প্রথম দৃশ্যঃ
(দুইদিক থেকে দুইজন আসবে, একজন লুঙ্গিপড়া বয়স্ক, আরেকজন নায়ক!)
মফিজঃ চাচা, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
চাচাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম! এইতো বাবা ভালাই আছি। শুনলাম তুমি নাকি বিদেশ
যাইতাছ? কি কয়, কানাডা না আমেরিকা কোন দেশে বলে তুমি ইলিশগেশন না কি
লইছ!
মফিজঃ হ চাচা, ইমিগ্রেশন পাইছি। মানে অই দেশে গিয়া থাকতে পারুম, কাম করতে
পারুম!
চাচাঃ অ! তা তুমি জ্ঞানী-গুনী ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, কামতো পাইবা-ই। যাউকগা...
তো কবে যাইতাছ?
মফিজঃ এইতো চাচা সামনের সপ্তাহে! এইজন্যইতো আপ্নাগো দোয়া নিতে গ্রামে আইলাম!
চাচাঃ তা বাসে যাইবা নাকি প্লেনে? দূরতো মনে হয় অনেক। প্লেনে যাউন-ই ভালা অইব।
মফিজঃ হাহা, হ চাচা প্লেনে যামু। অত দূরে বাস যায়না।
চাচাঃ অ, তাইলে সাবধানে যাইও। প্লেনতো অনেক উপর দিয়া যায়। প্লেনের জানলার
বাইরে হাত রাইখ্যো না, রাখলে ঘড়ি খুইলা রাইখো। আমেরিকা হইল চোরের দেশ, দেখবা আকাশে ঘড়ি টান দিয়া বইছে। আর কেউ কিছু দিলে খাইওনা। যদিও বউমারে হইয়া যাইতাছ
তবু, মাইয়ামানুষ থেইকা সাবধান থাকবা। হুনছি, হেগো দেশের বেহায়া শয়তান মাইয়ারা
আমগো দেশের তাগড়া সুন্দর পোলাগুলান-রে পাইলেই বিয়া কইরা লায়। কত দেখলাম এমন!
মফিজঃ আইচ্ছা চাচা, (হাসি চাপার চেষ্টা করবে)
চাচাঃ আইচ্ছা একটা কথা, তুমি জ্ঞানী-গুণী ফরেনার লোক; আমগো খোঁজ-খবর রাইখো,
ভুইলা যাইও না। আর (কাছে এসে) আমার ছোড পোলাডারে আম্রিকা লইয়া যাইতে পারবা?
খরচ না হয় আমি দিমুনে। মনে কর, তুমি হইলা আমার আপন লোক, তাই কইতাছি।
মফিজঃ না চাচা, অইটাত এখন সম্ভব না। সামনের বার দেখুম নে কি করা যায়।
চাচাঃ আইচ্ছা বাবা আইচ্ছা। দেইখো কইলাম। আমি অখন যাই। তা বিদেশ যাওয়ার আগে
কি আদব-কায়দা ভুইলা যাইতে হইবো? সালাম করলানা?
মফিজঃ ওহ আচ্ছা...কদমবুচি করবে। আসি চাচা। (এগিয়ে যাবে)
চাচাঃ ব্যাটা মূর্খ, কিচ্ছু জানেনা, হে যাইবো আম্রিকা! ভালা কথা কইলাম, আমার পোলাডারে
লইয়া যাও...ব্যাটার দেমাগে পা পড়েনা। আরে যা যা...
২য় দৃশ্যঃ
(দুইদিক থেকে দুইজন আসবে, একজন কোটপড়া সানগ্লাস-সহ, আরেকজন নায়ক, হাতে সুটকেস!)
জব্বরঃ আরে মফিজ না! শুনলাম তুমি ইমিগ্রেশন নিয়া কানাডা যাইতাছ নাকি। তা ফ্লাইট কবে?
মফিজঃ আরে জব্বর চাচা, ওনেকদিন পর! আপ্নেরেতো ৫-৭ বছর পরে দেখলাম। কেমন আছেন? হ চাচা, কানাডা যাইতাছি, ফ্লাইট কালকা সকালে।
জব্বরঃ তা কোন এয়ারলাইনে যাইতাছ?
মফিজঃ জ্বি, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে।
জব্বরঃ এহহে, ব্রিটিশ এয়ার ত এখন ভালনা। ওইযে ইতেহাদ হইতাছে বেস্ট। আমারে গতকাল কইলেই আমি কালকার টিকেট ম্যানেজ করে দিতাম। আহহারে...আইচ্ছা, তা কোন সিটিতে যাইবা?
মফিজঃ জ্বি ক্যাল্গেরি।
জব্বরঃ ওহ, হ আমি শুনছি, ...আমার বউয়ের চাচতো ভাইয়ের সম্বন্ধির খালার নাতির কলীগের ভাই ওইখানে একবার গেছিলো। ওরে কি ঠান্ডারে...এত্ত ঠান্ডা দুনিয়ার কোথাও নাই। আসলে একদম মেরুর কাছে মাঝখানে-তো, তাই ভূগোলের কারণেই ঠান্ডা। শুনছি, আন্ডারওয়ারও বলে মিনিমাম ৩টা পরতে হয়। আর সারাক্ষণ বরফ পড়ে! তুমি বঙ্গের থেইকা অনেকগুলা জ্যাকেট আর গরম কাপড় নিও। ওইদেশের কাপড়ে হইবোনা...বঙ্গের উপর জিনিস নাই।
মফিজঃ না চাচা, আমার বন্ধুবান্ধব যা কইলো, তাতে শুনলাম ওইখানে ওয়েদার খারাপ না।
উইন্টারে এক-দুই সাপ্তাহ পর পর কি এক সিনুক বাতাস আইসা ওয়েদার ভাল কইরা দেয়!
আর চাচা, বঙ্গের কাপড় ওইখানে শীত মানেনা।
জব্বরঃ ধুর মিয়া, তোমার বন্ধুরা তোমারে মফিজ বানাইতাছে।
মফিজঃ চাচা, আমার নামতো মফিজই।
জব্বরঃ ওহ সরি সরি। শোন, আমি ত বিজনেসের জন্য প্রায়ই দুবাই-সিঙ্গাপুর যাই। আমি
জানি। আর যার কাছে শুনছি সে আমার খুব ক্লোজ আত্মীয়! একদম আমার বউয়ের চাচতো
ভাইয়ের সম্বন্ধির খালাত বোনের নাতির...
মফিজঃ চাচা, একটু বেশিই ক্লোজ আত্মীয় আর কি! (জব্বর কাশবে)
জব্বরঃ আর শোন, যাওয়ার সময় বদনা নিয়া যাইবা। ওইদেশে কিন্তু বদনা নাই।
মফিজঃ জ্বি আচ্ছা।
জব্বরঃ আইচ্ছা, বাবা তুমিত আমার আপন লোক। আমগোরে ভুলে যাইয়োনা। আর
(কাছে এসে) একটা কথা কই, তুমি মাইন্ড কইরো না...তুমি ওইখানে গিয়া আমারে একটু
স্পন্সর করতে পারবা? তুমি অনেক আপন বলেই বলতেছি...
মফিজঃ চাচা, আমি স্পন্সর করলেতো কাজ হবেনা...ক্লোজ কেউ হতে হবে।
জব্বরঃ আরে আমিতো তোমার ক্লোজই...আমারে এখন পর বানাইয়া দিতাছ! আমি তোমার
বাপের স্কুলফ্রেন্ড...
মফিজঃ না চাচা না, আসলে আপন ভাইবোন, আর বাপ-মা না হইলে স্পন্সর করা যায়না...
জব্বরঃ ওহ আচ্ছা, তাইলে আমি যাই। ভালোমত যাও...এহ, দেশে কিছু করতে না পাইরা
বিদেশ যাইতাছে, নকল কইরা ইঞ্জিনিয়ার হইছে, এখন অহংকার দেখ! এখন আর কাউরে
চিনেনা...ধুর স্বার্থপর-বেয়াদব পোলাপাইন...
৩য় দৃশ্যঃ
(দুইজন নারী, একজন বয়স্ক, আরেকজন মফিজের বউ উম্মে কুলসুম)
কুলসুমঃ কেমুন আছেন চাচী?
চাচীঃ এইতো ভালা, তা শুনলাম তোমরা বিদেশ যাইতাছ?
কুলসুমঃ হ চাচী, কালকা রওনা দিমু।
চাচীঃ হ, তোমার জামাই ইঞ্জিনিয়ার, তোমার কপাল ভালা, তুমিত বিদেশ যাইবা-ই। তয়
বিদেশ যাইতাছ, জামাইরে চোখে চোখে রাইখো কইলাম। পুরুষের মন, বিদেশে সুন্দর মাইয়া দেকলে কী আর মাথার ঠিক থাকবো। আর হুনছি হেগো লজ্জাশরম কম, পোলা দেখলেই ঢলাঢলি করে। জামাইরে কারো দিকে চাইতে দিবানা। আর পীরসাহেবের পানিপড়া লইয়া যাইবা, শনি-মঙ্গল বারে জামাইরে খাওয়াইবা, তাইলে বশে থাকবো।
কুলসুমঃ না চাচী লাগবো না, উনি ভালা মানুষ!
চাচীঃ আরে পুরুষ মাইনসের মন, কোন বিশ্বাস নাই। আমার কথা হুন। তোমার চেহারা-
সুরততো অত ভালা না। গায়ের রঙও আমার চেয়ে ময়লা। সবসময় সাইজা-গুইজা থাকবা,
গলা খালি কেন? গয়না পরবা। জামাইর লগে রঙ-ঢং করবা। তা তোমগো-ত বিয়ার
দেড় বছর হইয়া গেছেগা, পোলাপাইন হয়না কেন? তোমার জামাই ঠিকমত সোহাগ করেত?
