রেসিজম, মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে আদি শত্রু এবং মানুষের সবচেয়ে পুরোন সাথী। মানুষ যেদিন হতে ঈশ্বর আর শয়তান নামের দু’জনকে চিন্তা করতে শুরু করলো এবং ভাল ও খারাপ কাজের জন্য যথাক্রমে দু’জনকে দায়ী করতে থাকলো, সেদিন হতে রেসিজম মানুষের চিন্তার সঙ্গী। ছোটবেলায় পড়েছি, “পাপকে ঘৃনা কর, পাপীকে নয়’- এই কথাটি আজো অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়ে রয়ে আছে। যেদিন হতে আমরা ভেবেছি ভাল কাজ হচ্ছে ঈশ্বরের আর খারাপ কাজ হচ্ছে শয়তানের, তখনই আমরা খারাপ কাজের মানুষগুলোকে আলাদা করে ফেলেছি - কারণ তারা শয়তানের উপাসনা করে, ভালোর নয়।
যুগে যুগে রেসিজমের চিন্তা ধারণা নানান ভাবে আমাদের মধ্য দিয়ে বংশ পরম্পরায় বয়ে চলেছে। একদম আদিম সমাজের মানুষ শুধু মাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে প্রকৃতির সাথে বা প্রকৃতির অন্য জীবের সাথে বা এক অন্যের সাথে লড়াই করতো। সেখানে গোত্রবিশেষের বা মানুষের নিজেদের মাঝে বিদ্ধেষের বিশেষ সুযোগ ছিল না। কিন্তু যখন গোত্র গোত্র বিশেষ মিলে সমাজ হল, সমাজ হতে রাষ্ট্র হল, সমাজে আচরণ বিধি হল, সমাজ ও রাষ্ট্রে শাসক এবং শাসিত গোষ্ঠি হল, এরই কোন পর্যায়ে মানুষে মানুষে বিভেদের সৃষ্টি হল।
ধর্মগুলো মানবতার কথা বললেও রেসিজম থেকে সম্পুর্ণ মুক্ত হতে পারলো না। ইহুদী ধর্মগ্রন্থে বলা হয় ইহুদীরা ঈশ্বরের পছন্দের জাতি। গ্রীক পূরাণেও গ্রীক জাতি নিজেদের ঈশ্বরের সন্তান মনে করে। এভাবে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে যে ধরণের হিংসার বীজ রয়েছে, তাতে মনে হয়েছে যে ধর্মগ্রন্থগুলো ঈশ্বরের বাণী হতে পারে না। একজন ঈশ্বরের কাছে তার সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য থাকতে পারে না। শুধু ধর্মগ্রন্থই নয়, দর্শনগুলোও নিজেদের সম্পুর্ণ মুক্ত করতে পারেনি রেসিজম হতে। একারণেই আমরা দেখি এরিষ্টটল, কান্ট, হেগেলের মত বিখ্যাত দার্শনিকদেরকেও রেসিজমের বীজ অন্তরে ধারণ করতে। এরিষ্টটল মনে করতেন যে গ্রীক জাতি প্রকৃতগত ভাবে মুক্ত এবং বর্বর (প্যাগান বা নন-গ্রীক) জাতি প্রকৃতগত ভাবেই দাস। কান্ট এবং হেগেল উভয়েই মনে করতেন যে, কালো মানুষদের বুদ্ধি কম এবং তারা সাদা মানুষের তুলনায় নীচু জাতের।
আমার মতে, রেসিজমের মূলে রয়েছে অন্ধ-বিশ্বাস এবং অহংকার। আমার বিশ্বাস, বা ধর্ম, বা জাত অন্যদের তুলনায় ভিন্ন এবং উৎকৃষ্ট - এই ধরণের চিন্তার প্রতফলনই হল রেসিজম। তাই আমরা দেখি ধর্মযুদ্ধগুলো থেকে শুরু করে বিশ্বযুদ্ধ এবং আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে বা হচ্ছে তার সবকয়টির সাথেই এই রেসিজম ওতপ্রেতভাবে জড়িত। মানবতা হয়েছে লুন্ঠিত। অন্ধ-বিশ্বাসের প্রকৃতিটি বুঝা খুব জরুরী যদি আমরা রেসিজমকে চিহ্নিত করতে চাই। নিজের বিশ্বাসকে অন্ধ ভাবে পালন করে যদি মানবতাকে উপেক্ষা করি এবং মানুষের মাঝে বিভেদের দেয়াল তুলে দেই তবে, নিজের অজান্তেই রেসিজমের বীজ বপণ করে চলবো। এক জন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যিনি কোনদিন হয়তো মিথ্য বলেননি বা অন্যায় করেননি, তিনিও হয়তো একজন নাস্তিককে ঘৃনা করতে পারেন, কিংবা একজন নাস্তিক, নিজেকে মুক্তচিন্তার অধিকারী দাবী করেও, যদি এই ধারণা পোষন করেন যে ধর্মপ্রাণ মানুষই সমাজকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে, তাহলে তিনিও রেসিজম অন্তরে ধারণ করছেন। ধর্ম নয়, ধর্মের মাঝে বিদ্যমান রেসিজমই দায়ি সভ্যতাকে পেছনে নেওয়ার জন্য।
অন্ধ-বিশ্বাস শুধু মাত্র ধর্ম বা বর্ণেই বিদ্যমান তা নয়। যদি নিজের মতবাদকেই সেরা হিসেবে গন্য করি, , বা সিনিয়র কলিগ হয়ে জুনিয়র কলিগদের তাচ্ছিল্য করি, বা একজন ব্লগার হয়ে সহব্লগারের মতামতকে হেয় প্রতিপন্য করি, বা দেশের সমস্ত রাজনীতিবিদদের চোর মনে করি, বা প্রবাসী সব ভাইয়দের স্বার্থপর মনে করি, বা গরীবলোক মানেই চুরি করে মনে করি, বা কাজের লোকদের যথাযথ সম্মান না দিই, বা বুয়েটের ছাত্র বা ইডেনের ছাত্রী বলে নিজেকে একটু ভিন্ন মনে করি, বা আমার ছেলে কোন অপরাধ করতে পারে না এমন ধারণা মা হিসেবে পোষন করি, বা সকল তরুণদের উচ্ছৃঙ্ঘল মনে করি, বা সকল বুইড়াদের ফালতু মনে করি – এই সবই অন্ধ-বিশ্বাসের প্রতিফলন। আর যখন এই অন্ধ-বিশ্বাষটুকু প্রকট হয়, তখন ভিন্ন মতালম্বী মানুষটিকে আর মানুষ হিসেবে দেখা হয় না – যাহাই রেসিজমের সৃষ্টি করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, নিজেকে মুক্তচিন্তার মানুষ বলে দাবী করলেও, প্রকৃত রেসিজম থেকে মুক্ত থাকা কতটা কষ্টকর। নিজেও যে এর উর্ধ্বে ছিলাম দাবী করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় কালে অমনোযোগী ছাত্রদের হেয় করেছি, দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেছি সেটা তাদের ভালোর জন্যই করেছি, কিন্তু আজ উক্ত কাজ ভুল ছিল স্বীকার করি। মানবতা এবং অহিংসাকে জীবনের পাথেয় করেছি। সকল মানুষ সমান এবং সকলের সমান ভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে এই পৃথিবীতে, এটা বিশ্বাস করি। শুধু সকল মানুষ নয়, সকল জীবেরই বাঁচার সমান অধিকার রয়েছে বলেই মনে করি। একে অন্যের বিশ্বাস এবং মতামতের উপর সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাশীলতার মাধ্যমেই আমরা পারি রেসিজমকে পেছনে ফেলে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
মন্তব্য
অভিনন্দন।
ধন্যবাদ পিপি'দা।
১
অভিনন্দন স্বাধীন । সচলত্ব প্রাপ্তির পর প্রথম লেখার জন্য আপনার প্রসং চয়ন ভাল লাগল খুব ।
২
সহমত । তবে এই অহংকার যে শুধু বর্ণবাদের মূল তা আমার মনে হয়না । ধর্ম গুলোর মূলও কোন না কোন ভাবে ঘুরে ফিরে এই দিকেই যায় । আসলে ধর্ম, বর্ণবাদ, জাতের বড়াই এই সব জিনিস গুলো ঘুরে ফিরে একই যায়গায় গিয়ে মিশে । সেটা হল নিরাপত্তা হীনতার অনুভূতি, ইংরেজিতে যেটাকে বলে 'feeling insecure' । জাতি বা গোষ্ঠী গুলো নিরাপত্তা হীনতায় ভুগে, তখন নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য নিজেরাই নিজেদেরকে নানা রকম স্বান্তনার বানী শোনায় । আমরাই সেরা মার্কা কথাবার্তা আর কি ।
৩
স্বীকারোক্তিটা ভাল লাগল । আশা করি আপনার সকল মনোযোগী এবং অমনোযোগী ছাত্ররা আজ ভাল আছে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ধন্যবাদ এনকিদু।
অনেক ধন্যবাদ। মনের কথাগুলি বললেন।
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সচলত্ত্বে অভিনন্দন স্বাধীন ভাই।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
তোমাকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ আমাকে সচলে আনার জন্য।
সচল হওয়ার অভিনন্দন!
খাঁটি কথা বলেছেন, রেসিজম আসলে কোনো একটি রূপে থাকে না বলেই এতো সমস্যা। তবে আরো বড়ো সমস্যা আছে, এমন অনেক পজিটিভ আবেগ, অনুপ্রেরণা আছে যাদের লালন করতে গেলে রেসিজম ছদ্মবেশে ঢুকে পড়ে। কিছুটা অহঙ্কার না থাকলে মোটিভেশন ধরে রাখা কঠিন। নিজেকে তৃণাদপি ভাবলে প্রতিযোগিতামূলক সমাজে উন্নতি করা কঠিন হতে পারে। এবং যেই মুহূর্তে সেই পথে ভাবা শুরু হয়, সূক্ষ্ণভাবে শুরু হয়ে যেতে পারে রেসিজমের যাত্রা। যেতে পারে বলছি, যাবেই এমনটা নয়। এবং যদি শুরু হয়েও যায়, সভ্য মানুষের কর্তব্য হলো সে সুপিরিয়ারিটির অনুভূতির বশবর্তী হয়ে অন্যকে দৃশ্যতঃ হেয় করা থেকে বিরত থাকা।
সব মানুষ সমান, এই তত্ত্বে আমার বিশ্বাস নেই। কিন্তু সমান অসমানের হিসেবটা জাতধর্মবর্ণের ভিত্তিতে আমি করতে যাই না। আমার থেকে অনেক মানুষই অনেক বিষয়ে অনেক অনেক গুণ ভালো, আমিও কারো কারো থেকে কিছু ক্ষেত্রে ভালো হবো এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু সেই কম বা বেশি ভালোর হিসেবটা ইন্ডিভিজুয়াল-নির্ভর, জাতনির্ভর নয়।
ধন্যবাদ পাঠক'দা।
মানসিক বা শারীরিক গঠণগত ভাবে পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু তারপরেও সবাই রক্ত মাংসে গড়া মানুষ - সেটাই মূল কথা। এখন এই পার্থক্যগুলোকে বড় করে যদি তাঁদেরকে শোষনের হাতিয়ার গড়ি, তাহলে আর নিজেকে সকল জীবের সেরা বলে দাবী করি কিভাবে।
এই মূল কথায় সহমত না হবার কারণই নেই।
পাঠক'দা, আপনাকে বাড়তি একটি কাজ দিতে চাই। বুঝতেই পারছেন কাজটি কি। বানান ভুল চোঁখে পড়লে জানাবেন দয়া করে। নিজের মাতৃ ভাষাটুকু শুদ্ধ করে লিখতে চাই অন্তত।
নাঃ বুঝতে পারতাম না না বললে। আপনিও শেষে আমারে প্রুফ রিডার বানাইলেন?
