নেপালের বই এর দোকানের সুখ্যাতি শুনেছিলাম ওখানে যাবার আগে। পৌঁছে শোনা কথার সত্যতা স্বীকার করতে হোলো।
পোখারায় হিমালয়ের ছায়া আকাশে আকাশে, তাই ফেরার সময় হিমালয় অভিযানের গল্পই ব্যাগ-বন্দি করে নিলাম। বইয়ের নাম ‘ব্রেকিং ট্রেইল – আ ক্লাইম্বিং লাইফ’, লেখিকা- আরলিন ব্লুম।
আট ঘণ্টার বাস যাত্রা, পোখারা থেকে কাঠমান্ডু। বই খুলে বসলাম।
পোখারার বই এর দোকানগুলো হিমালয় থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিখ্যাত-কুখ্যাত সব রকমের পর্বতাভিযানের হাযার রকমের বই দিয়ে ছয়লাপ।
এত বই এর মাঝে এই বইটা বেছে নেবার কারণ ছিলো, পর্বতারোহণ নিয়ে অনেক লেখা আগে পড়েছি, কিন্তু নারী পর্বতারোহীর বয়ানে অভিযানের গল্প পড়িনি। আরেকটা কারণ ও ছিলো, বিদেশী মেয়েরা পাহাড়ে চড়ে বেড়াতে পারে, সেই মুক্তির স্বাদটা বই পড়ে কিছুটা পাওয়া যাবে, তাই।
বই এর ভূমিকায়, চারজন তরুণীর আমেরিকার সর্বোচ্চ শিখর, ডেনালি জয়ের শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতার মানানসই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।খুশি মনে পরের পাতায় গিয়ে চমকে গেলাম।
প্রতিটা নতুন অনুচ্ছেদের শুরুতে লেখিকার শিশুকালের নানান ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, ক্ষুদে ক্ষুদে বাঁকানো হরফে।
চার বছর বয়সী একটা মেয়ে পুতুল নিয়ে খেলছে, বাইরের বারান্দায় তার খালারা নিজেদের মাঝে আলাপ করছে, ‘এই রকম বাবা মায়ের ঘরে কি আর ভালো কিছু হবে? আরলিন কখনোই কিছু করতে পারবে না জীবনে...’
বইটা পড়া শেষ হতে হতে পরিচয় হয় আরলিনের ছেলেবেলার সাথে, কঠোর নিয়মতান্ত্রিক ইহুদী নানা-নানীর কাছে বেড়ে ওঠা, মায়ের খেয়ালি স্বভাব, বাবার অনুপস্থিতি।
আরলিন বেড়ে উঠেছিলো ৫০ এর দশকে। তখন মেয়েদের জগৎ ছিলো ঘর-সংসার আর চাকরীতে সীমাবদ্ধ। ছোটবেলা থেকেই আরলিনের নানী আর খালারা তাকে শিখিয়েছে, জীবনের সবচে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে একটা ভালো টাকার চাকরী, আর ভালো রোজগার করা ইহুদী জামাই। এই দিয়ে একটা ভদ্র-ঘরের ইহুদী মেয়ের সাফল্য মাপা হয়। ‘দ্যাখোনা তোমার মায়ের কি বেহাল দশা?’ – হচ্ছে আরলিনের প্রতি নানী-খালাদের সতর্কবার্তা।
রকম সকম দেখে আমি ভড়কে গেলাম। ব্যাপার কি? বিদেশী মেয়ের সুখময় ভ্রমণ কাহিনী পড়বো বলে বই কিনলাম, এতো দেখি আমাদের দেশের মতো অবস্থা! কিন্তু বইয়ের মলাটে দেখতে পাচ্ছি বরফ ভাঙা লাঠির উপর ভর করে কালো চুলের এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পেছনে নীল আকাশে মাথা উঁচু করে আছে হিমালয়। তাহলে মেয়েটা এত সব ঝামেলা সত্ত্বেও পাহাড়ে গেছিলো? যাক, আরও পড়ি।
