আজ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই গণতন্ত্র বিদ্যমান এবং গণতন্ত্রকে আজ শাসন ব্যবস্থার মধ্য সর্বোৎকৃষ্ট মডেল বলে ধরা হয়। জনগণও খুশি এ কারণে যে অন্তত অন্ধকার যুগের দাসত্ব আজ তাঁদের সামনে নেই, নেই মধ্যযুগীয় কোন জমিদারী প্রথা কিংবা নেই কোন উপণিবেশিক শাসন অথবা কোন স্বৈরশাসন। জনগণ মুক্ত এবং স্বাধীন। আসলে কি তাই? বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ আসলে কতটা মুক্ত এবং স্বাধীন নিজের ভাগ্য উন্নয়নে? রাষ্ট্র কতটা মনযোগী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে? কিংবা জনগনই কতটা সক্ষম নিজদের ভাগ্যের রচনায়? এই সব কিছুর প্রশ্নের উত্তর আজ এই লেখায় খুঁজে পাবার চেষ্টা করবো।
ডিরেক্ট বা সরাসরি গণতন্ত্র রাষ্ট্রের মত বৃহৎ পরিসরে তেমন কার্যকরী না হওয়ায়, রিপ্রেজেন্ট্যাটিভ বা প্রতিনিধিমুলক সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার আবিষ্কার গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এই পদ্ধতিতে একদল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি জনগণের পক্ষ হয়ে জনগণের জন্য কাজ করবে। তবে এই পদ্ধতির সাফল্য নির্ভর করছে সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থার উপর।
পরিসংখ্যানের নিয়ম অনুসারে যখন কোন বৈজ্ঞানিক গবেষনার জন্য কোন নমুনা (Sample) সংগ্রহ করা হয় তখন চেষ্টা থাকে যেন নমুনা উপস্থিত সকল বৈচিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। আবার দেখা যায় নমুনার সংখ্যা যত বেশি হয় প্রতিনিধিত্বের সম্ভাবনাও তত বেশি হয়। তবে নমুনা সংগ্রহের খরচ এর সংখ্যার সাথে সমানুপাতিক হওয়ায়, গবেষনার খরচ এবং প্রতিনিধিত্বের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করে নমুনার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এখানে যে উদাহরণ দিয়েছি সেটা আমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই বুঝে বা না বুঝেই প্রয়োগ করে যাই। চাওয়া বা পাওয়া, হাসি বা কান্না, আয় বা ব্যায়ের মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখেই জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যাই। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও আমাদের নির্ধারণ করতে হয় জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ঠিক কত হলে তা জনগনের সঠিক প্রতিনিধিত্ব করবে কিন্তু তা আবার রাষ্ট্রের জন্য বোঝা স্বরূপ হয়ে উঠবে না।
যত সহজে উদাহরণ দিয়েছি প্রকৃত ক্ষেত্রে তা খুব সহজ নয়। তেমন কোন নির্দিষ্ট সুত্র নেই যা দিয়ে সরাসরি বলে দেওয়া সম্ভব ঠিক কত জন জনপ্রতিনিধি একটি রাষ্ট্রে প্রয়োজন। এ ছাড়াও রয়েছে প্রতিনিধি নির্বাচনের নানান ক্ষেত্রগুলো। বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয় জনসংখ্যার অনুপাতে কিংবা অঞ্চল ভেদে। অঞ্চলগুলো মুলত ভাগ করা হয় জনসংখ্যার ভিক্তিতেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মুলত এভাবেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়।
গণতন্ত্রের যাত্রাকাল প্রায় ২৫০০ বছর আগে হলেও গনতন্ত্রের আধুনিক রুপের বয়স কয়েকশত বছরের বেশি নয়। তাই বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি নির্ভুল সেটা বলা সম্ভব নয়। গণত্নত্রের নির্দিষ্ট কোন ছাঁচ নেই যা স্থান/কাল/দেশ ভেদে একই রকম থাকবে। উন্নত বিশ্বে যে গণতান্ত্রিক মডেল কার্যকর, একই মডেল যে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশেও কার্যকর হবে তা নয়। বর্তমান জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ব্যবস্থা পাশ্চাত্য দেশগুলোতে কার্যকরী বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হলেও আমার মতে তা সঠিক নয়। যে কারণেই দেখি মানুষ আশাহত হয়ে বারংবার জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন করে কিন্তু মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত মানুষের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না।
দেশে বসে হয়তো মনে হয় বৈদেশে সবাই বেশ ভাল থাকে, কিন্তু বাস্তবতা দেশের থেকে ভিন্ন কিছু নয়। এখানেও মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তকে সারা জীবন কঠিন পরিশ্রমের মাঝে দিয়ে যেতে হয় শুধু মাত্র ভাল ভাবে বেঁচে থাকাটুকু নিশ্চিত করার জন্য, একটি বাড়ির জন্য, বুড়ো বয়সে একটু বিশ্রামের জন্য। কিন্তু যদি কোন কারণে আপনার উপার্জনের ব্যবস্থা চলে যায় কিংবা অসুস্থ হয়ে উপার্জনে অক্ষম হয়ে পড়েন তবে তার অবস্থা দেশের যে কোন মধ্যবিত্তের চেয়ে কন অংশেই ভাল নয়। এটা সত্য যে কিছু দেশে সরকারী ব্যবস্থা রয়েছে সেই সব মানুষের জন্য কিন্তু সে রকম দেশের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
পাশ্চাত্যের আসল চিত্রটি তুলে ধরার উদ্দেশ্য এটা বুঝানো যে বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে না, করে মুষ্টিমেয় লোকের ভাগ্য উন্নয়ন। গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটলের মতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যস্থা হচ্ছে সকল শাসন ব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যবস্থা। যুক্তি ছিল যে গনতন্ত্র হল সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন কিন্তু একই সাথে তা হল গরীব লোকের শাসন, কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেনী হচ্ছে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত শ্রেনী। এরিষ্টটলের পছন্দ ছিল অভিজাত শ্রেনীর শাসন।
এবার তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধিদের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। যে কোন দেশেই আজ কারা হচ্ছে জনপ্রতিনিধি? যে কোন দেশের জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি যদি গড় করা হয় তবে তাঁদের সেই গড় আয় সেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের গড় আয়ের মাঝে কি পরে? আমি নিশ্চিত এর উত্তর এক কথায় নেতিবাচক। আর এই চিত্র আরো করুণ আকার ধারণ করে অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশেগুলোতে। সেসব দেশের জনপ্রতিনিধিদের গড় আয় সাধারণ জনগণের চেয়ে কয়েকশত গুণ বেশি হবে নিশ্চিত। তাহলে এই জনপ্রতিনিধিরা যে আইন প্রণয়ন করবে বা যে নীতি প্রণয়ন করবে তাতে যে নিজদের মত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করবে সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে? এই জনপ্রতিনিধিরাই যে মুখে মানবতার কথা বলে, অন্য দেশে মরণাস্ত্র খোঁজার ছলে নিরীহ মানুষের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিবে সেটা কি বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হয়? এরাই যে জনগণের সেবার নামে ক্ষমতার জন্য লাশের রাজনীতি করে তা কি আর বুঝার বাকি রাখে। বলে শেষ করার নয়। এই চিত্র যে শুধু বাংলাদেশে, সেটা ভেবে নিলে কিন্তু ভুল হবে। তাকিয়ে দেখুন বিশ্বের কোন দেশে ক্ষমতার জন্য এ রকম নির্লজ্জতা নেই। জনপ্রতিনিধি আজ একটি ভিন্ন শ্রেনী, এবং জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া আজ একটি লাভজনক পেশা হিসেবে দাড়িয়েছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল উলটো। জনপ্রতিনিধি হওয়ার কথা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের পক্ষে কাজ করার জন্য।
বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া এমন যে নির্দিষ্ট একটি গোত্রের বাহিরে যে কেউ নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে না। যদিও আইনগত ভাবে যে কারোরই নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাধা নেই, কিন্তু মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে আমরা এমন একটি ব্যবস্থা করে রেখেছি যে সকল ক্ষেত্রে অর্থের কাছে বন্দী মানুষ। এই অর্থের সিংহ ভাগ নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যবসায়ী শ্রেনীর দ্বারা। এর ফলে নির্বাচন ব্যবস্থাকে এক প্রকার এই ব্যবসায়ীরাই নির্ধারণ করে। রাজনীতিবিদদের এই দুরাবস্থার চিত্রটি কিছুটা তুলে ধরেছেন বারাক ওবামা তার “The Audacity of Hope” বইটিতে।
আমাদের দেশের অবস্থা আরো করূণ। আপনি যদি সরকারী চাকুরীজীবি হোন তবে আপনাকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে হলে আপনার পেশা ছেড়ে চলে আসতে হবে। আবার এমন না যে আপনার মেয়াদ শেষে আপনি আবার আপনার চাকুরীতে ফেরত চলে গেলেন। অর্থাৎ ব্যবস্থা এমনই যে যারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে জন্মগ্রহন করেছে কিংবা জনপ্রতিনিধিদের ঘরে জন্মগ্রহন করেছে তারাই জনপ্রতিনিধি হবার ক্ষমতা রাখে। সাধারণ একজন কৃষক, শ্রমিক, কিংবা ছাত্র, শিক্ষক এর পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়, অর্থের সমস্যা তো আছেই। বড়জোর তারা কোন দলীয় সংগঠনের লেজুরবৃত্তি করতে পারবে। এ কারণে নির্দিষ্ট কিছু পেশাজীবি (আইন কিংব ডাক্তার) শ্রেনীর বাহিরে অন্যান্য পেশাজীবিদের প্রতিনিধি হিসেবে সচারচর দেখা যায় না। আর এ সুযোগে সেই জায়গা গুলো নিচ্ছে ব্যবসায়ী শ্রেনী এবং রাজনীতিকে একটি পেশা হিসেবে নেওয়া এক শ্রেনীর, যাদের অধিকাংশই আবার মুলত ব্যবসায়ী।
তাহলে এ পর্যন্ত মুল যে বিষয়টি বলার চেষ্টা করেছি তা হল বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের প্রতিনিধিত্ব কোনভাবেই করে না। প্রতিনিধিত্ব করে সংখ্যালঘু অভিজাত এক শ্রেনীর যাদের গড় আয় মধ্যবিত্তের আয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এরাই অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক, আবার এরাই এখন আইন প্রণয়নকারী। তাই এ রকম শাসন ব্যবস্থা আসলে গণতন্ত্রের নামের আড়ালে অভিজাত শ্রেনীর শাসন। প্রকৃত গণতন্ত্র আমরা তখনই বলতে পারি যখন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেনীর প্রতিনিধি থাকবে সংখ্যাগরিষ্ঠ, অভিজাত শ্রেনীর নয়।
মন্তব্য
সহমত। কিন্তু গণতন্ত্রের কি কোন বিকল্প আছে? দেখতে তো পাওয়া য়াচ্ছে না।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। না গণতন্ত্রের বিকল্প নেই, তাই বিকল্পের কথা বলছি না। বলছি গণতন্ত্রের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে একে আরো উন্নত করার।
আপনার বক্তব্যের সাথে কোনো দ্বিমত নাই স্বাধীন ভাই। প্রশ্ন হলো - সমাধান কি?
নৈরাজ্যবাদ ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখেছেন? দুর্বল, বিকেন্দ্রীকৃত সরকার বা সরকারহীনতা?
একটা বিশাল অঞ্চল বা জনসংখ্যার দেখভাল একটা প্রতিষ্ঠান করার এই ব্যাপারটাই একটা ভুল আইডিয়া, আমার কাছে মনে হয়। জনগণ আসলে বুঝতে পারে না, রাষ্ট্রের শৌর্য-বীর্যের সাথে নিজের ভালোর তত ভালো সম্পর্ক নেই। দুর্বলের উপর যুদ্ধে যেতেও খুব অপছন্দ করে না জনগণ, যদিও তাতে তাদের বিন্দুমাত্র লাভ নেই।
সরকারহীনতা নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। কবে পারবো জানি না। তবে অল্প কথায় আমার মনে হয় না মানুষ প্রজাতিগত ভাবে সরকারহীনতা মেনে নিয়ে চলার ক্ষমতা রাখে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে নৈরাজ্যেবাদে সমাধান দেখি না। কেন দেখি না সে ব্যাপারে কখনো বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করবো, কিংবা সাক্ষাতে বলবো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
নির্ভুল ব্যবস্থা বলতে ঠিক কি বোঝাতে চাচ্ছেন? কি হলে একটা ব্যবস্থাকে নির্ভুল বলবেন তাকি নির্ধারন করা সম্ভব? কিসের ভিত্তিতে? যেই উপসংহার টেনেছেন সেটাকি কোন ভাবে শাসন ব্যবস্থার সাফল্যের কার্যকারন ব্যখ্যা করে।
এখানে পরিসংখ্যানের উদাহরনে নমুনার ক্ষেত্রে যেই প্রতিনিধিত্বের কথা বলা হয়েছে তার সাথে জনপ্রতিনিধিত্বের ধারনা কি একই রকম? অর্থাৎ আপনি কি এটা বলতে চাচ্ছেন যে একটা নির্ভুল ব্যবস্থার শর্ত হচ্ছে জনপ্রতিনিধিকে জনগনের বৈশিষ্ট্যকে একটা গাউসিয়ান ডিস্ট্রিবিউশনে ফেললে সেখানে যার অবস্থান সব বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস ছকে মাঝামাঝি অবস্থানে (অর্থাৎ মিন বা মেডিয়ানের কাছাকাছি) থাকবে সেই উপযুক্ত প্রতিনিধি? ধারনাটা একটু অভিনব মনে হচ্ছে। এই ধারনার উৎস্য বা যৌক্তিকতা ব্যখ্যা করতে পারেন কি স্বাধীন ভাই? ধরেন বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষাগত যোগ্যতার গড় হচ্ছে তৃতীয় শ্রেনী পাস। তাহলে আমাদের প্রধান মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এরা তো আসলে অনেক ওভার কোয়ালিফাইড। এটাইকি তবে সমস্যার কারন?
তার মানে স্বল্পআয়ের লোকেদের শাসন করার দায়িত্ব দিলে সমাজের সত্যিকারের উন্নতি হবে বলছেন? অর্থাৎ সাধারন ক্ষেত্রে যোগ্যতার ক্ষেত্রে যারা সবদিক দিয়ে মাঝারি তারাই কেবল শাসন করার যোগ্যতা রাখে? একটু খটকা লাগছে।
ধরেন একটা দেশের ৫১% লোক গরীব লোক। সেখানে একজন গরীব লোক যদি ভোটে দাঁড়ায় গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তারই তো সেদেশের শাসন ক্ষমতা অর্জন করার কথা; কিন্তু এমনটা হচ্ছে না কেন? আপনার পোস্টের আলোকে এই প্রশ্নটার উত্তরটা একটু ব্যখ্যা করলে বোঝার সুবিধা হয়। নাকি বলছেন সে ভোটে দাড়াতে পারছে না বলে সে জিততে পারছেনা?
আপনার পোস্টে যেই সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন সেটাকে সমস্যা হিসাবে মানি কিন্তু সেই তুলনায় বিশ্লেষন আরো মজবুত হতে পারত।
তুমি ঠিকই ধরেছো। এই ধারণার উৎস গণতন্ত্রের ধারণার মাঝেই। তবে এটাই নির্ভুল ব্যবস্থা সেটি আমি বলছি না। কোন ব্যবস্থা নির্ভুল সেটা আমি মনে করি না, সব সময় উন্নতির সুযোগ থাকে। আপাত নির্ভুল তখনই বলবো, যখন দেখবো একটি সিস্টেম কাজ করছে। ধর, আজ কানাডার কোন এক হাসপাতালে ভুল চিকিতসায় কেউ মারা গেল। তখন সবাই বসবে সিস্টেমের কোন কারণে এই ভুল চিহ্নিত করা সম্ভব হয় নি সেটা খুঁজে ব্যবস্থাটিকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করবে। আমি সে ধরণের যে কোন চেষ্টার পক্ষে। বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেন নির্ভুল নয় আমার মতে সেটা বলার চেষ্টা করেছি লেখায়। কারণ জনপ্রতিনিধিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে বলে দখি না। বামপন্থিরা এটাকেই বলবে পুঁজিবাদই হল এর মূল কারণ। আর আমি দেখছি যে ভুল জনপ্রতিনিধিত্ব।
এবার আসি গড় শিক্ষা বা আয়ের প্রশ্নে। আমি যদিও আয়ের কথা উল্লেখ করেছি কিন্ত মুলত সকল ক্ষেত্রেই গড় শ্রেনীর মানুষকেই বুঁঝিয়েছি। প্রথমত যেটা বুঝি তা হল একটি দেশের উন্নয়ন যদি ঘটাতে হয় তবে এই গড় শ্রেনীর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অর্থাৎ গড়ের মান বৃদ্ধি করতে হবে। এখন দেশের গড় শ্রেনীর যোগ্যতা যদি তৃতীয় শ্রেনী পাসই হয় তবে তাই সই। যদি মনে কর যে সেই সাধারণ মানুষটির যোগ্যতা নেই শাসনের, যোগ্যতা আছে কেবল অধিক শিক্ষিতের তবে সেটা অভিজাততন্ত্রের কথা হবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
উপরে রাখা কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেননি। যাহোক আপনার মন্তব্যের আলোকে আরেকটু বলি।
কোন সিস্টেম যদি কাজ না করে তবে তাকে পাল্টাতে হবে এটা বুঝলাম, কিন্তু সিস্টেম কেন কাজ করছেনা সেটাত পরিষ্কার হতে হবে। পাল্টানোর কথাত বললেন কিন্তু যেই মাপকাঠি দিলেন সেটার পেছনে যৌক্তিকতা কি?
যদি এমনটাই বিশ্বাস করেন (যদিও একটু ধর্ম বিশ্বাসের মত শোনাচ্ছে) অর্থাৎ গড়ের মাধ্যমে শাসন কর্তা নির্ধারিত হওয়া উচিত, তার মানে দাড়াচ্ছে আমাদের কাছা মেরে এর জন্য প্রচারনা চালান দরকার। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমাদেরকে কিন্তু আরো স্পষ্ট প্রমান বা কার্যকারন নির্ভর ব্যখ্যা হাতে পেতে হবে। আজকে আমি যদি বলি পাড়ায় মোড়ে মোড়ে একটা করে ঘন্টা বসালে দেশের উন্নয়ন হবে আপনি নিশ্চই কেবল আমি বলেছি বলে সেটা মেনে নেবেননা। সেক্ষেত্রে আপনারও উচিত হবে এটা ব্যখ্যা করা যে কেন একজন শাসক বা শোসিতদের নেতাদের গড় বৈশিষ্ট্যের অধিকারি হতেই হবে। বিশ্বে সফল রাজনীতির ইতিহাস কি সেটা বলে? প্রথমত নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা বা দক্ষতা (অন্য ভাবে বললে মেধা) যাদের গড়ের অনেক উপরে থাকে তারা সহজাত ভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। এখন আপনার এই নীতিকে বাস্তবায়নের জন্য আমরা যদি আপত্তি তুলি যে "না! তুমি বেশি বেশি নেতৃত্ববাজ (অভিজাত) তোমাকে চাই না!" অথবা ক্লাসথ্রি পাস প্রধান মন্ত্রীকে পাঠালেন আন্তর্জাতিক মহলে দেশের স্বার্থরক্ষার ব্যপারে (ধরুন টিপাইমুখ বাধ নিয়ে নেগোসিয়েশনে, অথবা ডাব্লিঊটিওতে ট্রেড নেগোসিয়েশনে) তার অন্তদৃষ্টি আপনার নিয়ামক অনুযায়ি হবে মাঝারি মানের সে দেশের স্বার্থ রক্ষায় সবচেয়ে পারদর্শি হবে বলছেন? অথবা অর্থমন্ত্রী তৃতীয় শ্রেনীর সমাজবিজ্ঞান বইতে ট্রেড নেগোসিয়াশানের নীতি কৌশল খুঁজতে লেগে গেলেন তাহলে কি দাঁড়াবে ব্যপারটা?
আচ্ছা মানুষের নেতা হিসাবে মানবজাতির ইতিহাসে কয়েকজন সার্থক নেতার উদাহরন দিন যারা আসলে গুনগত ভাবে সবদিক দিয়ে গড়মানে পড়েন। শেখ মুজিব? মুসলমানদের নবী মুহাম্মদ? অথবা মহাত্মা গান্ধী? গৌতম বুদ্ধ? অথবা অন্য কেউ? সবদিক দিয়ে গড়ের কাছাকাছি আবার সার্থক নেতৃত্বদানে সক্ষম হয়েছে এরকম একটা উদাহরন দিতে পারেন? একটু সোনার পাথরবাটি হয়ে যাচ্ছে না?
