কোন নির্দিষ্ট নিয়ম বা নীতিমালা পালনের জন্য মানুষের সৃষ্টি হয়নি। মানুষের পালনের জন্য কিছু নীতিমালার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই সকল নীতিকে আতসী কাচের নীচে রেখে যাচাই করতে হয় তা আদৌ মানুষের কল্যাণে কাজ করছে কিনা। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ যে কোন নীতির পরিবর্তন তাই বাঞ্ছনীয়। নীতিকে অলঙ্ঘনীয় ধরে মানুষের পরিবর্তন কখনই কাম্য হতে পারে না।
সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তি মানুষের, গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের আচরণ, সংস্কৃতি, ভাষার পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই পরিবর্তন হলো অলঙ্ঘনীয়। তাই এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলার জন্য বাকী সকল কিছুকে পরিবর্তিত হতে হবে। কোন রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজ যদি তাদের নীতিকে সময়ের সাথে উপযোগী না করে তুলে তবে তারা সময়ের তুলনায় পিছিয়ে থাকবে। যেটার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।
কোন দেশ কতটা উন্নত তার একটি নিয়ামক হচ্ছে সেই দেশের নীতি বা সংবিধান কতটা সময়োপযোগী সেটা দেখা। তারা সময়ের সাথে সাথে তাদের সংবিধানকে পরিবর্তন করছে কিনা, জনগণকে উন্নত সেবা প্রদানের জন্য। আমাদের দেশের সংবিধানকে, শাসন ব্যবস্থাকে একুশ শতকের উপযোগী করা এখন সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়। সুদীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনামলের শাসন পদ্ধতি আমরা এখনো বহন করে চলছি যার ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের প্রশাসকদের মাঝে এখনো পুরোনো জমিদারী আচরণ লক্ষ্য করা যায়, দেশকে পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে চিন্তা করার একটি মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়, যা কিনা কোন প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে হওয়া উচিত নয়।
প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা/কর্মচারীকে হত হবে জনগণের সেবক, শাসক নয়। আমাদের দেশে কোন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জবাবদিহিতার কোন ব্যবস্থা নেই। সময় এসেছে সেই নীতিমালার, যেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের সরকারী/আধা-সরকারী/বেসরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। প্রতিটি সেবা প্রদানের জন্য সর্বোচ্চ সময় উল্লেখ থাকবে। প্রতিটি বিভাগে ভোক্তার অধিকার রক্ষার্থে আলাদা বিভাগ থাকবে যেখানে ভোক্তা তার সেবাটি উক্ত সময়ের মাঝে না পেলে নালিশ করতে পারবে।প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি নাগরিককে জানাতে হবে তার কতটুকু প্রাপ্য, যা না পেলে সে আইনি সাহায্য নিতে পারবে। রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে সেই ধরনের নীতিমালা প্রণয়নের জন্য। এভাবে রাষ্ট্র এবং জনগণের পরস্পরের মিথষ্ক্রিয়ার ফলে একটি দেশ এগিয়ে যাবে।
বলাই বাহুল্য আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোন শাসক গোষ্ঠীই জনগণের সেবা প্রদানের কোন প্রকার চিন্তা করেনি বরং সর্বক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। রাজনীতিবিদগণ বিশাল জনগোষ্ঠীর শিক্ষা-স্বল্পতার সুযোগ নিয়ে, ধর্ম-ভীরুতার সুযোগ নিয়ে, দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ভোটের আগে ছলনার আশ্রয় নেয়। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজস্ব গোষ্ঠী এবং নিজের উন্নয়নে, আর জনগণ নিরুপায় হয়ে বারংবার ধর্ষিত হয়।
