তেল-গ্যাস সেক্টর – অসংলগ্ন স্মৃতিচারণ

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/১২/২০১৭ - ৭:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০৭-৮ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জ্বালানী উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম তামিম। সংবাদ মাধ্যম কিংবা এর দ্বারা প্রভাবিত জনমানসে তিনি কিছুটা বিতর্কিত ব্যাক্তিত্ব, সাধারনত বিদেশি তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষাকারী হিসাবে উপস্থাপিত হন।

সেই সময়েই গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ২৮টি ব্লকের জন্য তৃতীয় ধাপের দর-প্রস্তাবের (থার্ড রাউন্ড বিডিঙ) আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের জুন মাসে আওয়ামী লিগ সরকারের আমলে দুটি সফল প্রস্তাবকের একটি হিসাবে মার্কিন তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান কনোকোফিলিপসের সাথে গভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকের জন্য গ্যাস উৎপাদন-বন্টন চুক্তি (‘পিএসসি’) স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

অধ্যাপক তামিম দর-প্রস্তাব প্রক্রিয়ায় একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিলেন। তৃতীয় ধাপের দর প্রস্তাবের জন্য তৈরি খসড়া পিএসসি (মডেল পিএসসি ২০০৮) পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-রক্ষা জাতীয় কমিটি বা জাতীয় কমিটি এবং এই বিষয়ে “বিশেষজ্ঞ” বলে দাবিদারেরা প্রথম থেকেই মডেল পিএসসি-২০০৮ দেশের স্বার্থ বিরোধী বলে এর বিরোধিতা/এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল। মজার ব্যাপার হল, এট পুরানো পিএসসি গুলিরই সরাসরি অনুকরণ ছিল, ছোটখাট যা কিছু পরিবর্তন ছিল, যেগুলি দেশের স্বার্থ বিবেচনায়ই করা হয়েছিল।

চুক্তি যখন স্বাক্ষর করা হল, ক্ষমতায় আওয়ামী লিগ সরকার তখন। আওয়ামী লিগ সরকার, সাম্রাজ্যবাদী ‘মার্কিন’ তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানের সাথে “দেশ বিরোধী” খসড়া চুক্তি, তাও আবার তেল-গ্যাস বিষয়ক – একদম সোনায় সোহাগা। আন্দোলন স্বাভাবিক ভাবেই জোরদার হল। চুক্তির “মারাত্মক দিকগুলি” তুলে ধরে বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশ করা হল (উদাহরণ হিসাবে সাপ্তাহিকের ৯ জুন ২০১১ সংখ্যা, কালেরকন্ঠের ২১ জুনের সংখ্যা)। ফরহাদ মজহার আমার দেশ পত্রিকায় তার পুরানো লেখার প্রেক্ষিতে দুর্ধর্ষ রিপোর্ট “নামালেন” বিডিনিউজ-২৪। স্বাভাবিক ভাবেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে হাজির হলেন তিনি। দু’টি লেখাতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করতে মজহার দুটি নির্জলা মিথ্যা লিখলেন – (১) এই ধরনের ‘বিডিং’ বাংলাদেশে ‘নতুন’ এবং (২) কনকোফিলিপসকে চুক্তির জন্য নির্বাচিত পর্দার আড়ালেই করা হয়েছিল।

সেই সময়ে অরণ্যে রোদন হিসাবে পিএসসির বিস্তারিত ব্যাখ্যা লেখার চেষ্টা করেছিলাম সচলায়তনে। এখন আর সেই ব্যাখ্যায় যাব না। তবে ২০০৮ সালের খসড়া চুক্তি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার আগে জাতীয় কমিটি পূর্নাঙ্গ কোন পিএসসি দেখেছেন কিনা সেসময়ে এধরেণের একটা অস্বস্তিজনক সন্ধেহ মনে ঢোকে গেল।