বিদ্যমান ব্যবস্থা ভাল নয় বলে যেকোন কিছু দিয়ে সেটাকে প্রতিস্থাপন করলেই সেটা ভাল হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কারন নেই (এটা অত্যন্ত কমন একটা ভুল); মেধার মূল্য আছেই; বরং বলা উচিত যোগ্যতা অনুযায়ি নেতৃত্ব আসছেনা বলেই আমাদের সমস্যা বেশি পোহাতে হচ্ছে (নাভিদ সালেহর ব্লগার আত্মা শান্তি পাক)। যেটাকে আমরা নেতৃত্বের শুন্যতা বলি। আপনি হয়ত বলতে চাচ্ছিলেন (?) যে নেতা-নেতৃ নির্বাচনের ব্যবস্থায় আর্থিক সঙ্গতিহীন কিন্তু মানুষের প্রতি ভালবাসা আছে, নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা আছে এমন লোকেদের নির্বাচিত হবার রাস্তা যেন বন্ধ না থাকে। কিন্তু কেউ কেবল গরীব বলে সে যোগ্য হবে এটা ভাবার কোন কারন নেই কিন্তু এটাও জরুরী যে কেবল গরীব হবার দরুন কেউ যেন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নেতৃত্বদানের অধিকার বঞ্চিত না হন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এমন ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই। আমার তো মনে হয় দারিদ্র নেতৃত্বর যোগ্যতার ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখেনা। সেটা বরং একটা সেকেন্ডারি ক্রাইটেরিয়া হতে পারে। দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে আব্রাহাম লিঙ্কন সাহেবকে কি দাস হতে হয়েছিল? আরেকটা সম্ভাবনা হচ্ছে আপনি মেরিটোক্রেসির সমালোচনা করতে চেয়েছেন; কিন্তু আমাদের দেশে কি মেরিটোক্রেসি আছে? আগে সেটা আসুক তারপর সেটার সমালোচনা করুন। এখন যেটা আছে সেটা হচ্ছে পরিবার তন্ত্র আর চামচা তন্ত্র। আমি মনে করি আভিজাত্য আর দারিদ্র ইত্যাদি নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সমান অর্থোগোনাল (বা নন-ফ্যাক্টর)। যদি আদৌ নিয়ামক হয় তবে সেটা পরোক্ষভাবে।
অন্যভাবে বলতে গেলে যেসব বৈশিষ্ট্য কম বেশি নেতৃত্বের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই নন-ফ্যাক্টর সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে আপনি মাথা ব্যথার সমাধানে মাথা কেটে ফেলা জাতিয় সমাধান দেবার চেষ্টা করলেন। আপনার উদ্দেশ্য হয়ত মহৎ কিন্তু ব্যপারটা আরো ভাবনা চিন্তা / বিবেচনার দাবি রাখে।
তাহলে আরেকটা বৈপরিত্যের সমাধান দেবেন আশ করি। ধরা যাক আপনার প্রস্তাব সবার মনপুত হলো আর সেটা বাস্তবায়নের জন্য চারিদিকে সাড়া পড়ে গেল। তারপর বাংলাদেশের গনতন্ত্রের একেবারে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল। তারপর হঠাৎ আভাজন আমি বলে বসলাম এইযে স্বাধীন ভাই এমন একটা অভিনব ধারনা দিলেন সেটা অনেকের মাথায় আসেইনি। তিনিতো বুদ্ধির বিচেচনায় গড়ের অনেক উপরে। তখন আপনার ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ি অভিজাতের চিন্তার প্রতিফলন দোষেই কিন্তু সেই ধারনা বর্জনীয় হতে হবে। তখন কি হবে?
তুমি যে প্রশ্নটি তুলেছো রাজনৈতিক দর্শনে সেটি কিন্তু নুতন নয়। বহু দার্শনিকই মনে করতেন যে নেতৃত্ব প্রদান করা উচিত যোগ্য নেতাদের। যদিও কে যোগ্য সেটা নির্ধারণের কোন নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। অস্বীকার করবো না কিছুদিন আগ পর্যন্তও আমি নিজেও এমনি চিন্তা করেছি। তবে তুমি নেতৃত্ব প্রদান আর সরকার পরিচালনাকে গুলিয়ে ফেলছো। নেতৃত্ব প্রদান প্রয়োজন একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কিংবা যুদ্ধ জয়ের জন্য। কিন্তু সরকার পরিচালনায় দরকার সমষ্টিগত কিছু মানুষের প্রচেষ্টা। নিজেই চিন্তা করে বল ব্যক্তিগত নির্ভরতা উত্তম নাকি সমষ্টিগত চেষ্টা উত্তম। যাদের উদাহরণ দিলে তাঁদের আমি যতটা না নেতৃত্ব প্রদানকারী হিসেবে দেখি তারচেয়েও আমি দেখি বেশি দার্শনিক হিসেবে এবং একটি সমাজের পরিবর্তনে দার্শনিকদের ভূমিকা অবশ্যই স্মরণীয়। কিন্তু খেয়াল করে দেখ একেকটি সমাজে কত শত বছর পর পর এরকম একজন দার্শনিকের জন্ম হয় বা মহান নেতার জন্ম হয়। তাছাড়া দার্শনিকরা যখন নেতৃত্বে যায় তখন তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত আদর্শ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাঁরা মনে করে তিনি যেটা করছে সাধারণ জনগণের মঙ্গলের জন্যই করছে। যদি কোন কারণে মানুষ সেটা গ্রহন করতে না চায় তবে তাঁদের প্রয়োজন হলে বল প্রয়োগ করতেও বাঁধে না। তাই দার্শনিকদের আমি মনে করি ক্ষমতার বাহিরে থেকেই সমাজের পরিবর্তন করা উচিত। দার্শনিক ছাড়াও সমাজে অন্যান্য মেধার প্রয়োজন আছে, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, পেশাজীবি, অর্থনীতিবিদ সবের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেই মেধাকে সমাজের জন্য কাজে লাগাতে হলে মেধাবীকে সাধারণের পর্যায়ে নেমে এসে কাজ করতে হবে।
এখন গড়পরতার মানুষও নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করতে পারে, মাথার উপর কোন নেতৃত্ব ছাড়াই, যদি তাঁদের সে সুযোগ দেওয়া হয়। কয়েকদিন আগে রাগিব উদাহরণ সহকারে বুঝিয়ে দিয়েছে যে গড়পরতার মানুষও উইকিপিডিয়ার মত বিশ্বকোষ তৈরি করতে পারে, যদি তাঁদের সুযোগ দেওয়া হয়। আমার বাবার মেধা আমার থেকে খারাপ নিশ্চয়ই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি, পিএইচডিও করেননি। কিন্তু আমার চেয়ে অনেক বেশি সংসারী, অনেক বেশি ভাল বুঝেন কিভাবে জীবন চালাতে হয় সীমিত ক্ষমতা বা সীমিত আয় দিয়ে। এই মানুষগুলোকে যদি নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়, আমাদের মত অনেক মেধাবীর চেয়ে দেশ ঢের ভাল চালাতে পারবে। সাধারণ মানুষ গরীব হতে পারে, শিক্ষাগতা যোগ্যতা না থাকতে পারে, কিন্তু তাঁদের বুদ্ধি আমার তোমার চেয়ে কম সেটা মেনে নিতে আমার কষ্ট হয়।
কথা হচ্ছে একটি সিস্টেম দাঁড় করানো নিয়ে যেটা নিজে নিজে চলতে সক্ষম। যদি যোগ্য নেতার জন্য অপেক্ষা করতে হয় তবে সেটা এক ব্যক্তির শাসন হয়, এবং সে রকম এক ব্যক্তি বহু বহু বছর পর পর আগমন করে। অতঃপর সেই ব্যক্তি নির্ভর সিস্টেম জনগণের জন্য ভোগান্তি তৈরি করে যখন সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। যেটা আমরা দেখতে পাই ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু কিংবা ব্যক্তি নবীর মৃত্যুর পর। তাই আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে আমরা কি ব্যক্তি নির্ভর ব্যবস্থা চাই নাকি সমষ্টিগত ব্যবস্থা চাই। সমষ্টিগত ব্যবস্থায় ব্যক্তির কাজ করার সুযোগ সব সময় থাকে যখন ব্যক্তি সেই সমষ্টির অংশ হোন। কিন্তু ব্যক্তি নির্ভর ব্যবস্থায় সমষ্টির কাজ করার সুযোগ থাকে না। প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের আরেক উপায় হতে পারে বিকেন্দ্রীকরণ। এর দ্বারা একটি বড় রাষ্ট্রকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে নিজেদের জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হতে দিতে পারি। এতেও জনগণের প্রতিনিধিত্বর সম্ভাবনা বাড়বে।
আমার চিন্তা কোন যাদুমন্ত্র সমাধান নয়। এটি শুধুমাত্র আমার চিন্তার বিবর্তনের একটি পর্যায়। আশা করি ভবিষ্যতে নিজের চিন্তাও আর পরিণত হবে। তখন গ্রহনযোগ্যতার আরো সুনির্দিষ্ট যুক্তি প্রদান করতে পারবো। আপাতত এটি না হয় একটি সাধারন চিন্তা হয়েই থাকুক। তোমার সব প্রশ্ন ধরে ধরে মন্তব্য করা এক প্রকার অসম্ভব। চেষ্টা করেছি মূল বক্তব্যটি তুলে ধরতে।
তোমার বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কিন্তু স্বাধীন ভাই, শুধু আয়ের ভিত্তিতে যদি প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করা হয়, সেটা বোধ হয় কাজের হবেনা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সে জন্যই তো এই লেখা। আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাবে কেন কাজ হবে না বা কি আর করা সম্ভব।
এবারে বাস্তবতায় আসি, ধরে নেয়া হোক একটি দেশের সংসদে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনসংখ্যার অনুপাতে সদস্য নেয়া হলো। দূর্নীতি যেখানে বাস্তবতা সেখানে নিম্নবিত্ত শেনীর সদস্যরা চেষ্টা করবে এই সুযোগে নিজের অবস্থানকে অন্তত মধ্যবিত্ত শ্রেনীতে উত্তীর্ণ করতে আর মধ্যবিত্ত চেষ্টা করবে উচ্চবিত্তের সিড়ি ধরতে। অর্থাৎ প্রত্যেক শ্রেনীর প্রতিনিধি তার নিজের শ্রেনীর উন্নতি করার চেয়ে নিজের উন্নয়নের দিকে নজর দিবে।
আমার বক্তব্য হচ্ছে সদিচ্ছা থাকলে জনপ্রতিনিধি যে শ্রেনীরই হোকনা কেন সে সর্বোপরি জনগনের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। আর জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রন করে যেহেতু সরকার তাই এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছাই গুরুত্ত্বপূর্ন। শুধু তৃতীয় বিশ্ব নয় উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সরকার নির্বাচনেও পুঁজিবাদি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একটি ভূমিকা থাকে যারা একটি দলকে নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ দিয়ে সাহায্য করে। ফলশ্রুতিতে নির্বেচনে যেই দলই জিতুক সেই দলেরই ঐ পুঁজিবাদিদের স্বার্থ রক্ষা করাটা একটি বাধ্যবাধকতা হিসেবে এসে পড়ে।
আমার মূল বক্তব্য হচ্ছে সবকিছুর গোড়ায় হচ্ছে দূর্নীতি যা যেকোন সরকার ও সমাজ ব্যবস্থাকে কলুষিত করতে পারে। তাই আমাদের সরকার বা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলে ফেলার চেয়ে দুর্নীতিকে রোধ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করলে হয়ত অধিক ফলপ্রসু হবে।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
একমত। শব্দটা দুর্ণীতি হোক, আর সদিচ্ছার অভাব কিংবা কর্তব্যে শিথিলতা হোক, ঝামেলা ওইখানেই। এবং এই জিনিসটা আর্থিক শ্রেণীবিন্যাসনির্বিশেষে হয়। ডাক্তারও পকেট কাটে আবার রিক্সাওয়ালাও সুযোগ পেলে ঠ্যাক দেয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
তোমার কথা ঠিক আছে তবে একটি ব্যাপার ভুলে যাচ্ছ সেটা হচ্ছে পরিসংখ্যানের নিয়ম। জগতে কিছু লোক আছে যারা স্বার্থপর। কিছু মানুষ আছে পরোপকারী। আর বেশিরভাগ মানুষই হচ্ছে ভাল-মন্দ মিশিয়ে মানুষ। বিবর্তনের সুত্র মতেই প্রজাতিকে টিকে থাকার জন্য এই ডিষ্টিবিউশনটি হচ্ছে। এখন জনপ্রতিনিধি যদি সেভাবেই নির্বাচিত হয় তবে কিছু লোক নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করবে, সত্য। কিন্তু তুমি কিছু লোক পাবে যারা নিজের প্লাস নিজের শ্রেনীর জন্য কাজ করবে, এরা হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর অল্প সংখ্যক লোক পাবে যারা নিজের জন্য নয়, শুধু অন্যের জন্য কাজ করবে। কিন্তু বর্তমান জনপ্রতিনিধিত্বে সবাই কাজ করে নিজের ও নিজের গোষ্ঠীর জন্য। এখানেই যা পার্থক্য হবে।
সরকার কারা? জনপ্রতিনিধিগণই সরকার। তাই সরকারের পক্ষে জনপ্রতিনিধিগণকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বরং জনপ্রতিনিগণ নিয়ন্ত্রণ করে সরকারকে। খেয়াল করো সংসদ হচ্ছে সবচেয়ে উপরে। সংসদ আইন প্রণয়ন করে, আর সরকার সে আইন মোতাবেক চলে। সরকার কোন আইন প্রণয়ন করে না। সরকারের কোন আআইনের প্রয়োজন হলে সরকার সংসকে জানায় তার এই আইন দরকার। সেই আইন সংসদে পাস হতেও পারে নাও হতে পারে। সরকারের ক্ষমতা নেই আইন পরিবর্তন করার।
তাহলে কে করবে? স্বাধীন বিচার বিভাগ ? কিন্তু বিচার বিভাগ করতে পারে জনপ্রতিনিধিদের বিচার যদি তিনি কোন অন্যায় করেন। কিন্তু যদি আইনের মাঝে থাকে তবে বিচার বিভাগের হাত বাধা। বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও বিচার বিভাগও আইন প্রণয়ন করে না। করে আইনের শুদ্ধি এবং প্রয়োগ। কোন আইন সংবিধান বা অন্য আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হলে সেটা শুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু মূল আইন তৈরী হয় সংসদেই। তাই জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ বিচার বিভাগও পারে না।
জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা মুলত থাকে জনগণের কাছে। কাজ করনি ভোট পাবে না। জনগণের ক্ষমতা কেবল ওই একটিই। এখন এটাকেই কাজে লাগাতে হবে, যদি কিছু করতে চাই।
সদিচ্ছার ব্যাপারে প্রথম মন্তব্য প্রযোজ্য। একটি স্বাভাবিক সমাজে সকলের সদিচ্ছা থাকবে সেটা চিন্তা করা বোকামী হবে। আর আমাদের দেশের মত দেশ যেখানে উৎপাদনের সাথে চাহিদার বিপুল পার্থক্য সেখানে সদিচ্ছা যে একটি বিলুপ্ত গুণ হবে তা আর অস্বাভাবিক কি? উৎপাদন আর চাহিদার ব্যবধান না কমিয়ে শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়। আফটার অল আমরা সবাই টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। টিকে থাকাটাই যেখানে মূল লক্ষ্য সেখানে নৈতিকতার প্রশ্ন অবান্তর। এই সংগ্রাম না থাকলে নৈতিকতাও থাকবে।
