সতর্ক বাণীঃ লেখাটিতে ধর্মানুভুতিতেও আঘাত লাগার মতো বক্তব্য রয়েছে। আপনি যদি ধর্ম বিষয়ে সংবেদনশীল হোন তবে লেখাটি এড়িয়ে যাওয়াই আপনার জন্যে সুখকর হবে।
একটি মানুষের গড় আয়ু মানব সভ্যতার তুলনায় কতটুকু? কিছুই তো নয়। প্রায় সাড়ে চারশত কোটি বছর আগে সৃষ্ট পৃথিবীর বয়স কিংবা প্রায় চারশত কোটি বছর আগে উদ্ভব প্রথম প্রাণের কথা যদি চিন্তা করেন [১,২], দেখুন আমার বা আপনার জীবন এই মহাকালের তুলনায় কত ক্ষুদ্র। বাদ দিন কোটি বছরের হিসেব। ভেবে দেখুন আমাদের প্রথম পূর্বপুরুষদের কথা যাদের উদ্ভব আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ বছর আগে অথবা আজকের আধুনিক মানুষদের কথা যাদের উদ্ভব প্রায় দেড়/দুই লক্ষ বছর আগে [১,২]।- কোটি কোটি বৎসর থেকে লক্ষ বছরে নেমে আসলাম - তারপরেও কি আমাদের জীবন সেই তুলনায় এতটুকু বৃদ্ধি পাচ্ছে?
তারপর ধরুন সেই প্রথম মানব দলটির কথা যারা প্রায় পঞ্চাশ থেকে সত্তুর হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো একদিন বিশ্বকে জয় করবে বলে [১,৩]।, এর মাঝে আমাদের এই সাহসী পূর্বপুরুষেরা পার করে দেয় একটি বরফ যুগও যা শেষ হয় আজ থেকে প্রায় বারো থেকে পনেরো হাজার বছর আগে। সেই হাজার হাজার বছরের তুলনায় আমার বা আপনার এক ষাট বছরের জীবন কতই না ক্ষুদ্র?
শুধুমাত্র আগ্রহীদের জন্যে প্রাণের বিবর্তনের টাইম লাইনটি দেওয়া হলো [২]।, বাকিরা পরের প্যারায় চলে যেতে পারেন।
The basic timeline is a 4.5 billion year old Earth, with (very approximate) dates:
3.8 billion years of simple cells (prokaryotes),
3 billion years of photosynthesis,
2 billion years of complex cells (eukaryotes),
1 billion years of multicellular life,
600 million years of simple animals,
570 million years of arthropods (ancestors of insects, arachnids and crustaceans),
550 million years of complex animals,
500 million years of fish and proto-amphibians,
475 million years of land plants,
400 million years of insects and seeds,
360 million years of amphibians,
300 million years of reptiles,
200 million years of mammals,
150 million years of birds,
130 million years of flowers,
65 million years since the non-avian dinosaurs died out,
2.5 million years since the appearance of the genus Homo,
200,000 years since humans started looking like they do today,
70,000 - 50,000 years since - Homo sapiens move from Africa to Asia.
25,000 years since the disappearance of Neanderthal traits from the fossil record.
13,000 years since the disappearance of Homo floresiensis from the fossil record.
এই সুদীর্ঘ সময় ধরে মানুষের সাথে অন্যান্য প্রাণীকূলের বিশেষ পার্থক্য ছিল না, এবং মানব সভ্যতার বিশেষ কোন অগ্রগতিও হয়নি। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তারা শিকার এবং ফলমূল সংগ্রহ করেই কাটিয়ে দিল। মানব সভ্যতায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে কৃষিকাজ শুরুর পর থেকে যা শুরু হয় মাত্র প্রায় দশ হাজার বছর আগে [৩]।, আগে যখন মানুষ মূলত শিকার এবং ফলমূল সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতো তখন প্রতিটি গোত্রে মানুষের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না (দশ থেকে একশত জন)।, কিন্তু কৃষিকাজ শুরুর পর মানুষের জনসংখ্যার বিষ্ফোরণ হলো, এবং সেই সাথে সমাজ ব্যবস্থাতেও বড় সড় পরিবর্তন হলো। ছোট ছোট গোত্র থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরী হলো।
কৃষিকাজ ছাড়াও আরেকটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার মানব সভ্যতাকে আজকের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে তা হচ্ছে লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার যার সূচনা হয় আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। মূলত কৃষিকাজ এবং লিখন পদ্ধতি এই দুইয়ের ফলেই আমরা তাই দেখতে পাই মিশরীয় সভ্যতা, ব্যবিলনীয় সভ্যতা, হরোপ্পা-মহাঞ্জোদারো সভ্যতার মতো সভ্যতাগুলোকে। এই সভ্যতাগুলোর যাত্রাও শুরু হয়েছে প্রায় লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের সময়কাল থেকেই ( প্রায় ৩০০০ BC)।
লিখন পদ্ধতির সাথে সাথে আরেকটি বিষয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম [৪]।, লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের আগেও যে ধর্ম ছিল না তা নয়। গোত্র বেইজড সমাজেও মানুষের ধর্ম ছিল তবে তা ছিল মূলত লোকজ ধর্ম। আদিম মানুষের মধ্যে নিয়েনথার্ডাল প্রজাতির মধ্যেও মানুষকে মাটিতে কবর দেওয়ার প্রচলন ছিলো যা আদিম ধর্মীয় আচরণকে নির্দেশ করে [৫,।, তবে প্রথম লিখিত ধর্মগ্রন্থ আমরা পাই আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে। “পিরামিড টেক্সট” (প্রায় ২৪০০ BCE) হচ্ছে প্রথম লিখিত ধর্মগ্রন্থ [৫,৬]। খেয়াল করে দেখুন এই হাজার/লক্ষ বছরে আব্রাহামিক ধর্মের কোন খবর নেই বরং আব্রাহামিক ধর্মের আগে হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি।
ধারণা করা হয় যে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছে প্রায় ৩০০০ খ্রীষ্ট-পূর্বে [৫,৭]।, আব্রাহামিক ধর্মের শুরু হিসেবে দেখতে পারি ইসলাম ধর্মে যাকে ইদ্রিস (বাইবেলে ইনোক) বলা হয় তার হাত ধরে। তার বই হচ্ছে “বুক অফ ইনোক” [৮]।, ইদ্রিসের সময়কালটি নিশ্চিত করে বলা নেই কোথাও। তবে তিনি যেহেতু নুহ এবং ইব্রাহীমের আগের সময়কার তাই ধারণা করা যেতে পারে তিনি “পিরামিড টেক্সট” (প্রায় ২৪০০ BCE) এর কাছাকাছি সময়েই এসেছেন, যদিও তার বইটি লেখা হয়ে অনেক পরে, সম্ভবত তিনশত খ্রীষ্টপূর্বে [৮]।, এর পরে আব্রাহাম (প্রায় ২০০০ খ্রীষ্টপূর্ব) এরও নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ রয়েছে “টেস্টামেন্ট অফ আব্রাহাম” [৯]।, ইহুদীদের মূল ধর্মগ্রন্থ “তাওরাত” আসে মুসার (প্রায় 1391–1271 BCE) হাত ধরে [১০]।, তারও প্রায় এক হাজার বছর পর বাইবেল আসে যীশুর হাত ধরে, আর আরো ছয়শত বছর পরে ইসলাম আসে মুহাম্মদের হাত ধরে [৫]।, তবে ঠিক এরই মাঝে আরো ভিন্ন কিছু ধর্মাবতারও জন্ম গ্রহণ করেন। যেমনঃ জরথ্রুষ্ট (১০০০ খ্রীষ্টপূর্ব), মহাবীর (৫৯৯ খ্রীষ্টপূর্ব) গৌতম বুদ্ধ (৫৬৩ খ্রীষ্টপূর্ব), কনফুসিয়াস (৫৫১ খ্রীষ্টপূর্ব) [৫]।
সুবিধের জন্যে একটি টাইম লাইন দেওয়া হলো [৫]।
প্রায় ৩০০০ খ্রীষ্টপূর্ব – কৃষ্ণের জন্ম (ভগবৎ গীতা)
প্রায় ২৪০০ খ্রীষ্টপূর্ব – পিরামিড টেক্সট
প্রায় ২৪০০ খ্রীষ্টপূর্ব (নিশ্চিত নয়) – ইদ্রিস/ইনোক (বুক অফ ইনোক)
প্রায় ২০০০ খ্রীষ্টপূর্ব – আব্রাহাম (টেস্টামেন্ট অফ )
প্রায় ১৩০০ খ্রীষ্টপূর্ব – মুসা (তাওরাত)
প্রায় ১০০০ খ্রীষ্টপূর্ব – জরথ্রুষ্ট
প্রায় ৫৯৯ খ্রীষ্টপূর্ব – মহাবীর (জৈন ধর্ম)
প্রায় ৫৬৩ খ্রীষ্টপূর্ব – বুদ্ধ
প্রায় ৫৫১ খ্রীষ্টপূর্ব – কনফুসিয়াস
প্রায় ৭ খ্রীষ্টপূর্ব – যীশুখ্রীষ্ট
প্রায় ৬০০ খ্রীষ্টাব্দ – মুহাম্মদ (ইসলাম)
খেয়াল করে দেখুন মাঝখানের মহাবীর, জরথ্রুষ্ট, বুদ্ধ, কনফুসিয়াস এদের ধর্মকে বাদ দিলে বাকি থাকে আব্রাহামিক ধর্মগুলো যেগুলোর উৎপত্তি একই অঞ্চলে এবং তাই এদের মধ্যে বর্ণিত ইতিহাসও কাছাকাছি এবং রিচিউয়ালগুলোও কাছাকাছি। কোন সন্দেহ নেই যে উক্ত ধর্মগুলো সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়েছে হাজার বছর ধরে। এর সাথে মূল সৃষ্টিকর্তার সম্পর্ক সামান্যই। আর চৌদ্দশত কোটি কিংবা চারশত কোটি, কিংবা লক্ষ লক্ষ বছরের মানব সভ্যতার যে ইতিহাস দিয়েছি তার তুলনায় এই ধর্মের উৎপত্তি কিংবা বিবর্তনের সময়টুকু খুবই ক্ষুদ্র একটি সময়।
আমার দেখা মতে বেশির ভাগ মানুষ ধর্ম নিয়ে খুব বেশি সংবেদনশীল, কিন্তু চিন্তা করে দেখে না যে ধর্মের গুরুত্ব আসলে ঠিক কতটুকু। ধর্ম বড় না মানুষ বড় সেটা নিয়ে চিন্তা করে না। ধর্ম নিয়ে মানুষের এই অতিসংবেদনশীলতা খুব কষ্ট দেয়, কিন্তু খুব বেশি কিছু করারও উপায় নেই। মানব জাতির আজ সকল প্রাণীকূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্য অর্জনের পেছনে বিবর্তনের যে বিষয়টির সবচেয়ে বড় অবদান তা হচ্ছে মানব মস্তিষ্ক। এই মস্তিষ্কের কল্যাণেই আজ মানুষ চিন্তা করতে পারে, কিংবা ভাষা ও লেখার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে। আবার এই মস্তিষ্কের কারণেই মানুষ কল্পনা করতে পারে। মস্তিষ্ক আমাদের অনেকে কিছু দিয়েছে আবার সাথে দিয়েছে এই ধর্মকে।
মানুষের কল্পনা শক্তি মানুষকে বাধ্য করেছে চিন্তা করতে ভিন্ন একটি কাল্পনিক জগতকে। কখনো কখনো এই কাল্পনিক জগতই এতো বাস্তব হয়ে ধরা দেয় যে তার বাস্তব জীবন পরিচালিত হয় সেই কল্পনার জগতকে কেন্দ্র করে। যারই ফলাফল মানুষের সৃষ্টিকর্তাকে সত্যি বলে ধরে নেওয়া, ধর্মগ্রন্থগুলো ঐশ্বরিক বলে ধরে নেওয়া, স্বর্গ/নরককে সত্যি বলে ধরে নেওয়া, জ্বীন/ফেরেস্তার মতো বিষয়গুলোকেও সত্যি হিসেবে ধরে নেওয়া। এর থেকে মুক্তি খুব সহজ নয়। এটি আমাদের মস্তিষ্কের একটি বাই-প্রোডাক্ট অথবা অন্য কথায় সাইড-এফেক্ট। ঔষুধের যেমন সাইড-এফেক্ট থাকে তেমনি উন্নত মস্তিষ্ক থাকার সাইড-এফেক্ট হচ্ছে আমাদের এই ধর্ম, বা জীবন-মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করা, বা জীবনের অর্থ খোজা, আবেগাপ্লুত হওয়া। নিম্নবুদ্ধিমত্তা বিশিষ্ট প্রাণির কথা চিন্তা করেন ওরা কি চিন্তা করে সৃষ্টিকর্তা কোথায় বা জীবনের অর্থ কি? কেবল মানুষই করি।