নাকি তোমার কোন সমস্যা আছে? ডাক্তার দেখাইছ?
কুলসুমঃ না চাচী, কি কন এইসব! কারো কোন সমস্যা নাই।
চাচীঃ হুন। আমি তোমার ভালা চাই বইলাই কইতাছি। এগুলা না করলে পরে জামাই দেখবা
বিদেশী খেরেস্টান বিয়া কইরা বইছে। আর এই তাবিজটা রাখ। কোমরে পরবা...তাইলে
জামাই তোমার কথায় উঠব-তোমার কথায় বইব!
কুলসুমঃ চাচী, উনি এগুলা বিশ্বাস করেনা।
চাচীঃ তাও রাখ। দরকার হইলে চাচীর কথা মনে পড়বো। ওহ তোমারে একটা দরকার আছে। আমার মাইয়াডাতো অনেক সুন্দরী, তোমার চেয়েও অনেক ফর্সা! তয় ছমিরনতো মনে কর তোমার বইনেরই মত। বইনরে বইন না দেখলে কেডা দেখবো? আমার মাইয়াডার লাইগা একটা ইঞ্জিনিয়ার পোলা দেইখা দিওতো। তোমরা যেইখানে যাইতাছ, ওইখানে কোন ভালা পোলা থাকলে দেইখো।
কুলসুমঃ কিন্তু ছমিরন না চাচী প্রেম কইরা মন্টু দোকান্দাররে বিয়া করছে?
চাচীঃ আরে না, মিছা কথা। এগুলা খারাপ লোকের খারাপ কথা। ছমিরন এখনতো বাসায়ই
আছে।
কুলসুমঃ হুম, কিন্তু চাচী, ছমিরন কালকা আমারে কইছে, হে ঝগড়া কইরা আইয়া পড়ছে।
চাচীঃ (কাশি) আরে না। (কাছে এসে) তুমি যেই পোলা দেখবা তারে এইসব কওয়ার
দরকার নাই।
কুলসুমঃ আইচ্ছা চাচী, আগেতো যাই। দেখমু নে। তয় আমি মিছা কইতে পারুম না।
চাচীঃ অ, আইচ্ছা। তাইলে আমি যাই।
(যেতে যেতে) হেদিনের মাইয়া, বিদেশ যাইতাছে বইলা দেমাগ বাড়ছে। আমার মাইয়ার
নামে খারাপ কথা কয়। বুঝবি বুঝবি, আইজ বুঝবি না বুঝবি কাইল, বুক চাপড়াবি
পাইরবি গাইল।
[সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক!]
(চলবে?)
মন্তব্য
অবশ্য চইলবে। বিদেশ যাইতাছে বইলা দেমাগ বাড়লে তো চইলবেনা। চালাতে হবে...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হে হে...সময় পালি-ই চালাই দেবানে...
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
চলবে মানে দৌড়াবে!!!
চালাইতে কইলে দেমাগ বাড়বোনি?
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
না দেমাগ বাড়বেনা...সময় পেলেই চলে আসবে!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
শুধু চলুক না। দৌড়াক...
PS: আপনি কি শমিত কে চেনেন? গভ. ল্যাবের?
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
হা চিনি। কিছুদিন একসাথে আড্ডা দিছিলাম...
ধন্যবাদ!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
ভালা। তয় মাইনেষর মাঝে যে ভালা দিক আছে হেডাতো এক্কেরে অনুপস্থিত।
হুম তা ঠিক! তবে এগুলো আমার এবং আমার বন্ধুবান্ধবদের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা...
ভাল অভিজ্ঞতার সংখ্যা এত্ত বেশি যে তাতে একটা মহাভারতে কুলাবে না...
ধন্যবাদ
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
দারুন লেখা হয়েছে | মঞ্চস্থ করে ফেলেন |
-আতিউর
atiurrs from the gmail.com
ধন্যবাদ! এখানের ইঞ্জিনিয়ারিং এসোসিয়েশনের প্রোগ্রামে মঞ্চস্থ করার জন্যই লেখা...
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
হা হা চালান চালান জোরকদমে চালান৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আচ্ছা...অনেক ধন্যবাদ...সময় পেলেই দিয়ে দেব।
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
- বড়ই জম্পেশ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ ধূগো'দা।
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
খুব ভালো এঁকেছেন ছবিগুলো। বেশি দেমাগ ভালো না
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
জটিল হইসে। চলবনা কি কন, দৌড়ান লাগব।
===অনন্ত===
মজা পাইলাম।
আর
- জটিল লাগলো। দেমাগ আর বাড়াইয়েননা, লেখা চালান ... ... হে হে হে...
===============================================
রাজাকার ইস্যুতে
'মানবতা' মুছে ফেলো
টয়লেট টিস্যুতে
(আকতার আহমেদ)
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
নতুন মন্তব্য করুন