বিত্তবিভেদে প্রতিনিধির বিষয়টা কার্যকর হবে না।
হতে পারে পেশাজীবী শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব।
আর এজন্যই কিন্তু দলগুলোর উইং থাকে। শ্রমিক উইং, কৃষক উইং, ছাত্র উইং প্রভৃতি থাকে। আর সেখান থেকে নেতৃত্ব তৈরি হয়। প্রতিনিধি আসে সংসদে। যারা রাষ্ট্রের হয়ে বিভিন্ন শ্রম পেশাজীবীর বিষয়গুলো দেখভাল করে।
এখন ছাত্রনামে অছাত্র আর শ্রমিক নামে শিল্পপতি প্রতিনিধি থাকলে সেটা আমাদেরই ব্যর্থতা। সেক্ষেত্রে বিত্ত ব্যবস্থাতেও লাভ কিছু নাই। এদেশে যখনই জমি বরাদ্দের ডাক আসে, তখন দেখা যায় অর্ধেক রাজনৈতিক নেতা ভূমিহীন গরীব হয়ে যায়। বউ, ছেলে মেয়ে থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ নাতি নাতনিদের নামে জমি থাকলেও, যেহেতু নেতার নিজের নামে কিছু নাই, তাই তিনি ভূমিহীন কোটায় জমি বরাদ্দ নেন।
নীতিবোধটা ঠিক না থাকলে কোনো তন্ত্রই আসলে কার্যকর হয় না।
আমাদের এখন দূর্ণীতিটাই আদর্শ হয়ে গেছে। আপনি গ্যাস বিল দিতে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ান রোদের মধ্যে, আরো বিশজন হয়তো দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু একজন গিয়ে লাইনে না খাড়িয়ে পিয়নকে ৫ টাকা ঘুষ দিয়ে কেউ একজন কাজটা আদায় করে নিলো নিমেষে। এক্ষেত্রে সে চালাক আর বিশজন বোকা। এই ধারণাটা আগে ভাঙতে হবে। নাইলে কোনো তন্ত্রই কাজ করবে না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নীতিবোধের ব্যাপারে জাহিদের মন্তব্যের জবাবটি দেখতে পারেন। সেখানে কিছু বলেছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নজু ভাই।
রুপ=রূপ
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
পড়ার জন্য, মন্তব্যের জন্য এবং বানান সংশোধনের জন্য তিনে মিলে এক ধন্যবাদ বস। বানান ঠিক করে দিচ্ছি।
আমি আসলে এত কিছু বুঝিনা। আমি বুঝি সততা। যদি এই বর্তমান নেতৃত্ব সৎ হয় তাহলে আর কাউকেই দরকার নেই। কিন্তু এই সততার আজ খুবই অভাব।
র্প্রথমেই একটি সুন্দর সুচিন্তিত লেখা পড়তে দেবার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্য আলোচনাটিও শেখালো অনেককিছু। গনতন্ত্র ধারনা বলে নিরেট, নিখাঁদ বলে আদৌ কিছু আছে কি? মূল ধারনাটি হাজার বছর পুরাতন হতে পারে, কিন্তু এর প্রয়োগিক দিকগুলো নিয়ে আমরা তো এখনো নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষায় ব্যাস্ত। দেশ-জাতি-রাষ্ট্র-গোষ্ঠী - অদূর বা দূর ভবিষ্যতে এই বিভাগগুলো চলে যাবার কোন কারন আমি দেখতে পাই না। পুরাতন বিভেদ যাবে নতুন বিভেদ আসবে। কিন্তু ঠিক ঠাক প্রয়োগ করা যাচ্ছে না বলে ধারনাটিকেই বাতিল ধরে নেয়ার পক্ষপাতি আমি নই।
এ বিষয়ে আমি তাই অনেকাংশে রিয়াজুদ্দীন ভাইয়ের সাথে একমত।
যে স্তরের তথ্য বা সামাজিক প্রযুক্তিগত অবস্থানে একটি দেশ বা জাতির সকলে কোনপ্রকার কেন্দ্রীয় সমন্বয় বা নেতৃত্ব ছাড়াই সবার জন্য মঙ্গলকর সিদ্ধান্তে আসতে পারে, সে স্তরে আমরা কবে যাবো আমি জানিনা। আজকের বাস্তবতায় যা একটি দেশের গনতন্ত্রকে গড়তে পারে - আবার ভাংতেও পারে, তা হল যোগ্য নেতৃত্ব; এই যোগ্যতা সময় ও দেশের প্রয়োজনে পাল্টাবে, সেই সাথে যাদের নেতৃত্বেও ক্রমাগত পরিবর্তন মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
ডিরেক্ট বা সরাসরি গণতন্ত্র রাষ্ট্রের মত বৃহৎ পরিসরে তেমন কার্যকরী না হওয়ায়, রিপ্রেজেন্ট্যাটিভ বা প্রতিনিধিমুলক সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার আবিষ্কার গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
পুরোপুর না হলেও সুইজারল্যন্ডে সরাসরি গণতন্ত্রের অনেকটাই প্রযোজ্য। এই কিছুদিন আগেও সেখানে মসজীদের মিনার নিয়ে সেখানকার নাগরিকেরা তাদের সরাসরি গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন।
পাশ্চাত্যের আসল চিত্রটি তুলে ধরার উদ্দেশ্য এটা বুঝানো যে বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে না, করে মুষ্টিমেয় লোকের ভাগ্য উন্নয়ন।
পাশ্চাত্য বলতে শুধু ইংল্যান্ড আমেরিকাকে বোঝান তাহলে ঠিক আছে। জার্মানী ও নর্ডিক দেশগুলোর সরকারগুলো কিন্তু রবিনহুড তত্বে বেশী বিশ্বাসী।
প্রথমেই মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। উপরে রিয়াজের মন্তব্যেও বলেছি কিছুটা যে আমি গণতন্ত্র বা জনপ্রতিনিধিত্বিয় সংসদ পদ্ধতি বাতিলের কথা বলিনি। কিভাবে জনপ্রতিনিধিত্ব আরো নির্ভুল করা যায় সেটার জন্য একটি পথ বলেছি। যেমন আমার ঠিক আগের লেখায়ও বলেছি বৈচিত্রের অনুপাতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের কথা। এখানে বলছি সেই বৈচিত্রের সাথে সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের একটি অংশকেও সংসদে আনার ব্যবস্থা করার জন্য। যদি আমরা এটা না করে প্রাকৃতিক নির্বাচনের (ডারউইনিয় দর্শনে- যিনি যোগ্য তিনিই আসবেন) হাতে ছেড়ে দিই তাহলে আমাদের দেশে আসবে এই দু,নম্বরী লোকেরাই (কারণ তারাই যোগ্য, নেতা হিসেবে না হলেও, টিকে থাকার হিসেবে) নির্বাচিত হয়ে আসবে। আমেরিকায় একজন ওবামার ক্ষমতা কিন্ত সীমিত। ওবামা যতই ভাল নেতা হোক না কেন কংগ্রেস কিংবা হাউস অফ কমন্সের সিদ্ধান্তের বাহিরে যেতে পারবে না। তাঁকে কংগ্রেস এর মধ্য দিয়েই যেতে হবে এবং কংগ্রেসই যুদ্ধ কিংবা অন্যান্য মূল সিদ্ধান্ত গ্রহন করে, প্রেসিডেন্ট তা বাস্তবায়ণ করে। এখন কংগ্রেসে যত প্রতিনিধি আছে কয়জন সত্যিকারভাবে সাধারণ জনগণকে রিপ্রেজেন্ট করে? আমার মতে অধিকাংশই করে না। এটাকেই আমি বলছি বর্তমান প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন এর পদ্ধতিগত বা তাত্বিক দোষ। তবে মূল প্রশ্ন রয়েই যায় গণতন্ত্রের সজ্ঞা মতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের শাসন চাই নাকি স্বল্প সংখ্যক দেশের বিশেষজ্ঞের শাসন চাই। আগে এটা পরিষ্কার করে তারপর বাকি চিন্তা করতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের কথটি আমার জানা আছে, তবে বিস্তারিত আরো জানতে হবে কিভাবে আসলে কাজ করে।