আরলিনের বাড়ির লোকজন যেমনই হোক, আরলিন ছিলো সাহসী আর বুদ্ধিমতী। টাকাপয়সার টানাটানি থাকায় ওর বাড়ি থেকে কাছাকাছি কোন একটা কলেজেই ওকে পাঠাতে চেয়েছিলো, কোনরকমে একটা ডিগ্রি নিয়ে চাকরী পেলেই হয়।
কিন্তু আরলিন দারুণ ভালো ছাত্রী হওয়ায় স্কলারশিপ পেয়ে শুধু ভালো কলেজেই পড়েনি, কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করার জন্য এম.আই.টি আর বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়েও সুযোগ পেয়েছে। সায়েন্টিস্ট হিসেবে আরলিন ব্লুমের কাজ তার পর্বতারোহণের মতই দারুণ। বার্কলেতে থাকাকালীন আরলিন প্রোটিন ফোল্ডিং নিয়ে যে গবেষণা শুরু করেছিলো সেটা পরবর্তীতে হৃদরোগ, ক্যানসার, এইডস নিয়ে ফলপ্রসূ গবেষণার ভিত্তি তৈরি করেছিলো।
পর্বতারোহণ থেকে শুরু করে, বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করা, কোনটাই আরলিন সহজে করতে পারে নি। এম.আই.টি তে তখন মেয়ে পড়ুয়া ছিলই না প্রায়। গবেষণার জন্য পছন্দের বিষয় ঠিক করে প্রোফেসরের সাথে দেখা করতে গেলে প্রোফেসর সটান বলে দিয়েছে, আমি মেয়েদের পিএইচডি স্টুডেন্ট হিসেবে নেই না।
১৯৬০-৭০ এর দশকের পৃথিবী এখনকার চেয়ে অনেকটাই অন্য রকম ছিলো। তখন একজন নারীর জন্য নিজের অবস্থান তৈরি করে নেয়া সহজ ছিলো না মোটেই। আরলিন ব্লুম প্রথম দিকের নারী পর্বতারোহীদের মাঝে একজন।
ছেলেরা দলে নিতে রাজি হয় নি বলে ওরা কয়েকজন সমমনা তরুণী মিলে যাত্রা শুরু করে ডেনালি পর্বত জয় করে, এর পর বিভিন্ন মহাদেশের বিভিন্ন পর্বত জয় করার অভিযান আর থেমে থাকেনি।
পর্বতাভিযান মানেই ভীষণ কঠিনের সাথে একরকমের বোঝাপড়া। অনেক আনন্দের স্মৃতির সাথেই আছে ভয়াবহ বিষাদের স্মৃতি, বন্ধু হারানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা।
কত কত পর্বতারোহী প্রাণ দিয়েছে অভিযান-গুলোয়, কিন্তু এ এক নেশা যা কাউকে পেয়ে বসলে ছাড়ানো যায় না। পাহাড়ের একরকমের আদি, অকৃত্রিম সৌন্দর্য আছে, মানুষকে টেনে রাখে।
বই শেষ করে মনে হোলো, স্বপ্ন পূরণ ব্যাপারটা সহজ নয়।
সীমাবদ্ধতার মাঝে আমরা বড় হয়েছি বলেই হয়তো বড় স্বপ্ন দেখতে পাই না। জানি পূরণ হবে না।
কিন্তু...আরলিনদের জন্যও তো খুব সহজ ছিলো না। ওরা তখন থেমে থাকে নি, নিজের বুদ্ধি দিয়ে, কাজ দিয়ে প্রমাণ করেছে ওরা পারে। ওদের দেশের এত এত মেয়ে এখন সবকিছু মুক্তির আনন্দ নিয়ে করতে পারে কারণ একসময় কিছু কিছু মেয়ে সেই পথটা তৈরি করেছে।
বই শেষ, বিকেলের চা নিয়ে উপরতলায় যাই নানীর কাছে, পাশের বাড়ি থেকে খালা আসে। আলোচনা চলে নানী-খালাদের মাঝে, বিষয়বস্তু- মেয়েদের জীবনে বিয়ের গুরুত্ব, উপযুক্ত চাকরীর সার্থকতা...
