প্রথম কিস্তি – দ্বিতীয় কিস্তি – তৃতীয় কিস্তি – চতুর্থ কিস্তি
পাঁচঃ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র
আমি মার্ক্স এর কমিউনিষ্ট পার্টির ইস্তেহারের প্রথম কথা দিয়েই শুরু করছি। তিনি বলছেন যে আজ পর্যন্ত যত সমাজ দেখা গেছে তাদের সকলেরই ইতিহাস শ্রেনী সংগ্রামের ইতিহাস [১]। কথাটি আমি বলবো আংশিক সত্য। এ কথা ঠিক যে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে আমরা বেঁচে থাঁকার জন্য সংগ্রাম করি। সেই সংগ্রাম হয় প্রকৃতির সাথে আমাদের, প্রকৃতির অন্য প্রানীদের সাথে আমাদের এবং আমাদের নিজেদের সাথে নিজেদের। যখনই উৎপাদন এর তুলনায় চাহিদা বেশি থাকবে তখনই দ্বন্দ্ব থাকবে। আজ পর্যন্ত যত সংগ্রাম হচ্ছে তা হচ্ছে সেই চাহিদা আর উৎপাদনের মাঝে ব্যবধান এর জন্য। সেই সংগ্রাম ভিন্ন শ্রেনীর মধ্যে হতে পারে আবার নিজস্ব শ্রেনীর মাঝেও হতে পারে। পৃথিবীতে যদি কোন সাদা-কালো না থেকে শুধু সাদারাই থাকতো তবে কি রক্ত ঝরতো না? যদি কোন বুর্জোয়া শ্রেনী না থেকে শুধু শ্রমিক শ্রেনী হয় তবে কি কোন দ্বন্দ্ব থাকবে না? বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম চলবে যতদিন পৃথিবীতে সম্পদের উৎপাদন তার চাহিদার তুলনায় কম থাকবে। যদি সমাধান খুঁজতেই হয় তবে চাহিদা আর উৎপাদন এর ব্যাবধান কমাতে হবে। তা জনসংখ্যা সীমিত করে বা উৎপাদন এর পরিমাণ বাড়িয়ে।
তবে হ্যাঁ একটি সুষ্ঠ সামাজিক ব্যবস্থা দরকার যা চাহিদা আর উৎপাদন এর ব্যবধানকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করবে। মার্ক্স তাঁর দর্শনে যেটা বলার চেষ্টা করেছেন তা হল বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় আমরা সেটা করছি না। যার কারনে অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছেকৃত ভাবে চাহিদার পরিমাণকে বাড়িয়ে রাখা হয় শুধু মাত্র পন্যের মান ধরে রাখার জন্য। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নিয়ম বানানো হয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা, সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেনীর তাঁদের সুবিধার্তে। জনগণের করের টাকায় সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেনী বা নিম্ন বিত্তের জন্য করা হয় কম। রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিৎ করে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হয়ে উঠে শোষনের যন্ত্র। এ ধরণের সমাজ ব্যবস্থায় ধনী-গরিবের ব্যবধান শুধু বৃদ্ধি পায়। মার্ক্স এটাকেই পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার ফল (Output) হিসেবে বলেছেন। কিন্তু আমি একে পুঁজিবাদ এর দোষ বলবো না। আমি বলবো এটা মানুষের মানসিকতার সমস্যা, নৈতিকতার দৈন্যতার প্রকাশ। এবং এই সমস্যা যে কোন সাম্যবাদী দলের শাসনের ক্ষেত্রেও হতে পারে যদি মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটায়। যেমনটি আমরা দেখতে পাই বর্তমান কমিউনিষ্ট শাসিত দেশ গুলোর ক্ষেত্রেও।
মার্ক্স সমাজ ব্যবস্থার এই ত্রুটিকে ভালভাবে চিহ্নিত করেছেন এবং খুব ভাল ভাবে বুঝেছেন যে শুধু শাসক গোষ্ঠির পরিবর্তন বা শাসন ক্ষমতা থেকে বুর্জোয়াদের দূর করালেই সমাজে পরিবর্তন হবে না, করতে হবে বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন। যে কথাটি আমার মতে আজো প্রযোজ্য। শুধু সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বুর্জোয়া আর প্রলেতারিয়েতের সজ্ঞাটিকে একটু বদলাতে হবে। শিল্প বিপ্লবের সময়কালে মার্ক্স দেখেছিলেন শুধু দু’টি শ্রেনী- বুর্জ়োয়া আর প্রলেতারিয়েত। সেই সময়কার সমাজ ব্যবস্থায় এই দু’টি শ্রেনীই প্রধান ছিল। মার্ক্স এর ভাষায় নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনীরাও স্বল্প পুঁজির কারণে এক সময় প্রলেতারিয়েত শ্রেনীতে পরিণত হবে [১] এবং পুঁজি আরে শ্রমের দ্বন্দ্বে প্রলেতারিয়েতের সংখা বৃদ্ধি পাবে [১]। কিন্তু আজ যদি আমরা দেখি তাহলে দেখবো সমাজে এখন স্পষ্টতই তিনটি শ্রেনী। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত। মধ্যবিত্ত শ্রেনীকে আমরা আরো কিছুটা ভাগ করতে পারি, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত হিসেবে। আজকের সমাজে যদি বুর্জোয়া বলতে হয় তবে আমি বলবো উচ্চবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্তদের। আর যদি প্রলেতারিয়েত বলতে হয় তবে বলবো নিম্ন মধ্যবিত্ত আর নিম্ন বিত্তদের। আজকের যুগের বিশাল এই মধ্যবিত্ত শ্রেনীর অবস্থান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অঙ্কুরকালে তেমন প্রকট ছিল না, এবং এই শ্রেনীটি মার্ক্স এর দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি শুধু বুর্জোয়া আর প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর দ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে ধরে নিয়ে এগিয়েছেন এবং আমার মতে মার্ক্স এর প্রধান ভুলটি এখানেই। আজ যদি কেউ এই মধ্যবিত্ত শ্রেনীকে বুর্জোয়া শ্রেনীর মাঝে ফেলে চিন্তা করে তবে তিনি আরো বড় ভুল করবেন। কারণ আজ এই মধ্যবিত্ত শ্রেনীই সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী।
সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন আর শাসক গোষ্ঠির পরিবর্তন এর মধ্যকার পার্থক্যটি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই যদি উদাহরণ দিয়ে বলি- আগে শাসক গোষ্ঠি ছিল মোঘলরা, তারপর এল ইংরেজরা, তারপর -পাকিরা, তারপর আওয়ামী লিগ, বিএনপি, এরশাদ। কিন্তু মানুষের প্রকৃত মুক্তি কখনই আসেনি। এর কারন সেই সমাজ ব্যবস্থাটির কখনো পরিবর্তন হয়নি। শাসকদের মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি, পরিবর্তন হয়নি আমাদের রাষ্ট্রের মানসিকতা। যারাই শাসন করেছে তারা সাধারন জনগণকেই শোষন করেছে। সেই সমাজ ব্যবস্থাটির পরিবর্তন করতে হবে। রাষ্ট্রের সুবিধে বঞ্চিত মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। ঋণখেলাপী ব্যবসায়ী, দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিগ্রস্থ আমলা, এদের সুবিধার্তে রচিত শাসন ব্যাবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আজকের যুগে এরাই প্রকৃত বুর্জোয়া। তাদেরকেই শাসনের ক্ষমতা থেকে উতখাত করতে হবে। সৎ ও যোগ্য রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় আনতে হবে। তারপর সংবিধান সংশোধন করে সকল দূর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী, পেশাবিদদের হাত হতে দেশকে মুক্ত করতে হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সকল নাগরিককে সমান সুযোগ দিতে হবে। সমাজতন্ত্র মানে সকল মানুষ সমান তাই নয়। মানে হল সকল মানুষের সমান সুযোগ সুবিধে প্রদান। সকলের জন্য মৌলিক চাহিদার সমান সুযোগ। সকলের জন্য আইনের সমান প্রয়োগ। তারপর যার যার যোগ্যতার ভিক্তিতে যে যার মত অবস্থানে যাবে।
মার্ক্স গোলমাল করে ফেলেছেন সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের পথ খুঁজতে গিয়ে। সকল সমস্যার সমাধান তিনি দেখেছেন প্রলেতারিয়েতের শাসনে। কিন্তু বর্তমানে বা উত্তর আধুনিক যুগে প্রলেতারিয়েত শ্রেনী সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী নয়। সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেনী। তাই প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর শাসন কখনই মার্ক্সের সংখ্যা গরিষ্ঠের শাসন হতে পারে না, অন্তত আজকের যুগে। তাছাড়া মার্ক্স এর এই প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর শাসনের প্রক্রিয়ায় কিছু স্ববিরোধিতা আছে বলে আমি মনে করি। যেমন তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বুর্জোয়া শ্রেনীর মধ্য থেকে কোন ভাল দল এসে শ্রমিক শ্রেনীর মুক্তি ঘটাতে পারবে না। আমার মত প্রকৌশলীরা, অর্থনীতিবিদরা, সমাজসেবীরা সবাই বুর্জোয়া, তাই আমাদের প্রদত্ত সমাজতন্ত্রও বুর্জ়োয়া বা রক্ষনশীল সমাজতন্ত্র [১]। এমন কি পেটি-বুর্জোয়া (নিম্ন মধ্য বিত্ত) শ্রেনীও সেটা করতে পারবে না। পারবে শুধু প্রলেতারিয়েত শ্রেনী যদি বিপ্লবের মাধ্যমে বুর্জোয়াদের উৎখাত করে। কিন্তু প্রলেতারিয়েত শ্রেনী কিভাবে সংঘঠিত করবে এই বিপ্লব? মার্ক্স এর মতে সেটা হবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মাধ্যম্যে যা একদিন রূপ নিবে বিশাল পরিবর্তনে (দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের তৃতীয় সুত্র (পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন (From quantitative change to qualitative change)))। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শ্রমিক আন্দোলন গুলো হতে শ্রমিক শ্রেনী আস্তে আস্তে তার অবস্থান সম্পর্কে সচেতণ হবে এবং একদিন এই সমাজ ব্যস্থা বদলের জন্য, কমিউনিষ্ট সমাজ গঠণের জন্য বিপ্লবের পতাকাতলে একত্রিত হবে।
কিন্তু বিপ্লব এক জিনিস আর একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করা ভিন্ন জিনিস। শোষনে অতিষ্ঠ হয়ে যে কোন সমাজ, জাতি বা দেশ নিজেদের মুক্তির জন্য বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলতেই পারে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সমাজ ব্যবস্থা থেকে অন্য আরেকটি সমাজ ব্যবস্থায় রূপান্তর কিভাবে সম্ভব তা শ্রমিক শ্রেনী কিভাবে শিখবে তা তিনি বলেননি। এই দ্বান্দিক বস্তুবাদ, ইতিহাসের শ্রেনীর সংগ্রাম এ সব কিভাবে প্রলেতারিয়েতরা জানবে তা তিনি বলেননি। আমি যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তবে দেখি লেনিন, মাও, ফিডেল ক্রাষ্টো এরা কেউই প্রলেতারিয়েত শ্রেনী থেকে আসেননি। তাঁরা সবাই রীতিমত বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন, সমাজতন্ত্রের প্রাথমিক ধারণাগুলো লাভ করেছেন, তার পর তাঁরা বিপ্লব সংঘঠিত করছেন। আর মার্ক্স কিংবা এংগেলস তাঁরা নিজেরাও কি প্রলেতারিয়েত শ্রেনী থেকে এসেছেন? এক জনকে আমি বলতে পারি যিনি প্রলেতারিয়েত শ্রেনী থেকে উঠে এসেছেন তিনি হল – স্টালিন। তাই তাঁর শাসনের সহিংসতা ছাড়িয়ে যায় সকলকে, যা ‘The Soviet Story (ধন্যবাদ শিক্ষানবিসকে, এই ডকুমেন্ট্রিটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য)’ ডকুমেন্ট্রিটিতে উঠে এসেছে।
