গাল ফুলিয়ে আমার রুমে ঢুকলো ওশিন। একটু আগে তার মা তাকে বকেছে। মৃদু মারও দিয়েছে। পাঁচ বছরের একটি শিশু মুখকে যতটা গম্ভীর করতে পারে, তার চেয়ে দ্বিগুন গম্ভীর মুখে ওশিন আমাকে বললো, জানো ফুফু, মা আর দাদু দোষ করেছে।
আমি বললাম, কী দোষ করেছে?
-- মা আমাকে বকেছে, মেরেছেও! আর দাদু মায়ের বিচারটাই করলো না!
আমি তাকে শান্ত করার জন্য বললাম, ঠিক আছে, বড় হয়ে তুই বিচারক হবি। তারপর সব বিচার করে ফেলবি।
-- নাহ্, আমি বড় হয়ে বিচারক হবো না! ভদ্র মানুষ হবো।
আমাদের ওশিনের এইম ইন লাইফ দুদিন পরপর বদলায়। কদিন আগেও তার এইম ইন লাইফ ছিল ক্রমান্বয়ে জুতার দোকানদার, চিপসওয়ালা, রিকশাওয়ালা...। জুতার দোকানদার হতে চায়, দোকানের সব সুন্দর জুতা-স্যান্ডেল বাসায় নিয়ে আসবে বলে। চিপসওয়ালা হতে চায়, সারাদিন চিপস খেলেও যাতে চিপস শেষ হয়ে না যায়। আর রিকশা ওশিনের খুবই প্রিয় বাহন। কার, বাস, ট্যাক্সি এইসব বাহন তার প্রচণ্ড অপছন্দ। এসব বাহনে চড়লে তার বমি হয়। রিকশাওয়ালা হয়ে সে রিকসা নিয়ে কক্সবাজার-ঢাকা-ভুটান (যে কয়টা জায়গার নাম সে জানে) সবখানে যেতে চায়। রিকশাওয়ালা হলে কেউ তাকে গাড়িতে করে কোথাও নিতে পারবে না!
আজ ওশিনের নতুন এইম ইন লাইফ সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়ে বললাম, ওশিন, এবার কী ঠিক করলি, বড় হয়ে কী হবি তুই?
-- বলেছি তো, বড় হয়ে আমি ভদ্র মানুষ হবো। ঠোঁট ফুলিয়ে বললো ওশিন।
আমি বললাম, ভদ্র মানুষ আবার কী রকম রে?
-- বাবার মতো।
-- আচ্ছা, এ বাড়িতে তাহলে শুধু তোর বাবাই একমাত্র ভদ্র মানুষ!
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওশিন বললো, বড় হয়ে আমি কিন্তু বিয়ে করবো না।
আমি বললাম, কেন রে, বিয়ে করলে কী সমস্যা? তোর বাবা তো বিয়ে করেছে।
-- অ্যাঁ...? বাবা বিয়ে করেছে নাকি? কখন বিয়ে করলো? আমাকে বললো না যে? কাকে বিয়ে করলো বাবা?
-- কেন, তোর মাকে!
-ওমমা, তাই নাকি? তবু আমি বিয়ে করবো না। বিয়ে করলে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হয়। অনেক কাজ করতে হয়। আমি শুধু ভদ্র মানুষ হব। বাবার মত অফিসে যাবো। ল্যাপটপ নিয়ে সারাক্ষণ কাজ করবো।
-- তোর বাবা যে বিয়ে করেছে, তোর বাবাকে তো শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কাজ করতে হয় না!
--বাবা তো ছেলে, আমি তো মেয়ে।
এই পিচ্চি বলে কী রে! পুরুষজীবন-নারীজীবনের পার্থক্য এখনই বুঝে গেছে!
আমি ওশিনকে জড়িয়ে ধরে বললাম, সারাদিন যে এতো দুষ্টুমি আর চিৎকার-চেঁচামেচি করিস, ভদ্র মানুষেরা তো এরকম করে না।
ওশিন চোখ গোল করে দুহাতে আমার দুগালে চিমটি কেটে বললো, আমি তো এখনো ভদ্র মানুষ হই নি...! বড় হয়ে হব।
মন্তব্য
ওশিনের জন্য অনেক আদর রইল।
পোস্টে পঞ্চতারা দাগালাম।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
সবুজ পাহাড়ের রাজা, আপনার পাহাড় সজীবতায় ভরে থাক।
এক কথায় মিষ্টি, ভীষণ মিষ্টি লাগল। আর কোন কথা নাই।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ, তাপস।
আরে কি চমৎকার একটা ভদ্র মানুষের ছবি দেখা গেল! ভদ্র মানুষ দেখাই যায়না আজকাল। ভদ্র মানুষের জন্য এত্তগুলি আদর থাকলো।
..................................................................
#Banshibir.