পাহাড়ে চড়ার সময়, তুষার স্তূপের মাঝে পথ করে নেয়াকে বলে ব্রেকিং ট্রেইল। এক এক সময় এক এক জন দায়িত্ব নেয় দলের সামনে থেকে পথ ভাঙার, বাকিরা সেই পথ ধরে চলতে থাকে।
বইয়ে লেখিকার শেষ বাক্য ছিলো -
“I continue to believe that if each of us takes slow, steady steps, we can break a trail to the summits of our dreams”
সবার স্বপ্ন পূরণ যাত্রার সার্থকতা কামনা করি।
মন্তব্য
_________________
[খোমাখাতা]
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
স্বপ্ন দেখাটা জরুরী। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আমাদের স্বপ্ন দেখার সীমাবদ্ধতা তৈরি করে দেয়। কিন্তু স্বপ্ন দেখাটা জরুরী।
স্বপ্ন দেখলে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার যন্ত্রণাও সঙ্গে থাকে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের জন্য বিপজ্জনক পদক্ষেপ নেয়াও দরকার। কোনটা "বিপজ্জনক' সেই হিসেব করে কিন্তু স্বপ্নহীন সমাজই। জীবন একটা। সেটাও খুব ছোট। এইটুকু জীবন সমাজের খাদ্য হয়ে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। তারচাইতে না জন্মানোই ভালো।
সবার স্বপ্ন বেঁচে থাক। স্বপ্ন তাড়ার করবার দুঃসাহস ভর করুক সবার উপর।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আসলেই।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
আমার কাছে নারী পর্বতারোহীর আরও কিছু বই আছে, তার মধ্যে এভারেস্টজয়ী প্রথম মার্কিন নারী স্ট্যাসি অ্যালিসনের বইটা পড়তে পারেন।
কাঠমান্ডুর পিলগ্রীমেজ বুকশপে গেছিলেন?
facebook
হু, এখন নারী পর্বতারোহীদের আরো বই আছে। কিন্তু নারী পর্বতারোহীর লেখা বলে পড়বো এমন আর নয়।
একটা কৌতুহল ছিলো সেটা মিটেছে।
পিলগ্রিম খুঁজতে গিয়ে প্রায় পিলগ্রিমেজ হয়ে গিয়েছে।
এতদিন ধরে জিজ্ঞেস করে করে পাই না, পরে ফিরে আসার দিন সকালে পোস্টকার্ড কিনতে বের হয়ে একটা মোর ঘুরতেই দেখি পিলগ্রিম চোখের সামনে।
দারুণ দোকান। তবে স্পিরিচুয়ালিটি নিয়ে আর প্রতিটা রিলিজিয়ন নিয়ে যেমন কোটি কোটি বই এর আলাদা আলাদা তাক দেখলাম, পপ্যুলার সায়েন্স এর কর্নারে গিয়ে নিরাশ হলাম। প্রায় কিছুই নেই।
স্পিরিচুয়ালিটির শিক্ষা কি সায়েন্স ছাড়া সম্পূর্ণ হয়? ভাবছি ওদের মেইল করে জানাবো, যে কন্ট্রাডিক্টরি হয়ে যাচ্ছে ব্যাপার -স্যাপার।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
সুন্দর রিভিউটা মনে হলো হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে।
... ভ্রমণের বর্ণনা দিয়ে একটা আসবে নাকি ??
ভ্রমণের বর্ণনা?
হয়তো। হয়তো না।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
শেষটুকু পড়ে কেমন ধাক্কার মত লাগল। আপনি এত সুন্দর করে লেখেন ! আহা !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এবার তো আমি লিখিনি, শেষটুকুর কৃতিত্ব আরলিন ব্লুমের।
ধন্যবাদ!
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
কোটেড অংশটুকু যে আপনার নয় সে তো জানি, কিন্তু নিজের অনুভবকে সুন্দর করে তুলে আনতে খুব কম মানুষই পারেন; আপনি সেই কম জনদের একজন।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
কী চমতকার লেখা।
মানুষজন দেখলাম কী সব প্ল্যান করে সামনের সেপ্টেম্বরের
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
অর্ধ-ভ্রমণ করতে তো আর বাঁধা নেই। সেপ্টেম্বর না, মিড-অক্টোবর, পোটলাকে পিঠে করে চলে আসেন, আরলিন ব্লুম তার তিনমাসের মেয়েকে পিঠে করে আল্পসে ট্রেকিং এ গিয়েছিলো
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
পর্বতারোহীদের মধ্যে হিলারি আর তেনজিং এর নাম জানতাম। আর অধুনা জেনেছি, মুসা ইব্রাহীম, মুহিত আর তারেক অনুর নাম। আরও আছে নাকি !