আমরা শুধু ধর্ম নিয়েই চিন্তা করি না। আমরা সব কিছু নিয়েই চিন্তা করে জীবনকে অহেতুক জটিল করে তুলি। আমরা চিন্তা করি জাফর ইকবালের মেয়েরা কি ড্রেস পড়লো, জাগোর মেয়েরা কি পড়লো, মেয়েটা ওড়না গলায় দিল কিনা। খেয়াল করে দেখুন যারা এইসব তুচ্ছ বিষয়ে সংবেদনশীল তাদের সংবেদনশীলতার আগমন ধর্ম হতেই। অনেকে হয়তো দ্বিমত করতে পারেন যে এই মানুষগুলোই বিকৃত, এখানে ধর্মের কোন দায়িত্ব নেই। তা আমি মনে করি না। খেয়াল করে দেখুন যে ধর্মের নামেই এই নারীদেরকে বস্তায় পুরা হয় (ইসলাম), এই ধর্মের নামেই নারীদেরকে ডাইনী অপবাদ দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয় (বাইবেল), এই ধর্মের নামেই নারীদেরকে সতিদাহের নামে পুড়িয়ে মারা হয় (হিন্দু ধর্ম)।, অথচ হিন্দু ধর্ম থেকে শুরু করে সবগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের যাত্রা আজ থেকে কেবল মাত্র পাঁচ হাজার বছর আগে। মহাকালের তুলনায় এই সময়টুকু কতই না ক্ষুদ্র। অথচ তারপরেও আমরা এই ধর্মগুলোকেই সত্য ধরে নিয়ে নিজের বিবেক বুদ্ধিকে বিসর্জন দেই। খুব হতাশা জনক কিন্তু খুব বেশি কিছু করার নেই। বিবর্তনের টাইম স্কেল খুব ধীর গতির। হয়তো আরো কয়েক হাজার বছর কিংবা লক্ষ বছর লেগে যাবে মস্তিষ্কের এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মানুষকে মুক্ত হতে।
নোটঃ লেখাটি সচল ও মুক্তমনার সদস্য বন্যা’পু কে উৎসর্গ করছি যার “বিবর্তনের পথ ধরে” [১] বইটির হাত ধরে বিবর্তনের প্রাথমিক বিষয়গুলো শিখি। বাংলায় বিবর্তনের উপর এর চেয়ে সহজ ভাষায় আর কোন বই লেখা হয়েছে কিনা জানি না। বন্যা’পু সুস্থ হয়ে বিবর্তনের উপর আমাদেরকে আরো অনেক বই উপহার দিবেন এই কামনা করি।
পাদ টীকা।
১, বিবর্তনের পথ ধরে http://www.mukto-mona.com/Articles/bonna/book/
২। http://en.wikipedia.org/wiki/Timeline_of_evolution#Basic_timeline
৩। http://en.wikipedia.org/wiki/Prehistory#Timeline
৪। http://en.wikipedia.org/wiki/Evolutionary_origin_of_religions
৫। http://en.wikipedia.org/wiki/Timeline_of_religion
৬। http://en.wikipedia.org/wiki/Pyramid_Texts
৭। http://en.wikipedia.org/wiki/Bhagavad_Gita#Date_and_text
৮। http://en.wikipedia.org/wiki/Book_of_Enoch
৯। http://en.wikipedia.org/wiki/Testament_of_Abraham
১০। http://en.wikipedia.org/wiki/Torah
মন্তব্য
খুবই সুন্দর এবং গোছানো লেখা। অল্প কথায় আপনি গুছিয়ে বলেছেন অনেকের কাছে অপ্রিয় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু সত্য। হয়তো এ লেখায় কিছু কঠিন মন্তব্য পড়তে পারে কিন্তু তাতে বাস্তবতা বদলে যাবে না।
শুভ কামনা রইলো। পোস্টে পাঁচ তারা।
টুইটার
ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্যে। দেখা যাক কয়টা কঠিন মন্তব্য পড়ে...ভয় নেই, অভ্যেস আছে।
খুবই হতাশ লাগে মাঝে মাঝে। তখন কারো সাথে কোন তর্কে জড়াই না, ভাবি আমার জীবদ্দশায়তো আর এই ভূতের হাত থেকে মুক্তি দেখে যেতে পারব না, কী হবে শক্তি খরচ করে। তারপর আবার তর্ক করি, আবার হতাশ হই
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সহমত...
আমার জন্যে প্রায় প্রতিটা অক্ষর সত্য, তবে আমি পয়সার উল্টোপিঠ। হ্যা, প্রায় বল্লাম কারণ আমি সিরিয়াস তর্কে জড়াই না। বাট সামহোয়াট উই আর প্রিটি মাচ সেম, সেম স্টরি ডিফারেন্ট ওয়ার্ড।
শাফি।
এক্টা টাইপো রয়ে গেছে "চারশত বছর" সম্ভবত চারশত কোটি বছর হবে।
পোষ্টে পাঁচ তারা।
অভিজিৎদার খোমাখাতা থেকে জানলাম বন্যা আহমেদ এর সার্জারি সুসম্পন্ন হয়েছে। তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।
অট: আমরা নাকি এখনও বরফ যুগে বসবাস করছি?(বিল ব্রাইসন)
love the life you live. live the life you love.
টাইপোর জন্যে অনেক ধন্যবাদ। হ্যাঁ, খবরটা আমিও দেখলাম। শুনে অনেক ভালো লাগছে।
সময়কালটা গুরুত্বপূর্ন মনে হয় না আমার কাছে। মাত্র ৫০০০ বছর আগে ধর্মের উৎপত্তি ধরলেও আগের ৫ লক্ষ বছরের তুলনায় ওই ৫০০০ বছরই বেশী গুরুত্বপূর্ন মানব সভ্যতার জন্য। যেমন গত ১০০ বছরের বিজ্ঞানের আবিষ্কার তার আগের ১০০০ বছরের চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন।
ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল সম্ভবত মানুষকে শৃংখলার মধ্যে রাখার জন্য, ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন থেকে দুনিয়ার আকাম থেকে মানুষকে রক্ষা করতে। সব ধর্মেই ঈশ্বরকে খুজতে বলা হয় যাকে কোনদিন খুজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু কালে কালে চটুল মানব মন ঈশ্বর খোঁজার চেয়ে মেয়েদের হিজাব আর জিহাদ খুঁজতেই বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
খুব বেশি দ্বিমত নেই। তবে দেখাতে চেয়েছি যে ওই পাঁচ হাজার বছরের আগেও মানুষ ছিল, সেই সব মানুষের ধর্মও ছিল, কিন্তু আজকের প্রতিষ্ঠিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো ছিলো না। এগুলোর উৎপত্তি কেবল সেদিনই।
হয়তো বা, কিন্তু সমস্যা হলো যে এর শুরুটাই হচ্ছে মিথ্যে দিয়ে। ঈশ্বর প্রেরিত গ্রন্থ।
অনেক গোছানে লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এই কয়দিন কিছু মানুষকে এই বাই-প্রোডাক্টের হাত থেকে মুক্ত করতে যেয়ে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে ক্ষান্ত দিয়েছি।
কয়েকদিন আগে মুক্তমনায় বন্যা আপুকে নিয়ে অভিজিৎ দার লেখাটা পড়ে খুব মন খারাপ হয়েছিল। আশাকরি উনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদেরকে বিবর্তনের উপর আরো অনেক ভাল বই উপহার দিবেন।
চমৎকার।
যদি পক্ষীকূল বা উভচর প্রাণীরা লিখতে পারতো, তাহলে তাদেরও ধর্ম থাকতো। তারাও তো ঈশ্বরের সৃষ্টি। বিবর্তনের ধারায় যারা (মানুষ) লিখতে পড়তে পারে, তাদের জন্য শুধু ঈশ্বর ধর্ম দিলেন! এই কথাটা সহজ করে কেউ বলেনা।
- সংশোধন আবশ্যক।
মহাবিরা'কে মহাবীর লেখো। বাংলা/সংস্কৃত/পালি/প্রাকৃত ভাষায় নামটা মহাবীরই হবার কথা।
মানুষের মাথা থেকে এই আবর্জনা দূর হবার যে পদ্ধতির কথা তুমি বলেছ (হাইপোথিসিস) সেটা অভিনব। কিন্তু মানুষের কি উচিত ব্যাপারটা এভাবে ফেলে রাখা? মানুষের তো সামর্থ আছে ব্যাপারটা expedite করা।
বন্যা'র শারিরীক অবস্থার কথা জেনে আশংকিত হলাম। তার দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সংশোধন করে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ পাণ্ডব'দা মন্তব্যের জন্যে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এরকম একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য। যখন ধর্মের সৃষ্টি হয়েছিল তখন হয়ত ধর্মের প্রয়োজন ছিল। এখন আর সেটা নাই। বিবর্তনের সুত্রমতে ধর্মও ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাবে আশা করি।
মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ অরিত্র, পদ্মজা, ও শাকিল।
আশে-পাশের মানুষজনের যে অবস্থা দেখি তাতে মনে হয়না এই অবস্থা খুব সহজে দূর হবে। আমার কেন জানি মনে হয় এই ধরণের মানুষ আসলে বুঝতেই চায় না, স্পেশালি যদি আপনি প্রথমেই ধর্মের বিপক্ষে কথা বলে ফেলেন তাহলে তো কথাই নেই, আপনার অন্তরে মোহর মেরে সিল গালা করে দেবে। আমার মনে হয়, এসব ক্ষেত্রে সরাসরি ধর্মের বিপক্ষে কথা না বলে বরং ধর্মের ব্যাড ইফেক্টগুলোকে ধীরে ধীরে দূর করার চেষ্টা করাই ভাল। আমারও মনে হয় এই ইফেক্ট পুরোপুরি দূর হতে আমাদেরকে বিবর্তনের পথ ধরে আরও কিছুদূর হাটতে হবে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমার মনে হয় স্কুলে বিশেষ কোন একটি ধর্ম না পড়িয়ে, যদি সবকটি ধর্ম পড়ান যেত তা হলে গোড়া থেকেই secular মনভাব নিয়ে বেরে উঠতে পারত| এতে করে ভাল মন্দের বিচার শিখ্ত ধর্মের ভিত্তিহীনতা বুঝত atheist এ অভিযোজন তরান্নিত হত|
একদম ঠিক কথা বলেছেন। যেটা করতে হবে সেটা হল ধীরে ধীরে আঘাত করা।
একটা অংশ আশা করছিলাম এই লেখায়- প্রাথমিক রিচুয়াল এবং পূর্বতন ধর্ম বা সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন সাময়িক নিয়ম কীভাবে স্থায়ী নিয়ম হিসাবে ধর্মগুলোতে অন্তর্ভুক্ত হয়, এবং কী করে সেটা শত শত বছর ধরে পরিবাহিত হতে থাকে। ধর্মকে উচ্চমার্গীয় একটা আধ্যাত্মিক বিষয় বলে অনেকেই ধরে নেয়। ধর্মের উৎপত্তির এই মাটিগত কাহিনিগুলো জানতে পারলে মানুষ ধর্মীয় জুজুর ভয় থেকে বেরোতে বড় একটা সমর্থন পাবে, কারণ মাটিজ এই ইতিহাস ধর্মকে অপার্থিব মহান বস্তু থেকে টেনে নামিয়ে আনবে মাটির পৃথিবীতে; যেখানে তা এতোদিন ধরে আছে, এবং আশা করি খুব বেশি দেরি না করে একদিন বিলুপ্তও হয়ে যাবে।
হু, লিখলে ভালোই হতো। কিন্তু লেখাটা এমনিতেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছে তাই আর বড় করলাম না। এইটা নিয়ে ডেনিয়েল ডেনেটের ভালো একটি বই আছে Breaking the spell: Religion as a natural phenomenon.