ভদ্র মানুষ ওশিনের কাছে আদর পৌঁছে দেওয়া হলো।
সাবাস, বাচ্চা বাঘ একটা!
ইয়ে, বিয়ে না করার ব্যাপারটা বেশ সমর্থনযোগ্য কিন্তু
facebook
''বিবাহ একটি নিকিশাপূর্ণ ভ্রাণ্ত ধারমা!''
ছোট্ট ভদ্র মানুষটির জন্য এত্তোগুলো আদর!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথী, পৃথিবী ভ্রান্ত ধারমায় সয়লাব…
অণু, বাচ্চা বাঘই বটে-- সারাদিন কঠিন গর্জনে বাড়ির সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে ওশিন।
এইমাত্র ওশিন বললো, যারা আমাকে আদর দিয়েছে, সেসব ভদ্রমানুষকে আদর।
ওশিনের এই ধারণা গড়ে উঠেছে তার মাকে দেখে দেখে। পাঁচ বছরের একটা শিশুকেই আমরা, আমাদের পরিবার এমন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দিচ্ছি, এর চাইতে গ্লানিকর মনে হয় আর কিছু নেই।
অতীত
বিয়ের পর মেয়েদের দায়িত্ব আর কাজ বেড়ে যায় অনেক। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তো বটেই, প্রাকৃতিকভাবেও অনেক দায়িত্ব বর্তায়।
অনেক অনেক আদর মামণিকে
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এতো পাকনা!
পুরা পাকনা!
উৎসাহ যোগান, এখন থেকেই।
ওশিনের জন্য রইলো অনেক অনেক আদর।
উৎসাহ এবং আদর দুটোই পৌঁছে দিলাম ওশিনকে।
সর্বনাশ
বেঁচে থাকো বাবা
সর্বনাশ!
আশীর্বাদ গৃহীত।
এই পিচ্চিটা এই বয়সে বুঝে গেছে নারী হওয়ার অসুবিধাসমূহ। বড় হয়ে সে তাই বাবার মতো গায়ে ফু দেয়া ভদ্রলোক হতে চায়। যাকে ঘরের কোন কাজ করতে হয় না। সকালে ফিটফাট অফিসে যাওয়া, সন্ধ্যায় ফিটফাট অফিস থেকে ফেরা এর বাইরে কাজ হলো ঘুমোবার আগ পর্যন্ত ল্যাপটপ নিয়ে মগ্ন হয়ে থাকা। একবারো ভদ্রলোককে সে দেখে না রান্না ঘরে যেতে কিংবা ঘরের কোন কাজ করতে। খুব স্বাভাবিক সে বেছে নিয়েছে ভদ্র মানুষ অপশনটি।
তবে পুরো দোষ পুরুষজাতিকেও দেয়া যাচ্ছে না। কারণ অনেক পরিবারেই রান্নাঘরে পুরুষের প্রবেশাধিকার নেই। এই নিয়ম করেছে নারীজাতি। ফলে ওশিনের বাবারা আরামপ্রিয়তার সুযোগ নেয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
জয় হোক ওশিনের ইচ্ছের।
অনেক অনেক আদর ছোট্ট ভদ্র মানুষটির জন্য
লাবণ্যপ্রভা, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ওশিন গুটলুর জন্য আদর-শুভেচ্ছা
অসম্ভব মায়াকাড়া হয়েছে দিদি লেখাটা
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
মৌনকুহর, ওশিন খুশি আদর পেয়ে । খুশি ওশিনের ফুফুও, মায়াকাড়া মন্তব্য পেয়ে।
ওলে বাবালে কি মিত্তি| অনেক অনেক আদর
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
দময়ন্তী, অনেক অনেক
ভদ্র মানুষ কি নারী না পুরুষ?
ওশিন কে আদর।
পদ্মজা, ওশিন সম্ভবত ভদ্রমানুষ বলতে ভদ্রলোক অথাৎ পুরুষ বোঝাতে চেয়েছে। আমাদের বাড়িতে ওশিনের বাবাই একমাত্র পুরুষ সদস্য-- যার মতো হতে চায় সে।
সুমীপা ,ওশিনের জন্য অনেক অনেক অনেক আদর।
পৌঁছে দিও তুমি।
ঝর্ণা, তোর আদর পৌঁছে দিলাম ওশিনকে।
এই লেখাটা পড়েছিলাম যখন আমার সচলে নিক ছিলো না তখন। মানে অচল অবস্থায়! তাই বোধ হয় মন্তব্য করা হয় নি।
ওশিন এখন কেমন আছে? এখন তার এইম ইন লাইফ কি?
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ওশিন ভালো আছে।
গত কয়েকদিন ধরে একটা ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে সে-- আর কখনো চুল কাটবে না; দীর্ঘকেশী হবে।
নতুন মন্তব্য করুন