আমার মনে হয় না এটা কোন সাস্থ্যকর ব্যপার হবে। কারন প্রথমত মানুষের মঙ্গল কিসে হয় এই ধারনা ক্রমান্বয়ে নতুন মাত্রার বৈচিত্র পাচ্ছে। প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থায় আসলে কিসে মঙ্গল হবে সে ব্যপারে সমাজের চিন্তা চেতনায় হোমোজেনিটি অনেক বেশি ছিল, কিন্তু এখন উত্তরাধুনিকতার কল্যানে মংগলের ধারনাই হয়ে পড়েছে বৈচিত্রময়। আপনি যেটাকে মঙ্গলময় ভাবছেন আমার ভাবনা তার চেয়ে আলাদা হতে পারে এটা আমরা আগের চেয়ে অনেক সহজে গ্রহন করতে বা মেনে নিতে পারি। এর পেছনে আছে হাজার হাজার বছরে সমাজে মধ্য সংগ্রামের ইতিহাস। যেসব কারনে এখন সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে পুজিবাদের টিকের থাকার ক্ষমতা বেশি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যক্তি পার্থক্যের স্বিকৃতি। তবে গনতন্ত্রের মধ্যেও অনেক সমস্যা আছে, আছে রিজিডিটি। মোটাদাগে বলতে গেলে এই সব রিজিডিটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায় এরকম গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। সেদিক থেকে গনতন্ত্রকে আকড়ে রাখার সবচেয়ে বড় যৌক্তিকতা হচ্ছে এর মধ্যে একধরনের সেলফ-ইভলভিং বৈষিষ্ট্য আছে। সেটাই এটাকে এগিয়ে নিতে পারে সামনের দিকে। সেই অর্থে গনতন্ত্র কেবল আরাধ্যই নয় বরন আরাধ্যকে পাবার উপায়ও হয়ে দাঁড়ায়।
(এই প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য বা প্রশ্নগুলো যথেষ্টই নাইভ বা বালখিল্য, তারপরও নিজের ধারণা পরিষ্কার করার স্বার্থেই সাহস করলাম। এই বিষয়ে জানেন/বোঝেন, এমন কেউ ভুলগুলো ধরে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।)
স্বাধীন, পোস্টের বিষয়টি আগ্রহোদ্দীপক সন্দেহ নেই, কিন্তু আপনার বক্তব্য আরো একটু বিস্তারিত হতে পারতো যতটুকু বুঝলাম, আপনি 'গণতন্ত্র'কে প্রবলেমাটাইজ করতে চাইছেন অথবা গণতন্ত্র মানেই যে মহান কিছু নয় বা তত্ত্বের দিক থেকে মহান হলেও প্রায়োগিক বা বাস্তব ক্ষেত্রে সেটার প্রতিফলন হয় না, শুধু এটুকু বলাই আপনার উদ্দেশ্য। তবে, তারপরেও কিছু কথা থাকে।
গণতন্ত্র বা এখনকার যে লিবারেল ডেমোক্রেসি মডেলের বিভিন্ন রূপ আমরা বিভিন্ন দেশে দেখি, সেটার ভিত্তিতেই একটা অনুমিতি আছে (assumption এর কি এটা ঠিক বাংলা?) - "communities in which the necessary opportunities and resources are available for every individual to realize fully his or her particular capacities or powers through participation in political, social and cultural life" (*Westbrook, 1991). একারণে আমার কাছে ডেমোক্রেসির প্রচলিত ধারণাটাই অনেকটা ইউটোপিয়ান। আপনি যেভাবে এলিটিস্ট ভার্সাস ইগালিটারিয়ান (এই প্রসঙ্গে **Michael Newman এর আর্টিক্যলের রেফারেন্স নিচে দিলাম) এপ্রোচ নিয়ে কথা বলছেন, সেটা আসলে ডেমোক্রেসির একটা ইন বিল্ট সমস্যা। যদি আমরা মেনে নেই যে এখনকার পৃথিবীতে গণতন্ত্রই কাম্য, তাহলে এই অন্তর্নিহিত খূঁতটাকেও বোধহয় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মেনে নিতেই হয়।
আর, যদি এটাকে সমস্যা হিসেবে দেখে এটার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা আগাতে চাই, তাহলেও আরেকটা পুরানো বিতর্কের কথাই বলতে হয় যেখানে তাত্ত্বিকরা pragmatism বলে এক ধরণের দর্শনের কথা বলেন। এই দর্শন অনুযায়ী গণতন্ত্রের রূপ/মডেল/প্রয়োগ হবে কনটেক্সট অনুযায়ী, অর্থাৎ কোন মডেলকেই সর্বজনীন হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না (***)। কিন্তু, তারপরও কথা থেকে যায়। মডেলটা সর্বজনীন না হতে পারে, কিন্তু সমাজে কিছু conflict থাকে যেটা বোধহয় এক হিসাবে সর্বজনীন, মানে এসব সংঘাত সব সমাজেই থাকে। এটা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে থাকে, একই শ্রেণীর মধ্যে বিভিন্ন উপদলের মধ্যে থাকতে পারে, একই শ্রেণীর, একই দলের বিভিন্ন লিঙ্গের মধ্যে থাকতে পারে। অর্থাৎ - গরিষ্ঠের স্বার্থ মানেই হোমোজেনিয়াস কিছু না। আর তাই যদি হবে, তাহলে যে কোন নীতি বা যে কোন সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই কোন না কোনভাবে কাউকে এক ধরনের 'অন্যায়'এর শিকার হতে হতে পারে। বিশেষ করে যেহেতু সমাজের প্রতিটা সদস্য কখনোই সমানভাবে কোন সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায়, বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না।
যদি এমনটা মনেও করি যে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে, জনপ্রতিনিধির শিক্ষাগত যোগ্যতা ক্লাস থ্রি পাস হলে (যদি সেটাই সংখ্যাগরিষ্ঠের গড় যোগ্যতা হয়ে থাকে), ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তারা সৎ হলেই, মোটামুটিভাবে আমরা একটা উন্নততর গণতন্ত্রের/দেশের চেহারা দেখতে পারবো - তাহলে সমাজে যারা প্রান্তিক, সংখ্যালঘিষ্ঠ এবং আনরিপ্রেজেন্টেড তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কি আবার আলাদা নীতি দরকার? সেটা কোনভাবে গরিষ্ঠের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও? এক্ষেত্রে কি রাষ্ট্রকে (যা কিনা আসলে সেই জনপ্রতিনিধিদেরই যোগফল) সাংসদদের থেকে বিযুক্ত হয়ে সেরকম নীতি নির্ধারণ করতে হবে? এই জনপ্রতিনিধিরাও তো বদলাবেন। গরিষ্ঠের প্রতিফলনই যদি গণতন্ত্রের মূল কথা হয়, এবং যেহেতু সময়ের সাথে সাথে গরিষ্ঠের বৈশিষ্ট্যও বদলাতে পারে, তাহলে কি পাঁচ বা দশ বছর পর পর মূল নীতি বা সংবিধানও বদলাতে থাকবে?
*"Class, State and Democracy: Laski, Miliband and the Search for a Synthesis" by Michael Newman, Political Studies 2006, Vol. 54.
**"John Dewey and American Democracy" by Robert B. Westbrook, 1991; Ithaca, Cornell University Press.
*** যদিও এই ভদ্রলোক pragmatism এর সাথে একমত নন, কিন্তু লেখাটা ভালো, দেখতে পারেন। "Experience as Experiment: Some Consequences of Pragmatism for Democratic Theory" by Eric MacGilvray; American Journal of Political Science, Vol 43, no.2, April 1999.
