যোগ্যতা...
==============
রেজা সাহেব আজ খুব খুশি।
একটি প্রথম সারির কর্পোরেট অফিসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। মানুষ হিসাবে তিনি বেশ হাসিখুশি- অধীনস্থদের মাঝে খুবই জনপ্রিয়। সবাই জানে মধ্যবয়স পার হয়ে যাওয়া এই লোকটি কাজপাগল- নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন এই শাখাটা। অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে এই শাখাটি গিয়েছে। কিন্তু গত এক বছরে এই শাখাটি যেভাবে পারফর্ম করেছে সেটা অবিশ্বাস্য। এর পেছনে যেমন সবার পরিশ্রম আছে তেমনি আছে একটি মেয়ের অসাধারণ ডেডিকেশন, অক্লান্ত খাটুনি, আর বুদ্ধিদীপ্ত কিছু ডিসিশন।
বছর দেড়েক আগে মেয়েটি যখন জয়েন করে, তখন তিনি দ্বিধান্বিত ছিলেন। অনেক বেশী যোগ্যতাসম্পন্নদের বাদ দিয়ে তিনি মোটামুটি রিস্ক নিয়েই এই মিষ্টি মেয়েটিকে নিয়েছিলেন- ইন্টারভিউতে তার জড়তাহীন উপস্থাপনা আর বুদ্ধির ঝলক দেখে মনে হয়েছিল, একাডেমিক পারফরমেন্সের চেয়ে বা গৎবাঁধা পথে হাঁটার অভিজ্ঞতার চেয়ে প্রাণময় একজনের উপস্থিতি বেশী দরকারি। প্রথম ছয় মাস গিয়েছে মেয়েটির কাজ শিখতে- এরপর যেন ম্যাজিক! পুরো ব্রাঞ্চের চেহারা পালটে দিয়েছে শাওন নামের মেয়েটি!
এমন অনেক দিন গিয়েছে মেয়েটি দুপুরে খাবার সময় পায়নি, তিনি অর্ডার দিয়ে খাবার আনিয়ে দিয়েছেন। সন্ধ্যার পরও মেয়েটি থাকতে দ্বিধা করেনি। মনোযোগী উপযুক্ত ছাত্রী পেলে যেমন হয় আর কি! আস্তে আস্তে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি উজাড় করে নিজের মেয়ের মত ভেবে এই মেয়েটিকে শিখিয়েছেন- তিনি নিশ্চিত জানেন, এই মেয়েটি অনেক দূর যাবে! আজ তিনি খুশি- কারণ, তিনি হেড অফিস থেকে এই মেয়েটির প্রমোশনের ব্যবস্থা করিয়ে এনেছেন- দুই ধাপ টপকিয়ে তাকে সহকারী ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের পোস্টটি আজ অফার করেছেন... যোগ্যতা আর পরিশ্রমের মূল্য পাচ্ছে মেয়েটি।
শাওন এই চাকরিটা করে খুব আনন্দ পায়। রেজা সাহেবের মত বস পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আগের অফিসে বস ছিল একটা ইতর... থাক, পুরাতন কথা। কিন্তু গত দেড় বছরে সে অনেক কিছু শিখেছে। রেজা সাহেব তাকে মেয়ের মতই দেখেন। সে-ও রেজা সাহেবকে বাবার মতই শ্রদ্ধা করে- মানুষটা খুবই ভাল। তার অনেক ভুল ক্ষমা করে দিয়ে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে- যখনই দরকার পড়েছে রেজা সাহেবের রুমে গিয়ে চিনে নিয়েছে এই ব্যবসার হাজারো গলি...