পড়তে হয় তবে।
আমি গুরুত্ব দিচ্ছি ব্লগোস্ফিয়ারে এই নিয়ে লেখালেখি হবার উপর। আপনার কাছ থেকে এই নিয়ে আলাদা লেখা পাবো আশা রাখি।
সবই তো বুঝলাম, কিন্তু ...
যিনি আপনাকে মাথা ভরে মেধা দিলেন, সোনা দিয়ে গড়া লেখার হাত দিলেন তার বিরুদ্ধে কতক্ষণ যুদ্ধ করবেন?
আপনার জানাজায় শরীক হওয়ার আশা রাখলাম
চিন্তার কথা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
_________________
[খোমাখাতা]
বিবর্তন হইতে হইতে যে কিছু মানুষ ছাগলে রূপান্তরিত হইতেছে তার কী হবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
_________________
[খোমাখাতা]
আমার মনে হয় মানুষ বেশি করে ধর্ম আঁকড়ে ধরছে কারণ সে বুঝতে পারছে না কোথায় যাবে। মস্তিষ্ককে ধর্মের কবল থেকে মুক্ত করতে হলে মানূষকে অন্তত জ্ঞানের কয়েকটি শাখার ভালো ধারণা রাখতে হয়, যেমন- পদার্থবিজ্ঞান, জীববিদ্যা, ইতিহাস, দর্শন, নৃতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব। মানুষ এতোসব বিষয়ে জানতে চায় না বা পায় না। 'স্পেশালাইজড' জ্ঞান নিয়ে ধর্মান্ধই থাকতে হয়।
_________________
[খোমাখাতা]
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ভালো লাগল। এমন আরো লিখুন। একটা ব্যপার কৃষিকাজের সাথে সাথে কে আরেকটা জিনিসের উদ্ভব মানব সমাজকে আমুল বদলে দেয় তা ছিল বিবাহ ব্যবস্থা। কৃষিকাজের ফলে মানুষকে আর শিকারের পিছনে যাযাবর হয়ে ঘুরতে হল না, একই সাথে পরিবারের গঠনের ফলে যত্রতত্র গমন ( ! ) না করে থিতু হয়ে বসবার সুযোগও মিলল।
আর সময়ের ব্যাপারটা নিয়ে দুঃখ করেন না, এক গবেষণায় দেখা গেছে ফার্মের মুরগীরা একসাথে ৫-এর বেশী গুনতে গেলে কনফিউজড হয়ে যায়, সে রকম মিলিয়ন বছর শুনলেই ধর্মে অন্ধবিশ্বাসী মানুষেরা সেটাকে মাত্র কয়েক বছর হিসেবে মেনে নেই, এক মিলিয়ন বছর যে কত ব্যপক সেটা বোঝার চেষ্টা করে না !
facebook
জাস্ট ফাটাফাটি। কি লিখেছেন গুরু
লেখটা চমৎকার, 'ভলগা থেকে গঙগার' ছোঁয়া পেলাম
যে অবস্থা দেখি তাতে মনুষ্য প্রজাতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ধর্ম থাকবে। মানুষ স্বভাবগতভাবে সুবিধাবাদী, স্বার্থপর, ছিদ্রান্বেষী, শর্টকাট প্রত্যাশি, বিশ্বাসঘাতক। মানুষ সব সময় পরিস্থিতি বা ফ্যাক্ট নিজের নিজের সুবিধামত এবং প্রয়োজনমত টুইস্ট করে নেয়, ব্যাখ্যা দাড় করায়, অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়। সুতরাং আর বেশি কথা না বলে কাটি এইবার।
আব্রাহামই যখন আসল, আদম বাদ গেল কেন ?
আদমকে কিছুটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই বাদ দিয়েছি। কারণ বিবর্তনের হিসেবে আমরা কোন একক আদম ও হাওয়া হতে সবাই আসিনি। অন্তত প্রায় দশ হাজার সংখ্যক পূর্বপুরুষের এক প্রজাতি থেকে আমাদের উদ্ভব। এই তথ্যর লিঙ্কটা এই মুহুর্তে দিতে পারছি না বলে দুঃখিত। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কিভাবে বিবর্তন সরাসরি ধর্মের সৃষ্টি কাহিনীকে বাদ দিয়ে ফেলে।
এব্রাহামাইক ধর্মানুসারী ধর্মবেত্তারা আপনার কথিত 'মহাকাল' বা টাইমলাইন মানে না। তাদের মতে পৃথিবীর বয়স ৪,০০০ বছর (বর্তমান থেকে, নাকি নূহ/এব্রাহামের সময় থেকে এই ব্যাকোয়ার্ড গণনা, তা মনে নেই। তাতে বিশেষ কিছু হেরফেরও হয় না )। আমাকে এক মাওলানা বলেছিলেন, ঐসব জীবাশ্ম-টীবাশ্ম নাকি স্রষ্টাই ঐ ভাবে রেডিমেড রেখে দিয়েছেন মানুষের 'ঈমান' পরীক্ষা করার জন্য। সুতরাং এ্যন্থ্রোপলজি/প্যালেওন্টলজি/জিওলজি থেকে প্রাপ্ত তথ্য আসলে হয় 'ঈমান' পরীক্ষার ট্র্যাপ, আর নয়তো ইয়াহুদী-নাসারা-নাস্তিকদের ষড়যন্ত্র। অতএব বুঝতেই পারছেন, ৪.৫ বা ১৪ বিলিয়নের কথা তাদের বলা আর মহাকালের অরন্যে রোদন করা একই কথা। কেউ ঘুমিয়ে থাকতে চাইলে তাকে শুধু জ্ঞানের কথা বলে জাগানো খুব কঠিন, যদি না তার খুব পার্সোনাল ও গুরুতর, অব্যবহিত ব্যক্তিগত স্বার্থে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে (এবং সে যদি সেটা সেইভাবে পার্সিভ করতে পারে তবেই)।
****************************************
ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। জ্বী, তাদের ভাষ্য মতে পৃথিবীর যাত্রা মাত্র ৪০০০ খ্রীষ্টপূর্বে ।,
আরেকটু পরিষ্কার করার জন্যে উপরের লিঙ্ক থেকে বাইবেলীয় পৃথিবীর সময় দেওয়া হলো।
ধর্ম বিশ্বাস মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তার এক নমূনা এইটা। পশ্চিমা বিশ্বে বহু ক্রিষ্টিয়ান মানুষই বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর বয়স মাত্র ছয় হাজার বছর পুরোনো। আজকে বিজ্ঞানের যুগে এসেও কেউ যদি বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর বয়স ছয় হাজার বছর তাকে আপনি কি বুঝাবেন? তাই ধর্ম বিশ্বাসের সাথে শিক্ষা কিংবা উন্নতর জীবন যাত্রার কোন সম্পর্ক নেই। বহু পিএইচডি ধারি আছেন চোখ বন্ধ করে জ্বীন/ফেরেস্তাকে সত্য হিসেবে মেনে নেয়, আর এরাই বিভিন্ন ব্লগ এবং পত্রিকায় ধর্মের মাঝে কি কি বিজ্ঞান আছে সেগুলো নিয়ে লেখা ছাড়েন।
ইষৎ অফ ও লাইট টপিকঃ বিবর্তন আর টাইমলাইনের প্রসংগ যখন আসলই, তখন জিজ্ঞেস করি আপনি কি জানেন এই বিবর্তন ও টাইমলাইনের প্রেক্ষিতে আপনার নিজের অবস্থান কোথায় ? মানবজাতির ইতিহাসে আপনি নিজে ঠিক কত তম মানুষ ?
৫০,০০০ বি.সি.-তে আচরনগত ভাবে আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্সের তথা প্রপার মানবজাতির অভ্যুদয় থেকে ধরলে, আমার নিজের মানবতা সদস্য নিবন্ধন নং হচ্ছে -- ৭৭,৬৪৩,৮৪১,৬৩০। অর্থাৎ সাত হাজার সাত শত চৌষট্টি কোটি আটত্রিশ লক্ষ একচল্লিশ হাজার ছয় শত ত্রিশতম মানুষ আমি। আপনি ? না জানলে, আর জানতে চাইলে এখানে দেখুন।
****************************************
প্রথমে বলে নেই, আমি বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে বলে মানুষের মনে আঘাত দিতে চাই না | আর আপনি হিন্দু ধর্ম শব্দটির পরিবর্তে সনাতন শব্দটি ব্যবহার করুন | যেসব মানুষেরা ধর্মকে সামগ্রিকভাবে আঘাত করে, তারা সমাজের বিবর্তনের ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন গন্তব্যহীন চিন্তায় মগ্ন |
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে আমার ভাবনা একটু গোছানো | আমাদের পাঠ্য বইতে এর যা বর্ণনা লেখা তা আমাকে খুব দুঃখ দেয় | একটা অসার উপদেশ সংকলন | কিছু মানুষের অতিরঞ্জিত চারিত্রিক বর্ণনার সমাহার | ধর্ম মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষের ভালোর জন্যই | আর রূপকথা অবশ্যই ধর্মের অঙ্গ না |
যুধিষ্ঠির ধর্ম সম্পর্কে ক্ষুদ্র যা কিছু বলেছেন তা এইরকম, "ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতা" | এর অর্থ দাড়ায় ধর্ম যেমন মানুষকে রক্ষা করার জন্য সৃষ্টি, সেইরকম ধর্মকে রক্ষা করা, তার পরিবর্তন পরিবর্ধন সাধন করাও মানুষের কাজ | আর একটা কথা তিনি বলেছেন, বিভিন্ন মানুষ নানা মত নিয়ে চলেছেন, আর নানা অজ্ঞানতার মধ্যেও সময় কেটে যাচ্ছে (বেদে নাই যার রূপরেখা, পাবে সামান্যে কি তার দেখা - লালন ) | এও বলেছেন প্রেম ভালোবাসাই এই জীবনের অর্থ (সহজ মানুষ ভজে দেখ নারে মন দিব্য জ্ঞানে - লালন ) | জন্মান্তর সম্পর্কে তিনি বলেছেন আপন সন্তান একজন মানুষের আত্মা, তার প্রকৃতির বাহক |
যুধিষ্ঠিরের কথাগুলো খুব সহজ, এবং প্রত্যেক মানুষ এইভাবেই চিন্তা করে | কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এই সামান্য কথাটা পাঠ্য বইতে অনুপস্থিত |
আর ব্যক্তিগতভাবে আমি বুঝি সৃষ্টিকর্তা একটা কাল্পনিক(পরাবাস্তব) ধারনা | সৃষ্টিকর্তা, পরমাত্মা, শিব, দূর্গা শব্দগুলো ভিন্ন অর্থ বহন করে এবং এরা সবই মানুষের কল্পনা | তার মধ্যে শিব বা দূর্গা হচ্ছেন বিপদে মানুষের আশ্রয়স্থল, কিছুটা শিক্ষারও | ভাগ্য বিধাতা বলে যিনি আছেন, তাকে মানবরূপে কল্পনা না করে আমরা পদার্থবিজ্ঞানের আণবিক/পরমাণবিক শক্তি হিসেবে ভাবতে পারি ( you can call the laws of science 'God' - Hawkings) | এসব কথার অর্থ এই যে তারা নিদারুন ভয় পাবার কেউ নন, আবার পরম স্তুতি পাবারও কেউ নন |
ধন্যবাদ ..
