আর কত প্রাণ ঝরার পর আমাদের চক্ষু খুলিবে

স্বাধীন এর ছবি
লিখেছেন স্বাধীন (তারিখ: শুক্র, ০৫/০২/২০১০ - ৫:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আরো একটি প্রাণ অকালে ঝরে গেল। চৌত্রিশ বছর পর যখন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় নিয়ে দেশবাসী স্বস্থির নিশ্বাস ফেলছে, তখন ছাত্র রাজনীতির নামে মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যু নিজেদের লজ্জায় ফেলে দেয়। আর সেই সাথে দেশের অপদার্থ স্বারষ্ট্রমন্ত্রীর হালকা মন্তব্য মনে করিয়ে দেয় অযোগ্যতা, মেরুদন্ডহীনতা, দুর্নীতি, অর্থ এবং সন্ত্রাস হচ্ছে রাজনীতিতে যোগ্যতার মাপকাঠি।

রাজনীতিতে ছাত্রদের ব্যবহার কতটা যৌক্তিক? একজন ছাত্র শুধু পড়াশুনা করবে কিন্তু দেশ বা বিদেশের বা সমাজের খোঁজ রাখবে না, তা নয়। কিন্তু তাই বলে দলীয় রাজনীতির প্রয়োজন আছে কি? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে দলীয় রাজনীতির মাধ্যমে কি পায় ছাত্ররা- যা পায়ঃ কিছুদিন পর পর দলীয় কোন্দলে মারপিট, বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডার, সন্ত্রাস, হলের ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, হলের রুম দখল আর মাঝে মাঝে এ রকম কিছু মৃত্যু। তারপরেও আমাদের বিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা ছাত্র রাজনীতি রাখার পক্ষে। যুক্তি হিসেবে আসে ভাষা আন্দলোন, উনসত্তরের গণআন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা, স্বৈরাচারী পতনের আন্দোলনের কথা। নিঃসন্দেহে ছাত্ররা সেই সকল আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল। কিন্তু সেটা কি ছাত্র রাজনীতির জন্যই হয়েছে নাকি হয়েছে সময়ের প্রয়োজনে। আমার মতে আসলে আমরা যা করে থাকি সব সময়ের প্রয়োজনেই করে থাকি। সময়ের যদি প্রয়োজন হয়, দেশের গণতন্ত্র যদি বিপন্ন হয় তবে আবারো ছাত্র সমাজই সবচেয়ে আগে এগিয়ে আসবে, এই বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই, কোন ছাত্র রাজনীতি না থাকলেও।

সাধারনত দেখা যায় যে দেশে যে কোন ভাল কাজের শুরু হয় বাম রাজনীতিবিদদের হাত ধরে। কোন এক আলৌকিক কারণে বাম রাজনীতিতে যারা জড়িত তারাই ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সবচেয়ে বিপক্ষে। আমার মতে এই একটি চিত্রই যথেষ্ট আমাদের দেশের বাম রাজনীতিবিদদের দৈন্য দশা বুঝাতে। কোমলমতি ছাত্রদের না হলে যেমন চলে না আওয়ামী বা বিনপির তেমনি চলে না ইসলামী দলগুলোর আর তেমনি চলে না বাম দলগুলোর। আসলে সত্য হল যে এই ছাত্ররা আমাদের এই ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতির শিকার মাত্র। যেহেতু দলীয় আদর্শে ক্ষমতাই মূল লক্ষ্য -তাই কিছু ছাত্র মারা গেলে কারোর কোন কিছু আসে যায় না। যেসব ছাত্র লিগ বা দল করে তারা অন্তত জানে যে একদিন ক্ষমতায় গেলে কিছু একটি পাবে। কিন্তু যে সব ছাত্ররা ধর্মীয় সমাজ আর মার্ক্সীয় সমাজের স্বপ্ন দেখে নিজের জীবনের সুন্দর সময়গুলো নষ্ট করে, তাঁদের মৃত্যু কয়জন দেখে। ওরা নিজেরাও জানে না যে ওদের জীবনের মৃত্যু কিভাবে হচ্ছে।