তাই শ্রমিক শ্রেনী যে শুধু তৈরী শাসন ব্যবস্থাটিকে পেলেই যে সমাজের পরিবর্তন হবে না সেটা তিনি বুঝতে পেরেছেন প্যারিস কমিউনে (১৮৭১) কমিনিউষ্টদের দুই মাসের শাসন কালে। ১৮৭২ সালের ইস্তেহারের মুখপত্রেই যা তিনি স্বীকার করেছেন [১]। মার্ক্স তরুণ বয়সে বিপ্লবে বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সে পথ থেকে সরে এসেছিলেন, যার নমূণা পাই ১৮৭২ সালে আমর্স্টাডাম এ দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে, যেটা আমি পাই কার্ল কাউটস্কি এর ‘সোস্যাল ডেমোক্রেসি ভার্সাস কমিউনিজম’ লেখায় [২]। যেখানে তিনি বলেছেন- “ শ্রমিকদের অবশ্যই কোন একদিন রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে হবে, নুতন সামাজিক ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে। তাদের অবশ্যই পুরাতন রাজনৈতিক যন্ত্রটিকে উতখাত করতে হবে যা কিনা ক্রিষ্টিয়ানদেরর জীর্ণ কাঠামোর উপর গঠিত। কিন্তু এই অর্জনের পন্থা সর্বত্র একই রকমের হতে পারে না। আমাদের অবশ্যই বিভিন্ন দেশের বর্তমান কাঠামো, সংস্কৃতি, রীতিণীতি এই সমস্ত বিষয়কে চিন্তায় রাখতে হবে। আমরা এটা অস্বীকার করতে পারিনা যে-কিছু দেশ যেমন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কিংবা হলান্ড- সেখানে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের লক্ষে পৌছতে পারে যা অন্য সব দেশে সম্ভবপর নয়।” এখানে তিনি স্পষ্টতই সে সব দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শ্রমিক শ্রেনীর লক্ষ্যে পৌছার কথা বুঝিয়েছেন।
মার্ক্স শ্রমিক শ্রেনীর শাসনের মাঝ দিয়ে সমগ্র সমাজের মুক্তির পথ দেখেছেন। তাতে যদি বুর্জোয়া সমাজ ধ্বংস হয়, মানুষের মনে সহিংসতা আসে তাতে তিনি বিচলিত নন। যে কারনে মার্ক্স এর এই পন্থা অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। যারা মানবতাবাদী, সমগ্র মানব জাতির মুক্তি চায়-নির্দিষ্ট কোন শ্রেনীর মুক্তি চায় না- তাদের পক্ষে জেনে শুনে মার্ক্সবাদ অনুসরণ করা সম্ভব নয়। আমিও নিজেকে মানবতাবাদী হিসেবেই দেখতে চাই। সমগ্র মানবের মুক্তি কামনা করি, একটি সুষ্ঠ সমাজের স্বপ্ন দেখি। বোমা মেরে, নিরীহ মানুষ মেরে যেমন ধর্মের প্রচার করা অসম্ভব বলে মনে করি তেমনি বিপ্লব করে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিও অসম্ভব বলে মনে করি। যে পন্থাই অবলম্বন করতে আপনি চান তা সর্বপ্রথম সেই সমস্ত মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে হবে যাদের মুক্তি আপনি চান। এ রকম একটি অবস্থা থেকেই আমি মনে করি যে গণতান্ত্রিক উপায়েই সম্ভব একটি নুতন সমাজ ব্যবস্থা চালু করা। যদি প্রতিটি মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারেন আপনার দলের আদর্শ কি, কিভাবে আপনার দল ক্ষমতায় গেলে সমাজ ব্যস্থায় কি ধরণের পরিবর্তন আনবে ও কেন, তা হলে আমার বিশ্বাস তারা তা গ্রহন করবে। আর যদি তারা আপনার আদর্শ গ্রহন না করে, তবে সহিংস পদ্ধতিতে যদিও আপনি সাময়িক ক্ষমতা লাভ করেন একদিন তা ইতিহাস হয়েই যাবে।
সমাজতন্ত্র মানেই যে ব্যক্তিমালিকানার উচ্ছেদ, বা সকল কিছু রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত হতে হবে তা নয়। আজ অনেক দেশে মিশ্র অর্থনীতি বিরাজমান। রাষ্ট্রীয় তদাকরীতে বেসরকারীভাবে সব কিছু চলছে। কিন্তু রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করছে। আমেরিকার কথা বিস্তারিত বলতে পারবো না, কিন্ত কানাডায় পাঁচ বছর ধরে আছি দেখছি- এখানে বিনামূল্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাবেন, বাচ্চাদের পড়াশুনা পাবেন। আঁয় ভাল না হলে স্বল্প ভাড়ায় সরকারী বাসা পাবেন, বেকার ভাতা পাবেন। কোন কিছু জানতে চাইলে সমস্ত তথ্য ইন্টারনেট এ দেওয়া আছে, ফোন লাইন দেওয়া আছে, জানতে পারবেন। এরা সমাজতান্ত্রিক দেশ না হয়েও মানুষের মৌলিক অধিকার গুলো বাস্তাবায়নের চেষ্টা করছে। উন্নত দেশেও যে সমস্যা নেই তা নয়। ধনী-গরিবের ব্যবধান নেই, বেকারত্ব নেই, অপরাধ নেই তা নয়। যেখানেই সমাজ আছে তা থাকবেই এবং সে গুলো দূর করার চেষ্টাই হল আদর্শ রষ্ট্রের কাজ।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখন যেটা সব থেকে বেশি প্রয়োজনঃ
১। একটি আদর্শ নির্ভর তৃতীয় শক্তির দল। একটি যোগ্য নেতৃত্ব দেবার মত একটি দল। যাদের প্রধান উদ্দেশ্য হবে রাষ্ট্রীয় তত্বাবধানে (পরিচালিত নয়) দেশীয় শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করা। দেশের অর্থনীতিকে সবল করা। দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে একটি মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। রপ্তানী নির্ভর শিল্প গড়ে তুলা।
২। দেশের সকল বিভাগ হতে দুর্নীতি দূর করা। বিচার ব্যবস্থা, পুলিশি ব্যবস্থা, এবং সচিবালয় বা সরকারী ব্যবস্থাকে স্বাধীন ভাবে নিজ নিজ বিভাগের রুলস অনুসারে চলতে দেওয়া। প্রয়োজন হলে দেশের সকল সরকারী/বেসরকারী বিভাগের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করে দেওয়া, যার বাহিরে কেউই চলতে পারবে না।
৩। দেশের জনসংখ্যার বিষ্ফোরন রোধ করা। বিশাল জনসংখ্যাকে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। প্রতিটি মানুষকে একটি জাতীয় নম্বর দেওয়া যেতে পারে, যার বিপরীতে তার যাবতীয় (জন্ম, আয়, চাকুরী, সম্পত্তি, বিবাহ, সন্তান, বিদেশ গমন, যা যা সম্ভব) তথ্য থাকবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই নম্বর প্রদান করতে হবে, তাতে করে একই নামে অঢেল সমপত্তি বা কর ফাঁকি, বা বহু বিবাহ সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রন করা সহজ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশের শাসকেরা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা বিবেচনা করে দেশ পরিচালনা করে থাকে, কখনোবা দলীয় স্বার্থে। দেশের স্বার্থ বিবেচনা বা সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থের চিন্তা তাঁরা কখনই করে না। অথচ শুধু মাত্র পাঁচ বছরই যদি দেশের স্বার্থের কথা বিবচনা করে দেশ পরিচালনা করতো তবে আজ আমাদের দেশ প্রভুত উন্নতি করতে পারতো। এটা আমরা সবাই জানি। সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ ও জানে এটা। গত দশ বছরে দেশের মোবাইল, বেসরকারী টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, ইন্টারনেট এর বদৌলতে এখনকার মানুষ আগের তুলনায় অনেক সচেতন। মানুষ পরিবর্তন চায়, কিন্তু পরিবর্তনের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে পায় না। তাই হতাশ হয়ে মইন বা ইউনুস বা ফখরউদ্দিন যাকে পায় তাকেই ধরার চেষ্টা করে। আমি আমাদের প্রজন্মকে অনুরোধ করবো রাজনীতিতে আসুন। নুতন দল গঠন করুন। সেই আদর্শের বানী নিয়ে প্রতিটি জনগণের কাছে যান। ভুলে যান অতীতের ব্যর্থতা। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখুন প্রতিটি সমাজে, জাতিতে, এ রকম ক্রান্তিকালে তাদের নব জাগরন হয়েছে। আমাদের দেশেও সেই নব জাগরনের সূচনা হোক আমাদের হাত ধরে।
আমার এই লেখার মুল উদ্দেশ্য বিশেবিদ্যালয়ে পড়ুয়া সেই সব মেধাবী ছাত্রদের প্রতি যারা মানুষের জন্য একটি নুতন সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো ব্যয় করে চলে আর জাতিকে উপহার দেয় পরবর্তিতে কিছু হতাশাগ্রস্থ যুবক। এটা যতটা না তাদের ব্যর্থতা তার চেয়ে বেশী হল আমাদের তথাকথিত বাম রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা। আমার কথা হল- ইস্তেহারটি নিজে পড়, সাথে মার্ক্স এর আরো কিছু বই পড়, এংগেলস এর কিছু লেখা পড়। সব লেখাই http://www.marxists.org/ এই ঠিকানায় পাওয়া যায়। তারপর নিজের বিবেচনা বুদ্ধি কাজে লাগাও। অন্ধের মত যে কোন কিছু বিশ্বাস করাকে আর যাই বলুক প্রগতিশীল বলা যায় না। একটি নুতন সমাজ গড়ার আগে নিজেকে গড়তে হবে। তার জন্য কষ্ট স্বীকার করতে হবে, পড়তে হবে, জানতে হবে। প্রতিটি জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হবে। সর্বোপরি মানব সভ্যতার ইতিহাসটুকু জানতে হবে।
১. http://www.marxists.org/bangla/archive/marx-engels/1848/communist-manifesto/istahar.pdf
২. http://www.marxists.org/archive/kautsky/1930s/demvscom/index.htm
বিঃদ্রঃ বানান! বানান! সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানাবো কেউ যদি কোন বানান ভুল দেখে থাকেন দয়া করে জানালে খুশী হব।
মন্তব্য
আপনার এই সিরিজটার কিছু অংশের সাথে আগেই পরিচিত। তবু মনোযোগ দিয়েই পড়ছি। বামপন্থী বইগুলো যে কত স্বপ্নের সাথে পড়েছি একটা বয়সে! এই বিষয় নিয়ে আলোচনায় ঢুকলে দিন-রাত্রির হিসাব থাকবে না বলে দূরে থাকলাম। খুবই কষ্টসাধ্য একটা সিরিজ লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনলাইনে বাংলায় এমন কিছু দরকার ছিলো।
ধন্যবাদ ইশতি। তারপরেও যদি কিছু কমেন্ট করতে ভাল লাগতো। ঠিক কোন ব্যাপারে একমত বা কোন ব্যাপারে দ্বিমত জানতে পারলে অন্তত ভাল লাগতো। যদি সম্ভব হয় ইমেইল করো @ । সিরিজটি শেষ করতে পেরেছি এটাই আমার যা স্বান্তনা। সব কথা বলতে পারিনি বা যা বলতে চেয়েছি সব যে প্রকাশ করতে পেরেছি তাও নয়। তবে সম্পূর্ণভাবে যেটা চেষ্টা করেছি একদম নিজে যা বুঝেছি তাই বলেছি। অন্য কারো মতামত ধাঁর করে কিছু প্রমানের চেষ্টা করিনি। শেষ পর্যন্ত কষ্ট করে থাকার জন্য আবারো ধন্যবাদ।
ভয় নেই, ফাঁকি দেবো না। থিসিস, ডিগ্রি, বাসা বদল, ইত্যাদি নিয়ে দৌঁড়ের উপর আছি। আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই এখানকার পাট চুকাচ্ছি। এই মুহূর্তে তাড়াহুড়া করে কিছু লিখলে সেটা পোস্টের পেছনের পরিশ্রমের অবমাননা হবে। সময় করে ঠিকঠাক মত কিছু মতামত জানাবো। ক'টাদিন যাক, একটু গুছিয়ে উঠি...
সত্যিই খুব ভাল আর সাবলিল লেখা। গোঁড়া আর পরিত্যাক্ত বামদের নাপছন্দ হইলেও এটাই এ সময়ের বাস্তবতা।
ধন্যবাদ সহমতের জন্য।
..............যখনই উৎপাদন এর তুলনায় চাহিদা বেশি থাকবে তখনই দ্বন্দ্ব থাকবে। আজ পর্যন্ত যত সংগ্রাম হচ্ছে তা হচ্ছে সেই চাহিদা আর উৎপাদনের মাঝে ব্যবধান এর জন্য।........বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম চলবে যতদিন পৃথিবীতে সম্পদের উৎপাদন তার চাহিদার তুলনায় কম থাকবে। যদি সমাধান খুঁজতেই হয় তবে চাহিদা আর উৎপাদন এর ব্যাবধান কমাতে হবে।...........
এই কথাগুলো যখন বললেন, তখন ধরে নিতেই হয়, চাহিদা আর উৎপাদনের মধ্যে বর্তমানে যে ঘোরতর ব্যবধান আছে সেটা আপনি মনে করছেন । তাহলে শুধু খাদ্যের কথাই যদি ধরি, বলুন তো বর্তমানে পৃথিবীতে মোট খাদ্য উৎপাদন কত ? খাদ্যের মোট চাহিদাই বা কত ? এই তথ্যগুলো জানা আছে আপনার ? আপনি কি জানেন, শুধু ইউএসএ ও কানাডায় প্রতি বছর যে পরিমান গম উৎপাদিত হয় তা দিয়ে সারা পৃথিবীর তাবৎ মানুষকে টানা কয়েক বছর বসিয়ে খাওয়ানো সম্ভব ? গমের বাজার যাতে পড়ে না যায়, সে জন্য লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন গম তারা প্রতি বছর সাগরে ফেলে দেয় । গমের চাষ না করার জন্য ফার্মমালিকদের সাবসিডি দেয় । তাহলে সমস্যাটা কোথায় ? উৎপাদনে নাকি উৎপাদিত পণ্যের বন্টনে ?
.......আজকের সমাজে যদি বুর্জোয়া বলতে হয় তবে আমি বলবো উচ্চবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্তদের। আর যদি প্রলেতারিয়েত বলতে হয় তবে বলবো নিম্ন মধ্যবিত্ত আর নিম্ন বিত্তদের।.......কারণ আজ এই মধ্যবিত্ত শ্রেনীই সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী।
>>>>>
আপনার কি জানা আছে বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত কাকে বলে ? তাদের কী কী বৈশিষ্ট্য ? কোন সংজ্ঞায়নে ও কোন পরিসংখ্যানে আপনার মতে আজ এই মধ্যবিত্ত শ্রেনীই সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী সেটা জানার একান্ত ইচ্ছে রইলো । আবার আপনি বলেছেন --"আমার মত প্রকৌশলীরা, অর্থনীতিবিদরা, সমাজসেবীরা সবাই বুর্জোয়া ।" আমার তো মনে হল বুর্জোয়া নন, আপনি বুর্জোয়া ইন্সট্রুমেন্ট । যাই হোক , আপনার বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইছি । আশা করি দেবেন ।
আমার ব্যখ্যা আমি মনে হয় বিশাল এই সিরিজে দিয়েছি। আমি মার্ক্স কাদের বুর্জোয়া বলেছেন এবং কাদের প্রলেতারিয়েত বলেছেন তা বুঝেই সেই ধারণার আলোকেই আজকের যুগে বুর্জোয়া কারা হতে পারে সেটিই আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি। এখন আপনি যদি দ্বিমত পোষণ করেন তবে আপনারই কি বলা উচিত নয় যে আজকের যুগে কাদের আপনি বুর্জোয়া বলছেন আর কাদের প্রলেতারিয়েত এবং কেন বলছেন। আমি তো যা বলার বলেছি। এখন আপনার কথা কিছুটা শুনি তারপর না হয় আমার কথা আমি আবার বলবো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
স্বাধীনভাই, আপনার লেখা এই সিরিজটি একটানে পড়ে শেষ করলাম। ভাল লাগল। আমার অর্নাস, মাস্টারস দর্শনের উপর, কিন্তু তখন এত গভীরভাবে চিন্তা করিনি। বামদলে ছিলাম ছাএজীবনে, কিন্তু হতাশ হয়ে ছেড়ে দিই। আর এখন প্রবাসে কামলা খাটাই।
...... একটি নির্দিষ্ট সমাজ ব্যবস্থা থেকে অন্য আরেকটি সমাজ ব্যবস্থায় রূপান্তর কিভাবে সম্ভব তা শ্রমিক শ্রেনী কিভাবে শিখবে তা তিনি বলেননি। [i]এই দ্বান্দিক বস্তুবাদ, ইতিহাসের শ্রেনীর সংগ্রাম এ সব কিভাবে প্রলেতারিয়েতরা জানবে তা তিনি বলেননি। [/i] ..একমত।
আমার লেখাটি মূলত আপনাদের জন্যই। তাদের জন্য নয়, যারা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে এবং তা বুঝার চেষ্টাও করে না। কষ্ট করে পড়ার জন্য এবং তা জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
@লেখক:..যখনই উৎপাদন এর তুলনায় চাহিদা বেশি থাকবে তখনই দ্বন্দ্ব থাকবে। আজ পর্যন্ত যত সংগ্রাম হচ্ছে তা হচ্ছে সেই চাহিদা আর উৎপাদনের মাঝে ব্যবধান এর জন্য।........বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম চলবে যতদিন পৃথিবীতে সম্পদের উৎপাদন তার চাহিদার তুলনায় কম থাকবে। যদি সমাধান খুঁজতেই হয় তবে চাহিদা আর উৎপাদন এর ব্যাবধান কমাতে হবে।...........
এই কথাগুলো যখন বললেন, তখন ধরে নিতেই হয়, চাহিদা আর উৎপাদনের মধ্যে বর্তমানে যে ঘোরতর ব্যবধান আছে সেটা আপনি মনে করছেন । তাহলে শুধু খাদ্যের কথাই যদি ধরি, বলুন তো বর্তমানে পৃথিবীতে মোট খাদ্য উৎপাদন কত ? খাদ্যের মোট চাহিদাই বা কত ? এই তথ্যগুলো জানা আছে আপনার ? আপনি কি জানেন, শুধু ইউএসএ ও কানাডায় প্রতি বছর যে পরিমান গম উৎপাদিত হয় তা দিয়ে সারা পৃথিবীর তাবৎ মানুষকে টানা কয়েক বছর বসিয়ে খাওয়ানো সম্ভব ? গমের বাজার যাতে পড়ে না যায়, সে জন্য লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন গম তারা প্রতি বছর সাগরে ফেলে দেয় । গমের চাষ না করার জন্য ফার্মমালিকদের সাবসিডি দেয় । তাহলে সমস্যাটা কোথায় ? উৎপাদনে নাকি উৎপাদিত পণ্যের বন্টনে ?
এটা ছিল পড়ুয়ার প্রথম প্রশ্ন।আপনি তার পরের প্রশ্নের একটি জবাব দিয়েছেন।কিন্তু এটির জবাব দেননি।জবাবটা দেবেন কি?
@পড়ুয়া:আপনি কি জানেন, শুধু ইউএসএ ও কানাডায় প্রতি বছর যে পরিমান গম উৎপাদিত হয় তা দিয়ে সারা পৃথিবীর তাবৎ মানুষকে টানা কয়েক বছর বসিয়ে খাওয়ানো সম্ভব ? গমের বাজার যাতে পড়ে না যায়, সে জন্য লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন গম তারা প্রতি বছর সাগরে ফেলে দেয় । গমের চাষ না করার জন্য ফার্মমালিকদের সাবসিডি দেয়।
>>আপনার এই তথ্যের রেফারেন্স টা দিতে পারলে ভাল হয়।
আপনার পাঁচ কিস্তি পোস্টের কোথাও মার্ক্সবাদ অনুযায়ী কারা বুর্জোয়া আর কারা প্রলেতারিয়েত সেটাই বুঝতে পারি নাই । আবার আপনি বলেছেন- মার্ক্স কাদের বুর্জোয়া বলেছেন এবং কাদের প্রলেতারিয়েত বলেছেন তা বুঝেই সেই ধারণার আলোকেই আজকের যুগে বুর্জোয়া কারা হতে পারে সেটিই আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি। ফলে আমার মনে হল মার্ক্স কাদের কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন সেটাই আপনি বুঝতে পারেন নাই । যাই হোক, আজকের যুগে কারা বুর্জোয়া আর কারা প্রলেতারিয়েত সেই মীমাংসার আগে এদের ডেফিনিশন নির্ধারনে মার্ক্সবাদী ক্লাসিকস এর দিকে একটু হাত বাড়ানো যাক ।
কমিউনিজমের নীতিমালা (principles of communism, ১৮৪৭ সালে কমিউনিস্ট লীগের জন্য এঙ্গেলস দুটি খসড়া পরিকল্পনা রচনা করেন- একটি জুনে, অন্যটি অক্টোবরে। শেষেরটিই কমিউনিজমের নীতিমালা বা মূলনীতি নামে পরিচিত। এটি ১৯১৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ) বইটিতে প্রশ্নোত্তর আকারে এঙ্গেলস এ সম্পর্কে যা বলেছেন নীচে তা তুলে দিলাম । দেখুন তো এগুলোই আপনার ধারনা কিনা ।
প্রশ্ন : প্রলেতারিয়েত কি ?