সময় এসেছে সমস্ত নীতিমালা পর্যালোচনা করে একুশ শতাব্দীর সমাজ গড়ে তোলবার। একটি অসাম্প্রদায়িক, মিশ্র অর্থনীতির, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার। দেশকে নিম্ন আয় হতে মধ্য আয়ের এবং সেখান হতে উন্নত আয়ের দেশে পরিণত করার। আপামর জনগণের মাথাপিছু আয় না বাড়াতে পারলে কোন লক্ষ্যেই আমরা পৌঁছতে পারবো না। এই দারিদ্রতার সাথেই কুশিক্ষা, মৌলবাদ, দুর্নীতি সকল কিছু সম্পর্কিত। একটি জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থাই কেবল পারে একটি দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তাই জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে তাদের নিজেদের অধিকারের জন্য নীতিমালা প্রণয়নে রাষ্ট্রের শাসকদের বাধ্য করাতে।
মন্তব্য
নিঃসন্দেহে ভাল পোষ্ট। এই বিষয়ে আমার কিছু মতামত আছে,
আমি এখনো বিশ্বাষ করি নিয়মের বা নীতির পরিবর্তনের আগে আমাদের বর্তমান নিয়ম না নীতি প্রয়োগের দিকে বেশী জোর দেয়া উচিৎ। সংবিধানে অনেক ভাল ভাল কথা লেখা আছে কিন্তু বাস্তবিক ভাবে এগুলোর প্রয়োগ নেই।
ছোট পরিসরে ছোট উদাহরণ দেই, সবাই জানে বুঝে যে ময়লার ব্যাগটা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে কিন্তু কাজের সময় শতকরা কয়জন ডাস্টবিনে ফেলে আর কয়জন বাইরে ফেলে সেইটা বলাই বাহুল্য। আর এই আমরাই বিদেশে এসে ঠিকই ময়লাগুলি ডাস্টবিনে ফেলি। এখানে কিন্তু কেউ পাহারা দেয়না আমি কোথায় ফেলছি। এই অভ্যেসটা এসেছে সবাইকে দেখে কারন কেউই বাইরে ফেলেনা।
এখন এই উদাহরনটিকে যদি পর্যালোচনা করি তাহলে এরকম একটা কিছু দাড়ায়ঃ হয়ত অনেক অনেক বছর আগে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার বিষয়টি মানুষকে আগে অভ্যস্ত করা হয়েছে, এর উপকারিতা বুঝানো হয়েছে । সেই বিষয়টি সেখানকার মানুষদের অভ্যেসে পরিনত হয়েছে যার ফলে এখন সবাই সেই একই পথে যাচ্ছে।
ঠিক তেমনি একবার একজায়গাতে যদি পদ্ধতি চালু করে ফেলা যায় তা কিন্তু কাজ করে। আমরা দেখেছি ঢাকার মিরপুর রোডে ২০০২ বা ২০০৩ এর দিকে হঠাৎ করে সিগনাল গুলি ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া পরিচালনা করা শুরু হলো এবং তা কিন্তু ভাল মতই চলছিল কারন প্রথম দিকে তা ভাল মত তদারকি করা হতো। উদাহরণটি কিন্তু আরো অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই আমার মনে হয় নিয়ম নীতি পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে তবে তার আগে প্রচলিত নীতির বাস্তবায়ন আগে হতে হবে।
----------------------------------------------------------------------------
জাহিদুল ইসলাম
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
লক্ষ্য করলাম এটা সিরিজ লেখা। একটি অনুরোধ থাকবে, যদি সম্ভব হয় কোন কোন নীতির প্রয়োজন এই মুহূর্তে প্রয়োজন সেই বিষয়ে একটু আলোকপাত করার এবং সবচাইতে ভাল হয় বিভাগ ভিত্তিক আলোচনা করতে যেমনঃ পররাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রযুক্তি, নগরায়ন, গ্রাম-উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।
----------------------------------------------------------------------------
জাহিদুল ইসলাম