কথা হল ছাত্রদের রাজনীতির সাথে যুক্ত হবার প্রয়োজন নেই। ছাত্র সংগঠন থাকতে পারে কিন্তু কোন সংগঠন দলীয় রাজনীতি বা রাজনীতি বিষয়ক হতে পারবে না। সাংস্কৃতিক সংগঠন হোক, বিজ্ঞান সংগঠন হোক, এলাকা ভিক্তিক সংগঠন হোক। কিন্তু কোন সংগঠনের গঠনতন্ত্রে রাজনীতির বিষয় আসতে পারবে না। একই কথা প্রযোজ্য শিক্ষক, পেশাজীবি সংগঠন, সরকারী চাকুরীজীবিদের সম্পর্কে। যে শিক্ষকদের কাজ হল মানুষ তৈরী করা, তারাই যখন দলীয় রাজনীতিতে বিভক্ত হয়ে নিজেদের চরিত্রকে বিসর্জন দেয়, তখন ছাত্ররা যে সেটাই করবেনা, এ আর ভিন্ন কি।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতন্ত্র রক্ষার্থে ছাত্র বা শিক্ষক বা পেশাজীবি সংগঠনের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা আর তার জন্য প্রয়োজন স্বাধীন বিচারিক ব্যবস্থা এবং বলিষ্ঠ চরিত্রের বিচারকগণ। দরকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন পুলিশ বিভাগ, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। দরকার স্বাধীন নির্বাহী বিভাগ, দরকার স্বাধীন সংসদ। সবশেষে দরকার স্বাধীন মিডিয়া। দরকার দলগুলোর মাঝে গণতন্ত্রের ব্যবহার। একজন ছাত্র বা একজন শিক্ষক চাইলে যে কোন দলের সাপোর্টার হতে পারেন, কিন্তু কর্ম ক্ষেত্রে সাংবিধানিক দায়িত্ব রক্ষা করাই হবে তার একমাত্র কর্তব্য। আসুন আমরা ছাত্র/শিক্ষক/পেশাজীবিদের রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।


মন্তব্য

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি


কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যথেষ্ট ম্যাচিউরিটি আছে হলে ফাউ খাওয়ার রাজনীতি করার পরিনাম বোঝার - তবুও তারা ত়া বাধ্য হয়েই করছে - ট্রাডিশনের জোরে। যেমন ধরা যাক - হলে সিট পেতে নেতা না ধরে কাগজে কলমে রুমের দখল কে পেয়েছে কবে? সেই থেকেই হাতে খড়ি। বন্য পাখি পোষ মানিয়ে খামারে ঢুকলে - পরে লাথি মারলেও সে বেরিয়ে যাবে না। প্রতি বছর রিক্রুটিং-এর মোটামুটি ভালই চক্র - সহসা বেরুনোর পথ নাই।


কোনো আক্ষরিক ইমিডিয়েট সুবিধা ছাড়া আদর্শের জন্য কেউ ছাত্র রাজনীতি করা শুরু করে? হাইপথেটিকালি কেউ কেউ হয়ত করে - কোনো এম,পি পুত করতে পারে, তাও বাপের আদেশে - এছাড়া কোনো জেনুইন কেইস আমার নজরে কখনো পড়েনি (বাম দলের কথা বা রাজাকারের নাতির জামাত করার কথা আলাদা)।


ছাত্র রাজনীতি কি আসলেই খারাপ? আসুন একটা মিনি বিশ্লেষণ হয়ে যাক -
- প্রতি বছর পরীক্ষা পিছানোর জন্য তো শেষ পর্যন্ত নেতাদেরই ধরনা দিতে হয়।
- সেশন জ্যাম না থাকলে এত ছাত্র একসাথে পাস করে গেলে চাকরি দেবে কিভাবে সরকার?
- দেশে আকস্মিক যুদ্ধ লাগলে আর্মস ক্যাডাররা ক্ষেত থেকে লোক এনে গেরিলা ফোর্স ট্রেইনিং দিতে পারবে।
- নেতাদের চাঁদাবাজি না থাকলে সব মার্কেটের তো জিনিসের দাম পড়ে যাবে - দেশের অর্থনীতির জন্য ত়া কতটুকু মঙ্গলজনক ত়া ভেবে দেখতে হবে।
- টেন্ডারবাজিতে বিশ্ব-বিদ্যালয়ের টাকা নিজেদের মধ্যেই থাকে।
- নেতারা মিছিলে নেয় বলেই একটু এক্সারসাইজ হয় - নাহলে তো দেশে অবিসিটির (মুটিয়ে যাওয়া) সমস্যা দেখা দিবে।
- তাছাড়া ক্যান্টিনে ফাও না খাইলে ক্যান্টিনে তো উন্নত খাবার দিয়ে ছাত্রদের অলস বানিয়ে ফেলবে! ক্ষুধা পেটেই পড়ালেখা বেশি হয় - ক্যান্টিনে কম দামে ভালো খাবার খাইলে পড়ালেখার মান পড়ে যেতে পারে - বাহিরে গিয়ে খাবার প্রবণতাও কমে যাবে (তাতে বাঝ্যিক জ্ঞান অর্জনে কমতি পরবে)।
- ছাত্র নেতারা ছাত্রীদের উত্যক্ত না করলে মেয়েরা আরো বেহায়া হয়ে উঠতে পারে - প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অবস্থা দেখেন। আমাদের মতন কনজারভেটিভ সোসাইটির জন্য ত়া একটা বিশাল সমস্যা হবে।
- নেতাদের হাতে সহপাঠিকে মার খেতে দেখলে আদব কায়দায় ছাত্ররা সংযত হবে।
- রাস্তায় কোনো কিছু ভাংচুরের মজাই আলাদা: দামী গাড়ি ভাঙ্গা হয় হলিউডি মুভিতে সম্ভব, নাহলে বাঙালি রাজনীতিতে সম্ভব - নেতারা না থাকলে এই শেল্টার দিবে কে? ছাত্র রাজনীতি না থাকলে এই নির্মল আনন্দ থেকে কচি মনের ছাত্ররা বঞ্চিত হবে।

আর কিছু মাথায় আসছে না ...


নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অফ টপিকে একটা খারাপ কথা বলি - অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জানি না - তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জ্ঞানী-গুনি মানুষ - তারা দেশের সম্পদ - তারা যদি পুচকা ক্লাসে পড়ানোতে বেশি মনোযোগ দেয়, রাজনীতি না করে, বিভিন্ন নেত্রীর বাসার সামনে পুস্প স্তবক নিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের মর্তবা না বাড়ায়, তাহলে সেশন জট লাগবে কিভাবে? এত বছরের ট্রাডিশনটা তো ভেঙ্গে যাবে! সেই একই শিক্ষকরা যখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ান, তখন কোন "পরশ পাথরের" ছোয়ায় সমস্ত আদর্শ, রাজনীতি, ব্যস্ততা, ফাঁকিবাজি ভুলে সময় মতন ক্লাসে আসেন, হোমওয়ার্ক দেখেন, সময় মতন রেজাল্ট দেন, অফিস আওয়ারে ছাত্রদের সাথে মিহি গলায় কথা বলেন, ছাত্রদের সমস্যার কথা এমনকি ইমেইলে শোনেন? এরকম একটা "পরশ পাথর" পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলার গুরুতরভাবে দরকার!!


অনেক আলাপ হৈল - একটা নাটকীয় ভিডিও দেখেন

[দুঃখিত স্বাধীন, অনেক বড় মন্তব্য করে ফেললাম, মনে কিছু নিয়েন না]

স্বাধীন এর ছবি

ধন্যবাদ বিশাল মন্তব্যের জন্য।

ফয়সাল এর ছবি

সহমত

স্বাধীন এর ছবি

হাসি.

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

আমাদের চক্ষু খুলিয়া কি হইবে? যাহাদের চক্ষু খোলা রাখিয়া সব কিছু দেখিবার কথা, তাহারাই বলিতেছেন, "এইগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা"...বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র মরিয়া যাক। বাচিয়া থাকুক তাহাদের পালিত ছাত্রদল আর ছাত্রলীগ।
জয় হউক ছাত্র রাজনীতির...মরিতেই থাকুক সাধারন ছাত্ররা।

স্বাধীন এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

সচল জাহিদ এর ছবি

আপনার বক্তব্যের সাথে সহমত জ্ঞাপণ করছি।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

