একাত্তরের দিনগুলি/ জাহানারা ইমাম
(২১ এপ্রিল, বুধবার, ১৯৭১)
‘আম্মা, দেশের এ অবস্থায় তুমি যদি আমাকে (রুমী) জোর করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দাও, আমি হয়তো যাব শেষ পর্যন্ত। কিন্তু তাহলে আমার বিবেক চিরকালের মতো অপরাধী করে রাখবে আমাকে। আমেরিকা থেকে হয়ত বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবো; কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কোনদিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তুমি কি তাই চাও আম্মা?’
‘···আমি (জাহানারা ইমাম) জোরে দুই চোখ বন্ধ করে বললাম, ···ঠিক আছে, তোর কথাই মেনে নিলাম। দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা, তুই যুদ্ধে যা ।’
(১লা মে, শনিবার, ১৯৭১)
‘···পাকিস্তান আর্মি যুবা ও বয়স্ক লোকদের ধরে এনে এখন আর গুলি করে মেরে ফেলছে না, তাদের শরীর থেকে শেষ বিন্দু পর্যন্ত রক্ত বের করে তারপর লাশ ফেলে দিচ্ছে। এত রক্ত কেন দরকার হচ্ছে?
দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের যে যুদ্ধ হচ্ছে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে, তাতে প্রচুর সংখ্যায় পাকিস্তানী সৈন্য জখম হচ্ছে। তাদের চিকিৎসার জন্য প্রচুর রক্ত দরকার। এত রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে নেই। তাই এভাবে রক্ত সংগ্রহ করছে ।’
(৮ আগস্ট, রবিবার, ১৯৭১)
(মুক্তিযুদ্ধ চলা কালে, রুমী একদিন তাঁর মা’র সঙ্গে দেখা করতে আসেন, অল্প ক'দিন বা অল্প সময়ের জন্য)
‘···আমার (জাহানারা ইমাম) চোখ পানিতে ভ’রে গেল। আমি ধরা গলায় বললাম, না, আমার সামনেই (সিগারেট) খা। অল্প ক’দিনের জন্য এসেছিস। সিগারেট খাওয়ার সময়টুকুও তোকে আড়াল করতে চাই নে।’
(২৪ আগস্ট, মঙ্গলবার, ১৯৭১)
‘চেনা হয়ে উঠেছে ডাঃ জাফরুল্লা চৌধুরী, ডাঃ এম এ মোবিন। এরা দু’জনে ইংল্যান্ডে এফ· আর· সি· এস পড়ছিল।
···বিলেতে চার বছর হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর যখন এফ· আর· সি· এস পরীক্ষা মাত্র এক সপ্তাহ পরে, তখনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু।
ছেলে দু’টি পরীক্ষা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আন্দোলনে অংশ নিল, পাকিস্তানী নাগরিকত্ব বর্জন করল···।’
(২৮ আগস্ট, শনিবার, ১৯৭১)
‘···আমি বললাম, চুপ কর রুমী, চুপ কর···আমার চোখে পানি টলমল করে এল।
হাত বাড়িযে রুমির মাথাটা বুকে টেনে বললাম, রুমী। রুমী এত কম বয়স তোর, পৃথিবীর কিছুই তো জানলি না।’
‘রুমী মুখ তুলে কি রকম যেন হাসল। মনে হল অনেক বেদনা সেই হাসিতে। একটু চুপ থেকে বলল, ···যদি চলেও যাই কোন আক্ষেপ নিয়ে যাব না।’
(২৯ আগস্ট, রবিবার, ১৯৭১)
(ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের নেতৃত্বে পাক আর্মি রুমী, জামী, জাহানারা ইমামের স্বামী জনাব শরীফকে ধরে নিয়ে যায়।
সবাই ফেরত আসেন, আসেন না কেবল রুমী।
শরীফ সাহেবের উপর চালানো হয় দৈহিক নির্যাতন)
(২০ নভেম্বর, শনিবার, ১৯৭১)
আজ ঈদ। (রুমী নেই)।
···আমি ভোরে উঠে সেমাই জর্দা রেঁধেছি।
···যদি রুমীর সহযোদ্ধা কেউ আসে এ বাড়ীতে। ···তারা কেউ এলে আমি চুপিচুপি নিজের হাতে বেড়ে খাওযাবো।। তাদের জামায় লাগিয়ে দেবার জন্য একশিশি আতরও কিনে লুকিয়ে রেখেছি।
(১৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, ১৯৭১)
(জাহানারা ইমামের স্বামী শরীফ সাহেব হার্ট অ্যাটাকে হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু ব্লাক আউট থাকায়, লাইফসেভিং মেশিন সময়মতো চালানো যায়নি।
১৮ ডিসেম্বর শরীফ সাহেবের মৃতদেহ বাসায় আনা হয়)।
১৭ ডিসেম্বর, শুক্রবার, ১৯৭১)
‘আমি মেজর হায়দারকে বললাম, জামী পারিবারিক অসুবিধার কারণে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারেনি। ও একেবারে পাগল হয়ে আছে। ওকে কাজে লাগাও।’
‘মেজর হায়দার জামীকে বললেন, ···ভেবে দেথ, পারবে কি না। এটা খুব টাফ জব। চব্বিশ ঘন্টা ডিউটি।’
পাঁচদিন পর জামী এই প্রথমবারের মত দাঁত বের করে হাসল, আটচল্লিশ ঘন্টার হলেও পরোয়া নেই।’
...
মন্তব্য
বন্দে মাতরম!
-----------------------------------------------
গাধারে সাবান দিয়া গোসল দেয়ানোটা গাধাপ্রীতির উজ্জ্বল নমুনা হতে পারে; তবে ফলাফল পূর্বেই অনুমান করা সম্ভব, গাধার চামড়ার ক্ষতি আর সাবানের অপচয়।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
যে তোমায় ছাড়ে, ছাড়ুক...
প্রণমি তোমায় মাতা
--------------------------
আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বেছে নেয়া অংশগুলো পড়ে আবারো গা শিউরে উঠলো।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আমি বইটা এজন্য মাত্র একবার পড়েছি, ভয় লাগে আসলেই।
কুইসলিং লেখা সাদিককে লক্ষ্য করে
পড়লেন আরিল! বেচারার জন্য আমারো খারাপ লাগে
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!
আমার টেবিলে সবসময় থাকে এই দিনলিপি। আমি পড়ি, শিউরে উঠি, শিউরে উঠি, নিজেকে শক্ত করি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন