আমি অতিথি, অতিথি হয়েই থাকবো

স্বাধীন এর ছবি
লিখেছেন স্বাধীন (তারিখ: মঙ্গল, ৩১/০৩/২০০৯ - ৩:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি লিখার চেয়ে পড়তেই পছন্দ করি বেশি। আমি ব্লগে আসি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কিছু জ্ঞান আহোরণ করবার জন্য। ভেবেছিলাম যে শুধু পড়বো আর মাঝে মাঝে মন্তব্য করবো। কিন্তু সচলয়াতনে লিখা না দিলে দেখছি আমার অতিথি সদস্যপদ ও হচ্ছে না, তাই কষ্ট করেও হলেও কিছু লিখছি। লিখতে গিয়ে বুঝতে পারছি মনের ভাব প্রকাশ করা কতোটা কঠিন একটি কাজ।

বই পড়ার অভ্যেস হয় যখন ক্যাডেট কলেজ এ পড়ি তখন। আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি সেখানে কোন বই পড়ার চলন ছিল না। আমি ছিলাম পরিবারের বড় এবং আত্মীয় স্বজনের বাসায় আমাদের যাতায়াত ও তেমন ছিল না। তারপরও আমার বই পড়ার নেশা কোথা থেকে আসলো আমি জানি না। ক্যাডেট কলেজে আমাদের বিশাল একটি লাইব্রেরী ছিল। সেখানে সব ধরনের বই ছিল, কিন্তু আমাকে বেশি টানতো গল্প উপন্যাস এর বই গুলো।

ক্যাডেট কলেজে গল্পের বই পড়ার জন্য সময় তেমন ছিল না। রাতে (মাগরিব নামাজ এর পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত) আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময় ছিল, যে সময় আমাদের পড়ালেখা করতে হতো। কিন্তু গল্পের বই পড়ার আনুমতি ছিল না সে সময়টায়। রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটা (ঘুমানোর সময়) পর্যন্ত যে কেউ তার নিজের ইচ্ছে মতো কিছু করতে পারতো। কিন্তু একটি উপন্যাস মাঝ পথে কি ফেলে রাখা যায়। তাই বাধ্য হয়ে যে সময় পড়াশুনা করার কথা সে সময় লুকিয়ে বই পড়ি। লুকিয়ে পড়তে হয় কারণ সব সময় স্যাররা ঘুরাঘুরি করতেন।

একটা মজার ঘটনা বলি। আমাদের এক স্যার ছিলেন তিনি আমাকে পছন্দ করেন, আবার শাসন ও করেন। উনি খুব ভালো ভাবেই জানতেন যে আমি পড়াশুনা ফাকি দিয়ে বই পড়ি। সেইদিন স্যার ছিলেন রাতের দয়িত্বে। সাধারনত আমরা চোঁখ/কান খোলা রাখি এবং কোন স্যার দেখলেই বই লুকিয়ে ফেলি। কিন্তু আমি এমনি মগ্ন ছিলাম বই এর মাঝে, স্যার যে আমার পাশে এসে পড়েছেন তা আমি খেয়াল করিনি। ব্যাস বই বাজেয়াপ্ত হলো। স্যার চলে গেলেন, আর আমি আরেকটি গল্পের বই বের করে পড়া শুরু করলাম। স্যার আবারো আসলেন এবং যথারীতি আবারো বই বাজেয়াপ্ত করলেন। এবার আমার মেজাজ বেশ একটু খারাপই হলো। আমিও স্যার কে বল্‌লাম আপনি আমার কয়টা বই বাজেয়াপ্ত করবেন। তারপর আমি আমার ডেস্ক খুলে দেখালাম, তাতে তখনো আরো অনেক গুলো বই জমা ছিল। বলাই বাহুল্য স্যার আমার সেই রাগ ভালো ভাবে নেন্‌নি এবং আমার বাবাকে বলে দিলেন পরবর্তিতে। বাবার কাছে ভালো বকা খেয়েছিলাম সেদিন। আজ ফেইস্‌বুক এর কল্যানে সেই স্যার কে আবার পেলাম বন্ধু হিসেবে। প্রথম প্রশ্নই ছিল - বই পড়ার কি অবস্থা।

বই পড়তে পড়তেই মনের কোনে ইচ্ছে জাগে, ইস্‌ আমি যদি এদের মতো লিখতে পারতাম! কিভাবে তাঁরা এতো সুন্দর করে পাঠকের মানের কথাটি তুলে ধরে। মনে হলো কিছু লিখতে হলে অনেক অনেক জানতে হবে। জানার সাত সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে। সেই জানার চেষ্টাই করছি আজো। মনে হচ্ছে না যে এক জনমে সব জানার শেষ হবে। শুধু সচলয়াতনে একটি অতিথি সদস্য পদ পাবার জন্য লিখার দুঃসাহস দেখিয়ে ফেল্‌লাম। শুভ কামনা সকলকে।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আরও লিখুন। অপেক্ষায় থাকলাম। অতিথি লেখকের ব্লগে জমা হওয়া লেখাও পাঠকের নজর এড়ায় না। লুকিয়ে বই পড়ার জন্য একটা সময়ে কত কষ্ট সইতে হয়েছে। আহা, সেই দিনগুলি!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধ ন্যবাদ আপনাকে। লিখতে তো চাই, কিন্তু আমার পি এইচ ডি টা কে ক রে দিবে আর বাচ্চাদের কে কেই বা খাওয়াই দিবে (মা অন্য বাচ্চা নিয়ে ব্যাস্ত)। এখন সময় আর নিজের জন্য নেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

সিসিবি আর সচল দুটোতে রেগুলার হবার চেষ্টা করছি। সময় বের করা খুব কঠিন। তোমাদের ব্যাচের অনেকেই দেখি খুব রেগুলার। খুব ভালো এটা। আমি ব্লগ এর দেখা পেলাম এই মাত্র দুই মাস হ লো। পি এইচ ডি বাদ দিয়ে এখন ব্লগে পড়ে থাকি। দেখা যাক কয়দিন চলাতে পারি।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আপনাকে সুস্বাগতম। লিখে যান!

টাইটেলের বানান ভূলটা একটু চোখে লাগছে, ঠিক করে দেয়া যায়?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও এই মাত্র খেয়াল করলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। কিন্তু আমি পরিবর্তন করতে পারছি না। কিভাবে পরিবর্তন করবো?

রায়হান আবীর এর ছবি

যা মনে আসে লিখুন, মনের আনন্দে লিখুন -

শুভকামনা রইলো ...

আকতার আহমেদ এর ছবি

সচলে স্বাগতম
আমরা যারা এখন সচল, তাদের সবাই কিন্তু অতিথি হিসেবে লিখতে লিখতেই এক সময় পূর্ণ সচল হয়েছে। নিয়মিত লিখুন।
শুভ কামনা...

রণদীপম বসু এর ছবি

জগতে সবচাইতে কঠিন কাজ হচ্ছে গুছিয়ে কথা বলা, যা আমি পারি না। এবং জগতের সবচাইতে সহজ কাজ হচ্ছে কিছু লিখে ফেলা, যা করতে গিয়ে আমি লেজেগোবরে করে ফেলি। কিন্তু বেশরম বলেই এখনো লেখার দুঃসাহস দেখাই। অতএব আপনি লিখতে পারেন না কথাটা আমার কাছে একটা আচানক কথা হিসেবেই মনে হয়েছে। যা ইচ্ছে তাই লিখে ফেলবেন। দেখবেন কী সুন্দর একটা লেখা তৈরি হয়ে যায়। অভিনন্দন আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

ধ ন্যবাদ দাদা। যা ইচ্ছে তাই লিখে ফেলবো। পড়ার দায়িত্ব তো আপনাদের।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সুন্দর লেখা।

সচলায়তনে আপনাকে স্বাগতম, মোস্তফা ভাই। নিয়মিত লিখতে থাকুন। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা থাকল।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমারো আপনার দশাগো ভাই। অনেক সময় লাগছে বাংলায় লিখতে।
আর মনের ভাব প্রকাশ করাতো শিখতে আসলাম এখানে।

তুষার
তুষার@জিমেইল.কম

কীর্তিনাশা এর ছবি

সুস্বাগতম স্বাধীন ভাই হাসি

আপনি তো ভাই ভীষণ অমায়িক। এত সুন্দর একটা লেখা লিখে বলছেন লিখতে জানেন না। অ্যাঁ

পাঁচতারা দিতে বাধ্য হলাম হাসি

আরো লিখুন। লিখে লিখে হাতের ব্যাথায় অস্থির হয়ে উঠুন। হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। পাচঁতারা দিয়ে আমাকে একদম লজ্জায় ফেলে দিলেন।

নুপুর এর ছবি

আপনি তো সাহস করে সুন্দর লিখে ফেললেন। আমি তো সাহস ই করতে পারলাম না।লিখতে থাকেন।শুভ কামনা রইল।

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

এইটা ঠিক বলেননাই আপু। আপনার লেখা আমার পড়তে অনেক মজা লাগে। কোথায় যে গেলেন আপনার লেখা দেখাই যায়না আজকাল !
-------------------------------

--------------------------------------------------------

রাজীব এর ছবি

মোস্তফা ভাই,

দারুন লিখেছেন।চালিয়ে যান...আপনাদের লেখা পরতে পরতে হয়ত আমরা একদিন লেখার সাহস পাব।

রাজীব
এডমন্টন, এবি
কানাডা

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ রাজ়ীব। আর যাই করো কোর্স শেষ করার আগে এই নেশায় যাইয়ো না।

সচল জাহিদ এর ছবি

মোস্তফা ভাই

সচল জগতে আপনাকে সুস্বাগতম। আপনার নিকটাও পছন্দ হয়েছে 'স্বাধীন'। পৃথিবীর বুকে কিছু দাগ রেখে যেতে লিখে যান, অন্তত মাসে দুইটা থেকে তিনটা লেখা চাই। মাহিন আর রাইসা এই দুই সন্তানকে নিয়েও রীতিমত পড়াশুনা, খেলাধুলা, সামাজিক অনুষ্ঠান, নেতৃত্ব সবখানেই সফল হয়েছেন, এখানেও তাই সময়ের অভাব হবেনা। আমার জানা মতে আপনি একসময় বিশ্ব ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। ওই গুলার একটা অনুবাদ সিরিজ আকারে লিখেন ভাইয়া।

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ জাহিদ। লিখতে আর পড়তে তো ইচ্ছে করেরে, কিন্তু সময়টা পাই কোথা। এই যে লিখছি আর ম ন্তব্য করছি সবইতো রিসার্চ এর টাইম থেকে নেওয়া। তুমি নিজেও ভাল করে জানো তা। তার পরেও আশা করি খেলাধুলা, সংসার করেও রিসার্চ যখন চলছে, তাতে আরো একটা নেশা না হয় চালিয়ে নেওয়া যাবে। হয়তো কার্ড খেলাটা স্যাক্রিফাইস্‌ করতে হবে। হেঃ হেঃ ।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সচলে অতিথি হিসেবে থাকাটাই ভালো ।
আমি দেখেছি , যারা অতিথি থাকে , তারা দূর্দান্ত লেখা দেয় এবং নিয়মিত দেয় ।
অতিথি থেকে সচল হওয়ার পরেই বেশ একটা ভালো সংখ্যার সচল কেন যেন মিইয়ে যান।

মডারেটরদের উচিত অতিথিদের সচল না বানিয়ে বেশিদিন ঝুলিয়ে রাখা ।
তাহলে লেখাগুলো নিয়মিত পেতে পারি আমরা । হাসি

স্বাধীন এর ছবি

কোন মডু ভাইয়েরা যদি আমার শিরোনামে 'আতিথি' বানানটি ঠিক করে দিয়ে 'অতিথি' অর্থাৎ 'আ' এর স্থলে 'অ' করে দিতেন , তা হলে ভাল হতো। ইমেইল এ জানিয়েছিলাম কিন্তু এখনো ঠিক না হওয়াতে এখানে মন্তব্য করে দেখছি যদি কারো দৃষ্টি পড়ে।

রিখি এর ছবি

বাহ্‌, আপনি তো দেখি এইলেখা দেওয়ার তিন মাসের মাথায় সচল হয়ে গেলেন। বেশ ভালো লিখেছেন তো, এইরকম লেখা আর দ্যান-না কেন?

স্বাধীন এর ছবি

বাহ, পুরোনো লেখায় মন্তব্য পেলে তো ভাল লাগে। আমার কিন্তু সচল হতে তিন মাস নয়, ছয় মাস লেগেছে। আপনিও লিখে যান, এক দিন সচল হয়ে যাবেন। নিজের গপ্প লিখি না, এইটা প্রথম লেখা বলে ভুলে লিখে ফেলেছিলাম হাসি । তয় যদি কোন দিন বিখ্যাত হয়ে যাই, তখন লিখতেও পারি দেঁতো হাসি

স্বাধীন এর ছবি

ধন্যবাদ ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।