তবে কাজটা শুরু করে দিতে পারি। চোখে চন্দ্রবিন্দু নেই, উপরের মন্তব্যটির কথা বলছি।
আমি আরো জোর করে চন্দ্রবিন্দু দিই। । এই 'চন্দ্রবিন্দু' কখন হবে আর কখন হবে না এটা বুঝার উপায় কি? হিমু এক লেখায় বলছিলো যেগুলোতে 'ণ' ছিল কিন্তু এখন ব্যবহার হয় না সে রকম ক্ষেত্রে 'চন্দ্রবিন্দু' ব্যবহার হয়। কিন্তু ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়নি। চন্দ্রবিন্দু , য-ফলা, 'ন' এবং 'ণ'এগুলোতে সব সময় দ্বিধায় ভুগি। যাক আশা করি এখন এগুলো আস্তে আস্তে পরিষ্কার হবে।
সচলে চন্দ্রবিন্দু একটু বেশিই থাকে, সবাই আমরা খুব জোর দিতে ভালোবাসি বলেই বোধ হয়।
হিমুর ণ ফর্মুলাটা নিয়ে আমিও নিশ্চিত নই। আমি দন্ত্য ন থেকেও চন্দ্রবিন্দু হয় দেখেছি, যেমন ধরুন চন্দ্র থেকে চাঁদ, বন্ধন থেকে বাঁধন। মূর্ধন্য ন থেকেও হতে পারে, দণ্ড থেকে দাঁড়ি, ভাণ্ড থেকে ভাঁড় ইত্যাদি।
ভাষা ও ব্যাকরণ নিয়ে নিয়ম খুঁজে খানিকটা কাজ হয়, কিন্তু ব্যবহার থেকেই শেষ পর্যন্ত সবটা করা যায়। কাজেই পড়তে ও লিখতে থাকুন, বানান-টানান এসে যাবে আয়ত্তে।
অহমিকাই অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার মূল। পৃথিবীকে একটি পিরামিড এবং নিজেকে তার শীর্ষে বসে থাকা অধিপতি ভাবার চাইতে পৃথিবীকে একটি দালান এবং নিজের তার একটি ইট ভাবা অনেক বেশি নমনীয় ও বাস্তবসম্মত। ভুলে যায় অনেকেই সেটা।
লেখাটা ভালো লাগলো।
সচলত্বে অনেক অভিনন্দন। নাহ, মাস্টার মশাইয়ে ভরে যাচ্ছে সচল।
ধন্যবাদ ইশতি। সেই প্রথম লেখা থেকে আমাকে সাহস দিয়ে আসছো সে জন্য বিশেষ ধন্যবাদ। তোমাদের উৎসাহ এবং সচলের অগণিত পাঠকের প্রেরণায় এই লেখালিখি চালিয়ে যাওয়া। না হলে কবেই সব বন্ধ করে দিতাম।
সেই সাথে আলাদা করে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি সচলের সকল পাঠকে।
অভিনন্দন
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সচলত্ব প্রাপ্তিতে অভিনন্দন, স্বাধীন।
ধন্যবাদ, সাইফ এবং যুধিষ্ঠির।
স্বাধীন ভাই- সচলত্বে অভিনন্দন।
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
ধন্যবাদ, সুহান।
- রেসিজম নিয়ে কথা বলাটা আসলে বৃথা, একেবারেই হুদা। আই রিপিট, একেবারেই হুদা। কারণ যে যতো বড় বড় কথাই বলি, যতোই রাজা-উজির মারি, রেসিজমের ব্যুহ থেকে বের হতে কোনো দিনই পারবো না, অন্ততঃ আমরা। যদি কেউ বলেন যে তিনি রেসিজমের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন, সবিনয় অনুরোধ থাকলো আমাকে জানানোর জন্য। এক নজর দেখবো প্রাণ ভরে। পারলে একটা অটোগ্রাফ নিয়ে সেটা বাঁধায়া রাখবো আর বংশ পরম্পরায় সেটা নাতিনাতনীকে পাস করে যাবো।
যাইহোক, সচলত্বে অভিনন্দন স্বাধীন ভাই। (আপনার শালীশুলীদের সচলে লেখার যে আহ্বান জানানোর কথা ছিলো, তার কতোদূর কী হলো!)