পর্বতারোহণ যেমন অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে সমাদৃত, পর্বতারোহণ নিয়ে লেখা-লিখিও খুবই জনপ্রিয়।
এবং পর্বতাভিযান সংক্রান্ত যাবতীয় গদ্য-পদ্যের বিরাট ভান্ডারের এক বিশাল অনুরক্ত পাঠকশ্রেণী আছে। বাংলাতেই অনেক বই আছে কিন্তু।
শঙ্কু মহারাজ এর নাম মনে পড়ছে এই মুহুর্তে, ওনার লেখা 'ব্রহ্মলোকে' আমার পড়া প্রথম বাংলা পর্বতাভিযান গল্প।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
বাহ! এই বইটা পড়ার তালিকায় যুক্ত হলো।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
আরলিনের এই বইটা পড়েছিলাম, সেই পোখারাতেই, লেকের উপর বসে বসে। তবে আরলিন সম্পর্কে জেনেছিলাম আরো আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনে একটা নিবন্ধের সূত্র ধরে। আরলিনের "অন্নপূর্ণা" নিয়ে লেখা আরেকটি বই আছে যেটা না পড়লে এডভেঞ্চার যে কী জিনিষ তা বুঝা অসম্পূর্ন থেকে যাবে।
...........................
Every Picture Tells a Story
হু, আরলিনের 'অন্নপূর্ণা' বইটাও এবার নেপাল থেকে কিনে এনেছি।
পোখারায় কোথাও খুঁজে পাই নি। কাঠমান্ডুতেও অনেক খুঁজে পেলাম না।
ফেরার আগের দিন রাতে, থামেলের বই এর দোকান গুলাতে শেষ বারের মতো খুঁজতে খুঁজতে ফিরছিলাম, পাই নি।
শেষ যে দোকানে খুঁজলাম, সেই দোকানের ছেলেটাও খুব খুঁজে হয়রান হোলো। আমি মন খারাপ করে চলে এসেছি, একটু পর পেছন থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে ছেলেটা আসলো, পুরানো বই এর স্ট্যাক ঘেটে ছেড়া মতো একটা কপি পেয়েছে।
কি যে মন ভালো লাগলো...কি বলবো।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ধন্যবাদ
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ইস। আমার কোনো স্বপ্ন নাই।
পূরণ হয়ে গিয়েছে, এবার অন্যদের গুলা পূরণ করেন।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ডার্ভলা মারফী (Dervla Murphy)-র Full Tilt বইটা পড়েছেন?
না পড়িনি। এখন গুগল করে দেখলাম, মহিলা দেখছি অসাধারণ জীবনশক্তির অধিকারী!
অনেক ধন্যবাদ খোঁজ দেয়ার জন্য!
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
চুরানব্বইয়ে ইন্টার দেই।
পঁচানব্বইয়ে ব্যাচমেটরা সবাই যখন ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, মেডিকেলে ভর্তির জন্য এই কোচিং সেই কোচিং-এ দৌড়াচ্ছে, এই গাড়লটা, মানে আমি , তখন আসল পড়াশোনা বাদ দিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে Dervla Murphy-র এই Full Tilt বইটা ইস্যু করে বাসায় নিয়ে এসে পড়া শুরু করলাম। উপরে গাজী আজমলের জীববিজ্ঞানের বই, নীচে Full Tilt। উপরের বইটা কেবল শো। কেউ আমার পড়ার টেবিলের আশেপাশে এলে সুরুত করে নিচেরটাকে slide-in করে উপরেরটার নীচে পাঠিয়ে দেই। অনেকটা সিডি-রম ড্রাইভের ট্রে-টা যেভাবে ড্রাইভের ভিতরে ঢুকে যায় সেভাবে আরকি। যারা পড়ার টেবিলে বসে চুরি করে সেবার (সেবা প্রকাশনী) বই পড়েছেন তারা বুঝবেন।
বিশ্বাস করুন, এই বইটা পড়ার পর থেকে আমি অন্য সব ধরনের বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
নব্বই থেকে পঁচানব্বই পর্যন্ত পাঁচ ছয় বছরে আমি আর আমার ভাই স্কুল/কলেজে যাওয়া আসার ভাড়া বাঁচিয়ে, হাত খরচ বাঁচিয়ে নীলক্ষেত থেকে কেবল বই আর বই কিনেছি। সব ধরনের বই। প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় শ' বই আমরা দু'ভাই মিলে কিনে ফেলি ঐ সময়টায়। কিন্তু Full Tilt পড়ার পর থেকে আক্ষরিকভাবেই আমি অন্য genre-এর (বিশেষ করে উপন্যাসের) প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। I simply became hooked to the genre of travel literature!
ভদ্রমহিলা সেই ১৯৬৩ সালে একটা সাইকেল চালিয়ে আয়ারল্যান্ড থেকে ভারতে চলে আসেন! একা!! আজ থেকে আটচল্লিশ-উনপঞ্চাশ বছর আগের কথা। ভাবা যায়!
