সকাল থেকে শুরু। এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। এলার্মটা বন্ধ করে আবার একটু এপাশ-ওপাশ, শরীর-মন আরেকটু ঘুমাতে চায়। হঠাৎ মাথায় বিদ্যুতের ছোবল... কতক্ষণ গেল? বেশি ঘুমিয়ে ফেলিনি তো? শরীর-মন দুটোকেই অনেক কষ্টে বাগ মানিয়ে-তোয়াজ করে-ঝাড়ি দিয়ে বিছানা ছাড়তে হয়। হাতে মোবাইলটা নিয়ে বাথরুমে কাজ সারতে সারতে আবার মোবাইলের কোণার দিকে চোখ, ওরে বাবা- এতক্ষণ গেল কখন! তাড়াতাড়ি দাঁত ব্রাশ করে দৌড়। মুখে কিছু গুঁজে দিয়ে (ব্রেকফাস্ট করা শরীরের জন্য খুব জরুরি) - অফিসের বাক্স-প্যাঁটরা-ল্যাপটপ-খাবার গুছিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাতেই শিরদাঁড়া দিয়ে শিহরণ! দেরি হয়ে গেল যে- আজ বাসটা নির্ঘাত মিস করবো! একবার মিস হলে ১৫ মিনিট থেকে আধা ঘন্টা দেরি হয়ে যাবে- সকালে দেরি হলে বিকালে ফিরতে হবে দেরি করে, রাতে সময় থাকবে না কিছু করার...
দরজা খুলেই বাসস্টপের উদ্দেশ্যে দৌড়! আজ ঠান্ডা পড়েছে খুব- জ্যাকেটের কলারটা উঁচু করে উত্তর মেরুর হিমেল হাওয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা। ঐযে বাস চোখের সামনে দাঁড়িয়ে- দৌড়-দৌড়। মাঝে মাঝে রুটে নতুন কোন ড্রাইভার হলে ২-১ মিনিট আগে ছেড়ে দেয়- যেখানে ১০ সেকেন্ডের জন্যও বাস মিস করাটা ভয়ানক দুঃখজনক। একটা মিস মানে সকালে দেরি, বিকালে দেরি, রাতে দেরি...
যাক, আজ চেনা ড্রাইভারটাই। গুড মর্নিং দিয়ে উঠে পড়া... মাসিক পাস বা টিকেট দেখানোর দরকার নেই। প্রতিদিন যেতে যেতে কেমন যেন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক হয়ে গেছে বাসের সবার সাথে, নতুনরা ছাড়া প্রুতিদিন এক বাসে একই মানুষগুলো আমার মতই দৌড়ে ওঠে। ড্রাইভার বা শেষ বেঞ্চির স্কুল পড়ুয়া মেয়েটা কিংবা সামনের সিটের চাইনিজ বৃদ্ধা (যে গুড মর্নিং ছাড়া হয়তো আর কোন ইংরেজি শব্দ জানে না) - সবাই একটা বন্ধনে জড়ানো। কেমন যেন অনেক চেনা- অথচ কেউ কারো নাম জানি না- কখনো কথা হয় না- সবাই একই ধরনের সংগ্রামে লিপ্ত! এই বাসের ভিতরে যেন একটা পৃথিবী, বাসের বাইরে আরেকটা। বাস ড্রাইভারকেও সময় রাখতে হয়, তাই বেশি যাত্রী উঠলে হলুদ বাতির মাঝেই দৌড়-দৌড়... সময়ে পৌঁছাতে হবে, নাহলে সকালে দেরি, বিকালে দেরি, রাতে দেরি, পরদিন দেরি...
