এসব বললে তুমিও কুলকুলে হাসো, বলো না-হেসে
পারি না; তোমার মত কুলকুলিয়ে হাসে লাউপাতা,
কচুপাতা, সর্ষেদানা। লাউ-কুমড়ার পাশে অসহায়
আলু-পটল, সুপারি সহ পানপাতা
তারচে’ ভালো ছিল বালু-সিমেন্টের পাশাপাশি বাজুক
কম্পন, দেহসমর্পণ, দু’দণ্ড কথা বলার প্রেরণা
দূর্বল সম্পর্কের ভেতর জেগে থাকা অকৃতজ্ঞ হাতের
দু-একটি ছাপে কতখানি ছিটাবে জল ইচ্ছাগুলি চেপে?
ইটগাঁথা দেয়ালপিঠ দেখুক স্পর্শদেনা, তোমার পায়ের
ছাপ গুনতে গুনতে দেখি এই পরবাসে জীবনবাস্তবতা
২
প্রতিদিন হতচকিত হই, মনে সাহস জাগাতে পারি না
তোমার উদ্ধত চোখ অবিরাম ভয়হীন, দূরত্বহীন রেখে
দেহের টান-টান সিনায় মনের অবশতা এড়াইনি বলে
অনিচ্ছা দূরে রেখে কেন যে প্রতিদিন আমাকে ছোঁও!
না-ছুঁলেই অপরিচিত চাহিদা ফুলে-ফেঁপে ওঠে অলক্ষ
চোখ ঋতুঝরনার ফাঁকে
কেন সতর্কে ইন্দ্রিয়বেশী হও ঝলসে-ওঠা চিতা-আগুনে
মর্ম ছুঁলে ঋত-ুতাপে মন লেপো জলের সোঁদাগন্ধ মেখে
সোঁদাগন্ধে আমিও ঐ শ্মশানবন্ধুর নষ্টালজিয়া গন্ধ পাই
তাদের কথার জবাব দিতে পারি না, মন খারাপ লাগে
৩
স্পৃহা যতই সহজ হয় চারপাশে, ঐ প্রান্তে অনিশ্চয়তা
যে দিব্যি বিশ্লেষিত হচ্ছে আত্মগোপনে, ঘুণধরা দেহে
দুঃস্বপ্নের নকশাগুলি মনের শ্লেটেও আটকাবে না জানি
আনন্দ কিংবা খুশির সংবাদ কভু একটানা বলোনি তুমি
গালভর্তি হাসি ছাড়া
এ পরিপ্রেক্ষিতে কিছুক্ষণ আমারও খুব সুবিধা হয়, আমি
কম্পিউটার অন্ করে ফেসবুক পাতায় পুরনো কবিতায়
কবিতা-খাতায় বারবার নিজেকে উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখি
আজ অনেকক্ষণ ধরে কেন তোমার হাসিরা জট-পাকানো
কালো-কালো চাপে ফুলে আছে গালে, কথাও বলছে না!
৪
তোমার চোখের গোপন অভিব্যক্তিরাই আমাকে বারবার
টানে ওভার কনফিডেন্সে
এখন আমি যাদের সাহচর্যে নিঃশ্বাস ছাড়ি তারাই বিম্বিত
চোখে-মুখে এঁকে যাচ্ছে এক-আধফোঁটা বাতাসের স্থিতি
এরপর থেকে কিছুই যে আমার স্পর্শের বাইরে থাকে না
শুধু অতৃপ্ত রিডগুলো একত্রে বাজে না পরস্পরের দিকে!
তোমার অনুপ্রেরণা ঘুরেটুরে লক্ষ করছি সবই ভীরু চোখে
আঁকা ঊহ্যকথা, সবই পূর্ণতা পাবে, পূর্ণ হবে ষোলোকলা
সেদিন তোমার শোকাচ্ছন্ন হাসিতে একাই দাঁড়াবে আমার
ক’ফোঁটা কান্না
৫
কত স্মৃতিই না আমাকে তাড়ায় রঙপেন্সিলের সরু উচ্চতায়
একদিন পালং শাকের মত ফুটে ছিল তোমার নাভি-লাবণ্য
দেহ-টেম্পারেচার
চশমায় আটকে ছিল ক্যামরার পিনহোল, একজোড়া চোখ
পাতালের কোন পথ ধরে আমাকে টানো, আলতো নাড়াও
কার কাছে জানতে চাও তোমার নক্ষত্রসন্নিভ মনের অপার?
ক্রুর হাসির দিনগুলো অদৃশ্যপ্রায়, এমন ভাবদিনে তোমাকে
টেনে রাখা ছাড়া কিছুই করার ইচ্ছা করে না আর
৬
কথা বলার আগে গাথা-কল্পকথা শুনে শুকাচ্ছে কার গলা?
যদি বলি পুরোটাই ভুল টার্মের হাতে ঘুরছে লতানো কথা
অন্য ধারাবাহিকতা, আর ক’টা দিন পর আমারও হারাবে
পাঁচ-দশ-বিশ পয়সার মত অঙ্গের সচলতা, তুমি তাকালে
দেখবে জল থেকে উড়ে-আসা হিমেল বাতাস, তিন টুকরো
সিগ্রেটের ছাই, থার্মোমিটারে চেপে-ধরা অসুখবিসুখ কিংবা
ঘুমের রেনেসাঁ
ভিনদেশে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ছে, ঘাসপাতার পাশে
বাবার মুখটি হাসে...নিরানন্দে সময় কাটে প্যান্ট-পকেটে
চাবিশব্দ গানে, অস্থির শরীর ঘেঁষা প্রগ্লভ সমঝোতা
৭
অন্ধরাতে তুমি যখন ঘুমিয়ে পড়ো আমি তোমার চুলের
ঘ্রাণ খুলে বিছানায় রাখি, আমাকে মোহনীয় করে তুলে
চোখের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্রাঙ্ক কণা, বুকের ভেতর পোড়ে একলক্ষ
আঙুলের স্পর্শাপেক্ষা লোভ
লোভে জ্বালাও, স্পর্শ করো একটার পর একটা রূপকল্পনা
বিষাদসিন্ধুর মত স্তুতিবাক্য হারায়, পোড়ায়, চেষ্টা করেও
পাওয়া যায় না, হাত পাতলে আত্মকলহ বুকে ঋণ জমে
পাশ-ঘেঁষা ইচ্ছাগুলির মিট্মিটে ল্যাম্পপোস্টের আলোয়
ঢলে পড়ে তোমার নগ্ন নাভিখানি
৮
কী করে জাগিয়ে রাখো খণ্ডিত ব্যাখ্যায় অগ্রাহ্য অহমিকা
কিছুই বুঝি না আমি, আর্তচোখ কেন যে এতদূরে হারায়
বুকের বাঁ-পাশে যন্ত্রণার তিলটা যখন খুলে রাখি তাপদাহ
কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় গেলে আমি পারদের মত
নিস্তেজ হয়ে যাই, কিছুই বুঝি না আমি, জানার আকাঙ্খা
বুক চিরে ধরে, জানাটুকুও ফেঁসে যায়, অজানা কথকতাই
পুষি আমি মনের খাঁচায়
‘দিলেই মিলে’ এমন কথা বলে ওঠার আগে তুমি হাসো
হাত বাড়ালেই তন্দ্রায় মিলিয়ে যাও
৯
মুগ্ধ কিংবা স্তব্ধতা দুটি শব্দের পাশে দাঁড়াই না আমি
শীতের দেশে ফুটপাতে দাঁড়ালেও ঠাণ্ডা লাগে, শরীরে
কাঁপন তুলে, রাত্রি ঘনালে সোডিয়াম আলোর দাপটে
জ্যোৎস্নারাতের স্বকীয়তা হারায়, চার দেয়ালের ভেতর
মানুষের কোলাহল বিশ্রী গন্ধ ছড়ায়, কবিতা তোমাকে
ছাড়া যাবে না কভু, পাহারায় রাখছি টেনে পোড়াবুকে
ভাবছি এবার শীতে তোমাদের লজ্জাচোখ হরণে যাব
তোমরা ঘুড়ি হয়ে পালাও ঝোপজঙ্গলে, রাতের আঁধারে
সারারাত জাগি, বুক আগলে রাখি, বুক ছিঁড়েখুঁড়ে খাও
মিশে যাও রক্ত-মাংস হাড়ে
১০
শেষ পর্যন্ত তোমার ইচ্ছেগুলো আমাকে বারবার টানছে
নতুন গন্ধ হয়ে, যেখানে তুমি গোসল করো, চুল শুকাও
খোঁপা খুলে রাখো
ইচ্ছার বিরুদ্ধে গুঁটিসুঁটি বৃষ্টিকাঁমড়, লাবণ্যময় রাত্রিখোর
চোখে নেশাঘুম, দীর্ঘচুল ও খোঁপা খোলার শব্দ গুমোট
মেরে বসেছে ক্যাবিজ, কলিফাওয়ার ও ক্যারটের দাহে
সন্ধেবেলা আলতা-পরা পা-দুটি আঙিনায় পায়চারি করে
পেঁপে, বাঁধাকপি, ফুলকপি পোড়ে, মুলা নাক সিঁটকায়
গুল মরিচের ঝাঁঝে
১১
আমাদের নির্জনতা মাঘের শিশিরে খেলা, বালিমেঘে
পা-ঘেঁষে দাঁড়ায়, পায়ের দিগুণ শব্দ হাঁটে ধুলার ভাঁজে
তোমাদের বিলুপ্ত ঠোঁটের সুস্থতা আত্মগোপন করেনি
কিউকাম্বারের স্বাদে
স্ব-দেহের কাছে ব্যধিগ্রস্ত রূপে ওলকপি কিম্বা স্পর্শগাছ
কোনোটিই অগ্রাহ্য করেনি দেহআঁচ, উষ্ণশ্বাসে অনবরত
ইশারায়, দোলায় বোধের সঞ্চার
কাঁচা টমেটোর সাথে লাইশাক, লালশাক, নালিশাক নাচে
কাঁচামরিচ ধনেপাতা সহসা পাই না
বিশ্বাস করো এভাবে দিনের শুরু লতাপাতা ডাঁটাশাকের
খোঁচাখুঁচি সহে
১২
শেষমেষ আমিও হাঁটছি বিকেলের দিকে, শুধু পথ চলা
চলতে-চলতে পার্কের শেষ চেয়ারটায় বসি, চেয়ারটাও
বারবার জিজ্ঞেস করে, কেন খাড়ারোদে ঘুরে-টুরে মরি?
কেবল ঘুরছি, ভাবছি, ভাবনার পিঠ ছপড়াচ্ছে কথকতা
কথা মনের সৌন্দর্য লুকাতে দেখে অপেক্ষাও দাঁড়াচ্ছে
দূর্বাঘাসে, ঘাসের ধাক্কাগুলো টেনে ধরছে আমার নিঃশ্বাস
দূরদেশ ফেরার দিনে দিক-বেদিক তাকিয়ে কথা বলছে
তোমার একটুকরো কান্না
টের পাওনি তুমি, আমার ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষাগুলো বারবার
হাত বাড়িয়েছে তোমার কান্নার দিকে
১৩
এ-কথা সত্যি যে ঐ রকম অস্বাভাবিক মুহূর্তগুলো তিরতিরে
বয়ে যাচ্ছে আর এই একটি জীবন সে-কথা ভাবতে-ভাবতে
আরেক জীবনের ভেতর বেঁচে থাকার দু-চারটি ইচ্ছা খুঁজছি
ফেলে-আসা দিনগুলো বরবাদ করে ফেলেছি, ভালোবাসার
মানুষটি কি আজোবধি ভালোবাসার ভেতর-শ্বাসে বাঁচবে?
চোখের সামনে বারবার ভাসছে স্বাভাবিক চেহারা, আমার
হাসিগুলি বারবার নিস্তব্ধ সঙ্গতায় জড়াতে চাচ্ছে কিছু মুহূর্ত
কিছুকথা ও জিজ্ঞাসা সারাজীবন মনে গেঁথে রয়, তবুও যে
ফোনালাপে বেশিক্ষণ পাশাপাশি থাকা কান্তিকর, বেশ ঝামেলা
একাকী জীবন খারাপ নয়, জামা-কাপড় কাচতে ভাল্লাগে না
১৪
মানুষ দ্বিধা ও তুচ্ছতায় এত-এত স্ফূর্তিবাজি জমিয়ে রাখে যে
তোমার মুখস্থ কথা ও ঘৃণা-বিদ্বেষে পান করছি অসহায়বোধ
যে-কোন প্রিয়বোধ আজকাল রূপচিহ্নঠোঁটে শিল্প খোঁজে
দেয়ালে এখন আর ছবি টাঙানো হয় না, যদি পুরনো ছবিরা
মানসিক অশান্তিতে খুলে, খুঁটে-খুঁটে নেয় পুরনো এ-জীবন
এ-সময়, এ-জীবনের কাছে প্রতিনিয়ত মৃত্যুই পান করছি--
টানেলের মত ঘুরে পিছনে টেনে-রাখা পাঁজরের দুঃখগুলি
নিজ দেহ-কঙ্কালে পিঠ ঠেলে কেবল ছুটছি আমি চিহ্নাশ্রয়ে
যে দ্বন্ধ-সন্দেহ উলটো দিকে আমাকে বিব¯্র করেছে আপাত
ছেঁটে ফেলছি না, বাঁধাও যাচ্ছে না উৎসমুখে
১৫
বেঁচে থাকার প্রত্যেকটি মুহূর্ত একটি গল্প, একটি ছবির মতো
আমি তার প্রেমহীন, কামহীন মুখে চুমু খেয়ে বলি, আমি কি
জানি--সর্বঅঙ্গে হতাশায় মানুষ কিভাবে আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে
অন্যমানুষের পাশে দাঁড়ায়!
অথচ আমার ছন্নছাড়া দিন চলে হতাশায়, ঘৃণ্য-গোলকধাঁধায়
এই শুধু, মাঝে-মাঝে জীবনটাকে একটি চাকায় এঁকে ফেলি
হরহামেশা সঙ্গ আর নিঃসঙ্গতার চাকায় ঘুরতে-ঘুরতে ভাবি
এ-পথও হাঁটছে পায়ে-পায়ে, আর এ-হাত কবিতাও লিখছে
আবার জীবনের কঠিন কাজগুলোও করছে
কিন্তু কথাটি হচ্ছে, মানুষ কি সত্যি সত্যি গল্প ও ছবির কথা
ভাবতে-ভাবতে আরেকটি জীবনের ভেতর ঢুকে পড়ে?