তৃতীয় ধাপের দর প্রস্তাব প্রক্রিয়ার জন্য সরকার অনেক পয়সা খরচ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোড-শোর আয়োজন করেছিল এবং অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানই এ ব্যাপারে কৌতুহলী ছিল। (এবং আমাদের গভীর সমুদ্র অঞ্চলের দুই মাথায় ভারত এবং মায়ানমারে দু’টি বড় আবিস্কার ছিল, সম্ভবত ৭ এবং ৫ টিসিএফ)। যাইহোক, সেই দর প্রস্তাব প্রক্রিয়ার সময় তেল-গ্যাস শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে জানলাম তৃতীয় ধাপের দর প্রস্তাব প্রক্রিয়ায় ‘ভারসাম্য’ ঠিকমত বজায় থাকেনি, অর্থাৎ শর্তাবলী কিংবা অর্থনৈতিক দিকটা প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লাভজনক না, অর্থাৎ দেশের স্বার্থ খুবই ভালভাবে দেখা হয়েছে খসড়া চুক্তিতে।

বিদেশি তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানগুলি এই খসড়া চুক্তি যে অলাভজনক এই বিশ্লেষণে কতটা নিশ্চিত ছিল, তার একটা উদাহরণ দেয়া যায়। যখন দর-প্রস্তাব প্রক্রিয়াটি একদমই প্রাথমিক পর্যায়ে, একমাত্র অফশোরে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটি তখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটি তিন বছর মেয়াদের ‘নতুন মানব-সম্পদ উন্নয়ন’ প্রস্তাব পাঠায় তাদের প্রধান কার্যালয়ে। তাদের শংকা ছিল তিন বছরের মাথায় প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান মানব-সম্পদ নিয়ে তারা সমস্যার মুখোমুখি হবে (অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিশ্চিতভাবেই ‘ভাগিয়ে নিতে’ পারে)। প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রস্তাব খুব গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়, তারপর যখন চুক্তির খসড়া পাওয়া যায়, তখন প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত হয় – কোন সমস্যা হবে না, এবং এই মানব-সম্পদ উন্নয়ন প্রস্তাব প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলে।

যাই হোক, চুক্তি হওয়ার পর সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী তথ্য মিলাতে চেষ্ট করছিলাম। পত্রিকায় দেখছি দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া থেকে দেশ বিক্রি করে দেয়া পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য। অন্যদিকে অন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ভিতরের তথ্য পাচ্ছি প্রস্তাব অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হচ্ছে না। ইন্টারনেটে উন্মুক্ত করে দেয়া খসড়া চুক্তির পর যা সংসদে পাশ করা হল (উন্মুক্ত নয়), সেটাও দেখলাম। ছোটখাট যে পরিবর্তন হয়েছে, সেখানে শুধুই দেশের পক্ষেই গেছে। (এটাও গুরুত্বপূর্ন - এধরণের চুক্তি সংসদীয় কমিটির পর্যালোচনার পর সংসদে পাশ হয়)।

অস্বস্তি বাড়ল কারণ ২০১১ তে যখন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, আমি তখন বিদেশি তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা থেকে অনেক দূরে। পাঠকদের জানিয়ে রাখি, কোন বিদেশি তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হলে, পিএসসি অনুয়ায়ী সেই প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে করলেই সেই বরাদ্দকৃত ব্লক ত্যাগ করতে পারবে না, সেখানে একটা ন্যূনতম কাজের বাধ্যবাধকতা আছে, অন্যথায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে (১৯৯০ দশকের পিএসসি গুলোতে ক্ষতিপূরন সম্ভবত ২ মিলিয়ন ডলার ছিল, মনে করতে পারছিনা এই মুহূর্তে)।

ব্যক্তিগত ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে বিদেশি তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান এটা-সেটা করবে এমন হীনমন্যতা আমার কোনদিনই ছিল না (এটা করলে সবচেয়ে ভাল সুযোগ ছিল সামরিক সরকার গুলির আমলে)। তারপরও, সচলায়তনে লেখার আগে, ব্যাপারটা বোঝার জন্য শরণাপন্ন হয়েছিলাম পয়তাল্লিশ বছরের অভিজ্ঞ প্রোকৌশলী-টার্নড-নির্বাহী এক বিদেশি তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীর। “যদি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নাই হবে, তবে কনোকোফিলিপসের মত প্রতিষ্ঠান চুক্তি করবে কেন? তাহলে কি আরমিটেজ-মরিয়র্টি তত্ত্বের কোন সারবর্তা আছে?” হাসেন তিনি, সম্ভ্যাব্য দু’টি কারণ ব্যাখ্যা করেন, “কনোকোফিলিপস হয়ত ভাবছ শর্তাবলী ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে পরিবর্তন করতে পারবে, যেটা প্রায় অসম্ভব। কিংবা হয়ত নতুন একটা দেশে চুক্তি-স্বাক্ষরের খবর তাদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্যে যে পরিবর্তন আনবে, তা ন্যূনতম কাজের ব্যার্থতার ক্ষতিপূরণ থেকে অনেক বেশি”।

কনোকোফিলিপস কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিয়ে ব্লক ত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়েছে। এতকিছু লেখার কারণ হল, কনোকোফিলিপসের সাথে চুক্তি যেভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল, তা মোটেই সঠিক ছিল না।

হঠাৎ করে স্মৃতিচারণের কারণ হল, বহুদিন পর তেল-গ্যাস নিয়ে মাস তিনেক আগের একটা টকশো দেখলাম, যেখানে অন্তত আমন্ত্রিত বক্তারা সবাই এই ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন (যদিও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অভাবে এই টকশোর কোন ‘এন্টারটেনমেন্ট ভ্যালু’ নেই।) ম তামিম, যদিও জনমানসে একজন বিতর্কিত ব্যাক্তি, কিন্তু আমার দেখা বাংলাদেশী যিনি আসলে পুরো ব্যাপারটায় (টেকনিক্যাল, ব্যবস্থাপনা থেকে চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে) ব্যাপক জ্ঞান রাখেন। সরকারের উচিত তাকে আরও ব্যবহার করা। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ব্যাপারে তেমন কিছু জানতাম না। তার কথায় চমৎকৃত হলাম। আশা করি, তিনি জ্বালানী বিষয়ে ভাল কিছু করার চেষ্টা করবেন।

রেটোরিকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রভাবিত হলেও বদরুল ইমাম টেকনিক্যাল ব্যাপারে গভীর জ্ঞান রাখেন। (পেট্রোবাংলাকে না জানিয়ে শেয়ার অফলোডের রেটোরিকের তেমন কোন সারবর্তা নেই।)

তবে আনু মুহাম্মদ, প্রথমআলোর অরূপ রায়, ফরহাদ মজহার কিংবা জোয়ানেদ সাকির মত “তেল-গ্যাস বিশেষজ্ঞরা” বাংলাদেশের জনগণকে প্রভাবিত করে যাবে আরও বহুবছর, এটাই তেল গ্যাস সেক্টারের ভবিতব্য। রাজনৈতিক নেতারাও সুবিধামত নির্বাচনে নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার দিয়ে দিবে তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানের ‘ষড়যন্ত্রের’ উপর।

যাই হোক, কতটা অগ্রগতি হল তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের? আমার মতে হতাশজনক।

তবে বাপেক্সের কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত করার ব্যাপারে ভাল পদক্ষেপ নেয় হয়েছে। দেশের স্থলভুমিতে অবস্থিত ব্লক গুলি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ‘ইজারা’ দেবার ব্যাপারে বহুদিন পর্যন্ত আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল (সেটা আরেকটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা), যেটা পরে তুলে নেয়া হয়। গত মেয়াদে এই সরকার, যতদূর মনে পড়ে নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্থলভাগের (অন-শোর) ব্লকগুলি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হবে না, বাপেক্সকে দিয়ে কাজ করানো হবে (সমুদ্রে বা অনশোরে বাপেক্সের কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই, সেখানে প্রাথমিকভাবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারে)। সেই মতই বাপেক্সের স্থলভাগে অনুসন্ধানের জন্য বিশাল পরিকল্পনার কথা শুনেছি।

সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমি আগের লেখা গুলিতে যৌথ-উদ্যোগের কথা বলে ছিলাম (এবং ক্যারিড ইন্টারেস্টের ব্যাপারে বলেছিলাম।) বাপেক্সের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিশাল পরিকল্পনা অত্যন্ত চমৎকার উদ্যোগ। জানিনা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়েছে কিনা।

তেল-গ্যাস থেকে অনেক দূরে আমি এখন, কিন্তু কয়েকটা ব্যাপারে আলোকপাত করি।

বাপেক্সের ‘টেকনিক্যাল ব্যাপারে’ অত্যন্ত দক্ষ লোকজন আছে। একবার এক প্রতিষ্ঠানে প্রবাসী তেল-গ্যাস পেশার লোকজনকে দেশে আকর্ষণ করার জন্য গালফ স্টেটগুলোতে এবং ফারইস্টে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন দেয়া হল। দেখা গেল বিদেশে এই বিষয়ে কাজ করছে এমন অনেক প্রবাসী কাজ শুরু করেছিল পেট্রোবাংলায়। আবার দেশের ভিতরে কর্মরত বিদেশি তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানে একধরনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল (এখন আছে কিনা জানিনা), তারা যেন পেট্রোবাংলা থেকে দক্ষ লোকজন ‘ভাগিয়ে’ নিয়ে না আসে। যার ফলে পেট্রোবাংলার দক্ষ লোকজন বিদেশি তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানে খুব আসে না।

কিন্তু এই দক্ষ লোকবলের প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার দরকার বলে মনে হয়। যৌথ উদ্যোগের ব্যাপারটা আমি সবসময়ই গুরুত্ব দিয়ে দেখি। দুঃখজনক ভাবে বাপেক্সকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলির মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়ে বাপেক্সের সাফল্যকে ভুলভাবে জনমানসে উপস্থাপন করা হয়।

প্রথমত, বাপেক্স তার ‘মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি দিয়ে’ ‘এটা’ করেছে, যেটা বিদেশি প্রতিষ্ঠান পারেনি এধরণের একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ‘মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাত’' সাফল্যের মাপকাঠি না বানিয়ে বাপেক্স যাতে আধুনিক যন্ত্রপাতিতে দক্ষ হয় সেটা দেখা দরকার।

দ্বিতীয়ত, দেখা গেছে বাপেক্সের কিছু ‘আবিষ্কার’, পেট্রোবাংলার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সংবাদ মাধ্যম দ্বারা অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা কর হয়, যেটা বাপেক্সের সাফল্যকে প্রশ্নবোধক এবং ম্লান করে দেয়। (যেমন সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা দুটির সীমানায় সুনেত্রা গ্যাসক্ষেত্রের ঘটনা। ২-ডি সাইজমিক সার্ভেতে স্ট্রাকচার দেখে সংবাদ মাধ্যম বলে দিয়েছে ৩ সিএফটির মজুদ। এখানে কিছুটা অপ্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ না করে পারছি না, দুটি জেলার নাম দিয়ে তৈরি এই গ্যাসক্ষেত্রটির নাম সুনেত্রা যেই রেখে থাকুক, আমি অভিভুত। চমৎকার একটা বাংলা নাম।)

আরেকটা ব্যাপারে আমি কিছুটা শংকিত – সেটা হল বাপেক্সের সাফল্যের বিপরীতে ফান্ডের সংস্থান। জানিনা, বাপেক্স এ ব্যাপারে চাপে থাকবে কিনা। অনুসন্ধান কার্যক্রমে সাফল্যের একটা হার আছে। বাংলাদেশের স্থলভাগে অনুসন্ধানে সাফল্যের হার এই মুহূর্তে হাতের কাছে নেই, সমুদ্রে সম্ভবত ১০%। পিএসসির ভিত্তিতে ব্যর্থতার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে লোকসান বইতে হয়, সাফল্যে তাদের লাভ। বাপেক্স এত অনুসন্ধানের টাকা যোগান কোথা থেকে করবে কে জানে। যথেষ্ট টাকার যোগান নিশ্চিত না করা গেলে বাপেক্স অযথাই অর্থকষ্টে পরবে।

