মনে পড়ে ম্লান সেই সব দিন
লম্বা তালপাতা ফুটন্ত পানিতে
সিদ্ধ করেছে মা
নারকেল ছোব্রা পুড়িয়ে কয়লা
তার থেকে কালি
দোয়াতের মুখ ভালো করে আঁটা
কালিতে কাপড় নষ্ট হতে পারে!
বাঁশের কঞ্চিতে বানানো কলম
গোল করে বাঁধা পাতার মাদুর
এই তো প্রস্তুতি সেদিন সকালে
না, এই শেষ না, আরো আছে কথা -
গরম পানিতে গোসল করেছি
নতুন কাপড় পরানো হয়েছে
কপালের ডানে কাজলের টিপ
দুই গালে চুমু মায়ের আদর
সারা বাড়ি হৈ চৈ, কত আয়োজন
তারপর পথে বেরিয়ে গেলাম
মা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন
বাবার আঙুল ধরে যাচ্ছি আমি
বগলে মাদুর দুচোখে বিস্ময়
লম্বা তালপাতা দারুণ ণকশা
লোহার আঁচড়ে লেখা আছে তাতে
অ আ ক খ গ ঘ আরো হাবিজাবি
এ্যাতো বড় পাতা! দেহের চে' বড়
রশি দিয়ে বাঁধা মাদুরের সাথে
আর হাতে ধরা কালি ও কলম
কোথায় চলছি? জানি না জানি না
টুনটুনি পাখি লাফিয়ে চলেছে
মুগ্ধ দুই চোখ আঙিনা পেরিয়ে
শিশিরে স্যান্ডেল ভিজে একাকার
কোথায় চলছি? জানি না জানি না
মা এখনো চেয়ে
চোখ মুছছেন? কেন এই কান্না?
মুখে কেন হাসি?
আজকে কি তার বুকের মানিক
যাচ্ছে অভিযানে?
আজকে কি তার সোনার পাখিটা
বাসা ছেড়ে দিলো প্রথম উড়াল?
আজকে কি তার বুক খান খান
কোল হ'লো খালি?
পর হয়ে গেলো প্রাণের দুলাল
খাঁ খাঁ করে বাড়ি?
খালের ওপার পাঠশালা লাগে
ক্রোশ ক্রোশ দূরে?
আজকে কি তার গর্বিত প্রতিমা
আকাশ ছুঁয়েছে?
আবছা স্মৃতির গোধূলি আলোয়
মনেপড়ে যায় আরো কত কথা
বাবা আজ নেই আঙুল বাড়িয়ে
তার সেই কন্ঠ কানে বেজে যায়
মায়ের মুখটা অবিকল দেখি
এখনো দাঁড়ানো সেই দরজায়
একলা বিষন্ন স্বজন বিহীন...
হায় রে আমার ম্লান সেই সব দিন!
কী করে ভুলবো আমি কী করে ভুলবো?
মন্তব্য
সুন্দর...
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
তালগাছের মতো দেখতে সুন্দর! তাই না? লেখা শেষ হওয়ার পর আমার প্রথম মনেহয়েছে - আহা কী সুন্দর একখানা তালগাছ লিখিয়াছি। তারও আগে এটা ৬ মাত্রার চালে একটা ইয়া লম্বা বাঁশ গাছ ছিলো...পরে ১২ মাত্রা করে প্রতি লাইনে এনে উহাকে খাটো করে (!) তালগাছ বানানো হয়েছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রায়হান আবীর।
আমার বাবার মুখে শোনা তার ছেলেবেলার গল্প গুলোর মত মনে হল। খুব ভাল লাগলো। শুভেচ্ছা ।
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কত কথা যে মনে করিয়ে দিলেন
সত্যিই অর্পূব।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
অদ্ভুত সুন্দর!
খুব সুন্দর। যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল সবকিছু!
খুব ভালো লাগলো দোস্ত। আমারো মনে পড়ে গেল আমার গ্রামের কথা। তবে এমন হাতেখড়ির সৌভাগ্য আমার হয়নি।
আমার হাতেখড়ি এই ইট-পাথরের জঙ্গলে। সেখানে অমন গ্রামীন আবেশ ছিল না।
_________________________________
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এক বড় মাপের কবির আত্মপ্রকাশ দেখছি...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
কই যাই! সবাইকে মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমার কেন জানি আপনার অন্য অন্য কবিতার তুলনায় এইটারে কিঞ্চিত দূর্বল লাগলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চেহারাটা রোগা রোগা আর শুকাইয়া গেছে বইলা দূর্বল লাগে নাই তো? হা হা হা
তালগাছ, বটগাছ সাইজের লেখা বাদ দিয়ে সামনে ঘাস সাইজের লেখা লিখবো বলে প্ল্যান করছি। অল্প শরীরে দোষ-ত্রুটিও অল্প থাকবে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন