ্ছুক না।
(তবে এতো লম্বা ছুটি নিলে টেকনিক্যাল সবকিছু ভুলে যাওয়ার চান্স আছে। প্রাপ্ত ৩০ দিনের ছুটিগুলো জমিয়ে রাখছি।)
দেশের ব্যবসায়িরা এক একটা কসাই। কিছু বলার নাই। কম খরচে বেশী লাভের আশায় সবই করতে পারে।
---ফ্রুলিংক্স
কোন দেশের কথা বলছেন। এই 1800 Euro payment কি কোন স্পেসিফিক পেমেন্ট নাকি বর্তমান চাকুরির সাথে জড়িত কোন ফ্যাক্টর?
দেশ জার্মানী। পিতৃকালীন ছুটিতে মাসিক সেলারীর ৬৫% দিবে। এবং সর্বোচ্চ ১৮০০ ইউরো। এখন কারো বেতন যদি মাসিক ৫০০০ইউরোও হয় উনিও পাবেন ১৮০০ ইউরো এই ১৪মাস এবং উনার জব সিকিউর ১০০%।
মোটাদাগে দাগে বলা যায়, বিজিএমইএ-র থেকে শুরু করে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবী পরিবারের তুলনায় ছেঙ্গারচর বা ভুরুঙ্গামারীর মতো প্রত্যন্ত এলাকা, যেইখানে কোন চাকুরির সুযোগ নাই, সেইখানের পরিবারে জন্মহার একেবারে ভয়াবহ রকমের বেশি। তারা নিশ্চয়ই কোন মাতৃত্বকালীন ছুটির ভরসায় অধিক সন্তান গ্রহণ করে না।
এরকমই আমারও মনে হয়, স্পেসিফিক কোন স্টাডি হয়ত হয়নি।
নৈষাদ, আপনার লেখাটায় অনেক জরুরি বিষয় উঠে এসেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রত্যকের ভাবা উচিত। নারী হিসেবে বলছি না, সন্তানের জন্য মায়ের ছুটির বিষয়টা কি বাবা-মা দুজনের জন্যই বড় ব্যাপার না?
আর বড় পরিসরে 'মাতৃকল্যাণ' নিয়ে কিন্তু কিছু ভাবা হচ্ছে, কিন্তু খুব ছোট পরিসরে।
একটা লেখায় এই চার্টটা দেখেছিলাম:
ধন্যবাদ। চার্টা আগে পেয়েছিলাম, ইউকের হিসাবেটা দেখে একটু দ্বিধায় ছিলাম।
বিজিএমইএ - এর এই ব্রিফ আমার কাছে হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। মানুষ প্রয়োজনের জন্যেই কাজ করে, গর্ভকালিন সময় বাড়ালে কর্মবিমুখ হয়ে যাবে এটা তো স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন কথা হতে পারে না। ফালতামি যত্তসব।
এটা একটা এক্সকিউজই।
"মাতৃত্বকালীন ছুটি" ও আনুসঙ্গিক সুবিধাদি বাড়ানোর সাথে জন্মহার বাড়ার সম্পর্কটা কী? কোথাকার কোন্ গবেষণায় এই তত্ত্ব জানা গেছে? যারা এমনটা দাবী করছেন তারা কি এর গ্রহনযোগ্য কোন ব্যাখ্যা দিতে পারবেন? একটা প্রডাকশন লাইন থেকে একজন কর্মীকে সরিয়ে নিলেই প্রডাকশন ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়? উৎপাদনশীলতা কমে যায়? দুর্ঘটনাজনিত কারণে বা অসুস্থতাজনিত কারণে একজন কর্মী অনুপস্থিত থাকলে অথবা একজন কর্মীর চাকুরী চলে গেলে কি কারখানার উৎপাদনশীলতা কমে যায়? এইসব কর্মক্ষেত্রে কি কোন প্রকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই! সাবস্টিটিউশন ও রিপ্লেসমেন্টের কোন ব্যবস্থা থাকে না! এমন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে কারা আছে!
বাংলাদেশে বিজিএমইএ হচ্ছে অবতার পর্যায়ের একটা বডি। তারা যা বলবে, সরকারে যারাই ক্ষমতায় থাকুক, তা-ই হবে। আজ পর্যন্ত কোন সরকার বিজিএমইএ-কে এই প্রশ্নটা করতে পারলো না যে, এক্সপোর্ট এলসি'র আয় থেকে আমদানীর জন্য খোলা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি'র ব্যয় বাদ দিলে নেট কত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ পায়? এই নেট হিসাব করা হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে গার্মেন্টস সেক্টরের অবস্থান কত নাম্বারে গিয়ে দাঁড়ায়?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই জায়গাটা নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল।
হ্যাঁ। আমার ধারনা মাতৃত্বকালী ছুটি আর বাড়বে না, যেহেতু 'বিজিএমইএ বলেছে'। যদিও মনে হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে মাতৃকল্যাণের একটা চেষ্টা আছে। মাস ছয়েকে আগে বড় প্রতিষ্ঠান গুলোতে 'ডে-কেয়ার' সেন্টার আছে কিনা, কিংবা এর জন্য সচেতনা সৃষ্টির একটা চেষ্টা দেখেছিলাম।
অফিসে এই ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করছিলাম। আলাপে যেই প্রশ্নটা উঠল সেটা হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কর্মজীবী নারীদের অবদান আসলে কতটুকু? আদৌ কি জনসংখ্যাস্ফীতির জন্য তারা দায়ী?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আমার ধারণা নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সাথে পরিকল্পিত পরিবারের সম্পর্ক আছে (আমাদের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যা হ্রাসে)। কোন স্টাডি দেখিনি - কৌস্তুভ আপনার ফেসবুকে এমন স্টাডি আছে বলে মন্তব্য করেছে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বাড়লে মহিলাদের ফার্টিলিটি রেট হ্রাস পায়, এরকম কজাল কোনো স্টাডি দেখিনি। অথবা তারা বেশি পরিবার পরিকল্পন করে, এমনটাও না। তবে তাদের শিক্ষাস্তরের সঙ্গে ফার্টিলিটি রেটের নেগেটিভ কোরিলেশন আছে, এমন দেখা গেছে নানা দেশে। এই ধারণাটা থেকেই জাতিসংঘ নারীশিক্ষার জন্য এতটা উদ্যোগী। হান্স রোজলিং এর জনসংখ্যা-সংক্রান্ত টেডটকটাতেও এই নিয়ে বলা আছে।
CDC'র একটা রিপোর্টের কিছুটা তুলে দিচ্ছি। গুগল করলে এরকম অনেক প্রবন্ধ পাওয়া যাবে।
A women's educational level is the best predictor of how many children she will have, according to a new study from the National Center for Health Statistics, Centers for Disease Control and Prevention. The study, based on an analysis of 1994 birth certificates, found a direct relationship between years of education and birth rates, with the highest birth rates among women with the lowest educational attainment.
http://www.cdc.gov/nchs/pressroom/97facts/edu2birt.htm
UN এর একটা রিপোর্ট:
“More education translates into better health outcomes in all societies,” said Abulkalam Abdul Momen ( Bangladesh), Vice-President of the United Nations Economic and Social Council. He added that educated women were better able to plan their families and more aware of employment, schooling and health opportunities for themselves and their children.
http://www.un.org/News/Press/docs/2011/pop994.doc.htm
চমৎকার লেখা।
মাতৃত্বকালীন ছুটি অবশ্যই ছয় মাস থেকে বাড়ানো উচিত। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি ...
১। আমার বাচ্চার জন্মের ২মাস আগ থেকে আমার স্ত্রীর শরীর খারাপ লাগা শুরু হয়, তাই বাধ্য হয়ে ১মাস আগেই আমার স্ত্রী ছুটি নিয়ে নেন। বাকী থাকলো আর ৫ মাস।
২। দেশে এখন বেশীরভাগ বাচ্চার জন্ম হয় সিজারিয়ান। এতো বড় একটা অপারেশনের পর মায়েরা ৫-৬ মাস স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অপারেশনের ধকল কাটাতেই একজন মায়ের লেগে যাচ্ছে ৬ মাস।
৩। শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে এই মায়ের প্রয়োজন কমপক্ষে আরো ৩/৪ মাস।
৪। বুকের দুধ বাচ্চার জন্য অপরিহার্য, ৬মাস পর বাচ্চাকে অন্য খাবার দিলেও বুকের দুধের কোন বিকল্প নেই। কারণ সেই সময় বুকের দুধই তার প্রধান খাবার। এইরকম একটা দুধের বাচ্চাকে বাসায় রেখে অফিসে গিয়ে কোন মা কাজে মনযোগ বসাতে পারবে?
তাই এসব চিন্তা করে মাতৃত্বকালীন ছুটি ১বছর করা দরকার।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
নতুন মন্তব্য করুন