উত্তর : প্রলেতারিয়েত হল সমাজের সেই শ্রেণী যে শ্রেণীর সদস্যরা সম্পূর্ণ জীবিকার সংস্থান করে কেবল শ্রমশক্তি বিক্রি করে, কোন রকমের পূঁজির মুনাফা দ্বারা নয়। প্রলেতারিয়েত তাদের নিয়েই গঠিত যাদের সুখ-দূঃখ, যাদের জীবন-মৃত্যু, যাদের সম্পুর্ণ জীবন নির্ভর করে শ্রমশক্তির চাহিদার উপর- অর্থাৎ ব্যবসার উৎতি-পড়তির পালা বদলের দ্বারা সৃষ্ট অবস্থার উপর, নিয়ন্ত্রণহীন প্রতিযোগিতার খেয়াল-খুশির উপর । এক কথায় প্রলেতারিয়েত বা প্রলেতারিয়েতদের শ্রেণী হল উনিশ শতকের শ্রমিক শ্রেণী ।
প্রশ্ন : প্রলেতারিয়েতের উদ্ভব কীভাবে হল ?
উত্তর : গত(অষ্টাদশ) শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ডে সংঘটিত শিল্প বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে প্রলেতারিয়েতের উদ্ভব হয়েছে। তখন থেকে পৃথিবীর সকল সভ্য দেশে শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়ে চলেছে। এই শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে বাষ্পীয় ইন্জিন, বিভিন্ন রকম সূতাকল, বিদ্যুত চালিত তাঁত এবং একে একে এই ধরনের আরো অনেক যান্ত্রিক কৌশল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। এইসব যন্ত্রের খরচ ছিল অত্যাধিক। ফলে কেবল পুঁজিপতিরাই এগুলো কিনতে পারতো। এইসব যন্ত্র পূর্বের সমস্ত উৎপাদন পদ্ধতি পাল্টে দিল এবং পূর্বের কারিগরদের উচ্ছেদ করল। এটা সম্ভব হল এই কারনে যে পুরাতন কারিগরদের নৈপূণ্যহীন চাকা এবং হস্তচালিত তাঁতের উৎপাদিত পণ্যের চাইতে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে অপেক্ষাকৃত সস্তায়, এবং তুলনামূলকভাবে ভালো পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হল। এইসব যন্ত্রপাতি শিল্পকে সম্পূর্ণভাবে বড় পুজিপতিদের হাতে তুলে দিল এবং কারিগরদের অল্প-শক্তি-সম্পন্ন সম্পত্তিগুলোকে (ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি, হস্তচালিত তাঁত প্রভৃতি ) পুরোপুরি অকেজো করে দিল। ফলে দ্রুত সবকিছু পুজিপতিদের হাতে চলে গেল, কারিগরদের হাতে কিছুই রইলো না । এইভাবে বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রে কারখানা পদ্ধতির সূচনা হলো ।
(বাকি কথাগুলো পরের মন্তব্যে দিচ্ছি)
উত্তরের পরের অংশে এঙ্গেলস মূলত কীভাবে বড় পুঁজিপতিরা ক্ষুদে মালিকদের কীভাবে উচ্ছেদ করলো এবং শ্রমিকের অবস্থা কীভাবে সম্পূর্ণ পাল্টে গেল সে প্রক্রিয়াটি আলোচনা করেছেন । অনেক বড় হয়ে যাবে বলে সেটি আমি দিচ্ছি না । শুধু আলোচনা থেকে এঙ্গেলস এর টানা ডিসিসানটাই এখানে তুলে দিলাম ।
এর ফলে এমন দুটি নতুন শ্রেণীর জন্ম হলো যারা ক্রমে ক্রমে অন্য সকল শ্রেণীকে গ্রাস করতে লাগলো। এই শ্রেণী দুটো হলো ঃ
এক ঃ বৃহৎ পুঁজিপতিদের শ্রেণী । সকল সভ্য দেশে এতোমধ্যেই জীবিকার সকল উপায়, কাঁচামাল এবং জীবিকার উপকরন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র-সরন্জাম (কলকব্জা, কারখানা ) এই শ্রেণীর প্রায় একচেটিয়া অধিকারে চলে গেছে। এরাই হলো বুর্জোয়া শ্রেণী বা বুর্জোয়াজী।
দুই ঃ সম্পূর্ণ সম্পত্তিহীনদের শ্রেণী । এই শ্রেণীর সদস্যরা বেঁচে থাকার জন্য নিম্নতম জীবিকার বিনিময়ে বুর্জোয়া শ্রেণীর সদস্যদের কাছে তাদের শ্রমশক্তি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। এই শ্রেণীকে বলা হয় প্রলেতারিয়েতের শ্রেণী বা প্রলেতারিয়েত ।
-----------
এখন বলুন বুর্জোয়া শ্রেণী ও প্রলেতারিয়েতের এই ডেফিনিশন মেনেই কি আপনি আপনার পোস্ট দিলেন ? তারপর বাকি কথা হবে ।
@ আউটসাইডার, লিন্কটি খুব শিগ্রি আমি এখানে দিয়ে যাবো । ইনফ্যাক্ট লেখার সময়ই দেবার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু ঐ মুহূর্তে হাতে ছিল না বলে সবিস্তারে উল্লেখ করতে পারি নি। আপনাকে ধন্যবাদ ।
ধন্যবাদ পড়ুয়া আপনার মন্তব্যের জন্য। আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাব আমি দেইনি কারন আপনার তথ্যটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নই। লিঙ্ক দিলে তারপর জবাব দিবো।
দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে আপনার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম তাহলো, আজকের সমাজে কাদের কে আমরা বুর্জোয়া বলবো আর কাদের প্রলেতারিয়েত বলবো। আপনি আমাকে মার্ক্স এর সময়কার ডেফিনিসন দিলেন। জ্বী, আমি কমিউনিজমের মূলনীতি বইটিও দেখেছি। কমিনিঊনষ্ট পার্টির ইস্তেহার যা বলা আছে মোটামুটি সে রকমই সেখানে বলা আছে। একই কথা বলা আছে এংগেলস এর ইউটোপিয় ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বইয়ে। ডেফিনিসন মার্ক্স যা দিয়েছেন সেটাকে তো আমি পরিবর্তন করতে পারবো না। তো মার্ক্স এর ডেফিনিসন মেনেই আমাকে বলেন আজকের যুগে কাদের আপনি বুর্জোয়া বলছেন আর কাদের প্রলেতারিয়েত বলছেন। আমার জন্য ভাল হয় যদি আজকের সমাজে যে শ্রেনী ভাগটি আছে, যেমনঃ উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত, এই শ্রেনী ভাগে ফেলে যদি বলতেন তাহলে আমার মত সাধারন মানুষদের জন্য বুঝতে সুবিধে হত। আপনার মতামত এর অপেক্ষায় রইলাম।
কিছু মনে না করলে সচলের বাহিরে যারা আমার ব্লগে আলোচনায় অংশগ্রহন করবেন তাঁরা অন্তত পক্ষে কোথায় বাস এবং আপনার পেশা বলিলে একটি ধারণা থাকতো আমি কার সাথে আলোচনা করছি। আপনি যে নামেই লিখুন তাতে আমার আপত্তি নেই। এখানে আমার নিজের পরিচয় ও পেশা যখন বলা আছে তখন আমিও সে রকম আশা করবো যার সাথে আলোচনা করছি তার আংশিক পরিচয় জানার। সকলকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
[b]থাকি ঢাকায়, পেশায় প্রকৌশলী। মার্কসবাদী দর্শনকে সঠিক মনে করি। আশা করি এবার কিছু বলতে পারি। যদিও বেশি কিছু নয়।
প্রথমত পড়ুয়া প্রলেতারিয় ও বুর্জোয়া সম্পর্কে ধারণা যা দিয়েছেন তা আপনার লেখায় আসে নি। এটা মার্কসবাদের ধারণার সাথে কন্ট্রাড্রিক্ট করতে হলে অবশ্যই পরিস্কার হতে হবে। মনগড়া ধারণা নিয়ে আমরা বিচার করতে পারবো না। আর গোঁড়া মার্কসবাদীদের কাছে আপনার কিছু আশা নাই থাকতে পারে। মার্কসবাদীদের সংবেদনশীল মানুষর কাছে অনেক প্রত্যাশা। সে হিসেব আপনার কাছেও থাকবে।
আমাদের দেশের সরকারি পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী শতকরা ৭০ ভাগের ওপর ভূমিহীন, চাষাবাদযোগ্য কোন জমি তাদের নেই। প্রশ্ন হলো এ বিশাল অংশ মধ্যবিত্তে পরিণত না হয়ে থাকলে মধ্যবিত্তের সংখ্য বেশি এ ধারণা ঠিক হতে পারে না। এ বিষয়ে আপনার অবস্থান জেনে পরবর্তীতে আলোচনায় অংশ নেয়ার ইচ্ছে রইলো।
"কিছু মনে না করলে সচলের বাহিরে যারা আমার ব্লগে আলোচনায় অংশগ্রহন করবেন তাঁরা অন্তত পক্ষে কোথায় বাস এবং আপনার পেশা বলিলে একটি ধারণা থাকতো আমি কার সাথে আলোচনা করছি। আপনি যে নামেই লিখুন তাতে আমার আপত্তি নেই। এখানে আমার নিজের পরিচয় ও পেশা যখন বলা আছে তখন আমিও সে রকম আশা করবো যার সাথে আলোচনা করছি তার আংশিক পরিচয় জানার। সকলকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।"
>>থাকি ঢাকায়,প্রকৌশলী্।
@লেখক:কিন্তু বর্তমানে বা উত্তর আধুনিক যুগে প্রলেতারিয়েত শ্রেনী সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী নয়। সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেনী।
>>মধ্যবিত্ত শ্রেনী কিভাবে আমাদের দেশে সংঝ্যগরিষ্ঠ হয় এই বিষয়টা আমি বুঝলামনা।একটু বুঝাইয়া বলবেন কি?
কোন লিঙ্ক পেলে ভাল হত। তারপর আলোচনা করা যাবে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য এবং পরিচয় উল্লেখ করার জন্য।
আলী মো: আবু নাঈম, থাকি ঢাকায়, পেশায় সাংবাদিক .., বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী, ... ইত্যাদি
শ্রেণী কিসের দ্বারা নির্ধারিত হয়?