তার এত বড় প্রমোশনের খবরটি প্রথমেই পরিবারের সবাইকে জানিয়েছে সে। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না- এত অল্প সময়ে!! কলিগদের রেজা সাহেবই জানিয়ে দিয়েছেন। একটু পর লাঞ্চ, তাই শাওন কলিগদের জানালো যে আজকের লাঞ্চ সে খাওয়াবে সবাইকে। অর্ডার করে দিয়েছে- দুইজন পিয়ন গিয়েছে সবার জন্য নিয়ে আসতে।
বাথরুমে যাওয়ার পথে সে ভাবছিল, এই কঠিন প্রতিযোগিতাময় অফিসে সবাই হয়তো খুশি হবে না... কিন্তু এটাই জীবন। অনেকের সাথেই ভাল সম্পর্ক তার। ফারজানা আপা আর নাদিয়া এই দুইজনের সাথে তার সম্পর্ক খুব ভাল। ফারজানা আপার অভিজ্ঞতা অনেক। ফারজানা সে জয়েন করার কিছুদিন আগে এই অফিসে জয়েন করেছে, প্রথম দিকে তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছে শাওন।
খালিদ সাহেব হয়তো খুশি হবেন না, কারণ তিনি ছিলেন সহকারী ম্যানেজার হবার নেক্সট দাবীদার। কিন্তু তিনি রিসেন্টলি বেশ কিছু ভুল করেছেন, কিছু লোকসান হয়েছে সেই ভুলে- হয়তো সেকারণেই তিনি পাননি এবার। সে ঠিক করেছে, সবার সাথে সম্পর্কগুলো আরো স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে- দেখা যাক।
নিজের রুমে যাওয়ার পথে হঠাৎ দেখলো, কিউবিকলের একদিকে অফিসের খালিদ সাহেব, ফারজানা আপা, নাদিয়া, রাজু ভাই মিলে কথা বলছে। একটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ ফারজানা আপার কথা কানে এল, "ছিঃ ছিঃ ছিঃ- রেজা সাহেব এই বয়সে এটা কী করলেন! এতদিন ধরে দিন নেই রাত নেই মেয়েটার সাথে ফষ্টিনষ্টি করেছেন, তাই বলে সেই ফষ্টিনষ্টিতে গলে গিয়ে এতবড় ডিসিশন!! একটা তো লিমিট আছে!"
খালিদ সাহেব বলছেন, "সেটাই ভাবী। কাজ-কর্মের দরকার কী! আমাকে বাদ দিয়ে এই মেয়েকেই প্রমোশন দিয়ে দিল! মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্মালে এইসব বুড়োদের কাছ থেকে কতকিছু খসায়ে নিতে পারতাম! ঠিকমত একটু খুশি করে দিলেই হতো।"
ফারজানা বলছেন, "শুধু মেয়ে হলেই হবে না, আমিওতো মেয়ে। ফিগার মেইনটেইন করতে হয়, রঙঢং করতে হয়, সুন্দর হইতে হয়।"
রাজু ভাই বললেন, "আরে খালি সুন্দর হইলেই হয় না, নাদিয়া আপাও তো কত সুন্দর। গত এক বছর ধরেই দেখছি, যখন তখন বসের রুমে ঢুকে যাচ্ছে, সন্ধ্যায়ও কাজ করে- এইসব কী আমরা বুঝি না।"
নাদিয়া বলছে, "আরে রাজু ভাই বুঝলেন না, এলেম থাকতে হয়, কীভাবে বুড়াদের গলায় ঝুলতে হয় এইসব তো আমরা শিখিনি- তাই এই অবস্থা। ছিঃ- চরিত্র বলেও তো একটা ব্যাপার আছে! আরে সারাদিন কাজ দেখাইতে আমিও পারি..."
এই কথোপকথন শুনতে শুনতে শাওনের পায়ের নিচের মাটি যেন দুলে উঠলো, চোখ বেয়ে নামলো জলের ধারা... হু হু করে কাঁদতে থাকে শাওন... নিজেকে বড় বেশী অপবিত্র মনে হতে থাকে, একটু আগের আনন্দের দুনিয়াটা কাঁচের ঘরের মত ধসে যায়...
রুমের জানালায় একটা কাক ডাকতে থাকে...
সুখীর অপেক্ষা...
===============
সুখী একটা চুপচাপ সাদাসিদে মেয়ে। আরও একশটা সাধারণ মেয়ের মতই সে। বাবা-মা নাম রেখেছে- সুখী। হয়তো আশা ছিল মেয়ে জীবনে সুখী হবে... এখনো বিয়ে হয়নি, কথাবার্তা চলছে- কিন্তু একাকী জীবনে মোটামুটি সে সুখীই এখন পর্যন্ত। শুধু নিজের শরীরটা নিয়েই সে সুখী না... খালি কষ্ট... খালি কষ্ট...সারাক্ষণ কান্না চাপা কষ্ট...
বয়সন্ধি পার হবার পর থেকে তার জীবনের সব অ-সুখ, সব কষ্ট শুধু তার শরীরটা নিয়ে। প্রতিদিন প্রার্থনা করে, খোদা, আমাকে একটা সলুশন দাও... ঐশী কোন সলুশন আসে না... এভাবে সে বাইরে কোথাও যেতে পারে না, তার কোন বন্ধু নেই তেমন... কারণ, তার সেই শরীর।
কোন এক অজানা কারণে, তার বক্ষদেশ শরীরের তুলনায় একটু বড়। তাই সে যেখানে যায়, যাই করে, যার সাথেই কথা বলে- সবার দৃষ্টি থাকে তার বুকের দিকে। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে সব ছেলেগুলো তাকে প্রতিনিয়ত জ্বালিয়েছে, সে আক্ষরিক অর্থেই কোথাও যেতে পারে না- সব পুরুষই যেন হাঁ করে গিলতে থাকে, চাটতে থাকে... এখন পর্যন্ত একজন পুরুষও সে দেখেনি যে তার মুখের দিকে তাকিয়েছে। পাশ করে বের হবার পর যতগুলো ইন্টারভিউ দিয়েছে, সবগুলোতে বোর্ডের উল্টোদিকের লোকগুলো শুধু তার বুকের দিয়েই তাকিয়ে ছিল... অফার পাওয়া সত্ত্বেও তাই সে জয়েন করেনি!
যে কাপড়ই গায়ে থাকুক না কেন, এই দৃষ্টিটা সে সবার কাছ থেকে পাবেই। সেই চোখে থাকে কামনা-লোলুপতা! তার মনে হতে থাকে, পারলে সে খুলে দেখিয়ে দিত... নে দেখ, কত দেখবি... বেজন্মার দল! ভিড়ের মাঝে গেলে হঠাৎ যেন হাতের ছোঁয়া পায় অবধারিতভাবে... পারভার্ট সব মানুষের ভিড়ে দম বন্ধ হয়ে আসে। সবসময় ঘিনঘিন করতে থাকে শরীর-মন।
স্কুল-কলেজে-ভার্সিটিতে তার সম্পর্কে অনেক চালু গল্প তার কানে এসেছে। তার বান্ধবীরা কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেছে, সে কত বয়স থেকে পিল খায়?
কেউ কেউ জিজ্ঞেসে করেছে, সে এখন পর্যন্ত কতজনের সাথে করেছে? তার বয়ফ্রেন্ডদের তারা দেখে না কেন?
আবার কেউ কেউ, কবে অ্যাবরশন করিয়েছে? কয়বার?
- এগুলো ছাড়া নাকি বুক বড় হওয়া সম্ভব না! আত্মীয়রাও একই কথা বলে।
প্রতিনিয়ত কমেন্ট পাস-টিটকারি পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সে। কিন্তু মাঝে মাঝে আর নিতে পারে না সে... আর পারে না!... কীভাবে কাটাবে সে এই জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় কেটে ফেলে তার বুক... শুনেছে বিদেশে ব্রেস্ট রিডাকশন সার্জারি আছে, কিন্তু দেশে আছে কী না সে জানে না। জানলেও তার টাকা জোগাড় করা সম্ভব না... একবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল- ডাক্তার কিছু এক্সারসাইজ দিয়ে দিয়েছে- কাজ হয়নি কোন। কবিরাজ-হোমিওপ্যাথি কিছুতেই কাজ হয়নি। বাবা-মা বিয়ের জন্য হন্যে হয়ে পাত্র খুঁজছে... মা বোঝায়, বিয়ে হলেই সব কষ্ট চলে যাবে- রূপকথার রাজকুমার এসে যেন সব ঠিক করে দেবে। কিন্তু সে জানে, কিছুই ঠিক হবে না...সে জানেনা কোন পাপে তার শরীর খোদা এমন করে বানিয়েছেন... সমাজের প্রতি ঘৃণা বাড়ে তার, বাড়ে নিজের শরীরের প্রতি ঘৃণা...
মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, কিন্তু স্বপ্ন পুরণ হয় না... সে অপেক্ষায় থাকে, কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতার... কিংবা অপেক্ষায় থাকে এই পৃথিবীর সবকিছু ধংসের... ধংস হয়ে যাক সবকিছু... সব পুরুষ-সব নারী...
মন্তব্য
দারুণ লেখা। প্রথম বিষয়টি শুনেছি। দ্বিতীয় বিষয়টি এক বান্ধবীর জীবনে দেখেছি। ওর অনেক নাম ছিল যেসব ছিল শ্রবণঅযোগ্য। তবে ও ভেঙে পড়েনি। হাসতো।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
প্রথমটা খুবই কমন ঘটনা- চেহারা দেখে চাকরি পেয়েছে বা এইটা করে প্রমোশন পেয়েছে এগুলো বন্ধুদের কাছেই শুনেছি।
দ্বিতীয়টাও পরিচিতজনদের মধ্য থেকেই। সবাই এক রকম না, কেউ কেউ ভেঙ্গে পড়ে। তবে শারীরিকভাবে উলটো অবস্থা হলে মানসিক-সামাজিক হ্যারাসমেন্টটাও অনেক বেশী হয়- সেটাও কাছ থেকে দেখা।
ধন্যবাদ
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
(১)
শাওন মেয়ে, আর তার বস ছেলে। তাই ঈর্ষা এখানে যৌনগন্ধী হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শাওন-রা এগুলো কাটিয়ে ওঠে, লড়ে যায়। তখন ঐ ঈর্ষাকারীরাই আবার তার অনুগ্রহ পাবার জন্য আনুগত্যের থালা সাজাতে বসে। তা বলে ষড়যন্ত্র কি আর বন্ধ থাকে? অবশ্যই না।
(২)
সেই! উন্নত বিশ্বের দেশটিতে থাকার সুবাদে এর উল্টো ছবিটাই দেখি নিয়মিত। মেয়েরা আজো অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের সমান বেতন পায় না। কিন্তু তা বলে বক্ষ বিশাল কি নামমাত্র, কোমর সরু কি চওড়া এসব একটি মেয়ের কাছে তার নিজের শারীরিক জটিলতা বা প্রচলিত রূপের ধারণা অনুসারে আকর্ষণীয়া হওয়া-না হওয়ার সুবিধা-অসুবিধা ছাড়া আর কোন সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করে বলে নজরে পড়ে না। 'সুখী'-র চারপাশেও দিন পাল্টাচ্ছে, আরও পাল্টাবে। ঐ সব দৃষ্টি উপেক্ষা করে, ছোঁয়াগুলিকে প্রতিরোধ করে (না পারলে যথাসম্ভব পাশ কাটিয়ে), মন্তব্যগুলিকে মনের ভিতর গ্রহণ না করে যত বেশি করে মেয়েরা বাইরের জগতে অংশ নেবে, যত বেশী অর্থনৈতিক চাবিকাঠির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে ঐ পাল্টানোটাও তত বেশী সম্ভব হয়ে উঠবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হ্যাঁ লড়ে যায়, কিন্তু সবাই হয়তো পারে না- কারো কারো একটু মানসিক সাহায্যের দরকার হয়। দুটোই পরিচিতজনদের অভিজ্ঞতা। ধর্ম-সমাজ-পরিবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেভাবে কষ্ট দেয়, চাপ তৈরি করে সেটা মাঝে মাঝেই সহ্যের বাইরে চলে যায় কারো কারো জন্য!
অনেক ধন্যবাদ!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
এত এত বৈষম্য, কথা শোনা - এর মাঝেও যে মেয়েরা লড়াই করে, সেটা ভাবলেও অবাক লাগে। অবশ্য লড়াই করা ছাড়া উপায়ই বা কি।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
হ্যাঁ, সমস্যা হচ্ছে এগুলো দেখেই শিশুরা বড় হচ্ছে, এবং একই শেপে তাদের মেন্টালিটি গ্রো করছে। এইটাই বিপদ।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
১। কর্পোরেট জগতের ইঁদুর দৌড়ে কেউ এগিয়ে গেলে খারাপ/নোংরা কিছু কথা রটাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে যখন একটা মেয়ে এগিয়ে যায় তখন সেখানে যোগ্যতা বিচার করার চেয়ে শরীর-বিছানা ইত্যাদি গল্পগুলো ঢুকানো হয়। কাজের দুনিয়া কেন, বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখেছি কোন মেয়ে ভালো ফলাফল করলে কেউ কেউ সেখানে শরীরি গল্প খুঁজে পেত। সামাজিক শিক্ষাটাই এমন যে সেখানে এটা বিশ্বাস করতে সেখানো হয় মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বলে-বুদ্ধিতে-যোগ্যতায় সব সময়ই খাটো।
২। মানুষের শরীরের ব্যতিক্রম বা অসম্পূর্ণতার নিয়ে আমাদের সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষ এমন আচরণ করে যে সেটা ভদ্রতার সীমা তো বটেই মানবিকতার সীমাকে পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
- এটাই আসলে মূল কথা। কিন্তু এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে পাই না। আমাদের মনের ভেতর এই কথাটা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়ক্ষেত্রে আমরা হয়তো সবাই-ই দোষী।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
দুটি অসহায়ত্বের গল্প মন ছুঁয়ে গেলো। ধন্যবাদ লেখার জন্য!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, চোখের সামনে। আশ্চর্য হল, খালিদ সাহেবের প্রমোশন হলেও হয়ত ঈর্ষান্বিত হত কেউ কেউ, কিন্তু এইভাবে অবনমন হত না খালিদ সাহেবের, যা কিনা হয় শাওনের শুধু মেয়ে হওয়ার কারণেই, আমাদের সমাজে।
দুটো গল্পই আমাদের সমাজের নারী বিষয়ক বিকৃত ধ্যানধারণার ক্লাসিক উদাহরন!
হ্যাঁ, আমাদের দেশে মেয়েরা যেভাবে বিলিওন প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে এগিয়ে যায় সেটা খুবই অবাক করার মত।
ধন্যবাদ!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, চোখের সামনেই! খালিদ সাহেব যদি প্রমোশান পেত, তাহলেও হয়ত কেউ কেউ ঈর্ষাকাতর হত, কিন্তু এইভাবে অবনমন ঘটত না, যা কিনা শাওনের হয় শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণেই, আমাদের সমাজে!
দুটো গল্পই আমাদের সমাজের নারী বিষয়ক বিকৃত ধ্যানধারণার ক্ল্যাসিক উদাহরণ!
।।।।।
অন্ধকূপ
কত দেখি, কত শুনি। কিন্তু ভাবিনা, পাল্টাইনা। এইতো চলছে। লেখাটা সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিশদ। বেশ গুছানো।
আনন্দ পথিক
মানুষের মগজ জুড়ে আছে বিছানা আর খাট
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রথম গল্পের মেয়েটাকে বলা কথাগুলো অনেক মেয়েকে শুনতে শুনেছি, শুধু কাজে নয় যেকোন কিছুতে ভাল করা মাত্রই। অনেকে ভেঙ্গে পড়েনা, অনেকেই পড়ে।
শারিরীক বৈশিষ্ঠ দিয়ে মানুষকে যাচাই করার আমাদের সামাজিক প্রবনতা বিকৃতির পর্যায়ে পড়ে। মানুষের বিনোদের দেবার ও বিনোদিত হবার এই প্রক্রিয়া যে কতটা বেদনাদায়ক সেই সম্পর্কে কোন ধারনাই আমাদের সমাজের নেই।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
অনেক দেখা আর শোনা গল্প দুইটাই। দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে উল্টাটাও দেখেছি অনেক, যেখানে এমনকি মেয়েটাকে গরু মোটাতাজাকরনের ওষুধ খেতেও বলা হয়েছিলো!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন