ফেব্রুয়ারীর তিন তারিখ এটিন নিউজের এক অনুষ্ঠানে ডেইলিস্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের তথাকথিত ‘স্বীকারোক্তি’ কিংবা ‘ভুল স্বীকার’ এক-এগারোর সম্ভাব্য কুশীলবদের বিতর্ককে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। সেই সময়ের ছোটখাট কিছু খবরের বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা যাক।
দেশে বি-রাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া কিংবা এক-এগারো জাতীয় ঘটনার ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার-এর সাথে যৌথ উদ্যোগে ২০০৪ সালে সুজন একটি রাজনৈতিক সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করে, যাতে ছিল গোল টেবিল বৈঠক, আলোচনা সভা, র্যালি, মানব বন্ধন। ছাত্রছাত্রীদেরও যুক্ত করা হয় এই প্রক্রিয়ায় - নির্বাচন বিতর্ক ও নির্বাচন অলিম্পিয়াডের ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে। ‘চ্যানেল-আই’ দায়িত্ব নেয় প্রচারের।
তারপর সিপিডি, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও চ্যানেল আইয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয় ‘যোগ্য প্রার্থী’ আন্দোলন। গঠন করা হয় ‘নাগরিক কমিটি’, উদ্দেশ্য ছিল সংস্কারের পক্ষে ‘আলোড়ন’ সৃষ্টি করা। ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’, ‘ডেমক্রেসি ওয়াচ’, ‘গভর্নেন্স কোয়ালিশন’ এবং এধরনের এঞ্জিও গুলি এর পক্ষে কাজ করে। মোটা দাগে এগুলি ছিল বি-রাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ।
এক-এগারোর কাছাকাছি সময়ে সম্ভাব্য ‘সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র’ প্রস্তুতির, কিংবা বৈধতা দেওয়ার কিছু নজির দেখা যায়। ২০০৭ এর ৮ জানুয়ারী জনৈক ওয়ালিউর রহমান বাংলাদেশের তখনকার অবস্থা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন বিবিসিতে (Is Bangladesh heading towards disaster?) । সেখানে সিপিডির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্ষ্যের রেফারেন্স বার বার টানা হয়। কিছু বাক্যের উল্লেখ করা যাক, “ বাংলাদেশ পৃথিবীতে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক মেরুপ্রবণ দেশ, যদিও বড় দুই দলের নীতি গত বড় কোন পার্থক্য নেই (বড় দুই দলের নীতি গত পার্থক্য নেই বললেই রিপোর্টের ব্যাপারে অনেক কিছু পরিস্কার হয়)। রিপোর্ট আরও উল্লেখ করা হয়, “এখানে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল ‘আইন- শৃংখলা’ বাহিনীর ভুমিকা। সবচেয়ে বিতর্কের ব্যাপার হল আওয়ামী লীগের দাবীকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য ‘সাংবিধানিক নমনীয়তা’ আনা সম্ভব কিনা। তারপরই বলা হয়, “If there is a complete breakdown of law and order, Dr Bhattacharya said that martial law is not beyond the realms of possibility.”