উৎপাদন সম্পর্কের দ্বারা। উৎপাদন সম্পর্কের এক পাশে আছেন পুঁজির মালিক যিনি শ্রম ক্রয় করেন, আরেক পাশে আছেন শ্রমিক যিনি শ্রম-বিক্রেতা। এই শ্রম বিক্রেতা বলতে কায়িক ও মানসিক উভয় ধরনের শ্রমবিক্রেতাকেই বোঝায়।
২৩ মে ২০০৮ ; দৈনিক সমকাল,
"নিয়মিত তিন বেলা খেতে পায় না সাড়ে তিন কোটি মানুষ"
এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর গবেষণা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সুস্থ্যভাবে বাঁচার জন্য প্রতিদিন যে পরিমাণ খাদ্য খাওয়া দরকার তা কেনার সামর্থ্য নেই সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষের। পরিবার হিসাবে, ২৫ শতাংশ পরিবার তিনবেলা খাবার যোগাড় করতে পারে না। বাড়িতে মেহমান এলে দেশের প্রায় সাত কোটি মানুষকে খাবার ধার করতে হয়। আর একবেলা খাওয়ার পর পরের বেলা খাওয়ার জন্য দু:শ্চিন্তা করতে হয় প্রায় ৫ কোটি মানুষকে।
এবং তাদের হিসাবে, দেশের ৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে।
১৯ সেপ্টেম্বর ০৬, ইত্তেফাক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো'র খানা জরিপ তখ্য :
মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৯ কোটি ৩৮ লাখ।
ওই বছেরর খানা জরিপ অনুযায়ী দেশে ভূমিহীনের সংখ্যা ৭৬%।
বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষ বেশি না মধ্যবিত্ত বেশি, এখানে ভূমিহীনের সংখ্যা কত, ইত্যাদি প্রশ্ন এত অবান্তর আলোচনা যে এ বিষয়ে বলা অর্থহীন। বিতর্ক নেই তা নয়, কিন্তু সেটা পারসেন্টেজের হার নিয়ে। কারো মতে, ভূমিহীন ৭৬% কারো মতে ৭০%। কারো মতে দারিদ্র্যসীমার নীচে ৫০ ভাগ, কারো মতে আসেল ৮০ ভাগ।
এবার আসি খাদ্যোৎপাদনের প্রশ্নে।
অনীক, জুন ২০০৮ (কলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা)।
রতন খাসনবিশের লেখা : খাদ্যের অর্থনীতি, খাদ্যের রাজনীতি
"১৯৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ২৫৪ কোটি। ঐ বৎসর পৃথিবীতে যা খাদ্যশস্য উৎপাদন করা গিয়েছিল তার পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি ১ লক্ষ টন। উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমাণকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় মাথাপিছু প্রাপ্তব্য খাদ্যশস্যের হিসাব। ১৯৫০ সালে এই অঙ্কটি দাঁড়ায় ২৪৮ কেজি। .. হিসাবটা জাতিপুঞ্জের জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা বিভাগের। খাদ্যশস্য সংক্রান্ত হিসাবটি তারা নিয়েছেন 'ফাও' থেকে। ... জাতিপুঞ্জের হিসাবে, ১৯৬০ সালে মাথাপিছু খাদ্যের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ২৭২ কেজি। ... ১৯৮০ সালে ... মাথাপিছু খাদ্যের পরিমাণ ৩২১ কেজি। সর্বশেষ হিসাবেও খাদ্যশস্য উৎপাদন ও জনসংখ্যার বৃদ্ধির আন্ত:সম্পর্ক একই রকম আছে। ৬৬০ কোটি মানুষের জন্য পৃথিবীতে খাদ্য আছে ২০৭.৫ কোটি টন। সংকট থাকলে তা আছে যোগানে, উৎপাদনে সংকট নেই।"
"২০০৭-এ, যখন অস্ট্রলিয়ায় খরার লক্ষণ দেখা দিয়েছে, সে বছরও মার্কিন সরকার ভরতুকি দিয়ে ৩.৬৫ কোটি হেক্টর চাষের জমি পতিত রাখার ব্যবস্থা করেছে।"
যদিও ইদানিং জৈবজ্বালানির চাহিদা বাড়ায় গম, ভুট্টা , আখ ইত্যাদি শস্যের ব্যবহার বাড়ায় হিসাব সামান্য পাল্টাবে। কিন্তু গত কয়েক যুগ ধরে মার্কিন কৃষি অর্থনীতির একটা বড় দিকই ছিল চাষ না করার জন্য কৃষককে ভর্তুকি প্রদান। অথবা সরকার গম ইত্যাদি কিনে নষ্ট করত।
কে যে অন্ধ আর কে যে চোখ বন্ধ করে আছে .... সেটাই বুঝতে পারছি না।
আপনার লেখার সবগুলো পর্ব মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারিনি। প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব পড়েছি। স্ক্রিনে কোনো সিরিয়াস লেখা পড়া কঠিন, প্রিন্ট দিয়ে পড়তে হয়। সে চেষ্টা করছি। পড়ে সমগ্র লেখা সম্পর্কে মন্তব্য করব।
আপাতত আপনার ও অন্যান্য মন্তব্যকারীদের কথাবার্তায় যে প্রশ্ন উঠে এসেছে সে সম্পর্কে বলি।
আমার নাম আলী মো: আবু নাঈ, পেশায় সাংবাদিক, একটু আধটু কবিতা লিখি, নানা বিষয়ে পড়াশোনা এবং লেখালেখির আগ্রহ আছে। এবং বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী।
প্রথম বার অনেক কষ্টে অনেকগুলো তথ্য উল্লেখ করে মন্তব্য করেছিলা, কিন্তু আন্তর্জালিক গোলযোগের জন্য (!) লেখাটি আসেনি।
প্রথম তথ্য, আমেরিকার কৃষি অর্থনীতি সম্পর্কে।
২০০৭ সালে মার্কিন সরকার ভরতুকি দিয়ে ৩.৬৫ কোটি হেক্টর চাষের জমি পতিত রেখেছে।
উল্লেখ : খাদ্যের অর্থনীতি, খাদ্যের রাজনীইত, রতন খাসনবিশ, অনীক, কলকাতা, জুন ২০০৮।
এছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে নগদ দামে গম ইত্যাদি শস্য কিনে আমেরিকা নষ্ট করে ফেলে, সমুদ্রে ফেল দেয়, এগুলো বহুল আলোচিত ব্যাপার। কিন্তু সম্প্রতি গম, ভুট্টা ইত্যাদি থেকে জৈবজ্বালানি তৈরি শুরু হওয়ার পর থেকে খাদ্যশস্য নষ্ট করা বা জমি পতিত রাখা কমছে।
"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভুট্টা উৎপাদকদের ইথানল তৈরির উপযুক্ত ভুট্টা তৈরির জন্য বিশেষ ভরতুকি দেওয়া শুরু করেছে। ফলত ভুট্টার জমি বাড়ছে, কমছে গমের জমি, আর ভুট্টার জমির প্রায় এক চতুর্থাংশ চলে যাচ্ছে জৈবজ্বালানি তৈরি করতে।" তারপরও ভরতুকি দিয়ে জমি পতিত রাখা হয়েছিল।
এবার খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কিত তথ্য।
"১৯৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ২৫৪ কোটি। ঐ বৎসর পৃথিবীতে যা খাদ্যশস্য উৎপাদন করা গিয়েছিল তার পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি ১ লক্ষ টন। ... মাথাপিছু প্রাপ্তব্য খাদ্যশস্যের ... অঙ্কটি দাঁড়ায় ২৪৮ কেজি। ... হিসাবটা জাতিপুঞ্জের জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা বিভাগের। খাদ্যশস্য সংক্রান্ত হিসাবটি তারা নিয়েছেন 'ফাও' থেকে। ... জাতিপুঞ্জের হিসাবে, ১৯৬০ সালে মাথাপিছু খাদ্যের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ২৭২ কেজি। অর্থাৎ দশ বছরে জনসংখ্যা যা বেড়েছিল, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছিল তার চেয়ে বেশি হারে। ১৯৮০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৪৫ কোটি। সে বছর থাদ্যশস্যের উৎপাদন হয়েছিল ১৪২.৯ কোটি টন। মাথাপিছু খাদ্যের পরিমাণ ৩২১ কেজি। সর্বশেষ হিসাবেও খাদ্যশস্য উৎপাদন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির আন্ত:সম্পর্ক একই রকম আছে। ৬৬০ কোটি মানুষের জন্য পৃথিবীতে খাদ্য আছে ২০৭.৫ কোটি। সংকট থাকলে তা আছে যোগানে, উৎপাদনে সংকট নেই।" (এখানে লেখক জাতিপুঞ্জ বলতে জাতিসংঘ বুঝিয়েছেন)।
তথ্য : রতন খাসনবিশ, পূর্বোক্ত।
তাঁর লেখা থেকে আরও কিছু ...
"জাতিসংঘের হিসাবে গড়পড়তা দৈনিক ১৯৬০ ক্যালরির চেয়ে কম খাদ্যের সংস্থান থাকে যে মানুষের বা যে পরিবারের, সে মানুষ বা সে পরিবারটিকে ক্ষুধার্ত বলে ধরে নিতে হবে। সারা পৃথিবীতে যে খাদ্য উৎপাদন হয় (গড়পড়তা, ২০০০-০৩) তা যদি মাথাপিছু সমভাবে বণ্টিত হতো তাহলে প্রতিটি মানুষ পেত দৈনিক ২৭৬০ ক্যালরির সমান খাদ্য। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে পৃথিবীতে একটি মানুষেরও ক্ষুধার্ত থাকার কথা নয়।"
"২০০১ সালে 'ওইসিডি' দেশগুলি তাদের কৃষিতে সরাসরি যে ভরতুকি দিয়েছিল তার পরিমাণ ৩১১ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি) ডলার। অঙ্কটা কত বেশি তা বুঝতে সুবিধা হবে এই কথাটি মনে রাখলে যে সে বছর সাহারা অঞ্চলের আফ্রিকার দেশগুলির সম্মিলিত জাতীয় আয় ছিল এই অঙ্কটির চেয়ে কম -- ৩০১ বিলিয়ন ডলার।"
# ২০০৮ সালে মনসান্টো মুনাফা ৮০০ বিলিয়ন ডলার। এ বছর আফ্রিকার ৩৬টি দেশের মধ্যে ২১টি দেশে দেখা দিয়েছে অভূতপূর্ব খাদ্যসংকট। ন্যূনতম ১৯৬০ ক্যালরির সমান খাদ্য মিলছে না এমন মানুষের সংখ্যা ১০০ কোটি।
ঐ পত্রিকায় ফ্রেড ম্যাগডফ লিখেছেন :
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অপুষ্টির কারণে প্রতিদিন ১৮ হাজার শিশু মারা যায়। (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)।
খোদ আমেরিকায়, মার্কিন কৃষি দফতরের হিসাব মতে, ২০০৬ সালে খাদ্য সুরক্ষার অভাব আছে এমন পরিবারে বাস করেন ৩.৫ কোটি মানুষ, তার মধ্যে ১.৩ কোটি আবার শিশু। খাদ্যের অভাবের কারণে ১.২ কোটি পরিবারের পূর্ণবয়স্ক মানুষরা সুষম খাদ্য পান না, আর ৭০ লক্ষ পরিবারে অন্তত একজন হয় কম খাদ্য খান বা প্রতিবারের খাবার খান না। প্রায় ৫০ লক্ষ পরিবারে শিশুরা বছেরর কোন না কোন সময়ে যথেষ্ট খাবার পায় না।"
এত এত তথ্য আছে এ বিষয়ে, লিখতে গেলে সারা দিন লেখা যাবে। এগুলো চোখে না পড়লে সমস্যাটা চোখের না মগজের সেটা খুঁজে বের করা দরকার । আমার হাতে এ মুহূর্তে ইন্টারনেট থেকে দেওয়ার মতো কোনো লিংক নেই। এটা আমার অক্ষমতা।
বাংলাদেশে গরিব মানুষের সংখ্যা বেশি না মধ্যবিত্ত -- এ নিয়ে কথা বলাটাই আমার কাছে বাতুলতা মনে হচ্ছে। তারপরও এ সম্পর্কিত তথ্য সামনে উল্লেখ করব।
শুধু এ কথাটা বলে শেষ করি -- শ্রেণী বলতে উৎপাদন সম্পর্কের দুই প্রান্তে অবস্থানকারী মানুষ বোঝায়। পুঁজির মালিক, যিনি শ্রম কেনেন, আর অন্যদিকে তারা যারা শ্রম বিক্রি করেন। এ শ্রম কায়িক বা মানসিক বা উভয় হতে পারে। এর বাইরে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত .. এগুলো কোনো শ্রেণী নয়, সামাজিক স্তরায়ন।
ধন্যবাদ আবু নাঈম আপনার বিশাল মন্তব্য এবং তথ্যের জন্য। আপনি অনেক তথ্য দিয়েছেন তবে এই তথ্যের দ্বারা কি বুঝাচ্ছেন তা আরেকটু পরিষ্কার করলে আমার মত মানুষের জন্য উপকার হত। বুঝতেই পারছেন আমার আর আপনার চিন্তার মাঝে পার্থক্য আছে। সুতরাং এই তথ্যের দ্বারা আপনি কি বুঝাচ্ছেন তা নিজে থেকে না বললে আমার পক্ষে ধারণা করা অসম্ভব।
আমি যেটা বুঝেছি তা সংক্ষেপে বলি। আমার লেখাটি বিশেষ করে শেষ পর্বটি পড়ে দেখেন সেখানে আমি উল্লেখ করেছি যে একটি সুষ্ঠ সমাজ ব্যবস্থা দরকার এই উতপাদন এবং চাহিদার ব্যবধানকে সর্বনিম্নে রাখার জন্য যা আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় হচ্ছে না। কোন সন্দেহ নেই। কথা হচ্ছে কোন উপায়ে আপনি করবেন।
আমি একজন প্রকৌশলী, তাই বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে আমার চিন্তা। আমি চিন্তা করছি প্রথমে আমার দেশের মানুষের কথা। আমার দেশের মানুষের মুখে কিভাবে অন্ন তুলে দেওয়া যায় তার কথা, কিভাবে তাদের আয় বাড়ানো যায় তার কথা। এখন পার্শ্ববর্তী বা অন্য কোন দেশে তাঁরা কেন বেশি উতপাদন করে আমাদের দিচ্ছে না এই ধরণের নাঁকি কান্নায় আমি নেই। আমি বিশ্বাস করি আমার দেশে যদি আমি এমন কোন মডেল দাঁড় করাতে পারি যা দিয়ে আমার দেশের উন্নতি হবে তবে সেটা অন্যান্য অনুন্নত দেশ গুলোতেও কাজে লাগাতে পারবো। আমি মনে করি না মার্ক্স সে রকম কোন প্রয়োগিক সমাধাণ দিয়ে গেছেন যা দিয়ে আপনি দেশ হত দেশ সমাধাণ করতে পারবেন। যে কথা মার্ক্স নিজেও বিশ্বাস করেন যে যে দিন সাম্য চলে আসবে সেইদিন রাষ্ট্রের প্রয়োজন আপনা আপনি ফুরিয়ে যাবে, তাকে উতখাত করতে হবে না। আমার কথা মানার প্রয়োজন তো আপনার নেই। আমাকে আপনি শুধু এইটুকুই বলেন আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আপনাদের কি ভবিষ্যত পরিকল্পনা। আমাদের একটি লেখা দিন যে এই ভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষের মুখে খাবার তুলে দিব, অন্য কোন দেশ থেকে ধার করে নয়।
মধ্যবিত্ত শ্রেনী বেশি না নিম্ন বিত্ত বেশি সেটার চেয়ে যেটা প্রধান, তা হল যদি ৭০% ভুমিহীন হয় তাহলে তো মার্ক্স এর ভাষায় আমাদের দেশে কমিউনিষ্ট সমাজ গঠনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তা হলে এই ৭০% লোককে কেন আপনারা আপনাদের আদর্শের বাণী দিয়ে ভুলাতে পারছেন না। বিপ্লব তো পরের কথা ,আমি যেটা বলেছি , তাদের ভোট ও আপনারা পাননা। আমার কাছে তার উত্তর খুজার দরকার নেই। নিজেকে প্রশ্ন করুন। নিজেই সেই উত্তর খুজার চেষ্টা করুন। নিজে যেটা বুঝবেন সেটাই আপনার কাজে লাগবে সবচেয়ে বেশি।
শ্রমের কথা বলেছেন। আজকে আমিও তো শ্রম বিক্রি করি। যিনি পুঁজি খাটায় তিনি নিজেও তার কারবারে শ্রম বিক্রি করেন। সুতরাং মার্ক্স যে সময়ের শ্রম বিক্রি আর পুঁজিপতি শ্রেনীর কথা বলেছেন সেই সমাজ ব্যবস্থা আজ নেই সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। আজ যদি মার্ক্স এর দর্শন কে কাজ়ে লাগাতে চান, আমার আপত্তি নেই, কিন্তু আজকের সমাজে মার্ক্স বেঁচে থাকলে কি বলতেন সেটা যে দিন অনুধাবণ করতে পারবেন সেইদিন প্রকৃত মার্ক্স এর দর্শনকে কাজে লাগাতে পারবেন। সেটা তখন মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে। সাধারণ মানুষ যারা মার্ক্সবাদ বুঝে না, যারা বুঝে বাস্তবতা, তাদের কাছে যেয়ে ইউটোপিয় সমাজের কথা বললে যে তা কোন কাজেই আসবে না সেটাই বলার চেষ্টা করছি। সারা বিশ্বের মেহনতী মানুষের কথা পরে চিন্তা করে আগে আমাদের দেশের মেহনতী মানুষগুলোর কথা চিন্তা করুন। ধাপে ধাপে চিন্তা করুন।
প্রথমেই লেখকের কথা অনুযায়ী পরিচয়টা দেয়া যাক: আমি ঢাকায় থাকি, পেশায় একজন প্রকৌশলী, নিজেকে একজন মার্কসবাদী মনে করি।
আলোচনার সুবিধার্থে লেখকের এই পর্বের বক্তব্যের ভিত্তিগুলোকে চিহ্রিত করে নেয়া প্রয়োজন যার উপর ভর করে লেখক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত-অনুসিদ্ধান্ত টেনেছেন:
১) দুনিয়ার ইতিহাস শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস মার্কসের এ বক্তব্য সর্বাংশে মেনে নিতে লেখকের আপত্তি। লেখকের মতে শ্রেণীগত কারণ ছাড়াও আরো অন্যান্য কারণেও দ্বন্দ্ব হতে পারে।
২) লেখকের মতে সংগ্রাম ততদিন চলবে যতদিন "পৃথিবীতে সম্পদের উৎপাদন তার চাহিদার তুলনায় কম থাকবে। যদি সমাধান খুঁজতেই হয় তবে চাহিদা আর উৎপাদন এর ব্যাবধান কমাতে হবে। তা জনসংখ্যা সীমিত করে বা উৎপাদন এর পরিমাণ বাড়িয়ে।" লেখকের দাবী মার্কসও মনে করতেন একটি সুষ্ঠু সামাজিক ব্যাবস্থার জন্য এমন একটি "সামাজিক ব্যবস্থা দরকার যা চাহিদা আর উৎপাদন এর ব্যবধানকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করবে। মার্ক্স তাঁর দর্শনে যেটা বলার চেষ্টা করেছেন তা হল বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় আমরা সেটা করছি না।"
৩) মার্কস সমাজব্যবস্থার ত্রুটিকে ভালভাবে চিহ্রিত করতে পারলেও লেখকের মতে মার্কসের প্রধান ভুল হলো- "তিনি শুধু বুর্জোয়া আর প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর দ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে ধরে নিয়ে এগিয়েছেন" কারণ লেখকের মতে আজকের দুনিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণী শ্রমিক শ্রেণী নয় বরং "আজ এই মধ্যবিত্ত শ্রেনীই সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী"। এই সূত্র ধরেই লেখকের মনে করছেন: "মার্ক্স গোলমাল করে ফেলেছেন সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের পথ খুঁজতে গিয়ে। সকল সমস্যার সমাধান তিনি দেখেছেন প্রলেতারিয়েতের শাসনে। কিন্তু বর্তমানে বা উত্তর আধুনিক যুগে প্রলেতারিয়েত শ্রেনী সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী নয়। সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রেনী হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেনী। তাই প্রলেতারিয়েত শ্রেনীর শাসন কখনই মার্ক্সের সংখ্যা গরিষ্ঠের শাসন হতে পারে না, অন্তত আজকের যুগে।"
এখন দেখা যাক লেখকের গড়া এই ভিত্তিমূলক বক্তব্যগুলোর সারবত্তা কতটুকু:
১) শ্রেণী সংগ্রাম প্রসংগে:
মার্কসবাদীদের বিরুদ্ধে ক্লাস রিডাকশনিজম বা শ্রেনী সর্বস্বতার এই অভিযোগ নতুন নয়।বিষয়টি একটু ব্যাখ্যার দাবী রাখে। ক্লাস বলতে মার্কসবাদীরা আসলে কি বোঝে-স্রেফ অর্থের হিসাবে উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত ? এভাবে বুঝলে এদের মধ্যকার কনফ্লিটকে প্রাধান্য দিয়ে সমাজের সমস্ত দ্বন্দ্ব সংঘাতের ব্যাখা করাটা মেনে নিতে সমস্যা হয়। মার্কসবাদীরা কোন একটি সমাজের উতপাদনের উপকরনের উপর মালিকানা সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে সমাজে মূলত তিনটি শ্রেনীর অস্তিত্বের কথা বলে থাকেন। পুজিঁবাদী সমাজে মালিক শ্রেনী বা শোষক শ্রেনীর হাতে থাকে উতপাদনের উপকরনের মালিকানা যা ব্যবহার করে তারা উতপাদনের উপকরনের উপকরনের উপর মালিকানা নেই এমন শ্রমিক শ্রেনীকে শোষন করে আর এ দুটি শ্রেনীর মাঝে থাকে পেটি বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী যাদের উতপাদনের উপকরনের উপর মালিকানা থাকে না কিন্তু এরা মালিক ও শ্রমিক শ্রেনীর মাঝে থেকে মালিক শ্রেণীকে সহায়তা করে থাকে। একই ভাবে দাস যুগে দাস মালিক ও দাস এবং সামন্ত যুগে সামন্ত প্রভু ও ভুমি দাস ।
এখন কথা হলো সমাজে এধরনের অর্থনৈতিক শ্রেনী ছাড়া কি অন্য কোন ধরনের বিভাজন থাকেনা? থাকে। মার্কস বাদীরা কখনও জাতিগত, লৈঙ্গিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক কিংবা ধর্মীয় বিভাজনকে একবারে অস্বীকার করেনা। তারা যা করে তা হলো এধরনের বিভাজনকে কেন্দ্র করে যে সংঘাত তৈরী হয় কিংবা তৈরী করা হয় তার প্রকৃত রুপটি উন্মোচন করার চেষ্টা করে। সমাজে সবসময়ই তো বিভিন্ন ভাষা, জাতি, বর্ণ কিংবা ধর্মের মানুষ বসবাস করে। তাদের মধ্যে কি সবসময়ই সংঘাত লেগে থাকে নাকি কোন বস্তুগত কারন ছাড়া স্রেফ ভাষা, জাতি, বর্ণ কিংবা ধর্মের মত সাংস্কৃতিক ভিন্নতা কোন সংঘাতের কারণ হতে পারে?? তাহলে যখন সংঘাত লাগে তখন কি কারনে লাগে?