যাই হোক, সচলায়তনে লেখালেখির চেষ্টা করার প্রথম উদ্যেশ্য ছিল তেল-গ্যাস নিয়ে কিছু লিখব। তারপর একটা সময় শপথ করেছি এসব বিষয়ে লেখার কোন মানে নেই। আর এখন তো এসব থেকে বহুদূরে। সরকারকেও মনে হয়েছে এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমে ‘লো-প্রোফাইলে’ থাকছে। ‘কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে’! জাতীয় কমিটিও ইন্টারেস্ট হারিয়েছে, সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানের বড় অভাব।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এতদিন শুনতাম বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে, কিন্তু সম্প্রতি প্রথম আলোতে পড়লাম বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে (এবং কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রে নাকি ফুরিয়ে গেছে)! কোনটা সঠিক?

Emran

নৈষাদ এর ছবি

বাংলাদেশ হাইড্রোকার্বন ইউনিটের অক্টোবরের ২০১৭ প্রতিবেদন অনুযায়ী মাত্র ১৩ দশমিক ১৯ টিসিএফ গ্যাসের মজুদ অবশিষ্ট আছে। যথেষ্ট নেই।

গ্যাস মজুদের তথ্য ইচ্ছে মত ব্যবহার করা হয়। এই ইউনিটের গ্যাসের হিসাবের তথ্য/রেফারেন্স কোন সংবাদ মাধ্যমে ব্যবহার হতে দেখিনি।

কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক একটা উদাহরণ দেই। এই টকশোতে দেখুন “আন্তর্জাতিক নদী আইন বিশেষজ্ঞ” আসিফ নজরুল ফারাক্কা ব্যারাজের পানি প্রবাহের “তথ্য লুকানো” এই অজুহাতে (নির্জলা মিথ্যা বলে) কীভাবে মনগড়া তত্ত্ব/তথ্য দাড়া করালো। অথচ সব তথ্যই জনগণের জন্য উন্মুক্ত। এখানে হয়ত উনি জানেননা, সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তিনি ‘বিশেষজ্ঞ’ – সভা-সমিতি করে, প্রচার মাধ্যমে এই বিষয়ে অনর্গল বলে যাচ্ছেন। অথবা জেনেও ... পানি ঘোলা করছেন।

মন মাঝি এর ছবি

তেল-গ্যাস নিয়ে রাতের ঘুম হারাম করবেন না, ওগুলি কিছুই না। বাংলাদেশ আসলে ভাসছে চাপানিয়াম দুর্ধর্ষিয়াম-এর উপর। এটা মাটির উপ্রেই পাওয়া যায় এবং এর মজুদ অফুরন্ত। এর ক্ষমতাও অসীম। এটা যতদিন আছে ততদিন আমাদের বিদ্যুৎ, পানি, কলকারখানা, গাড়িঘোড়া, অর্থনীতি - কোনোকিছু নিয়েই কোনো সমস্যা হবে না। যখন কিছু থাকাতে বা চালাতে চাইবো - এটা ব্যবহার করার কারনে তখন সব থাকবে, সব চলবে। আবার যখন কিছু না থাকাতে বা না চালাতে চাইবো - তখন কিছুই থাকবে না, কিছুই চলবে না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই দু'টো ঘটনাই একই সাথে ঘটতে পারে আমাদের ইচ্ছা মতো। যে কারনে একটা জিনিস যখন সরকারের চোখে আছে এবং বিরোধীদের চোখে নেই এবং এদের কেউই আসলে জানে না - যা নিয়ে তারা কথা বলছে সেটা আসলেই আছে কি নেই, তখন এই থাকা-না থাকা-এবং না জানা - এই তিনটা দশাই "চাপানিয়াম দুর্ধর্ষিয়াম"-এর কল্যানে একই সাথে সত্য হিসেবে অস্তিত্ত্বশীল হতে সক্ষম। একে বলে ভুয়ান্টাম ট্রিনিটি" - যা মহাশক্তিধর "চাপানিয়াম দুর্ধর্ষিয়াম"-এর ইউনিক বৈশিষ্ট্য। এমন মহাশক্তিধর জ্বালানি কেবল আমাদেরই আছে। তাই, আপনি আগে যা জানতেন এবং এখন যা জানেন এবং ভবিষ্যতে যা জানবেন এবং যা আদৌ কখনও জানবেন না - তার সব কিছুই সত্যি। একই সাথে। সুতরাং চিন্তা কী? কে ঠেকায় আমাদের উন্নতি এবং শনৈঃ শনৈ অগ্রযাত্রা? জাস্ট চিল এন্ড - নো চিন্তা ডু ফুর্তি! হাসি