তবে ‘সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র’ প্রস্তুতির বা বৈধতা দেওয়ার সবচেয়ে বড় সুযোগ করে দেয় খোদ জাতি সঙ্ঘ। জাতি সঙ্ঘ সেনাবাহিনীকে হুঁশিয়ার করে বলে যে এই নির্বাচনে (২২ জানুয়ারী) সাহায্য করলে জাতি সঙ্ঘ মিশনে সেনাবাহিনী নেওয়া বন্ধ করার ব্যাপার বিবেচনা করা হবে। মঈন ইউ আহমেদ এ ব্যাপারে জাতি সঙ্ঘ প্রতিনিধির সাথে দেখাও করেন। নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী তখন কিন্তু ডিপ্লয় হয়ে গেছে। সুতরাং সেনাবাহিনীর জন্য দরকষাকষির ব্যাপারটা খুব সহজ হয়ে গেল।
উইকিলিক্সের তথ্যে দেখা যায়, ১২ জানুয়ারী ডিজিআইএফ চিফ, সেই কুখ্যাত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন সেই সময়ের মার্কিন রাস্ট্রদূত বিউটেনেসের সাথে দেখা করে পুরো ঘটনা ব্রিফ করেন (বিশাল ব্রিফ রিপোর্ট)। গুরুত্বপূর্ণ অংশের মধ্যে ছিল ‘হস্তক্ষেপের’ কারণ (১। জাতি সঙ্ঘের ব্যাপার যা উপরে আলোচনা করা হয়েছ, এবং ২। জেএমবির সম্ভাব্য আক্রমণ)। আরও জানানো হয় ‘প্রথমে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের প্রস্তাব দেয়া হয় যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন’। তারপর ডঃ ফখরুদ্দিন আহমেদের ব্যাপারে জানানো হয়।
ডঃ ফখরুদ্দিন আহমেদের ‘ক্রেডেনশিয়্যাল’ আবার মারাত্মক। দুর্দান্ত রেজাল্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, তারপর আমলা, সর্ব পরি ১৯৭৮ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা।
এ ধরণের কথা প্রচলিত আছে যে সেই মিটিঙেই ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দল এবং বড় পদের জন্য ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। মাহফুজ আনাম, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য এবং সমমনারা দলের অংশ হিসাবে থাকবে এমন সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। এখন ৮০ জনের কথা শোনা যাচ্ছে। ফখরুদ্দিন আহমেদের প্রস্তাব তাদের কাছ থেকেই আসে।
উইকিলিক্সের সেই রিপোর্ট এবং অন্যান্য সংবাদপত্রের রিপোর্টে দেখা যায় যে, ১১ তারিখ বিকেল পাঁচটায় মঈন ইউ আহমেদ, অন্য দুই বাহিনীর প্রধান এবং আর্মি প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করেন এবং তাকে পদত্যাগ করতে বলেন। তারা রাষ্ট্রপতিকে এ ব্যাপারে বেশি চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ দেন নি।
আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে অবস্থা বিবেচনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এটা একটা হঠাৎ সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এর পিছনে সঠিক এবং ব্যাপক পরিকল্পনা ছিল। পুরো প্রক্রিয়াটা, ইংরেজীতে যাকে বলে ‘সিম-লেস’, তাই ছিল। বাংলাদেশের পূর্ববর্তী অন্যান্য সামরিক অভ্যুত্থান কিংবা মার্শেল-লর সাথে এক-এগারোর বেশ পার্থক্য আছে। এটা যতটা সম্ভব আইনের মধ্যে থেকে করা হয়েছে এবং খুটিনাটি বিষয় খুব সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা হয়েছে (যেমন, বৈশ্বিক সমর্থন, রিট করা যাবে না এমন শর্ত, কিংবা দ্রুতই Emergency ordinance promulgation ইত্যাদি ইত্যাদি)।
ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখেই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্ত রাজ্যের ‘ভাষ্য’ শুনতে পাই। যুক্তরাষ্ট্র, “the Bangladesh government was compelled to declare a state of emergency following political parties' failure to resolve their differences through dialogue.” যুক্ত রাজ্যের সেই সময়ের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরি, welcomed "the potential opportunity for conditions to be established which are conducive to credible elections" with participation by all political parties, even though he termed unfortunate the fact that the situation arose in which the state of emergency was declared.”
যদিও ডিজিএফআইয়ের বাঘা-বাঘা সম্পাদকদের ‘ফোর্স-ফিড’ করানোর কথা শুনি, ইমার্জেন্সির মাত্র চার দিনের মাথায়, ১৫ জানুয়ারী প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান দুর্দান্ত ইনভেস্টিগেটিভ লেখা প্রকাশ করেন। (বাই দ্য ওয়ে, প্রথম আলোর তখনকার পত্রিকার কপি কিন্তু অনলাইনে এক্সেস করা যায় না)। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এরশাদকে সারে তিন কোটি টাকা দিয়ে ‘কেনার’ অভিযোগ আনা হয়। (বিএনপি দুই কোটি টাকা দিয়েছিল, এরশাদ নাকি সেই দলে যায় নি, টাকাও ফেরত দেয় না)। প্রথম আলোর ‘গীবত’ অব্যাহত থাকে। এক-এগারো পরবর্তী সময়ে প্রথম আলোর রাজনীতিকদের মানহানিকর রিপোর্টের ব্যাপারে চ্যাম্পিয়ন। বস্তুত প্রথম আলোর প্রোপাগান্ডা-মেশিন কখনোই থামে না, যদিও এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
ফেব্রুয়ারীর ১৩ তারিখেই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্ত রাজ্য একসাথে বলে ‘আমরা কলা খাই না’। “The US and the UK yesterday disagreed with some notion that they had favoured the state of emergency in Bangladesh as a means to resolve the impasse over the general elections.”The United States has never called or advocated for the declaration of a state of emergency in Bangladesh," US Embassy spokesman. The spokesman for the British High Commission said: "No, we are not interfering" into Bangladesh politics.
