জানি না চিনি না বুঝি না জীবন
জানি চলে যায়
চলে চলে যায় ...
কোথায়? কে জানে?
চলছে জলজ কলরোল কিছু
আমিও চলেছি হেঁটে
চলার নিয়তি লেখা আছে হাতে
জ্যোতিষী জানেনা হাতের রেখায় অতীত আগামী
আমিও জানি না কিছু
প্রতিদিন সূর্য আমাদের ছায়া ছোট বড় করে
বড় ছোট করে আমাদের ছায়া
প্রতিদিন...
আর জীবনের মানচিত্রে পাল্টে যায় বয়সের অক্ষাংশ
কোথায়? কিভাবে?
চলে নৈশ গাড়ি কোল ঘেঁষে নক্ষত্রবীথির
চলছে অন্ধের মতো বোধের মেঘেরা
রাতকানা চোখে আমিতো কিছুই দেখিনা তাদের
মৌন অনুভবে অমোঘ গন্তব্য এক ধেয়ে আসে
জীবনের গলি ‘অন্ধগলি’ বলে জানি
শেষ প্রান্তে এক মৃত্যুময় কালো দেয়াল দাঁড়িয়ে
জীবনের ছবি আমিতো জানিনা কিছু আর
শুনেছি প্রান্তিক সময় এভাবে সমাগত হলে
জীবনের গাঢ় স্মৃতিগুলো ভর করে চোখের পাতায়
রাতকানা চোখে আমিতো কিছুই দেখিনা তেমন
নাকি পারছিনা চিনতে সে সব অতি পরিচিত মুখগুলো আজ
ছায়াবতী বৃক্ষ, গর্ভবতী নদী, লতা-পাতা-পথ আর পাখিদের মুখ
আরো কিছু মুখ আবছায়া হয়ে কাছে আসে
জীবনের ছবি এরচেয়ে স্বচ্ছ আমিতো জানিনা কিছু আর
পদ্মার স্লুইজে শুকনো চরায় গোড়া-কাটা-গাছ
ছিন্ন শেকড়ের প্রকট হাসিতে লুটিয়ে পড়ছে আর
কালো কালো মেঘ লালদিয়া চর থেকে উড়ে এসে
বাবলার বন মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে চলে গেলো
কোথায়? কে জানে?
কোরালিয়া হাটে লোকজন নেই কোনো
শুধু শতাব্দীর সমান বয়েসী বৃদ্ধ এক
মানকচু পাতা মাথার ওপর ধরে আছে
আকাশের দিকে ধ্যান-মগ্ন হয়ে করছে বাড়ির অপেক্ষা
কি হবে? কে জানে?
এদিকে ধরণী অন্ধকার করে নামছে সন্ধ্যার বিমূঢ়তা
জীবনের ছবি এরচেয়ে সত্যি আমিতো জানিনা কিছু আর
জীবনের স্রোত একমুখী শুধু বয়ে চলে যায়
জানি চলে যায়
কোথায়? কে জানে?
মন্তব্য
জীবনের স্রোত একমুখী শুধু বয়ে চলে যায়
জানি চলে যায়
কোথায়? কে জানে?"
এর চেয়ে সত্যি কথা আর কি আছে ?
আমাদের সবার জীবনের জলছবি তো এরকমই। হয়তো কারো ক্যানভাসে রংটা একটু ভিন্ন, অথবা তুলির আঁচড়ে আছে ভিন্নতা। কিন্তু সব কিছুর মূলে তো ঐ একই অনুভব।
অসাধারণ কবিতা। তোর কবিতার পালে বাতাস লেগেছে দোস্ত, থামিস না, এগিয়ে যা।
কির্তীনাশা
দারুণ মন্তব্য করেছিস।
আমার উতসাহের নৌকা তরতরিয়ে বইছে।
তোর মতামত লাগবে, নইলে ত্যানায়া যামু কইলাম।
জানি না চিনি না বুঝি না জীবন
জানি চলে যায়
চলে চলে যায় ...
কোথায়? কে জানে?
সংগীতের ভাব আছে।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
জানিনা কিভাবে ধরে ফেললেন। কবিতাটা লেখা শেষ করেছি তখন রাত চারটা বাজে। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। সমস্ত চরাচর ঘুমে। একটা অপার্থিব সুর মনের মধ্যে গুনগুন করছিলো। যার উতপত্তি কবিতাটা থেকেই।
মন্তব্যের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা।
আপনার কবিতার শিরোনাম আর বুদ্ধদেব/প্রতিভা বসু'র জীবন নিয়ে লেখা বইএর শিরোনাম "জীবনের জলছবি" হুবহু এক
আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আমার এই কবিতার জন্য অন্য আর কোনো নামই মনে ধরে নাই তখন। তবে আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন - এ রকম উদাহরণ আরও অনেক আছে। যেমন রবীনন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার নামে অন্য লেখকের অনেক গল্প-উপন্যাসের নাম আছে। আবার উল্টোটাও দেখা যায়। একজন কবির কবিতার একই শিরোনামে অনেক কবির কবিতাও আছে। নামসহ উদাহরণ দিতে গেলে এখানে মহাকাব্য হয়ে যাবে। আশাকরি তার প্রয়োজন নেই, কারণ এ ব্যাপারটা আপনিও জানেন বলে বিশ্বাস করি। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, স্নিগ্ধা। বই প্রকাশের সময় দেখি অন্য কোনো নাম দিতে পানি কিনা। আপনার কিছু মনে আসলে জানায়েন তো?