১৬
বেদনা না-কাঁদলেই ভালো, এতেই মনস্তাপ, চৌত্রিশফুলে
পড়ে-থাকা এক নিঃসঙ্গ কুলটা আমি
জীবনের রসযশ ফসকে গেছে অনেক আগে, এগুলি এখন
গোপন কল্পনায় নখ-চুল-দাঁত বের করে হাসে, তবুও আমি
আমি নানা রকম আকাঙ্খা গ্রীনস্ট্রীট থেকে চার্চস্ট্রীটে আঁকি
মৃদু অনুভব করি, অনেক কথা বলব বলে পাশাপশি দাঁড়াই
কিন্তু বেলা চট-জলদি পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে!
আমি তার আশেপাশে হাঁটি, বেদনার লাল-নীল কম্পনগুলি
রহস্যপ্ররোচণায় আমাদের দূরত্বের খুব কাছাকাছি দৌড়াতে
দেখে আমি তাদের পিঁড়ি পেতে দেই, গরম কপি খেতে বলি
তবু দৌড়ায়, দৌড়াচ্ছে নিজস্ব প্রজ্ঞায়
১৭
প্রতিটি প্রজ্ঞায় এক-একটি আমিত্ব থাকে, যার ভেতর আমিও
শীতের ভাঙা লাল-নীল চুড়িগুলো ঘাসফুলে বাঁধছি সন্ধ্যাবসরে
ঘাসের ভেতর থেকে স্ব-মূর্তিতে আমার দিকে তেড়ে আসছে
বত্রিশখানা দাঁতে লেগে থাকা চুম্বনের খ- খ- খোসা ও ঝিলিক
আজকাল আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করে সূর্য্যাস্তফুলের লাল নির্যাস
খুলে ধরে নখ ও কাঁটার দু-চারটি ফাঁক, মমতা হারানো ডানায়
লুকোচুরি খেলছে শ্বাসভরা এক-একটি ঘাসফুল, চশমা-চোখ
আত্মভোলা স্মৃতি হাত নেড়ে পানিভর্তি গ্লাসের দিকে তাকায়
তোমার অপ্রেরিত কথা মাথার উপর বাটারফাইয়ের মত ওড়ে
অনেক কথাটথা বলে, উড়েও যায়...
১৮
ইদানিং ঘুমটাকে শেষরাতে জাগাই, মাঝে-মধ্যে শবঘুমও তাড়াই
অন্ধরাতে মনপাখিটির সঙ্গে টিকটিকির লেজগুলি নেড়েচেড়ে ওঠে
দেয়ালে ঘড়ির কাঁটার শব্দ ও তালে অন্য এক আমি হয়েই জাগি
প্রতিদিনকার মরণপুষ্পের বাগানে
যে পুষ্পবাগানে অনেক কথা বলবার ছিল কবিতার সহজ ভাষায়
কিন্তু এখন এই ভাষাটি হাসে না, সুরবাঁশী বাজে না, অবস্থাচক্রে
স্মৃতিগোছা ইডিয়টের মতো ইলেট্রিক বাল্বে শুয়ে খুঁজছে পরিত্রাণ
পরিত্রাণ, যেন নিজ শৈশব পার-করে-আসা স্বপ্নবেদুইন পাখিটির
চোখ-মুখ আবছা-ঠোঁট বারবার বলছে পুরো আলোটা নিভিয়ে দাও
রাতটা শুধুই আমার...
১৯
যেকোনো অগ্রহণকালে হিয়ামনটি আমারই পাশে আর্শিকলে
বাঁধা থাকে পোষাপাখির ঠোঁটে, অন্ধকারে ঝুমঝুমিও বাজায়--
কামিনী সুরে তোমার তপ্তদেহে ছায়ানর্তকীরা হাসে, আমিও
তড়িগড়ি করে লুকিয়ে ফেলি অতৃপ্ত চিহ্নগুলি, শেষে মৃদুশব্দে
যৌনতৃষ্ণা গুলি চিরবিষণ্ন ফুলের গন্ধ ছড়ায়, ক’ফোঁটা দ্বন্দগন্ধ
আমি সিলগালায় নয় দেহ-পোঁটলায় বেঁধে বিষগন্ধে লুকিয়েছি
মুখ
আমার মোহ-মূর্খতাগুলি আমাকে নিয়েই খেলে যাচ্ছে বহুকাল
আমি আতঙ্কে থাকি, অহং পাখির লঘু তাপে ও চাপে আয়নার
ভেতর-বাহির
২০
দুরত্ব মানে ভুলে যাওয়া নয়, বাড়ির পাশে ব্যপ্ত শীতকাল
ঝরতি-পড়তি স্মৃতির পাশে আমি, আমি পুরোটাই কুড়িয়ে
পাওয়া আত্মভোলা স্মৃতি বর্ণগন্ধ বনের রূপ, বৃক্ষচূর্ণ সম্পর্ক
দু-একটি কলি, ফুল নয়, ফুল মানে পুষ্প
বোকার সাথে আমার এত মিল যে, এতদিন পর স্বপ্নবাজরা
আমাকে বারবার বলছে হবে না, কিচ্ছু হবে না বালিশে
মাথা পেতে শুয়ে থাকলে, দিনে-দুপুরে যা যা করা অসম্ভব
তোমার স্বভাব দেখে মনে হচ্ছে খোলা বাতাসে দুঃখের
ঝন্ঝন্ ক্ষতটাকেও ফুলের মতোই দেখছ, ভাবছ! ভাবনা
একটুও বদলায়নি, পাল্টাবেও না আর
২১.