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

পি এস সি নিয়ে একটি গবেষণা পত্র লিখেছিলাম আঠারো বছর আগে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির একটি সেমিনারে সেটি উপস্থাপন করতে গিয়ে দেখলাম আমাদের রথী মহারথীরা এই কন্ট্রাক্ট গুলো আসলে পড়েন নি। সাংবাদিকদের অবস্থা ছিল আরও খারাপ। তখন তো আর গুগল ছিলোনা। আলতাভিস্তার খবরও আর কয়জন রাখতেন? কষ্ট করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে চিঠি লিখে তাদের উন্মুক্ত কন্ট্রাক্ট জোগাড় করার আইডিয়া আমার মাথায় এলেওতাঁদের মাথায় কেন আসেনি এটা আমাকে অবাক করে। তবে তাঁরা মেধাবী নিঃসন্দেহে। নইলে না পড়ে, না জেনে স্রেফ ফাঁকা বুলির উপরে কী করে শর্ট-মিডিয়াম-লং মার্চ করে চলেছেন বছরের পর বছর!

নৈষাদ এর ছবি

কৌতুহল-উদ্দীপক। একটা সময়ে (দশ বছর আগে) এধরণের একটা গবেষণাপত্র পড়ার জন্য অনেকের কাছেই গেছি, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে লেখা কোন গবেষণাপত্র তখন যোগাড় করতে পারিনি।

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকগণ দেশের তেল-গ্যাস সংক্রান্ত বিষয়ে আসলে অন্ধকারে আছেন। তারা ঠিক জানেন না দেশে নিশ্চিতপ্রাপ্ত মজুদের পরিমাণ কত, সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ কত, যা কিছু তোলা হচ্ছে তার বিক্রয়মূল্যের কতটা দেশ পাচ্ছে আর কতটা বাইরে যাচ্ছে, যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে তা কী কী কাজে ব্যয় করা সঙ্গত, আর কতোদিন আমাদের গ্যাসে আমাদের চলবে। এই বিষয়ে নানা জন জনগণকে নানা রকমের ভয় দেখায়। খোদ সরকারসমূহ যে রকমের ভাষায় কথা বলে তাতে জনসাধারণের ভয় কমে না, বরং সংশয় বাড়ে। সময়ের সাথে এই সংক্রান্ত তথ্যসূত্রগুলোর তথ্য এমনভাবে পালটায় তাতে সূত্রগুলোর ওপর থেকে আস্থা হ্রাস পায়। সরকার প্রতিনিয়ত নানা দেশের সাথে, নানা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করছে। তার প্রতিটি যেমন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় না, তার প্রয়োজনও নেই। কামনা করি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ, তার জনগণ ও নেতৃত্ব জাতীয় সম্পদের প্রশ্নে এই লোকটার নীতির মতো অবস্থানে থাকুক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

মজার ব্যাপার হল ইরানী মোল্লারা কিন্তু মোহাম্মদ মসাদ্দেগ-বিরোধী ক্যু-কে সমর্থন করেছিল!

Emran

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মোল্লাদের অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই জনবিরোধী হয়। সুতরাং তারা জাতীয়তাবাদী মোসাদ্দেগ সরকারের পদক্ষেপসমূহের বিরোধী হবে এবং তাদেরকে যেনতেন প্রকারেণ উৎখাতের সমর্থক হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।