একঃ দর্শন ও বিজ্ঞান
মার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩) এর দর্শন নিয়ে লেখার সাহস করা বলা যায় চরম বোকামী। কিন্তু বলতে পারি নিয়তিই আমাকে সব দর্শন ফেলে মার্ক্স এর দর্শন এ নিয়ে এসেছে যাতে আমার অবদান সামান্যই। দেশ নিয়ে চিন্তার কোন এক প্রাক্কালে সমাজতন্ত্রের চিন্তা প্রথম মাথায় চলে আসে। আমার মত এমন অনেকেই মনে হয় আছেন যারা জীবনের কোন না কোন সময়ে সমাজতন্ত্রের প্রেমে পড়েছেন। আপনি যদি মানবতাবাদী হোন তবে সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদ স্বাভাবিকভাবে চলে আসবে। কোন যুক্তিবাদী মানুষের পক্ষে মানুষের মাঝে শ্রেনীবিভেদ, লিংগবিভেদ, কিংবা ধর্মবিভেদ- এগুলো মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করি। তবে মার্ক্সের দর্শন নিয়ে লেখার আগে আমি একটু বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো দর্শন কিভাবে কাজ করে। আমার মতে সেটা না জানা থাকলে যে কারো দর্শন নিয়ে আলোচনার চেষ্টা বৃথা।
আমি যেভাবে দর্শনকে দেখি তা হলো যুক্তির মাধ্যমে, বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষন পদ্ধতিতে, ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোকে কোন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা। প্রতিটি দার্শনিক যেটা করে থাকেন – তিনি প্রথমে তাঁর পূর্ববর্তী সকল দার্শনিকদের চিন্তাভাবনা গুলো পর্যবেক্ষন করেন তাঁদের প্রকাশিত লেখার মাধ্যমে। যে কারনে প্রত্যেক দার্শনিক তাঁর সময়ের সর্বোচ্চ তত্বটিই প্রদান করেন তাঁর পূর্ববর্তী দার্শনিকদের ভুলগুলো শুধরে দিয়ে। তার পরও প্রতিটি দর্শনের ক্ষেত্রে একটি কথা এখানে প্রযোজ্য যে যেকোন দর্শনই তাঁর কালকে অতিক্রম করতে পারে না। সকল দার্শনিক তাঁর সময়কাল দ্বারা সীমাবদ্ধ। কথাগুলো সমভাবে প্রযোজ্য প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ গুলোর জন্য। প্রতিটি শেষ ধর্ম আগের ধর্মগুলোর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই তৈরী হয় বলে শেষের ধর্মটি হয়ে থাকে সর্বোত্তম। ধর্মগ্রন্থ গুলোকে আমি দর্শনের ইতিহাসের একটি অংশবিশেষ হিসেবে দেখি। শুধু পার্থক্য এই যে দাবী করা হয়ে থাকে যে ধর্মের কথাগুলো সরাসরি ঈশ্বরের, আর দর্শনের গুলো মানুষের।যদি কেউ বলে থাকেন যে কারোর দর্শন সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য তবে তিঁনি ইতিহাসকেই অস্বীকার করেন। ইতিহাসকে অস্বীকার করে কেউই দর্শন রচনা করতে যেমন পারেননি তেমনি কোন দর্শনই কালকে অতিক্রম করতে পারেনি।
এখন কথা হল দর্শন আর বিজ্ঞানের মাঝে পার্থক্য কি? বিজ্ঞানের যে কোন আবিষ্কার তাঁর পূর্ববরর্তী জ্ঞান বা তত্বকে পর্যালোচনা করেই সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের যে কোন তত্ব হয় কালের উর্ধ্বে। যদি একটি তত্ব তাঁর পর্যবেক্ষনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তা যেমন তাঁর পূর্ব ও বর্তমান কালে সত্য তেমনি তা হতে হবে ভবিষ্যতেও সত্য। যদি ভবিষ্যতের কোন একটিও পর্যবেক্ষন দ্বারা সেই তত্ব অসত্য প্রমানিত হয় তবে তা আর বৈজ্ঞানিক তত্ব থাকে না। দর্শনগুলো যেহেতু তাদের কালকে অতিক্রম করতে পারে না তাই দর্শনের মাঝে বিজ্ঞান খোঁজা অবান্তর। সম কারনে ধর্মের মাঝেও বিজ্ঞান খোঁজাও অবান্তর।