"আর আপনি হিন্দু ধর্ম শব্দটির পরিবর্তে সনাতন শব্দটি ব্যবহার করুন"
এই অনুরোধের কারনটা জানতে চাই। যদি কিছু মনে না করেন।
আমি একটা ব্যক্তিগত কথা বলি, আমি নিজে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী না .. আর যদি চাপাচাপি করেন তো বলব সময়ই(মহাকাল) সৃষ্টিকর্তা .. আমি কোনো একক ধর্মপন্থাও বিশ্বাসী না .. আর সনাতন শব্দটি এই দেশের ধর্মহীন নির্দলীয় ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য .. কারণ এই হিন্দুধর্ম শব্দটি ভিনদেশীদের আরোপিত .. আর "সনাতন ধর্ম" শব্দটি অধিকতর যুক্তিযুক্ত এবং অর্থপূর্ণ .. এর অর্থ আবহমান বা ধারাবাহিক জীবনধারা .. অন্যভাবে ভাবলে সবধর্মের সারকথা বা প্রাকৃতিক কিছু ..
চমৎকার...
ডারউইনের মনে কোন সন্দেহ ছিল না ধর্মের উৎপত্তি স্বম্বন্ধে: As soon as the important faculties of the imagination, wonder, and curiosity, ogether with some power of reasoning, had become partially developed, man would naturally crave to understand what was passing around him, and would have vaguely speculated on his own existence, তার The Descent of Man এ তিনি এভাবে লিখেছিলেন..
আমি যদি কোনদিন বিখ্যাত হতে পারি তাহলে আমার এই উক্তিটা আপনেরা ব্যবহার কইরেন।
"Some of us came from Africa, others from the sky."
সচলের অ্যাটেনবুড়োর মডিফিকেশন: all of us came from Africa but some think they r from sky !
মানুষের জন্ম-মৃত্যুর বিষয়গুলো শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে | তাই মানুষ কিছু
প্রতীকের আশ্রয় নেয় | আমার মার কাছে আমার জন্মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলতেন আমার
জন্ম আকাশ থেকে | আর মৃত্যু সম্পর্কে আমরা শুনেছি , "একদিন ছুটি হবে অনেক দুরে যাব, নীল আকাশে
সবুজ ঘাসে খুশিতে হারাব, যেখানে থাকবেনা কোনো বাধন থাকবেনা নিয়মের কোনো শাসন " |
-----------------------------------
উন্মথিত যৌবন আমার, সন্যাসীর ব্রতবন্ধ দিল ছিন্ন করি .. আমিতো আচার ভিরু নারী নহি, শাস্ত্র বাক্যে বাধা ...
অনেক ভালো লাগলো। অনেক তথ্যবহুল আর জোড়ালো যুক্তিতে ঠাসা। লেখককে একটা অনুরোধ রাখতে চাই। বিবর্তনের পথে চলতে চলতে এতোদূর এলাম। অনেক এগিয়ে আবার মনে হয়, আমারা বোধহয় অনেক ক্ষেত্রে পিছাচ্ছিও। এই নিয়ে কিছু লেখা যায় না?
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। বিবর্তন প্রক্রিয়াটি অনেকটা "ট্রায়াল এন্ড এরর" পদ্ধতিতে চলে। হ্যা, তাই কখনো কখনো আমরা পেছাতে পারি। কিন্তু দেখতে হবে যে আল্টিমেটলি আমরা এগুচ্ছি কিনা। তবে এখানে আবার নুতন আরেকটি বিষয় চলে আসে। একটি সময় ছিল যখন মানুষ পুরোপুরি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। সুতরাং তখন যেভাবে বিবর্তন এগিয়েছে এখন সেভাবে এগুবে না। এখন মানুষ নিজেও বিবর্তনকে চাইলে পরিবর্তন করতে পারে। জেনেটিক সাইন্স, চিকিৎসাবিদ্যা, সর্বোপরি বিজ্ঞান যেভাবে এগুচ্ছে মানুষ বিবর্তনের গতিপথের উপর প্রভাব ফেলছে। তার মানে না যে প্রকৃতিও আবার বসে থাকছে। প্রকৃতিও কিন্তু মানুষের এই পরিবর্তনের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে ফেলে। যেমন আমরা যতই এন্টিবায়োটিক বা ভাইরাস মারার ঔষুধ বানাই না কেন ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাস তারাও নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে আবার আমাদের উপর চেপে বসে। তাই এটি খুবই নন-লিনিয়র একটি প্রক্রিয়া যাকে প্রেডিক্ট করা সম্ভপর নয়, যদি না আমরা প্রতিটি প্রাণির জেনেটিক্স জানতে সক্ষম হই। বিবর্তন যেহেতু জেনেটিক লেভেলেই হয় তাই যদি আমরা সকল প্রাণির জিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তখন হয়তো একদিন আমরা বিবর্তন প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। বিজ্ঞান যেভাবে এগুচ্ছে সেটাকে আমি অসম্ভব মনে করি না, প্রশ্ন হচ্ছে কত দিনে সেটা অর্জিত হবে।
সিরিয়াসলি ভালো লেগেছে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
সিরিয়াসলি ধন্যবাদ
বইটা ডাউনলোড করে নিলাম, বাংলায় বিবর্তনবাদ পড়তে আমারো ভাল লাগ্বে। ধন্যবাদ। গোছান লেখা পড়তে ভাল লাগে। বইটার অথোরের স্ব্যুস্থতা কামনা করি।
শাফি।
বইটা গল্পের মতো লাগবে ... একবার শুরু করলে কোথা দিয়ে শেষ হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না।
ভাই ধর্ম ছিল, আছে, থাকবে। নানা রঙ এ, নানা মতবাদে ধর্ম থাকুক, থাকুক তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস। কারন মানুষের জীবনের চলার পথে কোন না কোন বিশ্বাস আকড়ে ধরে ই চলতে হয়। তাই অনেকেই ধর্মে বিশ্বাস রাখেন। কিন্তু প্রব্লেম হইল ধর্মে বিশ্বাস আর সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস দুইটা সম্পুর্ন ভিন্ন জিনিশ। পার্টিকুলার ধর্মে বিশ্বাসীরা ধর্মের নিয়ম কানুনের প্রতি খুব ই সেন্সিটিভ।
আমার কাছে যেটা খুবই আশ্চর্য লাগে যে, শুধু ধর্ম পরিবর্তন করলেই বেহেশ্তে যাবার রাস্তাও চেঞ্জ হয়ে যায় সত্যি করে বলেন তো, এই বিশাল মহাবিশ্বের স্রষ্টা যিনি, তিনি কি আপনার/আমার বেহেশ্তে যাবার ব্যাপার নিয়া খুবই চিন্তিত? এত চিন্তা উনার থাকলে তো আমাদের এত কমপ্লেক্স মগজটাই দিতেন না
সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় উপহার হল "ফ্রী উইল" বা, মুক্ত চেতনা। আপনি মানুষ ভাল হবেন না খারাপ, তা সম্পুর্ন আপনার উপর। তাই আপনি কি বিশ্বাস করবেন আর কি করবেন না, সেটাও আপনার ব্যাপার। "নন বিলিভার" বা নাস্তিকরা ও সৃষ্টিকর্তার সন্তান, তাই তাদের নিয়ে যদি সৃষ্টিকর্তার ই কোন সমস্যা না থাকে, তবে আমার/আপনার কি সমস্যা? ঠিক এই জায়গায় গোড়া ধর্মবাদীদের সমস্যা
এই কথাটি কি কোন নাস্তিকের কথা নাকি এইটা আপনার বিশ্বাস? একজন নাস্তিকতো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বই স্বীকার করে না বলে জানতাম ।, যদি আপনার বিশ্বাস হয় তবে সেইটারে অন্যের উপর চাপানোটা কি ঠিক হচ্ছে? কথাটি যদি আপনি এভাবে লিখতেন, যে "আমি বিশ্বাস করি নাস্তিকরা, নন-বিলিভাররাও সৃষ্টিকর্তার সন্তান" আমি আপত্তি জানাতাম না।
আপনি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন, আমার আপত্তি নাই। কিন্তু আপনি কিছু যুক্তি দিচ্ছেন যেটা আগে থেকেই ধারণা করা কথার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি আগেই একটি কিছুকে সত্য হিসেবে ধরে তারপর যুক্তি দিতে যান তখন আর সেটা যুক্তি থাকে না। উদাহরণ হিসেবে আপনার এই বক্তব্যটি দেখুনঃ
। এই বক্তব্য সত্য যদি এইখানে একজন উনি বা সৃষ্টিকর্তা থাকে। এজ ইফ, এই কমপ্লেক্স মগজ একজন সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন যেন উনাকে বেশি চিন্তা করতে না হয়। অথচ যদি আমার লেখাটি পড়ে থাকেন তবে দেখবেন যে কমপ্লেক্স মগজ এক দিনে হয় নাই, লক্ষ বছরের বিবর্তনে হয়েছে কোন সৃষ্টিকর্তার সাহায্য ছাড়াই। তাই সব কিছুর মধ্যে আবার উনাকে না টেনে আনলেই খুশি হই। আর আপনি যদি এখন সৃষ্টিকর্তা আছে কি নেই, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া বিগ ব্যাং হতে পারে না, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারে না, শুণ্য থেকে কিছু সৃষ্টি হতে পারে না সেই সব দিকে যেতে চান তবে আপাতত ক্ষমা করবেন। এই লেখার বিষয় যেহেতু সেটা নয় তাই সেই বিষয়ে এই লেখায় তর্ক করবো না। অদূর ভবিষ্যতে উক্ত বিষয়ে যদি লিখি, অথবা আপনি যদি লিখেন তবে তর্ক হতে পারে।
"নাস্তিক" মানে কি, একজন মুসলিম কে জিজ্ঞাসা করেন, দেখবেন জবাব দিবে "যে আল্লাহ মানে না", একজন খ্রীষ্টান কে জিজ্ঞাসা করেন, বলবে "যে যীশু কে স্বীকার করে না"।
এইখানেই তো প্রব্লেম। এখনকার জমানায় মানুষের বিশ্বাস হয়ে যাচ্ছে "হয় তুমি আমার দলে, না হয় বিপক্ষের", এটা যে কোন ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই অনেক মুসলিম নাস্তিকদের কাফের বলে, খ্রীষ্টান রা তাদের শয়তানের অনুসারী বলে। কারন এক্টাই, তারা তাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। এটা তো হওয়া উচিত না। "নন বিলিভার বা নাস্তিকরা ও সৃষ্টিকর্তার সন্তান" এ কথাটি আমি বলেছিলাম সেইসব গোড়া ধর্মবাদীদের উদ্দেশ্যে। (কথাটা ঠিক ভাবে তখন বলা হয়নাই, তাই দুক্ষিত )
আমার কথা হল, যদি অন্যের লাইফ স্টাইল আমার জন্য ক্ষতিকর না হয়, তো আমি সেটা মেনে নেব। তাই কে মদ খেয়ে পার্টি করছে, কে অন্তরংগ ভংগিতে ছবি তুলছে, সেটা তো অন্যদের গাত্রদাহ হবার মত কারন হতে পারে না। ফেসবুকের কল্যানে মানুসের ভাষা আর আচরন এখন দুনিয়ায় উন্মুক্ত। আমি বেশ কিছু বাংলাদেশী কমেন্ট পোষ্টে যে ধরনের ভাষা দেখি, তা শুধু একটা জিনিশ এ নির্দেশ করে, সেটা হল আমাদের বিবেচনা শক্তি কম, অন্য মতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ আরো কম এবং ভাষার ব্যবহারে শীষ্টতার অভাব। এই ব্যাপারটা খুবই দুক্ষজনক। যদি কোন জিনিশ কারো পছন্দ না হয়, তাহলে খুব শালীন ভাবেও প্রতিবাদ করা যায় অ্যান্ড এটাই করা উচিত।
সর্বশেষে, যদি বিবর্তনের সাভাবিক গতিতে আমাদের ব্রেইনের উন্নতি ঘটে, তাহলে তো এই অবস্থায় আসতে আমাদের কয়েক মিলিয়ন বছর লাগতো আমরা যতগুলো বড় আবিস্কার করেছি আর করে চলেছি তা হয়েছে গত কয়েকশ বছরে। আপনি নিশ্চিত বলবেন না যে, আমাদের ব্রেন গত কয়েকশ বছরে বিবর্তিত হয়েছে বিবর্তনের হিসাবে যে কোন অঙ্গের পরিবর্তনে অনেক সময় লাগে, সেখানে আমাদের মগজের এই বিশাল বিকাশ হয়েছে কত দিনের মধ্যে? মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্ত্ব তো বেশী দিনের নয়
আপনে যে বিবর্তনের সংজ্ঞাই জানেন না তা বোঝা গেল।
দুই লাখ বছর আগের হোমো সেপিয়েন্সের সাথে বর্তমানের হোমো সেপিয়েন্সের মস্তিস্কে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন পার্থক্য নাই। তাহলে গত কয়েকশ বছরে জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতে তুমুল উন্নতির কারণ কী?
