উর্দু ভাষায় প্রকাশিত পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘নওয়া-ঈ-ওয়াকতের’ ১৯৭৫ সালের ২রা ডিসেম্বর সংখ্যার শীর্ষ খবরে স্থান পায় বাংলাদেশের ‘বিপ্লব’। লিবিয়ায় আশ্রিত বঙ্গবন্ধুর খুনি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সাক্ষাতকারের বরাতে সেই খবরে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের দুই অংশকে আবার একত্রিকরণের’ উদ্দেশ্যে তারা (বিপ্লবীরা) একটা ‘বিপ্লব’ (১৫ই আগষ্ট) করেছে। সেই খবরে আরও বলা হয়, যদিও কিছু সংখ্যক ‘সাম্রাজ্যবাদি দালালের তৎপরতায়’ বিপ্লব আপাতত বিঘ্নিত হয়েছে (৩রা নভেম্বররের পাল্টা অভ্যুত্থান), কিন্তু ‘পাকিস্তানের দুই অংশের এক হওয়া’ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
পরের দিন, অর্থাৎ ৩রা ডিসেম্বর, সেই পত্রিকা সেই ‘বিপ্লব’ নিয়ে বিশাল সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। অবশ্য তার আগেই, ১৯৭৫ এর আগস্টের ১৯ তারিখে হেনরি কিসিঞ্জার তার টেলিগ্রামে ‘রিকনসিলিয়েশনের’ আশা ব্যক্ত করেছিলেন। ধারণা করা যায়, ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ‘একত্রীকরণের’ স্বপ্ন আবার ফিরে এসেছিল।
ফিরে আসি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ব্যাপারে। পঁচাত্তরের ৩রা নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থানের পরপরই খুনিদের অন্যদেশে আশ্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। অবমুক্ত করা মার্কিন নথিপত্রে দেখা যায় খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেও দলবল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আশা ব্যক্ত করেছিলেন। হেনরি কিসিঞ্জার নিজে মোশতাকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারটা নিশ্চিত করলেও ‘মেজরদের’ ব্যাপারে শর্ত আরোপ করছিলেন।
আমরা জানি, ৩রা নভেম্বররের পাল্টা অভ্যুত্থানের পর অবসরপ্রাপ্ত/বরখাস্ত এবং কর্মরত সামরিক বাহিনীর ১৭-সদস্যের খুনির দল বিশেষ বিমানে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যাণ্ডে আশ্রয় নেয়। অবমুক্ত করা মার্কিন দলিলে খুনিদের পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে কিসিঞ্জারের প্রচুর চিঠি-চালাচালির আভাস পাওয়া যায়। খুনিদের পছন্দ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতদ্বয়ের প্রবল আপত্তির মুখে কিসিঞ্জার দ্বিধায় ছিলেন। যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিও খুনিদের আশ্রয়ের ব্যাপারটা বিবেচনা করছিল। এই প্রেক্ষাপটেই, ডিসেম্বরের ২১ তারিখ খুনিরা লিবিয়ায় আশ্রয় নেয়। লিবিয়ার আশ্রয়ের ব্যাপারে কে মধ্যস্থতা করেছিল সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায় না। লিবিয়ায় আশ্রিত খুনিদের জার্মানি কিংবা যুক্তরাজ্যে অবাধ যাতায়াত ছিল সেটাও তাদের পরবর্তী কার্যক্রমে প্রমাণিত হয়।
সৈয়দ নজরুল তাঁর ‘নভেম্বর ১৯৭৫’ বইতে জানাচ্ছেন, খুনি ফারুক মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষদিকে ‘মুক্তিযুদ্ধে’ যোগ দেন। কিন্তু তার ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয়ে অনেকেরই সংশয় ছিল। সত্য জানতে একটা কমিটি গঠন করা হয়, যারা তার টিকেট/সময় ইত্যাদিতে গড়মিল পান। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতামত ফারুকের বিপক্ষে থাকলেও, ফারুকের মামা এবং প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফের জোর তদবিরে সে যাত্রায় উৎরে যান।
অবমুক্ত করা মার্কিন নথিতে দেখা যায়, ফারুক বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে স্বীকার করেছেন যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আবুধাবিতে নিয়োজিত ছিলেন। তার ‘আত্মীয়দের’ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের অপরাধে তাকে আলাদা করা হয়। তবে ‘ডেইলি স্টারের’ এক খবরে দেখা যায়, ফারুক ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে লিবিয়া হয়ে দেশে ফিরে আসে। সেই খবরে বোঝা যায়, লিবিয়ার সাথে ফারুকের যোগাযোগ মুক্তিযুদ্ধের আগের। এই যোগাযোগের মাধ্যম যে পাকিস্তান, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
খুনিরা যখন লিবিয়াতে আশ্রয় নেয়, এয়ার ভাইস মার্শাল এমএজি তাওয়াবের ভায়রা জামির উদ্দীন আহমেদ তখন ত্রিপোলিতে রাষ্ট্রদূত। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেজর জেনারেল নুরুল ইসলাম (শিশু) ঢাকা থেকে লিবিয়া গিয়েছিলেন আশ্রিত খুনিদের সাথে চাকুরি বিষয়ে আলোচনা করতে। এই জেনারেল শিশুই পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের ‘রাজনৈতিক দল’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন (বিশেষকরে অন্যদলের রাজনৈতিক নেতাদের নতুন দলে যোগদান করানোর ব্যাপারে)। পরে তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন। খুনিদের নিয়োগপত্র ঢাকা থেকে লিবিয়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা, পরবর্তীকালে পররাষ্ট্রসচিব, বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এবং পরে বিকল্প ধারায় যোগ দেয়া সমশের মবিন চৌধুরী।
উল্লেখ্য, জেনারেল শিশু এবং জিয়াউর রহমান দুজনেই মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইতে চাকুরি করেছেন।
বঙ্গবন্ধু খুনিদের লিবিয়ায় আশ্রয়ের আগের ও পরের কার্যক্রমের প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর সমসাময়িক কার্যকলাপ সংক্ষেপে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমি অতি সংক্ষেপে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করব, যদিও এত বড় একটা প্রেক্ষাপটকে অতি সংক্ষেপে আলোচনা বেশ কঠিন বলে মনে হয়েছ।
যাযাবর এক বেদুইন পরিবারে জন্মগ্রহণ করা মুয়াম্মর আল-গাদ্দাফি ১৯৬৯ সালে (তখন ক্যাপ্টেন, বয়স ২৭) লিবিয়ার তৎকালীন নৃপতি মোঃ ইদ্রীস আল সেনুসীকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক প্রতিরোধহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার শাসন ক্ষমতা দখল করেন। গাদ্দাফির এ কাজে তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন তার বন্ধু এবং আদর্শ মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গামাল আব্দুল নাসের।
গাদ্দাফির কর্মকাণ্ডে আরব জাতীয়তাবাদের গভীর প্রভাব লক্ষণীয়। তিনি পূর্ব আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বিস্তৃত একমাত্র আরব রাষ্ট্র বা প্যান-আরব ধারণার ঘোর সমর্থক ছিলেন এবং তিনি নিজেকে এর নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতেন। তবে তিনি সিরিয়া ঘরানার আরব জাতীয়তাবাদের ধর্মনিরপেক্ষ অংশকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইসলাম এবং আরব জাতীয়তাবাদ এক এবং অবিচ্ছেদ্য।
সত্তরের দশকের শুরুতেই তিনি নিজের রাজ্যশাসনের মতবাদ ‘দ্য থার্ড ইন্টারনেশন্যাল থিওরি’ তিন ধাপে প্রচার করেন। পরবর্তীতে সেগুলি তিনি তার প্রকাশিত কিতাবিল আখদার বা দ্যা গ্রীন বুকে লিপিবদ্ধ করেন। তার গ্রীন বুক ইউটোপিক সমাজতন্ত্র, আরব জাতীয়তাবাদ, ইসলামিক মতবাদ এবং বেদুইন আধিপত্যবাদের এক জটিল সংমিশ্রণ। গ্রীন বুকের আলোচকেরা এতে রুশো, মাও এবং কার্ল মার্ক্সের প্রভাব দেখতে পান। সমালোচকরা ইবনে খালদুনের প্রভাবও দেখতে পান। পরে এ ব্যাপারে আলোচনা করা যাবে। তার প্রচারিত তত্ত্ব একধরণের ইসলামিক সমাজতন্ত্র।
গাদ্দাফির ৪২ বছরের স্বৈর-শাসনে সেই গ্রীন বুক লিবিয়ার ডি-ফ্যাক্টো সংবিধান হয়ে উঠে। নিজের দেশে প্রাথমিক শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সবাইকেই গ্রীন বুক বিষয়ে পড়তে হত। গাদ্দাফি তার নিজস্ব মডেলের ইসলামিক সমাজতন্ত্র অন্য দেশেও প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং একই সাথে বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়ন করতেন। ১৯৮০ সালে তার গড়া ‘ওয়ার্ড সেন্টার ফর দ্য স্টাডি এন্ড রিসার্চ অভ দ্য গ্রীন বুক’ নামের লিবিয়া ভিত্তিক থিংক-ট্যাঙ্কের প্রতি বছরের বাজেট হত মাল্টি মিলিয়ন ডলারের। প্রচুর টাকা খরচে ৩০ টা ভাষায় গ্রীন বুকের অনুবাদ হয়েছিল, আর লেখা হয়েছিল ১৪০ টার মত স্কলারলি পেপার।
এই ৩০টা ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষাও ছিল বোধ করি। বাংলাদেশে গ্রীন বুক অনুবাদ করে বিলির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাংলাদেশে গ্রীন বুক অনুবাদে যে নামটি সবচেয়ে বেশি শোনা যায়, তিনি আহমদ ছফা। দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে আহমদ ছফা একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও সলিমুল্লাহ খানসহ আরো অনেকের মতে, মীর মশাররফ হোসেন ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘বাঙালি মুসলমান’ লেখক হলেন আহমদ ছফা। বাংলাদেশে গাদ্দাফির টাকা-পয়সা বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট খবরের মত গ্রীন বুকের খবরও খুব একটা পাওয়া যায় না।
আহমদ ছফার সমসাময়িক এবং অনুজ লেখকদের লেখায় দেখতে চেষ্টা করেছি গ্রীন বুকের ব্যাপারটা। ছফার সমসাময়িক লেখক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর 'বলপয়েন্ট' বইয়ের ৩৮ পৃষ্ঠায় তার স্বভাবসুলভ লঘু চালে লেখেন, "হঠাৎ একদিন শুনি ছফা ভাই দেশে নেই। গাদ্দাফির নিমন্ত্রণে লিবিয়া চলে গেছেন । লিবিয়ায় বেশ কিছুদিন কাটিয়ে দেশে ফিরলেন। তাঁর মাথায় রঙিন গোল টুপি। আমাদের জানালেন, গাদ্দাফি নিজের হাতে তাঁর মাথায় এই টুপি পরিয়ে দিয়েছেন। তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গাদ্দাফির গ্রিন বুক অনুবাদের। ছফা ভাইয়ের অনেক কথাই কল্পনারাজ্যের। তবে এই কথাটা হয়ত ঠিক। ছফা ভাইয়ের হাতে টাকাপয়সার নাড়াচাড়া দেখা গেল। তিনি একটা প্রেস কিনে ফেললেন”। লঘু চালে হলেও, তিনি অনেক তথ্যই দেন। হূমায়ূন নিজে অবশ্য জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা প্যানেলের গুরত্বপূর্ন পদে নির্বাচিত হন, সাথে ছিলেন আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী এবং ডঃ আনোয়ার হোসেন।
