সচলায়তনে মাহবুবের সাম্প্রতিক এ লেখাটা (http://www.sachalayatan.com/mahbub/book/9840) নিশ্চয় অনেকের নজরে এসেছে। লেখাটাতে মাহবুব পরিচয় করিয়েছে নাটক ‘শুভ পরি৯’এর কলাকুশলীদের। ভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য যাই হোক না কেন, এই অদম্য উৎসাহী ছেলেটার কারণে এ নাটকের সাথে আমার-ও সম্পৃক্ত হতে হল। গত ২৭শে অক্টোবর নাটকটির মঞ্চায়ন হলে-ও এর প্রস্তুতি চলছিল বেশ আগে থেকেই। তারই কিছু অংশ সচলায়তনে সবার সাথে ভাগ করার লোভটুকু সামলাতে পারলাম না।
অ্যারিজোনাতে আমার পদার্পণ মাস তিনেক আগে। নতুন স্টেটে আসতে না আসতেই আমাকে জিজ্ঞেস করা হল আমি নাটক করতে ইচ্ছুক কিনা। আমার স্বভাবসিদ্ধ নিয়মমতই নাটক করার চাইতে দেখার প্রতিই আমার ঝোঁকটা বেশী। কিন্তু হ্যাঁ বা না কিছু না বলাতে সবাই সেটাকে আমার সম্মতিসূচক লক্ষণ বলে ধরে নিল। যখন বুঝতে পারলাম সত্যি সত্যি ফেঁসে গেছি তখন মরিয়া হয়ে ফোন করলাম ভাস্কর ভাইকে। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা যখন আমাকে মঞ্চে নামাবেনই তখন কার সাধ্য আমাকে রক্ষা করেন! ভাস্কর ভাইকে ফোন করার ফলাফল হল এই উনি আমাকে বুঝালেন এই নাটক আর মঞ্চ সম্পৃক্ততা কিভাবে উনাকে শূন্য ব্যক্তিত্ব থেকে পূর্ণ ব্যক্তিত্বে উপনীত করেছে। ব্যক্তিত্বের লোভ সেদিন আমাকে আকৃষ্ট না করলে-ও ‘যা হবার হবে’ এই মর্মে নিজেকে শান্ত করলাম। নাটকের ‘হাবলু’ আর ‘জরিনা’ তো অবাক! ভাস্কর ভাই এমন কি বললেন যে আমি একথাতেই রাজি! যাই হোক, উপক্রমণিকা শেষ করে শুরু হল নাটকের রিহার্সাল। প্রথম কিছুদিন গেলো স্ক্রিপ্ট পড়া নিয়ে। আমাকে সাহস দেয়ার জন্য পরিচালক থেকে শুরু করে মোটামুটি প্রত্যেকে আমার কন্ঠে ‘সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ’ খুঁজে পেলেন। আমি প্রতি মুহূ্র্তে মনে মনে আমার বিকশিত প্রতিভার জলাঞ্জলি দিয়ে বলতে লাগলাম ‘ছেড়ে দে মা, কেদেঁ বাঁচি’। কিন্তু নাটক নামক ‘মা’ আমাকে ছাড়লেন না। এর মধ্যে কে যেন আমাকে বললেন একটা দৃশ্যে আমার আপন মনে গান গাইতে গাইতে ঢুকতে হবে। আমি তথাস্তু বলে যেই না গান গেয়ে রিহার্সাল শুরু করলাম অমনি কে যেন অতি বিনয়ের সাথে আমাকে বলে উঠল, ‘হয়েছে, হয়েছে, আর গাইতে হবে না’! ধন্যি আমার কন্ঠ! এই কন্ঠের জোরেই এ যাত্রা গান গাওয়ার হাত হতে বেচেঁ গেলাম। বেসুরো সুর আমাকে বাঁচালে-ও, নাটকের বিশেষ বিশেষ অংশে বিশেষ বিশেষ অঙ্গভঙ্গির ঝক্কিটুকু ঠিকই শেষ পর্যন্ত মাথা পেতে নিতে হয়েছিলো।
নিজের পাটটুকু ছাড়া রিহার্সালের অন্যান্য অংশগুলো ছিল খুবই মজার। ‘চান মিয়া’র আর ‘পনির’ ভাই এর গান, ‘আমলা’ ভাই এর ‘হাত্তি’ সমস্যা তো প্রায় প্রতিদিনই আমাদের হাসিয়েছিল। ‘মস্তান স্বাধীন’ এর ‘critical point’ ছিল একটাই- বেচারা খালি হাসে! তার উপরে তার বেশীর ভাগ ডায়লগই হাসির। মরার উপড় খাঁড়ার ঘা! এই হাসির জন্য কয়েকবার সে কপট ধমক-ও খাইছে। তাতে কি? ধমক খেয়ে-ও দেখি সে হাসে! পরে অবশ্য জানলাম সে বাসায় একা থাকলে-ও হাসে। আখেরাতে সে হাসি লুকানো হয়েছিল মোটা ছদ্ম গোফেঁর আড়ালে। মঞ্চ নাটকের আরেকটা ব্যাপার জানলাম- সেটা হল দরশকদের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারা। ‘উকিল’ এর ছিল এটা নিয়ে বিশাল দ্বন্দ্ব! তার মাথায় এটা কিছুতেই ঢুকছিল না কো-অ্যাক্টর এর সাথে কথা না বলে দরশকদের দিকে তাকিয়ে মানুষ কেমনে কথা বলে! উপুর্যপরি রিহার্সালের বদান্যতায় ‘উকিল’ সেটা ভালোই রপ্ত করেছিল। ‘জরিনা’ তো যতই ওর ‘থিসিস’ এর চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম করুক, ওর অসাধারণ অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ আমরা সবাই ওকে বুঝাতে সক্ষম হলাম যে নাটকে ওর প্রয়োজনীয়তাটা ওর ‘থিসিস’ এর চাইতে কোনো অংশে কম না। হয়েছে-ও তাই! নাটক শেষে পুরো হলঘর যেন ‘জরিনা’র প্রশংসায় ধন্যি ধন্যি করছিল। ‘হাবলু’র কথা আর কি বলব! অভিনয়সত্ত্বার বাইরে ওর নিত্য নতুন চিন্তা ছিল পরিচালকের খোরাক। কোথায় কন জিনিষটা ঢুকাতে হবে অথবা পরিমার্জন করতে হবে সবটাই ছিলো ওর নখদর্পণে। রিহার্সালের এই পুরো সময়টা আমি খুব উপভোগ করেছিলাম। আমার প্রাথমিক অনিচ্ছাকে তুচ্ছ করে এই আনন্দময় সময়টুকুতে আমাকে ঢোকানোর জন্য ‘হাবলু’, ‘জরিনা’ আর ভাস্কর ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য
হাঃ হাঃ হাঃ।
তবে আপনার লেখাটার অধিকাংশ বিষয় পাঠকের মাথার উপর দিয়ে যাবে। নাটকটা রিলিজ হলে পরে তাও বুঝত। দেখি দ্রুত রিলিজ করা যায় কিনা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ও হ্যাঁ, সচলায়তনে সুস্বাগতম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হা হা হা! মজা পেলাম খুব। এককালে বুয়েটে আর সিঙ্গাপুরের নানা ছোটখাটো মঞ্চনাটকে করা মজাগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। দর্শকদের দিকে তাকিয়ে অভিনয়টা না বুঝতে পেরে অনেকেই মহা যন্ত্রণার উদ্রেক করেছে কত রিহার্সেলে। হা হা হা! good ol' times! জরিনার সাথে আমাদের rag day এর শো'টা করার পরে আফসোস হয়েছিল যে মেক্যানিকালের অনুষ্ঠানে কেন ও শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে ওর বহুমুখী প্রতিভার অপচয় করত...when she had so much more to offer! হাবলুর কথা নাই বা বললাম...এখনো ফাঁক পেলেই আমাদের ঐ গীতিনাট্যে ভিডিও দেখি আর হাসি। হে হে হে! আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি আপনাদের এই নাটকটার ভিডিও দেখার। তাড়াতাড়ি আপলোড করেন মিয়া!
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
- আমিও মজা পাইলাম
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন