অভিনন্দন হে মিশরবাসীগণ

স্বাধীন এর ছবি
লিখেছেন স্বাধীন (তারিখ: শনি, ১২/০২/২০১১ - ৪:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অভিনন্দন হে মিশরবাসীগণ। টানা ১৮ দিনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পর জনগণ তাঁদের জয় ছিনিয়ে নিল। অবসান গঠিয়েছে ত্রিশ বছরের স্বৈরশাসনের এবং জনগণকে উপহার দিয়েছে নুতন দিনের স্বপ্ন। যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২৫ শে জানুয়ারী, তার পূর্ণ বিজয় আসলো আজ (১১ই ফেব্রুয়ারী) ঘন্টাখানিক আগে। মুবারকের পরিচয় এখন ক্ষমতাচূত্য একজন সাবেক স্বৈরশাসক। অথচ তার সামনে সুযোগ ছিল আরেকটু সম্মানজনক পরাজয়ের।

গতকালের ভাষণেও যদি মুবারক সরে দাড়াতো তাহলেও মানুষের কাছ থেকে কিছুটা সম্মান সে পেতো যে বিদায়কালে হলেও সে জনগণের কথা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু ইতিহাস হতে কেউই কখনো শিক্ষা নেয় না, একই শিক্ষা নেয়নি মুবারকও। সে সরে দাড়ায়নি, বরং কথার মার প্যাঁচে আরো কিছুদিন থেকে যাওয়ার চেষ্টাই করেছিল। গতকাল তার ভাষণের আগ পর্যন্ত মানুষ খুবই শান্তিপূর্ণ আচরণ দেখিয়েছিল, কিন্তু মুবারকের ভাষণের পর পরিবেশ এতই উত্তপ্ত হয়ে যায় যে তখনই মন বলছিল কিছু একটি হতে যাচ্ছে, খুবই দ্রুত।

এই প্রতিবাদ মিশরের সব শহরে হলেও মূল আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল কায়ারোর মূলত একটি স্থানেই, তা ছিল তাহরির স্কয়ারে। কিন্তু গতকালের এই ভাষণের পর কিছু মানুষ তাহরির স্কয়ারের পাশে রাষ্ট্রীয় টিভি ভবনের কাছে অবস্থান নেয়, আর বেশির ভাগের গন্তব্য ছিল প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ভবন। আর আজ মিশরে জুম্মার দিন হওয়ায় প্রচুর মানুষের সমাবেশ হবে সেটাও ধারণা করা যাচ্ছিল। আমার প্রচন্ড ভয় হচ্ছিল আজ প্রচুর রক্তপাত হবে। বিশেষ করে ভয় ছিল সামরিক বাহিনীকে নিয়ে। যদিও তখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনী জনগণের বিপক্ষে যায়নি, কিন্তু সামরিক বাহিনী এরকম মুহুর্তে সত্যিকারের কি করবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। সামরিক বাহিনীকে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে হতো, সেটা যেই পক্ষেই হোক। সামরিক বাহিনী যেদিকে যাবে, বিজয় সেদিকেই হবে। মিশরের সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষেই থেকেছে সে জন্য তাদেরকেও অভিবাদন জানাতে হয়।

নানান কারণেই এই আন্দোলন সারা বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল। অবশ্যই মিশরের ভৌগলিক অবস্থান এবং মিশরের সেনাবাহিনী, ইসরায়েল এখানে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। তবে আমার নিজের মনোযোগের কারণ ছিল এই আন্দোলনের উত্থান এবং এই আন্দোলনের প্রকৃতি নিয়ে। এই আন্দোলনের পেছনে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, বেকারত্ব, দুর্নীতি সহ অনেক কারণই ছিল কিন্তু মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে ফেইসবুক, টুইটারের মত সোস্যাল নেটওয়ার্ক। সোস্যাল নেটওয়ার্কের ক্ষমতা শুধু মিশরেই দেখা যায়নি দেখা গিয়েছে তিউনেসিয়াতেও।

এ যেন এক নুতন অধ্যায় শুরু হল। ব্লগ, ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব, উইকিপিডিয়া, উইকিলিক্স, খান একাডেমি, সহ সব মিলিয়ে ইন্টারনেটের এক নুতন আন্দোলন শুরু হলো। মানুষ এখন যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি নিজের মতামত তুলে ধরতে পারে। এটি আমাদের শাসন ব্যবস্থায় একটি বড় ধরণের পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে মনে হয়। তবে আমি মনে করি না এখনই সরাসরি গণতন্ত্রের মত কাঠামোতে চলে যাওয়া সম্ভব হবে, কিন্তু এর মাধ্যমে অন্তত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা সম্ভবপর হবে। তবে ধীরে ধীরে প্রতিনিধিমূলক শাসন ব্যবস্থা বাতিল হবে, শুধুমাত্র সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা টীকে থাকবে যেখানে সংবিধান পরিবর্তন সরাসরি জনগণই করবে। প্রয়োজন পড়বে না কয়েকশত নির্বাচিত রাজনীতিবিদের, প্রয়োজন পড়বে না সংসদের বা সরকার প্রধানের। নানান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থাকবে, থাকবে সেই সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান আর থাকবে সংবিধানিক আইন।

দ্বিতীয় প্রধান বিষয়টি হল এই আন্দোলনের প্রকৃতি। এই আন্দোলন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ছিল। মাঝে শুধু একদিন বেশ খারাপ অবস্থা হয়েছিল যখন মুবারকের সমর্থকেরা রাস্তায় নেমেছিল। তবে অনেকে বলে মুবারকের সমর্থনকারীরা আসলে সাদা পোষাকে পুলিশ ছিল। মুবারকের গতকালের ভাষণের পরে নিজেরও মনে হচ্ছিল এবার বুঝি আর শান্তিপূর্ণ থাকবে না। কিন্তু এই আন্দোলনের পেছনে যে মূল উদ্যোক্তারা ছিল, এপ্রিল ৬ মুভমেন্ট নামক একটি সংগঠন, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল নন-ভায়ালেনন্স। গতকাল সারা রাত আমি খবরের সামনে ছিলাম। সকালেও ছিলাম। বলতে পারেন বেশ অবাক হয়েছি কোন সংঘর্ষের খবর না পেয়ে। আমার মনে হচ্ছিল যে সহজে মুবারক যাবে নান, মানুষকে এবার ধ্বংসাত্মক কিছু করতেই হবে। কিন্তু না, তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেও জয় অর্জন করা সম্ভব। এই আন্দোলন হতে তাই আমাদের অনেক কিছুই শেখার রয়েছে। বিশেষ করে মাওবাদি আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টদের। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোন আন্দোলনই সফল হবে না। অস্ত্রের চেয়ে বড় হচ্ছে জনগণের সমর্থন।

অভিনন্দন মিশরের জনগণ। তোমরা দেখিয়েছো যে জনগণ চাইলে পরিবর্তন হবেই। পরিবর্তনের ছোয়া লাগুক সর্বত্র। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরাও এই আন্দোলন হতে শিক্ষা নিক এটাই কামনা করি। শুধু নিজের কথা আর নিজের দলের লোকদের কথা না ভেবে জনগণের দিকে দৃষ্টি দিন। অপ্রয়োজনীয় বিমানন্দরের পেছনে জনগণের অর্থ খরচ করা থেকে বিরত থেকে বিদ্যুৎ সমস্যা, যানজট সমস্যা এগুলোর পেছনে অর্থ ব্যয় করুন। মনে রাখবেন আমাদের সজাগ দৃষ্টি সব সময় রয়েছে আপনাদের কর্মকান্ডের উপর। না হলে আজাইরা জনগণ ক্ষেপে উঠলে পালানোর কোন পথ রইবে না।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

খুশির খবর। অভিনন্দন মিশরের শান্তিকামী মানুষদেরকে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

অভিনন্দন হে মিশরবাসীগণ।
--------------------------------------
Sad Quote

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আবারো প্রমানিত হলো যে জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস।

১৯৮১'র ৬ই ডিসেম্বর আনোয়ার সাদাত খুন হওয়ার সময় কিন্তু মুবারক তার পাশেই ছিলো।

[img][/img]

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

তারিখটা ৬ অক্টোবর হাসি

তিথীডোর এর ছবি

মিশরের জনগণকে অভিনন্দন।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অভিনন্দন হে মিশরবাসীগণ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মিশরের জনগণকে অভিনন্দন! একইভাবে সৌদী আরব, আমিরাত, জর্ডানেও রাজতন্ত্রের পতন হোক।

গৌতম এর ছবি

অভিনন্দন মিশরের জনগণকে। এখন সামরিক বাহিনীর কবল থেকে ক্ষমতা বের করে কীভাবে জনগণের কাছে পৌঁছায় তা-ই দেখার অপেক্ষা।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

স্বাধীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। দৃষ্টি এখন আলজেরিয়া এবং ইয়েমেনের দিকে। আরব বিশ্বে ভালই এক জাগরণ শুরু হলো। এবং সব কিছুর মূলে এই আজাইয়রা ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব, আর ব্লগ। জনগণের আর এখন কোন কাজ নেই। কিছু হলেই ছবি তুলে, ভিডিও তুলে ইউটিউব, ব্লগ, ফেইসবুকে উঠায়া দেয়। স্বৈরশাসকেরা কিভাবে এদের সামলায়। জয় হোক মুক্তিকামী জনগণের।

অতিথি লেখক এর ছবি

স্ফুলিঙ্গ তার পাখায় পেলো.........

---মোখলেস হোসেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।