ছফার চিন্তাধারার উত্তরাধিকারী এবং পক্ষসমর্থনকারী জাকির তালুকদার তাঁর ধারবাহিক নিবন্ধ ‘রক্তমাখা চাঁদের আলো অথবা নিজের কথা’র অষ্টম পর্বে লেখেন, “কিন্তু আহমদ ছফার চিন্তার কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশ। দেশপ্রেম। জানতেন, বিপ্লব ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি নাই। তাই বিপ্লবের পথের সন্ধান করতেন সবসময়। মাঝে মাঝে অতিবিপ্লবী ঝোঁকেও আক্রান্ত হতেন। ভুলও যে হয়নি তা নয়। কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল সবসময়ই সৎ। গাদ্দাফির ইসলামি সমাজতান্ত্রিক পথের কথা আকৃষ্ট করেছিল আহমদ ছফাকে। গাদ্দাফির লেখা ‘গ্রিন বুক’ বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন নিজের গরজে।”
আহমাদ মাযহার লেখেন, “আশির দশকের প্রথম দিককার ঐ সময়টায় তরুণরা বেশ রাজনীতি-সচেতন ছিল। মনে পড়ছে ঐ সময়েই লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি বেশ আলোচিত ছিলেন। লিবিয়ার সঙ্গে আহমদ ছফার কী যেন একটা যোগ ছিল। শুনেছিলাম গাদ্দাফির সবুজ গ্রন্থ নামের বইটার প্রকাশনার সঙ্গে তিনি জড়িত। লিবিয়া থেকে টাকাপয়সা পান ছফা। লিবিয়া সম্পর্কে মানুষের মধ্যে তখন ধারণা ছিল মিশ্র। তাঁর ঐ লিবিয়া কানেকশন নিয়ে অনেককেই সমালোচনা করতে শুনেছি।”
১৯৬৯ সালে লিবিয়ার ক্ষমতা দখল করার সাথে সাথেই গাদ্দাফির সাথে পাকিস্তানের শুভ সম্পর্কের শুরু। পাকিস্তানের এক থিংকট্যাংকের মতে, “Soon after the young 27 years old…on September 1, 1969 his love affair started with Pakistan”. ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের সমালোচনায় “কড়া চিঠি” দিয়ে পাকিস্তানীদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন তিনি।
১৯৭৪ সালে গাদ্দাফি যখন পাকিস্তান ভ্রমণ করেন, তখন সংসদে তাকে স্ট্যান্ডিং ওভ্যাসন দেয়া হয়েছিল এবং তার নামে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছিল। ভূট্টো প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে এক লক্ষের বেশি পাকিস্তানী নাগরিককে লিবিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পদে পাঠানো হয়েছিল। লিবিয়াতে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
পাকিস্তানে ভূট্টো-পরবর্তী সামরিক শাসকদের সাথে অবশ্য গাদ্দাফির ভাল সম্পর্ক ছিল না। ১৯৭৮ ভূট্টোকে ফাঁসি না দেয়ার জন্য জিয়াউল হককে অনুরোধ করে বার্তা পাঠিছিলেন গাদ্দাফি। এমনকী লিবিয়ার রেডিও-টেলিভিশনেও এই অনুরোধ প্রচার করা হয়েছিল। গাদ্দাফি ভূট্টোকে লিবিয়াতে আশ্রয় দেয়ার প্রার্থনাও করেছিলেন। অবশ্য জিয়াউল হক এসব অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছিলেন।
ইসলামিক সমাজতন্ত্রের ধারনা ইসলাম ধর্মের মতই পুরানো। পাকিস্তানের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে জামাল আল-দিন আফগানী ১৮৯০ সালেই এই নিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানে সমাজতন্ত্রের ধারণা পরিত্যাজ্য ছিল, কারণ মার্ক্সিস্ট সমাজতন্ত্রের সাথে ধর্ম সাংঘর্ষিক, এ ধরনের একটা ধারণা সেখানে প্রচলিত ছিল।
জুলফিকার আলী ভূট্টো যখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখনই তিনি পাকিস্তানের উত্তরণের জন্য ইসলামিক সমাজতন্ত্রের কথা প্রথম বলেন। তার পার্টি – পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মেনিফেস্টোতে ইসলামিক সমাজতন্ত্র স্থান পায় (রোটি, কাপড়া আউর মাকান)। তবে তিনি এও বলেছিলেন, সমাজতন্ত্রের বীজ ইসলাম ধর্মেই ছিল এবং সেখান থেকেই সমাজতন্ত্রের ধারণা প্রস্ফুটিত হয়েছে। তিনি এও নিশ্চিত করেছিলেন, তার দলের তৈরী কোন নীতি কিংবা আইন ইসলামের সাথে কখনই সাংঘর্ষিক হবে না।
তার এই অবস্থানের বিরুদ্ধে ইসলামিক দলগুলি একাট্টা হবার চেষ্টা করে। সবচেয়ে এগিয়ে ছিল মওদুদী। মওদুদীর সমাবেশ জনসমাগম হলেও শুধুমাত্র ইসলামের কথা বলে তিনি বেশি দূর যেতে পারেন নাই। এই পর্বে মওদুদী বনাম ভূট্টো ‘খেলা’টাও ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। যাই হোক, ৭০ এর নির্বাচনে পিপিপি পাঞ্জাব এবং সিন্ধে ৮০ সিট পায় আর জামাতে ইসলামি পায় মাত্র ৩ টা।
তখনকার বিশ্ব প্রেক্ষাপটও ছিল রাজনৈতিক ইসলাম প্রচারের অনুকূলে। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে সোভিয়েট আগ্রাসন, ফিলিস্তিন সংকট আমাদের দেশেও প্রভাব ফেলেছিল। সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতায় আসা এবং সত্তর দশকের শেষ দিকে ইরানে ইসালামি বিপ্লবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। নিজ দেশে যেভাবেই দেখা হোক, মুসলিম বিশ্বে গাদ্দাফি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
ভূট্টো যদিও ক্যাপিটালিজমের বরপুত্র ছিলেন, তার রেটোরিকে জুডিও-খ্রিস্টান ধারণার সাথে ক্যাপিটেলিজমকে এক করে দেখা হত, এবং ইসলামিক সমাজতন্ত্র এর থেকে উত্তরণের পথ হিসাবেই সামনে আনা হয়। গাদ্দাফিও তার মডেলের ইসলামিক সমাজতন্ত্রকে গণতন্ত্রের সমস্যার উত্তরণের পথ হিসাবেই প্রচার করেছিলেন। সত্তরের মধ্যভাগে জিয়াউর রহমান তার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রচার করেন।