আয়ারল্যান্ড থেকে গ্রীস; পথে জার্মানি, তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া এবং ইউরোপের অন্যান্য আরো কয়েকটি দেশ। বর্ণনা খুব বিস্তারিত নয়, কিন্তু খুব সাবলীল। পড়তে শুরু করলে আর ছাড়তে ইচ্ছা করে না। কিন্তু আসল বর্ণনা শুরু লেখিকা ইউরোপ ছেড়ে এশিয়ায় আসার পর। তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে ভারতে আসার পথে লেখিকা তাঁর অভিজ্ঞতার যে অসাধারণ হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে মনে হবে আপনিও পুরো সফরে তাঁর সাথেই ছিলেন। তাঁর ও তাঁর বিশ্বস্ত সাইকেল Roz-কে আপনার মনে হবে অতি আপনজন।
লেখিকার ঐ প্রথম ভ্রমণটি ছিল ত্রিশ বছর বয়সে। বর্তমানে বয়স আশি। In the meantime, সারা দুনিয়া চষে বেরিয়েছেন, যার অনেকগুলোই একাকী, অনেকগুলোই সাইকেলে করে। তাঁর ভ্রমণকাহিনীগুলো তিনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন নীচের বইগুলতেঃ
Cameroon With Egbert
Eight Feet in the Andes
Full Tilt
In Ethiopia with a Mule
Ireland
Muddling through in Madagascar
On a Shoestring to Coorg
One Foot in Laos
Silverland
South From the Limpopo
Tales From Two Cities
The Island That Dared
The Ukimwi Road
The Waiting Land
Through Siberia by Accident
Through the Embers of Chaos
Tibetan Foothold
Transylvania and Beyond
Visiting Rwanda
Wheels Within Wheels
Where the Indus is Young
পঁচানব্বইয়ের সেই গ্রীষ্মে Full Tilt পড়ার পর আমি আরো একটা বই পড়ি। Kathleen Jamie-র The Golden Peak। আরেকটা অসাধারণ বই! ফলশ্রুতিতে আসল পড়াশোনা থেকে যায় যাকে বলে কিনা চাঙ্গে। আমার সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি না হতে পারার পেছনে তাই দায়ী বলা যায় ঐ দুই লেখিকাকে! আক্ষেপ নেই তাই বলে। বরং আক্ষেপ থেকে যেত যদি সেই গ্রীষ্মে ঐ দু'টা বই পড়া না হতো।
এখন আমার সংগ্রহে আছে Travel Literature (ভ্রমণকাহিনী) genre-এর প্রায় দেড়শ' বই। দিনে দিনে আরো বাড়ছে তা। দেবেন নাকি আমাকে কেউ একটা?
অগোছালো লেখার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আরে বাহ! আপনি তো দেখছি খনি বিশেষ!
অনেক ধন্যবাদ বই এর তালিকার জন্য। দুভাই মিলে লাইব্রেরী করেছেন? কি ভালো খবর!
আমরা দুজন তো খেলা আর মারামারি করেই কুল পাই নি।
খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য। আপনি অনেক পড়েন যেহেতু, পড়া পছন্দের কিছু বই নিয়ে রিভিউ দিন না কেন?
আমরাও তাহলে খোঁজ পেতাম বই এর। বই রিভিউ পোস্ট করা তো সচলায়তন রীতিমত উৎসাহিত করে।
শিজ্ঞির লেখা দিন!
ভালো থাকবেন
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
বইটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। সময়সুযোগ হলে পড়তে হবে কখনও। লেখাটা অসম্ভব ভালো হয়েছে। স্বপ্ন পূরণ তো পরের কথা, স্বপ্ন দেখতে পারাটাই একটা বিশাল ব্যাপার।
হ্যা, স্বপ্ন দেখার গুনটা মানুষ সহজেই হারাতে পারে। এত জিনিস থাকতে, যেটা করতে কিছু পয়সা লাগে না, আর সবচেয়ে সহজ, সেই গুনটাই কি না আমরা হারাই। কি বাজে ব্যাপার তাই না?
লেখা দিন, পড়ে খুশি হই।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
বইটা ধার দিও একদিন।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
দারুণ লাগলো রে।
তবে আপাতত আমার একটাই স্বপ্ন, পরীক্ষায় পাশ করা...
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
নতুন মন্তব্য করুন