রাত্রি গভীর হলে নিঃসঙ্গতা জানালার শিক বেয়ে ওঠে, আহ্লাদ তার নিকট যাবার পূর্বে তীব্রকাঙ্ক্ষাগুলো সগৌরবে চাখে প্রেসারকুকারে; ইচ্ছেকথা একারে থাকে না হরণিয়া চোখে; তখনই শব্দের প্রতিযোগিতা শুরু… আলো-অন্ধকারের সাথে যদি ভেজারাত জলতেলহীন ফ্রাই হত তবে বলতাম ধরো দেওয়াল নাও, খোলো গোপন টান; রসাবেগ বেশ সুন্দর! সুনসান নিঃসঙ্গকাহন। কার ইচ্ছে আমাকে দাঁড়িয়ে রাখে? আর কতদূর এগুলে ব্যথাও নাক সিঁটকে ওঠে মনবাগানে। কার ইশারায় নিজের ভেতর বাড়ে সম্পর্কশূন্যতা… টানা অন্ধকারে শেষরাত্রির তারাগুলো নাই ফুটুক, আমি ঢেকে ফেলবো যত ক্লান্তি জমিয়ে রাখবো তোকেও দেহের বল্কলে। চেতনা আমাকে অন্ততঃ টেনে নিয়ে যাক দংশনের দিকে; কিন্তু কবিতা?…
জীবনের খণ্ড খণ্ড ছায়াগুলো যেভাবে ছায়াছবিতে ফুটে ওঠে, তেমনি জীবনের বর্ণিল কথকতাগুলোকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফ্রেমে বেঁধে রাখা আত্মহনন-আত্মলব্ধির জাল খুঁটে খুঁটে কল্পকথাগুলোকে ছেনে-সেঁনে দেখার একটি নিরন্তর চেষ্টাই কী, আমার সত্তা, অনুভব, অনুভূতির সাথে নিবিড় কথোপকথন। সেখান থেকেই কি জন্মে এক-একটি কবিতা, কবিতার বীজ? তবে এটাই সত্য যে- সব লেখা বা বলার পদ্ধতি এক নয়; হওয়াও কখনো সম্ভব নয়। পাঠানুভব পাঠক ভেদে ভিন্ন হয়। আর আমি জীবনের ভেতর লুকোচুরি খেলতে খেলতে কবিতায় নিজেকে খুঁজি।
জীবনানন্দ যখন বলেন- কবিতা আর জীবন একই জিনিষের দুই রকমউৎসরণ; ফজলুররহমান বাবুল যখন লিখেন- কিন্তু কবিতা কি? কেন কবিতার গহন-যাত্রা জীবনে-জীবনে? জয়গোস্বামী নিজেকে উপলব্দি করে যখন বলেন- জীবন নিয়ে এক লাইনও লিখা অসম্ভব... বুদ্ধদেব বসুর ‘শীত রাতের প্রার্থনা’র’ শেষ স্তবক থেকে যদি বলি- শূন্যতার অজ্ঞাত গহব্বর থেকে নবজন্মেও জন্য প্রার্থনা করো, প্রতীক্ষা করো, প্রস্তুত হও।...
‘কবিতা সময়ের পাঠ নাকি সময়কে পাঠ করা?' কবিতা দ্বিধার আড়াল থেকে প্রাণের ভেতর একরৈখিকতায় ঘুরে ফেরে ঘোর সময়কে আবদ্ধ করা আর বৃত্তের ফাঁকে সীমাবদ্ধ করে রাখে তাও বলা যাবে না; হতে পারে না-বলা কথা ও কল্পনা। যদি বলি-একটাই তো জীবন তাকে আর কতটুকু ভেঙে ভেঙে দেখলে হবে নিজেকে জানা, বিপরীত হতে পারে, না-হলে বিরহকাত দিনটিও কেটে যাবে স্রেফ একেলা, মোহ ধরে বেঁচে থাকা সত্যিই বাতুলতা।
আসলে কবিতা কী? শুধুই নিজেকে ভেঙেচুরে দেখা কিংবা প্রাণের অতলে ডুবে নিজেকে উপলব্দি করার প্রাণান্তর চেষ্টা... তারচে’ বেশি জানি না। কবিতাহীন জীবন মনে হয় স্পর্শহীন নিঃসঙ্গী; যেন অকাতরে ঠেলে যাচ্ছি জীবন, কিছুই জানে না মনভোলা সময়, আবেগের শোকপাখি।
কবিতা কাকে টানে? কবিতা কাকে খুঁজে? কবিতা কাকে গ্রেফতার করে? কেনো করে? কবিকে না পাঠককে? সে প্রশ্ন কাকে করবো? আমার আসা-যাওয়া, আমার পথ চলা আমার আহার-তন্দ্রা, কে আমাকে বেশি ভালোবাসে, কে আমাকে কাছে টেনে হিমের ভেতর ঘুম পাড়িয়ে রাখে, যদি বলো উত্তর পাবেন কবিতা!!! কবিতা মনের ঘরে হাসে, কাঁদে, কথা বলে, ঘুমোঘোরে আমাকে জাগিয়ে রাখে। কবিতা কখনও জ্বালায়, কখনও পোড়ায়, কখনও-বা নিঃসঙ্গ করে রাখে!!! কবিতা মাথা ব্যথার কারণও হয়! কবিতা রোগমুক্তির কারণও হয়, আবার কবিতা আমাকে শান্তি দেয়, তৃপ্তি দেয়, দীর্ঘশ্বাসের ভেতর আত্নকথা লুকিয়ে রাখি, সে আমার ভেতর হাসে-কাঁদে আমাকে ঘুমের বড়ি পাঠায়।
কবিতার ভেতর কি এমন মায়া আছে যা পাঠককে কাছে টানে, কবিরা মনের কথা গেঁথে সাজিয়ে রাখে কবিতার পরতে পরতে…। আমি কি জানি কবিতা কিভাবে পাঠককে টেনে রাখে? জানিনা। কবিতা মনের না-বলা কথা তাও বলা যাবে না। কবিতার তুমি-টা কে? তুমি আসলে কি কবি নিজেই? সে রহস্য আজো অজানা। কবিতার গতি আছে, প্রকৃতি আছে। কবিতা রূপসী হয়, মায়াবী হয়, স্পর্শ করে, কবিতা জানালায় উঁকি দ্যায়, কবিতা কখনো জ্বলে, কখনো নিভে, কখনো দ্যোতনা ছড়ায়। কবিতা আমাকে পথে নামায়, বে-পথেও ছড়ায়!
নিজের সত্তার সাথে দ্বিরালাপই কবিতা শ্রেষ্ট সময়ের অভিব্যক্তি, শ্রেষ্ট সময়ের ধারণা।
মন্তব্য
আপনার কবিতা ভাল্লাগে।
তবে কিজানি, এটা পড়ে মনে হলো, আরেকটু ছোট হলে বোধহয় পড়ে বেশি আরাম লাগতো...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বেশ ভাল লাগল
কবিতা আসলে কি? ভাবানা সাথে নিয়ে গেলাম আফসার
-----------------------
হামিদা আখতার
নতুন মন্তব্য করুন