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ ধুসর গোধূলী। আমার শালাও নাই শালীও নাই, কথাটা সত্য না। তয় অবিবাহীত নেই একজনও, এই কথাটা সত্য।
এক্কেবারে হাচা কথা! এই নিয়া আমি খোমাখাতায় একটা স্ট্যাটাস দিছিলাম!
--------------------------
আমার ফ্লিকার
---------------------
আমার ফ্লিকার
জবাবটি আমার ধুগো'দার ওখানেই দেওয়া উচিত ছিল, কাল সময় পাইনি। কথাটি ঠিক নয়। তাহলে এই যে কালোদের অধিকার রক্ষায় এত আন্দোলন হল, আদিবাসীদের অধিকারে এত আন্দোলন হল, লঘু সম্প্রদায় রক্ষায় এত আইন হল, ধর্মগুলোর মাঝে একধরণের সংস্কার হল, ব্যক্তি স্বাধীনতা- বাক স্বধীনতা হল , স্বৈরতন্ত্র আর রাজতন্ত্র হতে গণতন্ত্র আসলো এর সবই কি বৃথা? আজ যে বিদেশে বসে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারছি এসবই কারোর আত্মত্যাগের ফসল এই কথাটি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আজ স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করছেন কারণ ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং আরো অগণিত প্রাণ ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে। না হলে পাকিস্তানের শোষনের ভেতরেই বসবাস করে যেতে হত।
আজো সব রেসিজম থেকে মুক্ত হতে পারিনি কথা সত্য, কিন্তু যদি বসে থাকি তবে তো সেটা একই স্থানে স্থির থাকবে। কিছু মানুষ চেষ্টা করে বলে, আত্মত্যাগ করে বলেই সভ্যতা আজ এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা তার সুফল ভোগ করছি। তাই আমাদের বলে যেতেই হবে। নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে যেতেই হবে। এভাবেই প্রজন্ম হত প্রজন্মে এটা কমতে থাকবে। মনে রাখবেন এই পরিবর্তন খুব ধীর, তাই আমরা সাদা চোখে দেখি না, কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে সেটা বুঝা যায়। নিজেকে দেখেই বুঝি। আর আমার সন্তান যে আমার চেয়ে আরো উন্নত পৃথিবী পাবে সেটা পরিষ্কার দেখতে পাই।
গুরু,
আমার নিজের অনেক বদ গুন আছে। অনেক অনেক। নিজে বুঝতে পারি না, তাই মানুষ বললে, এটলিস্ট মাথায় নেই। ভবিষ্যতে চেষ্টা করি, খারাপ কাজগুলো না করতে। কিন্তু স্বভাব বশত অনেক সময়ই হয়ে যায়, তাও চেষ্টা তো করি।
এই কথা কেন বললাম? কারণ দুনিয়ার সবাই রেসিস্ট। আমি নিজেও হয়তো। কিন্তু আমি খারাপ কে খারাপ বলবো, এটা ভালো না, "রেসিস্ট হইছি তো কী হইছে, দুনিয়ার সবাই রেসিস্ট" এটা ভালো?
আরেকটা কথা বলি। ধরুন, ক, খ, গ। ক জাতির একজন তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে "খ" জাতি খুবই খারাপ। এখন সে একজায়গায় সেই কথাটা লিখলো যে, "খ" খারাপ। লেখাটা পড়লো "গ" জাতির একজন, যে কীনা "খ" জাতি সম্পর্কে কিছুই জানেনা। লেখা পড়ে তার মনেও "খ" দের প্রতি ঘৃণা জন্মালো। এটা কী ঠিক? ধরলাম "খ" খারাপ, কিন্তু তাই বলে এভাবে প্রচার করা তো কোন সলুশন না। এতে করে রেষারেষি বাড়ে। তানবীরা আপুর পোস্টে আমি নিজেই এইকারণে প্রতিবাদ করেছি, নিজে হয়তো অনেক সময়ই রেসিজম করি জেনেও।
আর শুনেন, আমি কিন্তু খোঁচাখুচি করার জন্য মন্তব্যটা করি নাই, জাস্ট আপনার মন্তব্য পড়ে এই কথাগুলো বলতে ইচ্ছে হলো।
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
দারুন একটা লেখা
আর সাথে বিশাল অভিনন্দন।
--------------------------------------------------------
--------------------------------------------------------
ধন্যবাদ, ভুঁত :)। ভুঁতের বাচ্চা বলতে কেন যেন বাঁধে। ভাল থাকুন।
স্বাধীন ভাই, অভিনন্দন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ, গৌতম।
“পাপকে ঘৃনা কর, পাপীকে নয়" -- এটাকি আদতে সম্ভব?অথবা সবসময়েই কি এটা করা উচিত?
এখানে যদি "পাপ" শব্দটা যাবতীয় "অপরাধ"কে ধারন করার অর্থ বহন করে, তবে আমি মনে করি এই কথাটির খুব একটা মূল্য নেই। কারণ পাপী ঘৃণিত না হলে সে নিজের পাপকেই চিহ্নিত করতে পারবেনা। অথবা এভাবে বলা যায়, পাপী বা অপরাধীকে যদি ঘৃণাই না করা হয় তবে শাস্তি দেয়ার দরকার কি?
আপনার লেখাটিতে মানুষের সবধরনের স্নবিশ আচরণকে (এমনকি যোগ্যতার ভিত্তিতে স্নবিশ আচরণকেও) একত্র করে "রেসিজম" হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে, যেখান থেকে বলা যায় যে এটা কোনদিন দূর হবেনা। কারণ এটাই 'সারভাইভাল অভ দ্য ফিটেস্ট'র মূলে নিহিত।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
“পাপকে ঘৃনা কর, পাপীকে নয়" এই কথাটি আমার মতে এই ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। একজন পাপী (সে লঘু হোক বা গূঢ় হোক) যখন তার পাপের জন্য সাজা ভোগ করে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসে তখন পাপীকে আর ঘৃনা না করা বুঝায়। কিন্তু পাপী যদি সেই পাপকে ধারণ করে তবে তখন ঘৃনাটি দু'য়ের উপরেই চলে আসে মনে হয়।
সচলাভিনন্দন প্রিয় স্বাধীন। সচলে খুব কম লেখক আছেন যারা কন্টিনিউয়াস সিরিয়াস লেখা লিখে গেছেন। আপনি সেই কম মানুষের দলের একজন। দয়া করে এই চেষ্টাটা চালিয়ে যান। এতে আপনার কতটুকু উপকার হবে জানি না, তবে পাঠককূলের অনেকেরই উপকার হবে।
মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকা উচিত জ্ঞানের পার্থক্যে, ভালোবাসার পার্থক্যে, সততার পার্থক্যে, সংবেদনশীলতার পার্থক্যে, আন্তরিকতার পার্থক্যে, পরিশ্রমের পার্থক্যে, মেধার পার্থক্যে। এর বাইরে অন্য কোন বস্তুগত বা বানানো মানদণ্ডে করা পার্থক্য সবই "রেসিজম"-এর অন্তর্ভূক্ত। নিজের চেষ্টা, মেধা বা শ্রমের দ্বারা যা অর্জন করেনি তা নিয়ে মানুষ কি করে গর্ব করতে পারে, বা অন্যকে হেয় করতে পারে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ আরিফ ভাই। আমাকে তুমি করে বলতে পারেন, আমি আপনার ছোটই হব। আমি ৯৪ ইণ্টার। সচলে যারা আমার চেয়ে বড় তাঁরা দয়া করে আমাকে তুমি করে বললে খুব খুশি হবো।