সব্বোনাশ স্নিগ্ধা আপা, তাহলে তো আখতার তার "প্রতিভা" দেখাতে গিয়ে একেবারে "বুদ্ধু" হয়ে রইল!
বুদ্ধদেব বসুর কথা এসে গেল, আর আমার মুখে এসে যেন লাগল সেই উনিশশো সাতাশ কি আটাশের সেই পুরানা পল্টনের ঘাস আর কাদার গন্ধমাখা বাতাস... সেই বাতাসে একরাশ স্মৃতির গন্ধ, যেন কিসের, যেন কার... কী মনে পড়ে, কাকে মনে পড়ে... সবাইকে বুদ্ধদেব বসুর "হঠাত্ আলোর ঝলকানি" নামক স্মৃতিকাহিনী (এর খুব চমৎকার অংশবিশেষ পাবেন ক্লাস নাইন-টেনের বাংলা বইয়ে, "পুরানা পল্টন" নামে, অবশ্য জানি না সেটা এখনকার বইয়ে আর আছে কিনা!) এবং "আমরা তিনজন" নামের একটি গল্প, যেটি গ্র্যাজুয়েট কোর্সের বাংলা বইয়ে আছে... সবাইকে পড়ে দেখতে অনুরোধ জানাই, যারা পড়েছেন, আবার পড়ুন! গদ্য যে কত কাব্যময় হতে পারে, আর কতটা বুক ছুঁয়ে যেতে পারে, এই লেখাগুলো তার প্রমাণ!
আখতার, এই কবিতাটা মোটামুটি লেগেছে। অনেক বেশি কষ্ট আর ভালোবাসা দিলেই যে ভালো কবিতা হবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই! একটা ভালো কবিতা বোধহয় অনেক সময় একটা পরিস্থিতির ফসল! তুমি, তোমার চারপাশের ঘটনাসমূহ, আর ঠিক লিখতে বসার মুহূর্ত, সেই সময় তোমার মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা... অনেক কিছুর ওপরই নির্ভর করে বোধহয়!
আমি বোদ্ধা নই, যা ভাবি এবং ভেবে পাই, তাই বলি আর কি!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
সময় নিয়ে পড়া আর মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা।
এই যে আখতারুজ্জামান - আমি কিন্তু ঠিক আপনার 'ভুল' ধরিয়ে দেয়ার জন্য ওটা বলিনি আমার মনে হচ্ছিলো আপনার শিরোনাম দুটোর সমাপতনের কথা না জানা থাকতেই পারে। আপনি মোটেও 'বুদ্ধু' বনেন নি - না অন্য কোন কারণে নয় - 'বুদ্ধু' আমার সবচাইতে, সবচাইতে প্রিয় লিখিয়েদের একজন (প্রধানজন বললেও খুব ভুল হবে না) আর সেজন্যই অন্য কাউকে আমি 'বুদ্ধু' বনতে দেবোই না, তবে হ্যা সাদামাটা বুদ্ধু কি বুদ্ধুরাম যত খুশি হোক গে না লোকজন, কে আটকাচ্ছে ?
'জীবনের জলছবি' প্রতিভা বসু'র লেখা।
আর মৃদুল - 'স্নিগ্ধা আপা' আর 'স্নিগ্ধা দি'র মধ্যে কোনটা পছন্দ জিজ্ঞেস করলে আমি কিন্তু দ্বিতীয়টা বেছে নেব তবে আপনার আবার সাড়ে পাঁচ খুন মাফ - স্রেফ বু. ব. কে পছন্দ করার জন্য...... !
প্রতিভা বসুর 'জীবনের জলছবি' একটি অসাধারণ বই। বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে এনে পড়েছিলাম। পরে এতো ভালো লেগে যায় যে এক কপি কিনে সংগ্রহে রেখে দিয়েছি। বু.ব. আমারও ভীষণ পছন্দ। তবে পরে আল মাহমুদের একটা কবিতায় ওনার সম্পর্কে পড়ে মন খারাপ করেছিলাম। কবিতাটার নাম সঠিক মনে নেই।
আর আবারও বলছি - আপনার মন্তব্যে দারুণ খুশি হয়ছি।
নতুন মন্তব্য করুন