হাজার বছর আগে প্রকৃতির রহস্য নিয়ে চিন্তা করতেন ধর্মগুরু বা পূরোহিতরা। যাদের কায়িক পরিশ্রম করার দরকার পড়তো না। বাকিরা জীবনযাপন নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত থাকতো যে প্রকৃতির দিকে তাকানোর সুযোগ মিলতো না। হাজার বছর বাদ দেন, কয়েকশ বছর আগেও ফকিন্নির পুত মাইকেল ফ্যারাডেকে রয়্যাল সোসাইটিতে জায়গা দিতে লোকজন কুণ্ঠিত বোধ করেছিল। বর্তমানে কারো প্রকৃতির রহস্য নিয়ে চিন্তা করতে আর বড়লোক হওয়ার লাইসেন্স লাগে না।
এক চাকা আবিষ্কার করতে দশ হাজার বছর লাগলে দুই চাকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বিশ হাজার বছর লাগবে এমন ঐকিক নিয়মের অংক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য না। বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কারই আসমান থেকে নেমে আসে না। প্রতিটি আবিষ্কার হয় ইতিপূর্বে আবিষ্কৃত সমস্ত জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। এ কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি হয় এক্সপোনেশিয়াল রেটে। সভ্যতার শুরুতে দশ হাজার বছরে বিজ্ঞান যতটুকু এগিয়েছে বতর্মানে দশ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তার চাইতে বেশি আগায়। সহজ হিসাবে ধরা হয় প্রতি পাঁচ বছরে প্রযুক্তি দ্বিগুণ আগায়। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তা একটু ধীরগতির।
আধুনিক বিজ্ঞানের বয়স ~৫০০ বছর মাত্র। আগামী ৫০০ বছরে মানব মস্তিস্কে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটবে না [যদি মানুষ নিজে থেকে কোন পরিবর্তন না করে ফেলে]। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কতদূর উন্নত হবে তা চিন্তা করাও সম্ভব হবে না। ৫০ বছর আগে কে জানতো কম্পিউটার নামক একটা যন্ত্র কোলের উপর ফেলে রেখে পৃথিবীর যে কোন জায়গার আরেকজন মানুষের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে?
তাইলে ভাই, আপনি একটু কষ্ট করে, বিবর্তনের ব্যাপারটা যদি বোঝাইয়া দিতেন তো ভাল হইত জিনিষটা পরিষ্কার হইত।
হাজারে-হাজারে বইপত্র থাকতে আমার কাছ থেকে বুঝতে চান?
খান একাডেমির এই ভিডিওটা দেখলে বিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা হবে।
ভিডিওটা দেখেন। যদি কোন প্রশ্ন তৈরি হয় তাহলে এখানে প্রশ্ন করেন। প্রচুর লোক [আমি সহ] আছে যৌক্তিক উত্তর দেয়ার জন্য।
এক ছবিতে এই হইলো বিবর্তন [~সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর]:
যদি বিবর্তন জিনিসটা একেবারে পরিষ্কার করে বুঝতে চান তাহলে এই কমিক স্ট্রিপটা পড়েন। তাহলে আর কোন বই পড়া লাগবে না। এর চাইতে সুন্দর করে কেউ বোঝাতেও পারবে না।
ভিডিওটা দেখলাম, ন্যাচারাল সিলেকশন প্রসেস ও দেখলাম। নতুন কিছু না আমি তো ভাবতাছিলাম যে বিবর্তন মতবাদের মনে হয় বিশাল পরিবর্তন ঘটছে, তাই আমি যেটা জানতাম সেটা মনে হয় চেঞ্জ হইছে। কিন্তু সেরকম তো কিছু দেখলাম না।
দুনিয়ার সকল প্রানী যে একি পুর্ব পুরুষ থেকে আসছে সেটা স্বীকৃত সত্য। পাখিরা যে ডাইনোসরের বংশধর সেটা প্রমানের উপর একটা ফিচার দেখাইছে ডিসকভারিতে। অইখানে জীন সিকোয়েঞ্ছ চেঞ্জ করে মুরগীর ভ্রুনে দাতের মত অংশ আর মুরগীর লেজে এক্সট্রা ভারটিব্রা দেখা গেছে। গবেষকরা এটার নাম দিয়েছেন রিভার্স এভুলোশন এথেকে প্রমানীত হয় যে পাখিরা, ডাইনোসরদের জীন বহন করে, তাই ভবিষ্যতে পাখি থেকেই হয়ত ডাইনোসর তৈরী করা যাবে।
আমি জাষ্ট এইটাই বুঝলাম না যে "আপনে যে বিবর্তনের সংজ্ঞাই জানেন না তা বোঝা গেল" এইটা কী ভাবে বোঝা গেল
আপনি বলছেন "দুই লাখ বছর আগের হোমো সেপিয়েন্সের সাথে বর্তমানের হোমো সেপিয়েন্সের মস্তিস্কে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন পার্থক্য নাই", তাই যদি হয়, তবে তো তাদের বুদ্ধি আর আমাদের বুদ্ধির মাঝে খুব ফারাক থাকার কথা না। যদি বলেন একজন নিউটন প্রতি ৫০০০০ বছরে একবার জন্মায়, তবে তো এই ২ লাখ বছরে মানুষ, কমপক্ষে ২ জন নিউটনের মত প্রতিভাবান পাইতো। আর সেক্ষেত্রে তো মাধ্যাকর্শন শক্তির ব্যাপারটাতো আরো হাজার হাজার বছর আগেই হইতে পারত। আর আমরা এখন মহাবিশ্বের কোনায় কোনায় বিচরন করতাম
বুদ্ধিমত্তার অন্যতম নিদর্শন হইল নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সর্বোত্তম ব্যবহার করা। যদি একদল মানুষকে আপনি একটা নতুন জায়গাতে ছেড়ে দেন, তারা সেখানে একটা কলোনী বানিয়ে নিবে। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, তারপর প্রবৃদ্ধির দিকে পা বাড়াবে। এটাই হল বুদ্ধিমান হবার সুবিধা।
কিন্তু আমরা তো কয়েক হাজার বছর আগের মানুষের মধ্যে এটা দেখিনা। তারা তো প্রকৃতির সাথে যুদ্ধরত ছিল। তাই, আমার মনে হয় এটা বলা যায় যে কয়েক হাজার বছর আগের মানুষ আর বর্তমান মানুষের বুদ্ধিমত্তার যথেষ্ট পার্থক্য আছে তার মানে হল, খুব স্বল্প সময়ে আমাদের বেন এ পরিবর্তন এসেছে এবং সম্ভবত ঘটে চলেছে।
আমি এই বিষয়ে আপনার এবং অন্য আগ্রহীদের মতামত জানতে ইচ্ছুক। এইখানে মুক্ত আলোচনা করা যায়, অন্য অনেক জায়গায় মানুষের আগ্রহ অনেক কম।
স্বীকার করছি বিবর্তন সম্পর্কে আপনি এক গাদা তথ্য জানেন। কিন্তু সেই তথ্যগুলো আত্মস্থ করেননি ঠিক মতো। বিবর্তন জিনিসটা কড়াকড়িভাবে বায়োলজিক্যাল। অথচ আপনি Biological Evolution দিয়ে Evolution of Knowledge কে ব্যাখ্যা করছেন। এ কারণেই “আপনে যে বিবর্তনের সংজ্ঞাই জানেন না তা বোঝা গেল” কথাটা জাস্টিফায়েড।
কী চমৎকার একটা প্যারা! এই প্যারার কথাগুলোর সাথে আপনার মন্তব্যের বাকি একটা কথারও কোন যোগসূত্র নাই। এই প্যারাগ্রাফে আপনি নিজেই আপনার মন্তব্যগুলোতে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর এক অর্থে দিয়ে ফেলেছেন। তারপর আবার নতুন প্যারাগ্রাফে গিয়ে স্ববিরোধিতা শুরু করেছেন।
দুই লাখ বছর আগের আধুনিক মানুষ [হোমো সেপিয়েন্স] এর সাথে আজকের আমার–আপনার ব্রেইনের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য বায়োলজিক্যাল পার্থক্য নাই। বিবর্তন যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া তাই দুই লাখ বছরে আমরা অতি সামান্য পরিমাণে হলেও বিবর্তিত হয়েছি। কিন্তু সেই পরিমাণটা এত বেশি না যে হোমো সেপিয়েন্স থেকে আলাদা কোন প্রজাতি তৈরি হয়ে গেছে। বিবর্তনের হিসাবে ২ লাখ বছর তো কিছুই না।
আপনি ঠিকই বলেছেন, বতর্মান পৃথিবীতে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ যেভাবে ঘটছে পঞ্চাশ হাজার বছর আগের পৃথিবীতেও একইভাবে ঘটেছিল। পঞ্চাশ হাজার বছর আগে মানুষ কি আফ্রিকা থেকে হেঁটে হেঁটে এশিয়া–ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে কলোনি তৈরি করেনি? জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়ে ধীরে ধীরে প্রবৃদ্ধির দিকে পা বাড়ায়নি? আজকের সভ্যতা কি দুই লাখ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা না? এমন তো না যে দুইশ বছর আগে মানুষ আকাশ থেকে সায়েন্স –অ্যান্ড –টেকনোলজির কোন পপি গাইড পেয়েছে যা দিয়ে রাতারাতি সবকিছু বদলে ফেলেছে।
সুতরাং, আপনার এই কথাগুলোর সাথে আমি পুরোপুরি একমত পোষণ করছি।
আগের মন্তব্যে আপনি বলেছেন:
এখানেই ভুলটা করছেন এবং বিবর্তন সম্পর্কে আপনার জানাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
দুই লাখ বছর আগে মানব মস্তিষ্কের ক্যাপাসিটি যা ছিল এখনো তাই আছে। পরিবর্তন যেটুকু হয়েছে তা মূলত জ্ঞানের সীমার। মানব মস্তিষ্ককে হার্ডওয়্যার আর জ্ঞানকে ডেটা ধরে নিলে বলা যায় আধুনিক মানুষের হার্ডওয়্যার গত দুই লাখ বছর ধরে প্রায় একই আছে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ডেটা স্টোরেজের পরিমাণ আপগ্রেড হয়েছে।
ধরেন ৭০ হাজার বছর আগে একজন মানুষের মানুষের ব্রেইনে ডেটার পরিমাণ ছিল ৩০ মেগাবাইট । বর্তমানে সেটা আপগ্রেড হয়ে বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ টেরাবাইটে।
প্রশ্ন করতে পারেন, ক্যামনে কী? ডেটা স্টোরেজ বাড়ছে কীভাবে?