তবে প্রত্যেক দার্শনিকই বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষন প্রনালী ব্যবহার করে থাকেন – জেনে বা না জেনেই। যে কোন কিছু জানার চেষ্টা করা- পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রশ্ন এবং তার উত্তরের মাধ্যমে – তাহাই বৈজ্ঞানিক প্রনালী। যেমন আদিম সমাজে মানূষ জানার চেষ্টা করতো কেন তাঁরা অসুস্থ হয়। তাঁদের যেহেতু জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ছিল তাই তাঁরা বের করলো দেবতাদের খুশী রাখলে, পূঁজা করলে তাঁরা সুস্থ হয়ে যাবে। তাঁরা বের করলো জটিল মন্ত্র, যার হয়তো কোন ব্যাখ্যা নেই কিন্তু তারপরেও তা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্বের তুলনায় কোন অংশে কম ছিল না তাঁদের কাছে। তবে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষন প্রনালী ব্যবহার করলেই সেটি বৈজ্ঞানিক তত্ব হয়ে যায় না, যেমনটি হল আদিম সমাজের মন্ত্রতত্ব। আজ আমরা যে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষনা করতে গেলে আমরা কি করি? প্রথমে আমরা ঠিক করি আমি কি নিয়ে কাজ করতে চাই এবং কেন করতে চাই। তারপর লিটেরেচার রিভিউ করি। আমার আগে যারা একই বিষয় নিয়ে কাজ করেছে তাঁরা কি কি করেছেন দেখি। তাঁদের সীমাবদ্ধতা কোথায় ছিল বোঝার চেষ্টা করি। এটা যখন ধরা যায় তখনি কেবল নিজের পক্ষে কতটুকু কাজের সুযোগ আছে এই বিষয়ে সে সম্পর্কে একটা ধারনা হয়। এই ধারনাটি যখন হয়ে যায় তারপরের কাজ বেশ সহজ। কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা হয় যা আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সাহায্য করে। এভবে পরীক্ষা আর প্রশ্নের উত্তর খোঁজা চলতে থাকে যতক্ষন না আমি সন্তুষ্ট হই।
দর্শনের ক্ষেত্রেও দার্শনিকরা কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজে চলেছেন। তবে এক্ষেত্রে তাঁরা পর্যবেক্ষন করে থাকে মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাস। যিনি যত পরে এসেছেন তাঁর কাছে পূর্ববর্তী ইতিহাসের তথ্য বেশী ছিল, তাই তাঁর পর্যবেক্ষন তত ভাল হয়েছে। সক্রেটিস, এরিষ্টটল, কান্ট, হেগেল, মার্ক্স– তাঁরা সবাই অনেক প্রতিভাবান ছিলেন কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তাঁরা সকলেই তাঁদের সময়কাল দ্বারা আবদ্ধ ছিলেন। তাঁরা যেটুকু ইতিহাস দেখেছেন তাই শেষ নয়, তাই তাঁদের কথাই শেষ নয়। তবে তাঁরা যে কথাগুলো বলেছেন তা বুঝতে হলে আপনাকে তাঁরা যে ইতিহাস দেখে উনাদের সিদ্ধান্তে এসেছেন আপনাকেও পৃথকভাবে তাঁর কাছাকাছি যেতে হবে। যখন আপনি সেটা করতে পারছেন তখনি কেবল সম্ভব হবে চিন্তা করতে যে তাঁরা আজ বেঁচে থাকলে কি বলতেন।
নিছক মার্ক্সবাদের সমালোচনা করা, বা কারো ব্যাক্তিগত বিশ্বাসে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মার্ক্স এর দর্শন যা বুঝেছি তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি কেবল। চেষ্টা করেছি মার্ক্স এর দূর্বলতা গুলোকে চিহ্নিত করে তাঁর প্রকৃত দর্শনকে তুলে ধরতে। আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষন একশত ভাগ সত্য হবে তা মনে করি না, তবে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে দ্বিমত পোষন করলে যুক্তি খন্ডন করে মতামত দিলে খুশি হবো। লেখার সময় চেষ্টা করেছি প্রতিটি রেফারেন্স উল্লেখ করতে এবং সমস্ত রেফারেন্সই অন্তর্জালে আছে। তাই আমার বক্তব্য খতিয়ে দেখা খুব বেশী কঠিন নয় বলেই মনে করি।
মার্ক্স এর দর্শনের প্রধানত দু’টি দিক- একটি বস্তুবাদ এবং অন্যটি দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি। এই দু’য়ের সংমিশ্রনে তাঁর দর্শন দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ। বস্তুবাদ কিংবা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি, মার্ক্সই প্রথম বলেন তা নয়।
(চলবে)
মন্তব্য
সিরিজ চলুক, পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম। কিছু মন্তব্যঃ
আমার বোঝা ভুল হতে পারে কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে উপরের উদ্বৃতি দু'টি পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য প্রদান করে।
এইক্ষেত্রে আমার মতামত কিছুটা এরকম, ধর্মীয় বিশ্বাষের মধ্যে বিজ্ঞানের কোন স্থান নেই পুরোটাই বিশ্বাষ, কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসনের অনেক কিছুরই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়।
-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
জাহিদ
আমি বুঝতে পারছি কোথায় স্ববিরোধীতার উৎপত্তি। সেটা নিয়ে আমার নিজেরও দ্বিধা ছিল স্বীকার করি। "বিজ্ঞানের আলোকে" উত্তর খোঁজা কথাটি আমি পরে এনেছি। প্রথমে আমি শুধু ইতিহাসের আলোকেই লিখেছিলাম। কিন্তু একটু ভালোভাবে চিন্তা করে দেখলাম যে না বিজ্ঞানের আলোকে কথাটাও থাকা উচিৎ। চিন্তা করে দেখ, এখনকার দার্শনিকরা যদি কোন মতামত দিতে চান তবে তাঁরা বর্তমান বিজ্ঞান বিরোধী কোন কথা না বলার চেষ্টা করবে। ঠিক সেরকম প্রতিটি দার্শনিক তাঁর সময়ের যে বিজ্ঞান সেটাকে ঠিক রেখেই মতামত দিবেন। সমস্যা হলো বিজ্ঞান ততোটা অগ্রসর ছিল না আজ থেকে কয়েক শতক আগে। সুতরাং তাঁদের দর্শনের মাঝে আজকের বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার খোঁজা অবান্তর সেটাই বলেছি। সম কথা প্রযোজ্য ধর্মের ক্ষেত্রে।
বোকামী হবে কেনো? দর্শন,তত্ব যদি সাধারনমানুষকে ভোগাতে পারে তাহলে সাধারন মানুষ কেনো এসবকে নাড়তে পারবে না?
লিখুন আপনি,আপনার মতো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সিরিজ চলতে পারে।
শাহিদুর রহমান শাহিদ
দর্শন এবং ধর্ম নিয়ে পন্ডিত ধর্মবেত্তা , দার্শনিকদের মধ্যে জ্ঞানগভীর অনন্ত জিজ্ঞাসা, বিশ্বাস এবং চেতনা আগেও ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। দার্শনিক হাইডেগার এর মতকে সমর্থন করে বলা যায় - ‘Filling of Nothingness’ হল দর্শনের মূল কথা ।
মার্কস সবসময় বলেছেন পরিবর্তনশীলতার কথা যা আজও আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক পরিমন্ডলে চলছে এবং চলবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেলিনের ভাষায় -sensation, persception, idea, mind সবই অবজেক্টিভ রিয়ালিটির বিম্ব।
লিখতে থাকুন। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
জুয়েইরিযাহ মউ
"লেলিন" কে?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
অক্ষর বিন্যাসে ভুল হওয়ার জন্য দুঃখিত।
শব্দটি "লেনিন" হবে।
ভুলটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
জুয়েইরিযাহ মউ
অপেক্ষা করছি পরের পর্বগুলোর জন্য!
ভালো লাগছে, পরের পর্ব চাই দ্রুত।
চলুক।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কিছু প্রশ্ন আছে, সাহস করে বলেই ফেলি। প্রশ্নগুলো আপনার লেখার শুরুর দিকের কথাগুলো নিয়ে।
পরের দুইটার ব্যাপারে আপত্তি নাই (মানে মেনে নেয়া সম্ভব নয়)। কিন্তু শ্রেণীবিভেদ কেন মেনে নেয়া সম্ভব নয়? আমরা আন্তঃপ্রজাতি শ্রেণীবিভেদ তো সহজেই মেনে নেই - তাহলে হোমো স্যাপিয়েন্সের একটা দল কেনো আরেকটা দলকে এক্সপ্লয়েট করতে পারবে না?
পড়িলাম!
হুমম.. জানার আছে অনেক কিছু...
ধর্ম সম্পর্কে আপনার ধারনার সাথে সহমত..
(জয়িতা)
শুরুটা বেশ চমৎকার হয়েছে। বিজ্ঞান এবং দর্শনের মধ্যে পার্থক্যটা বেশ বোঝা গেল। আমি দর্শনের দ-ও বুঝি না। আশা করা যায়, আপনার এই সিরিজ থেকে কিছু ধারণা পাবো। আমার নিচের (বালখিল্য) প্রশ্নগুলোর একটু উত্তর খুঁজছিলাম। সহজভাবে কি একটু বোঝানো যায়?
১. যদি মানব সভ্যতার ইতিহাসই দর্শনের ভিত্তি হয় তাহলে সেটা তো দর্শনের এক বড় সীমাবদ্ধতা। সময়কে অতিক্রম করতে না পারলে কিংবা অন্য কথায়, ভবিষৎ সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকলে সেই দর্শনের মূল্য কি?