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ইচ্ছে আছে একে একে সবগুলো নিয়েই আলোচনা করার।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ।
সময়াভাবে মন্তব্য করা হলো না, ভাইয়া। পড়েছি, জানিয়ে গেলাম।
কুনু সমস্যা নেই।
শেষ লাইনটা পড়ে কয়েকবার ভাবলাম। জনগণের পক্ষে সবসময় শাসকদের বাধ্য করাটা সম্ভবপর হয় না। এ ধরনের ঘটনা একটা দেশে পঞ্চাশ বছরে হয়তো একবার ঘটে থাকে। আর জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস মনে করা হলেও আদপে কিন্তু তার প্রতিফলন দেখা যায় না। সুতরাং এমন একটা সিস্টেম বের করা দরকার যেখানে জনগণের চাপ বা সোচ্চার হওয়া ছাড়াই শাসককূল বাধ্য হবে নিজেদের বদলাতে।
সিরিজের সবগুলো লেখাই পড়বো বলে আশা করছি। ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, এই কথাটিতে সর্বাগ্রে বিশ্বাস রাখতে হবে। জনগণের সোচ্চার হওয়ার জন্য সব সময় রক্তাক্ত বিপ্লবের প্রয়োজন পড়ে না। নিরব ভোটের বিপ্লবের মধ্য দিয়েও যে জনগণ সোচ্চার হতে পারে সেটার চিত্র তাঁরা দেখিয়েছে। সমস্যা হল এই জনগণের সামনে বিকল্প খুব কম থাকে। অনেক চোঁরের মাঝে ভাল চোঁরটি তাদের বেছে নিতে হয়। আমি মনে করি যে ভাল বিকল্প তাঁদের সামনে থাকলে তাঁরা সেটার সাথেই থাকতো। এই পর্যন্ত যত নতুন দল এসেছে তা সেই পুরোনো দল ভেঙ্গে কিছু সুবিধবাদীর দল, তাই জনগণ কখনো ওই নতুন দলগুলোর দিকে তাকায় না। কিন্তু একদম নতুন কিছু চিন্তা ভাবনা নিয়ে যদি আমাদের প্রজন্ম এগিয়ে আসি তবে একটি পরিবর্তন আসতে পারে। এটা মনে রাখতে হবে যে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি প্রায় ৩৮ বছর হতে চললো। এই ৩৮ বছর একটি সমাজের/রাষ্ট্রের বিশাল পরিবর্তনের জন্য কিছুই নয়। ইউরোপ, আমেরিকা এত বছর পরেও এখনো প্রকৃত সভ্য হয়ে উঠতে পারেনি। এখনো তাদের মাঝে বর্ণবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এর মত ব্যাপারগুলো রয়ে গিয়েছে। তাই আমাদের দেশের ক্ষেত্রে আমি হতাশবাদীদের দলে যেতে চাই না। বিশ্বাস করি পরিবর্তন হচ্ছে এবং এটা চলতে থাকবে। তবে আমরা চেষ্টা করতে পারি প্রকৃত পরিকল্পনার মাধ্যমে সেই পরিবর্তনকে আর গতি দিতে। ধন্যবাদ তোমাকে মন্তব্যের জন্য।
জনগণ যে সকল ক্ষমতার উৎস- এটা বিশ্বাস করি, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। বস্তুত এটা বিশ্বাস করারই ব্যাপার। কথা সেটা নিয়ে নয়। কথা হলো- জনগণের পক্ষে সেটাকে প্রমাণ করার সুযোগ খুব একটা বেশি আসে না। বরং জনগণের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকরা অনেক কিছু করে যায়- কিন্তু ওই যে, যেটা বললেন, বিকল্পের অভাবে এক ভালো চোরকে বেছে নিতে হয়, সেই জায়গাটা নিয়ে কথা বলছিলাম। অনেক ধরনের তন্ত্র (সামরিকতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র) নিয়েই তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চললো, এখন গৃহীত তন্ত্রের মধ্যেই এমন একটি সিস্টেম দাড় করানো উচিত যাতে জনগণকেই বারবার প্রমাণ করতে না হয় যে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস।
আপনাকেও ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ভাইয়া খবরটি দেখুনঃ
http://www.prothom-alo.com/newsite1/detail/date/2009-09-25/news/7539
----------------------------------------------------------------------------
জাহিদুল ইসলাম
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
নতুন মন্তব্য করুন