সময়গুলো উড়ে যাচ্ছে। পেছনে ফেলে স্মৃতির পালক। বছরের শেষদিনে অস্তগামী সূর্যটার দিকে তাকাতেই মন কেমন যেন করে ওঠে! ওই সূর্যটার সাথে সাথে যেন বছরের সব হাসি-কান্না-আনন্দ-বেদনা ডুব দিচ্ছে। মনে হয়, হারিয়ে যাচ্ছে, ফুরিয়ে যাচ্ছে সব। এভাবেই তো যায়...। সুখ যায়...। দুঃখ যায়...। হারায় কতকিছু। আবার পাওয়া হয় নতুন কিছু। প্রাপ্তির কথা তেমনভাবে গেঁথে থাকে না মনে, যেমন ভাবে গেঁথে থাকে অপ্রাপ্তির বেদনা।
ছোটবেলায় বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় মনে হতো বিশাল এক ঘটনা। দায়িত্ব মনে করে বছরকে বিদায় জানাতাম, বছরের শেষদিনের অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়ে চেয়ে। যে করেই হোক সেই সূর্য ডোবা আমাকে দেখতেই হবে। সূর্যটাকে আমি বিদায় না জানালে যেন বছরটার বিদায় হবে না। নববর্ষের কার্ড কেনার ধুম ছিল তখন। সুন্দর সুন্দর কার্ড দিয়ে বন্ধুদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোতে সে কী আনন্দ! আর বন্ধুদের কাছ থেকে কার্ড পাওয়ার আনন্দতো আছেই। কার কত কার্ড সংগ্রহ হলো, কার কার্ড কত বেশি সুন্দর, এটা নিয়েই চলতো প্রতিযোগিতা। অনেক সময় ঘরেই তৈরি হতো নানারকম কার্ড।
সে-সময় বছর শেষ ও শুরুর সময়টা ছিল সবচেয়ে আনন্দের। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। পড়ালেখা নেই। প্রত্যেক শ্রেণিতে শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা নামক দৈত্যটা তখনো গজিয়ে ওঠেনি। বৃত্তি পরীক্ষা ছিল শুধু পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে। এখনকার শিশুদের পরীক্ষা শেষ বলে কিছু নেই। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে তারা দেখি এখন নানা প্রকার বৃত্তি পরীক্ষা অথবা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত।
স্কুল জীবন পেরুনোর পর অন্য অনেক অনুভূতির মত হারিয়ে গেছে বর্ষবিদায় ও বরণ নিয়ে যাবতীয় উচ্ছ্বাস! বছরের শেষ আর শুরু এখন আর বিশেষ কোনো আনন্দ নিয়ে আসে না। কার্ড নিয়ে হুড়োহুড়ি নেই। শেষ সূর্যের বিদায় নিয়ে কোনো আয়োজন নেই, প্রথম সূর্যোদয় নিয়েও কোনো আনন্দ নেই। প্রতিটি সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত ফিরে যায় একইরকম নিরেট দৈনন্দতায়। এখন অবশ্য নিষ্প্রাণ ইমেইল আর এসএমএসের হিড়িক আছে। মানুষ এখন বড় বেশি যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। অন্যের জন্য শুভ কামনার প্রকাশগুলোও আজ যন্ত্রবন্দী। ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটা মেইল লিখে পৌঁছে দেওয়া যায় হাজারজনের কাছে। কিংবা মোবাইল ফোনে একটা বার্তা লিখে ছুঁড়ে দেওয়া যায় অনেকজনের দ্বারে। সবার জন্য এক বার্তাই যেন যথেষ্ট। হাতে লেখা কার্ডে মমতা ভরা কথা সাজিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর দিন যেন হারিয়ে গেছে। সশরীরে গিয়ে স্বজনের সাথে কুশল বিনিময়ের দিন ফুরিয়েছে আগেই। এখন বিশেষ বিশেষ দিবসে একটা গণ এসএমএস ছুঁড়ে দিয়েই দায়িত্ব শেষ। এভাবেই দিন বদলায়, মানুষ বদলায়। মানুষগুলো যন্ত্র হতে থাকে। তারপরেও কোথায় যেন থেকে যায় অপরিবর্তনীয় কিছু মানবীয় স্ফুলিঙ্গ। তাই আজো মানুষ ভালোবাসে মানুষকে।
এসেছে নতুন বছর। ধুলোমলিন দিনগুলোকে সরিয়ে হাসুক নতুন দিন। যে-দিন গেছে, সে-তো চলেই গেছে। এবার দৃষ্টি প্রসারিত করবো সামনের দিনগুলোর দিকে, এ-ই তো নিয়ম। কথায় বলে, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। তবু নতুন দিন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে সবাই। ভাল কিছু হবে, এই আশাতেই মানুষ পথ চলে, স্বপ্ন বোনে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে জানে বলেই এগিয়ে যেতে পারে। স্বপ্নহীন জীবন তো মৃত্যুর সমান।
মন্তব্য
'মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।'
আসলেই?