বাস থেকে নেমে আবার দৌড়, ট্রেন ধরতে হবে। ট্রেন একটা মিস হলে পাঁচ মিনিট দেরি অন্তত... মাঝে মাঝে চোখের সামনে দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়! আক্ষেপে-দুঃখে মনে হয় -ইস, স্টেশনের সিঁড়িটা যদি দ্রুত নামতে পারতাম, যদি আর পাঁচ সেকেন্ড আগে দৌড় শুরু করতাম, মাঝে যদি ঔ হোমলেসটা এসে কিছু চেঞ্জ না চাইতো! মাঝে মাঝে একটু হাঁটতে ইচ্ছে হয়- দৌড়াতে মন চায় না। চলে যাক ট্রেন, হোকনা একটু দেরি... আমিওতো মানুষ! আমারও একটু সময় চাই... হাঁটার জন্য! স্টেশনের শত শত মানুষের ভিড়, সবাই লক্ষ্যহীন কিন্তু জীবিকার তাগিদে দৌড়াচ্ছে। কী লাভ এত দৌড়িয়ে! স্কুলের বাচ্চাগুলো, ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা, কিংবা অফিস-কর্মক্ষেত্রগামী - কারোই এই সকালটা উপভোগের এক সেকেন্ডও সময় নেই। সবাই যুদ্ধে যাচ্ছে- আটপৌরে জীবনের যুদ্ধে!
দৌড়ে ট্রেনে গাদাগাদি করে ঢুকে যেতে হয়, জোরে শ্বাস নিলেও আরেকজনের জায়গা ভাগে কম পড়বে। সবার শরীর সবার শরীরে লাগানো? মন ও কী তাই? নাহ মনে হয়! এখানে আর আগের মত আত্মীয়তা নেই হয়তো। অনেকেই অচেনা। দাঁড়ানোর জায়গার জন্য একটু যুদ্ধ করতে হয়... ট্রেন চলতে শুরু করলেই সবাই ব্যস্ত হয়ে যায় হাতের মোবাইলে! এখন সবাই ব্যস্ত- কারওই কারও দিকে তাকানোর সময় নেই, ইচ্ছাও নেই। নাকি অপাংক্তেয় নিজেকেই পৃথিবী থেকে ঢেকে রেখে নিজেকে একটু হলেও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা? আমার ইমেইল এসেছে, ফেসবুকে মেসেজ, আমার বন্ধুদের দেখি-অফিসের মেইলগুলো এগিয়ে রাখি- নাহয় খবরটা পড়ে নিই... অথবা ক্যান্ডি ক্রাশের রংগুলো দেখে নিজের রঙহীন জীবনটা ভুলে থাকি...
এরমাঝেই ট্রেন পরের স্টেশনে থামে, ভেতরে চাপো, ভেতরে চাপো- জায়গা নেই, তবু একজনকে হলেও জায়গা দাও- এতগুলো লোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সবার গন্তব্য সেই এক- যুদ্ধ! জানলা দিয়ে দেখা যাওয়া বাইরের লোকগুলোর মন পড়ার চেষ্টা করি- ঐ মোটা লোকটা জায়গা কম নিলে আমি ঢুকতে পারতাম, কিংবা ঐযে ঐ দুইজনের মাঝে অন্তত আধজনের সমান জায়গা... ঐ লোকটা একটু সরে দাঁড়ালে আমি ঢুকতে পারতাম! যারা ট্রেনটা মিস করলো তাদের জন্য মায়া হয়- ট্রানজিট সিস্টেমকে গালি দিয়ে আবার মোবাইলে মুখ গুঁজি।
আমার নামার স্টেশনে আসা মাত্রই নেমে পড়তে হয়- কী হতো যদি না নেমে এই ট্রেন ধরে চলে যাই শহরের শেষ প্রান্তে? ভাবালুতার সময় নেই, দৌড়, দৌড়... অফিসে ঢুকেই বসের সাথে বা অন্যদের সাথে অর্থহীন শুভেচ্ছা বিনিময়। আজকের ওয়েদার কিংবা কিছু একটা নিয়ে আধা মিনিট কথা বলে নিজের ডেস্কে বসে লগ-ইন কয়রা কম্পিউটারে। এরপর কাজ করা, কিংবা কাজের ভান করা... ভান করারাই অনেক সময় এগিয়ে যায়, যুদ্ধে সবই শাস্ত্রসম্মত! যার যেটা শক্তি সেই নিয়েই যুদ্ধ করতে হয়- যদিও যুদ্ধ করতে হয়তো অনেকেরই ভাল লাগে না। টিকে থাকাই জীবনের চরম সার্থকতা- বেঁচে থাকাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য...এর বাইরে সবই বিলাসিতা...
কাজে মুখ গুঁজেও দৌড়, দৌড়... আগে আগে কাজ শেষ করতে হবে। তাহলে হয়তো একটু ভাল কিছু হবে জীবনে- হয়তো! এই "হয়তো" মানেই জীবন...
আট ঘন্টার প্রতিদিনের যুদ্ধ শেষ করে এবার বাড়ি ফেরার পালা... আবার দৌড়। আরেক যুদ্ধ! সবাই আগে আগে বাড়ি যেতে চায়, ঠিক একই সময়ে... যেভাবেই হোক ট্রেনটা ধরতে হবে, নাহলে ফিরতে দেরি, রাতে দেরি, পরদিন দেরি... সময়ের বড় অভাব এই আটপৌরে জীবনে!
আবার সেই ট্রেনে গাদাগাদি, আধজন মানুষের জায়গায় একজনের অবস্থান, ট্রেন থেকে নেমে বাসের জন্য দৌড়... বাস থেকে নেমে বাসায় ঢুকেই আবার দৌড়- খাওয়া, গোসল, রান্না, টিফিন গুছানো, কালকের জন্য প্ল্যানিং...হয়তোবা একটু খবর দেখা টিভিতে...সময় নেই, শুয়ে পড়তে হবে আগে আগে, নাহলে কাল দেরি হয়ে যাবে! কাল সকাল থেকেই আবার দৌড়...
মন্তব্য
বাসে পরিচিত ড্রাইভারের ব্যাপারটা ডাবলিনে থাকতে আমার সাথে প্রায়ই হতো। দেখা যেত একই রুটে ড্রাইভাররা একই থাকতো। ফলে মাসের পর মাস চলাচল করতে করতে পরিচয়ের বলয়টা অনেক প্রসারিত হয়ে যেত।
একটা গল্প শেয়ার করি। আমি তখন থাকতাম আয়ারল্যান্ডের রাজধানী শহর ডাবলিনের বাহিরের দিকে ব্যালিকুলেন বলে একটা অংশে। খুবই ছিমছাম রেসিডেন্সিয়াল এলাকা। আসেপাশে মানুষ দেখা যেত না তেমন একটা। যাতায়াতের জন্যে বাস ব্যবহার করতে হতো কারণ ট্রেন বা অন্য কোন মাধ্যম ছিল না। সেই বাসও ঘণ্টায় মাত্র দুটা। একবার মিস হলে ছাড়া ত্রিশ মিনিট বসে থাকা। তবে বাসটা ছাড়তো আমার স্টপের ঠিক আগের স্টপ থেকে। তাই সময় দেখে বের হলে সাধারণত বাস ধরতে সমস্যা হতো না।
একদিন আমি বাসা থেকে দৌড়ে বাস ধরতে এসেছি। বের হতে দেরি হয়ে যাওয়াতে সন্দেহ হচ্ছিল বাস হয়তো পাবো না। স্টপে এসে দেখি জনমানব শূণ্য। বুঝতে পারি বাসটা মিস করেছি। প্রচণ্ড রাগ আর হতাশা নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। সামনে একটা জাংশন ছিল। ওখানে আরেকটা বাস আসে। ভাবছিলাম গিয়ে দেখি ঐটা ধরা যায় কিনা। দেড় দুইশ ফুট হেঁটে এসেছি। হঠাৎ শুনি কে যেন হর্ন দিচ্ছে। ঘুরে তাকিয়ে দেখি বাস! ঐদিন আসলে আমি বাস মিস করি নি, বরং বাসটাই দেরি করে এসেছিল। পাশ দিয়ে যাবার সময় ড্রাইভার আমাকে দেখে চিনতে পেরে মাঝ রাস্তায় বাস থামিয়ে হর্ন দিচ্ছিল। এটা অবিশ্বাস্য রকমের ঘটনা। এভাবে বাস কখনই ওরা থামায় না। তবু নির্জন রাস্তায় বাস থামিয়ে সেদিন ড্রাইভার আমাকে তুলে নিয়েছিল।
ঐ ড্রাইভারের সাথে পরবর্তিতে খুবই ভালো সম্পর্ক হয়। তাকে কখনও মাসিক বাস-পাস দেখাতে হতো না। অতটুকু বিশ্বাস আমার প্রতি তার তৈরি হয়েই গিয়েছিল। আমিও বিশ্বাসটাকে সম্মান করার চেষ্টা করেছি সব সময়। আজ এই লেখাটা পড়ে ঐ স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলো।
টুইটার
আমাদের এখানে ড্রাইভাররা বেশিরভাগই খুব হেল্পফুল। যখন প্রথম আসি রাস্তার মাঝে বাস থামিয়ে জিজ্ঞেস করতাম কীভাবে অমুক জায়গায় যাবো- ইকোনমি ভাল ছিল। সবাই অনেক ফুরফুরে থাকতো। ড্রাইভাররা অনেক হেল্প করতো। রেগুলার বাসে সবসময়ই একটা আত্মীয়তা বোধ করতাম।
অনেকদিন বাসে চড়া হয়নি। ইউনিভার্সিটিতে হেঁটে যেতাম, পরের বাসাটায় ট্রেন স্টেশনের কাছে। গত কয়েকমাস বাস ধরছি। আবার সেই আত্মীয়তার অনুভূতি। ফেরার সময় অনেক ক্ষেত্রে স্টপ বাটনে চাপ দিতে ভুলে গেলেও দেখি চেনা ড্রাইভার নামিয়ে দেয়। একজন আমাকে ঠিক বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েছিল- স্টপ থেকে এক মিনিট সামনে, সে খেয়াল করে রেখেছিল আমি কোথায় যাই। আরেকবার এক ভয়ানক শীতের ভোরে দেরি হয়ে গেল ভেবে দিলাম দৌড়, হঠাৎ দেখি আমার পাশে এসে বাসটা থেমে গেল। অবাক হয়ে তাকাতেই, আধা চেনা ড্রাইভার হাসি দিয়ে বললো, উঠে আসো, দৌড়াতে হবে না। আমি আধা মিনিট লেইট
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আপনার এই আটপৌরে জীবনে "স্বস্তি" কোথায়?
লেখা ভালো লেগেছে। আটপৌরে জীবন এগিয়ে চলুক এভাবেই ঝঞ্জা ছাড়া।
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
স্বস্তি ঘুমায় নাইলে নানা-নানীর সাথে দুষ্টামি করে। জীবন মানেই দৌড়। মাঝে মাঝে খারাপ সময়। কালে ভদ্রে একটু হাসির দেখা
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হ
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
অনেকদিন পরে লিখলেন!
আমাদের এখন জীবন কিছুটা স্থবির। অনেকদিন ক্লাস নাই হরতালের কারণে, থাকলেও সাহস করে বাসে উঠতে ভয় লাগে। সামান্য সামর্থ থাকায় সিএনজি নিয়ে যেতে পারছি এখন বেশি দূরের যায়গায় যেতে হলে। বাসের মানুষের চোখে মুখে যে কি আতঙ্ক। অনেক বাসের জানালায় এখন নতুন কাচ লাগানো। প্রত্যেকটা মানুষ জানালার দিকে তাকায়ে থাকে। কয়েকটা জানালা অল্প ফাঁক করা বাতাস চলাচলের জন্যে। সেখানেও সতর্ক দৃষ্টি। বাসের কন্ডাক্টর যে বেশিরভাগ সময় পা-দানির ওপর পা রেখে ঝুলে থাকে, সেও অনেক বাসেই দেখলাম দরজা চাপানো, দরজার কোন ভাঙ্গা অংশ দিয়ে অল্প মুখ বের করে রেখেছে।
জীবন যুদ্ধের দৌড় সবাইকেই দৌড়াতে হয়, কিন্তু এই মানুষগুলা যে দৌড় দৌড়াচ্ছে এরকম দৌড় কারও দৌড়ানোর কথা ছিল না।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হ্যাঁ, আমাদের বিলাসী জীবনের যে দৌড় আর জীবন বাঁচানোর জন্য যে দৌড়- অনেক পার্থক্য! দেশের প্রতিটা মানুষ জীবন যুদ্ধের পাশাপাশি জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই করে, কিন্তু এখনকার ইন্টেনসিটি অনেক অনেক অনেক তীব্র-অনেক কষ্টদায়ক-অনেক ভীতিকর।
সেখান থেকে একটু ভুলে থাকার জন্যই এই লেখাটা।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আমাদের জীবন আটকে গেছে গনতন্ত্র নামক মানুষ পুড়িয়ে মারার ফাঁদে। সাপ্তাহ শেষে বাড়ি ফিরতে পারি না, প্রাণের বইমেলায় যেতে পারিনা, আমাদের চারিদিকে এখন ভয় আর ভয়। আগুনে নিজে পুড়ে মরার ভয় কিংবা কাছের মানুষের জন্যে সেই ভয়। ভয় অামাদেরকে সর্বক্ষন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে অনেকটা আপনার জীবনের ঘরে সীমাহীন দৌড়ের মতন। ভালোথাকুন, নিয়মিত লিখুন। (এই পোষ্ট পড়ার আগেও আপনার পুরাতন লেখাই পড়ছিলাম)
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
ধন্যবাদ!
হ্যাঁ সেটাই। দেশে বাবা-ভাই-মামা যতক্ষণ বাসায় না ফেরে মায়ের অস্থিরতা-ভয়- প্রতিটা মানুষ নিজের জীবনকে কিছু অমানুষ-বেজন্মার হাতে সঁপে দিয়ে চলছে
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
দৌড়তে দৌড়তে কখন যে লম্বা পথ পার হয়ে গেছেন - নাঃ, আজ নয়, সেই দিন এসে গেলে সেদিন আবার আপনি এসে পড়ে যাবেন আপনার এই লেখা আর হয়ত, আমার এই মন্তব্য। দৌড় জারি থাকুক, দৌড়-ই জীবন যে!
কিন্তু যে মানুষগুলো বাসে পুড়ে মরার আতঙ্ক নিয়ে জীবনের দৌড়ে নিয়ত সামিল হতে বাধ্য হচ্ছে, তাদের দৌড়ের ভয়াবহতা আমার কল্পনারও অতীত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
- হ্যাঁ!
লম্বা পথ পার হওয়াই হবে, লক্ষ্যহীন!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
সবার গন্তব্য সেই এক- যুদ্ধ! ভালো লাগল
দেবদ্যুতি
ধন্যবাদ
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
খুব ভোরে উঠে দৌড় শুরু হয় আমার ।এই তাড়াতাড়ি, এটা ওটা করা ,বাস চলে আসবে । রাস্তায় নেমে ১০০ -৫০০ মিটারের দৌড় দেই।কখনো কখনেআ আমিও বাস মিস করি , তখন কি যে খারাপ লাগে । বেশী দেরি তো নয় শুধু ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ।
৮ ঘন্টা ডিউটি ! আমার ক্ষেত্রে অকল্পনীয় ব্যপার । পাক্কা ১০.৩০ ঘন্টা ডিউটি করে দেন আরো কাজ থাকলে বাসায় নিয়ে আস।
---------
রাধাকান্ত
ডিউটি নামেই (কাগজে-কলমে) আট ঘন্টা, সকাল থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরতে আধা দিন! মাঝে মাঝে বাড়ি নিয়ে এসেও পৌনে দিনের উপর পার হয়ে যায়!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
প্রত্যেক জানালার পর্দা সরিয়ে,
আমি বাড়িয়ে দিই মুখ -
আমি দেখি
একটা দিন, আরেকটা দিনের মতো
আরেকটা দিন, আরেকটা দিনের মতো
একইরকম, অস্থিসার, ফাঁকা
-----------------------------------------------------
এখন আমাদের প্রতিদিন সকালে কাজে যাবার আর সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার জীবনটাতে ব্যাপক থ্রিল, টানটান উত্তেজনা, রোমাঞ্চকর শিহরণ যুক্ত হয়েছে। বাসে যে জন জানালার পাশে বসেন গরমের চোটে তিনি জানালার কাচ খুলতে গেলে আমরা বাকি সবাই হই হই করে উঠি (যদিও বোমা কাচ ভেঙে ভেদ করেই ঢোকে বা লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে ভেঙেই পেট্রোল ঢালা হয়)। বাসে কেউ ভুলে ব্যাগ ফেলে গেলে বাকি সবাই তাকে ডাকার আগে নিজেরা জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে নামি (ফেলে যাওয়া ব্যাগ মানেই বোমার ব্যাগ)। বাসের সামনে কোন জটলা দেখলে সবাই সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়াই (ভাঙচুর নাকি আগুন লাগানো চলছে?)। বাসে কোন অস্বাভাবিক গন্ধ (বিশেষতঃ পেট্রোলের বা পোড়া গন্ধ) পেলে সবাই সগর্জনে ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলি (আগুন কি তবে লাগিয়েই ফেলেছে?)। যারা পাঁচ টাকা বাস ভাড়ার পথ আশি টাকা রিক্শা ভাড়া দিয়ে যান তাদের থ্রিলও কম না। গলির ভেতর থেকে কংক্রিটের চাকলা ছুঁড়ে মারা, পাশ দিয়ে যাওয়া মোটর সাইকেল থেকে ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যাওয়া (সাথে নিজের রাস্তায় ছিটকে পড়ে হেড ইনজুরি ঘটানো) এসব তো আছেই তার সাথে এখন রিক্শায় আগুন দেয়াও ঘটছে। সিএনজি নামক মরণফাঁদে যারা উঠতে বাধ্য হন তাদের থ্রিলের কথা লেখার মতো হিম্মত আমার নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পান্ডব দা, প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মুহূর্ত বেঁচে থাকাটাই মিরাকল হয়ে গেছে দেশে! সেই রূঢ় বাস্তবতা ভুলে থাকার চেষ্টা
দেশের কারো কথাই লেখার মত হিম্মত আমার নেই!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
চরৈবেতি - চরৈবেতি, চল, অগ্রসর হও। তীব্রতা ও ক্রমাগতিতেই জীবনের সৌন্দর্য ও সার্থকতা। জীবনের মূলমন্ত্রওতো তাই।
নদী যেমন উৎস হতে মোহনা পর্যন্ত নিজস্ব গতিতে বয়ে চলে, এই বয়েচলার নামইতো জীবন।
দৌড়ানোই জীবন। নদীর তাও লক্ষ্য মোহনা, মানুষের দৌড়ের লক্ষ্য কী? মৃত্যুকে আলিঙ্গণ?
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
"এ জগৎ হচ্ছে পুস্পাচ্ছাদিত একটি শবদেহ । আর এর যাত্রাপথ হচ্ছে, সুতিকাগার থেকে শ্মশানঘাট।" বলেছেন, ভারতবর্ষের সাধক মহাপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
একটাই জীবন। দৌড়াচ্ছি কেবল সেটাকে পাকড়াও করতে। কী রঙের পোশাক সে গায় দেয় প্রতিদিন, কী সুরে গান গায় দেখার সময় নেই। দৌড়েই গেলাম শুধু, সেটাকে ছাড়িয়ে সামনে যেতে পারলাম না।
অনেকদিন পরে লিখলেন ভাইয়া
মাঝে মাঝে মনে হয় একটু বিরাম নিই, কিন্তু জীবন তো বিরাম দেয় না! জীবন জানেই না বিরাম মানে কী!
হ্যাঁ, প্রায় বছরখানেক
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
হয়রান লাগে মাঝে মাঝে
লেখা ভালো লেগেছে।
ক্লান্ত লাগে আসলেই! সেই হাঁটতে শেখার পর থেকেই দৌড়!
ধন্যবাদ!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
চলছে দৌড়। হোঁচট খাই, আবার দৌড়াই। চলছেই। ভাল লেগেছে। যখন ক্লান্ত লাগে সচলে এসে জিরিয়ে নিবেন। শুভকামনা।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
দৌড়ই জীবন!
জিরানোর সময় কী জীবন দেয়?
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আপনার কিছু বোমারু ছড়া/কবিতা পড়েছি, গদ্য এই প্রথম পড়লেম ভাইয়া।
খুব ভালো লিখেন আপনি।
সবচে' বড় কথা এতদিন পরে লিখছেন, মাত্র দুটো টাইপো চোখে পড়েছে সে জন্য বাড়তি
অবশ্য 'ইস' ও সঠিকই মনে হয়...তবে 'প্রুতিদিন' কখনই না, ঠিক না বলুন?