পাঠককূলের উপকার হবে কিনা জানি না তবে আমার উপকার হচ্ছে জানি। আমি আসলে এমন একটি জীবন দর্শন খুঁজছি যা আমার সন্তানদের দিয়ে যেতে পারি। তাঁদের অন্তত যেন বলতে পারি যে আমি জানি না এটাই প্রকৃত সত্য কিনা, কিন্তু চেষ্টা করেছি সত্যটি খুঁজার। আপাতত এই পেয়েছি, এখন বাকী পথ তোমাদের নিজেদেরই বেছে নিতে হবে। আমি তোমাদের শুধু সম্ভাব্য সকল পথ চিনিয়ে দিতে পারি, কিন্তু কোন পথে চলবে সেটা তোমাদেরই জেনে নিতে হবে নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে।
নিজের চেষ্টা, মেধা বা শ্রম দ্বারা অর্জনেও কিন্তু অহংকার করা উচিত হবে না। নিজের যে মেধাটি বা শারীরিক ক্ষমতাটি পেয়েছি সেটাতেও কিন্তু ভাগ্যের অবদান অনেক আছে। ভাগ্য বলতে সেটাকেই বুঝাচ্ছি যেখানে সম্ভাবনা জড়িত। এই যেমন কোন শক্রানু হতে যে নিষিক্ত হয়ে আমি হয়েছি, এবং জেনেটিকালি আমি যে একজন সুস্থ মস্তিষ্ক এবং সুস্থ দেহের মানুষ হয়েছি সেখানেও আমার নিজের অবদান কিন্তু সামান্যই।
--আমিও। আপ্নে এতো সিরিয়াস কেমনে হৈলেন? আমারতো বিটলামী ছাড়া কিছু ভাল্লাগেনা
সচল হওয়াতে উষ্ণ অভিনন্দন!
ধন্যবাদ মামুন ভাই :D। আয়েন কোলাকুলি করি। বিটলামী করার লাইগ্যাতো সেই দোস্তদের দরকার, যা এই বিদেশে বিঁভুয়ে কই পাই। সেই দুঃখেই আর কি মনে হয়।
প্রায় একমত। তবে গর্ব আর অহঙ্কারে একটু পার্থক্য আছে। আমি গর্ব করার কথা বলেছিলাম। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালোনা, আর তাতে আমিত্ব চলে আসলেতো সবই শেষ। তাই আমরা গর্ব করবো, সবাইকে নিয়ে, নিজের অর্জনে অন্যদের অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করে, কিন্তু অহঙ্কার করবোনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি একটু দ্বিমত করব। পাকিস্তানী জিনিস ঘৃণা করা রেসিজম নয়, ফরজ।
বাকিটা ঠিকাছে। সবই আপেক্ষিক।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
রাজাকার বোঝাচ্ছি প্রধাণত। এদের মানুষ বলতে বাধে।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
সচলত্ব প্রাপ্তিতে
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ধন্যবাদ, মানিক ভাই।
সচলত্ব প্রাপ্তিতে অভিনন্দন স্বাধীন।
খুব চমৎকার একটা লেখা।
আপনার এই গুছিয়ে লেখার স্টাইলটা আমার খুব পছন্দের।
ভাল থাকবেন, সব সময়
ধন্যবাদ, অনিকেত'দা। ভাল থাকবেন আপনিও।
অভিনন্দন মোস্তফা ভাই। পুরো লেখাটার সাথেই একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমরা প্রত্যেকেই আসলে just another brick in the wall. এত রেষারেষির কিছুই নেই।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ধন্যবাদ, শিক্ষানবিস। 'সেলফিশ জিন' বইটার অনুবাদ তাড়াতাড়ি ছাড়। বইটা পড়া ধরেছিলাম, কিন্তু খট্মট ভাষার জন্য বেশি দূর এগুতে পারিনি। তোমার অনুবাদের অপেক্ষায় রইলাম।
নতুন মন্তব্য করুন