স্নিগ্ধা
শুরুতেই পরিষ্কার করে রাখি এই বিষয়ে আমার নিজের জ্ঞানও সীমিত। আমি নিজেও জানার চেষ্টা করছি মাত্র এবং সেই উদ্দেশ্যেই লেখা। আপনার দেওয়া লিঙ্কগুলোর জন্য ধন্যবাদ এবং দীর্ঘ মন্তব্যের জন্যও কৃতজ্ঞতা।
আপনার প্রশ্ন গুলো মোটেই নাইভ নয়। আমি আমার আগের এক লেখায় সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিষয়ে বলেছিলাম। সেখানে এই বিষয়টি কিছুটা আলোকপাত করেছি। যদিও এখনো আরো জানার চেষ্টায় আছি এই বিষয়ে। এটি কিন্তু একটি প্যারাডক্স এর মতই। সংখ্যাগরিষ্ঠরাই যদি সংবিধান রচনা করে আবার এর পরিবর্তন করতে পারে তবে সংখালঘুর অধিকারের নিশ্চয়তা কিভাবে সম্ভব। তবে কি সংবিধান ভিন্ন শ্রেনীর লোকেরা রচনা করবে? এ রকম ধাঁধা নিজের মধ্যে আরো আছে। একটির কথা বলি, ইচ্ছে আছে সেগুলো নিয়েও কোন দিন আলোচনা করবো। যদি নৈতিকতা ধর্ম হতে আগত না হয় তবে আমি কেন পুরোপুরি নৈতিক জীবন পালন করবো। যখন আমি জানি কিছুটা অনৈতিকতা আমাকে টিকে থাকতে সহয়ায়তা করবে তবে সেই অনৈতিকতা কি আমি মেনে নিব। তারমানে আমি কখনো নৈতিক হব আবার কখনো অনৈতিক হব, সেটা কি একধরণের হিপোক্রেসী হবে না?
আপনাকে বলার উদ্দেশ্য যে নিজেও ধাঁধাগুলোর উত্তর জানার চেষ্টায় আছি। তাই আপাতত আপনার নাইভ প্রশ্নের জবাব নেই। আশা করি একদিন জানাতে পারবো।
সেটি কি হয় না? সে জন্যই তো সংবিধান পর্যালোচনা করা হয়। আগের কোন আইন আগেরকার সময় হয়তো প্রযোজ্য ছিল বলে সেটা যে পরবর্তী সময়েও প্রযোজ্য থাকবে তেমন তো নয়। সংবিধান তো আর ধর্মগ্রন্থ নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না।
আবারো পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, বিশেষ করে লিঙ্কগুলোর জন্য।
গনতন্ত্রের বিদ্যমান মডেলে অনেক যুক্তিই প্রাসঙ্গিক। আমি মূলধারার লেখার সাথে তেমন পরিচিত নই, কিন্তু পরিকল্পনার যৌক্তিকতার নিরিখে কিছু আলোচনার সাথে পরিচিত। এ ব্যপারেও আমার পড়াশোনা ছাড়াছাড়া আর অনেক কথাই মনে নেই। কিন্তু আমি সাধারন অর্থে pragmatism এর পক্ষপাতি। আর সেক্ষেত্রে আমার কাছে কিওয়ার্ড হচ্ছে feedback আর communication.
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলেন অর্থনীতি বলেন আর সমাজনীতি আম ব্যক্তিগত ভাবে Institutional Perspective নিয়ে বেশি আগ্রহী এবং বিশ্বাস করি যেকোন দেশের নিরিখে বিচার বিশ্লেষন করলে এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই অনেক কার্যকর উত্তরে পৌছান সম্ভব। অমর্ত্য সেন, কেনেথ এরো, অস্ট্রম বা নিকলসন এদের কাজ অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হলেও এই আলোচনায় প্রাসংগিক হতে পারে। আর সেদিক থেকেই আমি মনে করি সামাজিক কাঠামো এবং পাথ ডিপেন্ডেস (বাংলা কি হবে বুঝছি না) আমি রাজনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রযোজ্য বলে মনে করি।
তবে আমার মত হচ্ছে এসব ধ্যান ধারনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা পর্যালোচনা দরকার আছে। সত্যিকার অর্থে গনতন্ত্রের অনেক সমস্যাই আছে। কিন্তু আমাদের দেশের নিরিখে ক্ষমতাকে নানা অর্থে বিকেন্দ্রিকরনের দরকারটা আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আমি ঠিক ইগালিটারিয়ানিসমের পক্ষপাতি নয়। কিন্তু এলিটিসম শব্দটিও কানে বাজে, সেই বিচারে আমি মেরিটোক্রেসিকে তুলনামূলক গ্রহন যোগ্য মনে করি। কাজেই আমি যদি এখন এই বিষয়ে নারাচারা করি আমার বাযাস থাকবে কয়েকটা বিষয়ের ওপরঃ ফিডব্যাক, কমিউনিকেশন, মেরিটোক্রেসি আর বিকেন্দ্রীকরন।
পরিসংখ্যান গত যেই প্রতিনিধিত্বের ইংগিত আছে এই পোস্টে সেটাকে আমি রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে একটা ক্ষতিকর ভাবনা বলে মনে করি। কারন এটা সেই পরিসংখ্যানের ভাষাতেই "গড়ে হাটু পানি" ধরে নদী পার হবার উপায়কে সরলিকৃত করা হয়েছে বলে মনে করি। তবে অবশ্যই স্বাধীন ভাইকে এই চিন্তাজাগানো লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।
একটা প্রস্তাব রাখতে চাইঃ স্নিগ্ধা আপু, স্বাধীন ভাই, দুর্দান্ত ভাই বা অন্য যারা দেশের রাজনৈতিক কাঠামো আর এর সাম্ভাব্য বিবর্তনের উপাইয়ের বিষয়টা নিয়ে আগ্রহী তারা একটা সিরিজ (অথবা ই-বই) এ চ্যাপ্টার আকারে দিতে পারেন। নানা বিষয় আসতে পারে এই সিরিজে, যেমনঃ (including but not limited to আরকি)
- স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা (হিমুর এরশাদ বিষয়ক সাম্প্রতিক একটা পোস্টে তাছাড়া ঢাকা থেকে কলসেন্টার সরান বিষয়ক প্রস্তাবের পোস্টে বিষয়টা এসেছিল, সেখানে কিছু আলোচনাও হয়েছে)
- গনতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বের ধারনা
- বিদ্যমান সংসদিয় গনতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা বা শক্তিমত্তা ইত্যাদি (এখানে প্রতিনিধিত্ব না বলে আমি বলব মনোভাবের বা চাওয়ার প্রতিফলনের কথা)
- অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথে রাজনৈতিক কাঠামোর যোগাযোগ (অর্থাৎ বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো অর্থনৈতিক কাঠামোকে কিভাবে প্রভাবিত করছে)
- বাংলাদেশে যেই নারী নেতৃত্বের যেই লিগেসি তার সাথে নারী স্বাধীনতার সম্পর্ক (এইটা স্নিধা আপুর জন্য বরাদ্দ আগে থেকেই)
- স্থানীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালি করার জন্য বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতা
- বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কর কাঠামো এবং এতে ন্যয়বিচারের ধরন (রাউলস, সেন, কোহেন এদের লেখা থেকে যদি কেউ একটা গভীর পর্যালোচনা হাজির করতেন, আহা!)
এরক আরো অনেক বিষয় আসতে পারে এই সিরিজে বা ই-বইতে। just a thought....
এই লেখা আমার মত এস্কেপিস্টদের জন্যে নয়। পালাতে চাই, তোমার কাছ থেকে আরও দূরে...লা লা লা....।
শাফি।
নতুন মন্তব্য করুন