মাথাভর্তি যন্ত্রণা। সারাদেশে একের পর এক দুর্ঘটনা। নির্মম মৃত্যু। হাহাকার। সাভার ট্র্যাজেডি কাঁপিয়ে দেয় ভেতরটা। আজকাল নিজের মুখোমুখি হতে ভয় হয়। আয়নার নিজের চেহারাটা দেখে অপরাধ বোধ হয়। কেন বেঁচে আছি, এই মৃত্যুপুরীতে! এ এক ট্রমাটিক পিরিয়ড। পত্রিকা, টিভি, ব্লগ, ফেসবুকে রাতদিন মুখোমুখি বসে থাকি দুঃসময় আর অসহায়ত্বের হাত ধরে। মুক্তি নেই!
বন্দী হয়ে আছি কতদিন; চারদেয়াল নয়, হাজার হাজার দেয়ালে বন্দী! ভাবলাম, আজ অন্তত ঘরের দেয়ালটা ছেড়ে কোথাও যাবোই। বাইরে ঝাঁ-ঝাঁ রোদ। মধ্য বৈশাখের দুপুরটা তেঁতিয়ে উঠেছে তীব্রভাবেই।
রিকশায় চেপে লালদীঘি। গন্তব্য জব্বারের বলীখেলা।
প্রতি বছর বৈশাখের ১২ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে তিনদিন ব্যাপী বৈশাখী মেলা একটি বৃহৎ লোকজ উৎসব। বলীখেলা আর রেসলিং আমার মতো দুর্বল চিত্তের মানুষের জন্য পছন্দের কোনো খেলা হওয়ার কথা নয়। তবে বলীখেলাকে কেন্দ্র করে আয়োজিত বিশাল মেলায় আগত ক্রেতা বিক্রেতার উৎসুক মুখগুলো দেখতে ভালো লাগে আমার। নিম্নবিত্ত মানুষের একটি বড় বিনোদন এই মেলা। তারা সারাবছর অপেক্ষা করেন বৈশাখী মেলা আর উৎসবের জন্য। দূর-দূরান্ত থেকে নানারকম পণ্যের পসরা নিয়ে আসেন কয়েকশ বিক্রেতা। বলীখেলার চেয়ে মেলাই যেন মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে এখন। মেলার পরিধি লালদীঘির মাঠ থেকে কোতয়ালী, সিনেমা প্যালেস ও আন্দরকিল্লা মোড় পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে বসেছে কুটির শিল্পে তৈরি পণ্য ও তৈজসপত্রের পসরা।
এবছর আয়োজিত হলো জব্বারের বলীখেলার ১০৪তম আসর। এই বলীখেলার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম নগরের বক্সিরহাট ওয়ার্ডের বদরপাতি এলাকার ব্যবসায়ী প্রয়াত আবদুল জব্বার সওদাগর। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করার জন্য এ বলীখেলার প্রচলন করেছিলেন তিনি। শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বলীখেলার মূল মঞ্চে পৌঁছে দেখি চারিদিকে বিজ্ঞাপনের আগ্রাসন। প্রতিযোগিতার স্পন্সর মোবাইল অপারেটর কোম্পানী বাংলালিংক পুরো আয়োজনটাকে মোটামুটি নিজস্ব সম্পত্তি বানিয়ে ফেললো। পুরো অনুষ্ঠানস্থল দৃষ্টিকটুভাবে বিজ্ঞাপনী চাদরে মুড়িয়ে দিয়েছে তারা। ব্যানার, ফেস্টুন তো আছেই, খেলোয়াড় আর বাদ্যযন্ত্র বাদকদের গায়ে বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনী টিশার্ট চাপিয়ে, মাথায় ব্যান্ডেনা লাগিয়ে তাদের চিরায়ত সজ্জা ঢেকে দেওয়া হলো। দর্শকদের মাথায়ও বিজ্ঞাপনী ব্যান্ডেনা। কী যে উৎকট লাগছিলো!
আর যাদের নিয়ে আয়োজন তারা কী পেলেন? চ্যাম্পিয়ন বলীকে ১৫ হাজার টাকা, রানার্সআপ বলীকে ১০ হাজার টাকা, অংশগ্রহণকারী বলীদের ১ হাজার টাকা করে প্রাইজমানি আর ক্রেস্ট দিয়ে বিদায় করা হলো। অথচ পুরো আয়োজনটি উন্নত আর সুন্দর করার জন্য কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। কে জানে, জব্বারের বলীখেলার নাম কখন পাল্টে হয়ে যায় বাংলালিংক খেলা। এভাবেই কী একে একে আমাদের উৎসব, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সব বিক্রি হতে থাকবে মাল্টিন্যাশনাল বানিজ্যের কাছে!
১
২
৩
৪
৫
৬
৭
৮
৯
১০
১১
১২
১৩
১৪
১৫
১৬
[ ক্যামেরা: SONY DSC-H 50]
মন্তব্য
এটাই তো নিয়ম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনিয়মগুলো নিয়ম হয়ে যাচ্ছে!
হুমম
আচ্ছা
বাহ, চমৎকার সব ছবি!
facebook
আনাড়ি ক্লিক। ভয়ে ভয়ে পোস্ট করেছি ছবিগুলো। তোমার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম, অণু।
ছবিগুলো খুব সুন্দর
ধন্যবাদ, জেবতিক রাজিব হক।
ধন্যবাদ, স্যাম।
বহু বছর বাদে পুরনো স্মৃতি চাঙা হল । চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়ার সময় একদিন বাসা থেকে রিক্সায় গেলাম মেডিকেলে । সেই আমলে ভাড়া ছিল ছয় বা সাত টাকা । মেডিকেলে নির্দিষ্ট গেইটে পৌঁছার পর ভাড়া দিলে রিক্সাওয়ালা বলল , " আপা , আইজকা এট্টু বেশি দেন " । আমি তো অবাক !!!!!!!!!! সাত সকালে সূর্যের তেজ তখনো দারুণ সহনীয় । বৃষ্টি বাদলার দিনও নয় । তবে কেন বাড়তি ভাড়া !!!!!!!!!! কারণ জানতে চাইলে রিক্সাওয়ালা বলল , " আইজ জব্বারের বলী খেলা তো তাই " । ছবিগুলো আমার বিবর্ণ সময়টাকে রঙীন করে দিল নিমেষেই !!!!!!!!!
আফরিন আহমেদ
এমন রঙীন মন্তব্যে ধন্য হলাম, আফরিন।
অসাধারন সব ছবি। বিশেষ ভাল লেগেছে চুড়িও বিক্রেতা নারী, বেতের জিনিসপাতি বিক্রেতাসহ সব শ্রমজীবী মানুষদের ছবিগুলো।
লেখা ও ছবিতে পাঁচ তারা।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
মানুষের মুখ আমার প্রিয় বিষয়। ছবির তোলার সময়ও এটা প্রাধন্য পেয়ে গেছে।
অনেক ধন্যবাদ, জোহরা ফেরদৌসী
আমার অবশ্য সবচেয়ে সুন্দর লাগল পুতুলের ছবিটা
কে না জানে, শিশুরা পুতুল খেলতে ভালোবাসে
লেখাটা পড়ে মন খারাপ হলেও, ছবি গুলো দেখে মন ভাল হয়ে গেল । দারুণ সব ছবি।
খুশী হলাম, ধুসর জলছবি
নতুন মন্তব্য করুন