স্বাধীন এর ছবি

ধন্যবাদ।

ভাঙ্গা পেন্সিল [অতিথি] এর ছবি

ছাত্র রাজনীতির আসলে কোনো দরকার নাই। সময়ের দাবিটাই বড় কথা। বুয়েটে প্রতিবছর প্রতি টার্মে যে পরীক্ষা পেছানোর মিছিল হয়, তাতে কোনো লীগ বা দলের হাত নাই। ছাত্ররা নিজেদের স্বার্থ নিজেরাই বুঝে নেয়। সে স্বার্থ কতোটুকু যৌক্তিক বা অযৌক্তিক সেটা এখানে আলোচ্য না, কিন্তু মূল কথা হলো সে মিছিল করতে আর দাবি দাওয়া পেশ করতে দলবাজি করা লাগে না।

স্বাধীন এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

হাসিব এর ছবি

পোস্টের অনেক অংশেই একমত না ।

স্বাধীন এর ছবি

কোন কোন অংশে দ্বিমত আছে জানতে পারলে ভাল লাগতো। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

ফাহিম এর ছবি

যেকোন ঘটনার পেছনে কিছু লজিক্যাল চেইন অফ ইভেন্টস থাকে। এটা অনেক সময়ই ঠিক নিয়ন্ত্রনযোগ্য না। একটা কমপ্লেক্স সোস্যাল সিস্টেম গড়ে উঠতে তার পিছনে অনেক ধরণের ইন্টার-অ্যান্ড-ইন্ট্রা-ডিপেন্ডেন্ট ইভেন্টস কাজ করে। এককভাবে কোন কিছুকে দায়ী করাটা একটু মুশকিল। আমাদের বর্তমানের ছাত্র রাজনীতি দীর্ঘদিনব্যাপী এরকম অনেক জটিল কিছু পারস্পরিক-নির্ভরশীল আদান-প্রদানের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে, কেউ চাইলেই একে হঠাৎ করে সরিয়ে দিতে পারবে না।

আমি রাজনৈতিক কর্মী নই, ইতিহাসবিদও নই। তাই আমাদের ভূখণ্ডে ছাত্ররাজনীতির উদ্ভব নিয়ে আমি কোন ধরণের মন্তব্য করছি না। বিশ্বের তাবৎ টপ-র‌্যাংকিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, যেখানে ছাত্ররাজনীতির নাম গন্ধও নেই, তারা যদি তুখোড় তুখোড় ছেলে-পেলে তৈরী করে বের করে দিতে পারে, আমাদের কী কারণে ছাত্ররাজনীতি না হলেই চলবে না, আমার এটা মাথায় আসে না। তবে সাদা চোখে যেটা বোঝা যায়, বা যারা ছাত্ররাজনীতির পক্ষে কথা বলেন, তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ছাত্ররা যে শুধু পড়ালেখাই করবে, সেটা ঠিক না। তাদের উচিত সমসাময়িক ইস্যুগুলোতে অংশগ্রহণ করা, দেশের সমস্যায় এগিয়ে আসা ইত্যাদি। এবং ছাত্র রাজনীতিই তাদেরকে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম দিতে পারে, তাদেরকে রাজনীতি সচেতন করতে পারে, ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে ইত্যাদি।

এটা এক ধরণের ইউটোপিয়ান চিন্তা। ইন আ পার্ফেক্ট ওয়ার্ল্ড, চিন্তাটা ঠিক আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বিশ্ব এখনো পার্ফেক্ট হয়ে উঠতে পারে নি, আমাদের দেশ তো না ই। সব কিছু যদি সুন্দর স্বাভাবিকভাবে চলে, ছাত্র রাজনীতির মতো চমৎকার বিষয় আর হতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশে, যেখানে আমরা যেকোন ভালো ব্যবস্থাও চরমভাবে নষ্ট করে নিজের সুবিধামতো ব্যবহার করি, সেখানে ছাত্ররাজনীতির এই ইউটোপিয়ান চিন্তাটাও অচল। যারা ছাত্ররাজনীতির পক্ষে কথা বলেন, তারা যে ব্যাপারটা বোঝেন না, তা না। তারা ম্যাংগো পাবলিকের চেয়ে অনেক বেশি সেয়ানা এবং কোন না কোন ভাবে ছাত্ররাজনীতির সুবিধাভোগী। কোন না কোনভাবে বেনিফিটেড হচ্ছেন বলেই তারা এই সোনার ডিম পাড়া হাসটাকে মারতে দিতে রাজী না। আরেক গ্রুপ আছেন, যারা আদর্শিক বিশ্বাসের জায়গা থেকে কথা বলেন। তারা একধরণের ঘোরের মধ্যে থাকেন বলে আমার বিশ্বাস।

মন্তব্যের শুরুতেই যেই পারস্পরিক নির্ভরশীল আদান প্রদানের জায়গার কথা বললাম, সেটা কোথায়? কেন আমাদের ছাত্র রাজনীতি আজকের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে?

যেই নেতা-নেত্রী ছাত্ররাজনীতি পুষে রেখেছেন, তাদের একটা হিসেব নিশ্চয়ই আছে। এই পুরা ব্যাপারটার পিছনেই তাদের একটা ভালো পরিমাণ টাকা খরচ হয়। তারা যে ব্যাপারটা পকেটের পয়সা খরচ করে টিকিয়ে রাখছে, এতে বোঝা যায়, তাদের একটা বড় স্বার্থ আছে এখানে। রাজনীতির জগতে চ্যারিটির কোন স্থান নেই। কমন সেন্স বলে, রাজনীতিবিদেরা আদর্শগত দিক থেকে না, বরং নিজের স্বার্থগত দিক থেকেই ছাত্ররাজনীতির পক্ষে। রাজনৈতিক নেতাদের লাভটা কোনখানে? এই ছাত্রগুলো বড় একটা ট্রাম্পকার্ড। যেকোন ধরণের সমস্যায় এদের দিয়ে মিটিং মিছিল করিয়ে একটা হৈচৈ তৈরী করা যায়, সহজে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষন করানো যায়, পাশ করে বেরুনোর পর নিজের সুবিধামতো জায়গায় ঢুকিয়ে দিয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানেও একটা পরোক্ষ সুবিধা-বলয় তৈরী করা যায় (প্রমাণ, বিসিএস ক্যাডারে দলীয় পোলাপান ঢুকানো)। আরও অনেক কিছু, বলতে গেলে লম্বা একটা লিস্ট হয়ে যাবে।

যারা ছাত্ররাজনীতি করছে, তারা যে সবাই ঠিক ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছে, তাও না। তাদেরও নিশ্চয়ই কোন না কোন ভাবে লাভ হচ্ছে। ধরণটা এরকম, আবাসন নিশ্চয়তা (হলে সিট), খাদ্য নিশ্চয়তা (ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া), চাকুরী সুবিধা (পাশ করে বের হয়ে লিংক ধরে সরকারী থেকে শুরু করে বেসরকারী পর্যায় পর্যন্ত) ইত্যাদি ইত্যাদি। খারাপ উদাহরণ ধরতে গেলে বলতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজী, অপহরণ বানিজ্য (পলাশীর মোড়ের সেই ছাপড়া হোটেলটার কথা খেয়াল আছে নিশ্চয়ই) ইত্যাদি।

আমার মত হলো, ছাত্র রাজনীতি একটা ভাল জিনিষ, কিন্তু বাংলাদেশের অকল্পনীয় কলুষিত রাজনৈতিক পরিবেশ সেটাকে নষ্ট করতে করতে এমন একটা জায়গায় নিয়ে এসেছে যে, একে নিয়ে ভালো কিছু বলা বা স্বপ্ন দেখা অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আর কতোটা খারাপ হওয়া সম্ভব সেটা হয়তো গবেষনার বিষয়। এখন আমরা সেটা দেখতে চাই, নাকি সনি-আবু বকরদের মতো যেন আর কেউ অকালে চলে না যায়, সেটা ঠেকাতে চাই - সেই সিদ্ধান্তটাই নিতে হবে।

=======================
যদি আমি চলে যাই নক্ষত্রের পারে —
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

স্বাধীন এর ছবি

সুন্দর আর বিশাল মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। একদম সহমত।

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

আপনার সাথে প্রচন্ডভাবে একমত।

স্বাধীন এর ছবি

এবারের খবর সাহারা আপা নিজের বক্তব্যকে অস্বীকার করলেন।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

এক মন্তব্যে এই খবর দিলে চৈলত না - পোস্ট দেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।