২. যদি ইতিহাসই হয় কোনো দার্শনিক মতবাদের প্রাণ, তাহলে এটা কি বলা যায়, একটা দর্শনের সবচেয়ে বাস্তব প্রয়োগ ঘটবে যদি মানব সভ্যতা সময়ের সাথে পরিবর্তিত না হয়ে একটা জায়গায় স্থির থাকে? তবে সেক্ষেত্রে তো দর্শনের কোনো উপকারিতাই রইল না! কোনো দার্শনিক মতবাদ নিকট/দুরকালের এই সীমাবদ্ধতাকে দূর করতে পারে এরকম কোনো ব্যাখ্যা কি সেই দর্শনে থাকে?
৩. যেহেতু বিভিন্ন সমাজের ইতিহাস ভিন্ন ভিন্ন, সেহেতু একটা দর্শনের (যেমন সমাজতন্ত্র) প্রয়োগ কিংবা প্রতিষ্ঠার উপায় কি বিভিন্ন সমাজের জন্য বিভিন্ন হবে না? এই জন্যই কি মস্কোপন্থী আর চীনপন্থী দুটি শাখা আমরা দেখতে পাই?
৪. যদি উপরের প্রশ্নের উত্তর হয়, হ্যা, দর্শনের প্রয়োগ সমাজভেদে ভিন্ন হবে, তাহলে সেই ভিন্ন ভিন্ন উপায়গুলিও কি ঐ দর্শনে বলে দেয়া থাকে? নাকি, শুধুই ট্রায়াল এন্ড এরর পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে কিছু উদারহণও আশা করছি।
অফটপিক: আমার প্রশ্নগুলো এমনিতেই যথেষ্ঠ নিম্নমানের, কোনো বানান ভুল ধরা যাবে না
আপনার এক ও দুই নম্বর প্রশ্ন বেশ কাছা কাছি তাই এক সাথেই উত্তর দিচ্ছি। মানব সভ্যতা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় কথাটি ঠিক, তবে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে সে পরিবর্তনটি খুব সহসাই আসে না। যেমন রোমান যুগ থেকে মধ্যযুগ তারপর আধুনিক যুগ সেখান হতে আজকের উত্তর আধুনিক যুগ। এই প্রতিটি যুগ কয়েকশত বছর টিকে ছিলো। এই কয়েকশত বছরেই প্রতিটি যুগেই আবার একাধিক দার্শনিকের জন্ম হয়। দার্শনিকরা চেষ্টা করে তার সময়ের সেরা তত্বটি প্রদান করতে। কোন দার্শনিকের বক্তব্য তার জীবিত কালেই আরেকজনের তত্ব দ্বারা বাতিল হয়ে যায় আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বছর টিকে থাকে। ঠিক যেমন আমাদের যে কোন খেলার রেকর্ডের কথা যদি বলি। রেকর্ড কয়দিন টিকে থাকবে বলা মুস্কিল।
তাই যতদিনই টিকে থাকুক সকলের চিন্তাধারারই মূল্য আছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগের জনেরটি ভুল বলেইতো আজ শুদ্ধ মতামতটি পাচ্ছি। আর এই সীমাবদ্ধতা দূর করে পরবর্তী দার্শনিক। আর বিভিন্ন সমাজের জন্য দর্শনের প্রয়োগতো ভিন্ন হবেই। মানুষের জন্য হল দর্শন। এখন বিভিন্ন সমাজে মানুষের বিভিন্ন রীতিনীতি, তাই প্রয়োগ ও ভিন্ন হতে হবে। কিন্তু প্রয়োগ গুলো ভিন্ন হবে কিনা বা কি রকম হবে এটা বলা হয়েছে কিনা তা নির্ভর করে যিনি বলছেন তিনি কি ভিন্ন সেই সমাজের কথা চিন্তা করেছেন কিনা। যদি না করে থাকেন তবে প্রয়োগ কি রকম হবে তা সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন নুতন সমাজের আরেকজন দার্শনিক। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী দার্শনিকের সমাজের প্রেক্ষাপট এবং তাঁর নিজের সমাজের প্রেক্ষাপট তুলনা করে তারপর স্বীদ্ধান্ত দিবেন তাঁর সমাজের জন্য সেই দর্শনের প্রয়োগ কি হবে।
তারপরেও ট্রায়াল এন্ড এরর লাগেই।
অনেকদিন পর পড়লাম লেখাটা। আপনার লেখার বিষয়বস্তুগুলো খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে! দেখি, আস্তে ধীরে সব পড়ে ফেলব।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
নতুন মন্তব্য করুন