দেশ কি এভাবেই চলবে?

স্বাধীন এর ছবি
লিখেছেন স্বাধীন (তারিখ: শনি, ০৫/১২/২০০৯ - ১২:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফের নৌ দুর্ঘটনা। ফের মৃত্যুর মিছিল। ফের স্বজনের আহাজারিতে কেঁপে উঠলো বাংলাদেশ। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভোলায় লঞ্চডুবিতে ৮৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই গতকাল শুক্রবার কিশোরগঞ্জে ট্রলারডুবিতে ঝরে গেল আরো অর্ধশত তাজা প্রাণ। সকালে দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি হবিগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জ যাচ্ছিল। মিঠামইন উপজেলা সংলগ্ন দাড়িয়া নদীতে এলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি লঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মুহূর্তেই ট্রলারটি ডুবে যায়। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় ৪৭টি লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ ছিল কমপক্ষে ২০ জন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার পাওয়া যাত্রীরা। বিকালে ঢাকা থেকে ডুবুরি দল এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এ সময় নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের বুকফাটা আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে দাড়িয়া পাড়ের আকাশ-বাতাস।

মর্মান্তিক এ নৌ দুর্ঘটনায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার মোঃ আব্দুল হামিদ এডভোকেট ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্য নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আহতদের পর্যাপ্ত সুচিকিৎসা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে দুর্ঘটনা তদন্তে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের পরিবার প্রতি দুই হাজার টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহ কামাল। সুত্রঃ ইত্তেফাক

দেশে মানুষের মৃত্যু এখন সবচেয়ে সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দুর্ঘটনা হতে পারে, এবং দুর্ঘটনাজণিত কারণে একটি পরিবারে মৃত্যুর ভয়াবহতা আসতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যা হচ্ছে সেগুলোকে মৃত্যু না বলে খুন বলাই ভাল। অনেকে আত্মহত্যাও বলতেও পারেন। অনেকে বলবেন লঞ্চ এর তিল ধারণের জায়গা না থাকলেও মানুষগুলো কেন উঠে। ট্রেনে জায়গা না থাকলেও মানুষগুলো কেন ট্রেনের ছাদেই উঠে। এই ধরণের আহম্মকদের মরণই একমাত্র প্রাপ্য। আসলে কি তাই? এই মানুষগুলো কেন ট্রেনের ছাদে উঠতে বাধ্য হয়। কেন ঈদের আগে বিপুল মানুষ ভ্রমন করবে জানা সত্বেও ট্রেন,বাস, লঞ্চ এর সংখ্যা বাড়ানো হয় না। কেন লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার অধিক মানুষ আছে জেনেও কতৃপক্ষ লঞ্চ ছাড়ার অনুমতি প্রদান করেন। আর অনুমতি প্রদানের সেই মানুষটি বা সেই লঞ্চের মালিক কেন কোনদিন শাস্তি পায় না। এই সব প্রশ্নের জবাব কোন দিন আমরা পাই না।

প্রধানমন্ত্রী, রষ্ট্রপতি, নৌ-মন্ত্রী, রেল-মন্ত্রী বা সরকার এই সকল ঘটনায় শুধু শোক প্রদান করেই দায়িত্ব শেষ করেন। আমরা এগুলো সবই মেনে নিয়েছি। রাস্তায় বের হয়ে সুস্থ অবস্থায় বাসায় ফিরতে পারবো কিনা কেউ জানি না। সবই আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। এ ভাবে চলতে পারে না। এর পরিবর্তন হওয়া বাঞ্চনীয়। বিদেশে মানুষের অনাকাঙ্ঘিত মৃত্যু এড়ানোর জন্য নানান ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আজ অন্তর্জালের যুগে বা বিজ্ঞানের যুগে সেই সব পদক্ষেপ কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। চাইলে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা সেই সব পদক্ষেপ নিতে পারেন। আইন থাকলেই হবে না, আইনের প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এখন সরকার যদি আইন প্রয়োগ না করে তবে কি বাহির থেকে আমরা এসে করে দিব?

প্রয়োজ়ন শুধু সরকারের সদিচ্ছা। দেশ যিনি চালান তার সদিচ্ছা। এই সরকারকে শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই, কারণ ক্ষমতায় যারাই গিয়েছে সবাই একই কাজ করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে করেছে, এখনও একই ভাবে করছে। পৃথিবীর অন্য সব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরাই শুধু একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছি। তাঁরা নিজেরা দূর্নীতি করে বেরাচ্ছেন, জনগণের পয়সায় এখন গাড়ী কিনতে চাচ্ছেন , কিন্তু জনগণের স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য চিন্তা করার বা সময় দেওয়ার সময়টুকু নেই। এভাবে চিন্তা করলে হতাশাই শুধু ভর করে। কিন্তু তারপরেও বেঁচে থাকতে হয়। বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে হয়। তাই স্বপ্ন দেখি এর পরিবর্তন হবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম সেই পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে আসবে। কারোর অপেক্ষায় না থেকে আমরাই সেই পরিবর্তনের জন্য কাজ করবো। সবার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুনঃ দেশ কি এভাবেই চলবে? সেটাই কি চান? নিজের পক্ষ থেকে কি করতে পারি দেশের জন্য, দেশের মানুষগুলোর জন্য।


মন্তব্য

নাশতারান এর ছবি

নিজের পক্ষ থেকে কি করতে পারি দেশের জন্য
... সব করতে পারি। কেবল ইচ্ছা আর সাহসটুকু চাই।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সচল জাহিদ এর ছবি

বিদেশে মানুষের অনাকাঙ্ঘিত মৃত্যু এড়ানোর জন্য নানান ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

স্বাধীন ভাই আমাদের দেশের এই মৃত্যুগুলোত কাঙ্খিত !! তা না হলে ধারণক্ষমতার থেকে বেশী মানুষ লঞ্চে উঠাবে কেন? আর কেনইবা ভাড়া তোলার জন্য মানুষকে গরু ছাগলের মত বেত দিয়ে তাড়িয়ে লঞ্চের এক পাশে নিয়ে যাবে (ভোলায় লঞ্চডুবির কথা বলছি)

এই লঞ্চডুবির জন্য দায়ীদের শাস্তি হবেনা ঐ তদন্ত কমিটি গঠন করা পর্যন্তই।

----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এদের যাতে শাস্তি না হয় সেজন্যই লঞ্চের মালিকদের এবারে মামলায় নেয়া হয়েছে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

কী যে বলব! রাগে গা জ্বলে যায়... আমি কখনোই মনে করিনা আমাদের দেশ গরীব! আমাদের আসলে গরীব বানিয়ে রাখে এই হারামী শাসকগোষ্ঠী! এদের কারণেই এত মৃত্যু-এত কান্না...মন খারাপ

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অতিথি লেখক এর ছবি

"কেন ঈদের আগে বিপুল মানুষ ভ্রমন করবে জানা সত্বেও ট্রেন,বাস, লঞ্চ এর সংখ্যা বাড়ানো হয় না।"________জনসংখ্যা কমাবার মহৎ পরিকল্পনারে ভাই, মহৎ---।
এস হোসাইন

---------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"

স্বাধীন এর ছবি

সকলকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমরা এই মৃত্যুগুলোকে এখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নেই সেটা আরো বড় ভয়ের ব্যাপার। মৃত্যু কত সহজ,আর সে তুলনায় বেঁচে থাকাই অনেক কঠিন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।