১৭ তারিখ ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস এএফপির সাথে এক সাক্ষাত্কারে বাংলাদেশের রাজনীতিক এবং বাংলাদেশকে ধুয়ে দেন। অনুবাদে শব্দ-চয়নে আমার পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে, তাই সরাসরি ইংরেজিতে কিছু উদ্ধৃত করি। সাক্ষাত্কারের জিস্ট ছিল “Crisis-wracked Bangladesh's politicians are only in it for the money, Nobel Peace Prize winner Muhammad Yunus said, but refused to reveal if he intended one day to seek the helm of the embattled democracy” মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "It's about power, power to make money. There is no ideological thing, simply who gets the bigger booty," "Nothing gets done unless you pay the bribe. It's a part of life. It's not the law or the rule anymore, it's how you are paying," he said, stressing that he was speaking of people on "both sides, not one side," of the divide."People are not only happy, they are jubilant. They are tired of the situation," । তবে শেষ কথাটা বলার সময় নিশ্চয়ই মুহাম্মদ ইউনূস মিটি মিটি হাসছিলেন, But when asked if he intended to stay out of politics permanently, he replied: "no comment, for now I will just say no comment."
তবে তখনকার আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল জলিল এবং বিএনপির সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নান ভুইয়া দুজনেই ইউনূসের কথার প্রতিবাদ করেন।
২৫ জানুয়ারী বাংলাদেশের বেসরকারি ‘থিংক-ট্যাঙ্ক’ সিপিডি ১২-দফা নির্বাচন এবং অর্থনৈতিক এজেন্ডা প্রকাশ করে। একটা এজেন্ডা ছিল সরকারি ব্যাংক গুলির পূর্ন গঠন। একই সময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারনেশন্যাল এন্টি-করাপশন কমিশনকে পূর্ন গঠন এবং কার্যকর করার কথা বলে। ডেইলি স্টারও গোল টেবিলের আয়োজন করে।
ফেব্রুয়ারী এক তারিখেই দেখা যায় সরকার বাজেটারি সাপোর্ট প্রোগ্রামের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ৩৪০ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পাওয়ার আশা করছে। আরও ৩৩০ মিলিয়ন পাবে রূপালী ব্যাংকের ৬৭% শেয়ার সৌদি প্রিন্সের কাছে বিক্রি করে (এর পরই বাকি আরও ২৬% সৌদি প্রিন্সের কাছে ১২৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়) । সরকারী সূত্র আরও নিশ্চিত করে, এ ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংকের রিফোর্মের শর্তগুলো পুরণ করা হয়েছ। আমরা আরও জানতে পারি ২০০৬ নভেম্বর থেকে যে বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশে ভ্রমণ স্থগিত করা হয়েছিল তা আবার মহাসমারোহে শুরু হচ্ছে।
২৮ কিংবা ২৯ জানুয়ারী সম্পাদকদের সাথে আইন ও তথ্য উপদেষ্টা মইনুল হোসেনের সেই বিখ্যাত মিটিং হয়। বিভিন্ন জনের মতামত তুলে ধরা হয়। (মতিউর রহমান শুধু পাকিস্থানের উদাহরণ দেন এবং মোশারফের [পাকিস্থান] সমালোচনা করেন)। ইদানীং অন্তত পক্ষে চারজন সম্পাদক নিশ্চিত করেছেন যে মাহফুজ আনাম সেই মিটিঙে বলেছিলেন, “এই সরকার আমরা এনেছি’। লিস্টে টেলিভিশন চ্যানেলের শুধু দুজনের নাম দেখতে পাই – চ্যানেল আই’র শাইখ সিরাজ এবং এটিএন বাংলার সাইফুল বারি।
এদিকে একই সময়ে ভারতে ৪-দিন সফরের শেষ দিনে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি নিশ্চিত করেন ‘পরিস্থিতি চাইলে’ তিনি রাজনীতিতে এবং সরকারে যোগ দিবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের মত আলঙ্কারিক পদে যোগ দিবেন না। তার ভাষায়, "Clean people must take part in the elections even if it takes time to ensure that. Otherwise, the same problem will crop up again. Now we have a chance of a lifetime to cleanse our politics." তিনি সমুদ্রে ডিপ-সি পোর্টের গুরুত্বর কথা বলেন। অবশ্য সবশেষে তিনি তার নতুন প্রোডাক্ট ‘সোস্যাল-বিজনেস’ যে পৃথিবীর অর্থনীতির চিত্র পরিবর্তন করে দিবে সেকথা বলতে ভুলেন না।
ফেব্রুয়ারীর তিন কিংবা চার তারিখের দিকে জয়েন্ট ফোর্স বড় রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুরু করে। তখন অবশ্য বিবৃতি-জীবিদের তখন পাওয়া যায় নাই। তবে কয়েকজন কথাবার্তা বলেছেন। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল দুর্নীতির সঠিক অনুসন্ধানের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, জামাতে ইসলামের কোন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা দেখেছি, তখনকার স্বরাষ্ট্র-মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মেজর জেনারেল মতিন কিভাবে মিডিয়াতে জামাতে ইসলামকে ক্লিন-চেক দিয়ে দিয়েছিলেন। এখানে জামাত-প্রীতির মাত্রা বুঝানোর জন্য একটা ব্যাপার উল্লেখ করতে হয়। এক-এগারো সরকার আসার পরপরই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রেজাকুল হায়দারকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত শুরু হয় (১০ ট্রাক অস্ত্র), কিন্তু জামাতে ইসলাম জড়িত থাকার পরও মাফ পেয়ে যায়। এটা শুধু জেনারেল মতিনের জামাত প্রীতি ভাবলে ভুল হবে। এ ধরনের প্রস্তাবিত ‘আমেরিকান গণতান্ত্রিক সরকার’ সাধারণত ডান-বান্ধব হয়ে থাকে।
ভাল ভাবে নির্বাচন করার ম্যান্ডেট নিয়ে আসা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ দিনের মাথায়, ফেব্রুয়ারীর চার তারিখে সরকারী ব্যাংকগুলিকে শেয়ার অফলোডের মাধ্যমে করপোরেটাইজেশনের বিল পাশ করে (সিপিডি ১২-দফা খেয়াল করুন)।
যদিও রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল পুরো দমে, তারপরও ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজনৈতিক দল করার সব সুযোগ করে দেয়া হয়। তার পরের ইতিহাস সবাই জানেন। চরম ব্যর্থতায় ফেব্রুয়ারীর মধ্যেই ‘ক্লিন পিপলদের’ সামরিক বাহিনীর ছত্রছায়ায় রাজনৈতিক দল গড়ার শখ মিটে যায়।
তারপরও কিংসপার্টি কিংবা জাগো বাংলাদেশের মত রাজনৈতিক দল করার চেষ্টা করা হয়েছ, এবং চুড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে।
২০০৭ এর ৪ জুলাই পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের এক্টিং অ্যাম্বাসেডর গীতা পাসির পাঠানো এক রিপোর্টে (উইকিলিক্স) নাজিম কামরান চৌধুরীর মতামত দেখতে পাই। পাঠকের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি, নাজিম কামরান চৌধুরীকে ‘ইনসাইড ম্যান’ হিসাবে গন্য করা হয়েছে, কারণ তিনি ছিলেন একাধারে উপদেষ্টা গীতিয়ারা সাফিয়া চৌধুরীর স্বামী এবং প্রধান উপদেষ্টার কাজিন। তিনি নির্বাচন ২০০৮ এর শেষ দিক পর্যন্ত পেছানোর পক্ষে যুক্তি দেন।