অন্যদিকে জীবন ধারনের জন্য মানুষকে সবসময়ই কোন কোন না কোন অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকতে হয়। আর শ্রেনীবিভক্ত সমাজে শ্রমিক শ্রেণী যেহেতু সর্বদাই মালিক শ্রেণী দ্বার শোষিত হয় সেহেতু শোষনের ধরণ উচ্চ, তীব্র, মধ্যম যাই হোক না কেন কিংবা শোষিত ব্যাক্তিটি দাস, ভুমি দাস, কারখানার শ্রমিক, সফ্টওয়ার ইন্ডাস্ট্রির হোয়াইট কালার শ্রমিক যেই হোক না কেন মালিক শ্রেনীর সাথে স্রেফ অর্থনৈতিক কারনেই তার সাথে একটি এন্টাগনিজম কাজ করে। Jean Belkhir বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে:
"Class relations -- whether we are referring to the relations between capitalist and wage workers, or to the relations between workers (salaried and waged) and their managers and supervisors, those who are placed in "contradictory class locations," (Wright, 1978) -- are of paramount importance, for most people's economic survival is determined by them. Those in dominant class positions do exert power over their employees and subordinates and a crucial way in which that power is used is through their choosing the identity they impute their workers. Whatever identity workers might claim or "do," employers can, in turn, disregard their claims and "read" their "doings" differently as "raced" or "gendered" or both, rather than as "classed," thus downplaying their class location and the class nature of their grievances. To argue, then, that class is fundamental is not to "reduce" gender or racial oppression to class, but to acknowledge that the underlying basic and "nameless" power at the root of what happens in social interactions grounded in "intersectionality" is class power."
যেমন রেসিজমের কথাই ধরা যাক। কোন একটি রাষ্ট্র যখন রেসিষ্ট হয় তার কারণ এই নয় যে একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সেই রাষ্ট্রের এক রহস্যময় কারনে স্যাডিস্টিক ঘৃণা কাজ করে, বরং রেসিষ্ট হওয়ার পেছনে রাষ্ট্রের শাষক শ্রেণীর একটি vested interest কাজ করে( মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের হঠাত করে আরব কিংবা মুসলিম বিদ্বেষী হয়ে উঠার কারন যে কোন ভাবেই ধর্ম নয় বরং বিপুল তেল সম্পদের উপর অধিকার, ডলার হেজিমনি কিংবা মিলিটারী ইন্ডাষ্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স এ বিষয়টি ইতিমধ্যেই সবার কাছে পরিস্কার)। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে শাষক শ্রেণী তার সেই vested interest কে গোপন রেখে স্বার্থ হাসিলের জন্য এসবের উপর একটি ভিন্ন আবরন দেয়ার চেষ্টা করে । এর সুবিধা হল এর মাধ্যমে শোষিত শ্রেণীকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিবাদ মান বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে প্রতিরোধের সম্ভাবনা নস্বাত করে দেয়া যায়।
মার্কস এ বিষয়টি লক্ষ করে ১৮৭০ সালে তার নিউইয়র্কের দুই বন্ধুকে লেখা এক চিঠিতে লেখেন:
"Every industrial and commercial center in England now possesses a working class divided into two hostile camps, English proletarians and Irish proletarians. The ordinary English worker hates the Irish worker as a competitor who lowers his standard of life. In relation to the Irish worker he regards himself as a member of the ruling nation and consequently he becomes a tool of the English aristocrats and capitalists against Ireland, thus strengthening their domination over himself. He cherishes religious, social, and national prejudices against the Irish worker. His attitude towards him is much the same as that of the "poor whites" to the Negroes in the former slave states of the U.S.A. The Irishman pays him back with interest in his own money. He sees in the English worker both the accomplice and the stupid tool of the English rulers in Ireland. This antagonism is artificially kept alive and intensified by the press, the pulpit, the comic papers, in short, by all the means at the disposal of the ruling classes. This antagonism is the secret of the impotence of the English working class, despite its organization. It is the secret by which the capitalist class maintains its power. And the latter is quite aware of this."
আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গের মাঝে যে কনফ্লিক্ট সেটার মূলকারণ কি বর্ণ নাকি উতপাদনের উপকরনের উপর একদলের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার? যদি বর্ণ হয় তাহলে কৃষ্ণাঙ্গ এলিট শ্রেণীর উপস্থিতির কি ব্যাখ্যা?
AMY CHUA তার WORLD ON FIRE বইতে লিখেছেন:
“In addition to wealthy white former colonialist Africa is also full of successful & in some case market-dominated African minorities….. Kenya’s kikuyus, who are concentrated in the fertile central province and the capital Nairobi, provide a typically complicated example…..while the country was still under british rule the Kikuyu emerged as a disproportionately urban, capitalist elite among Kenya’s indigenous tribes.”(পৃষ্ঠা ১০৪)
ল্যাটিন আমেরিকার বলিভিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায়:
" … whites make up 5 to 15% of population , mestizos make up 20 to 30 % and Indians 60 to 65 %..... wealth can turn a mestizo or even an Indian into a white. As the bolivian intellectual Tristan Marof wrote decades ago, ‘ Whites are all that have fortune in Bolivia, those that exercise influence and occupy high positions. A rich mestizo or Indian, although he has dark skin, considers himself white"(AMY CHUA ,পৃষ্ঠা ৫৪)
যেকারনে ল্যাটিন আমেরিকার জনগণের কাছে Race কিংবা ethnicity এর appeal সামান্য, ফলে বলিভিয়া, ভেনিজুয়েলা সহ ল্যাটিন আমরিকার প্রায় সব দেশেই শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে নতুন ধরণের সমাজ গঠনের আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছে।
২) উতপাদন ও চাহিদার ফারাকই হলো মূল সংকট?
এটা আলোচ্য লেখকের নিজস্ব ধারণা হতে পারে কিন্তু মার্কস বা মার্কসবাদীরা এ ধারণাকে সঠিক বলে মনে করে না। মার্কস কিংবা মার্কসবাদীদের মতে সমাজের সংকটের মূল উতপাদনের পরিমাণে নয় বরং উতপাদন এবং মালিকানার ধরনে নিহিত- উতপাদনের উপকরণের মালিকানা সংখ্যা লঘিষ্ঠের হাতে থাকে বলে এবং উতপাদন স্রেফ মুনাফার জন্য ঘটে বলেই পুজিবাদী সমাজে কোন একটি সময় প্রচুর উতপাদন হলেও, যেহেতু মুনাফার প্রায় পুরোটাই যায় সংখ্যালঘু পুজিপতির পকেটে, ফলে সে প্রচুর পরিমাণে উতপাদিত পণ্যের ভাগ পায় না সংখ্যাগরিষ্ঠ। যার ফলে সমাজ ব্যবস্থা সংকটে পড়ে। মার্কস এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তাই এই মালিকানা সম্পর্ক এবং মুনাফাকেন্দ্রিক উতপাদনের ধরণকে পাল্টানোর কথা বলেছেন- উতপাদন ও চাহিদার ফারাক মোচনের কথা নয়।
এ বিষয়ে এই আলোচানার ১৫ তম মন্তব্যে জনাব নাঈম কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে পরিস্কার ভাবেই দেখিয়েছেন সারা বিশ্বের সকল মানুষের চাহিদা মেটানোর মত মাথাপিছু যথেষ্ট খাদ্য শস্য উতপাদিত হচ্ছে।( তার মন্তব্যের মাধ্যমে জনাব নাঈম পরিস্কার ভাবে উতপাদনের পরিমাণের বদলে যোগানের অর্থাত বন্টনের সমস্যাটি তুলে ধরলেও লেখক তার প্রাসংগিকতা না বোঝার ভান করে তার পুরোনো ঢাকই বাজিয়ে গেছেন:"ধন্যবাদ আবু নাঈম আপনার বিশাল মন্তব্য এবং তথ্যের জন্য। আপনি অনেক তথ্য দিয়েছেন তবে এই তথ্যের দ্বারা কি বুঝাচ্ছেন তা আরেকটু পরিষ্কার করলে আমার মত মানুষের জন্য উপকার হত। বুঝতেই পারছেন আমার আর আপনার চিন্তার মাঝে পার্থক্য আছে। সুতরাং এই তথ্যের দ্বারা আপনি কি বুঝাচ্ছেন তা নিজে থেকে না বললে আমার পক্ষে ধারণা করা অসম্ভব। আমি যেটা বুঝেছি তা সংক্ষেপে বলি। আমার লেখাটি বিশেষ করে শেষ পর্বটি পড়ে দেখেন সেখানে আমি উল্লেখ করেছি যে একটি সুষ্ঠ সমাজ ব্যবস্থা দরকার এই উতপাদন এবং চাহিদার ব্যবধানকে সর্বনিম্নে রাখার জন্য যা আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় হচ্ছে না। কোন সন্দেহ নেই। "- - কে বলল কোন সন্দেহ নেই, জনাব নাঈম তো আপনার বিপরীত কথাই বললেন!) কিন্তু এই যথেষ্ট উতপাদনের পরও কেন মানুষকে না খেয়ে থাকতে হয়? এটাকি উতপাদনের পরিমাণের সমস্যা নাকি উতপাদিত খাদ্যের ভাগ বেশীর ভাগ মানুষ পায়না বলেই এ সমস্যা? বাংলাদেশে সারা বছর যে পরিমাণ খাদ্য শস্য কিংবা অন্যান্য পণ্য উতপাদিত হয় তার ভাগকি সবাই সমান ভাবে পায়? না পায় না কেননা উতপাদনের উপকরণ যেমন জমি-জমা, হাল গেরস্থ, কলকারখানা ইত্যাদির উপর বেশির ভাগ মানুষের মালিকানা নেই ফলে এসব থেকে উতপাদিত পণ্যের ভাগও সে পায় না। কোন কোন পণ্যের উতপাদন অবশ্যই বাড়ানো প্রয়োজন, কিন্তু কেবল উতপাদন বাড়ালেই চলবে না, মালিকানা সম্পর্ক এবং উতপাদন পদ্ধতি এরকম হতে হবে যেন সেই উপাদিত সম্পদে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাগটা নিশ্চিত হয়।
৩) সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণী প্রসংগে:
লেখক মনে করছেন মধ্যবিত্তই আজকের দুনিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণী-- লেখকের এই বিভ্রান্তির কারণ হলো শ্রেণী সম্পর্কিত তার ভ্রান্ত ধারণা। লেখক মধ্যবিত্ত বলতে কাদের বোঝাতে চেয়েছেন সেটা পরিস্কার করে না বললেও যেহেতু তিনি বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কল্পনা করেছেন সুতরাং বোঝা কঠিন নয় যে তিনি মধ্য আয়ের বেতন ভোগী ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিতদেরকে মধ্যবিত্ত বা পেটিবুর্জোয়া বলছেন অর্থাত এরা মানসিক শ্রম বিক্রি করলেও লেখকের মতে এরা শ্রমিক নয়। শ্রেণী সম্পর্কে এই ভ্রান্ত ধারণা থাকার কারণেই তিনি বলেছেন: "আজকের যুগের বিশাল এই মধ্যবিত্ত শ্রেনীর অবস্থান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অঙ্কুরকালে তেমন প্রকট ছিল না, এবং এই শ্রেনীটি মার্ক্স এর দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল।" ব্যাপারটি কি আসলেই তাই, মার্কস সাহেব বিষয়টি দেখতেই পাননি? চলুন দেখা যাক:
মার্কসের মতে যে শ্রম পুজিঁপতিদের উদ্বৃত্ত মূল্য বা সারপ্লাস ভ্যালু তৈরীতে নিয়োজিত হয় তাই হলো প্রডাক্টিভ লেবার বা উতপাদিকা শ্রম।এ শ্রম কায়িক বা মানসিক যে কোন ধরনেরই হতে পারে। ফলে মাসিক মজুরীর বিনিময়ে কাজে নিয়োজিত পেশাজীবীরাও শ্রমিক- হোয়াইট কালার শ্রমিক। তিনি তার Theories of Surplus Value (TSV) Vol.1.p158 তে বলেছেন:
"A writer is a productive labourer not in so far as he produces ideas, but in so far as he enriches the publisher… The use value of the commodity in which the labour of a productive worker is embodied may be of the most futile kind… It is a definition of labour which is derived not from its content or result, but from its particular social form."