একটা বুদ্ধি দেই, সেরকম ভয়ানক বিপদ-আপদের সম্ভাবনা না থাকলে একদিন চোখ বুঁজে নিজের স্টেশনে না
নেমে চলেই যান না এক্কেবারে লাস্ট স্টপেজে। জীবন ধারণের একঘেয়েমির বৃত্তকেটে একদিন নইলে জীবনকে যাপনই করা হলো কিছু ঘন্টার জন্য। এমন অভিজ্ঞতা হেলায় হারানোর জন্য একসময় আর পস্তাবেন না তবে, প্রোমিজ!
আমরা বেশির ভাগই তো জীবন ধারণ করি, যাপন করতে পারি ক'জনে?
তবে এই বুদ্ধি নিয়ে নেমেটেমে যদি কোনো বিপদে পড়তে হয় তবে কিন্তু আমি কিচ্ছুটি জানিনে বাপু
আমি তো আব্জাব লিখি, ছড়া/কবিতা খুবই কম।
বছর খানেক পর লিখেছি, সত্যি সত্যি বাসে-ট্রেনে যেতে যেতে মনে হলো ভাবনাগুলো লিখে ফেলি! ডেস্কে বসে দশ মিনিটে নামিয়ে আবার দৌড় শুরু।
দেখেছি বানানগুলো লেখার সময়ই। ইচ্ছা করেই রেখে দিয়েছি, থাক! মায়া লাগলো প্রুতিদিনের প্রতিঃ(থাকুক না!
থ্যাংকু অনেক আরো হয়তো আছে-
- ভাল্লাগলো কথাটা। তবে কে জানে, যারা যাপন করে তারাও হয়তো ধারণই করে কিংবা উল্টোটা- জীবনের কাছে বেশি কিছু চাইতে নেই মনে হয়!
ভাল থাকবেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
বলিহারি অজুহাত! ভুল্ভানামের প্রতিও নাকি মায়া লাগে মানুষের! হিহিহি মজা পেলেম।
আচ্ছা স্বস্তি'র মত একটা ফুটফুটে পরী(মাশাল্লা! একবার এক বাচ্চাকে দেখে মাশাল্লা বলিনি বলে কথা শুনতে হইছিল জানেন!)র বাবার নিক এখনো কেন স্বপ্নহারা কেন স্বপ্নকাড়া না রে? নিচের সিগনেচারটাও বদলানোর সময় হয়েছে কিন্তু!
স্বস্তি ফুপ্পিটার জন্য অনেককক আদর থাকলো ভাইয়া।
আপনি-আপনারাও অনেক ভালো থাকবেন।
থ্যাংকু
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
দিদি, ২০১১তে পোস্টানো আমার একটা লেখার অংশবিশেষ, "এভাবে কি সত্যিই বেঁচে থাকা যায়? জীবনধারন করা যায় অবশ্য। তোমাদের কাছে এই প্রৌঢ়ের আকুল আবেদন, আমাকে বাঁচতে দাও। ফিরিয়ে দাও আমাকে আমার পৃথিবী।"
আমার ধারনা আসলে মানুষের জীবনের কোন উদ্দেশ্য-লক্ষ্য নেই, বেঁচে থাকাটাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য-লক্ষ্য- সেটাই সার্থকতা
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
- এটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে......খুব নির্লজ্জ বাস্তবতা....মিল গেল। সবাই আমরা জীবনের দৌড়ে ব্যস্ত....দৌড়াতে দৌড়াতে এরকম অস্থির এলোমেলো চিন্তাগুলো ঝড় বইয়ে দেয় অন্তরের অন্দরে!!!!
আর হ্যাঁ আপনিও মানুষ.......তাই যদি অনিয়ম করতে মন চায় তবে একদিন মনের চাওয়া সবচেয়ে কাঙ্খিত ব্যত্যয়টাই ঘটিয়ে ফেলুন- জীবনের অর্থটা কিছুটা হলেও স্বস্তিময় মনে হবে- জীবন থেকেই বলছি....করেই দেখুন
ধন্যবাদ!
অনিয়মতো প্রতিটা মুহূর্তেই করি, অনিয়মটাই নিয়ম
আমার জীবন আসলেই পুরোপুরি স্বস্তিময় আমার মেয়ের নাম, স্বস্তি
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
নতুন মন্তব্য করুন