সেই রিপোর্টে আমরা দেখি সেনাবাহিনী ‘কিংস পার্টি’ কিংবা সেনা-ছত্রছায়ায় পার্টি করার ধারণা থেকে সরে আসছে। বরং দুই দলের ‘রিফর্মিস্টদের পজিসনিং’ নিয়ে কাজ করছে। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা এবং মঈন ইউ চৌধুরীর রাজনৈতিক মাঠে বক্তৃতা দেবার ব্যর্থতারও চিত্র দেখতে পাই। সেখানেই সেনা বাহিনীর ‘এক্সিট স্ট্র্যাটিজির’ চিন্তা উঠে আসে।
সমসাময়িক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেম্বার অভ কংগ্রেসদের জন্য বানানো এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্রুস ভ’নের একটা রিপোর্টে সেনাবাহিনীর মধ্যে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার ব্যাপার দুই দলে বিভক্তির একটা ব্যাপার দেখা যায়। সেখানে অপেক্ষাকৃত তরুণরা সামরিক বাহিনীর রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এমন কথা দেখতে পাই।
২০০৭ সালের আগষ্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষ হয় এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পরাটা সম্ভবত ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেনাবাহিনী সম্ভবত তারপর থেকেই নিজেদের ব্যাপারে স্পর্শকাতর হয়ে উঠে।
একই বছরের ২৬ নভেম্বর পাঠানো গীতা পাসির (উইকিলিক্স) এক বিশাল ব্রিফিঙে দেখতে পাই সংবাদ মাধ্যম গুলি সামরিক বাহিনীর নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ করার কথা। (Summary: Bangladeshi media are under pressure)। মজার ব্যাপার হলে নভেম্বরে এসে মিডিয়ার লোকজনের একথা মনে হল এবং কান্নাকাটি শুরু হল।
সেনাবাহিনী কতটা স্পর্শকাতর হয়ে পরেছিল, একটা উদাহরণ দেয়া যায় সেই রিপোর্ট থেকে। মঞ্জুরুল হাসান বুলবুলের বরাত দিয়ে একটা ঘটনার উল্লেখ করা হয়। কোন এক টক-শোতে একজন বক্তা সেনাবাহিনীর পিস-কোর থেকে প্রবাসী শ্রমিকেরা বেশি রেমিটেন্স পাঠায় এমন কথা বলায় সেই বক্তাকে টেলিভিশন চ্যানেল সরিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়।
তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান সবচেয়ে ‘বিড়ম্বনার’ মধ্যে পরেছে বলে মনে হয়। তিনি গীতা পাসির কাছে অভিযোগ করেন, তার প্রকাশকের নাম ‘সেই অভিযোগকৃত দুর্নীতিবাজদের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাকে তিনি ব্যাখ্যা করছেন এভাবে যে তিনি যেন সেনা বাহিনীর বেধে দেয়া ‘সীমা-অতিক্রম’ না করেন। একেই বলে ‘আয়রনি’। দেদার সে চরিত্র-হরণ করে, লিস্ট ছাপিয়ে এখন তার এই উপলব্ধি।
(চলবে)
মন্তব্য
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
এ ধরনের লেখায় লিংক যোগ করলে সুবিধা হয়।
সহমত, লিংক যোগ করলে ভাল হত। একটা অসুবিধা ছিল, অনেক জায়গা থেকে তথ্য নিয়েছি। ধন্যবাদ।
বেয়াদবী না নিলে একটা কথা বলি। আপনি অলরেডি কয়েকটা সিরিজ শুরু করেছেন যার প্রত্যেকটা খুবই ইন্ট্রেস্টিং অথবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেই সিরিজগুলোর কোনটাই আর আগাচ্ছে না। এখন এই সিরিজটা যে শুরু করলেন সেটার অগ্রগতি নিয়ে তো ভয় হচ্ছে।
পুরাপুরি একমত।
হয়ত একধরণের মানসিক অসুস্থতা, ব্যক্তিগত জীবনেও দ্রুতই 'ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলি'।
চমৎকার। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ধন্যাবাদ।
লেখকের চা'য়ের তৃষ্ণা আশাকরি পাঠককে ভোগাবে না।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
চা খাওয়া হচ্ছে গিয়ে মৌলিক অধিকার
excellent, go on
নতুন মন্তব্য করুন