সারভাইবাল অফ দ্য ফিটেস্টের যুদ্ধে মানবজাতির টিকে যাওয়ার মূল কারণ “ট্রান্সফিউশন অফ নলেজ”। মানবজাতি প্রজন্মথেকে প্রজন্মান্তরে জ্ঞান প্রবাহিত করে দিয়ে যাচ্ছে। সক্রেটিস–অ্যারিস্টটল–হাইপেশিয়া–নিউটন–গ্যালিলিও সারাজীবন প্রকৃতির রহস্য অনুসন্ধান করে যেটুকু জানতে পেরেছিলেন বর্তমানে দশম শ্রেণীর একজন মনযোগী ছাত্র তার চাইতে অনেক বেশি জানে। স্কুল–কলেজগুলোতে মানব জাতির অর্জিত সমস্ত জ্ঞান প্যাকেজ হিসাবে অল্প সময়ে মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার কাজটা করা হয়। ফলে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ একটা বিষয়ে ইউনিভার্সিটির সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়ার সাথে সাথে সে বিষয়ে ইতিপূর্বে আবিষ্কৃত সব জ্ঞান সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়ে ফেলতে পারে। অথচ সেই জ্ঞানটুকু আবিষ্কার করতে হাজার হাজার মানুষের হাজার হাজার বছর লেগেছে। এবং সে জ্ঞানটুকু ব্যবহার করে সে ঢুকে যাচ্ছে জ্ঞানের আরও গভীরে।
সময়ের সাথে সাথে ব্রেইনে ডেটা স্টোরেজের পরিমাণ বাড়বে এটা বুঝতে না পারার কিছু নেই। এর সাথে মস্তিষ্কের বায়োলজিক্যাল বিবর্তনের সরাসরি সম্পর্ক নাই। সুতরাং, গত কয়েকশো বছরে মস্তিষ্কের বায়োলজিক্যাল ক্যাপাসিটি বাড়ার কারণে বড় বড় আবিষ্কারগুলো হয়েছে এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনই কারণ নেই। মানব জাতির অভ্যুদয়ের কাল থেকেই মানব মস্তিষ্কে এই ক্ষমতাটুকু ছিল। পরিবর্তনটা ঘটেছে মানবজাতির অর্জিত মোট জ্ঞানের পরিমাণে।
হ্যাঁ, দুই লাখ বছর আগের হোমো সেপিয়েন্সের সাথে বর্তমানের মানুষের মস্তিষ্কে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন পার্থক্য নাই। একইভাবে তাদের বুদ্ধির সাথে আমাদের বুদ্ধির তেমন কোন ফারাক নেই।
আপেল মাটিতে পড়তে দেখে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করা আর চকমকি পাথর ঠুকে আগুন জ্বালাতে শেখার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য আছে কি?
দশ হাজার বছর আগে একজন মানুষ দেখেছিল ভারি জিনিসপত্র টেনে নিয়ে যাওয়ার চাইতে সিলিন্ডারাকৃতির গাছের গুঁড়ির উপর দিয়ে গড়িয়ে নেওয়া সহজ কাজ। এভাবেই চাকা আবিষ্কার হয়েছে। তাহলে ঠিক কোন বিবেচনায় বলা সম্ভব যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করতে চাকা আবিষ্কার করার চাইতে বেশি বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন?
কিন্তু আপনি যদি “বুদ্ধিমত্তা” শব্দটির বদলে “জ্ঞান” শব্দটা ব্যবহার করেন তাহলে আমি আপনার সাথে একমত পোষণ করবো। চাকা আবিষ্কার করতে মানুষকে প্রকৃতি সম্পর্কে যেটুকু জানতে হয়েছিল, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করতে তার চাইতে ঢের বেশি জানতে হয়েছে।
আপনি বলেছেন, বলেন একজন নিউটন প্রতি ৫০০০০ বছরে একবার জন্মায়, তবে তো এই ২ লাখ বছরে মানুষ, কমপক্ষে ২ জন নিউটনের মত প্রতিভাবান পাইতো।
নিউটন আর কুদরত–ই–খুদার প্রতিভার মধ্যে মধ্যে ঠিক কীভাবে পার্থক্য করা সম্ভব? কিংবা নিউটন ও সত্যেন বসুর প্রতিভার মধ্যে? কিংবা নিউটন ও মোতালেবের মধ্যে?
আপনি বলতে পারেন, নিউটন পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা করেছেন, ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় একই সাথে অবদান রেখেছেন। সেই তুলনায় মোতালেব বড়জোর বিজ্ঞানের একটা ছোট্ট বিষয়ে কাজ করেছে। তাই নিউটনের সাথে মোতালেবের তুলনা হতে পারে না।
নিচের ছবিটা দিয়ে জিনিসটা ব্যাখ্যা করা সহজ:
যে কোন সময়ে মানবজাতির অর্জিত জ্ঞানকে একটা বৃত্ত হিসাবে কল্পনা করেন। বিন্দু বিন্দু করে পানি জমে সাগর সৃষ্টি হওয়ার মতো করে প্রতিদিন সেই বৃত্তে একটু একটু করে জ্ঞান জমা হচ্ছে। ফলে সময়ের সাথে সাথে জ্ঞান বৃত্তের পরিধি বাড়ছে।
মনে করুন নিউটনের জ্ঞানকে বৃত্তের পরিধির একটা টুকরা দিয়ে রিপ্রেজেন্ট করা সম্ভব। ধরে নিলাম নিউটনের সময়ের জ্ঞানের বৃত্তের লাল অংশটুকু নিউটনের অবদান। যেহেতু নিউটনের সময়ে পৃথিবীর জ্ঞানের বৃত্তটা অনেক ছোট ছিল তাই নিউটনের অবদান বৃত্তের পরিধির একটা বিশাল অংশ জুড়ে আছে। সময়ের সাথে বৃত্তের আকৃতি বড় হওয়ার সাথে সাথে মানুষের ব্যক্তিগত অবদানের অনুপাত কমে এসেছে।
ঠিক এ কারণে বর্তমান পৃথিবীর জ্ঞানের বৃত্তে মোতালেব নিউটনের সমান অবদান রেখেও নিউটনের সাথে তুলনায় আসতে পারছে না। কেননা জ্ঞানের বৃত্ত এখন অনেক বড়। তাই আনুপাতিক হার ও অনেক বেশি, এ কারণে জ্ঞানের বৃত্তে নিউটনের সমান অবদান রাখতে হলে বৃত্তের পরিধির যতটুকু অংশ দখল করতে হবে তা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
একশ বছর আগে মাইকেলসন–মোরলি ইথারের অস্তিত্ব বের করতে গিয়ে আলোর গতির এক্সপেরিমেন্টটা করেছিলেন যা পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিয়েছিল। আর আজকের দিনে নিউট্রিনো এক্সপেরিমেন্ট করতে শ’খানেক বিজ্ঞানি, হাজারখানেক ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান আর এলএইচসির মত বিশাল অবকাঠামো দরকার হয়।
ঠিক এই কারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এখন একক অবদানের চাইতে সমষ্টিগত অবদান বেশি। দিন যত যাবে, জ্ঞানের বৃত্ত ততোই বড় হতে থাকবে। ফলে কমতে থাকবে ব্যক্তিগতভাবে জ্ঞান ধারণ করার ক্ষমতা। সে কারণে একক অবদানের পরিমাণ ততোই কমতে থাকবে। বাড়বে সমষ্টিগত অবদান।
এই আর্টিকেলটি পড়লে দেখা যাচ্ছে ১৯০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যতজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার জিতেছেন তাদের লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে “অল্প বয়সে ব্রেকথ্রু আবিষ্কার” জিনিসটা এখন আর ঘটছে না।
বিংশ শতাব্দির শুরুতে “ব্রিলিয়ান্ট ইয়ং সায়েন্টিস্ট” নামের যে ইমেজটা ছিল সেটা সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ব্রেক থ্রু আবিষ্কারগুলো ঘটছে বেশি বয়সে, অনেক অভিজ্ঞতা অর্জনের পর। কেননা, এখন আর ২৬ বছর বয়সে ফিজিক্সের সব জ্ঞান ধারণ করে বসে থাকা সম্ভব না। থিওরেটিক্যাল বা থট এক্সপেরিমেন্ট বেজড আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যে কখনো হবে না তা নয়, কিন্তু এক্সপেরিমেন্টাল বিজ্ঞানের ধারায় অল্প বয়সে ব্রেক থ্রু জিনিসটার দিন শেষ।
আমার মতামত জানালাম। আমার মতামত আপনার সাথে মিলবেই এমন কোন কথা নাই। না মিললে আমি আপনাকে দৌড়ে মারতে যাব বা আপনি আমাকে দৌড়ে মারতে আসবেন এমন তো না, তাই না?
যৌক্তিক ঝগড়া-বিবাদ না থাকলে ক্যামনে কী? সব কিছু বিনা প্রশ্নে মেনে নিলে মানুষ এখনো গুহায় বসবাস করতো। ঠিক কিনা?
প্রাসঙ্গিক হতে পারে ভেবে আমার একটি পুরোনো লেখার লিঙ্ক দিচ্ছি "ডোপামিন তার নাম"। লেখাটি লিখেছিলাম Fred H. Previc এর The Dopaminergic Mind in Human Evolution and History বই অবলম্বনে। এই বইটি পড়লে একটা ধারণ পাওয়া যাবে কেন মস্তিষ্কের আকার খুব বেশি পরিবর্তিত না হয়েও আজকের মানুষ এতো বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। আমার সেই লেখা থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি।
তাহলে গত ২ লাখ বছরে ব্রেইনের হার্ডওয়্যারে তেমন পরিবর্তন হয়নাই, জাষ্ট সফটওয়্যারে আপডেট হইছে। ঠিক আছে
সেই হিসেবে তো ২ লাখ বছর আগের মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা আর, আজকের দিনে আমার/আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতাও মোটামোটি একই হবার কথা। হয়তোবা ছিল, যদিও আমার মনে হয়না সেটা ঠিক।
আমার বক্তব্য যেটা সেটা হল, ১৬-১৭ শতাব্দীর মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানের গোড়ার দিকের আবিষ্কার গুলো তো আরো ১০০০ বছর আগেও হতে পারতো, যদি ব্রেইনের ক্যাপাসিটি সেইম ধরা হয়, সেটাই তো স্বাভাবিক হবার কথা।
জ্ঞানের ব্যাপারটা শুরু হয় কিভাবে? এই ধরেন, একজন আগুন কোনভাবে আবিষ্কার করে ফেলল, সে এই খবর আশে পাশে সবাইরে দিয়া দিল। আর একজন আগুনের ধারে বইসা খাইতে গিয়া খাবার আগুনের মধ্যে ফেলাইয়া দেবার মাধ্যমে আবিষ্কার করল রান্নার ব্যপারটা। এমনি ভাবে ছোট ছোট আবিষ্কারের মাধ্যমেই জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। এইভাবেই তো স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বাড়ে, তাই না?
আমার কথা হইল, যদি ব্রেইনের হার্ডওয়্যার সেইম এ থাকে, তো এই আলোর গতির এক্সপেরিমেন্ট তো আরো ১০০০ বছর আগেও হইতে পারতো এমনতো আর না, যে সব মানুষ "খাই দাই ঘুমাই" নীতি তে জীবন কাটাইতেছিল, হঠাত মনে করল, ধুর অনেক হইছে, এইবার কিছু আবিষ্কার করি
এইরকম কখনো হয়না আপনি একটা ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন সেটা পাবার পর। আর আপনি যদি শুধু খুলির আকার দিয়া ব্রেইনের কথা চিন্তা করেন, সেটা খুবই ভুল হবে। আমার জানা মতে ইভেন ১০০ বছর আগের কোন ব্রেইনের প্রিজার্ভড স্যাম্পল নাই। তাই, কীভাবে ধারনা করা যায় যে ২ লাখ বছর আগেও ব্রেইনের হার্ডওয়্যার সেম ছিল?
আপনি "বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা" বলতে কী বোঝেন, সেটা পরিষ্কার হচ্ছে না। আপনি আপনার আশেপাশে তাকান। আপনার বাসায় যে কাজের বুয়া কাজ করেন, ওনার "বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা" আর আপনার "বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা" কি এক? আপনি কম্পিউটার খুলে ব্রাউজার ওপেন করে সচলায়তনে এসে কমেন্ট লিখতে পারছেন, আপনার বুয়া পারবেন না। অথচ উনি হয়তো আপনার চেয়ে বেশিদিন ধরেই দুনিয়াতে আছেন।
বাকি কথা বলার আগে আপনাকে একটা ছোটো ধারণা দেই, মস্তিষ্ক সম্পর্কে এখন মানুষ কীভাবে জানে। আমাদের মগজ আমাদের খুলির ভেতরের দিকের ওপর ইমপ্রেশন ফেলে। আপনি একটা খুলি যদি মোটামুটি প্রিজার্ভড আকারে পান (ফসিলাইজড খুলি হলেও চলবে), সেটার ভেতরে একটা রেজিন ঢেলে খুলির ভেতরে সেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম খাঁজের একটা কাস্ট তৈরি করতে পারবেন। এটাকে বলা হয় এণ্ডোকাস্ট। এণ্ডোকাস্ট দেখে একজন নিওরোলজিস্ট বলে দিতে পারবেন, সেই অশ্মীভূত খুলির ভেতরে ব্রেনের সারফেস কেমন ছিলো। আর মস্তিষ্কের পরিবর্ধন মূলত ঘটেছে সারফেসেই, ফলে সময়ের সাথে মস্তিষ্কের বিবর্তন সম্পর্কেও বিজ্ঞানীরা জানেন এখন।
এইবার আপনার প্রশ্নের হাস্যকর দিকটা দেখেন। আপনি জানতে চাইছেন, একটা ইভেন্ট কেন আরো এক হাজার বছর আগে হলো না। আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, নবী মুহাম্মদের জন্ম কেন ২২৫ খ্রিষ্টাব্দে হলো না, তার কী উত্তর দিবেন? আইয়ামে জাহেলিয়াত তো ৫৮০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু হয় নাই, তার আগেও ছিলো, তাই না?
ব্রেইনের ক্যাপাসিটির সাথে আপনি সরাসরি বিজ্ঞানকে ইকুয়েট করার চেষ্টা করছেন, এই চেষ্টার নিরর্থক দিকটা আপনার কাজের বুয়ার দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন। ওনার ব্রেইনের ক্যাপাসিটি আপনার ব্রেইনের সমান। কিন্তু আপনি সচলে এসে কমেন্ট করছেন, উনি করছেন না। পার্থক্যটা মস্তিষ্কের ফিজিওলজিতে নয়, আপনাদের সংস্কৃতিতে। আপনি "শিক্ষা" নামে একটা জিনিস পেয়েছেন, যেটা আপনার কাজের বুয়া পান নি। আপনি যে বলছেন, ষোড়শ শতাব্দীর আবিষ্কার কেন এক হাজার বছর আগে হলো না, এর উত্তর হচ্ছে, এক হাজার বছর আগে ঐ আবিষ্কারের জন্য উপযুক্ত রিসোর্স আর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আবিষ্কার বা উদ্ভাবন, সবই বেশ ব্যয়বহুল পদ্ধতির ফসল। যে সমাজে এই ব্যয় বহন করার মতো উদ্বৃত্ত এবং এই উদ্ভাবনের গুরুত্ব অনুধাবনের মতো বিচক্ষণ মন থাকে না, সে সমাজে আবিষ্কার বা উদ্ভাবন ঘটে না। সময়ের সাথে যেটা ঘটেছে, বিজ্ঞানের পেছনে ব্যয় করার মতো উদ্বৃত্ত সমাজে বেড়েছে। আপনি একটু ইতিহাস পড়লে দেখতে পাবেন, ইয়োরোপীয়দের ঔপনিবেশিকতার রমরমা শুরু হওয়ার পর বিজ্ঞানের গতিও বেড়েছে। প্রাচীন ভারতবর্ষে উদ্বৃত্ত সম্পদ সম্রাটেরা বিলাসে ব্যয় করেছেন, আর ইয়োরোপীয়রা উদ্বৃত্ত সম্পদ বিলাসের পাশাপাশি বিভিন্ন অভিযান আর গবেষণার পেছনেও কাজে লাগিয়েছে। আপনি ইয়োরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখবেন, তিন-চারশো বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। তারা সেই ঔপনিবেশিক কোস্তাকুস্তির যুগ থেকেই বিজ্ঞানের পেছনে ইনভেস্ট করেছে, যেটার ফল তারা এখনও ভোগ করছে।
আপনার বেসিক চিন্তাতেই বড়সড় একটা গলদ আছে। আপনার যুক্তিতে ভুল নাই, কিন্তু প্রশ্নটা যখন করছেনই এইটার উত্তরও আপনার নিজের বের করা উচিত ছিল। আপনার প্রশ্নটাকেই আমি আবার একটু ঘুরিয়ে বলি - আপেলও তো সব সময়ই পড়েছে, তারপরও নিউটন কেন মধ্যাকর্ষণ শক্তির ধারণা আবিষ্কার করলো? কেন সেইটা গ্যালিলিও, কিংবা ভিঞ্চি, কিংবা এরিষ্টটল, বা পীথাগোরাস বা আমাদের কোন এক পূর্বপুরুষ আবিষ্কার করলো না? কারণ সেই সময়টাতে নিউটন এই সমস্যাটা নিয়েই কাজ করছিলেন। ব্যাপারটা এমন না যে নিউটনের মাথার উপর আপেল পড়লো আর উনি সাথে সাথেই বুঝে ফেললেন এইখানে কিছু হচ্ছে। ব্যাপারটা হচ্ছে উলটো। যারা গবেষণার সাথে জড়িত তারা এই বিষয়টি বেশি ভালো করে উপলব্ধি করতে পারে। যখন একটি সমস্যা কোন ভাবেই সমাধান হয় না তখন সেটা মাথায় ঘুরতে থাকে। অনেক সময় বলা হয় যে সমস্যার কথা কিছু দিন ভুলে যাওয়া ভালো। ফ্রেশ মাথায় ফিরে আসলে তখন দেখা যায় যে ঠিকই সমাধান একটি বের হয়ে আসে। নিউটনের ক্ষেত্রেও এমনি কিছু ঘটেছিল নিশ্চয়ই। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছিলেন আর তারপর হয়তো আপেলের বিষয় থেকে সিদ্ধান্তে আসতে পারলেন।
এতো কথা বলার একটাই কারণ, বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কারই হঠাৎ করে আবিষ্কৃত হয়নি, এর পেছনে সূদীর্ঘ ইতিহাস থাকে। কম্পিউটারও একদিনে আবিষ্কার হয়নি। উইকিতে কম্পিউটিং এর ইতিহাসগুলো পইড়েন। তো যেটা বলছিলাম, তাহলে এক হাজার বছর আগে কেউ কেন রিলেটিভিটি থিউরি দেয়নি কারণ তখনকার সময়ে সেটা নিয়ে কারোর চিন্তা করার প্রয়োজন পড়েনি।
আপনার কাছে আজকে মনে হতে পারে যে আগুন জ্বালানোটা কি এমন হাতি ঘোড়া। কিন্তু যেই ব্যক্তিটি আগুন কিভাবে ধরানো যাবে এবং সেটাকে সংরক্ষণ করা যাবে সেই বিষয়টি আবিষ্কার করেছে তিনি তার সময়ে বিশাল এক ব্রেক থ্রু দিয়েছেন। নুবেল প্রাইজ থাকলে তখনকার সময় তিনি নোবেল পাইতেন। আপনার মনে হতে পারে কৃষিকাজ শেখা এ আর এমনকি? কিংবা লিখতে পারা আবিষ্কার করা এ আর এমনকি। কিন্তু প্রতিটা আবিষ্কার মানুষকে পরবর্তী পর্যায়ে যেতে সাহায্য করেছে।
আমার আগের মন্তব্যে যেমন বলেছি জানার আগ্রহ থাকা ভালো। যতো নির্দোষ প্রশ্নই হোক আসা খারাপ না। আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যেও কারো কারো মাথায় এমন নির্দোষ প্রশ্ন আসছিল বলেই সভ্যতা এগিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগলে সেইটার জবাব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনাকে জবাব দিতাম না, কারণ আপনার মন্তব্য গুলো পড়ে আমার ধারণা হচ্ছে আপনি জানার চেয়ে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করছেন। জবাব দিলাম অন্য পাঠকদের জন্যে।
আজকে অনলাইনের যুগে যে কোন কিছুর ইতিহাস জানা খুব কঠিন কিছু না। আমি এখন ইতিহাসে যে মজা পাই গল্প পড়েও এতো মজা পাই না। সবশেষে, আজকের এই সভ্যতার পেছনে এমন বহু বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবিষ্কারের অবদান রয়েছে। আইফোন দেখে বিভোর হয়ে পূর্বপুরুষদের আবিষ্কার গুলোকে ভুলে গেলে চলবে না। আশা করি বুঝতে পারছেন কেন আলোর গতির এক্সপেরিমেন্ট ১০০০ বছর আগে হতো না।
যেহেতু হোমো সেপিয়েন্সের মস্তিষ্কের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিবর্তন ঘটেনি এবং বুদ্ধিবৃত্তি বিষয়টা মস্তিষ্কের বায়োকেমিক্যাল রিঅ্যাকশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাই বলা যায় গত দুই লাখ বছর ধরে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা মোটামুটি একই আছে। কিন্তু একের পর এক প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনের সাথে সাথে জ্ঞান বেড়েছে চক্রবৃদ্ধিহারে।
জিনিসটা বেঠিক হওয়ার পেছনে আপনার যুক্তিগুলো শুনতে আগ্রহী।
হ্যাঁ।
না সেটা স্বাভাবিক না। বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারের জন্য তার আগের আবিষ্কারগুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন হয়।
১৯০০ সাল থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র পদার্থ বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো দেখেন। প্রতিটা আবিষ্কার একটা আরেকটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এদের একটা বাদ দিয়ে আরেকটা হওয়া সম্ভব না। যেহেতু একটা আবিষ্কারের জ্ঞান ব্যবহার করে পরের আবিষ্কারটা করা হয় তাই আবিষ্কারের সিরিয়াল উল্টাপাল্টা হওয়া সম্ভব না। এ কারণেই একশ বছর আগের আবিষ্কার ১ হাজার বছর আগে হওয়া সম্ভব না।
তাছাড়া হিমু যেটা বললেন, প্রতিটি আবিষ্কারের জন্য উপযুক্ত জ্ঞান, রিসোর্স, ও অনুকূল পরিস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয়। আপনি নিশ্চয়ই বলবেন না এক হাজার বছর আগে ল্যাবরেটরিতে তেজস্ক্রিয় পর্দাথ নিয়ে কাজ করার মত রিসোর্স ছিল।
বিবর্তন বুঝেন অথচ এই সহজ জিনিসটা কেন বুঝতে পারছেন না তা বুঝতে পারছি না।
আলোর গতির এক্সপেরিমেন্ট ১০০০ বছর আগে হওয়া তো সম্ভব না। প্রত্যেকটা নতুন আবিষ্কারের পেছনে ওই বিষয়ে পুরাতন সব আবিষ্কারের জ্ঞান জড়িত।
আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত E=MC² এর কথাই ধরা যাক।
আইনস্টাইন তো এই সূত্রটা আকাশ থেকে পাননি। আমি যদি সূত্রটার ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে অ্যারিস্টটল, ডেমোক্রিটাস থেকে শুরু করতে পারি।
বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার জন্য আপাতত এরিস্টটল থেকে এক লাফে নিউটন পযর্ন্ত চলে আসি। নিউটন প্রথম ধারণা করেছিলেন আলোক কণিকা ও বস্তু কণিকা ইন্টার–কনভার্টিবল। অর্থাৎ পদার্থ ও শক্তি একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
পরবর্তিতে এমিল ড্যু শ্যাটেলি, এন্টোনি ল্যাভয়সিইয়ে জিনিসটা নিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন। তাদের পথ ধরে এসে আগুনে ঘি ঢাললেন মাইকেল ফ্যারাডে। প্রথম দিকে ফ্যারাডের কথা কেউ মানছিল না, কিন্তু যখন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল এসে দেখিয়ে দিলেন মাইকেল ফ্যারাডে সঠিক তখন আর কেউ বিরুদ্ধাচরণ করলো না। পরবর্তীতে সে দলে যোগ দিলেন জে.জে. থমসন, জর্জ সার্লে, পয়েনকেয়ার, লরেণ্টজ প্রমূখ। পূর্বসূরিদের পথ ধরে আত্মপ্রকাশ করলেন আলবার্ট আইনস্টাইন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে E=MC² এর ধারণা আইনস্টাইন স্বপ্নে পাননি। বরং কয়েক হাজার বছর ধরে কিছু ধারণা তিলে তিলে জমা হয়ে তৈরি হয়েছে।
তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে আইনস্টাইনের জন্ম না হলে কি E=MC² আসতো না?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিজ্ঞানী অটো হান, লিস মিটনার তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে পরীক্ষাগারে কাজ করে E=MC² প্রমাণ করেছিলেন। এছাড়াও ম্যানহাটন প্রজেক্টের কথা তো সবাই জানে। সুতরাং, আইনস্টাইনের জন্ম না হলেও কেউ না কেউ E=MC² আবিষ্কার করতেনই। হয়তো ১০–২০ বছর পরে করতেন। বিজ্ঞান জিনিসটাই এমন।
সুতরাং, বুঝতেই পারছেন আইনস্টাইনের জন্ম এরিস্টটলের সময়ে হলে E=MC² অন্য কেউ আবিষ্কার করতো। বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে আবিষ্কারের সময়কাল মূখ্য, আবিষ্কারক যে কেউ হতে পারেন।
ঘটনা আসলে তেমনই। হাজার বছর আগে সব আবিষ্কার করেছেন পূরুতেরা, সমাজপতিরা। যারা খাই–দাই–ঘুমাই নীতিতে জীবন কাটাইতেছিলেন।
ইতিহাসের দিকে তাকায়ে দেখেন সক্রেটিস–প্লেটো–এরিস্টোটল–হাইপেশিয়া– টলেমি–ইবনে সিনা–আল জাবির থেকে শুরু করে নিউটন পর্যন্ত সবাই গড়পড়তায় খাই–দাই–ঘুমাই শ্রেণীর সন্তান।
খাই–দাই–ঘুমাই শ্রেণীর মানুষেরাই তাদের অলস সময় পার করতে গিয়ে চিন্তা করা শুরু করে। সেই চিন্তার ফসল আজকের শিল্প–সাহিত্য–দর্শন–বিজ্ঞান।
মাত্র ৩০০ বছর আগের কথা চিন্তা করেন। মাইকেল ফ্যারাডের মত বড় মাপের বিজ্ঞানীকে রয়্যাল সোসাইটির সদস্যপদ দিতে স্যার হামফ্রে ডেভি সম্মত ছিলেন না। মাইকেল ফ্যারাডের যোগ্যতা নিয়ে স্যার হামফ্রে ডেভির মনে কোন সন্দেহ ছিল না। মাইকেল ফ্যারাডের মত একটা “সুডুলোক” স্যার হামফ্রে ডেভির সাথে একই সোসাইটির সদস্য হবে এটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না।
সাত খণ্ড রামায়ণ পড়ে আপনে বললেন, সীতা কার বাপ! আপনার পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বিবর্তন জিনিসটা সম্পর্কে আপনি ঠিক কী জানেন তা আমি জানতে চাই। উপরের মন্তব্যে আমি যে Evolutionary Tree টা এমবেড করলাম সেটা মানুষ কীভাবে জানতে পারলো?
Evolutionary Tree তে দেখা যাচ্ছে মাছের বিবর্তন থেকে সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী ও উভচর গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। আপনার যুক্তি অনুযায়ী তাহলে এই জিনিস কীভাবে জানা সম্ভব? কেউ কি গিয়ে দেখে এসেছে বলে আপনার ধারণা?
২ লাখ বছর আগে মানুষের ব্রেইন কেমন ছিল তা জানার জন্য প্রিজার্ভড স্যাম্পল থাকতে হবে কেন? লজিকটা ধরতে পারলাম না। ফসিল রেকর্ড থেকে কীভাবে ব্রেইনের আকার আকৃতি সম্পর্কে জানা সম্ভব হয় তা উপরের মন্তব্যে হিমু ব্যাখ্যা করেছে।
২ লাখ বছর আগের মানুষের আকার, আকৃতি, প্রকৃতি, মস্তিষ্কের গঠন সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে না জানলে হোমো সেপিয়েন্সের সাথে নিয়ানডারথালদের পার্থক্য করা হচ্ছে কীসের ভিত্তিতে?
পরিশেষে বলছি, আপনার যুক্তি ও প্রশ্নগুলোর ভেতর “একটি কনডমের লাগিয়া, আল্লায় বানাইলো দুনিয়া” টাইপের একটা অনুসিদ্ধান্তের সুক্ষ ইঙ্গিত আছে। আপনি যদি এমনটা অনুসিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকেন তাহলে কোন কিছু জানাটা অনর্থক।
ভাই যুদ্ধ শুরু করে দিলাম নাকি?
যাই হোক! খালি যদি মাথার খুলির ইন্টার্নাল গঠন দেখে ব্রেইনের গঠন সম্পর্কে সম্পুর্ন ধারনা পাওয়া যায়, তাহলে ঠিক আছে।
আমার তো বিবর্তন নিয়া কোন দ্বিমত নাই, আমি শুধু বলতে চাচ্ছি যে, ২ লাখ বছর আগের মানুষের ব্রেইন আর আজকের দিনের মানুষের ব্রেইনের গঠনে যথেষ্ট পার্থক্য আছে এই কারনেই এখনকার যুগে মানুষ এত অগ্রসর হয়েছে।
জাষ্ট এইটুকু আগে ঠিক মত বললে মনে হয় এত বিতর্ক হইত না স্যরি!
যুদ্ধ করতে চান কেন? আপনে কি ছাগু? ছাগু হইলে যুক্তিতর্ক-যুদ্ধটুদ্ধ কিছুই হবে না। সরাসরি পোন্দানি। আর ছাগু না হইলে যতক্ষন একই বৃত্তে ঘুরপাক না খান ততোক্ষণ তর্ক চলবে। আপাতত আপনে বৃত্তের দিকে আগায়ে গেছেন। তাই এখন আপনারে মাইক্রোফোন দিতেছি। এইবার আপনে বলেন আমরা শুনি।
বলেন দেখি টি-রেক্সের পেশির গঠন, চামড়া ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষ জানে ক্যামনে? নিশ্চয়ই বলবেন না মাংস-চামড়াসহ ফসিল পাওয়া গেছে? তাইলে বিভিন্ন মিউজিয়ামে ডাইনোসরের যে মডেলগুলো বানানো আছে সেগুলা ক্যামনে বানানো হইছে? মাংসপেশী কোনটা কেমন হবে এগুলা জানা গেছে কীভাবে?
এতোক্ষণ তো আমরা বললাম। এবার একটু আপনার কাছ থেকে শুনি।
বিবর্তন নিয়া যখন কোন দ্বিমত নাই তখন, ২ লাখ বছর আগের মানুষের ব্রেইনের আর আজকের দিনের মানুষের ব্রেইনের গঠনের পার্থক্যগুলো কি কি বলেন একটু শুনি। এভল্যুশনারি বায়োলজি ব্যবহার করে জিনিসটা একটু ব্যাখ্যা করেন দেখি। আপনার কথার পেছনের যুক্তিগুলো শুনতে আগ্রহী। আপনে মনে করলেই কোনকিছু বিজ্ঞানভিত্তিক হবে এমন তো না। তাই আপনার মনে করার পেছনে বৈজ্ঞানিক অবজারভেশনগুলো কী কী তা জানতে চাই।
কোন কথাটা মজার, কোন কথার পরে হাসতে হবে সেইটা মানুষ যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ভাষা আবিষ্কারের সময়ে শিখে ফেলেছে। এই শিক্ষার বয়স ও ১০ হাজার বছরের কম না। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে এসে দেখি শিক্ষাটা কাজে লাগতেছে না। আপনে দেখি জায়গা-বেজায়গায় ব্যাক্কলের মত ফ্যাক ফ্যাক করে হাসেন।
"২ লাখ বছর আগের মানুষের ব্রেইন আর আজকের দিনের মানুষের ব্রেইনের গঠনে যথেষ্ট পার্থক্য আছে " - এই বাক্যটার শেষে হাসার পয়েন্টটা কি বুঝাতে পারবেন?
দ্রোহী ভাই, জনতার কন্ঠস্বর হিসেবে আপনারে সালাম (আবার ব্যাক্কলের লাহান ১৬ ডা দাত বাইর কইরা হাসি দিলাম, মাইন্ড খাইয়েন না)
ভাই আমার মতামত ভুল হইতে পারে সেটা আমি মানি, বাট তার উত্তর দিতে গিয়া আপনি যে ভাবে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন তাতে তো ভয়ই লাগে, কাছে থাকলে তো মাইর এ দিবেন! ছাগু, ফাগু কত কি কইলেন (কাগু কইয়েন না প্লীজ, অইটা হাল জমনায় আরেকজনের জন্য সংরক্ষিত)
ভাল থাইকেন।
ভাইজান, ঘাবড়ায়েন না। আমি চেতি নাই।
এই জায়গায় হাসাটা বাধ্যতামূলক ছিল অথচ হাসলেন না। ঘটনা কী?
এইটা একটু ব্যাখ্যা করেন।
আপনার প্রশ্নের উত্তর গুলো বেশ ধৈর্য্যের সাথেই দিচ্ছিলাম। এই খানে এসে ধৈর্য্য কেটে গেল। পুরো লেখাতে বিবর্তন সম্পর্কে জানার লিঙ্ক দেওয়া। বাংলায় পুরো একটি বইয়ের লিঙ্ক দেওয়া। আমার এক নম্বর তথ্য সূত্রটি দেখুন। যদি জানার আগ্রহ হয় কষ্ট করুন। এইটা রকেট সাইন্স না। আর যদি ধরেই নেন যে বিবর্তন ভুয়া তাহলে আর নিজের ও আমার সময় নষ্ট না করলেও খুশি হবো। বইটা পড়েন। ফ্রি। বই পড়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে করেন, জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু না পড়ে প্রশ্ন করলে আপনার কোন প্রশ্নের জবাব না দিতে সবাইকে অনুরোধ করবো। ভালো থাকুন।
এইটা একটা দুর্দান্ত লেখা হইছে। বলতে ভুলে গেছিলাম, দেরীতে হলে বলে গেলাম।
এখনো কেউ আপনার ফাঁসির দাবী জানায় নাই?
না
মনে হয় সতর্কবানী পইরা আর আগে বাড়ার আগ্রহ দেখায় নাই
চমৎকার লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
নতুন মন্তব্য করুন