তিনি শিল্পীর শ্রম সম্পর্কে বলেছেন:
"It is the same with enterprises such as theatres, places of entertainment, etc. In such cases the actor’s relation to the public is that of an artist, but in relation to his employer he is a productive labourer."
কাজেই মার্কসবাদ অনুযায়ী আধুনিক বিশ্বের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির বেতনভোগী প্রকৌশলীরাও শ্রমিক কেননা 'সনাতন শ্রমিকের' মত সফ্টওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিতে যারা কাজ করেন তারাও অর্থের বিনিমযে তাদের শ্রম বিক্রি করছেন যে শ্রমের আউটপুট ব্যবহার করে পুজিঁপতি বিরাট মুনাফা অর্জন করে অর্থাত সনাতন শ্রমিকের মত আধুনিক শ্রমিকের শ্রমও সারপ্লাস ভ্যালু তৈরী করছে এবং শোষিত হচ্ছে ।
Christian Fuchs এর কথা ধার করে বলা যায়:
"Does a software engineer produce surplus value? Let us reconsider the definition Marx gave us: "This increment or excess over the original value I call 'surplus-value'" (Marx 1867, 165). According to this definition software engineers produce surplus value because the capitalist buys labour power and the necessary means of production and the piece of software is sold at a value which is higher than the capital invested. The value of a software does not amount to its sum of constant and variable capital. So surplus value must have been produced. Programmers work more than they are being paid for; hence, they perform surplus-labour and produce surplus value. "
এখানে যা পাল্টিয়েছে তা হলো শ্রমের ধরন, শ্রম শোষণের মাত্রা(শোষনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে কেননা কেবল এককালীন শ্রমের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে পুজিঁপতি যে সফটওয়ারটির মালিক হয় তা বার বার স্রেফ কপি করে বিক্রি করে যে মুনাফা অর্জন করে তা ক্রমশ বাড়তে থাকে) কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিন্তু সে শোষিত শ্রমিকই ; তারা তুলনামূলক বেশী মজুরী পাওয়ার সুবাধে মধ্যবিত্ত সুলভ জীবন যাপন করলেও মধ্যবত্তি মোটেই নয় । কাজেই আপনার তথাকথিত মধ্যবিত্তের বিশালত্বের ব্যাপারটিও আপনার শ্রেণী-বিষয়ক ভ্রান্ত বোঝাপড়ারই ফল।
এখন একটি প্রশ্ন স্বভাবতই করা হয় এবং লেখক এখানে করেছেনও। এ আলোচনার ১৭ নং মন্তব্যে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন: "মধ্যবিত্ত শ্রেনী বেশি না নিম্ন বিত্ত বেশি সেটার চেয়ে যেটা প্রধান, তা হল যদি ৭০% ভুমিহীন হয় তাহলে তো মার্ক্স এর ভাষায় আমাদের দেশে কমিউনিষ্ট সমাজ গঠনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। " অর্থাত এরকম পরিস্থিতিতেও বিপ্লব কেন হচ্ছে না, মার্কসের কথা মতো তো অটোমেটিক বিপ্লব হয়ে যাওয়ার কথা! এখানেও লেখকের মার্কসবাদ বোঝার ভুল। লেখক বোধহয় মার্কসবাদের মতো সামাজিক বিজ্ঞানকে প্রকৃতি বিজ্ঞানের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন যেকারনে বিভিন্ন অবজেক্টিভ কন্ডিশানে এবং বিভিন্ন সাবজেক্টিভ প্রিপারেশানে যে ভিন্ন ধরনের ফলাফল হতে পারে সে বিষয়টি বুঝতে চাইছেননা। ভূমিহীনের সংখ্যা বেশী কিংবা শোষণের মাত্রা তীব্র ইত্যাদির মানে হলো বিপ্লব বা সমাজ-রুপান্তরের অবজেকটিভ কন্ডিশন উপস্থিত। কিন্তু অবজেকটিভ কন্ডিশন হাজির থাকলেই কি বিপ্লব হয়ে যাবে, সাবজেক্টিভ প্রিপারেশানের কোন প্রয়োজন নাই? মার্কস পুজিঁবাদের কতগুলো অন্তর্দ্বন্দ্বজাত প্রবণতা(ক্রমশ হ্রাসমান মুনাফার হার,পুজিঁর ক্রমাগত কেন্দ্রীভবন,সর্বহারার সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি) চিহ্ণিত করে দেখিয়েছিলেন এই প্রবণতার ফলে পুজিঁবাদ প্রতিনিয়ত সংকটের জন্ম দিতে থাকে।এই সংকটের অনেক গুলো প্রকাশের একটা হলো সর্বহারার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, শ্রমিকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়া ইত্যাদি । এই সংকটগুলো পুজিঁবাদ বিনাশের অবজেক্টিভ সম্ভাবনা তৈরী করে কেবল, নিজে থেকেই বিনাশ করে দেয় না। এরজন্য প্রয়োজনীয় সাবজেক্টিভ প্রিপারেশানগুলো সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন ক্যাপিটালের ভলিঅম ১, অধ্যায় ৩২ এ Historical Tendency of Capitalist Accumulation অংশটিতে।তাছাড়া তিনি The Civil War in France লেখাটিতে পারি কমিউনের শিক্ষা নিয়ে বলেন:
The working class did not expect miracles from the Commune. They have no ready-made utopias to introduce par decret du peuple. They know that in order to work out their own emancipation, and along with it that higher form to which present society is irresistably tending by its own economical agencies, they will have to pass through long struggles, through a series of historic processes, transforming circumstances and men.
সুতরাং অবজেক্টিভ কন্ডিশান এবং সাবজেক্টিভ প্রিপারেশান যথোপযুক্ত না হলে তা সে যতই সংকট বা মন্দার জন্ম দিক না কেন পুজিঁবাদ বহাল তবিয়তেই থাকবে।
এখন বাংলাদেশে এই সাবজেক্টিভ প্রিপারেশনের ঘাটতি কোথায় সে প্রশ্ন আপনি তুলতেই পারেন কিন্তু আমাদের কথা হলো শুধু সে প্রশ্ন তোলা কিংবা "কমিউনিষ্ট ইশতেহার, মার্কসের কিছু বই কিংবা এঙ্গেলস এর কিছু লেখা" পড়ে তত্ত্বের কচকচানি করাটাই যথেষ্ট নয়-- বুর্জোয়া, পেটিবুর্জোয়া কিংবা হোয়াইট কালার অবস্থান থেকে নিজেকে ডিক্লাসড করার প্রচেষ্টা জারি রেখে সমাজ পরিবর্তনের সত্যিকার সংগ্রামের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্যদিয়েই এসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে হবে কেননা কাজে হাত না লাগিয়ে স্রেফ দায়-দায়িত্বহীন প্রশ্ন কেবল বিভ্রান্তিই বাড়ায় আর খোদ কাজটিকেই পিছিয়ে দেয়।
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি অনেক দেরীতে জবাব দেওয়ার জন্য। আপনার মন্তব্যের জবাব দেওয়ার জন্য যে সময়টুকু নিয়ে সচলে বসা দরকার সে সময়টুকু বের করতে পারিনি পারিবারিক জটিলতায়। প্রথমেই আপনাকে আমি ধন্যবাদ জানাই আপনার সুনির্দিষ্ট মন্তব্যের জন্য। আপনার মন্তব্যটি পড়ে যেটা ভাল লেগেছে যে আপনি আমার লেখাটি বেশ মনযোগ সহকারে পড়েছেন। আরো একটি বিষয় আমার অবাক লাগছে যে আমরা সকলেই প্রকৌশলী। আমার মনে হয় আপনি হতে পারেন উপযুক্ত ব্যক্তি আমার কিছু প্রশ্নের জবাবের জন্য। আশা করি আপনার সাথে আলোচনার মাধ্যমে আমরা সকলেই উপকৃত হবো। আপনার জবাবটি দিতে গিয়ে দেখলাম সেটি বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। আর ভাবলাম অনেকদিন পর আপনার বা অন্যদের চোখে নাও পড়তে পারে। তাই আপনার জবাবে একটি নুতন পোষ্ট দিয়েছি। মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ। পোষ্টটি প্রকাশিত হলে তার লিঙ্ক পরবর্তীতে দিয়ে দিবো।
নুতন পোষ্টটি এখানে।
মনে প্রাণে একমত এই প্যারার সাথে।
করণীয় তিনটি আবার লিখলে এখন কী লিখতেন?
নতুন মন্তব্য করুন