এ বছরটা অনেক ভাল কাটুক তোমার আপু...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
' স্বপ্ন নয়,--শান্তি নয়,--কোন্ এক বোধ কাজ করে...'
তিথী, ভালো থাকার বিষয়টা একেবারেই আপেক্ষিক। কী বলিস?
লেখাটা কেমন যেন বিষাদগ্রস্ত করে দিলো। নতুন দিনেরা হাসুক তবে ..
তানিম, ভাবছিলাম, আনন্দময় একটা লেখা লিখবো, হয়ে গেল...
আপনার নতুন বছর ফুলে-ফলে-আনন্দে-আদরে কাটুক
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
উচ্ছলা, আনন্দ-আদর না হয় খুঁজে পেতে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ফুল- ফল কোথায় পাই!
মানুষ যখন অন্য প্রাণীর চেয়ে আলাদা হয়েছে ব্যবহারিক সুবিধার কারণেই হয়েছে... অন্য জন্তুরা যখন কাঁচা মাংস খায়, আমরা পুড়িয়ে মসলা মিশিয়ে খেতে শিখেছি... এই যা... যান্ত্রিকতা আমাদের মধ্যেই আছে, কেবল নতুন যন্ত্র গ্রহণে আপত্তি...
হাতপাখার বদলে ফ্যান বা তারপরে এয়ার কন্ডিশন... সভ্য মানুষের জীবনটা যান্ত্রিকই... নতুন যন্ত্রে অভ্যস্ত হওয়াটাই ব্যাপার...
আপনার জীবন সুখি হোক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ভাই, জীবনটা যান্ত্রিক নয়, যাপনটা যান্ত্রিক। যন্ত্রের সুবিধা অস্বীকার করার কোনো যুক্তি নেই। অগ্রহণযোগ্য কেবল মনের যান্ত্রিকতা।
সুখি হলাম...।
তবুও আমরা বাঁচার জন্য স্বপ্ন দেখব। আবার হাসব। আপনি ভালো থাকুন। স্বপ্ন গুলি সত্যি হোক
ডাকঘর | ছবিঘর
স্বপ্ন গুলি সত্যি হোক
স্বপ্নের আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে সত্যি হবে...! হা হা হা...
তাপস, অনেক ধন্যবাদ।
কেন হবেনা । আর যাই হোক আমি বিশ্বাস করি যে - ইফ ইউ সিনসিয়ারলি ওয়ান্ট সাম ওয়ান, টু বি ইওরস । তাই স্বপ্নের ইচ্ছেডানা থাকাও জরুরী
ডাকঘর | ছবিঘর
লেখাটার সারা শরীরে এক ধরণের বিষাদের সুর ছড়িয়ে আছে । যন্ত্র নিতে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনই আপত্তি নেই, কিন্তু একটা মেসেজ লিখে হরে দরে সবাইকে এক টিপে পাঠিয়ে দেওয়াটা এখনো ঠিক মেনে নিতে পারিনা । বড় বেশীরকম যান্ত্রিক লাগে ।
যান্ত্রিকতা যেন পেয়ে বসেছে আমাদের!
ধন্যবাদ, সাবেকা।
লেখাটাতে কোথায় যেন একটা বিষাদের সুর রয়েছে! আমরা মুখোমুখি হতে চাইনা এমন অনেক জীবন-সত্য লেখাটিতে ছড়িয়ে রয়েছে বলেই হয়ত!
জীবনের ক্ষনস্থায়ীত্ব আর সীমাবদ্ধতাকে প্রকটভাবে মনে করিয়ে দেয়!
সত্যি জীবনের এমনকি অনেক বড় বড় সত্য আমরা বিস্মৃত হই অবলীলায়; কিন্তু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অপ্রাপ্তি ঘুরে ফিরে দহন করতে থাকে নিরন্তর! আমি অনেক কিছুই পেয়েছি, কিন্তু ছোটবেলায় কোন এক শীতের ছুটিতে কাজিনদের সাথে গ্রামের মেলায় যেতে পারিনি, সেই দুঃখ এখনও যেন তরতাজা হয়ে আছে অন্তরে!
বিজ্ঞান জীবনকে সহজ করে দিয়েছে এভাবেই; কিন্তু মনের সুকুমার সৌন্দর্যগুলোকে ভোঁতা করে দিয়েছে একই সাথে! আমার মতে, আপনার লেখার সেরা লাইন এটি!
আমার কাছে জীবন মানেই স্বপ্ন! এমনকি অশীতিপর বৃদ্ধও স্বপ্ন দেখে তার পরবর্তী প্রজন্ম যেন ভাল থাকে!
ছোট্র পরিসরে সহজ সরল কথায় খুব ভাল লিখেছেন! আপনার নতুন বছরের স্বপ্নগুলো পূরণ হোক, ছড়িয়ে পড়ুক ও স্বপ্ন দেখাক অন্য সবাইকেও।
এত প্রশংসা সমৃদ্ধ মন্তব্য পেয়ে আনন্দিত হলাম। সময় ব্যয় করে লেখাটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
নতুন মন্তব্য করুন