বাংলাদেশের ইসলামিকরণ প্রক্রিয়ায় দুই সামরিক শাসকের ভূমিকা এবং জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। অথচ একসময় দেশে যারা ‘ইসলামি সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, খোলাখুলি অস্ত্রের মহড়া দিত, তাদের সাথে কারা ছিল, বুদ্ধিবৃত্তিক সাহায্য কোথা থেকে আসত, সে ব্যাপারে কোন বিশ্লেষণ চোখে পড়ে না।
জিয়াউর রহমান নিজের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামিকরণের পথে হেঁটেছিলেন। কিন্তু কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দায়িত্ব পাওয়া এয়ার ভাইস মার্শাল এমজি তাওয়াব ইসলামিক সমাজতন্ত্রে জিয়াউর রহমান থেকে এগিয়ে ছিলেন। আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, পাকিস্তানে জামায়াতে ইসালামী ভূট্টোর ইসালামী সমাজতন্ত্রে বিরোধিতা করলেও, বাংলাদেশে কোণঠাসা জামাতে ইসলামি তাওয়াবের হাত ধরেই মুজিব-পরবর্তী সময়ে পাদপ্রদীপে আসার চেষ্টা করেছিল।
১৯৭৬ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এয়ার ভাইস মার্শাল এমজি তাওয়াবের বদান্যতায় যে ইসালামী জলসার আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে শ্লোগান দেয়া হয়, ‘তাওয়াব ভাই, তাওয়াব ভাই চাঁদ-তারা পতাকা চাই’। ওই জলসায় জামায়াত-আলবদর-রাজাকারদের ছিল স্বাধীনতার পর প্রথম আত্মপ্রকাশ। ওই মজলিসে জামায়াতে ইসলামী ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে। তারমধ্যে ছিল - দেশের পতাকা বদলানো, নতুন জাতীয় সংগীত, দেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা, ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনার ভেঙে দেয়া, রাজাকারদের স্মরণে মিনার নির্মাণ - ইত্যাদি।
জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের মাত্র কয়েক মাসের মাথায় ‘ইসলামী সমাজতন্ত্রের বিপ্লবীদের’ স্বপ্ন বা মোহভঙ্গ হয়। ১৯৭৬ থেকে শুরু করে ১৯৮০ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর খুনি ইসলামি সমাজতন্ত্রের ‘বিপ্লবীরা’ বেশ কয়বার অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। এটাও প্রতীয়মান হয় যে, জিয়াউর রহমান সেই সামরিক বাহিনীর খুনির দল নিয়ে বিপাকে ছিলেন। পূর্বের কমিটমেন্টের জন্য তারা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, আইন করে সুরক্ষা দিতে হচ্ছিল, আবার নিজের গদি নিয়েও চিন্তায় ছিলেন। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করার জন্য জিয়ার আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার (পরে বিএনপি’র মহাসচিব) সংসদে সংবিধানের কুখ্যাত পঞ্চম সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন।
জিয়া সাবেক সামরিক বেসামরিক আমলা, চরম দক্ষিণ আর চরম বামপন্থী, স্বাধীনতাবিরোধী আর কিছু পেশাজীবীকে নিয়ে প্রথমে বানালেন জাগদল, যা পরে নামকরণ করা হয় বিএনপি। চিনপন্থী বামের এক বিরাট অংশ এতে যোগ দেয়।
জিয়ার আমলে ইসালামী সমাজতন্ত্রের ‘বিপ্লবীদের’ কার্যক্রমের শুধু সামরিক দিকটাই দেখা হয়। অথচ তখনকার সময়ের জঙ্গিবাদের উত্থান, ফিলিস্তিনে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ ইত্যাদিতে সরকারি মদদের বাইরে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারটা অন্ধকারেই রয়ে যায়। সামরিক বাহিনীর সদস্য ছাড়াও খুনির দলের কারো কারো পূর্ব-রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। খুনি মেজর ডালিম এবং নূর চৌধুরী সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকার সময়ে সরাসরি বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।
চিনপন্থী বামেরা কি সমাজতন্ত্রের সাথে ধর্মের কনটেক্সচুয়্যালাইজেশন করেছিল? বুদ্ধিবৃত্তিক সাহায্য কী সেখান থেকে এসেছিল? মৌলানা ভাসানী রববাইয়ার (Rububiyah) তার নিজের তর্জমা দিয়েছিলেন। তাঁর মতে সকল মানুষ এবং সম্পদ যেহেতু সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টিকর্তার খিদমতকারী হিসাবে সকলের সমান অধিকার আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এতে মহত্ত্ব আরোপ করেন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমানাধিকারবাদ (egalitarianism) বলে। মোজাফফর আহমদের মত ব্যক্তিত্ব জিয়ার আমলে অনুষ্ঠিত ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে ‘ধর্ম-কর্ম সমাজতন্ত্র’ নামে রাজনৈতিক তত্ত্ব হাজির করেন। যদিও তা বামপন্থী মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।
গবেষক ও লেখক হাসান মোরশেদ আমাদের জানাচ্ছন, ১৯৭৬ এর আগস্টে মওলানা ভাসানী লন্ডন যান চিকিৎসার জন্য। সেখান থেকে ফোনে তাঁর কথা হয় মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি সমাজতন্ত্রের বাংলাদেশের প্রাণপুরুষ গাদ্দাফির সাথে। ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে ভাসানী বাংলাদেশে বিশ্ব মুসলিম সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই সম্মেলনে গাদ্দাফিকে অতিথি হবার জন্য তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
তবে এরশাদের সময়ে ব্যাপারটা খোলাখুলি হয়ে যায়। গাদ্দাফিও তখন তার ‘ওয়ার্ড সেন্টার’ তৈরি করে অফিসিয়্যালি টাকা-পয়সা দিতে শুরু করেছে। কর্নেল ফারুক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ায়, যুক্তরাষ্ট্রে যায় বিমান কেনার দেনদরবার করতে। ১৯৮৫ সালে কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশিদ ‘১৫ আগস্ট বিপ্লবের আদর্শ বাস্তবায়ন’ সংগঠনের নামে ঢাকায় এসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। নিজেদের দল গঠন করেন, এমনকি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত রেডিও-টিভিতে পঁচাত্তরের পর সম্প্রচারিত হয় খুনিকণ্ঠ। রশিদ তাঁর দীর্ঘ ভাষণে (২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮) কথিত আগস্ট বিপ্লবের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিলেন।
খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনকালে ১৯৮০ সালে জিয়ার রহমানকে ক্ষমতাচ্যুত এবং হত্যা করার ষড়যন্ত্রকারীদের মাথায় তুলে রাখা হয়। সে ব্যাপারে পরে আলোচনা করা যাবে।
তবে এরশাদের সময়ে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে গাদ্দাফির টাকা পয়সা প্রচুর এসেছে। ইয়োরোএজের এক রিপোর্টে দেখা যায়, গাদ্দাফি বাংলাদেশে পরিচালিত বাংলাদেশ-লিবিয়া সোসাইটি, মাসিক ইসলামি টাইমস, ব্রাদার গাদ্দাফি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, প্রগতি প্রিন্টার্স ইত্যাদির জন্য এক থেকে দুই মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ থাকত। ষষ্ঠ পাণ্ডবের রেফারেন্সে ওয়েসিস বুকস, বুক প্রমোশন প্রেস, দৈনিক মিল্লাত গাদ্দাফির টাকার ভাগের ব্যাপারটা উল্লেখ করলাম। আহমদ ছফার মত বুদ্ধিজীবীকে গ্রীন বুক অনুবাদে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু আর কোন কোন ইন্টারেস্ট গ্রুপ থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক সাহায্য এসেছিল সেটা অজানাই রয়ে যায়।
(চলবে)
মন্তব্য
চমৎকার লেখা। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষাই রইলাম। "ইসলামি" বানান টা ঠিক করে দিন দয়া করে। সিরিয়াস লেখাতে ভুল বানান একটু বেশি-ই চোখে পরে। লেখার শেষে একটা গ্রন্থতালিকা দিলে আগ্রহী পাঠক উপকৃত হত।
অন আ রিলেটেড নোট, ১৯৭৬ সালে জামাতে ইসলাম-এর ৬ দফা-র তথ্যসূত্র টা দিবেন? অবিশ্বাস্য ব্যাপার যে স্বাধীনতা-র মাত্র ৫ বছরেই কিভাবে জামাতের উত্থান হল এবং এই রকম ৬ দফা দাবী জানালো। এর প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল?
ধন্যবাদ কাজী। আরও বানান ভুল আছে, ঠিক করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।
রেফারন্স দেয়া হয়নি। আসলে অনেকদিন থেকেই এই ব্যাপারটা নিয়ে পড়ছিলাম, বহু বিদেশী সংবাদপত্রের খবর আছে। তবুও গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টগুলিতে রেফারেন্স যোগ করব ভাবছি।
১৯৭৬ এর ইসলামী জলসার প্রথম খবর আসে ইত্তেফাকের ০৮/০৩/১৯৭৬ তারিখের প্রকাশনায়। সংবাদের এই প্রবন্ধটা দেখুন। বাংলাদেশ, বাঙালি ও বাংলাদেশি, নির্বাচিত প্রবন্ধে ড, আনিসুজ্জামানও লিখেছেন সম্ভবত ১৫০ পৃষ্ঠায়, আমার কাছে এই মূহূর্তে বইটি নাই বিধায় নিশ্চিত করতে পারছি না।
হাজি মনজুরুল আহসান খানও সম্ভবত সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলাম ঘোঁটার কী একটা থিসিস দিয়েছিলেন এককালে, বিশদ মনে পড়ছে না। হালের বাম চিন্তকরা দেখলাম কমবেশি জুনায়েদ বাবুনগরীর ফ্যান।
মনজুরুল আহসান খানের ব্যাপারটা হয়ত মিস করে গেছি। দেখতে হবে তো।
অবশ্য হালের বাম চিন্তকদের ব্যাপারটা এখানে আনি নাই। মন খারাপ হয়ে যায়।
খুবই কৌতুহল উদ্দিপক লেখা। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিন। বাংলাদেশের বামপন্থিদের কত রুপেই না দেখা গেছে!
হিমুর মন্তব্যে জুনায়েদ বাবুনগরীকে হঠাৎ জোনায়েদ সাকি পরে ফেলেছিলাম।
ধন্যবাদ। জুনায়েদ >> জোনায়েদ 'এসোসিয়্যাশন অভ থটস'।
অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। বাংলাদেশের ইতিহাসের এই সময়ের ব্যাপারে আমার আগ্রহ অনেক বেশি। আপনার লেখাটা চলতে থাকলে অনেক কিছু খোলাসা করে জানার সুযোগ হবে। প্রত্যেকটা কিস্তিতে তথ্যসূত্র থাকলে আরো ভালো হতো।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
ধন্যবাদ। তথ্যসূত্র দিতে চেষ্টা করব আগামীতে।
পরের পর্বের অপেক্ষায়। লিবিয়ার অর্থায়নে বাংলাদেশে যতগুলি ক্যু সংঘটিত হয়েছে ৭৫ পরবর্তী সময়ে সেগুলোর তথ্যের অপেক্ষায়ও রইলাম।
facebook
অনেক ধন্যবাদ তারেক অণু। দেখা যাক কতটুকু তথ্য জোগাড় করা যায়।
কত অজানা কাহিনী জানা যাচ্ছে! খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম
ধন্যবাদ।
প্রথমে আপনার কাছেই একটা বিচার দেই। ফিকশন, নন্-ফিকশন মিলে আপনার কতগুলো সিরিজ এখনো চলমান? পাঠকদের আশায় রেখে এভাবে ঝুলিয়ে কেন রাখেন?
১.
আমার নাওয়া-ই-ওয়াক্ত পত্রিকার প্রতিবেদনটির অথেনটিসিটি নিয়ে সন্দেহ হয়। নভেম্বরে শেষে বা ডিসেম্বরের শুরুতে খুনীর দল কোথায় ছিল? নাওয়া-ই-ওয়াক্ত তাদেরকে খুঁজে শেষে সেখানে গিয়ে সাক্ষাতকার নিয়েছিল? কেন, ১৬ই অগাস্ট থেকে ১লা নভেম্বর পর্যন্ত সাক্ষাতকার নিতে অসুবিধা কী ছিল? যদি পুনরেকত্রীকরণের উদ্দেশ্যে ‘বিপ্লব’ হয়ে থাকে তাহলে তো বড়ে ভাইয়ারা খুশিতে নাচতে নাচতে ঢাকায় এসে হামদর্দি প্রকাশ করে যেত। তা কি হয়েছে?
বস্তুত পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার পরে কি আর জামায়াতে ইসলামী বা আবদুল হক গংদের পুনরেকত্রীকরণের আহ্বানগুলোতে ভুট্টো সরকার বা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল? বিষয়টা এমন হলে ’৭৫-এর অগাস্টেই কোন না কোন ছদ্মাবরণে পাকিস্তানী সেনা দল বাংলাদেশে হাজির হয়ে যাবার কথা না?
পাকিস্তান বাংলাদেশকে শোষণে আগ্রহী ছিল, তার বশংবদ বানাতে আগ্রহী ছিল – হয়তো এখনো তাই আছে। কিন্তু পাকিস্তান এইটুকু জানে, বাংলাদেশকে ধারণ করার ক্ষমতা তার ১৯৬৫ সালেই শেষ হয়ে গেছে।
২.
বাংলাদেশের ব্যাপারে গাদ্দাফীর অতি উৎসাহ আমাকে বিস্মিত করে। উত্তর আফ্রিকা থেকে বহুদূরের একটা দেশের ব্যাপারে তার এতো আগ্রহের কোন সলিড কারণ আমি বুঝতে পারি না। বাংলাদেশে ইসলামের সৈন্যরা ক্ষমতায় বসলো নাকি নাস্তিকের দল বসলো তাতে লিবিয়া বা গাদ্দাফীর কিছু যাওয়া আসার কথা না। বঙ্গবন্ধুর খুনীর দলের প্রতি গাদ্দাফীর এই গভীর মায়ার পেছনে অন্য কোন কারণ জড়িত আছে বলে মনে হয়। এটাকে নিছক সবুজ বিপ্লব রফতানী করার মতো ব্যাপার বলে মনে হয় না। উদ্দেশ্য যদি কেবল সবুজ বিপ্লব হতো তাহলে গাদ্দাফী ১৯৭৭ সালেই খুনীর দলকে ডাম্প করে জামায়াতে ইসলামীকে এজেন্সী দিয়ে দিত।
মুক্তিযুদ্ধে ফারুক রহমান কোন পক্ষের ইমপ্ল্যান্ট কিনা সেই বিষয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। এই প্রকার খোঁজ করলে আরও কুইসলিং-এর সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
৩.
পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে সমাজতন্ত্রের ছোঁয়ার সাথে ইসলামের মিশ্রণের রূপকার হচ্ছে নীৎসেপন্থী রাজনৈতিক দার্শনিক চট্টগ্রামের জালালুদ্দিন আবদুর রহীম। পার্টি গঠনের আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকায় ভুট্টোর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ভালো ছিল। এই দুই রথীর সমন্বয়ে নয়া ফান্ডের উৎস গাদ্দাফীর সাথে পিপিপি’র জুটতে বিশেষ সময় লাগেনি।
ভূট্টো গং যদি সবুজ বিপ্লবে বিশ্বাস করতো তাহলে ১৯৭২ সালেই পাকিস্তানে সবুজ বিপ্লব হয়ে যেত। ভুট্টোর দরকার ছিল গাদ্দাফীর টাকা, এবং সে সেটা সম্ভবত যথেষ্ট।পরিমাণে নিয়েছিল তাই জিয়াউল হক গংদের সাথে গাদ্দাফীর জমেনি।
৪.
ইসলামী সমাজতন্ত্রের ধারণা স্তালিন ও তৎপরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা।
যে আইনের আওতায় ১৯৭০-এর নির্বাচন হয়েছিল তাতে নির্বাচনে অংশ নেয়া সবগুলো দলই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন প্রণয়ন না করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
সত্তরের নির্বাচনে পিপিপি’র সাফল্যের পেছনে মুসলিম লীগের ব্যর্থতা দায়ী।
জামায়াত কখনোই ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে নির্বাচনে ফার্স্ট/সেকেন্ড/থার্ড হবার ধারেকাছে ছিল না।
৫.
যেসব দেশের লোক লিবিয়াতে কাজ করতে যেত, কেবল সেসব দেশের মানুষের মনে গাদ্দাফীর ব্যাপারে একপ্রকার জনপ্রিয়তা কাজ করেছিল। এর বাইরে বাকি দুনিয়ায় গাদ্দাফীর জনপ্রিয়তা বা গ্রহনযোগ্যতা শূন্য ছিল। ওআইসি অথবা আফ্রিকান ইউনিয়নে গাদ্দাফী চরম অজনপ্রিয় নেতা ছিল।
৬.
আমার বিবেচনায় বাংলাদেশে ‘বাংলাদেশবিরোধী’ বা ‘পাকিস্তানপন্থী’ যে গ্রুপগুলো কাজ করেছে তারা মূলত নিজ উদ্যোগে যা কিছু করার চেষ্টা করেছে। কখনো কখনো বাইরে থেকে কিছু কিছু সাহায্য এসেছে বটে কিন্তু সেগুলো বহির্বিশ্বের সুগঠিত পরিকল্পনার আওতায় না হওয়ায় তাদের কোন উদ্যোগ বিশেষ ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারেনি। হালুয়া-রুটির পরিমাণের তুলনায় ভাগীদার বেশি ছিল।
জামায়াতের ব্যাপারটি ভিন্ন। তারা ইসলামী সমাজতন্ত্রী না। তারা এককালে ইরানের বিপ্লব রপ্তানীর ফান্ডও নিয়েছে, আবার সৌদী ফান্ডও নিয়েছে। জামায়াত বাংলাদেশ বা পাকিস্তানকে ‘জামায়াতী বাংলা’ বা ‘জামায়াতী পাকিস্তান’ বানাতে আগ্রহী।
জিয়াউর রহমানও কেবল নিজের ক্ষমতাই বুঝতো। সেটা টিকিয়ে রাখার জন্য রাজাকার, পাকিস্তান, সৌদী আরব, গণচীন, উত্তর কোরিয়া সবই সে গ্রহন করেছিল।
কুঁড়েঘর মার্কা কমরেড মোজাফফর আহুমেদ ১৯৭৯ সালে নির্বাচনে জেতার আগেই ‘ধর্ম-কর্ম-সমাজতন্ত্র’র তত্ত্ব হাজির করেছিলেন। এই প্রকার তত্ত্ব ন্যাপে ষাটের দশক থেকেই প্রচলিত ছিল।
মাওলানা ভাসানীকে নিরপেক্ষভাবে পাঠ করে তার স্বরূপ প্রকাশের সময় এসেছে। ইতিহাসে যার যা প্রাপ্য স্থান সেটা তাকে বুঝিয়ে দেয়াই সঙ্গত।
৭.
তালিকায় ওয়েসিস বুকস, বুক প্রমোশন প্রেস, দৈনিক মিল্লাত বাদ পড়েছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সীমাহীন অলসতাই দায়ী। ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলার সমস্যাটা অসুখের পর্যায়ে।
নন-ফিকশনে মূল ভিত্তি লোকজনের সাথে কথাবার্তা, কিন্তু গত চার বছর ‘আইসোলেশনে’ আছি, বই পত্রও হাতের কাছে পাইনা। নন-ফিকশনের মন্তব্যে লোকজন চ্যালেঞ্জ করলে ভাল হয়… নতুন তথ্য পাওয়া যায়।
১
পত্রিকার সংবাদ এবং সম্পাদকীয়ের মূল সূত্র ডিসেম্বরে স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের টেলিগ্রাম। টেলিগ্রামে বিপ্লব এবং একত্রিকরণের উপর জোর দেয়া হয়েছিল। খবর প্রকাশ করা হয়েছিল লিবিয়াভিত্তিক দূরদর্শণ এবং বেতারের দেয়া সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে।
খবরটা মূলত রেটোরিক ছিল পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। নাওয়া-ই-ওয়াক্ত ডানপন্থী জাতীয়তাবাদি পত্রিকা। সেখানে অবশ্য আরও উত্তেজক কথাবার্তা ছিল, যেমন… বাংলাদেশের লোকজন ভুল বুঝতে পারা, মুসলিম বাংলা একত্রিকরণের পক্ষে কাজ করেছে জেনে খুশি হওয়া, মুসলিম বিশ্বকে সাহায্যের আহবান … ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিসিঞ্জার কী প্রেক্ষিতে বলেছিল, মনে করতে পারছি না, রিপোর্টটা পেলে জানাব।
তবে মূল সুর তো স্বাধীনতার পরপরই আপনাদের নেতাদের কাছ থেকেই এসেছে। আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৭২ সালেই বলেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ১৯৪০ এর লাহর প্রস্তাবেই ফসল (পুরা উলটো স্পিরিট)। ভাসানীর মুসলিম বাংলাও তো দ্বিজাতি তত্ত্বেরই ভাবধারা।
২
আইডিয়ালি, প্যান আরব স্বপ্নের দলনেতার বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামাবার কথা না। তবে মাথা ঘামিয়েছিল কোন কারণে। তবে তার সবুজ তত্ত্ব এশিয়াতে প্রচারের ব্যবস্থা করেছিল। খুশবন্ত সিং যখন ইলাষ্ট্রেটেড উইকলির সম্পাদক, তিনি তখন তিন দিনের সবুজ গ্রন্থ কনফারেন্সে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন – সেখানে যাওয়া, থাকা-খাওয়া সব লিবিয়ার।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত (যিনি ১৯৭৯ খুনি গঙের বহুবার অভ্যুত্থানের কোন একটার বিচারের সাথে জড়িত ছিলেন) লিখেছেন, খুনিরা লিবিয়ায় গিয়ে ‘ইসলামী বিপ্লব’ করেছে বলে গাদ্দাফির স্নেহধন্য হয়েছিলেন। আমি পুরাপুরি একমত না।
ফারুকের ব্যাপারটা কিছুটা রহস্যময়। খুনির দল যদিও বার বার অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল, তবুও জিয়াউর রহমান খুব শক্ত কোন ব্যবস্থা নেয় নি। কিন্তু অন্যদের ব্যাপারে তিনি চরম নির্দয় ছিলেন (জিয়া সামরিক আইনে পরিবর্তন করে আপিলের সুযোগ রহিত করেছিলেন)। যদিও তিনি ৭ নভেম্বর ক্ষমতায় এসেছিলেন, ১৯৭৯ সালের পঞ্চম সংশোধনীতে ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট থেকে কর্মকান্ডকে ইনডেমনিটির আওতাভুক্ত করেছিলেন।
এমন কী খালেদা জিয়ার প্রথম শাসন আমলেও তাদের মাথায় তুলে রাখা হয়েছিল। ফারুক ১৯৭২ সালেও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে যায় অস্ত্র কিনতে আবার ১৯৮০র মধ্যভাগে খোদ আমেরিকায় যায় বিমান কেনার জন্য।
৩
ভুট্টোর ব্যাপারটা পড়তে গিয়ে জালালুদ্দিন আবদুর রহীমের ব্যপারে বিস্তারিত জানতে পারি। পাকিস্তানের এক স্টাডিতে দেখেছিলাম তাঁকে ভুট্টোর মেন্টর হিসাবে বলছে। রহীম যখন রাষ্ট্রদূত, ভূট্টো ইয়োরোপে তার সাথে পরামর্শ করতে যেত।
৪
- আমার শব্দ চয়নে ভুল ছিল হয়ত। ইসলামী সমাজতন্ত্র নিয়ে ‘একাডেমিক পেপার’ পড়তে গিয়ে ইসলামের গোড়ার দিকে যাকাত ইত্যাদির সাথে মিলিয়ে-টিলিয়ে মোটামোটি তখনকার ঘটনা এমন ধারণা দিয়েছে।
- হ্যা, এটা ঠিক।
- পুরাপুরি একমত। আমি পরিসংখ্যান ব্যবহার করেছি জামাতের এত হাকডাকের পরও খোদ পাকিস্তানে নির্বাচনে আসন সংখ্যা বুঝাবার জন্য।
৫
একটা স্টাডিতে পড়ছিলাম এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে মোটামোটি জনপ্রিয় ছিল।
৬
এ ব্যাপারগুলো তুলে আনার চেষ্টা করব।
৭
যোগ করা হল।
২।
পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া-উপনিবেশবাদের বিপরীতে (হয়তো সামরিক যোগ্যতার অভাবে সেটা মোকাবিলার একটা বিকল্প পদ্ধতি হিসেবেও) মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিককালের ধনী-রাষ্ট্রগুলি নিজেদের নিরেট বস্তুগত স্বার্থেই- বিশেষ করে জিসিসি নামধারী Cabal-টা পৃথিবীর মুসলিম রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন এবং ইনসিডিয়াস আইডিওপলিটিকাল এম্পায়ার গড়ে তুলেছে এবং তোলার চেষ্টায় ওভার্টলি এবং কোভার্টলি সার্বক্ষণিক ভাবেই নিয়োজিত আছে। মনে হয় না কোনো মুসলিম রাষ্ট্রই - তা সে যত দূরবর্তী বা ক্ষুদ্রই হোক - তাদের টার্গেট তালিকার বাইরে। তাদের টাকা আছে সেইসাথে এ্যামবিশনও অনেক বড় - শুধুই মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমান মুসলিম রাষ্ট্র নামক এই বস্তুগত ও অবস্তুগত, ডাইরেক্ট ও ইনডাইরেক্ট, ওভার্ট ও কোভার্ট স্বার্থ এবং ছদ্মপ্রক্সি-সার্ভিস হাসিলের এমন অপূর্ব ক্যাচমেন্ট এরিয়া তারা বহু সাধণা ও অর্থে গড়ে তুলেছে। এখানে জিওগ্রাফিক সাইজ বা ডিস্ট্যান্স ম্যাটার করে না। ঐসব দেশের আর্থিক ক্ষমতাও অনেক সময় ম্যাটার করে না - বরং যত গরীব হয় ততই ভাল। সেখানে গাদ্দাফির লিবিয়া তো সরাসরি তাদের এ্যাম্বিশনের পেটের মধ্যেই বিশাল একটা ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই গোঁড়া থেকেই জিসিসির সাথে গাদ্দাফির প্রবল দ্বন্দ্ব ছিল। জিসিসির অনেক রাষ্ট্রই সম্ভবত শুরু থেকেই গাদ্দাফির লিবিয়ার সাথে ফিজিকাল শত্রুতা করে আসছে নানা রূপে এবং এই গাদ্দাফি-উত্তরকালেও সেটা চলছে আরও ভয়াবহরূপে। সাথে তুরষ্ক এবং মিশরসহ আরও অনেকে যোগ হয়েছে ইদানিং (কিম্বা হয়তো আগেও ছিল)। সবাইই কোনো-না-কোনো ভাবে একটা থাবা বসিয়ে রেখেছে ঐ লিবিয়ান পাই-তে - তা সে আপাত দৃষ্টিতে ভৌগলিকভাবে যতই দূরবর্তী বা সীমানা-অসংলগ্ন দেশ হোক না কেন। গাদ্দাফি সম্ভবত জিসিসির এই আইডিওপলিটিকাল আগ্রাসী এম্পায়ারের মোকাবিলায় একটা পালটা আইডিওপলিটিকাল এম্পায়ার গড়তে চেয়েছিলেন। এই ইম্পেরিয়াল দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবেই হয়তো বাংলাদেশ, পাকিস্তান ইত্যাদির প্রতি তার এত ইন্টারেস্ট ছিল!!
****************************************
পাদটীকাঃ
কথাটা বোধহয় গ্রামাটিকালি ঠিক হবে না যা বোঝাতে চেয়েছি সেটা বোঝাতে চাইলে। বরং "কোভার্ট-প্রক্সি" টার্মটাই মনে হয় বেশি লাগসই হবে!
অঃটঃ পণ্ডিতদের আলোচনায় নাসিকা প্রবিষ্ট করে এখন লজ্জা লাগছে!
****************************************
পাণ্ডবদা, মেজর নাসির কিন্তু বলেছেন জিয়াউর রহমান 'কনফেডারেশনের' স্বপ্ন দেখতেন। মেজর নাসির সামরিক বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর পুলিশে সম্ভাব্য চাকুরির ইন্টারভিউতে একথা বলেছিল।
ভিন্নপ্রসঙ্গে: ইবন খালদুন যে অ্যাডাম স্মিথের বহু আগেই ধ্রুপদী অর্থনীতির ওপর লিখে গেছেন, জানতাম না। তাঁর কাজের ওপর একটা লেখা পড়লাম।
ইন্টারেস্টিং! ইব্ন খালদুনকে মেথডলজির বিচারে অনেকে আধুনিক ইতিহাসবিদ্যার জনক বলেন এটা জানতাম, কিন্তু অর্থশাস্ত্রের ক্ষেত্রেও যে তার অবদান আছে জানতাম না। লেখাটা একটু পড়লাম তাড়াহুড়ায়, পুরোটা পড়তে হবে।
****************************************
প্রবন্ধটা সেদিনই পড়েছি – কৌতূহলোদ্দীপক। মজার ব্যাপার হল কৈশোরের স্মৃতির সাথে এই নামটা জড়িয়ে আছে। তার মানে হল পড়াশোনার সময় খালদুনের ব্যাপারে পড়তে হয়েছ। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে মনে করতে পারলাম না কোন পাঠ্য বইতে ছিল। অর্থনীতির পাঠ্যবইতে পড়া হয়ে থাকবে হয়ত। (এবং স্মৃতি থেকে মনে হয়েছে, বাংলাতে ‘ইবনে’ পড়েছিলাম)
চমৎকার লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
আহমদ ছফা ও গাদ্দাফি সম্পর্ক আমার অজানা ছিল।
জানলাম এবং আরও জানার অপেক্ষায় রইলাম।
নতুন মন্তব্য করুন