আসছে শীতে গা-ঝাড়া কিছু প্রশ্ন যদি ফিরে অতলস্পর্শে
এই শীতে আমি যদি মরে যাই, দরজা-জানালার ফাঁকে
মরে যাবার অন্তত দু-একদিন পর পূর্বজন্মের আকর্ষণে
হিম বাতাসের ফাঁকে অসংখ্য কাঁপন ধরে রাখে সন্ধ্যাবাতি
সন্ধ্যা পেরোনোর আগে লুফায় তানপুরার ব্যাখ্যা ও ধ্বনি
ঐ দৃশ্যগুলো ফুটবে পৃথিবীতে, এখানেই শুরু হবে ভোর
ভোরের গা-ছমছমে আহাদও হবে প্রতিনিয়ত স্বপ্নভঙ্গুর
ঘেন্না হয়, ভীষণ ঘেন্না হয় নিজের পচনধরা শূন্যশক্তিতে
চিন্তাগন্ধে বিধেঁছে ভয়! ভয়ে দুঃখের হাসিটাকে
নকল কণ্ঠের হাসি বানাওনি বলে মনের দরজায়
দুঃখটাকে খুন করতে পারি না
২২
এই আমাকেও বাঁচিয়ে রাখছে অগ্রাহ্য দেহের নীরব দুর্দশা
লাঞ্চনায় গর্জে-ওঠে রক্তের জ্বালামুখ, নিরুৎস্বাহী কণ্ঠস্বরে
নিজের অহমিকা ও ঘৃণা দেহের চারকোণায় ফেঁপে ওঠে
ধ্বংসের দ্রাঘিমায় চুপ থাকে পিঠ বাঁচানো তুচ্ছপ্রদ্ধতি সহ
নৈশদিকদর্শিকা!
ঐ নৈশদিকদর্শিকা, এ-ও কি তোমার উচ্ছাসের মুখোমুখি
হয়ে অনুকূল মুহূর্তে উদ্বেগগুলি হারাচ্ছে টানটান হাওয়ায়?
প্রাণের মধ্যে এ-মন প্রাণহীন তাই, অঋণের দায়ে একটার
পর একটা, একমনের চিন্তা পায়চারি করছে
অকটোবর-নভেম্বরে
২৩
এই ডিসেম্বর মাস দ্রুত কেটে গেল! একবারও মুখ পোড়েনি
টাটকা গরম কফির মগে!
সারাদিন যায় পেটের ফন্দিফিকিরে, রাতের খাওয়া-বিশ্রাম
বইপড়া ও ঘুমের জোড়ব্যস্ততা যাচাই করে দেখি অনতিদূরে
ভোর আসছে চলে, বেদনার পেছনের গল্পসল্প সবই ইল্যুশন
পাশ-দেহে হারিয়ে যাওয়া বিছানাবাদী ব্যথা নিজেকে বলছে
আশার পেছন ছুটতে-ছুটতে উগ্র হাওয়াও একদিন খুলে নেবে
তোর পরনের জামা
২৪
আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, তারচে’ ভালো যতদূর চোখ যায়
ছুঁড়ে ফেলো হাত, পা, লিঙ্গ ও পাছা হামাগুড়িতে দাঁড়াবে দ্বিধা
মিহি বালির পাহাড়ে
যেখানে মৃত্যুই আমাকে আরো কাছ থেকে দেখে যেতে পারে
ভাগাভাগি করবে দুঃখমোচনের স্মৃতি একগুচ্ছ শাদা অন্ধকার
অন্ধকার আক্রোশে চিবাই, আক্রোশে চিবাই দশাঙুলির ফাঁক
যে ফাঁকগুলো নির্জন রাতের পরিবেশ বোঝে, হৃদয় কাঁপায়...
প্রত্যাশাহীন হাসির সঙ্গে মনের রঙকাহিনিও একসঙ্গে উড়ে
ইচ্ছা করে সে রঙের ভেতর স্বরূপে নিজেকে পুনরুদ্ধার করি
রোপণ করি প্রতিবাদফুলের চারা, বিদ্রোহের সমপরিমাণ ক্ষয়
২৫
পুরো ব্যাপারটা না-বুঝেই আমাদের মধ্যিখানে চমকে উঠলো
আগামীর কোনও ঐশিবাণী, সম্পর্ক বদলের ত্রস্ত, সমস্ত রূপ
যে ভরারূপ এঁকে দিয়েছিলাম অলসঘেরা ঘনকুয়াশার চোখে
এখন দেখি তার চোখে দস্যু-ছবি, দিন-কাঁপানো বেদনাবোধ
চিন্তাপাখির ডানা ঝাপটানির নাচে বেজে ওঠে রূপভাঙা অর্গান
রোদের টেবিলে হাত রেখে সপক্ষে দাঁড় করাও বস্তু হারানো
বিশ্বাস, হপ্তাদুয়েক ছড়িয়ে-ছাপিয়ে যাও পাহাড়সম কৈফিয়ত
যার কল্যাণে কী সহজে কথার প্রশ্ন যুক্ত করো, লোভ দেখাও
আমাকেও দোলাও বাস্তহারা পথে
২৬
দৃষ্টির তীব্রগন্ধে ছড়িয়েছিটিয়ে দাও পেঁয়াজ লঙ্কার ঝাঁঝঘ্রাণ
ছটফটে ভাবছো কথা ও সময় স্রেফ অপ্রস্তুত পরশ ও প্রেম
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাও, চোরাদৃষ্টিতে প্ররোচিত করো
প্রাণপণে বহন করি অন্ধকার, ব্যঞ্জনগন্ধ, দু-চোখের সন্দেহ
পুরো শরৎকাল
মর্মগাঁথাযুগে কোনও সুযোগ বলে দেবে কি? ফাঁকা বিশ্বাসে
হাঁটা যায় না, তেমনি মর্চে ধরা ভরসায়ও থাকে না প্রেরণা
ভরসা পাই না সময়ের শেষমুহূর্তে, হতাশার এই শীতরাতে
তবু অতি ভরসায় চাঁদের চিকণ ঠোঁটে ধৈর্যের শো দেখাই
২৭
আত্মজিজ্ঞাসা আমাকে বারবার বলছে : ‘এই দেখো বেঁচে
থাকার এক একটি দিন কেমন সুন্দর!’ স্বপ্নব্রুণে ফেটে-পড়া
নিখুঁত স্বপ্নাভিমান, ঝরাভিমান সারাক্ষণ আশার মাঝবেঞ্চিতে
দু-পা ছড়িয়ে প্রাণ খুলে হাসে বিরহকাতর স্বপ্নবিষাক্ত মনের
শাঁনবাঁধা-কলঙ্ক, দু-চোখের নীরবপাতা
মেনে নেই, সবই মেনে নেই আমি, এ-মনে গভীর উৎকণ্ঠা
দিকহারা স্তব্ধতা, লজ্জার গর্জন, মাজাভাঙা কান্নার পুষ্টিগুণ
যে পুষ্টিগুণে লাজুক কাঁটাগুলো চিবিয়ে খাচ্ছে একান্তজীবন
এই জীবন, এই মূর্খতাগুলি রেখে কিভাবে আমি লুকাই মুখ?
২৮
ভোরবেলা দু-চোখের ছায়ায় জড়িয়ে রাখছি ভেজা-ভেজা ঘ্রাণ
দুশ্চিন্তায় মোহের ক্ষতচিহ্নগুলো বাক্শক্তিতে হারায়নি বলে
যৌনছায়াটিও আটকে গেছে টেবিলের চার পায়ে
বিয়ের পর...পরেই ভাবছ অদৃষ্টির লিখন, সময়ের ভুল প্রাপ্তি
সময়ই তোমাকে শিখিয়েছে স্বপ্নবোনা রূপকথা বলতে বলতে
কীভাবে ঘুমাবে, আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে কীভাবে ব্যাখ্যা দেবে
তাপাঙ্কের!
আমার প্রতিটি চিন্তা বাক্সবন্দি থাকে নিন্দাশূন্য কথা, ভাবছি
আর কখনও সারারাত বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে তোমার ঘুমে
ডিস্টার্ব করব না; বলার সুযোগ নেই জীবন মানে দুর্ভোগ
অসহ্য যন্ত্রণা
২৯
মাঝে-মাঝে অকারণে হেসে উঠি, যেদিকেই ফেরাই চোখ
দেখি, আমার নিঃশ্বাস ধরে কাঁদছে তোমার গুঁড়ি গুঁড়ি ছায়া
আমার এমন দশা, বরফ কাটতে কাটতে বেদনাও বরফে
জমে, জমাট বাঁধে, দু-হাতের উষ্ণতা সতর্ক হাওয়ায় চড়ে
অন্ধকারে হারিয়ে ফেলি অকৃতজ্ঞ হাত দু-একটি মারপ্যাঁচ
বোবাদৃষ্টি ও তির
তোমাকে কি জাগিয়ে তুলবে গুপÍনির্ভরতা? আমার প্রস্তুতি
এই দেহ ও পরশ, মনের গরিমার সাথে ধাক্কা খেয়ে হাঁটে
আমি শীতের উপরিভাগে দাঁড়াই, মন দোনোমোনো খেলে
৩০
আমি আমার মতো করে সব গল্প সাজাই, তাদের বিপরীত
আয়না যে কাঁটাতাঁরে বাঁধা, সেখানেই হাম্বা-হাম্বা সুর তুলি
এই দেহ উষ্ণহীন জেনে তুমি হাসাহাসি করো, চুপ ভঙ্গিতে
বসে থাকো পাশে, বোবা চোখ দুটি পোড়াও শোকাধিকারে
এ কেমন মায়া যে নিঃশ্বাস হাঁপায়!
আমি কেবলি তোমার পোড়া শোকাধিকারে পা রেখে দাঁড়াই
তন্নতন্ন করে খুঁজি আত্মতুষ্টিশূন্যতা, তোমার চোখের দিকে
তাকিয়ে নিজেই বলি, ভালোবাসা বুঝতে হয় না, হয়ে যায়
সুখ-দুঃখের দিনগুলি মনে পড়ে, শুধায়, আবার মরেও যায়!
৩১.
এ আমিই আমাকে অজস্রবার টানছি, ভাঙছি, মায়ার দিকে
মায়া-ভ্রুকুটি তোমার গল্পসল্প করে, আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়
স্বপ্নবিরহিত দেহের ভাঁজে ডিগবাজি খায়, দেহ-ঋতুলীলায়!
বিস্মিত চোখে কথা বলো, প্রশ্নের মাঝখান ঝাপসা দেখায়
একমাত্র তোমাকেই বলি : চোরাবালি মন পরবাসী ইচ্ছায়
রাতকানা শীত উপড়ানো উষ্ণহাওয়ায় স্বয়ং স্তম্ভিত আমার
অবশিষ্ট জীবন
এতো শীত কখনও আগে লাগেনি, নাকে পাইনি সুশ্রীঘ্রাণ
তীব্র শীতের স্তূপে অতিথিপাখিরাও উড়ে যাচ্ছে অচিনদেশে
যে পাখি একদিন উড়ছিল আমাদের বাঁশবাগানের মাথায়
৩২
যদ্দুর চোখ যায় শীতের মনোবেদনা তদ্দুর ঠেলে রাখি দূরে
মুহূর্তেই জবরদখল করে বিছানা-বালিশে, ঘুমভাঙার কালে
শীত এমন নয় যে, নিকটে থাকা মূদ্রিতজীবন, বগলভাঁজে
লুকানো দ্বিতীয় প্রশ্নের নোটখাতা, পারস্পরিক দু-চার কথা
হর্ষলেখা মুখের সরল প্রসঙ্গক্রম
জীবনানন্দ ও বিনয় থেকে শোনাবে কবিতার দু-এক শ্লোক
পাঠের কিছু শ্লোকরহস্য আমাকে টানবে ব্রুকস্ট্রীটের দিকে
যেখানে অপেক্ষাব্রত মুক্ত হাওয়ার ঢল, বিকেল ছুটির গান
সন্ধ্যার গোপন কিছু কথা, সিগ্রেট পোড়ানো দু-খানি পাঠক,
পাঠে কাম, ক্ষুধা-তৃষ্ণা জাগে না, জমিয়ে রাখছি যত উদ্বেগ
৩৩
জন্মের কাছে পূর্বজন্মের কোনো দায় নেই যে, আঙুলে সময়
গুনে পা-ঠা-া বাতাসে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়াতে হবে আজ
শূন্যদেহের মতিগতি দেখে জ্বরও ভাবছে, এই গা-পোড়াতে
তুমিও একদিন আসবে আত্মহনন খুঁজছে, অশোকের বনে!
যেখানে অহং নড়ে না, পাশঘেঁষা লজ্জাভাব ব্যর্থ হয়ে আসে
সেদিনই, সেদিন থেকে শৈশবের পাঠ নিচ্ছি চোখের স্পর্শে
যে স্পর্শগুলো আজও এলোমেলো করে রাখে, মুখ ঘুরিয়ে নেয়
যে দিকেই ঘুরি, তাকাই দেখি দু-চোখে আজঅব্দি লেগে আছে
নৈশসতর্কতা
৩৪
কেন যে এই পরবাসে অহরহ হাঁটাচলা করো শোবার ঘরে
এই যে শবকথা অতৃপ্ত টুকিটাকি কেন যে লিখি নোটবুকে
উন্মুক্ত থেকেও চির অগোচর হলাম নিজের ভেতর বাঁধা
মন পরিচয় না-খোঁজার দিনে এ-পথে ও-পথে থেমে যায়
স্বপ্ন চৌদিকে হাঁটে, হাঁটাভাব, বিশ্রামভাবে চাপাকষ্ট থাকে
না-চাইলেও যে কোনও বার্তা কিংবা ব্যাখ্যায় বলবে কী
এ-ও দৃষ্টি অর্পণের ড্রয়িং, এই সমর্পণের জোরে যে কেউ
হালকা নাড়াছাড়া দিয়ে জাগিয়ে তোলে লবণপাহাড়ের রূপ
যে রূপে তুমি বারবার খুলে দাও স্বপ্ন-লোকচক্ষুভীরুতা
গুপ্তসূত্রের অচেনাঋণ
৩৫
ঋণের রহস্যচোখগুলো শব্দহীন ঘুমচোখ একা ব্যঞ্জনা তোলে
আমার কৈশোর সাধামাটা ছিল যে কারণে স্কুল পালাইনি
কোনও দিন শ্রেণীশিক্ষক বলতেন যাদের গঠনগাঠন ছোট্ট
সামনে বসো, এ-নিয়মে বেঞ্চের একটি কোণা নির্ধারিত ছিল
কাস শেষে প্রায় দিনে মাস্টারমশাইয়ের ফেলে-যাওয়া চক
দিয়ে ব্লাকবোর্ডে আঁকছি দোয়েলপাখি, জলশাপলা-গোলাপ
লুকিয়ে লিখছি বৃষ্টিকথা, কাসের সবচে’ সুন্দর মুখটির নাম...
লিখে তড়িগড়ি করে মুছে ফেলতাম অন্যদৃষ্টি পড়ার আগে
কেনো এখনও বুঝতে পারিনি স্কুৃল-শিক্ষিকার কৌতূহলী চোখ
ঘাড় ঘুরানো হাসির রহস্য
৩৬
যে নামটি শোভা পেত উঁচবেঞ্চে, দরজা-জানালার পর্দায়
সহপাঠীর মুখে
স্মৃতিমুখ ও মর্মথিতি এখনও বেজে ওঠে স্কুলবেলার চোখে!
বাঁশের সাঁকো-নদী পাড় হয়ে স্কুলে যাবার যে একটাই পথ
স্কুল ছুটির ঘন্টায় একসাথে জড়ো হই নদীপাড়ে, কে কার
আগে যাবে এ-নিয়ে ছুটাছুটি-দৌড়াদৌড়ি, দাঁড়িয়ে দেখছি
কার পা দ্রুত পাড় হচ্ছে সাঁকো, কার বুক তরতরে কাঁপছে
ছায়া-জলে
এভাবেই ছলকে ওঠে স্মৃতি, গভীর প্রবোধে বাঁধি, আর বলি
এই তো সে দিনের কথা, তোমরা সবাই কোথায় হারালে?...
কোথায় লুকালো আমার মাটির (গরু-ঘোড়া-হাতিও বাঘ,
মার্বেল, দারাগুটি খেলা, আর তোকে চড়ানোর পালকি)
পুতুল পুতুল খেলার শৈশব
৩৭
এই ছায়া-জল-মাটির সাথে নিজের বন্ধুত্ব জমে ওঠে খুব
মৃত্যুও সাথে বন্ধুত্ব করা জরুরি আমার, আমি তার রক্তের
ভেতর পূর্বপুরুষের ঘ্রাণ পাই; ঘ্রাণের পালকে আমার জন্ম
অবাক সন্ধ্যায় মায়াবিনোদনী মন এক জায়গায় স্থির থাকে না
রাতে লন্টনের আলোয় মৃত্যুর সাথে আগডুম-বাগডুম কথকতা
হয়, ঘোরঅন্ধকারে বিছানায় থাকে, তাকে জিজ্ঞেস করি আমি
অশ্রুর পরিবর্তে কেন দেখব না আমার মৃত্যুদিন...
কিন্তু এ-মন যে এক ভেদহীন, শক্তিহীন, ছদ্মবেশি জাদুওয়ালা
তোমার কাছে অলক্ষে ক্ষেপে যাওয়া অবশিষ্ট ডাইরির পাতা
এই ডাইরির পাতায় লিখা আছে অস্থির কাঁটাঅলা ক’টি দাগ
আমার স্বপ্ন, তোমাদের রচনা
৩৮
চারপাশে আমার উদ্দেশ্যে অনেক কথাই হয়, কিন্তু আমি
তাদের কথাসব খুলে রাখতাম ঘাম কিংবা কালো অন্তর্বাসে
শিক্ষক হবার স্বপ্ন ছিল মনে, শ্রেণীশিক্ষকের সাক্ষর দেখে
রুলটানা খাতায় নিজের সাক্ষর টেনেটুনে পুলকিত হতাম
শিক্ষক হব, তাও হইনি! ডাক্তার হব না সে কথা জানতাম
এটাসেটা দেখা হলো, ঘোরা হলো কিন্তু দেখা হলো না
তোমার বালিকাবেলা
এখন ভেজা চুল খুললেই যে খুনি জলের ঘ্রাণ নাকে আসে
সে কি তুমি, নাকি তোমার বালিকা বেলার ঝাঁঝালো ঘ্রাণ?
নিঃসঙ্কোচ চিত্তে মাড়িয়ে যাও ঘনপ্রস্ত বেদনাভ্রণ, আবারও
তুমি কুলকুলিয়ে হাসছো আর বলছো; না-হেসে পারি না
আমি ফেব্রুয়ারিবিকেল ও মার্চসন্ধে হলে
মন্তব্য
ভালো লাগল আপনার কবিতা।
এহসান সাবির
নতুন মন্তব্য করুন